আঁধার_ভিড়ে_সন্ধ্যাতারা❤️ #লেখিকা-মালিহা_খান❤️ #পর্ব-৭

0
91

#আঁধার_ভিড়ে_সন্ধ্যাতারা❤️
#লেখিকা-মালিহা_খান❤️
#পর্ব-৭

বড় একটা শপিংমলে ঘুরে বেড়াচ্ছে মায়া।তার পাশাপাশি হাঁটছে ইতি।মাসের একটা দিন সে আসে নতুন জামাকাপড় কিনতে।আরো যা যা প্রয়োজন হয় তার সেগুলো কিনতে।রাশেদ চৌধুরিও এসবে কখনো মানা করেনা।তার তো মা নেই যে তার জন্য জামাকাপড় পছন্দ করে কিনে আনবে। সে জন্য মায়াকেই আসতে হয়।
তবে আজকের ব্যাপারটা একটু ভিন্ন।সবসময় এখানে আসলে তার সাথে থাকে কয়েকজন ছদ্দবেশী দেহরক্ষি।যেহেতু পাবলিক প্লেস তাই কেউ তাকে চিনেনা।তাই বিপদের শঙ্কাটাও থাকে কম।
সবসময় আশপাশ ঘিরে অনেকগুলো লোক থাকলেও আজকে তার সাথে আছে শুধু ইতি আর আর একজন বডিগার্ড।বলা বাহুল্য,এটা সেদিনের লোকটাই যে তাকে জামা নিয়ে সতর্ক করেছিলো।

মায়া ঘাড় ঘুড়িয়ে একবার দেখে।বেশ ভালো বডিগার্ডটা।এদিক উদিক তাকাতে তাকাতে তাদের পিছে পিছে হাঁটছে।দু’হাতে শপিং ব্যাগ।কি বলে যে বাবাকে মানিয়েছে মায়া নিজেও জানেনা।তবে মনটা আজকে ফুরফুরে লাগছে।সবসময় মনে হয় সে একটা জালে বন্দি।যেখানে শান্তিময় নি:শ্বাস নেয়ার সুযোগটাও নেই।

এসব ভাবতে ভাবতেই বেরিয়ে এলো তারা শপিংমল থেকে।প্রায় একঘন্টা ঘুরে ঘুরে সব জিনিস কিনে নিয়েছে
মায়া।লোকটা যেয়ে ব্যাগগুলো গাড়িতে রেখে দিলো।তারপর তার দিকে ফিরে বললো,

—“ম্যাম,কিছু খাবেন?

মায়া চমকায়।কেউ কখনো তাকে এভাবে কিছু বলেনা।সবাই শুধু দায়িতই পালন করে যায়।মায়া কিছু বলার আগেই ইতি বললো,
—“ম্যাম সেই দুপুরে খেয়েছে।এখন প্রায় সন্ধ্যা হতে চললো।যান আপনি কিছু নিয়ে আসেন।

লোকটা চলে যেতেই তাদের একদম সামনে একটা গাড়ি থামলো।আর ভেতর থেকে কেউ দরজা খুলে হ্যাচকা টানে মায়াকে ভিতরে বসিয়ে দিলো।
—————–
রাশেদ চৌধুরির বাসার সামনে তুমুল ভীড়।সাংবাদিকরা জড়ো হয়ে আছে।পুলিশের গাড়ি দাড়িয়ে আছে দুইটা।বাড়ির ভেতর কঠিনমুখে দাড়িয়ে আছে রাশেদ।তার পাশে আজিজ।পুরো বাড়ি সার্চ করা হচ্ছে।ওলোট পাল্ট করা হচ্ছে সবকিছু।

—“অফিসার,আপনি আমাকে এভাবে হেনস্তা করতে পারেন না।ইউ ডোন্ট হ্যাভ দ্যাট রাইট”।

—“I have that right মি.চৌধুরি।আপনার বিরুদ্ধে প্রমান পেয়েছি আমরা।”

—“আমার ক্ষমতা সম্পর্কে ভুলে যাবেন না কিন্তু…আপনাকে চাকরি থেকে ধাক্কা দিয়ে বের করতে আমার দুই মিনিটও লাগবেনা”

—“এই ক্ষমতার গরম আর কয়দিন?আপনি হয়তো ভুলে যাচ্ছেন কয়দিন পরই ইলেকশন।জনগন যে পরিমাণে ক্রুদ্ধ আপনার উপর।পরিণতিটা আন্দাজ করতে পারছেন তো?বলেই হাসে অফিসার সজীব।

—“তোকে তো আমি…?”

-“কাম ডাউন মি.চৌধুরি।একজন সিনিয়র অফিসারকে তুইতুকারি করার অপরাধে কিন্তু আপনাকে জেলে ভরতে আমারো দুইমিনিট লাগবেনা”।

পরিস্থিতি বাইরে চলে যাচ্ছে দেখে আজিজ কাঁচুমাচু করেদ্রুত বলে,
—“স্যার,শান্ত হন।মাথা গরম করেননা।”

রাশেদ চৌধুরি জোরে একটা নি:শ্বাস নেয়।মাথা রীতিমত ঘোরাচ্ছে তার।
তখনই একজন কনস্টেবল আসে।অফিসার সজীবকে উদ্দেশ্য করে বলে,
—“স্যার,এদিকে আসুন।”

অফিসার সজীব রাশেদ চৌধুরির দিকে তাকিয়ে ভ্রু উচিয়ে একটু হাসে।রাশেদ চৌধুরির মাথায় আগুন ধরে যায়।অহংকারে যার মাটিতে পা পারেনা,তাকে আজ একটা সামান্য অফিসার তিরস্কার করছে।
———–—–—
মায়া হতভম্ব হয়ে চিল্লিয়ে বলে,
—“আপনি?”

