পর্ব ১১-১৫ সমাপ্তি
#নসীব
#পার্ট_১১
#আরবি_আরভী
কাঁন্না করে খুব মিনতি করছি কিন্তু খালামনি কোনো পাত্তাই দিচ্ছেন না আমাকে টেনে গেইটের বাহিরে রেখে গেলেন।। খুব কান্না করছি।। বৃষ্টির ঠান্ডা পানিতে কাঁপতে শুরু করেছি রীতিমত,,,
কিছু না ভেবে হাটতে শুরু করলাম,, অনেকটা পথ যাওয়ার পর একটা গাড়ি প্রায় আমার একসিডেন্ট করতে করতে থেমে যায়।। প্রচন্ড ঝড় হচ্ছে।। গাড়ির লাইট ভেদ করে একটা চেনা মুখ।। আবির মাতাল হয়ে গাড়ি থেকে নেমে ,,,
-আর ইউ ক্রেজি ,,,
-মদ খেয়েছেন,,,
-তাতে তোমার কি,,, এত রাতে কোথায় যাচ্ছ তুমি??
-আমি নীলয়কে,,,,
-নীলয় নীলয়,,, কে হয় তোমার ওঁ হুমম,, নিউ কাস্টমার তাই না ,, (আমার হাটটা শক্ত করে চেঁপে ধরে)
-একদম চুপ নীলয়কে নিয়ে আর একটা বাজে কথা বলবেন না,,, আমার হাত ছাড়ুন,,,
-কেন ছাড়বো নীলয়কে পেয়ে আমাকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছ,,, ওঁ কি আমার থেকে বেশি আদর করে বল,,,
-উউফফফ আপনি এত নোংরা কেন,,, কেন আমার সাথেই আপনাকে এসব বলতে হবে,,,
-প্রমিস ওঁর থেকে বেশি টাকা পাবা ওকে,,
আবিরকে থাপ্পড় মেরে,,,
-আপনি একটা অমানুষ,,, ছাড়েন আমাকে ছাড়েন,,
আবির রেগে আমার ডান গালে কষে থাপ্পড় দিয়ে বলতে থাকে,,,
-হাউ ডের ইউ,,, দুটাকার মেয়ে হয়ে আমাকে শোনাচ্ছিস,,,
তার থাপ্পড়ের জোরে আমি মাটিতে ছিটকে পড়ি,,,হঠাৎ ফোনে কল,,,আমি ডুকরে কেদে উঠে,,,
-হ্যালো ডক্টর,,
-Mrs. নীলয় আপনার আল্ট্রাসাউন্ড রিপোর্ট গুলো কাল এসে নিয়ে যাবেন,,আর হ্যা বেবীর প্রতি খেয়ার রাখবেন,,,
-জি,,,ধন্যবাদ ,,
কথা শেষ হতেই আবির আমাকে টেনে উঠিয়ে মুখটা চেপে ধরে বলতে থাকেন,,,
-বেবী মানে,,, কার বেবী?? নীলয় তাহলে খুব ভালো রেখেছে,, আমার সন্তান অপারেশন করে প্রিতমের সাথে,,,
-আমি আর নিতে পারছি না প্লিজ চুপ করেন,,,
-তুমি করলে কিছু না আর আমি বলবেই দোষ,,, আমি তো চাইনি তুমি আমাকে ছেড়ে যাও আমি তো চাইনি তোমার বাবা মারা যান ,,,ভেবেছিলাম আমি তোমার জীবনটা নষ্ট করে দিয়েছি ভেবেছিলাম আমার কারনেই তোমার বাবা আজ তোমার কাছে নেই কিন্তু কে জানতো এসবকিছুই যে তোমার নষ্টামির ফল,,,, মায়া হয়ে গিয়েছিল নীলা,,, আম্মু ঠিকই বলে তোরা কখনো ভালো হতেই পারিস না,,,তুই ঠিক তোর বাবার মতই স্বার্থপর,,,
-আপনার নাটক আর সহ্য হচ্ছে না,, প্লিজ যেতে দিন,,
আবির আমার হাতটা ধরে একটানে উনার বুকে জড়িয়ে পকেট থেকে একটা কাগজ বের করে,,,
-তোমার বাবার নামে এতিমখানা করার সিধান্ত নিয়েছি আগামীকাল থেকে কাজ শুরু হবে ,,,,জানি ক্ষমা পাবো না কিন্তু তবুও বলব আই এম সরি,,সবকিছুর জন্য,, অন্য কারো পাশে তোমাকে মেনে নিতে পারিনা তারপর তুমি যখন আমার দেয়া শাড়ি পড়ে নীলয়ের সাথে ঘুরতে গেলে খুব খারাপ লাগছিল,,,,,নিলা i am sorry আমাকে ক্ষমা করো প্লিজ ,,
কথাগুলো বলে আস্তে আস্তে আবির আমার খুব কাছে চলে আসছিলেন,,,,
-ভালোবাসি নীলা,,নীলয়ের সাথে যেও না,,
এমন সময় নীলয় এসে আবিরকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দেয়,,
-ছাড় নীলাকে,,,
-আপনি এখানে??
