#প্রেম_হয়ে_এলি_তুই
#লেখিকা : #ohona_akther
#পর্ব : ২৮
🚫 কপি করা সম্পুর্ণ নিষেধ
দেখতে দেখতে শুক্রবার চলে এসেছে। এই কয়দিনে জিসান রুপার সাথে নানান ভাবে কন্টাক্ট করতে চেয়েছিলো কিন্তু রুপা জিসানের সাথে কোনো কথা বলেনি। সব জায়গা থেকে জিসানকে ব্লক করে দিয়েছে।
__________________
ডিভানে বসে ল্যাপটপ কোলে নিয়ে কাজ করছে আরশ।
অবনি আরশের পাশে এসে বসে হাত কচলাচ্ছে। আরশ ব্যাপারটা লক্ষ্য করতেই ভ্রু কুঁচকে বলল-
” কিছু বলবে? ”
” হহ্যাঁ। আসলে আজকে রুপাকে আজকে দেখতে আসবে তো তাই। ”
” তো? ”
” আমাকে যেতে হবে। ”
” কি বলছো তুমি? মাথা ঠিক আছে তোমার। এই শরীর নিয়ে তুমি বাইরে বের হবে? ”
” তাতে কি হয়েছে। সারাক্ষণ তো আমাকে ব্রয়লার মুরগির মতো বসিয়ে রাখেন। একটা মানুষ সারাদিন শুয়ে বসে থাকতে পারে আপনিই বলুন?
আপনি কিন্তু ওভার কেয়ারিং করতে গিয়ে রীতিমতো আমার উপর টর্চার করছেন। আপনি জানেন প্রেগন্যান্ট হলে কতো মেয়েকে সংসারের সব কাজ সামলাতে হয়।
আর আপনারা সবাই মিলে আমাকে প্রয়োজন ব্যতীত বিছানা থেকেই নামতে দিচ্ছেন না।
এভাবে কেনো মানুষ থাকতে পারে? ”
” কোনো মানুষ থাকতে পারে কিনা জানি না। কিন্তু তোমাকে এভাবেই থাকতে হবে। কোথাও যাওয়া হচ্ছে না তোমার। ”
আরশের কথা শুনে অবনির মনটা খারাপ হয়ে গেলো। অবনি গাল ফুলিয়ে সেখান থেকে চলে এলো। অবনি রুপাকে কলে জানিয়ে দিয়েছে সে আসতে পারবেনা।
কিছুক্ষণ পর আরশ এসে বলল-
” যাও রেডি হয়ে নাও। ”
” কেনো? ”
” তুমিই তো বললে রুপাদের বাসায় যাবে। ”
” সত্যি নিয়ে যাবেন আমাকে? ”
” হ্যাঁ সত্যি। ”
অবনি খুশিতে লাফিয়ে আরশের গলা জড়িয়ে ধরতেই আরশ ধমকের সূরে বলল-
” হেই কি শুরু করলে তুমি? তুমি কি ভুলে যাচ্ছো তুমি অসুস্থ? এই অবস্থায় তুমি লাফালাফি করছো কেনো? এক্সজ্যাক্টলি এই জন্যই আমি তোমাকে ভরসা করতে পারিনা। ”
অবনি অপরাধী ভঙ্গিতে কানে হাত রেখে কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বলল-
” সরি। ”
” হয়েছে হয়েছে এতো ঢং করতে হবেনা।
চলো রেডি হবে। ”
আরশ অবনি দুজন একসাথে রওয়ানা হলো রুপাদের বাসার উদ্দেশ্যে। আরশ অবনিকে রুপাদের বাসার সামনে নামিয়ে দিয়ে বলেছে ও এসে নিয়ে যাবে। অবনি যাতে সাবধানে থাকে। শান্ত হয়ে এক জায়গায় বসে থাকে।
একা একা হাঁটা চলা না করে।
একগাদা সাজেশন দিয়ে তারপর চলে গেছে।
অবনি দরজায় কলিং বেল বাজিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।কিছুক্ষণ পর রুপার মা এসে দরজা খুলে দিলো-
” আসসালামু আলাইকুম। আন্টি কেমন আছেন? ”
” ওয়ালাইকুম আসসালামু। আরে অবনি যে? আমি ভালো আছি। তুমি কেমন আছো? ”
” জ্বি আন্টি আমি ভালো আছি। ”
” এসো এসো ভেতরে এসো। তুমি একা কেনো জামাই বাবা আসেনি? ”
” এসেছে। উনি আমাকে নামিয়ে দিয়ে একটা কাজে গেছেন। সেখান থেকে এসেই আমাকে সাথে করে নিয়ে যাবে। ”
” আচ্ছা ঠিক আছে তুমি বসো আমি নাস্তা
নিয়ে আসছি। ”
” আন্টি এসবের…. ”
অবনিকে চুপ করিয়ে দিয়ে ঝর্না বেগম অবনিকে সোফায় বসিয়ে বললেন –
” একদম চুপচাপ বসে থাকো। আমি কোনো কথা শুনতে চাইনা। ”
অবনি আর শব্দ করলোন। তিনি রান্নাঘরে গিয়ে ফলের জুস নিয়ে এলেন অবনির জন্য।
খাওয়া শেষে অবনি বলল-
” আন্টি রুপা কোথায়? ”
” রুপা রুমেই আছে। জানোই তো ওকে আজকে ছেলেপক্ষ দেখতে আসবে। মেয়েটার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে দেখে মন খারাপ করে নিজেকে ঘরবন্দী করে রেখেছে। খাওয়া দাওয়াও ঠিক মতো করছেনা। আচ্ছা তুমিই বলো ওর কি এখন এসব ছেলেমানুষী করার বয়স?
