আঁধার_ভিড়ে_সন্ধ্যাতারা❤️ #লেখিকা-মালিহা_খান❤️ #পর্ব-২৩

0
81

#আঁধার_ভিড়ে_সন্ধ্যাতারা❤️
#লেখিকা-মালিহা_খান❤️
#পর্ব-২৩

আরিয়ান ভ্রু কুচকায়।পরণের কালো রংয়ের শার্টের হাতা কুনুই পর্যন্ত উঠাতে উঠাতে বলে,
—“তুমি অফিসে যেয়ে কি করবে?”

মায়া এতক্ষন উৎসুক দৃষ্টিতে তার দিকে চেয়ে ছিলো।মনের মতো উওরের জায়গায় পাল্টা প্রশ্নে কিছুটা হতাশ হলো সে।চোখে মুখে যথাসম্ভব অসহায়ত্ব ফুটিয়ে কাতর কন্ঠে বললো,
—“আমার ভালোলাগেনা বাসায়।একা একা লাগে।”

—“একা একা কোথায়?ইতি আছেতো।”

আরিয়ানের উওরটা বিশেষ পছন্দ হয়নি মায়ার।সে তড়িৎ গতিতে বলে,
—“আপনি নিয়ে যাবেন নাকি না?”

আরিয়ান উওর না দিয়ে ফোনটা পকেটে ঢুকায়।ধীরে সুস্থে হাতের ঘড়িটা পরে নেয়।চুলগুলো ব্রাশ করে।তাকে দেখে মনেই হচ্ছেনা মায়ার প্রশ্নটা আদৌ তার কানে গেছে।মায়া উশখুশ করে।কিছুক্ষন পর অধৈর্য হয়ে বলে,
—“আপনি কি আমার কথা শুনতে…”

তার কথা শেষ হওয়ার আগেই আরিয়ান ঘুরে গিয়ে তার বাহু ধরে উঠায়।নিজের পিঠ বরাবর দাড় করিয়ে পেছন থেকে দু”হাতে পেট জড়িয়ে ধরে।
মায়া বেকুব বনে যায়।হঠাৎ এমন কিছুর জন্য প্রস্তুত ছিলোনা সে।মুহুর্তেই লজ্জা নেমে আসে সারা মুখে।

আরিয়ান তার কাঁধে নাক ঘঁষতে ঘঁষতে ফিসফিসিয়ে বলে,
—“বাসায় ভালো লাগেনা নাকি আমাকে ছাড়া ভালো লাগেনা?”

মায়া কেঁপে উঠে।আধো আধো লজ্জামিশ্রিত কন্ঠে বলে,
—“সেরকম কিছু না।..ছাড়ুনতো।”

—“কেন ছাড়বো?”হুম?বলে মায়ার কানের একটু নিচে গভীরভাবে চুমু এঁকে দেয় আরিয়ান।”

মায়া লাফিয়ে উঠে।খিলখিলিয়ে হেসে দিয়ে বলে,
—“উফ্।সুড়সুড়ি লাগছে।মুখ সরান প্লিজ।

আরিয়ান মুখ উঠিয়ে ফেলে।মায়ার কাঁধের সরে যাওয়া ওড়না ঠি ক করে দিয়ে তাকে ছেড়ে দাড়ায়।
মায়া হাফ ছেড়ে বাঁচে।এখনো মনে হচ্ছে,ওখানে কেউ সুড়সুড়ি দিচ্ছে।ছোটবেলা থেকেই তার প্রচন্ড সুড়সুড়ি লাগে।আর স্পর্শকাতর জায়গাগুলোতে তো সবচেয়ে বেশি।