-নিপা আমাকে কল দিয়ে জানিয়েছে তুমি নাকি বাড়ি থেকে চলে এসেছ তাই ,,
আবির কোনো রিয়েক্ট না করে আমাকে বলতে লাগে,
-ভালো থেকু,,নীলয়ের বেবীর ক্যার নিও,,
নীলয় আবিরকে মারতে থাকলে একপর্যায়ে আবির রক্তাক্ত হয়ে যায়,,, নীলয়কে খুব রিকুয়েস্ট করছি উনাকে ছেড়ে দিতে কিন্তু নীলয় কথাই শুনছেন না,,,,
-আবির মাতাল হয়ে আছেন,, উনি আমার কোনো ক্ষতি করেননি প্লিজ আর মারবেন না ,,,
নীলয় রেগে আমাকে গাড়িতে উঠিয়ে বলতে লাগলেন,,,
-আবিরটাকে মেরে ফেলব,,,, নীলা কোনোদিন তোমাকে একা ছেড়ে দিব না ভালোবাসি তোমাকে,,, দাদীমা বাবাই তোমাকে দেখলে অনেক খুশি হবে,,,
উনি আমার ফোনটা জানালা দিয়ে ফেলে,,,
-আজ থেকে তোমার নতুন জীবন শুরু ওকে ,,চিন্তা করো না নতুন কিনে দিব,,,,,(মুচকি হেসে)
আমি মুখ চেপে কাঁন্না করছি।।বুঝতে পারছিলাম না কি হচ্ছিল আমার সাথে,,।।
অনেকটা দূর ঘন্টাখানেক পর একটা বিশাল বাড়ি।। অবাক হচ্ছি এত বড় একটা বাড়িতে মাত্র দুটি লাইট।। সবকিছু প্রায় অন্ধকার।। দেখতে ভূতুরে।। নীলয় এখানে থাকে ভাবতেও ভয় লাগছে।।
-আপনার পরিবার কোথায়,,,
-কিসের পরিবার,,,,
-মানে
নীলয় সোফায় বসে ড্রিঙ্ক
করতে করতে ফোনে কথা বলতে থাকেন,,
-হুমম এনেছি সাথেই আছে,,, না সপ্তাহখানেক অপেক্ষা করতে হবে,,, প্রেগন্যান্ট অপারেশন করতে হবে তারপর ডেলিভারী,,,
আমি হা করে তার কথাগুলো শুনছিলাম।। কে উনি??
চলবে,,,,,,
#নসীব
#পার্ট_১২
#আরবি_আরভী
আমি হা করে তার কথাগুলো শুনছিলাম।। কে উনি??
