এই_ভালো_এই_খারাপ #পর্ব_১৭ #প্রিমা_ফারনাজ_চৌধুরী

0
111

#এই_ভালো_এই_খারাপ
#পর্ব_১৭
#প্রিমা_ফারনাজ_চৌধুরী

ছবিটা দেখার পর আম্বিয়া বেগম বললেন, “একবার দেখ। ছেলে দেখতে ভালো। এটাই তো চাস তুই। ”

আয়জা অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে রাখলো। তিথি ডোডোকে কোলে নিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। রমলা চাচী আয়জার উদ্দেশ্যে বলল,

” তোমার ভাইরে কি তুমি চেনো না? এমন করতেছো ক্যান? ঘরে অশান্তি না হলে তোমাদের ভাল্লাগেনা? ছবিখান দ্যাখো। ছেলেটা দেখতে ভালো। ”

আয়জা বলল,

“দেখবো না। ”

আম্বিয়া বেগম বললেন,

” তোর বাপ শুনলে এখন চিল্লিয়ে উঠবে। আবার লাগবে বাপ ব্যাটার যুদ্ধ। ”

” লাগুক। সাহস থাকলে তোমার ছেলে আর বর দুজনকে গিয়ে বলো আমি পড়াশোনা শেষ করে চাকরি করব। তারপরও বিয়ে করব না। ”

আম্বিয়া বেগম ভৎসনা করে বলল,

” ঢংয়ের কথা বলিস না। নিজের কাপড়টুকু ভালো করে ধুঁতে পারিস না আবার করবি চাকরি। ”

” শ্বশুরবাড়িতেও কি আমাকে বসে বসে খাওয়াবে মা? ভাবিকে কি বসে বসে খাওয়াচ্ছ? ”

” শ্বশুরবাড়ি আর চাকরি দুটো আলাদা ব্যাপার। ”

” তোমার সাথে তর্ক করতে ইচ্ছে করছেনা। যাও তো সবাই। আমি বিয়ে করব না। ভাবি তোমার বরকে গিয়ে বলো আমি বিয়ে করব না, ব্যস। ”

আম্বিয়া বেগম চুলের ঝুটি ধরে হ্যাঁচকা টান দিয়ে বলল,

” তুই আমাদের মেরে ছাড়বি শয়তানি। বিয়ে না করলে দূর হ ঘর থেকে। ”

তিথি আম্বিয়া বেগমকে টেনে নিয়ে এল। ডোডো চেঁচিয়ে উঠলো আয়জার ফোঁপানো দেখে। তিথি বলল, ” কিছু হয়নি বাবা “।

ডোডো আয়জাকে ডাকলো, ” এপিপ্পি! ”

আয়জা তার দিকে চোখ তুলে তাকিয়ে আরও জোরে ফুঁপিয়ে উঠলো। আম্বিয়া বেগম তিথিকে বলল,

” তুই ওকে কিছু বলতে পারিস না বউ? এমনিতে সারাদিন তোদের কত কথা হয়। কত ছেলে নিজের সংসার হওয়ার পর বোনের দিকে ফিরেও চায় না সেখানে তার ভাই নিজে দাঁড়িয়ে ভালো পাত্র দেখে বিয়ে দিতে চাচ্ছে তারপরও সে রাজী হচ্ছে না দেখলি।”

তিথি বলল,

” আমি কি বলব? আমি যা বলি তাই তো ভুল। তোমার ছেলে আমাকে ঘর থেকে বের করে দেবে না ভুলকিছু বললে? ”

” ওকে বোঝাতে বলছি গাধী। ”

” ওকে আমি কি বোঝাবো? আমি যে ভুল করেছি ওকেও সেটা করতে বলবো? ”

আম্বিয়া বেগম রাগ সামলে বলল,

” তুই আমার ছেলেকে বিয়ে করে ভুল করেছিস? ”

” আলবাত ভুল। আমি এমন বড়লোক বাড়িতে যেতে পারতাম না ঠিক, কিন্তু একজন ভালো মানুষ তো পেতাম। লাল দেখে ফাল দিয়েছি তাই আজ আমার এই দশা। ”