—“আসো,দেরি হয়ে যাচ্ছে।”
বলে মায়ার হাত ধরে তাকে নিয়ে বেরিয়ে যায় আরিয়ান।মায়ার মুখে হাসি ফুটে উঠে।তারমানে তাকে সাথে নিয়ে যাবে আরিয়ান।
———––——
আরিয়ানের কেবিনে আরিয়ানের পাশে আরেকটা চেয়ার রাখা হয়েছে।সেটাতেই দুই পা ভাঁজ করে আরাম করে বসে রয়েছে মায়া।তার মাথাটা আরিয়ানের হাতের বাহুতে হেলান দাওয়া।চোখ ল্যাপটপের স্ক্রীনে নিবন্ধ।আরিয়ান সেদিকে মনোযোগ দিয়ে কিছু একটা দেখছে।অন্য কোনোদিকে যেন খেয়ালই নেই তার।মায়াও কিছু বলছেনা।মূলত আরিয়ানকে বিরক্ত করতে চাচ্ছেনা সে।

খানিক পরে পাশ থেকে ধোঁয়া উঠা কফির মগে হাতে নিলো আরিয়ান।তারপর মায়ার দিকে না তাকিয়েই মগটা একটু সামনে ধরে বললো,

—“খাবে?”

মায়া আপত্তি করে বললো,
—“নাহ্,আপনি খান।এঁটো হয়ে যাবে।”

আরিয়ান নির্বিকার ভঙ্গিতে মায়ার ঠোঁটে মগটা ঠেকিয়ে ধরল।মায়া মুখ খুলছেনা দেখে হাল্কা একটু চেপে ধরলো।এবার হা করলো মায়া।এক চুমুক খেয়ে বললো,
—“আপনি খাবেন না?”
আরিয়ান আবারো তাকে আরো এক চুমুক খাইয়ে দিয়ে বললো,
—“আবার আনিয়ে নিবো নে।তুমি খাও।”

চুপচাপ আরিয়ানের হাত থেকে কফি খেতে লাগলো মায়া।অর্ধেক খেয়ে বললো,
—“আর খাবো না”।

আরিয়ান মগ সরিয়ে নিলো।ল্যাপটপে কিছু একটা টাইপ করতে করতে মগের বাকি অর্ধেক কফিতে চুমুক দিতেই মায়া আৎকে বললো,
—“আরে এটা আমার এঁটোতো..”

—“তো?”

মায়া কিছু বলার জন্য মুখ খুলেও চুপ হয়ে গেল।আরিয়ানের এটা একটা অদ্ভুত ক্ষমতা।কথা দিয়েই মানুষকে চুপ করিয়ে দিতে পারে।অন্তত তাকে তো অবশ্যই।
মায়া কোন উওর দিচ্ছেনা দেখে আরিয়ান এক চুমুকে অবশিষ্ট কফিটা শেষ করে ধীর কন্ঠে বলে,
—“এই কফির স্বাদ আমার জন্য কি তা তোমার বুঝে আসবে না মায়াবতী।”
॥॥
হুট করে নক না করেই কেউ একজন কেবিনে প্রবেশ করে।মায়া চমকে তাকায়।সামনে একটা ছেলেকে দেখতে পেয়ে দ্রুত পা নামিয়ে ঠিক করে বসে সে।ছেলেটার পরণে ক্যাজুয়াল গেট-আপ। ব্লু কালার টি-শার্টের সাথে ব্ল্যাক জিন্স।উজ্জ্বল শ্যামলা গড়নের সুদর্শন একটা ছেলে।কিন্তু ছেলেটা এমন নক না করেই ঢুকলো কেনো?দেখেতো ইম্পলোয়ি মনে হচ্ছেনা।
আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে দেখলো সে চোখ-মুখ শক্ত করে রেখেছে।রাগে হাতগুলো মুঠো করা।চোখ লাল হয়ে আছে।আরিয়ান কিছু বলার আগেই ছেলেটা মায়ার দিকে হাত বাড়িয়ে সহাস্যমুখে বললো,
—“ভাবি,নিশ্চয়ই?কেমন আছেন?”

