আঁধার_ভিড়ে_সন্ধ্যাতারা❤️ #লেখিকা-মালিহা_খান❤️ #পর্ব-২৪

0
88

#আঁধার_ভিড়ে_সন্ধ্যাতারা❤️
#লেখিকা-মালিহা_খান❤️
#পর্ব-২৪

আধমরা অবস্থায় অন্ধকার রুমে পরে আছে একটা ছেলে।মুখ বাঁধা নেই।হাত পাও বাঁধা নেই।তবুও দু-দিন না খেয়ে থাকায় উঠার অবস্থা নেই তার।হঠাৎ দরজা খোলার শব্দ হয়।ছেলেটা একবার তাকিয়ে আবার চোখ বন্ধ করে।শরীরে কোন শক্তি নেই।একটু পানি পেলে বেশ হতো।

দরজা খুলে প্রবেশ করে আরিয়ান।পেছনে পেছনে তন্ময় ঢুকে হাল্কা বাতির সবুজ লাইটটা জালিয়ে দেয়।
ঘরটা কেমন একটা ভয়াবহ রুপ ধারণ ধারণ করে।ছেলেটা বহুকষ্টে উঠে বসে।আরিয়ান শান্ত কন্ঠে বলে,

—“কেমন আছো জার্নালিস্ট জীবন মাহমুদ?”

জীবন আধো আধো চোখে একবার তাকালো।মৃদু গলায় বললো,
—“এক..একটু…পা…পানি..

আরিয়ান একটু হেসে বললো,
—“তন্ময় ওকে পানি দে।ঠান্ডা পানি খাবে নাকি গরম পানি?

জীবন অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকালো।চোখে মুখে ভয় স্পষ্ট।আরিয়ান এখন ও তার দিকে উওরের আশায় চেয়ে আছে।জীবন কিছু বলার সাহস পাচ্ছে না।আরিয়ান তার সামনে এক হাঁটু ভাঁজ করে বসলো।তন্ময় কোথা থেকে যেন একটা ঠান্ডা পানির বোতল এগিয়ে দিলো।আরিয়ান সেটা হাতে নিয়ে ঘোরাতে ঘোরাতে বললো,

—“এখন চুপ যে?ওইদিন তো খুব কথা বলছিলে।আমাকে ছাপিয়ে মায়াকেও প্রশ্ন করছিলে।জঘন্য সব প্রশ্ন।
ভুলে গেলে নাকি জার্নালিস্ট জীবন?”

—“স্যা..স্যার,মাফ করে দেন স্যার।আমার…ভুল হয়ে গেছে।”

আরিয়ান চিন্তিত ভঙ্গিতে বলে,
—“কিন্তু আমি যে এতোটা উদার না।এতটা দয়ালু ও না।কি করা যায় বলোতো?আচ্ছা সেসব পরে,আগে তুমি পানি খাও।নাও,এ্যান্ড ডোন্ট ওয়ারি,এটায় কিছু মিশানো নেই”

বলে ছেলেটার হাতে পানি ধরিয়ে দিল আরিয়ান।জীবন হুড়মুড় করে পুরো পানির বোতল খালি করে ফেললো।অনেক বেশি পিপাসু ছিলো সে।এখন একটু অভয় লাগছে তার।
—“ধন্যবাদ স্যার।আমি আসলে সেদিন না বুঝেই…”

—“এই পৃথিবীতে সবাই বুঝেই সবকিছু করে জীবন।নিজের সার্থের জন্য,সবাই স্বার্থপর।সবাই।

আরিয়ান শব্দ করে হেসে,পরমূহুর্তেই চোখমুখ শক্ত করে ফেলে।জীবন আবারো ভয় পেয়ে যায়।আরিয়ানের গতিবিধি বুঝতে পারছেনা সে।
আরিয়ানের ইশারা করার আগেই তন্ময় দরজাটা ভিড়িয়ে বেরিয়ে যায়।সে জানে এখন কি হবে।
নিশব্দে হেটে সে গাড়ির পাশে এসে দাড়ায়।চাঁদ উঠেছে।চারদিকের অন্ধকার সেই আলোর কাছে ফিঁকে হয়ে গেছে।চাঁদের আলোয় গাড়ির কাঁচের ভিতর দিয়ে মায়াকে দেখা যাচ্ছে।মুখের উপর চুলের কারণে চেহারা দেখা যাচ্ছেনা মেয়েটার।তন্ময় মৃদু হেসে চোখ সরিয়ে নেয়।আরিয়ান মেয়েটাকে অতিরিক্ত ভালোবাসে।অতিরিক্ত বলতে ভয়ানকভাবে অতিরিক্ত।আরিয়ানের এই হিংস্র রুপটা মায়া যদি দেখতো তখন সে কি করতো?তার মতোই ভয় পেতো নিশ্চয়ই।আরিয়ান যখন হিংস্র হয়ে উঠে তখন সে নিজেই ভয় পেয়ে যায় আর সেখানে মায়া তো ভয়ে অজ্ঞানই হয়ে যেতো।মেয়েটা যে ভীতু!!দীর্ঘ:শ্বাস ছাড়ে তন্ময়।সে কখনো ভাবেওনি আরিয়ান কাউকে এতোটা ভালোবাসবে।হাহ্।

