এই_ভালো_এই_খারাপ #পর্ব_২৩ #প্রিমা_ফারনাজ_চৌধুরী

0
126

#এই_ভালো_এই_খারাপ
#পর্ব_২৩
#প্রিমা_ফারনাজ_চৌধুরী

তিথি কপালের ব্যান্ডেজটা খোলার জন্য ডাক্তারের কাছে এসেছে। সাথে পায়ের বুড়ো আঙুলটাও দেখাবে। বুড়ো আঙুলটার কোণা ফুলে পুঁজ জমে আছে। ব্যাথায় কাল সারারাত ঘুম হয়নি। ডাক্তারের চেম্বার থেকে বের হয়ে একটা ফার্মেসির সামনে বসেছিলো সে। একটা কলা পাউরুটি কিনে খেতে খেতে ভাবলো, এখানে ফ্যাক্সির দোকান থেকে আজলান শেখকে একবার ফোন দেবে। কিন্তু আয়জা বলেছে সে সিম চেঞ্জ করে ফেলেছে। ফোন দিয়েও লাভ হবে না। রাস্তায় একটা কুকুর তার হাতে পাউরুটি দেখে ছুটে এসেছে ইতোমধ্যে। জিহ্বা লম্বা করে হাঁপাচ্ছে। তিথি তার দিকে বাকি পাউরুটিটা ছুঁড়ে মারলো। তারপর ঔষধগুলো কিনে নিল।

টাকাগুলো ডোডোর আকিকার সময়কার টাকা। টাকাগুলো খরচ করতে গিয়ে তিথির বুকটা মোচড় দিয়ে উঠলো। আজ পাঁচদিন হয়ে গেছে সে ডোডোকে দেখেনি। কেমন আছে সেটা অব্দি জানে না। এমন দুঃসময়ও তার জীবনে আসবে তা সে কখনোই ভাবেনি। এর আগে কবে এমন কষ্টে ভুগেছে সে মনে পড়ে না। সত্যিই মনে পড়ে না। মনে হচ্ছে এর আগের সমস্ত দুঃখগুলো এটার কাছে হালকা, তুচ্ছ। ডোডোটা তার একটা অংশ জুড়ে আছে। কি যেন হারিয়ে ফেলেছে সে। কি যেন নেই তার কাছে। ভীষণ নিঃসঙ্গ, একা, অসহায় লাগছে নিজেকে। এমন খারাপ সময়ের সাথে এই প্রথম সাক্ষাৎ তার।

ফার্মেসিতে তার পরপর আরও অনেকেই এসেছে।
একটা মহিলা এসে তার পাশে বসলো। বলল,

” আপনি কি এখানকার মানুষ? ”

তিথি মহিলাটিকে আগাগোড়া দেখলো। মহিলাটিকে দেখে মনে হচ্ছে সম্ভ্রান্ত পরিবারের বৌ। গায়ে দামী বোরকা, মাথায় সোনালী রঙের হিজাব। যেটা বেশি চোখে পড়লো সেটা তার গোলাপি ঠোঁট, আর চোখের পাপড়ি। তিথি সুন্দর কাউকে দেখে প্রশংসা না করে পারে না। মহিলাটির কোলে একটা তিন-চার বছরের শিশু। তিথি জবাব দিল,

” হ্যা। ”

মহিলাটি তার পাশে বসলো। বলল,

” আমি এখানে নতুন এসেছি। বাচ্চার বাবার মামার বাড়ি। কিছুই চিনতে পারছিনা। ”

তিথির চোখ বাচ্চাটার দিকে আটকে আছে। মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করে বলল,

” বয়স কত ওর? ”

” চারে পড়েছে। আপনি কোথায় থাকেন? ”

” জলিল চেয়ারম্যানের বাড়িতে। ”

মহিলাটি অবাককন্ঠে বলল,

” ওহহ তাই! উনি আমার মামা শ্বশুর। ”

তিথি বাচ্চাটাকে আদর করতে মগ্ন হয়ে গেল। বাচ্চাটার হাসিটা সুন্দর। তার কোলে উঠে এসেছে ইতোমধ্যে। গায়ে অসম্ভব সুন্দর একটা ঘ্রাণ। কিন্তু ডোডোর মতো নয়। ডোডোরটা সব সুগন্ধিকে হার মানাবে। কত আদুরে, মায়াময়। ওটা শুঁকলেই যেন মন ভরে যায়। কেমন আছে কে জানে তার বাচ্চাটা। তিথির চোখদুটো সজল হয়ে উঠলো। তন্মধ্যে একটা পুরুষ কন্ঠস্বর শুনতে পেল সে।