মায়া টেবিলে রাখা হাত গুটিয়ে নিল।আরিয়ানের দিকে একবার তাকিয়ে আমতাআমতা করে বললো,
—“ভা..ভালো।”

ছেলেটা বাড়িয়ে রাখা হাতটা সরিয়ে নেয়।আরিয়ান শীতল কন্ঠে বলে উঠে,
—“কোন সাহসে এখানে এসেছিস রাহাত?”

—“আহা,এতো রেগে যাচ্ছো কেন ভাইয়া?আমি তো আমার এই চিনির মতো মিষ্টি ভাবিটাকে দেখতে এলাম।মানতে হবে ভাইয়া,ভাবি ইস্ সো হ…

আরিয়ান সজোরে চেয়ার ছেড়ে উঠে রাহাতের কলার চেপে ধরে।
—“ডোন্ট ক্রস ইউর লিমিট রাহাত।মামা-মামির দিকে তাকিয়ে তোকে কিছু বলিনা বলে এটা ভাবিসনা তোর সব কিছু সহ্য করবো।মায়ার ব্যাপারে একটা কথাও যদি তোর মুখ দিয়ে বের হয়…I swear,মামা-মামির ব্যাপারে ভুলে যাবো আমি।”

রাহাতও গর্জে উঠে বলে,
—“তুমি তাদের মনেই রেখেছিলা কবে?তাদের কথা ভাবলে তুমি অন্তত আমার সাথে ওই…।

ততক্ষনে তন্ময় চলে এসেছে।মায়া হতভম্ব হয়ে দাড়িয়ে আছে।তন্ময় একবার মায়ার দিকে তাকিয়ে দ্রুত রাহাত কে আরিয়ানের থেকে ছাড়িয়ে নেয়।
—“ওকে নিয়ে যা তন্ময়।আমি কিন্তু কিছু একটা করে ফেলবো।

তন্ময় মাথা নাড়ায়।রাহাত নিজেই ঝামটা মেরে তন্ময়কে ঠেলে দিয়ে।নিজের কলার ঠিক করে বলে,
—“আমিই যাচ্ছি।তারপর একটু হেসে হাত নাড়িয়ে বলে,”গুড বাই ভাবি।সি ইউ সুন।”

মায়া থতমত খেয়ে দাড়িয়ে থাকে।প্রতিত্তরে কিছু বলেনা।রাহাত-তন্ময় বেরিয়ে যেতেই আরিয়ান জোরে জোরে কয়েকটা শ্বাস নেয়।ঢকঢক করে এক-গ্লাস পানি খেয়ে ফেলে।
কিছুটা শান্ত হতেই মায়া তাকে জিজ্ঞেস করে,
—“উনি কে ছিলেন?”

—“আমার মামার ছেলে।”

—“ওহ্,আপনার মামাতো ভাই?”

—“নো,আমার ভাই না ও।ওর মতো একটা ছেলে কখনোই আমার ভাই হতে পারেনা।কখনো ওকে আমার ভাই বলবেনা।”

আরিয়ানের এমন রাগের কারণ বুঝলোনা মায়া।আর কিছু বলার সাহসও হলোনা তার।চুপচাপ বসে রইলো সে।
————––
গাড়ির পিছের সিটে আরিয়ানের বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছে মায়া।আরিয়ান সযত্নে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।বাইরে গাঢ় সন্ধ্যা নেমে এসেছে।তন্ময় গাড়ি ড্রাইভ করছে।

গাড়ি থামে নির্জন জায়গায়।ঘুটঘুটে অন্ধকার চারপাশে।কোলাহল নেই কোনো।তন্ময় নি:শব্দে গাড়ি থামিয়ে বেরিয়ে যায়।আরিয়ান মায়াকে সিটে শুইয়ে দেয়।মেয়েটা গভীর ঘুমে আছে।
গাড়ির সব জানালা দরজা লক করে দিয়ে সেও নি:শব্দে বেরিয়ে যায়….

~চলবে~

[আপনারা কমেন্ট করেন না কেন?🙂💔]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here