নীলয়ের কথা বলা শেষ হলে আমি চোখের পানি ফেলে তাকে জিজ্ঞাসা করে বলি,,,
-এসব কি নীলয়,,,আপনি এভাবে কাকে কি বলছেন,,,,
নীলয় আমাকে শক্ত করে চেপে ধরে,,
-হা হা হা এখনো বুঝতে পারোনি,,,,
-না, আমার সব গুলিয়ে যাচ্ছে দাদীমা আপনার পরিবার ওঁরা সবাই কোথায়,,,,,
-এখানে কেউ নেই তুমি এখন আমার কারাগারে বন্দী মিস.নীলা।।কথামত চললে কোনো ক্ষতি করব না আর যদি বারাবারি করেছ তাহলে ,,,,
আমার হাত পা কাপছেঁ।। তার চোখের ভেতরের এক হিংস্র থাবা আর আচরণ বলে দিচ্ছে আমার সব প্রশ্নের উত্তর।। আমি তাকে ধাক্কা দিয়ে দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলতে লাগলাম।। পেছন থেকে নীলয় আমাকে সরিয়ে গালে থাপ্পড় দিয়ে বাদা দিতে থাকেন।। আমি টেবিলের উপর ছিটকে পড়ি।। নাক দিয়ে রক্ত ঝড়ছে ।। একপর্যায়ে তার সাথে হাতাহাতি শুরু করলে নীলয় আমার হাতে একটা ইঞ্জেকশন পুশ করেন আর আমি সাথেসাথে জ্ঞান হয়ে ফেলি।।
আস্তে আস্তে চোখগুলো খোলা মাত্রই সামনে ঝাপ্সা কিছু দেখতে পেলাম।। জানালার ফোটো ভেদ করে আলো এসে চোখে পরছে।। দিনের আগমন বুঝতে পারলাম।। মাথাটা ঝিম ধরে আছে।। কোনোভাবে উঠে দাঁড়িয়ে কালকের কথাগুলো চিন্তা করতে লাগলাম।। খুব কান্না পাচ্ছে।। ভয়ংকর পরিবেশে সাহায্যের জন্য আর্তনাদ করছি আর এখান থেকে বেরিয়ে যাওয়া পথ খুজছি।। কিন্তু না কেউ আমার কথায় সাড়া দিল না।।
কেটে গেলো ২ টি দিন নীলয় সন্ধ্যায় এসে আমাকে খুব জোড়াজুড়ি করে একটা করে ইঞ্জেকশন দিয়ে যান।।।। দুপুর পেরিয়ে বিকেল।। খুব খিদে পেয়েছে।। ২ দিন কিছুই খাইনি।। টেবিলে থাকা পঁচা রুটিটা কামড়ে খেতে লাগলাম।। আমার বেবীর জন্য অন্তত আমাকে বেচে থাকতে হবে।।
শুয়ে আছি।। ভাবলাম ঘরটির তল্লাশি নিলে কেমন হয়।। যেই ভাবনা সেই কাজ।। প্রত্যেকটা রুম খুব ভালো করে চেক করতে লাগলাম।। সিড়ি বেয়ে সবচেয়ে বড় রুমটায় ঢুকে আমি চিৎকার করে উঠলাম।। রুমটার সব জায়গায় রক্ত মেখে আছে।।এখানে কোনো মেয়ে থাকতো হয়তো কিন্তু ঝুলন্ত ছবিটার দিকে তাকিয়ে আমার ধারনা বদলে যায়।। কারো বিয়ের পিক মনে হচ্ছে।। আমি মুখ চেপে কান্না করতে করতে ভয়ে আলতো পায়ে পিকটার কাছে গিয়ে অবাক হয়ে যাই।।। নীলয় আর একটা মেয়ের ওয়েডিং পিক।।
রুমটার সব ফার্নিচার খালি ছিল তাই চলেই যাচ্ছিলাম হঠাৎ আমার ড্রেসিং টেবিলটার দিকে নজর যায়।।
টেবিলটার উপরে একটা রক্ত মাখা খবরের কাগজ রাখা।। পিকচারের সেম মেয়েটা সাংবাদিকের রুপে খবরের কাগজে।। আমি নিউটা বেশ মন দিয়ে পড়তে থাকি।।। রিপোর্টার ওয়ালিফা ।। তার আর্টিকেলটা ছিল নারীপাচার ও শিশু পাচার প্রতিবাদে।।
আমার হাত থেকে খবরের কাগজটা পরে যায়।। বুঝতে আর বাকি থাকে না ওয়ালিফা আসলে কে আর তার সাথে কি ঘটেছে।। চোখ বেয়ে পানি পরছে আমার।।