আরিয়ান একটু কাছে যেয়ে মায়ার সিটবেল্ট বেঁধে দেয়।

—“কি করছেন?আমি বাসায় যাবোতো।”

আরিয়ান নিজের সিটবেল্ট বেঁধে গাড়ি স্টার্ট দিতে দিতে বলে,
—“তুমি এখন আমার সাথে যাবে।”

মায়া অবাক হয়।আরিয়ানের কন্ঠে অধিকার প্রকাশ পাচ্ছে।সে মানা করার মতো কিছু খুঁজে পায় না।
আমতা আমতা করে বলে,
—“কিন্তু..

জানালায় ঠকঠক আওয়াজে সেদিকে তাকায় মায়া।হাতে খাবারের প্যাকেট আর কোকের বোতল নিয়ে দাড়িয়ে আছে বডিগার্ডটা।মুখে হাল্কা হাসি।আরিয়ান ঝুকে গিয়ে মায়ার পাশের জানলাটা খুলে দেয়।খাবারটা হাতে নিয়ে বলে,

—“তুমি ইতিকে নিয়ে চলে যাও আমি ওকে সময়মতো পৌছে দেবো।”

মায়া কিছু বলার আগেই আরিয়ান জানলার কাঁচ উঠিয়ে দেয়।মায়ার হাতে খাবারের প্যাকেটটা ধরিয়ে দিয়ে নিজের সিটে বসে।

—“তোমার কি মনে হয় আমি তোমার কোনো ক্ষতি করবো?”

মায়া দুইদিকে মাথা নাড়ায়।যার অর্থ”নাহ্”।

আরিয়ান একটু হাসে।মেয়েটা কত সহজেই সবাইকে বিশ্বাস করে ফেলে।এই সরলতায় সে বিমোহিত।

আরিয়ান জানে রাশেদ চৌধুরির বাসায় এখন তুলকালাম অবস্থা।সেইসব ঝামেলা থেকে মায়াকে দুরে রাখতেই সে তাকে নিজের কাছে নিয়ে এসেছে।বডিগার্ড ছেলেটা তারই পাঠানো।সেদিনের হামলার পর মুলত মায়ার খেয়াল রাখার জন্যই তাকে পাঠিয়েছে সে।কারণ তার দৃঢ় বিশ্বাস হামলাকারীরা বাড়ির ভিতরেই আছে।

গাড়ি থামে নদীর ধারে।জায়গাটা বেশ সুন্দর।লোকজনের আনাগোনাও কম।প্রায় সন্ধ্যা হয়ে যাওয়ায় চারদিকের আলোটাও কমে এসেছে।মায়ার হাত ধরে তাকে গাড়ি থেকে নামায় আরিয়ান।এগিয়ে যায় নদীর দিকে।
মায়া মুগ্ধ নয়নে চারপাশে দেখছে।আজ পর্যন্ত সে কখনো এরকম জায়গায় আসেনি।আর এরকম একা একা তো নয়ই।প্রাণ ভরে শ্বাস নিলো সে।নিজেকে মুক্ত পাখি মনে হচ্ছে।প্রচন্ড খুশিতে মুখে চওড়া হাসি ফুটে ওঠে।
আরিয়ান আড়চোখে তাকায়।মায়াকে এই প্রথম হাসতে দেখছে সে।তার মুখেও মৃদু হাসি ফুটে ওঠে।অল্পতেই কেউ এতটা খুশি হতে পারে?নদীর ধারে যেয়ে দাড়ায় তারা।সুর্য ডুবে যাচ্ছে।তার সোনালি আভা পরেছে নদীতে।সেই আভা যেন মায়ার চোখে মুখেও।তার বাম হাত আরিয়ানের হাতে আবদ্ধ।সেই হাত হাল্কা ঝাঁকিয়ে সে বলে,

—“আপনি জানেন আমি কখনো এরকম জায়গায় ঘুরতে আসিনি।কখনোই প্রকৃতির এতটা সৌন্দর্য উপভোগ করিনি।অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।”

আরিয়ান তার বাহু জড়িয়ে কাছে টেনে নেয়।চুলের ভাঁজে আলতো করে ঠোঁট ছুইয়ে দেয়।মায়া লজ্জা পেলেও কিছু বলেনা।চুপ করে আরিয়ানের সাথে লেপটে থাকে।তার স্বৃতির পাতায় জমা হচ্ছে একরাশ স্বরণীয় প্রহর।

—————
বাসায় ঢুকেই মায়া লক্ষ্য করে ভয়াবহ নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে,সার্ভেনটরা সবাই বাসা পরিষ্কার করছে।সবকিছু কেমন ওলোট পালোট।হলরুমে লাগানো বড় টি ভিতে নিউজের শব্দ কানে আসছে।

“কল রেকর্ডিং ফাঁস।বাসা থেকে অবৈধ অস্ত্র,মাদকদ্রব্য উদ্ধার।নানা দূর্নীতির বিরুদ্ধে প্রমান স্বরুপ
সন্ধ্যায় নিজ বাসা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে মিনিস্টার রাশেদ চৌধুরিকে”…

~চলবে~

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here