এই_ভালো_এই_খারাপ #পর্ব_২৫ #প্রিমা_ফারনাজ_চৌধুরী

0
125

#এই_ভালো_এই_খারাপ
#পর্ব_২৫
#প্রিমা_ফারনাজ_চৌধুরী

ডোডো একটু একটু করে দাঁড়াতে শিখছে। দাঁড়াতে গিয়ে আবার পড়ে গেলে কিছুক্ষণ গম্ভীর হয়ে বসে থাকে আবার নিজে নিজে দাঁড়িয়ে পড়ে।
তাহেরা বেগম এই কয়েকদিন খেয়াল করলো মাকে পেয়ে সে পুরোদস্তুর ভালো ছেলেতে রূপান্তরিত হয়েছে। সারাক্ষণ আম্মা আম্মা বলে চেঁচাবে, তার মাকে উত্তরে জি জি বলতে হবে।
ব্যস সে খেলতে থাকবে।

এইটুকুনি বাচ্চা, অথচ মাকে সে আপাদমস্তক চিনে ফেলেছে। তার সাথে সাথে মাকেও কথা বলতে হয় এখন। নইলে চেঁচিয়ে কেঁদে উঠবে। মা ছেলে এখন পুরো বাংলোটা মাতিয়ে রাখে। উনার বেশ ভালো লাগে। চলে যাবে ভাবলেই মন খারাপ হয়ে যায়।

ডোডো এখন বাবার কোলে উঠে বসে আছে। বাবার মুখের দিকে একদৃষ্টে চেয়ে আছে। বাবাকে সে অনেকগুলো দিন পর দেখছে। আয়জা আম্বিয়া বেগমকে বলল, ” আম্মা দেখো ভাইয়াকে কিভাবে দেখছে। ”
আম্বিয়া বেগম হাসলেন। আজলান ফোনে কথা বলছে ,ডোডো ফোনটা কেড়ে নেওয়ার পায়তারা করছে। বাবা তার সাথে কথা না বলে কেন ফোনে কথা বলবে?

রাতের খাবারের বন্দোবস্ত চলছে রান্নাঘরে। শায়লা একাহাতে রান্নাঘর সামলাতে পারলেও তিথি আসার পর থেকে তার কাঁধ থেকে কাজের ভার হালকা হয়ে গেছে। বরং সে এ কয়েকটা দিন ভীষণ আনন্দে কাটিয়েছে বাংলোয়। একমাসের বেতন নিয়ে সে চলে যাবে মাস শেষে। স্যারেরাও মনে হয় তাদের বাড়ি ফিরে যাবে।

যারিফ হসপিটাল থেকে আনা যাবতীয় সব জিনিসপত্র গুলো গাড়ি থেকে নামিয়ে বাংলোয় নিয়ে এল। আজলান ফোন রেখে বলল,

” হয়েছে, ওখানে রাখো। বাকিটা আয়জা সামলে নেবে।”

যারিফ বলল, ” আরেকটা ব্যাগ আছে। ওটা নিয়ে আসছি। ”

যারিফ বেরিয়ে গেল। তাকে ইস্যু করে এত কাহিনি ঘটে গেছে সে এইসব ব্যাপারে জানে না। আয়জা তাকে কিছু বলেনি। সেদিন ঘটনাস্থল হতে স্যারের এক সহকর্মী প্রথম ফোনটা তাকে করেছিলো। হয়ত নাম্বারটা স্যারের কললিস্টে শুরুতেই ছিল নয়ত স্যার বলেছে। আর তারপর যারিফ একমুহূর্তও অপেক্ষা করেনি। চট্টগ্রাম মেডিক্যাল হসপিটালে ভর্তি করানোর আট দিনের মধ্যে আজলানের শরীরের অবস্থার একটু উন্নতি ঘটলে যারিফ তাকে সেন্ট্রাল হাসপাতালের প্রাইভেট ক্লিনিকে ভর্তি করায় এক্সট্রা কেয়ারের জন্য। এই যাত্রায় স্যার বেঁচে গিয়েছে তবে লাংস এখনো দুর্বল। প্রপার ট্রিটমেন্ট নিতে হবে। আর রেস্টে থাকতে হবে আরও দেড় দুইমাস। কিন্তু সেটা আপাতত হয়ে উঠবে কিনা স্যারই জানেন। আজ রাতটা বাংলোয় কাটিয়ে দিয়ে কাল সকাল সকাল বাড়ি ফিরে যাবে সে। তার দায়িত্ব শেষ।

