#আমি_শুধুই_তোমার🌺
#পর্বঃ২১
#Arshi_Ayat
ইনশিরা শয়তানি হাসি দিয়ে বলল
“তুই গেস কর।”
এবার ইনান ইনশিরার সয়তানি উদ্দেশ্যটা বুঝে ফেলল তারপর বলল
“থাক থাক আর বলা লাগবো না।”
“না না বলমু না কেন?বলা লাগবো তুই শোন।”
“না বলিস না।”
“আরে শোন তোর নাকে লাগাবো।দেখতে পুরা বান্দরের মতো লাগবে।”
এটা বলেই ইনশিরা দৌড়ে রুম থেকে বের হতে নিলো।ওর পিছনে ইনানও ছুটলো।শেষ পর্যন্ত ইনশিরা বের হওয়ার আগেই ইনান ওর হাত ধরে ফেললো।তারপর নিজের দিকে ঘুরিয়ে ইনশিরার সামনের দিকের ছোটো ছোটো চুল গুলোকে কানের পাশে গুঁজে দিয়ে বলল
“আমার থেকে পালানো ওতো সহজ না।”
ইনশিরা ইনানের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে জিগ্যেস করলো
“মরে গেলে আটকবি কিভাবে?”
ইনান ইনশিরার গালে হাত রেখে বলল
“তোকে তো আটকাতে পারবো না কিন্তু তোর ভালোবাসা মনের কোণে খুব যত্নে আটকে রাখবো।”
ইনশিরা ইনানের বুকে মাথা রেখে বলল
“ভালোবাসি।”
“আমিও।(ইনান)
রাত নয়টা। কিন্তু এখনো আয়াশ হোটেলে ফিরছে না।ইনান আয়াশকে খুজতে গেছে।আদ্রি চিন্তায় পায়চারি করছে আর ইনশিরা চিন্তিত মুখে বসে আছে।হঠাৎ জুই এসে বলল
” আয়াশের কি হয়েছে?”
হঠাৎ জুই এর উপস্থিতি আদ্রির মোটেও ভালো লাগলো না তার উপরে এসেই আয়াশের কথা জিগ্যেস করছে।আয়াশ ওর কি হয় যে ওকে আয়াশের কথা বলতে হবে।ইনশিরা কিছু বলার আগেই আদ্রি বলল
“আয়াশের কি হয়েছে তা তোমাকে বলতে হবে কেনো?”
“না আর কি আমি শুনলাম আয়াশ নাকি এখনো হোটেলে ফেরেনি।”(জুই)
“শুনেছই তো তাহলে আবার জিগ্যেস করছো কেনো?”
ইনশিরা আদ্রিকে থামানোর জন্য বলল
“ধূর কি শুরু করেছিস তুই!বাদ দে না।ও জিগ্যেস করেছে তো কি হয়েছে?”
“না ও জিগ্যেস করতে পারবে না।”
ইনশিরা এবার জুইয়ের দিকে তাকিয়ে বলল
“সরি জুই আসলে আয়াশকে পাওয়া যাচ্ছে না তাই আমাদের মাথাটা গরম আছে।তুমি প্লিজ পরে আসো।”
জুই মলিন হেসে বলল
“আচ্ছা সমস্যা নেই।আমি চলে যাচ্ছি।আসলে আমি কালই নারায়ণগঞ্জ চলে যাচ্ছি।সেই জন্যই সবার সাথে দেখা করতে আসছিলাম।তোমাদের রুমের দিকে আসতেই শুনলাম আয়াশ এখনো ফেরে নি তাই জিগ্যেস করতে আসলাম।আচ্ছা আমি যাই তোমরা ভালো থেকো।”
তারপর জুই চলে গেলো।জুই যাওয়ার পর ইনশিরা বসা থেকে উঠে এসে আদ্রির কাঁধে হাত রেখে বলল
“জুই এর সাথে এই ব্যাবহারটা না করলেই পারতি।”
“বুঝতে পারি নি।আয়াশের চিন্তায় আরো মেজাজটা খারাপ ছিলো।”
“আচ্ছা পরে কথা বলে নিস।এখন একটু ইনানকে ফোন করে দেখি কি অবস্থা!”