রমলা চাচী বলল,

” বাচ্চা কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছ তারপরও একথা কি করে বলতেছো বউ? ”

তিথি ডোডোকে জড়িয়ে ধরে বলল,

” তাতে কি হয়েছে? ”

আম্বিয়া বেগম বলে উঠলেন,

” তোর সাত কপাল আমার ছেলের মতো কাউকে পেয়েছিস। তোর চাইতে ভালো মেয়ে পেতাম আমি। ”

” তো যাও। আরেকটা বিয়ে করাও। স্মার্ট, আধুনিক, সুন্দরী, ফর্সা, কম কথা বলে এমন কাউকে খুঁজে নিয়ে এসো তোমার ছেলের জন্য। বিশ্বাস করো উপরে ঢং দেখালেও মনে মনে ভীষণ খুশি হবে। সেও এটাই চায়। শুধু লোকলজ্জার কারণে আমাকে নিয়ে সংসার করছে। ”

রমলা চাচী বলে উঠলো,

” আহা থামো থামো। এসব কথা কেন বলতেছো বউ? বাচ্চাকাচ্চা হয়ে গেছে এখন এসব কথা তুলোনা। পুরুষ মানুষের মাথা গরম। কখন কি করে বসে রাগের মাথায়। ”

তিথি অবাককন্ঠে বলল,

” কি বলছো চাচী? রাগের মাথায় বিয়ে করে নেবে বলছো? করুক। করলেও সেই মেয়ে স্মার্ট, আধুনিকা হবে না। আমার চাইতে বোকা হাঁদা গাধা হবে। আমি যে ভুল করেছি সেটা একটা শিক্ষিত মেয়ে করবে না। অশিক্ষিত মূর্খরা করবে।”

ডোডো মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো ড্যাবড্যাব করে। আম্বিয়া বেগম রাগের মাথায় আয়জাকে মারধর করা শুরু করলো। চুল ধরে গালে চড় মারতে মারতে বলল,

” তুই আমার সংসারে আগুন লাগিয়ে দিয়েছিস। তোকে আমি আজ মেরেই ফেলবো। তোর মতো মেয়ে দরকার নেই আমার। এত মানুষ মরে তুই মরিস না কেন? ”

আয়জার চিৎকারে ডোডো ভয় পেয়ে কাঁদা শুরু করলো। আজলান ওয়াশরুম থেকে বেরিয়েছিলো সবে। মাথা মুছতে মুছতে আয়জার কান্নার শব্দ কানে আসতেই দ্রুতপদে হেঁটে বেরিয়ে এল। আয়জার ঘরে এসে দেখলো আয়জাকে একনাগাড়ে মেরে যাচ্ছে আম্বিয়া বেগম। রমলা চাচী চেষ্টা করেও থামাতে পারছেনা। তিথি ডোডোকে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তার চোখমুখ অবিশ্বাস্য রকমের স্বাভাবিক। শুধু ডোডো কাঁদছে।

সে ছুটে এসে আয়জাকে ছাড়িয়ে নিয়ে আম্বিয়া বেগমকে বলল,

” পাগল হয়ে গেছ? কি সমস্যা? বাড়িটাকে মাছের বাজার বানিয়ে ফেলেছ সবাই মিলে। ”

আয়জা ভাইকে ঝাপটে জড়িয়ে ধরে কেঁদে গেল। আফতাব শেখ দরজার কাছে এসে দাঁড়িয়েছেন। উপহাস করে বললেন,

” খেলা জমে উঠেছে। চলুক। চলতে থাকুক। আমি ঘরে বসে শুনতে থাকি। চালিয়ে যাও সবাই মিলে।”

আম্বিয়া বেগমের দিকে ক্ষেপাটে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে চলে গেলেন তিনি। তিথিও বেরিয়ে গেল ডোডোকে দোল দিতে দিতে।

আম্বিয়া বেগম হাঁপাতে লাগলেন। রমলা চাচী উনাকে ধরে খাটে বসালেন। পানির গ্লাস এনে পানি খাইয়ে দিয়ে বেরিয়ে গেল ঘর থেকে। আজলান আয়জাকে বলল,