বাবা ছেলের মান অভিমান ভেঙেছে অনেক আগে। একমাত্র ছেলেকে জানপ্রাণ দিয়ে হলেও সুস্থ করার লড়াইয়ে নেমেছিলেন আফতাব শেখ। ছেলের এমন দুর্দশার কথা শুনে সকল দ্বন্দ ভুলে উদভ্রান্তের মতো তিনি ছুটে গিয়েছিলেন হাসপাতালে। বেডে শায়িত মরণাপন্ন ছেলের মুখ দেখে দ্বিতীয়বার ভাবার ফুরসত পাননি যে, এই ছেলের সাথে বহুদিন ধরে উনার দ্বন্দ চলছিলো। মৃত্যুভয় কত সহজ করে দেয় সবকিছু।

সবাইকে চা খেতে দেখে ডোডো কাড়াকাড়ি করছে। আজলানের চা, সিগারেট এসব খাওয়া বারণ। যদিও সে জীবনেও সিগারেট নামক জিনিসটা ছুঁয়েও দেখেনি কিন্তু আফতাব শেখকে সিগারেট খোর বলা যায়।
আম্বিয়া বেগম পইপই করে বারণ করে দিয়েছেন সিগারেটের ধোঁয়া, গন্ধ কোনোটাই যেন উনার ছেলের নাকে না যায়।
আয়জা ডোডোকে চা খাওয়ানোর জন্য কোলে নিয়ে নিল।
কি তৃপ্তি নিয়ে চা খাচ্ছে সে। আজলানের মনেই ছিল না সে এভাবে চা খেতে পছন্দ করে। আয়জা চামচে ফুঁ দিচ্ছে, খাওয়ার আগে সেও চামচে ওভাবে ফুঁ দিচ্ছে। আয়জা হেসে খুন। পুরো বাঁদর একটা।

খোশগল্পের মধ্যে ডোডোর অসুস্থতার কথা উঠলো। তাকে হসপিটালে ভর্তি করাতে হয়েছে শুনে আজলান খানিকটা ক্ষেপাটে স্বরে বলল,

” এত ঠান্ডা লেগে গেল কি করে? ”

তাহেরা বেগম বললেন,

” বাচ্চাদের ঠান্ডা লাগা স্বাভাবিক। মায়েদের ভীষণ সতর্ক থাকতে হয়। সেখানে ওর মা ছিল না। ঠান্ডা লেগে যাওয়া অসম্ভব কিছু না। ”

আফতাব শেখ কথা বলে উঠলেন এবার। বললেন,

” জন্মের পর থেকে ওর শরীর শুকোয়নি তেমন। এখানে এসে শুকিয়েছে। তুমি অস্বীকার করতে পারবে না। ”

আম্বিয়া বেগম বললেন,

” যা হয়েছে তা নিয়ে কথা বলে আর লাভ আছে? তুই একটু ঘুমাবি আব্বা? ”

আজলান বসা থেকে দাঁড়িয়ে পড়তে পড়তে বলল, ” না। তবে কাজ আছে। ”

আম্বিয়া বেগম তীব্র প্রতিবাদ করে বলল,

” বউ ঘরদোর সব সাফ করছে আজ। খবরদার কোনোকিছুতে হাত দিবি না আজলান। সবসময় অবাধ্য হোস না। ”

