‘তুই’
‘তৃধা মোহিনী’
|পর্ব দুই|
.
স্কুল থেকে ক্লাস শেষ করে মীরা স্কুলের গেইটে দাড়িয়ে বান্ধবীদের সাথে ফুচকা খাচ্ছিলো।সাথে তার বান্ধবী রুহানি আর সানিয়া ছিলো।তারা তিনজন একসাথে মিলে ফুচকা খাচ্ছিলো।এইটা তাদের ছয় নাম্বার প্লেট ছিলো।
কোথা থেকে ধ্রুভ ভাইয়া গাড়ি নিয়ে এসে ওদের সামনে দাড়ালো।মীরা ধ্রুভকে মনে মনে প্রচন্ড ভালোবাসে কিন্তু ধ্রুভের কাছে পাত্তা পায় না সে কখনোই।যতবারই সে প্রকাশ করতে গেছে উল্টো গালে দাগ করে ফিরে এসেছে অর্থাৎ থাপ্পড় খেয়ে আর কি।ধ্রুভ আসাতে মীরা তাড়াহুড়ো করে ওখান থেকে কেটে পরতে লাগলে ধ্রুভের ডাকে থমকায়।
–‘এই চুন্নি কই যাস হ্যা?।’
মীরা তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলো।ক্ষোভ নিয়ে বললো,
–‘আমি মোটেও চুন্নি না।আমি আমার দাদুর বড়লোক পুতিন।’
ধ্রুভ মীরার কথা শুনে ভ্রু কুচকে তাকালো তার দিকে।সেও ট্যারা করে জবাব দিলো,
–‘হ্যা ইব্রাহিম দাদুর বিগড়ে যাওয়া পুতিন।’
মীরা এগিয়ে এসে বললো,
–‘একদম বাটপারি করে মিথ্যা কথা বলবেন না।উল্লুকের নানা।’
ধ্রুভ মীরা চুল টান দিলো।সে বললো,
–‘একদম পটর পটর করবি না।’
মীরা কিছু বলতে যাবে তার আগে দেখে দেখে তার সামনে তারই বান্ধবীর সাথে ধ্রুভ হেসে হেসে কথা বলছে।আর তার বান্ধবী সানিয়া মাঝেমধ্যে ধ্রুভের কথা শুনে তার গায়ে ঢলে পরছে।মনে হচ্ছে,কতই না রসিকের কথা বলছে কিন্তু এই লোক তো আস্ত একটা তিতকুটে করলা।
সানিয়া আবারো ধ্রুভের গায়ে হাসতে হাসতে ঢলে পরে যেতে যেতে বললো,
–‘ওহ ধ্রুভ বেবি ইউ আর সো ফানি।’
এই কথা শুনে মীরার চোখ তো কপালে।তার খুব করে বলতে ইচ্ছা করছিলো যে,
–‘ফানি বলার শখ আজীবনেত মতো ঘুচিয়ে দিব বাটপারের নানী।’
রুহানী বলে উঠলো মীরাকে,
–‘দেখ দোস্ত তোর পছন্দের মানুষের সাথে সানিয়া কেমন করে লেপ্টে পরছে বারবার ওর গায়ের উপর।’
মীরার হাতে মাম পানির বোতল ছিলো।দুই হাত দিয়ে এতো শক্ত করে চেপে ধরেছে মনে হচ্ছে বোতলটায় ধ্রুভ।আর চেপে ধরছে যেন দম ফুরিয়ে যায় ধ্রুভের।বোতল টা নিমিষে বেকিয়ে গেলো মীরার চাপাচাপিতে।
সে তাৎক্ষণিকভাবে চিৎকার দিয়ে উঠলো,
–‘ড্রাইভার!’
ড্রাইভার মীরাদের স্কুলের সামনের স্টলে বসে চা খাচ্ছিলো।মীরার এমন চিৎকার শুনে ড্রাইভারের মুখ থেকে চা বেরিয়ে দোকানির গেঞ্জিতে পরে গেছে।দোকানী রেগে বললো,
–‘তোর মুখের ভিতরে লেওড়া আছে নাকি এইভাবে ফেললি কেন?’
ড্রাইভার কোন জবাব দিতে পারে নাই।সে দৌড় দিয়ে মীরার কাছে আসলো।সে এসেই জিজ্ঞেস করলো,
–‘কি হয়েছে মামুনি?ফুচকা খাওয়া শেষ?’