জীবন ভয়ে কাঁপছে।আরিয়ানের হাতে একটা ধারালো ছুরি চকচক করছে।একদম নতুন বোঝাই যাচ্ছে।
আরিয়ান ছুড়িটায় নিজের আঙ্গুল স্লাইড করতেই আঙ্গুলের ডগা কেটে রক্ত বেরিয়ে এলো।আরিয়ান রক্তের দিকে তাকিয়ে বললো,
—“তোকে আমি কিছুই করতাম না বুঝলি?কিন্তু ওইয়ে তুই মায়াকে প্রশ্ন করেছিলি।আমি ওকে জোড় করিনা কিনা,একসাথে থাকি কিনা সেসব জিজ্ঞেস করছিলি।তুই জানিস মায়া কতটা কেঁদেছিলো?ডু ইউ হেভ্ এনি আইডিয়া?”

জীবন বুঝতে পারছে তার আর বাঁচার কোন চান্স নেই।তাই সে মুখ দিয়ে টু শব্দ টাও করলোনা।আরিয়ান বাঁকা হেসে গালের ভিতর দিকে সজোরে ছুড়ি ঢুকিয়ে দিলো।চোখ বড় বড় হয়ে গেলো জীবনের।ছুড়িটা একটানে বের করে অপরপাশের গাল দিয়ে ঢুকিয়ে দিলো আরিয়ান।যন্ত্রনায় ছটফট করতে করতে চোখ বুজে এলো জীবনের।আরিয়ান আরেকটা ছুড়ি তার বুক বরাবর ঢুকিয়ে দিয়ে সরে এলো।তারপর সময় নষ্ট না করে ঘরের লাইট নিভিয়ে বেরিয়ে এলো।

——————
বাসায় এসে মায়াকে কোলে করেই রুমে নিয়ে আসলো আরিয়ান।বিছানায় সুইয়ে দেয়ার আগেই চোখ খুললো মায়া।কিছু বলার আগেই আরিয়ান তাকে বসিয়ে দিয়ে বললো,
—“গাড়িতে ঘুমিয়ে পরেছিলে মায়াবতী।তাই আর ডাকিনি।এখন যখন উঠেই গিয়েছো আমি ইতিকে ডেকে দিচ্ছি।চেন্জ করে ফ্রেশ হয়ে নাও।ঠিকাছে?”

মায়া উপরনিচে মাথা নাড়ায়।আরিয়ান তার কপালে চুমু খেয়ে বেরিয়ে যায়।
॥॥
মায়ার পরণে ঢিলেঢালা সাদা রংয়ের লং ফ্রক।ধবধবে ফর্সা গায়ে সাদা রংটা যেন একটু বেশিই মানিয়েছে।ইতি একটু আগেই তাকে রাতের খাবার খাইয়ে দিয়ে বেরিয়ে গেছে।যেহেতু তার ডানহাতে ব্যান্ডেজ তাই নিজে খেতে পারেনা।দুদিন যাবত ইতিই খাইয়ে দিচ্ছে।
এখন আর ঘুম আসছেনা।বিছানা ছেড়ে উঠে যায় মায়া।আরিয়ানের ঘরের কোঁণে একটা কাঁচের শোকেসের মতো আছে।সেটার মাঝের তাঁকে একটা ফ্রেমে বাঁধানো ছবি।একটা মেয়ে পাশে একটা লোক দাড়ানো।মেয়েটার কোলে একটা বাচ্চা।অদ্ভুত সুন্দর হাসি মেয়েটার।মায়া কাঁচ খুলে ছবিটা বের করে।
এরা নিশ্চয় আরিয়ানের মা-বাবা।আর কোলে আরিয়ান।মায়ার চোখ ভরে উঠে।এই সুন্দর পরিবারটাকে তার বাবা শেষ করে দিয়েছে।
সেসময়ই আরিয়ান পিছন থেকে বলে উঠে,
—“ওখানে কি করছো মায়া?”

