‘তুই’
‘তৃধা মোহিনী’
|পর্ব পাঁচ|
.
‘এরকম খেলা আমি খেলবো না।সরেন।’
মীরা ধ্রুভকে মৃদু ধাক্কা দিয়ে বললো।ধ্রুভের কোন নড়চড় নেই।সে মীরার ঘাড় নিজের নাক ঘষতে ব্যস্ত।সে বললো,
‘মীরা কেন বুঝিস না তোকে কতোটা চাই আমি।’
ধ্রুভ কথাটা বলে মীরা গায়ে ঢলে পরলো।বেহুশ হলো নাকি নেশাতে বুদ হয়ে গেলো মীরা বুঝতে পারলো না।তবে,ধ্রুভের ভারী জিম করা শরীরের ভার মীরা নিতে পারছে না।সে আস্তে আস্তে ধ্রুভকে বেডে শুইয়ে দিয়ে বললো,
‘আমি তোমাকে ঠিক কতোটা ভালোবাসি সেটা যদি তুমি বুঝতে তখন!’
মীরা প্রতিটা দীর্ঘশ্বাসে ধ্রুভের দেয়া অবহেলার নামক ক্লান্তি।
.
সকালবেলা মীরা উঠে গেছে রান্নাঘরে।রান্নাঘরে যাওয়ার কারন হলো আজকে নিজের হাতে সব বানাবে।ধ্রুভের ফেভারিট আলুর আর পরোটা আর নিজের জন্য আলু পরোটা আর পায়েশ।ব্যস,নেমে পরলো মিশনে।
ধ্রুভ ঘুম ভাঙলো যখন মাথাটা বেশ ভার লাগছে তার।মনে করার চেষ্টা করছে সে কোথায় আছে।কাল রাতে,মীরাকে বকাবকি করে নাইট ক্লাবে গেছিলো।সেখান থেকে ওভার ড্রাংক হয়ে এসেছে বাড়িতে।তারপর আর কিছু মনে নাই তার।পাশ ফিরে দেখে ঘড়িতে নয়টা বাজে।মীরাও নেই ঘরে গেলো কোথায়।এমনিতে কাল অনেক মিসবিহেভিয়ার করে ফেলেছিলো।
ধ্রুভ উঠে আগে ফ্রেশ হতে চলে গেলো ওয়াশরুমে।ফ্রেশ হওয়ার নিজের বাসি জামা-কাপড় চেঞ্জ করে নিচে যাচ্ছে মীরাকে খুজতে।ধ্রুভ সিড়ি বেয়ে নামছে আর বলছে,
‘এই মেয়ের লুকানো ছাড়া আর কোন কাজ নেই নাকি।আমাকে সি আই ডিয়ের মতো খুজাচ্ছে যে পাতা লাগাও।মীরাকা পাতা লাগাও।’
.
লাস্ট দুই ঘন্টা যাবৎ মীরা রান্নাঘরে আছে।পায়েশ আর আলুর দম হয়ে গেলেও ইউটুব দেখে কিন্তু পরোটা গুলা একটাও গোল হচ্ছিলো না।রাগে-দুঃখে মীরার কান্না আসছে।মুখে তার আটা মাখামাখি। হাতের বেশ খানিক জায়গা সে পুড়িয়ে ফেলেছে।
ধ্রুভ নিচে এসে আগে রান্নাঘরে নজর দিলো।রান্নাঘরে মীরার মুখে আটা মাখামাখি দেখে আর মীরাকে রান্নাঘরে দেখে ফিক করে হেসে দিলো ধ্রুভ।এই রুপেও মীরাকে মোহনীয় লাগছে ধ্রুভের কাছে।সে ধীর পায়ে এগিয়ে গেলো মীরার কাছে।
মীরা কোমরে আঁচল গুজে পরোটা বেলছে।কিন্তু যতবারই সে বেলছে ততবারই সেটা গোল হওয়া বাদে বিভিন্ন আকৃতি ধারন করছে।ধ্রুভ পরোটার আকৃতি দেখে মীরার উপর মায়া আসার বদলে তার আটার উপর মায়া আসলো উল্টো।ধ্রুভ পিছন থেকে বলে উঠলো,
‘তুই মনে হচ্ছে আটার মার্ডার করে ফেলবি।ইশ কি হাল ওদের।’
ধ্রুভের কথা শুনে মীরা চমকে উঠে পিছন ফিরে তাকাতে গেলে তার আগেই ধ্রুভ মীরার উদাম পেটে, তার নাভীর ভাজে নিজের দুই হাত দিয়ে পিছন থেকে ধরে ফেলে।মীরার গরমে ভিজা পিঠ লেগে আছে ধ্রুভের বুকে।