আজলাম হাঁ করে চেয়ে রইলো। মা বুঝে গেল কি করে? আয়জা বলল,

” হ্যা ভাইয়া। আমি আর ভাবি মিলে সব ঝেড়েমুছে ধুয়ে পরিষ্কার করে রেখেছি। ”

আফতাব শেখ বললেন,

” তোমার শরীরের উপর যাতে প্রেশার না পড়ে। সবসময় নিজের মর্জিমাফিক চলা যায় না। ”

আজলান ঘরে চলে যাওয়ার উদ্দেশ্য পা বাড়াতে গিয়ে আবার থেমে গিয়ে যারিফকে বলল,

” আমি না বলা অব্দি কোথাও যাবে না। ”

যারিফ মাথা নাড়লো। আয়জা তার কোলে ডোডোকে দিয়ে বলল,

” ফুপী কাজে যাই। কেমন? ”

ডোডো আঙুল তুলে বলল,

” আমমাহ। ”

আয়জা তার নাক টিপে দিয়ে বলল,

” আপনার আম্মা কাজ করছে। যাই দেখে আসি।”

যারিফ বলল, “আমাকে কাল চলে যেতে হবে। স্যারকে একটু বুঝিয়ে বলবে?”

আয়জা মাথা নেড়ে বলল,

” আম্মাকে বলব। ”

আজলান ঘরে গিয়ে বিছানায় বসলো। ঘরটা পরিপাটি করে রাখা হয়েছে। ডোডোর দোলনা, খেলনা, বেবি ওয়াকার, কাপড়চোপড়, ঔষধের বক্স ছাড়া আর কিছুই ঘরে দেখা যাচ্ছে না।

এই বাংলোর পেছনটা জঙ্গলের মতো। ঝিঁঝি পোকার ভারী ডাক কান ঝালাপালা করে দেয়ার মতো, এখন কুনোব্যাঙগুলোও যোগ দিয়েছে। জানালাটা বন্ধ। মশার কারণে বোধহয় বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। সে উঠে জানালাটা খুলে দিল। দমকা হাওয়া ঢুকে পড়লো ঘরে। আজলান ফোঁস করে একটা ভারী নিঃশ্বাস ফেলে অনেকক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো।

তারমধ্যে ঘরে কেউ একজন এমনভাবে এল যেন মেঝেতে পায়ের ধূলো না পড়ে, এমনভাবে গেল যেন পায়ের শব্দ না হয়। ঠিক এভাবে হাসপাতালের কেবিনেও এমন একজোড়া পা আসা যাওয়া করতো যা আজলান শেখের জানার কথা নয়।

_______

রাতের খাবারের বেশিরভাগই ঝাল কম দিয়ে রান্না করা হয়েছে। গত চৌদ্দ দিন বাংলোতে যেভাবে রান্না করেছে ঠিক সেই নিয়মে।

চিংড়ি মাছটা বেশ ঝাল করে রেঁধেছে তিথি। কারণ আজলান চিংড়ি মাছ খায় না। তারমতে চিংড়ি মাছ নয়, পোকা। জলজ অমেরুদণ্ডী প্রাণী। তাছাড়া চিংড়িতে হাজার রকমের এলার্জি। সে ঘৃণা করে চিংড়িকে। তাই তিথির মনে হলো চিংড়িটা সে নিজের মতো রাঁধতে পারবে। বাকি সব রান্না শায়লা রেঁধেছে। তিথি এটা ওটা বাড়িয়ে দিয়েছে।

আজলান তেল মশলা বেশি খেতে পছন্দ করে না। আগেও কম খেত। এখন আরও কম। অপরদিকে তিথির পছন্দ তেল চটচটে মাছ মাংস। মাছ মাংসের উপর তেল না ভাসলে, লাল মরিচ আর পেঁয়াজ মশলায় মাখা ঝোলঝাল না হলে খাবার তার মুখে রোচে না।