এসব খুজতে খুজতে কখন যে সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছে টেরও পাইনি।। নীলয় এসে আমাকে না পেয়ে খুব জোরে জোরে ডাকছেন,,,,,
-নীলা কোথায় গিয়েছিস,,,,লুকিয়ে থেকে কোনো লাভ নেই,, দেখ আমাকে রাগাবি না,,,
আমি খবরের কাগজটা হাতে নিয়ে কান্না করতে করতে বলতে লাগলাম,,,,
-ওয়ালিফাকে তুই মেরেছিস না,,,, বিয়ে করেছিলি না ওঁকে আরে তোর বউ ছিল ওঁ,, কেন মারলি বল জানোয়ার বল,,,,
-কি করব আমাকে ফাঁসাতে চেয়েছিল,,, কতবার বললাম এসব থেকে দূরে থাকো কিন্তু না আমার বিরুদ্ধে কথা বলবেই শালী,,, তাই,,,
-তাই মেরে দিয়েছিস,,
-বেশি কথা বললে তোকেও শেষ করে দিব,,
কথাটা শোনা মাত্রই আমি দৌদৌড়ে সেখান থেকে পালাতে চাইলে নীলয় কাঠ দিয়ে আমার মাথায় আঘাত করে।। আমি মাঠিতে লুটিয়ে পড়ি তারপর সে আমাকে ইঞ্জেকশন দিয়ে ফোনে বলতে থাকেন,,,
-এখান থেকে সরিয়ে নিতে হবে ,,, ওয়ালিফার ব্যাপারটাও জেনে গেছে,,,,,ইয়ার তাড়াতাড়ি ম্যানেজ কর প্লিজ আমার আর ভালো লাগছে না ,,,
চোখ দুটো খুলে নিজেকে হসপিটালে আবিস্কার করলাম,।।।মাথায় ব্যান্ডেজ।।গায়ে পেশেন্টেদের নীল পোশাক।।
আমি উঠে বসে চারদিকটা ভালো করে দেখতে লাগলাম ।।জানি পালাতে পারবো না নীলয়ের লোক আমাকে চোখে চোখে রাখছে।। খুব চেনা চেনা লাগছে হসপিটালটা।। তারপর মনে পরলো।। এই হসপিটালেই তো নীলয়ের দাদীমা এডমিটেড ছিলেন।। ১০১ নং কেভিনে।। দাদীমা নিশ্চয় আমাকে সাহায্য করতে পারবেন।।
সেই আশায় জলদি করে উঠে।। ১০১ নং কেভিন খুজতে লাগলাম।।১০১ নং কেভিন পেয়েও গেলাম।। দরজা খুলতেই আমি স্তব্ধ হয়ে গেছি।।
রুমটা সম্পুর্ণ খালি।। আমি ঘেমে যাচ্ছি।। একজন নার্সকে জিজ্ঞাসা করলে সে বলে,,,,
-আপনি এখানে কেন।। এই রুমটায় আমরা কোনো পেশেন্ট রাখি না চলুন এখান থেকে,,
-কি বলছেন আমি গত শুক্রবারে এখানে একজন ICU এর পেশেন্টে সাথে দেখা করে গেলাম,, বৃদ্ধ মহিলা।।
-আপনার মাথা ঠিক আছে তো আমি কোনোদিন এই রুমে কোনো রোগীকে দেখিনি আর শুক্রবারে তো আমাদের ডিউটি নেই তাহলে আপনে কিভাবে,,,,দেখুন এখান থেকে চলুন এখানে না কেউ ছিল না কেউ আছে।।
আমার মাথাটা ঘুরে যাচ্ছে।। মেঝেতে বসে কান্না করতে লাগলাম।। অনেকক্ষন পর একটা ছোট্ট ছেলে আমার দিকে তাকিয়ে আছে,,,,
-তুমি কাদছ কেন,,,
আমি কোনো কথা বলছি না,,,,
-আমি তোমাকে আগেও দেখেছি তখন তো হ্যাপি ছিলে এখন কি হল,,,
আমি চোখের পানি মুছে তাকে জিজ্ঞাসা করলাম,,,
-কোথায় দেখেছ আমাকে,,,
-গত শুক্রবার এখানে,,,
-আচ্ছা বাবু বলতে পারো এখানে যে দাদীমা ছিলেন উনি কোথায় তুমি ওদের দেখেছ,,,
-হ্যা,, ওঁরা তো চলে গেছে,,,
-কখন???