মেয়ে হয়ে যখন জন্মেছে পরের ঘরে তো যেতেই হবে তাইনা? তুমি একটু ওকে বোঝাও মা। ”
.
অবনি রুপার রুমে গিয়ে দেখলো রুম ফাঁকা। বারান্দায় উঁকি দিতেই চোখ পড়লো রুপার দিকে। রুপা বারান্দার রেলিং এর সাথে মাথা ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
অবনি রুপার দিকে এগিয়ে গেলো। পেছনে কারো উপস্থিতি উপলব্ধি করে রুপা চোখের পানি মুছে নিয়ে পেছন ফিরে দেখলো অবনি দাঁড়িয়ে আছে।
রুপা মুখে হাসির রেখা টেনে বলল-
” কিরে তুই তো এসেছিস? আমি তো ভাবলাম আসবিনা। চল রুমে চল। ”
” কি হয়েছেরে তোর? ”
” ককই? আমার আবার কি হবে? ”
” রুপা আমার সাথে এসব নাটক করার দরকার নেই। তোর চেহারা দেখেই বোঝা যাচ্ছে কিছু একটা হয়েছে।
দেখ আমি তোর বেস্টি। তুই যদি আমার থেকে লুকোচুরি করিস তাহলে কি আমি ধরে নিবো…..”
অবনিকে থামিয়ে দিয়ে রুপা বলল-
” আরে বলছি তো আমার কিছু হয়নি। ”
” তাহলে তোর মুখে হাসি নেই কেনো? খাওয়া দাওয়া ঠিকমতো করছিসনা কেনো? ”
” কি করে হাসি খুশি থাকবো বল? মানুষ তখনই খুশি হয় বিয়েটা যখন তার প্রিয় মানুষটির সাথে হয়। কিন্তু আমার? আমি তো এতোটা বছর ধরে একটা ভুল মানুষকে নিয়ে স্বপ্ন দেখে এসেছি। ”
” কার কথা বলছিস তুই? ”
” জিসান। ”
” জিসান? তুই জিসান কে ভালোবাসিস আমাকে আগে বলিসনি কেনো? ”
অবনির কথা শুনে রুপা অবনির গলা জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলো।
” আমি কাউকে বলিনিরে। আমি জিসান কেও কখনো জানাইনি। আমি ভেবেছিলাম জিসানও হয়তো আমাকে ভালোবাসে। কিন্তু না আমি ভুল ছিলাম। জিসান আমাকে তোর মতোই বন্ধু ভাবে। এরচেয়ে বেশি কিছু নয়। ”
” রুপা রিলাক্স। তুই শান্ত হ। কান্না করিসনা।
তুই জিসানকে ভালোবাসিস। সিরিয়াসলি! আবার কেঁদে কেটেও বুক ভাসাচ্ছিস। তুই কি বোকা রে। তুই জিসানকে ব্লক না করে তোর হবু বরকে নিয়ে পিক আপলোড দিয়ে দেখিয়ে দিতি তুইও এতো ছ্যাচড়াঁ নোস। জিসান ছাড়াও তোর জীবন চলবে। তা না করে সাবানার মতো কেঁদে কেটে সমুদ্র বানিয়ে ফেলছিস! লাইক সিরিয়াসলি? ”
রুপা একটু সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল-
” এক মিনিট এক মিনিট। আমি যে জিসানকে ব্লক করলাম সেটা তুই কিভাবে জানলি? কই আমি তো তোকে এটা জানাইনি। ”
অবনি এবার থতমত খেয়ে বোকা হাসি দিয়ে বলল-
” আব….আআরে এটা আবার বলে দিতে হয় নাকি৷ তুই আমার বান্ধবী বলে কথা। তোর সম্পর্কে এতটুকু ধারনা করে নিতে পারবোনা! কেনো আমার ধারনা কি মিথ্যে? তুই ব্লক করিসনি? ”
” করেছি তো। এই সত্যি করে বল তুই কি আমার কাছে কিছু লুকাচ্ছিস? ”
” ওই দেখো। এজন্যই বলে কারো জন্য দুঃখ প্রকাশ করতে নেই। আমারই ভুল হয়েছে তোকে সান্ত্বনা দেওয়াই আমার উচিত হয়নি। ”
” আরে তুই রাগ করছিস কেনো? আমি তো এমনি বললাম। চল আমাকে রেডি করিয়ে দিবি। ”
রুপার কথা শুনে অবনি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বলল-
” এ্যাঁ? ”
” এতো অবাক হওয়ার মতো কিছু হয়নি। ওই জিসানের বাচ্চাকে বুঝিয়ে দিতে হবে না। আমাকে যতোটা অবলা নারী ভাবে ও আমি ততোটাও অবলা নই হুহ্। ”
