আমি_শুধুই_তোমার🌺 #পর্বঃ২২ #Arshi_Ayat

0
32

#আমি_শুধুই_তোমার🌺
#পর্বঃ২২
#Arshi_Ayat

তারপর চোখ তুলে দেখলো ও আয়াশের কাধে মাথা দিয়ে এতক্ষণ ঘুমুচ্ছিলো।কিছু না বলে গাড়ি থেকে নেমে পড়লো সাথে আয়াশও নামলো।গাড়ির পিছন থেকে আদ্রির লাগেজটা নামিয়ে দিলো।লাগেজটা নিয়ে আদ্রি সোজা বাড়ির দিকে এগুতে লাগলো।এতক্ষণ ধরে দুজনের মধ্যে একটুও কথা হয় নি।আয়াশ মনে মনে অনেকবার চেয়েছিলো কথা বলতে কিন্তুু কষ্টটা বারবার মনে পড়ছিলো বলে আর কথা বলে নি কিন্তুু ভাবছিলো ও আগে কথা বললে কি হয়?তেমনটা এইদিকেও চলছে আদ্রি বাড়ির দিকে হাটছে আর ভাবছে এই বুঝি আয়াশ ‘এই মুটি শোন’ এটা বলে ডাক দিবে কিন্তুু ও ডাক দিচ্ছে না।সেই জন্য আদ্রিও আস্তে আস্তে হাটছে।দুমিনিটের রাস্তায় দশমিনিট লাগাচ্ছে। মনে হচ্ছে পিপড়াও ওর চেয়ে জোরে হাটে।কিন্তুু কি আর করার কারোই অভিমানের পাহাড় টলছে না।একপর্যায়ে আদ্রি বাড়ির ভেতরে চলে গেলো আর আয়াশও গাড়িতে উঠে নিজের বাড়ির দিকে গেলো।

এদিকে ইনশিরা আর ইনানকে একসাথে দেখে ইনশিরার বাবা-মা একটা শক খেলো।তারা হয়তো ভাবতে পারে নি তাদের মেয়ে আবার ফিরে আসবে।বিষ্ময়তা কাটিয়ে ইনশিরার বাবা ওর সামনে এসে ওকে কষে একটা থাপ্পড় দিলো তৎক্ষনাৎ জড়িয়েও ধরলো তারপর অশ্রুকন্ঠে বলল

“এভাবে কেনো ছেড়ে গিয়েছিলি।আমাদের কথা কি একবারও মনে হয় নি?তুই বলতেই পারতি তুই ইনানকে পছন্দ করিস।কেন বলিস নি?তুই কি মনে করেছিলি আমি তোদের সম্পর্কটা মানবো না?তোকে জোর করে বিয়ে দেবো?না রে আমি তোকে ভালোবাসি মা তোর খুশিতে আমার খুশি।”

ইনশিরা বাবার চোখের পানি মুছে দিয়ে বলল

“সরি বাবা।ভয়ে বলতে পারি নি।”

ইনশিরা বাবা মুখে হাসি ফুটিয়ে বলল

“আচ্ছা আয় ভিতরে আয়।”

ওরা ভিতরে আসতে নিলেই ইনশিরার মা বলে উঠলো

“ওই মেয়ে এই বাড়িতে আসতে পারবে না।”

মায়ের কথা শুনে ইনশিরা ইনান দুজনেই দাড়িয়ে পড়লো।ইনশিরার বাবা ওর মাকে গিয়ে বলল

“প্লিজ ওদের মাফ করে দাও।অনেকদূর থেকে এসেছে ওরা ওদের রেস্ট প্রয়োজন।”

“না আমি মাফ করবো না।ইনশুর কি বিবেকে বাধে নি আমাদের মান সম্মান ভাঙতে।ওর জন্য কতো মানুষ আমাদের কতো কথা শোনালো।তুমি ভুললেও আমি ভুলি নি।”