” কান্না বন্ধ কর। ”

_____________

ডোডো তালি দিতে দিতে বলল, ” তাত তা তাত তা।” তিথি তার কান্ড দেখে বলল,

” তোর মনে এত ফূর্তি কোথা থেকে এল? ”

ডোডো হাসলো। তিথি তার গালে টুপটাপ আদর বসিয়ে বলল,

” গাড়িতে বসে খেলা কর কেমন? আমি তোর ফুপীকে ভাতটা খাইয়ে দিয়ে আসি নইলে আজ না খেয়ে ঘুমাবে।”

ডোডো মায়ের যাওয়া দেখলো। কিছুক্ষণ পর ঠোঁট টেনে কাঁদা শুরু করলো। আজলান এসে দেখলো তিথি নেই। ডোডো একনাগাড়ে কেঁদে যাচ্ছে। সে ডোডোকে কোলে নিয়ে চেঁচিয়ে বলল,

” ছেলেটাকে এভাবে ফেলে রেখে গিয়েছ কেন ননসেন্স? এই মেহবুব!”

তিথি তার ডাকাডাকি শুনে দৌড়ে এল। বলল,

” আয়জাকে খাওয়াতে গিয়েছিলাম। আয় ডোডো। ”

হাত বাড়িয়ে দিল সে। ডোডো বাবার গলা ধরে মায়ের দিকে চেয়ে থাকলো। আজলান দিল না। বলল,

” আমি একটা জরুরি কথা বলছি মন দিয়ে শোনো। ওকে বলো কাউকে আগে থেকে পছন্দ করলে তার নাম অব্ধি ভুলে যেতে। ওর হাবভাব দেখে তো স্পষ্ট যে ও ভার্সিটিতে কোনো বন্ধু জুটিয়েছে। ”

তিথি বলল, ” থাকলেও সমস্যা কোথায়? ”

” তোমাকে যেটা বলতে বলছি সেটা গিয়ে বলো। কাল ওকে দেখতে আসবে। তুমি ওকে সাজিয়েগুছিয়ে রাখবে। ওরা ভদ্র পরিবারের মানুষ। ও যদি উল্টাপাল্টা কিছু ভেবে রাখে তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে বলো। ওদের সামনে যেন কোনো সিনক্রিয়েট না হয়। ”

তিথি বলল, ” ও বিয়ে করতে চাইছেনা। তুমি ওকে জোর করছো কেন? আইনের লোক হয়ে এটা জানো না যে একজন প্রাপ্তবয়স্ক মেয়ের নিজের বিয়ের সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার আছে। ”

” অধিকার মাইফুট। এই বয়সে ভালোমন্দ কি বোঝে ও? এসব জাস্ট আবেগ বৈকি কিছু না। ভালো থাকার জন্য টাকা দরকার আর সামাজিক অবস্থান, বংশগৌরব। ভালোবাসা, আবেগ চুলোয় যাক। ”

তিথি বলল, ” তোমার পিংকিও টাকা দেখে আরেক মদনের সাথে পালিয়েছে নাকি? ”

আজলান ঘর ফাটিয়ে হুংকার ছেড়ে খপ করে হাত ধরে ঘর থেকে বের করে দিয়ে মুখের উপর দরজা বন্ধ করে দিল। তিথি দরজায় চাপড়াতে চাপড়াতে বলল,

” টাকা টাকা টাকা। এই টাকাই তোমার ঘাড়বাঁকা করে দিয়েছে আজলান শেখ। তোমাকে আমি ঘেন্না করি। যতটুকু সম্মান আছে ওইটুকু ডোডোর বাপ বলে নইলে তখনই চলে যেতাম। ওইটুকুও যখন থাকবে না তখন তুমি আমাকে আটকে রাখতে পারবে না। ”

আজলান বলল,

” জাস্ট অফ ব্লাডি ইডিয়ট। ”

তিথি বলল,

” সভ্য দেখে কাউকে নিয়ে আসো। সে তোমার টাকার গন্ধ শুঁকে চুপ করে থাকবে। ”