-তুমি চলে যাওয়ার পর দাদীমা আরও অনেক মানুষ হাটতে হাটতে চলে গেছে,,,,, আর আসেনি,,,
আমি বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছি।। তাহলে সবকিছু মিথ্যে নাটক ছিল।। আসলে ওঁরা কেউ নীলয়ের পরিবারের সদস্য নয়।। এতটা বোকা আমি।। বিশ্বাস অর্জন করতে নীলয় এমটা করেছে আমার সাথে।।
চলবে,,,,,
#নসীব
#পার্ট_১৩
#আরবি_আরভী
আমি বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছি।। তাহলে সবকিছু মিথ্যে নাটক ছিল।। আসলে ওঁরা কেউ নীলয়ের পরিবারের সদস্য নয়।। এতটা বোকা আমি।। বিশ্বাস অর্জন করতে নীলয় এমটা করেছে আমার সাথে।।
যে করেই হোক না কেন আমাকে এখান থেকে পালাতে হবে।। কথাগুলো ভেবে আর এক সেকেন্ডও অপেক্ষা করলাম পালানোর পথ খুজতে লাগলাম।। হঠাৎ কিছু লোক আমার পথ আটকিয়ে দাড়ালো।। আমি ঘাবড়ে যাই।।পেছন থেকে নীলয় বলতে থাকেন,,,
-এখনো বুঝতে পারোনি তুমি আমার হাত থেকে বাঁচতে পারবে না,,
আমি করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে উনাকে ইশারায় মিনতি করলাম আমাকে যেতে দিতে কিন্তু নিষ্টুর জানোয়ারটা আমাকে জোর করে গাড়িতে তোলে নিল।।রাস্তায় ডক্টর কাকুর সাথে দেখা,,,,,জলদি করে আমার পাশে থাকা দুটো লোক আমার মুখ চেপে ধরে যেন চিৎকার চেচাঁমেচি করতে না পারি।।
-এই দাঁড়াও দাঁড়াও তুমি নীলয় না?
নীলয় আমতা আমতা করতে করতে হ্যা তাড়াতাড়ি বলুন কি বলবেন,,,,
-তোমার স্ত্রীর রিপোর্ট গুলো নিয়ে যেও ঠিক আছে,,
-ওগুলো আপনি রেখে দিন,,
-কিছু বললে বাবা
-না কিছু না,, নিয়ে যাব
-তা তোমার স্ত্রীর শরীর ভালো তো ঔষধগুলো খাচ্ছে তো ঠিকভাবে,,
-হ্যা একদম,, আজকে আসি তাহলে,,
-হ্যা যাও
মাঝ পথে গাড়িটা বন্ধ হয়ে যায়।। নীলয় বাহিরে এসে বিরক্তির ভাব নিয়ে গাড়ি ঠিক করতে লাগে।। আবির তার গাড়ি থেকে নীলয়কে দেখে কার ব্যাক করে।। চোখ থেকে চশমাটা খুলে গাড়ি থেকে নেমে নীলয়কে জিজ্ঞাসা করে বলেন,,,
-নীলয় এনি প্রব্লেম,, কোথায় যাচ্ছ
-হুমম গাড়িটার যে কি হল,,,
-কেমন আছ,, নীলা কেমন আছে,,
-খুব ভালো ইনফেক্ট আমার বউটা তো সেই কখন থেকে কল করেই যাচ্ছে আজ নাকি আমার পছন্দের খাবার রান্না করেছে,,,,,
-বউ?? তোমরা বিয়ে করেছ??