মায়ের কথা শুনে ইনশিরা দৌড়ে এসে মায়ের সামনে এসে দাড়ালো তারপর বলল

“মা মানুষের কথায় কি আসে যায়?তোমার মেয়ে অসুখী থাকলে কি মানুষ এসে দেখে যাবে?আচ্ছা ধরো আমি রায়ানকে বিয়ে করেই নিলাম আর আমি ওই সংসারে সুখী হলাম না এবং কয়দিন পর আমাদের ডিবোর্স হয়ে গেলো তখনও কিন্তুু তোমার মেয়েকে মানুষ কথা শোনাবে। বলবে অপয়া,অলক্ষুণে সেই জন্যই তালাক হয়ে গেছে।তখন সেগুলো কিভাবে হজম করতে বলো?আসলে মানুষ এমনই কার কি হলো না হলো এগুলো নিয়ে কয়েকদিন মাথা ঘামাবে তারপর যখন নতুন কিছু পাবে পুরোনো টপিক ভুলে যাবে।এখন তুমি কি মানুষের কথা ভেবে আমার সুখটা দেখবে না।যদি এমন করো তাহলে প্রমাণ হয়ে যাবে তুমি আমাকে ভালোবাসো না তুমি ভালোবাসো সমাজ কি বললো মানুষ কি বলল এগুলো কে।”

ইনশিরার মা এবার মেয়ের দিকে তাকিয়ে বললেন

“আমাকে কথা দিয়ে ভোলাতে পারবি না।তুই এ বাড়ি থেকে বেরিয়ে যা।আমি তোর মুখ দেখতে চাই না।”

ইনশিরা কিছু বলল না।মায়ের সামনে থেকে কিছুটা পিছালো তারপর একটা ফুলদানি ফাটালো আর পেটের সামনে নিলো ওর কান্ড দেখে ইনান আর ওর বাবা এগিয়ে আসতে নিলেই ও জোরে বলে উঠলো

“না কেউ এদিকে আসবে না।আসলে পেটে ঢুকিয়ে দেবো।”

ওর কথা শুনে সবাই দাড়িয়ে পড়লো।ইনশিরার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে ও ভেজা গলায় ই বলতে শুরু করলো

“এই জীবন রেখে আমি কি করবো যেখানে আমার মা ই আমার মুখ দেখতে চায় না।তাই এই জীবন আমি রাখতে চাই না।”

এই বলে যখনই পেটে ঢুকিয়ে দিতে তার আগেই ইনশিরার মা এসে ওর হাত থেকে তাড়াতাড়ি ওটা নিয়ে নিলো তারপর জড়িয়ে ধরলো তারপর বলল

“আমি জানতাম এমন একটা কান্ড তুই করবিই।পাগলি একটা!! তোদের আমি মেনে নিলাম।তুই চলে যাওয়াতে কষ্ট হয়েছিলো অনেক।ভাবিনি যে তোকে ফিরে পাবো।”

“ভালোবাসি তোমাকে আমি মা।”

এদিকে ইনান মনে মনে ভাবছে আহা এতো সহজে সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে ভাবি নি। আমিতো অনেক প্রস্তুতি নিয়ে এসেছিলাম যাক ভালোই হলো।আর ইনশুতো একাই একশো।একাই মাকে পটিয়ে নিলো।এমন এক্টিং করতে পারে জানতাম না।যখন ভাঙা ফুলদানি টা হাতে নিলো আমিতো ভয়ই পেয়েছিলাম।যদি না ও চোখ মারতো তাহলেতো আমি গিয়ে ওকে ধরেই ফেলতাম।ওর চোখ মারা দেখে আমিও বুঝে নিলাম ওর মাথায় কি চলছে।মাইরি পারফেক্ট অভিনেত্রী!!