আজলান খানিকক্ষণ চোখ বুঁজে দাঁড়িয়ে রইলো। তিথি চলে যেতেই ডোডোর পরনের কাপড়চোপড় পাল্টে দিয়ে গা মুছে বেবি পাউডার মাখিয়ে দিল। দুগালে আদর করে নতুন কাপড়চোপড় পড়িয়ে দিয়ে হাত পা টেনে দিতে দিতে বলল,

” কাঁদবে না আইজান। ”

ডোডো ঠোঁট টেনে কান্নার সুর তুলে বলল,

” আমমাম্মাহ। ”

আজলান ওর হাতের আঙুল টেনে তাতে চুমু দিয়ে বলল,

” ওই ননসেন্স মহিলার কাছে যাওয়ার দরকার নেই। ”

_______________

আজলান ব্যস্ত ভঙ্গিতে সদর দরজার দিকে এগোতে এগোতে ফোনের ওপাশের জনকে বলে গেল,

” দ্রুত গাড়ি নিয়ে বের হও। উনাদের শ্যামবাজার থেকে গাড়িতে তুলবে। হ্যা,দ্রুত যাও। সোজা বাড়ি নিয়ে আসবে। এখানে আগে কখনো আসেনি। আমার নাম বললে হয়ে যাবে। ওকে, কোনো সমস্যা হলে আমাকে জানাও। ”

রমলা চাচী টি টেবিলটা সাজাচ্ছে। ডোডো তার গাড়িতে বসে আছে চুপচাপ। গাড়ির রিমোটটা নিয়ে খেলছে। আজলান ওকে সাদা টিশার্ট পড়িয়ে দিয়েছে গোসল করিয়ে। বেবি লোশনও মাখিয়েছে। হঠাৎ কপালের একপাশে কালো টিপ দেখে চেঁচিয়ে উঠতেই আম্বিয়া বেগম ছুটে এসে বলল,

” নজর পড়বে তাই দিয়েছি খোকা। রাগারাগি করিস না এটা নিয়ে। ”

আজলান বলল,

” এসবে নজর কাটে কে বলেছে তোমাকে? এক্ষুণি তোলো। ”

আম্বিয়া বেগম ডোডোকে কোলে নিয়ে চলে গেলেন। আজলান আয়জার ঘরের পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় তিথিকে আর আয়জাকে দেখলো। আয়জাকে শাড়ি পড়িয়ে সাজিয়ে গুজিয়ে চুল বাঁধছে তিথি। ফোনে কল আসায় আজলান ব্যস্ত ভঙ্গিতে হেঁটে চলে গেল। আতিফা এসেছে ওর ছেলে মেয়ে নিয়ে। ওরা ডোডোকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। ডোডো তাদেরকে পেয়ে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে করে খেলছে।

তিথি আয়জাকে রেডি করিয়ে মেহমানদের অপেক্ষায় ঘুরঘুর করছে। আর ড্রয়িংরুমে সামির, আভিরা আর ডোডোর খেলা দেখছে। ডোডো মাকে দেখামাত্রই ফোকলা হেসে হাতদুটো মাথার উপর তুলে ডাকলো,

” আমমাম্মাহ তুত্তু। ”

তিথি হাত দেখিয়ে বলল,

” মাইর দেব। ”

ডোডো কান্নার সুর তুলে হাত বাড়িয়ে ডাকলো। তিথি হেসে বলল,

” যাব না। ”

দরজার কলিং বেল বেজে উঠতেই তিথি মাথায় শাড়ির আঁচল তুলে দৌড়ে গেল। দরজা খুলতেই দেখলো যারিফ দাঁড়িয়ে। এক হাতে অনেকগুলো মিষ্টি আর সন্দেশের কাটুন, অন্য হাতে মিষ্টি দইয়ের হাঁড়ি। তিথি বলল,

” আপনি? পাত্রপক্ষ এসেছে? ”

আম্বিয়া বেগম এসে বলল,

” এই ছেলে তুমি এতদিন পর এলে? এতদিন কই
ছিলে? ”

” আমার এমবিএ ফাইনাল পরীক্ষা চলছিলো আন্টি। ”