-হ্যা সরি দাওয়াত দিতে পারিনি আসলে হুট করে হয়ে গেল তো তাই,,,
-ওও ন্যাভার মাইন্ড,, ভালো থেকো,,
আমার মুখ বাধা থাকায় আমি খুব জোরে জোরে চিৎকার করছি কিন্তু আবির কিছুই শুনতে পাচ্ছেন না।।হাত দুটোও বেঁধে রেখেছে নীলয়।।
আবির চলেই যাচ্ছিলেন হঠাৎ আবার পিছ মোড়ে বলতে লাগলেন,,,
-আগামী মাসে তরীর সাথে আমার ওয়েডিং আশা করছি তুমি আর নীলা আসবে,,
-হ্যা হ্যা অবশ্যই যাব,,
-ওকে
কথাটা শোনার পর আমি আস্তে করে নেতিয়ে পড়লাম।। যাক আমি দূরে থাকায় কারো তো ভালো হল।।আমি আর নায়বা গেলাম উনার দুনিয়ায়।।
ভুতুড়ে বাড়িটায় এনে নীলয় আমাকে ইচ্ছেমত মারতে থাকে।। কাল সকালেই নাকি আমাকে এই দেশ থেকে ট্রান্সফার করে দিবেন।।
রাতের অন্ধকারে রক্তাক্ত শরীর নিয়ে শুয়ে আছি।।কাল সব শেষ হয়ে যাবে ওয়ালিফার চিঠিগুলো পড়তে খুব ইচ্ছে করছে তাই চলে গেলাম ঐ ঘরটায়।। হাতে নিলাম কিছু চিঠি আর মনোযোগ দিয়ে পড়তে লাগলাম।।রাত ১২ টা।। চিঠি পড়তে পড়তে আমি স্তব্ধ হয়ে গেলাম।। চিঠিতে ওয়ালিফা তার কলিগকে এই বাড়ির দ্বিতীয় দরজার কথা বলেছিল আর তাতে সব ডিরেকশনও দেয়া আছে।। বিশ্বাস করতে পাছি না আমি এখান থেকে মুক্ত হতে পারি।।
আর দেরী না করে সেই ডিরেকশন অনুযায়ী হাটতে লাগলাম।। অনেক ময়লা জমে আছে রাস্তাগুলোতে।। হাটতে হাটতে আমি ফাইনালি মুক্ত হলাম।। অন্ধকার চারদিক কিন্তু ভয় থেকে বেশি খুশি লাগলছিল।। দৌড়ে মেইন রোড থেকে একটা টেক্সি নিয়ে সোজা পুলিশ ইস্টেশন চলে যাই।।
নীলয়ের সব অপকর্মের বিষয়ে তাদের জানিয়ে দিলে উনারা সাথে সাথে একশন নিয়ে আমার কথামত নীলয়ের ছেলেপুলেগুলোকে ধরে আনেন এবং খুব তাড়াতাড়ি নীলয়কে এরেস্ট করবেন বলে জানান।।
সব ফরমালিটিস শেষ করতে গভীর রাত হয়ে যায়।। কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই ।। রাস্তায় হাটতে হাটতে হঠাৎ মাথাটা চকর কাটতে শুরু করলে রেস্তোরাঁর কাছে এক জাটকায় আমি বসে পড়ি।।কিছুক্ষন পর একটি ছেলে বাইক থেকে নেমে ফোনে কথা বলতে বলতে রেস্তোরাঁর ঢুকে যান।।ফিরে আমার সামনে এক প্যাকেট খাবার রেখে দিয়ে চলে যাচ্ছিলেন ।।আমি ছেলেটার দিকে তাকিয়ে আছি।। বেশ লম্বা কাধে কলেজ ব্যাক কালো টিশার্টটের উপর লাল শার্ট পড়ে আছেন।। চেহারা ভালো করে দেখতে পারছিনা।। সে আমার অবস্থা দেখে বলতে থাকে,,,
-আপনি ঠিক আছেন?