” তোমরা এখানে? তোমাদের খুঁজতে খুঁজতে আমি পাগলপ্রায়। ”

মহিলাটি তার স্বামীর কন্ঠস্বর শুনে চমকে উঠে ফিরে তাকালো। তিথি দ্বিগুণ চমকে উঠলো। অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো। তার চাইতে দ্বিগুণ বিস্ময়ে চেয়ে আছে সেই লোকটি।

” তুমি? ”

মহিলাটি তাদের মুখ চাওয়াচাওয়ি করে বলল,

” আপনারা একে অপরকে চেনেন? ”

লোকটা বলল, ” হ্যা চিনি। চলো তোমাকে গাড়িতে তুলে দেই। ”

মহিলাটি কত রকমের প্রশ্ন করলো। লোকটা মহিলাটিকে নিয়ে চলে গেল বাচ্চাটাকে আদর করতে করতে। তিথি মহিলাটির দিকে চেয়ে রইলো একদৃষ্টিতে। বয়স বোধহয় তার চাইতে দু এক বছরের বেশি হবে। কত লম্বা! কত সুন্দর! এই অসম্ভব সুন্দর মেয়েটা কি জানে তার স্বামী একজন ভয়ানক রকমের বেঈমান?
তিথির বুকটা ভার হয়ে এল। যতটা ভার হয়ে এলে নিঃশ্বাস ফেলতে অব্দি কষ্ট হয়। চোখ বুঁজে চোখের জল ঝড়াতে ভুলে যায় ঠিক ততখানি। চারপাশটা অন্ধকার ঠেকলো তার চোখে। বেঈমানটা ভালো আছে দিনশেষে কিন্তু সে ভালো নেই কেন?

বহুকষ্টে দাঁড়িয়ে পড়লো সে। রাস্তায় গিয়ে দাঁড়ালো একটা রিকশার জন্য। খুব শীঘ্রই বৃষ্টি নামবে। ওর মনের মতো আকাশেও মেঘ গর্জন করছে। কেমন নীরব আর্তনাদের মতো। বিকট শব্দ নেই অথচ কেমন ভয়ংকর।

রিকশার জন্য দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে হঠাৎ খেয়াল করলো পাশে একজন এসে দাঁড়িয়েছে।

” তিথি?কেমন আছো? বাড়িতে কবে এসেছ? ”

তিথি রিকশা থামাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত কোনো রিকশা থামাতে পারলো না।
লোকটার দিকে না ফিরে বলল,

” ওটা তোমার বউ? ”

” হ্যা। ”

তিথি কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,

” তোমার বউ খুব সুন্দর। তোমার বাচ্চাটাও খুব আদুরে। তুমি অনেক সুখী তাই না? ”

” আলহামদুলিল্লাহ। তোমার কি অবস্থা? ”

তিথি কেমন যেন উত্তেজিত বোধ করছিলো তখন। কম্পিত কন্ঠে বলল,

” আমিও সুখী। আমারও একটা বাচ্চা আছে। ”

” বয়স কত? ”

” দেড় বছরে পড়েছে। খুব আদুরে। একদম পুতুলের মতো ছোট। ”

লোকটা চুপ করে রইলো। তিথি একটু দূরে গিয়ে দাঁড়ালো। রাস্তার দিকে চেয়ে রইলো। কখন যে একটা রিকশা থামবে? লোকটা তার পাশে এসে দাঁড়িয়ে বলল,

” তোমার বর শুনেছি একজন র‍্যাব।”

তিথি সগর্বে বলল,

” হ্যা। অনেক বড় অফিসার। ডেপুটি কমান্ডার। ”

হায় আল্লাহ, এতকিছু কখন মনে রেখেছে সে? স্বাভাবিক ভাবে কেউ প্রশ্ন করলে বোধহয় বলতেও পারতো না।

” তোমার বরের নাম আজলান শেখ? ”

তিথি চমকে উঠলো। তুমি কিভাবে চেনো জিজ্ঞেস করতে যাবে তখুনি মনে পড়লো প্রশাসনের লোক তাই চিনতেই পারে। ওকে তো টিভিতে দেখায়। তাই বললো,