মীরার উন্মুক্ত গলাতে মুখ ডুবালো ধ্রুভ।ছোট ছোট অনেকগুলা চুমু খেলো।সেই চুমুতে ঘায়েল হচ্ছে মীরা।খালি পায়ে মনে হচ্ছে ফ্লোর টাকে কেম্নে দেবে ধরে আছে সে।ধ্রুভের হাত বিচরণ হচ্ছে মীরার উদাম পেটে।
হুট করে পুড়ার গন্ধ গেলো মীরার নাকে।সে আর্তনাদ নিয়ে চিল্লিয়ে উঠলো,
‘আল্লাহ আমার আলু পরোটা শেষ।’
মীরা এতো জোরে চিল্লিয়েছে যে ধ্রুভের জানটাও ধুকপুক করছে।ধ্রুভ মীরার কোমরে একটা চিমটি দিয়ে বললো,
‘মাথার সমস্যা টা কি তোর দিন দিন বাড়তেছে।’
এদিকে ধ্রুভ যেখানে চিমটি দিয়েছে ইতিমধ্যে সেখানে জ্বলা শুরু হয়েছে।মীরা দাঁতে দাঁত কেটে সহ্য করলেও হাতে তার ছিলো বেলন চাকি। সেটা দিয়ে ধ্রুভের কোমরে দিলো এক গুতা।ধ্রুভের লাগে নি তবুও ঠাট্টা সুরে বললো,
‘আমাকে মারতে পারলি তুই?’
মীরা রেগে বললো,
‘আপনার এই প্রেম প্রেম খেলার জন্য আমার পরোটা পুড়েছে বজ্জাত লোক।’
ধ্রুভ ভ্রু কুচকে বললো,
‘এটা কি খেলা?’
মীরা থতমত খেয়ে গেলো।আসলে ধ্রুভ যা বলেছে নেশার ঘোরে বলেছে তখন।সে কিছু বলতে যাবে তার আগে ধ্রুভ তার কোমরটাকে নিজের কাছে মিশিয়ে নিয়ে বললো,
‘এইসব খেলা দ্রুত শিখাবো।তুই শুধু সাপোর্ট দিতে থাক।’
মীরা অবাকের সপ্তম পর্যায়ে যেয়ে লাল-নীল হতে শুরু করেছে।মানে এই বজ্জাত লোকের সব মনে আছে।শুধু শুধু তার সামনে নাটক করছিলো।মীরা তাড়া দিয়ে বললো,
‘ছাড়ো আমার পরোটা হয় নি এখনো তোমার জন্য।’
ধ্রুভ ছাড়লো না আরো শক্ত করে ধরে বললো,
‘এইভাবে হবে না।চল তোকে নতুন পদ্ধতিতে পরোটা বানানো শিখাই।’
মীরা আস্তে করে বললো,
‘আপনার পদ্ধতি গুলো আপনার মতোনই ক্ষাতারনাক হবে তা আপনার বলার ভঙ্গিমা দেখে বুঝেছি।’
ধ্রুভ মীরার কোমর না ছেড়ে তার কোমরের ভেতর দিয়ে হাত ঢুকিয়ে নিলো।অতঃপর সে মীরার দুই হাতের মাঝে নিজের হাত নিয়ে রুটি বেলতে আরম্ভব করলো।এইসব করতে করতে ধ্রুভ মীরার ঘাড়ে অসংখ্য চুমু দিয়েছে।মীরা শিউরে উঠে সরতে চাইলে,ধ্রুভের চোখ পাকানো দেখে থেমে গেছে।এইভাবে রুটি টেরাবেকা হলে,ধ্রুভ একটা স্টিলের বাটি তে আটার উপর চাপ দিয়ে কেটে ফেললো।যার ফলে রুটি গোলাকার হয়ে গেলো।
মীরার মুখটা বিস্ময়ে হা হয়ে গেছে।সে বললো,
‘এটা তো জানতামই না আমি।কি ইজি!’
ধ্রুভ বললো,
‘মাথায় গোবর থাকলে এইসব জানা লাগে না।’
ধ্রুভের কথায় মীরা না ফুলিয়ে উঠলো।সে বললো,
‘পদ্ধতিটা বললেই হতো।এতো ঢং না করে।’
ধ্রুভ মীরাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে তার চুল কানের পিছে গুজে দিয়ে বললো,
‘এটাকে বলে প্রেম প্রেম খেলা পদ্ধতি।শুধু নমুনা দেখালাম তোকে।এখনো রুলস দেখিয়ে তোকে অংশগ্রহণ করানো বাকি আছে।’
মীরা চোখ বড় বড় হয়ে গেলো।আর মীরার গোল গোল চোখ দেখে ধ্রুভ বাকা হেসে বললো,
‘লেটার’স বেবি।’
চলবে