মীরা অকপটে বললো,
–‘হু।বাড়ি যাবো।’
ধ্রুভ এতোক্ষন সব শুনছিলো।সে এগিয়ে এসে বললো,
–‘তুমি গাড়ি নিয়ে বাড়ি যাও চাচা।আমি ওকে নিয়ে আসবো।’
মীরা চোখমুখ শক্ত করে আবারো বলে উঠলো,
–‘আমার গাড়ি নাই?আমি আপনার গাড়িতে কেন যাবো?চলুন চাচা।’
ধ্রুভকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে মীরা ওইখান থেকে গাড়ি নিয়ে কেটে পরলো।ধ্রুভও আর থামে নি,সেও গাড়ি নিয়ে ক্লাবে চলে যায়।
সানিয়া মন খারাপ করে বললো,
–‘দেখ না দোস্ত ও চলে গেলো নাম্বার না দিয়ে।’
রুহানী ভেংচি দিয়ে বললো,
–‘বামুন চাঁদে বাড়াস কেন?’
রুহানীও এই কথা বলে রিকশা ডেকে উঠে চলে গেলো।আএ সানিয়া মনে মনে ভাবছে,’কিভাবে আশরিক আলফাজ ধ্রুভকে পটানো যায়।’
দিন যায়,মাস যায় বছর যায়।মীরা আসতে আসতে বড় হতে থাকে।ধ্রুভকে নানানদিক থেকে নিজের অনুভূতি গুলো বুঝানোর চেষ্টা করেছে মীরা কিন্তু ধ্রুভকে পাত্তা দেয় নি কখনো সে উল্টো ধ্রুভ অন্য মেয়ের সাথে ফ্লাটিং আর টাইম পাস করতে বিজি হলো।
একদিন ধ্রুভের বাহিরে যাওয়া ঠিক হলো।লন্ডনে তাকে পড়তে পাঠাবে আর বাবা।বিলেত ফেরত ছেলের হাত দিয়ে ব্যবসার দায়িত্ব দিয়ে অবসর নিতে চান তিনি।
.
ধ্রুভের বিলেত যাওয়ার কথা শুনে মীরা কান্নায় ভেঙ্গে পরে।সে হন্তদন্ত হয়ে ধ্রুভের ঘরে ছুটে যায়।
ধ্রুভের ঘরে যেয়ে মীরা দেখে ধ্রুভ কার সাথে ফোনে হেসে হেসে কথা বলছে।ধ্রুভ দেখলো মীরা এসেছে তার ঘরে তবুও তোয়াক্কা না করে নিজের তালে কথা বলে যাচ্ছে সে।
মীরা কান্না করতে বললো,
–‘ধ্রুভ ভাইয়া আমার কথাটা একটু শুনবে প্লিজ।’
ধ্রুভ বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে আবারো ফোনে কথা বলতে ব্যস্ত হয়ে পরলো।মীরা ধ্রুভের হাত টানাটানি করতে লাগলো।
ধ্রুভ ফোনের লাইন কেটে মীরার দিকে আগুন চোখে তাকিয়ে তার দুই বাহু ঝাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
–‘সমস্যা কি তোর?একটুও শান্তিতে থাকতে দিবি না?মনে হচ্ছে তোর জন্য বাড়িতে আমি দুই দন্ড টিকতেও পারবো না।বাহিরে যাচ্ছি এখন শান্তিতে থাকতে পারবো।’
ধ্রুভ এই কথাগুলো বলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলো বন্ধুদের সাথে দেখা করতে।ধ্রুভের এরকম কথা শুনে মীরা যেন পাথর বনে গেছে।সে আর কোন টু শব্দও করে নি।
দেখতে দেখতে ধ্রুভের যাওয়ার দিন চলে আসলো।সবাই তাকে বিদায় দিতে আসলেও মীরা আসে নি।মীরা শুধু নিজের জানালা থেকে আড়াল হয়ে ধ্রুভের যাওয়ার পথ দেখছিলো।
.