” হ্যা, আজলান শেখ। তুমি ওকে চেনো তাহলে। অবশ্য চিনবে না কেন? ওকে চেনে না এমন কেউ নেই বাংলাদেশে। ”

” আমি খুশি হয়েছি তুমি সুখে আছো শুনে। ”

তিথির মন কেঁদে উঠলো কিন্তু মুখটা স্বাভাবিক। মন কেঁদে উঠে বলল, ” না না আমি সুখে নেই বেঈমান। আমি একটুও সুখে নেই। কেন সুখে নেই আমি? ”

তিথি বলল, ” তুমি কি ভেবেছ, তুমি আমাকে ফেলে চলে গেলে আমার বিয়েশাদি হবে না? ”

” আমি তোমাকে ইচ্ছাকৃতভাবে ফেলে যাইনি। ”

” জানি। তোমার বাবা তোমাকে ঘাড় ধরে টেনে নিয়ে গিয়ে সুন্দরী মেয়ে দেখে বিয়ে করিয়ে দিয়েছে। আমি কালো বেঁটেখাটো মেয়ে। তোমার কোনো দোষ নেই। আমি তোমার কোনো দোষ দিচ্ছি না। কারো কোনো দোষ নেই। সব ভালোই ভালোই হয়েছে। তুমিও ভালো কাউকে পেয়েছ। আমিও। ”

রায়হান বলল, ” হ্যা, তা ঠিক। এখানে একা এসেছ? মনে হচ্ছিলো খুঁড়িয়ে হাঁটছো? ”

তিথি বলল, ” ওই আঙুলে একটু চোট পেয়েছিলাম। ”

রায়হান বলল,

” তুমি আমার উপর রেগে নেই তো? ”

তিথি সাথে সাথে বলল,

” না না। রেগে থাকবো কেন? কপালে যা ছিল তাই হয়েছে। যা হয়েছে ভালোই হয়েছে। ”

রায়হান বলল,

” কিন্তু তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে এখনো আমার উপর ক্ষেপে আছো। ”

একটা রিকশা এসে থামলো তখুনি। তিথি রিকশায় উঠতে যাবে তখুনি থেমে গিয়ে বলল,

” আমি ক্ষেপে থাকলেও কি যায় আসে? শেষবারের মতো একটা কথা বলে যাই তোমাকে। কাউকে কথা দেয়ার আগে তোমার মা বাবা, তোমার মামা চাচাদের কথা ভেবো। যা করতে পারবে না, তার আশা কাউকে দেখিওনা। তুমি আমার আশা ভঙ্গ করেছ তাতে বেশিদিন কষ্ট ভোগ করতে হয়নি আমাকে। তেমন কিছুই হয়নি।
কিন্তু তুমি আমার বিশ্বাস ভেঙে দিয়েছিলে, তাই এখন কাউকে সহজে বিশ্বাস করে উঠতে পারিনা আমি । মিথ্যে মিথ্যে স্বপ্ন দেখানো কত সহজ তাই না? যদি হয় আমার মতো বোকা হাঁদা। তুমি ভালো থেকো। তোমার উপর আমার কোনো অভিযোগ নেই আর। ”

রিকশায় উঠে পড়লো তিথি। তার কিছুক্ষণের মধ্যে অঝোর ধারায় বৃষ্টি। সারারাস্তা ভর সে ভেবে কূল পেল না “কেন সে ভালো নেই? ”

তাকে কেউ একজন ছেড়ে গিয়েছে, সে কালো বেঁটেখাটো তাতে কি? তার তো সব আছে।

ভিজে ভিজে বাড়ি ফিরতে দেখে মালেকা বেগম বকছেন তিথিকে। তিথি বোরকা খুলে, ভেজা সেলোয়ার-কামিজ নিয়ে জানালার পাশে দাঁড়িয়ে রইলো আনমনে। মালেকা বেগম বললেন,

” কাপড় পাল্টা বলছি তিথি। জ্বরটর হলে আমি কিচ্ছু করতে পারবো না। একটা কানাকড়ি নেই আমার কাছে। ”

তিথি মায়ের দিকে ফিরে চাইলো। মালেকা বেগম তার হাত থেকে বোরকাটা নেয়ার সময় তিথি উনার হাতটা ধরলো। মালেকা বেগম বললেন,

” পায়ের আঙুলের জন্য ডাক্তার ঔষধ দিছে? ”

তিথি মাথা দুলিয়ে আবদার করে বলল,

” আমাকে একটু জড়িয়ে ধরো আম্মা। ”