ইনশিরা ফোন করতেই ইনান ফোন রিসিভ করে বলল
“হ্যাঁ ওরে পাইছি।আমাদের আসতে দশমিনিট লাগবে।”
“আচ্ছা আয়।”
১০/১৫ মিনিট পর আয়াশ ইনান দুজনেই ফিরলো।ফিরেই শাওয়ার নিতে চলে গেলো আদ্রির দিকে এক পলকও তাকালো না। ইনান ইনশিরা আর আদ্রিকে বলল
“শালা ৫০/৬০ টা পোলাপানের লগে খেলতাছিলো আর আমি ওরে খুজতে খুজতে শেষ। পরে একটা মাঠের মাঝখান থেকে নিয়া আসছি।”
ইনশিরা নিশ্চিন্তের সুরে বলল
“যাক পাইছিস।আমি ভাবছিলাম অঘটন ঘটাইতে গেছিলো।”
“নাহ ওই রকম কিছুই না।”
ইনশিরা আর ইনান আয়াশকে নিয়ে কথা বলছিলো।আর আদ্রি নিশ্চুপে ঘর থেকে বেরিয়ে ছাদে চলে গেলো।ইনশিরা হঠাৎ খেয়াল করে বলল
“কি রে আদ্রি কই রে?”
“আসলেই তো আদ্রি গেলো কই আবার।”
আয়াশ শাওয়ার শেষে বের হতেই ইনশিরা আর ইনানের কথা শুনে বলল
“ও ছাদে গেছে।”
“তুই কিভাবে জানলি?” (ইনশিরা)
“এতো রাতে ও কোথাও যাবে না আর ওর মন খারাপ তাই ছাদে গেছে।তোরা ওখানে গেলেই পেয়ে যাবি।”
“আচ্ছা তুইও চল না আমাদের সাথে।” (ইনান)
“না আমি যাবো না।” (আয়াশ)
“কেনো?(ইনশিরা)
” ভাল্লাগে না রে।”
“গেলে ভাল্লাগবে।”(ইনান)
এটা বলেই ওকে জোরাজুরি করে নিয়ে গেলো।আসলেই ছাদে গিয়ে আদ্রিকে পাওয়া গেলো।ও একা একা দাড়িয়ে আছে।পিছন থেকে ইনান আর ইনশিরা এসে ওর পাশে দাড়ালো আর আয়াশ ওদের থেকে একটু দূরে দাড়ালো।ইনশিরা আদ্রির কাঁধে হাত দিয়ে বলল
” এভাবে দাড়িয়ে আছিস কেনো?খাবি না?”
“না।” (আদ্রি)
“কি হইছে রে তোদের?তুই ও খাবি না আয়াশও খাবে না।কেন?”(ইনান)
আদ্রি কিছুই বলল না।আয়াশও নিশ্চুপ হয়ে দাড়িয়ে আছে।হঠাৎ করে জুই ও ছাদে চলে এলো।ওদের দেখে আবার নেমে যেতে নিলেই আদ্রি দ্রুত গিয়ে ওর হাত ধরে ফেললো তারপর বলল
” চলে যাচ্ছো কেনো?থাকো।আর আমি অনেক দুঃখিত তোমার সাথে ওইভাবে কথা বলার জন্য।প্লিজ আমাকে মাফ করে দিও।”
“আমি কিছু মনে করি নি।”
“আচ্ছা ঠিকাছে আসো আমাদের সাথে আড্ডা দিবে।”
জুই আর মানা করতে পারে নি।ইনশিরা,ইনান,আর আদ্রি একসাথে দাড়িয়েছে আয়াশ জুই এর সাথে দাড়িয়েছে।তারপর জুই সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলল
“কে গান পারো এখানে?”
“আদ্রি ফট করে বলে উঠলো আয়াশ অনেক সুন্দর গান…. ”
এতুটুকু বলেই থেমে গেলো।আদ্রির এই অসম্পূর্ণ কথাতেও জুই বুঝে গেলো আয়াশ সুন্দর করে গান গাইতে পারে।এবার আয়াশেকে খোচানো শুরু করলো গান গাওয়ার জন্য কিন্তু আয়াশ রাজি হচ্ছে না।হঠাৎ জুই আয়াশেট হাত ধরে জোরে জোরে বলল
“আয়াশ আমি তোমাকে ভালোবাসি।জানি তুমি আমাকে ভালোবাসো না।কাল আমি চলে যাচ্ছি।আমার শেষ ইচ্ছেটা পূরণ করো।হয়তো এটাই তোমার সাথে আমার শেষ দেখা।”
জুইয়ের কথা শুনে আয়াশ রাজি হলো।তারপর আয়াশ আদ্রির দিকে তাকিয়ে বলল গাইতে শুরু করলো।
“আমার ঘুম পাড়ানি বন্ধু তুমি কোন আসমানের তার,”
“কোন আসমানের জোস্না দিলা এই আসমানটা ছাড়া।”
ঘুণে ধরে কাচা বাঁশে,প্রেম অবুঝ মনে।
ষোলো আনাই দুঃখ দিলা চাইর আনার জীবনে।
মেঘের মতোওওওন
মেঘের মতোন উড়ে উড়ে,অন্তরটারে খালি করে করলা দিশাহারা…।
“আমার ঘুম পাড়ানি বন্ধু তুমি কোন আসমানের তারা”
“কোন আসমানের জোৎস্না দিলা এই আসমানটা ছাড়া।”
গান শেষে করতেই জুই হাত তালি দিয়ে বলল
“অনেক সুন্দর হইছে আয়াশ।”
আয়াশ মৃদু হেসে বলল
“ধন্যবাদ জুই।”
ইনশিরা আর ইনানও আয়াশের গানের প্রশংসা করলো কিন্তু আদ্রি চুপটি মেরে দাড়িয়ে রইলো।
পরেরদিন….