কেটে গেছে পাঁচ বছর,
মীরা অনার্স শেষ করে মাস্টার্সের জন্য ভর্তি হতে হয়েছে।অনার্সে ঢুকে ঢুকে প্রত্যয়ের সাথে তার বন্ধুত্ব হয়।মীরা বেষ্টফ্রেন্ড হয়ে উঠে প্রত্যয়।ধ্রুভের জন্য নিজের অনুভূতি গুলো কি ছিলো সেটাও জানতো প্রত্যয়।
প্রত্যয় মীরাকে মনে মনে এক তরফা ভালোবাসতে আরম্ভ করে কিন্তু মীরার চোখে প্রত্যয় খুবই ভালো বন্ধু।একদিন প্রত্যয় মীরাকে সাহস করে বলে দেয় নিজের অনুভূতির কথা।তখন মীরা শান্ত স্বরে জবাব দেয়,
–‘আমার দ্বারা ভালোবাসা হয়তো সম্ভব নয় কিন্তু তোকে আমি যথেষ্ট সম্মান করি।বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব দিস,তারা যা ডিসিশন নিবে তাই মেনে নিব আমি।’
সেদিন মীরার এরকম জবাব শুনে প্রত্যয় মীরাকে জাপটে ধরেছিলো।মীরার মনে মনে তখনো চলছিলো এই যে,
‘যে তোমার অপেক্ষা করে না,তোমার পথ চেয়ে থেমে নেই তার না বলার শহরের ভিড়ে তোমার থাকার অধিকারও নেই।’
ধ্রুভ লন্ডন যাওয়ার পর হাড়ে হাড়ে টের পায় যে মীরাকে সে কতোটা ভালোবাসে।মীরার প্রতি কতোটা আসক্ত হয়ে গেছে।মীরাকে এমন কোন দিন নেই যে সে মনে করে নি।সে মীরার সাথে যোগাযোগ করতে চেয়েছিলো কিন্তু মীরা সব যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে।
পাঁচ বছর পর যখন সে দেশে ফিরলো।সিদ্ধান্ত নিলো যে মীরাকেই বিয়ে করবে যে করেই হোক তখনই এসে জানতে পারলো মীরার বিয়ে ঠিক।শুনে মেজাজ আরো গরম হয়ে গেছিলো যখন বিয়ের জন্য আসা অতিথি জানিয়েছিলো তাকে যে মীরা রিলেশন করে বিয়ে করছে।তখন তার একটাই ধারনা ছিলো এই যে,
–‘তার কাছে পাত্তা না পেয়ে সে অন্য কাওকে বেছে নিয়েছে’
কিন্তু মীরার বিয়েটা শেষমেশ প্রত্যয়ের সাথে হলো না,তার সাথে হলো।
.
অতীতের স্মৃতি থেকে ফেরত আসলো ধ্রুভ।এতোক্ষন ছাদে দাড়িয়ে সিগারেট ফুকতে ফুকতে চার প্যাকেট শেষ করে ফেলেছে।সে এইসবই ভাবছিলো। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো রাত দুটো বাজে।নিশ্চয় মীরা একা একা ভয় পাচ্ছে।তাছাড়া, আজকে তার বাসর রাত আর আজকে দেরী করা চলবে না।
ধ্রুভ ছাদ থেকে নেমে ঘরের দিকে রওনা দিলো।ঘরে যেয়ে ধ্রুভ দেখলো মীরা ঘরে নাই।তাড়াতাড়ি করে নিচে যেয়ে দেখলো মীরা বাড়ি থেকে পালাচ্ছে।
ধ্রুভ দৌড়ে যেয়ে মীরাকে নিজের দিকে হ্যাচকা টান মেরে কষিয়ে থাপ্পড় মারলো।মীরা ছিটকে নিচে পরলো মার খেয়ে।এতো ঝটকা খেয়ে মনে হচ্ছে সে কাঁদতেও ভুলে গেছে।
ধ্রুভ তাকে হিড়হিড় করে টেনে ভেতরে নিয়ে যাচ্ছে।লেহেঙ্গার থেকে এখন নিজেকে ভারী লাগছে মীরার।
মীরা বললো,
–‘আমাকে ছাড়েন।আমার প্রত্যয় কে খুজতে হবে।প্রত্যয় আমার জন্য অপেক্ষা করছে।’
ধ্রুভ মীরার মুখে অন্য কারোর নাম শুনে আরো রেগে গেছে।ধ্রুভ মীরার মুখ এনে এতো জোরে চেপে ধরেছে মনে হচ্ছে গাল ভেদ করে আংগুল ঢুকে যাবে।
ধ্রুভ চিৎকার দিয়ে বললো,
–‘প্রত্যয় মারা গেছে।শুনেছিস তুই।কার এক্সিডেন্টে ইন্তেকাল করেছে তোর প্রেমিক।’
ধ্রুভের মুখ থেকে প্রত্যয়ের মারা যাওয়া শুনে মীরা থমকে গেছে।অসাড় হয়ে আসছে শরীর।যা বলছে তা কি সত্যি তবে?
চলবে
কেমন লাগছে জানাবেন।