হঠাৎ পিছন থেকে কে যেনো বলল

“কার বিয়ে দিতে হবে?আমাকে আবার অন্য জায়গায় বিয়ে দিতে যেতে হবে।”

লোকটার কথা শুনে ইনান, ইনশিরা আর ওর মা যেনো আকাশ থেকে পড়লো কিন্তুু ওর বাবা ওই লোকটাকে নিয়ে এলেন তারপর ইনান আর ইনশিরাকে দেখিয়ে বললেন

“এই যে এই দুইজনের বিয়ে হবে।”

কাজি পান চিবুতে চিবুতে বলল

“বেশ বেশ তো শুরু করা যাক।”

বাবার আর এই লোকটার কথার আগা মাথা বুঝতে না পেরে ইনশিরা বাবাকে বলল

“বাবা কি হচ্ছে এসব?”

“আরে আজকে তোদের বিয়ে দেবো।”

“কিন্তুু আজই কেনো?” (ইনশিরা)

“আমার সেই কখন থেকে মিষ্টি খেতে ইচ্ছে করছিলো কিন্তুু তোর মা কে বললে বলে যে ডায়বেটিস বেড়ে যাবে তাই দেয় না।তাই ভাবছিলাম কিভাবে মিষ্টি খাওয়া যায়?যখন তোদের দেখলাম তখনই মাথায় বুদ্ধি এলো তোদের বিয়ে দিলেই তো মিষ্টি খাওয়া যাবে।তাই ইনশু যখন ওর মাকে বুঝাচ্ছিলো তখন আমি কাজি সাহেবকে ফোন দিয়ে ডেকে নেই।হা হা হা।”

ইনশিরার বাবার কথা শুনে সবাই হেসে দিলো।আর ওর মা ওর বাবাকে ভেংচি কেটে ইনশিরার পাশে বসে পড়লো।তারপর ইনান ওর বাবা মা কে লাইভে নিয়ে আসলো।ওর বাবা মা আগে থেকেই জানতো ছেলের মনের কথা তাই ওদের বেশি কিছু বলতে হয় নি।দুই পরিবারের সম্মতিতে বিয়েটা হয়ে গেলো।বিয়ে পড়ানো শেষে ইনশিরার বাবা ওর মাকে বলল

“দেখেছো তুমি আমার মিষ্টি খাওয়া আটকাতে পারো নি।বলেছিলাম না মিষ্টি আমি খাবোই।”

ওর মা মুখ বাকা করে বলল

“হুম একটার বেশী খেতে পারবা না।”

ইনশিরার বাবা হেঁসেই বলল

“ওতেই যথেষ্ট।”

কাজি চলে গেলো।ইনানকে নিয়ে ইনশিরা ওর রুমে গেলো।ইনান রুমে ঢুকেই দরজা বন্ধ করে দিলো তারপর ইনশিরাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলল

“শ্বশুর মশাইতো মিষ্টি খেয়েছে কিন্তুু আমি এখনো খাই নি।আমিও খাবো।”

ইনশিরা ইনান কথার মানে বুঝতে পেরে বলল

“চল খেয়ে নেই তারপর মিষ্টি দিবো।”

ইনান খুশী হয়ে বলল

“ঠিকাছে চল।”

নিচে গিয়ে দুজনেই মা বাবা সাথে খাওয়া শেষ করলো। খাওয়া শেষ করতেই ইনশিরা ওর মাকে বলল

“মা তোমাদের জামাই নাকি এখনো মিষ্টি পায় নি ওকে মিষ্টি দাও।”

ইনশিরার কথা শুনে ইনান রাগী দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকালো আর ইনশিরা হেসে কুটিকুটি।ইনশিরার মা ওর সামনে এক প্লেট মিষ্টি দিয়ে বলল

“নাও বাবা খাও।তোমাদেরই তো এখন খাওয়ার বয়স।”

ইনশিরা মায়ের সাথে তাল মিলিয়ে বলল

“হ্যাঁ খেয়ে নে।পরে আবার বলিস না মিষ্টি খাস নি।”

চলবে……..

(ভুলত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।ধন্যবাদ।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here