_______________
ছেলেপক্ষ চলে এসেছে। অবনি রুপাকে রেডি করে তাদের সামনে নিয়ে গেলো। সিঁড়ির মুখে দাঁড়িয়ে সামনে তাকাতেই রুপা ভুত দেখার মতো চমকে গেলো। রুপাতো নিজের চোখকেই বিশ্বাস করতে পারছেনা।
সোফায় জিসান আর তার পরিবার বসে আছে। জিসান রুপাকে চোখ মারতেই রুপা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে চোখ সরিয়ে নিলো।
অবনি রুপার পিঠে চাপড় মেরে বলল-
” আচ্ছা। তলে তলে এতো কিছু আর আমাকে জানাওনি। ”
রুপা অবনির হাত শক্ত করে চেপে ধরে বলল-
” আমি জানি না। আমি সত্যিই কিছু জানি না। ”
অবনি রুপাকে নিয়ে সোফায় জিসানের পাশে বসালো।
রুপা ইচ্ছে করে জিসানের পায়ে জোরে পা দিয়ে চাপ দিতেই জিসান ব্যাথায় পায়ের দিকে হাত বাড়াতে নিবে তখন জিসানের বাবা বলল-
” কিরে কোনো সমস্যা হচ্ছে? ”
” ননা। বাবা পপানি পানি খাবো। ”
” পানি তো টি টেবিলের উপর। তুই নিচে হাত বাড়ালি কেনো? ”
” মমশা! মশা কা’ম’ড় দিয়েছিলো তো তাই। ”
বাড়ির সকলে আহাম্মকের মতো চেয়ে রইলো। বাড়ির আসে পাশে বাগানও নেই। পুরো বাড়িতে স্প্রে করেছিলো তাহলে মশা আসলো কোথা থেকে।
তবুও সবাই নিশ্চুপ হয়ে স্বাভাবিক হয়েই বসলো।
জিসান খুব ভালো করেই বুঝতে পেরেছে ওর কথাটা কারো বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়নি৷ কিন্তু এটা না বলে তো উপায় ছিল না।
এদিকে রুপার তো হু হা করে হাসতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু সবার সামনে থাকায় হাসতেও পারছেনা।
জিসান তার বাবাকে বলল-
” বাবা। আমার সাথে একটু বাইরে আসবে। মানে তোমার সাথে একটু কথা ছিলো। ”
জিসানের বাবা স্বভাবসুলভ হেসে উঠে এলো।
তারা দুজন আড়ালে এসে দাঁড়ালো।
” কি হয়েছে এখানে ডেকে আনলি কেনো? ”
” বাবা তুমি একটু আমাকে রুপার সাথে কথা বলিয়ে দাওনা প্লিজ। ”
” আরে এই কথা বলার জন্য তুই আমাকে এখানে ডেকে আনলি? উনারা কি মনে করবে এখন। ”
” আরে কিছু মনে করবে না। তুমি একটু বলে দাও আমরা দুজন আলাদা কথা বলবো। ”
” আচ্ছা ঠিক আছে। এখন ভেতরে চল। ”
তারা ভেতরে আসতেই ঝর্না বেগম আমতা আমতা করে বললেন-
” কি ব্যাপার কোনো সমস্যা? ”
জিসানের বাবা জসিম রহমান হাসি দিয়ে বললেন-
” না না কোনো সমস্যা না। আসলে ছেলে মেয়েকে একটু আলাদা কথা বলতে দিলে ভালো হতো। ”
জিসানের বাবার কথা শুনে অবনি আগ বাড়িয়ে বলল-
” হ্যাঁ হ্যাঁ অবশ্যই। দুজন দুজনকে যতোটুকু চেনে এখন আরো বেশি করে চিনবে। ”
ঝর্ণা বেগম অবাক হয়ে বলল-
” মানে কি? ওরা দুজন দুজনকে আগে থেকে চিনতো নাকি? ”
রুপা হাত দিয়ে অবনিকে চিমটি কাটতেই অবনি বলল-
” না না আন্টি। আমি সেটা মিন করিনি। আমি বলতে চাইছি ওরা এখন তো দুজন দুজনকে দেখেছে। আলাদা ভাবে কথা বললে ভালো লাগা মন্দ লাগার একটা ব্যাপার আছে না? ভালো লাগলে হ্যাঁ আর মন্দ লাগলে না। ওটাই বলতে চাইছিলাম আরকি। ”
অবনির কথা শুনে ঝর্না বেগম স্বভাবসুলভ হেসে বললেন –
” ঠিক আছে যাও তোমরা কথা বলো যাও। ”
#চলবে….
( ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন৷ দুঃখিত দেরি করে দেওয়ায়। )