মালেকা বেগম হকচকিয়ে গেলেন। মেয়েকে বুকে জড়িয়ে ধরতেই তিথি কেঁদে উঠে বলল,

” শুধু আমি ভালো নেই আম্মা। সবাই ভালো আছে। বেঈমানটা কত সুখে সংসার করছে বউ বাচ্চা নিয়ে। আর আমার কাছে আমার বাচ্চাটা অব্দি নেই। কিচ্ছু নেই আমার। কেউ নেই। ”

_______

ডোডোর কান্না আজ একটুর জন্যও থামেনি। থামছে তো কিছুক্ষণ পরপর আবার কাঁদছে। তাহেরা বেগমসহ নাকানিচুবানি খেয়েছেন তাকে সামলাতে গিয়ে। শায়লার হাতে কোনো কাজ উঠেনি। তাহেরা বেগম না থাকলে দুপুরে সবাইকে না খেয়ে থাকতে হতো। ঘুমোচ্ছেও না। যতক্ষণ কোলে নিয়ে বাইরে হাঁটছে ততক্ষণ শান্ত। ঘরে প্রবেশ করামাত্রই কান্না শুরু। আজলানের কাছে খবর পৌঁছানো হয়েছে কিন্তু তার কাজের এত চাপ সে বাড়ি ফিরেছে প্রায় রাত সাড়ে ন’টায়। তাদের একটা মিশন চলছে এখন। অস্ত্র পাচারকারীদের চক্রান্তের বিরুদ্ধে। চাইলেও ডোডোর কথা সে ভাবতে পারছে না। বাড়ি ফিরে দেখতে পেল ডোডো কাঁদছে। তাও মেঝেতে বসে। তাকে দেখামাত্রই হামাগুড়ি দিয়ে ছুটে এল। আজলান কোলে তুলে দুগালে আদর করতেই ডোডো আরও চেঁচিয়ে কাঁদতে লাগলো। শায়লা ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এসে বলল,

” সরি স্যার। আজ সারাদিন এভাবে কেঁদেছে। আমি একটু ওয়াশরুমে যাবো তারও সুযোগ পাইনি। ”

” আন্টি কোথায়? ”

” রান্না শেষ করে উনি এশার নামাজ পড়ছেন। রান্নাবান্না আজ উনিই করেছেন। বাবু আজ এতটা জ্বালিয়েছে যে আমি রান্নার কাজে পুরোপুরি মনোযোগ দিতে পারিনি।”

আজলান বলল,

” তাই বলে মেঝেতে বসিয়ে রাখবেন? মেঝে ঠান্ডা সেটা আপনার মাথায় নেই? ওর ঠান্ডা লেগেছে এমনিতেই। ”

শায়লা চোখ নামিয়ে রেখে বলল,

” সরি স্যার। ”

” সবসময় সরিতে কাজ হয় না। যান আপনি এখন। ”

শায়লা বেরিয়ে গেল চুপচাপ। আজলান ডোডোকে আদর করলো। তারপর কাপড়চোপড় পাল্টে দিয়ে নতুন কাপড় পরালো। তার ছোট্ট গাড়িটাতে বসিয়ে দিয়ে বলল,

” বাবা গোসল করবে। কাঁদবে না ঠিক আছে? ”

ডোডো ড্যাবড্যাব করে চেয়ে রইলো। আজলান ইউনিফর্ম চেঞ্জ করে ওয়াশরুমে ঢুকতেই ডোডো চেঁচিয়ে কেঁদে উঠলো। আজলান দরজা খোলা রেখে বলল,

” বাবা আছি এখানে। কোথাও যাচ্ছি না আর। ”

ডোডো তার দু-হাতে ছোট্ট ফিডারটা ধরে চুুকচুক করে খেতে খেতে বলল,

” আমমাহ। ”

আজলান তাকে দেখিয়ে দেখিয়ে গায়ে সাবান লাগালো। কথা বলতে বলতে গোসল সেড়ে নিল। তারপর গোসল সেড়ে ছেলেকে নিয়ে নীচে এসে খেতে বসতেই তাহেরা বেগম বললেন,

” এখন শান্ত হয়ে আছে। সারাদিন কেঁদেছে আজ। একটুও থামেনি। এতটুকুন বাচ্চাকে কি মা ছাড়া সহজে রাখা যায়? সারাক্ষণ ম্যা ম্যা করেই যাচ্ছে। মা চিনে ফেলেছে ও। ”