আম্বিয়া বেগমও আগে এমন খেতেন। ছেলের জন্য পছন্দ বদলে ফেলেছিলেন। এখন তিথি রান্না করলে তা বেশ আরামে খান। যদিও তিথির রান্না খুব কম খাওয়া হয়েছে।

কিন্তু গত চৌদ্দ দিন তিথিই রেঁধেছে তাও শায়লার কথামতো আর হাসপাতালে খাবার নিয়ে গিয়েছে। বেশ ঘন করে করে ডাল, পেঁপে ভাজি, অথবা মসুর ডাল আর লাউ তরকারি, পটল কিংবা বরবটি ভাঁজা, ডিম এসব। মাছ মাংস একদম ছুঁয়েও দেখেনি আজলান। মাংস খাওয়া বারণ ছিলো।

খাওয়ার ফাঁকে আফতাব শেখ আর জাফর আহমেদ চিংড়ি রান্নার বেশ প্রশংসা করলেন। তিথি আম্বিয়া বেগম আর তাহেরা বেগমকে মাছ মাংস তুলে দিচ্ছিলো। তখনি জাফর আহমেদ বললেন,

” শায়লা আজ সব রান্না দারুণ মজা হয়েছে। চিংড়িটা দশে এগারো। আজলান শেখ আপনি এটা মিস করে গিয়েছেন। একবার খেয়ে দেখুন। দেব? আরেহ কিচ্ছু হবে না। একবার খেয়ে দেখুন। চিংড়ি মাছ আবার মিস দেয় নাকি কেউ? ”

তিথির ইশারায় শায়লা বাটি সরিয়ে নিয়ে বলল,

“এটা ম্যাডাম রেঁধেছেন স্যার। আমি নই।”

বাটিতে শেষ কয়েকটা চিংড়ি ছিল। সেগুলো তাহেরা বেগমের পাতে দিয়ে বাটিটা নিয়ে রান্নাঘরে চলে গেল তিথি। আয়জা চুপচাপ খেতে খেতে মায়ের চোখ বরাবর তাকিয়ে আবার চোখ নামিয়ে নিল। আজলান খেতে খেতে যারিফকে বলল,

” তুমি কাল ওদেরকে নিয়ে চলে যাচ্ছ। ”

আম্বিয়া বেগম অবাককন্ঠে বললেন,

” তুই যাবি না? ”

” যাব। এখন না। কাজ আছে। আমাকে হেডকোয়ার্টারে যেতে হবে একটু। ”

জাফর আহমেদ বললেন,

” আমি সামলে নেব। তুমি আগে বাড়ি যাও। যদি না যাও তাহলে সবাই এখানে থাকুক। ”

আজলান আর কিছু বললো না। তিথি ডোডোকে নিয়ে ফিরে এল। বাসনের এককোণায় এক চামচ ভাত নিয়ে চিংড়ির ঝোল নিয়ে মেখে ডোডোকে হাঁটতে হাঁটতে খাইয়ে দিতে লাগলো। ডোডো ঝাল খেতে ঠোঁট দুটো লম্বা করে উঃ উঃ বললো। তিথি গালে চেপে চুমু খেয়ে বলল, ” মজা? ”
ডোডো মাথা ঝাঁকালো। জাফর আহমেদ বললো,
” ছেলেও মাথা ঝাঁকিয়ে মায়ের প্রশংসা করছে।”
আম্বিয়া বেগম বললেন,”বেশি ঝাল দিস না বউ। ওর পেট খারাপ করবে। ”
আয়জা বলল, ” পাতলা খাবার খেলে ওর পেট খারাপ হয় আম্মা। ঝাল খেলে ঠিকই থাকে। ”
ডোডো তিথির কোল থেকে খানিকটা নীচে ঝুঁকে গলা কাত করে চুপচাপ খেতে থাকা আজলানকে ডেকে বলল, ” এ-পাপ্পাহ। ”
আজলান সবেমাত্র পানির গ্লাস ধরেছিলো মুখের কাছে। ডেডোর এমন ডাক শুনে তার কাশি উঠে গেল তখুনি। আম্বিয়া বেগম চেয়ার ছেড়ে ছেলের কাছে ছুটে এসে বুকে পিঠে মাথায় মালিশ করে দিতে দিতে আয়জাকে বলল,

” পানি দে। এখন কি হবে রে?”