“তোমার আম্মা আব্বা কেমন আছে? ”

” ভালো আছে। ”

” মেহমান চলে এসেছে? ”

যারিফ উত্তর দিল।

” হ্যা। স্যারের সাথে আসছে। ”

আজলান মেহমান নিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করামাত্রই আম্বিয়া বেগম এবং আফতাব শেখের সাথে পরিচয় করিয়ে দিল। যারিফকে এককোণায় দাঁড়িয়ে ডোডোকে কোলে নিয়ে আদর করতে দেখে বলল,

” মঈন, তুমি আজ আমাদের সাথে রাতে খাবে। আজ কোনো না শুনতে চাই না। ”

” কিন্তু স্যার। ”

“কোনো কিন্তু না। ”

ডোডো যারিফকে বলল,

” তুত্তুহ। ”

আজলান চলে যাচ্ছিলো। ডোডোর কথা শুনে থেমে গিয়ে ফিরে চাইলো। বলল,

” বাবু কি বলছে? ”

যারিফ বলল, ” বুঝতে পারছিনা স্যার। ”

আজলান ডোডোকে কোলে নিয়ে গালে আদর করে বলল,

” কি চাই বাবা? ”

ডোডো বলল, ” আম্মান তুত্তু। ”

আজলান দাঁত কিড়মিড় করে বলল,

” বোকা মহিলা সাজগোজের খপ্পরে পড়ে বাচ্চাকে খাওয়াতে ভুলে গেছে। ”

তিথির কাছে নিয়ে যাওয়ার পর সে দেখলো তিথি সন্দেশ খাচ্ছে। আজলান বলল,

” ওর খিদে পেয়েছে। খেতে দাও। ”

তিথি ডোডোর মুখে সন্দেশ ভেঙে পুরে দিয়ে বলল,

“অসম্ভব। শাড়িতে পিন করেছি। এখন ওকে খাওয়াতে গেলে অনেক সমস্যা। ”

আজলান শক্ত গলায় বলল,

” ওর খিদে পেয়েছে মেহবুব। শেষবার খাইয়েছো কখন? ”

তিথি ডোডোকে কোলে নিয়ে ফেললো।

” মনে নেই” বলে ডোডোর গালে আলতো করে চড় দিতে দিতে বলে গেল ” এই বেয়াদব ছেলে তোর খিদে লাগলে আমাকে বলবি। তোর বাপকে বলিস কেন? তোর বাপের তুত্তুর গোডাউন আছে? হ্যা? আর বলবি তোর বাপকে? মিষ্টি খাবি? সন্দেশ খাবি? দুধ পাউরুটি খাবি নাকি আঙুর খাবি? আচ্ছা দই খাবি? ”

ডোডো মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। তিথি তার দিকে চোখ রেখে আদুরে ঠোঁট দুটোর উপর চুমু দিয়ে বলল,

” চাইয়া থাকোস ক্যান? কি কবি ক। ”

ডোডো ঠোঁট লম্বা করে বলল, ” তুত্তুহ “।

তিথি কপালে চড় মারতে মারতে বলল,

” ও জ্বালারে জ্বালা। ”

ডোডো কপালে হাত রেখে মায়ের দিকে চেয়ে রইলো। তিথি তার কান্ড দেখে বলল হাসতে হাসতে বলল,

” তোর কিসের এত দুঃখ যে কপালে হাত দিচ্ছিস? তুত্তু খাওয়া, আর হাগুমুতু ছাড়া আর কোনো কাজ আছে তোর? ”

ডোডো গলা টেনে দুঃখের সাথে ডাকলো, ” আমমাম্মাহ। ”

তিথি বলল, ” মাকে কি করে পটাতে হয় ভালো করে শিখে গিয়েছিস তুই। ”

___

আয়জাকে তার ঘরে দেখতে এল বরের মা, ভাবি আর বোন। আয়জার সাথে অনেক কথাবার্তা বলার পর তিথির সাথেও বললো। তারপর আম্বিয়া বেগম আর আতিফার সাথে কথায় ব্যস্ত হয়ে পড়লো। তিথি সেই ফাঁকে আয়জাকে বলল,