আজলান খেতে লাগলো। ডোডোকেও একটু একটু খাওয়ালো। খেতে খেতে ভাবলো ডোডো আজ সবাইকে জ্বালিয়ে মেরেছে তাই ওরাও নিশ্চয়ই একবার হলেও ধমক টমক দিয়েছে।

শায়লা মাছের বাটি নিয়ে টেবিলের উপর রাখতেই শব্দ হলো কিঞ্চিৎ। যদিও বাসনকোসনের শব্দ হওয়া বারণ। সেই শব্দ শুনে ডোডো চোখ তুলতেই শায়লাকে দেখলো। দেখামাত্রই সে হাউমাউ করে কেঁদে উঠে আজলানকে জাপ্টে ধরে রাখলো। শায়লা ভড়কে গেল। আজ সকাল দশটার দিকে “আমমমা আমমমা ” ডেকে তার বুক খামচাচ্ছিলো বাচ্চাটা। ভীষণ জোরে একটা ধমক দিয়েছিলো সে। সেই থেকে কান্না শুরু করেছে আর থামেনি। ভাগ্যিস তাহেরা বেগম দেখেননি। আজলান ভুরু কুঁচকে একবার শায়লাকে একবার ডোডোকে দেখে নিল। শায়লা হাত বাড়িয়ে বলল,

” চলো আমরা ঘুরে আসি। ”

ডোডো হাত পা নেড়ে কাঁদতে লাগলো। আজলান কোনোমতো খেয়ে উঠে গেল তাকে বুকে জড়িয়ে। বলল,

” মা? মায়ের কাছে যাবে তুমি? ”

ডোডো কান্না একটু থামিয়ে তার মুখে মুখে,

” মা মা মা। ”

আজলান তার ছোট্ট কপালে তার কপাল ঠেকিয়ে বলল,

” কি করব আমি? ”

ডোডো হেঁচকি তুলে বলল,

” আম মাম মা। ”

আজলান ঘরে চলে এল। আয়জাকে ফোন করতে গিয়ে থেমে গেল। ফোন ঘাটতে ঘাটতে একটা রেকর্ড খুঁজে পেল সে। তিথি সেদিন ফোন করে ডোডোকে তার গলা শোনাচ্ছিলো। সে রেকর্ডটা ছেড়ে দিয়ে ডোডোকে বলল,

” তোমার মা এখানে। কথা বলো। ”

তিথি ওর কানের কাছে ফোন রেখে হ্যালো হ্যালো করেছে এর আগে। সে তা বুঝে। হাত পা লাফিয়ে উঠে জোরেশোরে ডেকে বলল,

” আমমম মা। ”

আজলান অবাকচোখে চেয়ে রইলো। রেকর্ডটা কানকাড়া শুনতে লাগলো সে। রেকর্ডে তিথির স্পষ্ট কন্ঠস্বরটা শোনা যাচ্ছে।

” ডোডো, এই ডোডো কথা বল। তোর বাপ শুনছে। আব্বাহ ডাক। এই বোবা ছেলে। হা করে চাইয়া থাকোস ক্যান? কথা বল। কথা বলতে বলছি ডোডো। ”

ডোডো কানকাড়া করে চুপটি করে শুনে আছে। আজলান দৃশ্যটা অবিশ্বাস্য চোখে চেয়ে রইলো। ডোডো ফোনটার সাথে কান লাগিয়ে তার উপর শুয়ে থাকলো। মুখে কি একটা যেন অস্পষ্ট স্বরে বিড়বিড় করে গেল। তারপর কিছুক্ষণ পর ঘুমিয়ে পড়লো।
আজলান তাকে বুকে টেনে নিল। একদম বুকের উপর তুলে নিয়ে জড়িয়ে ধরে আম্বিয়া বেগমের ফোনে কল দিল। রিসিভ করামাত্রই আম্বিয়া বেগমের আহাজারি শুরু করে বলল,

” আমার ঘরদোর আন্ধার করে তোরা কই চলে গেলি বাপ? আমি কি এমন দোষ করছি যে এতবড় শাস্তি দিতেছোস তোরা। এতবড় শাস্তি দিস না। আমার নাতিটারে কোথায় রাখছিস তুই? ”

আজলান ক্ষীণ স্বরে বলল, ” ও তোমার কাছে আর ফোন দিয়েছে মা? ”

চলমান…..

রিচেক করিনি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here