আজলান কাশতে কাশতে দাঁড়িয়ে পড়লো। তার খাওয়া এমনিতেই শেষ হয়ে এসেছিলো। দুর্দান্ত একটি কাশির ধমক ফুসফুস বেয়ে উপরে উঠে আসছে ধীরেধীরে। সে দ্রুতবেগে হেঁটে ঘরে চলে গেল।

ঘরে এসে নিজের ঔষধপত্র খুঁজতে গিয়ে একেরপর এক সব ড্রয়ার ধুপধাপ টেনে খুললো। বিছানার বালিশ, চাদর তুলে ফেললো, টেবিলের ড্রয়ারটা চেক করলো। ঔষধের বক্সটা কোথায় রেখেছে মাথায় আসছে না। কোথায়? কাশির ধমকটা বুকে এসে আটকে গেছে। উতলে উতলে উঠছে কাশির বেগ। শ্বাস ছাড়তে কষ্ট হলো। কাশির চোটে চোখে পানি চলে এল। গলার দুইপাশের শিরা ক্রমাগত উঠানামা করতে লাগলো। লাংসে বুলেটের আঘাত লাগায় তা এখনো অনেকটা দুর্বল। ডাক্তার নিয়মিত নেবুলাইজার অথবা ইনহেলার ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়েছে। কিছুতেই বুকে চাপ সৃষ্টি করা যাবে না। ইনহেলারটা কোথাও খুঁজে পাচ্ছে না সে। কাউকে ডাকার মতো অবস্থায়ও নেই। টেবিলের উপর হতে ঝপাৎ করে একগাদা ঔষধ পড়ে গেল। হাঁটুভেঙে বসে ঔষধগুলো হাত দিয়ে নাড়তে নাড়তে গলা চেপে ধরলো সে। চোখদুটো প্রায় ঝাপসা হয়ে আসছে।

ডোডোকে খাইয়ে দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিচ্ছিলো তিথি কিন্তু সে ঘুমাবে না এখন। তিথি তার মাথা বুকে রেখে ঘুম পাড়িয়ে দিচ্ছে আর সে মুখ তুলে মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে। তিথি বলল,
” ঘুম কবে আসবে? আমার অনেক কাজ ডোডো।”
ডোডো হা করে চেয়ে রইলো। তিথি তাকে বুকে জড়িয়ে ধরে দুগালে আদর করতে করতে ঘরের সামনে দিয়ে যাচ্ছিলো। ঘরের ভেতর সমস্ত জিনিস এলোমেলো পড়ে থাকতে দেখে কৌতূহলবশত ঘরে পা রাখলো। তখুনি আজলানকে পাগলের মতো ঔষধ হাতড়াতে দেখে ডোডোকে মেঝেতে নামিয়ে দিয়ে ছুটে গিয়ে ইনহেলারটা খুঁজে আজলানের ঠোঁটের ফাঁকে গুঁজে দিল। দুঠোঁটে ইনহেলার চেপে ধরে শ্বাসকষ্টকে দমিয়ে রাখার চেষ্টায় রত হলো আজলান। ডোডো হামাগুড়ি দিয়ে আজলানের সামনে এসে বসে বাবার মুখের দিকে চেয়ে রইলো। তিথি তাকে বুকে টেনে নিয়ে আজলানের দিকে চেয়ে রইলো। আজলান একটু স্বাভাবিক হয়ে আসতেই তিথি ডোডোকে নিয়ে উঠে যাওয়ার সময় আজলান বলল,

” ডোডো সামনে বসো। ”