মায়া চোখের জলটা মুছে নিয়ে পেছনে না ফিরেই বলে,
—“উনারা আপনার মা-বাবা তাইনা?যাদের সাথে আমার বাবা…”

আরিয়ান দ্রুত এগিয়ে যায়।মায়ার চোখে পানি না থাকলেও সে বুঝে মায়া কাঁদছিলো।ছবিটা নিয়ে সে একবার হাত বুলায়।তারপর সাবধানে ছবিটাকে জায়গামতো রেখে দিয়ে বলে,
—“আমার কাছে আব্বু-আম্মুর এই একটা ছবিই আছে,যেটা আমি সবসময়ই নিজের সাথে নিয়ে যেতাম।সেবার মামার বাড়িতেও সাথে নিয়ে গিয়েছিলাম।এজন্যই এটা এখনো আমার কাছে আছে।বুঝলে?”

—“হুম”।মায়া কথা বাড়ায়না।কথা বললেই কেঁদে দিবে।আর আরিয়ানের সামনে কেঁদে তাকে রাগাতে চাচ্ছেনা সে।

______________
ব্যালকনিতে দাড়িয়ে আছে আরিয়ান।একটা জরুরি বিষয়ে কারো সাথে ফোনে কথা বলছে।মায়া রুমে।রাত হয়েছে কিন্তু মেয়েটার চোখে ঘুম নেই।ঘরের লাইট জ্বালানো।মায়া বসে আছে বিছানায়।

অনেকক্ষণ যাবত ফোনে কথা বলছে আরিয়ান।বিছানায় বসে সেদিকেই তাকিয়ে রয়েছে মায়া।আরিয়ানের কথা বলার স্টাইলটা খুব সুন্দর।মায়া নিজে নিজেই হাসে।কিসব ভাবছে সে!
একসময় ধৈর্যহারা হয়ে ব্যালকনির দিকে এগিয়ে যায় সে।আরিয়ানের কাছাকাছি গিয়ে দাড়লে আরিয়ান কথা বলতে বলতেই তাকে একহাতে নিজের সাথে জড়িয়ে নেয়।মিনিটখানেক পরে ফোনটা কেটে দিয়ে বলে,
—“কি হলো?আজ ঘুমকাতুরে মায়াবতীর চোখে ঘুম নেই কেন?”

—“আপনি আমাকে ঘুমকাতুরে বলছেন কেন?।”

—“ঘুমকাতুরেই তো।এ পর্যন্ত কয়বার যে তোমাকে ঘুমন্ত অবস্থায় কোলে নিয়েছে হিসাব নেই।অজান্তেই যে তুমি কতবার আমার বুকে ঘুমিয়েছো তা আর নাই বললাম।সেগুলো শুধু আমিই জানি”

বলেই হাসে আরিয়ান।মায়ার মুখের সামনে চুলগুলো কানের পিছে গুঁজে দিয়ে হাত সরানোর সময় মায়া আৎকে উঠে তার হাত চেপে ধরে বলে,
—“আপনার হাত কাটলো কি করে?”

আরিয়ান কিছুক্ষন চুপ করে থাকে।মায়ার থেকে হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে মৃদু হেসে বলে,
—“সে কেটেছে একভাবে।তোমার জেনে লাভ নেই।”

—“কিন্তু…”

আরিয়ান তার কথা এড়িয়ে বলে,
—“সামনে তাকিয়ে দেখো।”

মায়া সামনে তাকায়।বাগানে জেনি আর জ্যাক পাশাপাশি বসে আছে।জেনি নিজের শরীর চাটছে বসে বসে।নিজেদের ঘরের ভিতর নেই তারা,ছাড়া অবস্থায় আছে।জ্যাক বারবার চেটে দিচ্ছে জেনিকে।মায়া হেসে ফেলে।
আরিয়ান মায়ার হাসি দেখে বলে,
—“ওরা কিন্তু ভাই-বোন না।হাজবেন্ড-ওয়াইফ।দেখেছো জ্যাক কতো কেয়ার করে জেনির।”

—“কেয়ার করে না ছাঁই।বারবার বিরক্ত করছে জেনিটাকে।”

—“এটা তোমার বিরক্ত করা মনে হলো?”

—“তা নয়তো কি?”

আরিয়ান হুট করে দুহাতে মায়ার কোমড় জড়িয়ে ধরে।পাশের দেয়ালের সাথে মায়াকে ঠেকিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে,
—“আমারো তোমাকে খুব “বিরক্ত” করতে ইচ্ছে করছে মায়াবতী।”

মায়া আরিয়ানের বাহু খামছে ধরে।লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে মাথা নিচু করে রাখে।আরিয়ান ঘোরলাগা দৃষ্টিতে একবার দেখে মায়ার গলায় ঠোঁট ডুবিয়ে দেয়।ভালবাসার পবিত্র স্পর্শে ভরিয়ে দিতে থাকে তার মায়াবতীকে…

~চলবে~

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here