” তুমি ওই মদনটাকে পছন্দ করো? ওই মদন দেখো ভ্যাবলার মতো দাঁড়িয়ে আছে। ”

যারিফকে দেখিয়ে দিল তিথি। আয়জা তাকে দেখার সাথে সাথে যারিফও চোখ তুলে তাকালো। চোখ সরিয়ে নিতেই তিথি বলল,

” মাগোমা কেমন করে চোখ সরিয়ে নিল। এ তো উল্টো তোমার উপর রাগ দেখাচ্ছে ননদিনী। তুমি ওকে বলোনি তোমাকে আজকে পাত্রপক্ষ দেখতে আসছে?”

আয়জা গলায় জোর দিয়ে বলল,

” না। ”

” আব্বেশালা এজন্যই তো মেজাজ হট। এ দেখছি ফাটাকেষ্ঠর চাইতে কোনোদিক দিয়ে কম নয়। থাক গে এই কালা বিলাইয়ের চাইতে ধলা বিলাই ভালো। তাকে বিয়ে করে নাও। আমিও এক কালা বিলাইকে ছেড়ে ধলা বিলাইকে বিয়ে করছি। বর্তমানে আমি এক বাচ্চার মা। মোটামুটি ভালোই আছি। টাকা পয়সা ধনদৌলত আর মহব্বতের অভাব নেই। তুমিও করে ফেলো। ”

ডোডো বলল,

” নান নান না। ”

তিথি বড়বড় চোখ পাকিয়ে বলল, ” তুই না বলছিস কেন? তুই কি বুঝিস? ফুপ্পীর পক্ষ নিচ্ছিস? তুই দাঁড়িয়ে দিবি বিয়ে? কথা বলতে পারিস না ভালো করে আবার প্রতিবাদ করিস ব্যাঙের বাচ্চা ব্যাঙ। ”

ডোডো হাতের তালু দিয়ে ঠাস করে মারলো তিথির নাকে। তিথি বলল,

” দিলি তো নাকটা চ্যাপ্টা করে। ”

ডোডো ঝুঁকে এসে তার নাকটাতে গাল বসিয়ে কামড়ে দিতে চাইলো। তিথি তাকে সরিয়ে দিতে গিয়ে হাসতে হাসতে বলল,

” তোর বাপ নাককাটা বউয়ের সাথে একদিনও সংসার করবে না রে ডোডো। ”

তিথি হাসার ফাঁকে দেখলো আয়জা কাঁদছে।

সে হাসা থামিয়ে দিল। আয়জা গাল মুছে নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে বড়সড় করে একটা দম ফেলে বলল,

” তৃতীয় পক্ষ সবকিছু কেমন বিনা কষ্টে, বিনা মূল্যে পেয়ে যায়, তাই না ভাবি? এল, দেখলো, পছন্দ করলো তারপর বিয়ে হয়ে গেল। কত সহজ!”

তিথি বলল, ” এত কিছু বুঝিনা। থার্ড পার্সনের সাথে তোমার ভাই সংসার করছে, এক বাচ্চার বাপ হয়েছে। তো? কোনোকিছু কি আটকে আছে? ”

আয়জা বলল, ” নেই বলছো? তোমাদের মধ্যকার এত ঝামেলা, মনোমালিন্য, এত এত অমিলের মধ্যেও মানিয়ে চলার চেষ্টা, প্রতিনিয়ত দুজনের কাছ থেকে দুজন ছিটকে পড়তে পড়তে আবারও সংসার নামক কেন্দ্রবিন্দুতে এসে থমকে যাওয়া। তুমিই বলো না। তোমরা আটকে নেই? ”

তিথি জবাব দিতে পারলো না। আয়জা বলল,

” দিনশেষে না তুমি সুখী না ভাইয়া। তোমরা জাস্ট মানিয়ে চলছো। আর কিচ্ছু না। ”

তিথি ডোডোকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রাখলো। চাওয়া পাওয়ার হিসেবে সবসময় সবার প্রাপ্তির খাতাটা কি আসলেই পরিপূর্ণ থাকে?

চলমান..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here