তিথি ডোডোকে তার সামনে বসিয়ে দিয়ে বেরিয়ে গেল। পায়ে জোর দিয়ে দাঁড়িয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো আজলান। পাশে ডোডোকেও শুইয়ে দিল। ধীরেধীরে ধীরেধীরে শ্বাসপ্রক্রিয়া চলছে তার। ডোডো তার হাতে থাকা ইনহেলারটা কেড়ে নেয়ার জন্য ধস্তাধস্তি শুরু করলো তার গায়ের উপর উঠে। আজলান বলল,

” মহামুশকিল তো। ”

তিথি এসে একটানে কোলে নিয়ে নিল ডোডোকে। হাতদুটো চেপে ধরে গালে আলতো করে চড় বসিয়ে বলল, ” ঘুমা। খুব মারবো ডোডো। ”

ডোডো ঠোঁট টানলো। তিথি তাকে বুকে চেপে ধরে বিছানার এককোণায় গুটিসুটি মেরে শুয়ে পড়লো। ঔষধ খেয়ে কড়া আলো নিভিয়ে ডিমলাইট জ্বালিয়ে দিয়ে আজলানও ধীরেসুস্থে শুয়ে পড়লো। বিছানার মধ্যে দু-হাত জায়গা এমনি এমনি খালি পড়ে রইলো।

____

যারিফ চলে যেতে চাচ্ছিলো আজলান তাই আম্বিয়া বেগমকে বলল, ” তোমরাও ওর সাথে চলে যাও। আমি কাল পরশু যাব। ”

আম্বিয়া বেগম বললেন, ” তোর শরীর সুস্থ না। আমরা এভাবে যাব না। কখন কি ঘটে যায়। ”

আজলান বলল, ” কিছু হবে না। চিন্তা করার দরকার নেই। ”

” তাহলে বউ থাকুক। ”

” কাউকে দরকার নেই। ”

আফতাব শেখ বললেন,

” ডোডোর মা কি শেখ বাড়িতে যাবে? ”

আজলান ভ্রকুটি করে উনার দিকে চাইলেন। আফতাব শেখ গলা ঝেড়ে কেশে বললেন,

” যেহেতু আমার পর তুমি ওই বাড়ির উত্তরসূরী। মনে হলো তোমার পারমিশন দরকার। ”

আম্বিয়া বেগম বললেন, ” ওকে না খোঁচালে তোমার ভালো লাগে না। না? ”

আফতাব শেখ হাসলেন। বললেন,

” খোঁচাখুঁচিও মাঝেমধ্যে ভালো কিছু বয়ে আনে। কি বলো আজলান শেখ? ”

আজলান বলল, ” যার ইচ্ছা সে থাকবে, ইচ্ছা না হলে বেরিয়ে যাবে। ”

আফতাব শেখ হেসে বললেন,

” তো তার ইচ্ছে হয়েছে সে ছেলেকে নিয়ে বাপের বাড়িতে উঠবে। তাহলে উঠুক। ”

আজলান গলায় জোর দিয়ে বলল,

” নাহ। কারো কোথাও যাওয়ার দরকার নেই। এই বাংলোয় থাকবে। যারিফ তুমি সাবধানে যেও। গিয়ে আমাকে ফোন করবে। ”

যারিফ খুশিমনে বলল,

” থ্যাংকস স্যার। ”

সে চলে যেতে উদ্যত হতেই আফতাব শেখ বললেন,

” আয়জার বিয়ের সময় সময়মতো চলে এসো। তোমার স্যার ভালো পাত্র দেখে বোনকে বিয়ে দেবে। এবার আমি শুধু চুপচাপ দেখবো। নো ইন্টারফেয়ারেন্স। ”

আম্বিয়া বেগম দাঁতে দাঁত পিষলেন। আজলান বলল,

” মাঝেমধ্যে অবাক লাগে আপনার সন্তান হয়ে আমি এত ভালো হলাম কি করে? ”

আফতাব শেখ হো হো করে হেসে উঠলেন। যারিফও হাসলো।

চলমান….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here