“আদ্রি দোস্ত ওঠ রেডি হতে হবে তো।”
“আরেকটু ঘুমাই না দোস্ত।”
“আচ্ছা ঘুমা আমি গেলাম।”
“আচ্ছা উঠছি।”
আদ্রি আর ইনশিরা রেডি হলো তারপর ওরা দুজনও আসলো এবং চারজন মিলে বেরিয়ে পড়লো।
দেখতে দেখতে দুদিন চলে গেলো।এই দুটোদিন যে কিভাবে গেলো চারজনের একজনও বুঝতে পারলো না।সারাদিন ঘোরাঘুরি আর বাসায় এসে ক্লান্ত শরীরে ঘুমিয়ে পড়া।কিন্তু এতো কিছুর মাঝেও আয়াশ আর আদ্রি আগের মতো কথা বলে না।প্রয়োজনের বেশী কোনো কথাই ওদের মুখ দিয়ে বের হয় না।আর ইনশিরা ইনানের প্রেম ভালোই চলছে তবে ইনশিররা চিন্তা হচ্ছে ওর মা আর বাবাকে নিয়ে।ওরা যদি না মেনে নেয়!
সবাই ব্যাগপ্যাক করছে কারণ একটুপরই ওরা ঢাকায় ফিরবে।সবার ব্যাগপ্যাক করা হলে সবাই গাড়িতে গিয়ে বসলো।আয়াশ ড্রাইভিং সিটে পাশে আদ্রি আর পিছনে ইনান আর ইনশির।আয়াশ আদ্রির সাথে বসতে চায় নি প্রথমে কিন্তু ইনানের অনেক জোরাজুরির পর বসেছে।ইনান আর ইনশিরা বকবক করছে কিভাবে ইনশিরার বাবা মা কে মানানো যায় সেটা নিয়ে।আর এদিকে আয়াশ আদ্রি কারো মুখেই কথা নেই।একসময় আদ্রির ঘুম চলে এলো আর ও আয়াশের কাঁধে ঢলে পড়লো আয়াশ কিছুই বললো না।এক হাত দিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো।পিছন থেকে আয়াশের কাজ দেখে ইনান আর ইনশিরা দুজনেই মুখ টিপে টিপে হাসছে।
রাত ৮.০০ টা..
আয়াশ ইনশিরাদের বাড়ির সামনে গাড়ি থামালো।ইনান আর ইনশিরা গাড়ি থেকে নামলো।আয়াশ ওদের দিজনকে গুড লাক দিয়ে গাড়ি ছেড়ে দিলো আর আদ্রি এখনো ঘুমাচ্ছে।ইনশিরা লজ্জায় ভয়ে ভিতরেই যাচ্ছে না।ইনান ওর হাত ধরে বলল
“কিচ্ছু হবে না চল তো।”
“আমার অনেক ভয় করছে।”
“ভয় পাস না।আমি আছি তো।”
ইনান আর ইনশিরা ভিতরে ঢুকলো।
এদিকে আয়াশ আর গাড়ি ড্রাইভ করছে আর মাঝে মাঝে ওকে দেখছে।আদ্রির বাড়ির সামনে এসে ওর কপালে একটা চুমু খেলো তারপর ওকে ঘুম থেকে তোলার জন্য হর্ন বাজানো শুরু করলো।হর্নের শব্দে বিরক্ত নিয়ে চোখ খুলতেই অনুভব করলো ও কারো কাধে মাথা দিয়ে আছে।…..
চলবে….
(ভুলত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।আমি এই একটা মাস অসুস্থ ছিলাম।আল্লাহর রহমতে আপনাদের দোয়ায় এখন ভালো আছি।আর এখন থেকে নিয়মিত গল্প পাবেন।)