আমি কিছু বলতে পারছিনা ।।ছেলেটা আমাকে সাহায্য করবে বলে হাত বাড়াচ্ছে ইতস্তত করে আবার হাতটা সরিয়ে নিচ্ছে।। তারপর পথের একজন মহিলার সাহায্য নিয়ে আমার মুখে পানির ছিটকে দিতে থাকেন,,,।।কিছুটা স্বাভাবিক হলে উনি বলতে থাকেন,,,
-এখন তো কোনো ডক্টর পাবো না,,,,আমার বাড়ি কাছেই আমার বাবা ডক্টর আপনি আমার সাথে চলুন,,,
-পরোক্ষনেই আমার নীলয়ের কথা মনে পড়ে গেল আমি তাকে বাধা দিচ্ছি তখনই আবার অজ্ঞান হয়ে যাই,,
চোখগুলো খুলে ডক্টর কাকুকে দেখতে পাই।। ছেলেটা দরজায় দাড়িয়ে থেকে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।।
-,,,সিয়াম তোমাকে এখানে এনে খুব ভালো করেছে,,,এখন কেমন আছ,,
-হ্যা ভালো কাকু
আমি উঠে বসতে চাইলে পাশ থেকে একজন মহিলা এসে আমাকে থামিয়ে দেয়,,
-শুয়ে থাক মা,, তোমার বিশ্রামের প্রয়োজন,,
-আমি,,,
ডক্টর কাকু বলেন,,,,,
-সব কথা সকালে হবে তুমি এখন ঘুমাও,,,
-না মানে কাকু,,,
-ঘুমুতে বলেছি,,,
-না আমি,,
-কোনো কথা না,,
-আন্টি আমি কিছু খাব আমার খিদে পেয়েছে,,
মহিলা ডক্টর কাকুর দিকে ভেবাচেকা খেয়ে তাকিয়ে আছে।। পরিবেশটা খুব সুন্দর।। কোনো হৈচৈ নেই।।
চলবে,,,,,
(গল্পটা কেমন লাগছে কমেন্ট করে জানাবেন)
#নসীব
#পার্ট_১৪
#আরবি_আরভী
মহিলা ডক্টর কাকুর দিকে ভেবাচেকা খেয়ে তাকিয়ে আছে।। পরিবেশটা খুব সুন্দর।। কোনো হৈচৈ নেই।।
সকালে ডক্টর কাকুর কাছে নীলয়ের সব অপরাধের কথা খুলে বললাম।। কিভাবে আমি আবিরের বাড়িতে এসেছি নীলয়ের সাথে পরিচয় সবকিছু। বলতে গিয়ে অনেকবার থেমে গিয়েছি চোখের পানি মুছেছি।।
কাকু বললেন আবিরের মত ছেলেদের নাকি পুলিশে দেয়া উচিত।। পাশে থাকা ভদ্র মহিলা শাড়ির আচলে চোখ মুছে আমাকে সান্ত্বনা দিতে লাগলেন।। আর উনাদের বাড়িতে এসেছি বলে উনি খুব খুশি হয়েছেন।।
ডক্টর কাকু বললেন উনি নাকি আমার বাবার ক্লাসমেট ছিলেন।। বাবা নাকি খুব ভালো স্টুডেন্ট ছিলেন সামান্য বদমেজাজি কিন্তু পরীক্ষার হলে সবাইকে হেল্প করতেন।।কাকু বাবার মৃত্যুর কথা শুনে খুব দুঃখ প্রকাশ করেছেন।। উনি ভাবতেও পারেননি কোনোদিন আমার সাথে উনি দেখা করতে পারবেন ।। যেহেতু আমার যাওয়ার কোনো জায়গা নেই তাই উনারা সবাই চাচ্ছেন আমি যেন ওনাদের সাথে এক বাড়িতে থেকে যাই। আমি ইতস্তত করে বললাম,,,,
-তা কি করে হয়,, অযথা আমার জন্য আপনাদের কষ্ট হবে,, আমি চলে যাওয়াটাই ভালো,,
সিয়ামের মা,,
-তুমি তো আমার মেয়ে মীনার মতোই,,, আমাদের কোনো কষ্ট হবে না,, তাছাড়া এ সময় তোমার একটা পরিবারের দরকার,,,, তুমি না করো না,,
-কিন্তু,,,
কাকু আমাকে থামিয়ে বললেন,,,
-কোনো কিন্তু নয়,,,,এই দুনিয়াটা খুব কঠিন মা তুমি একা লড়াই করে পেরে উঠতে পারবে না,,, তোমারও নিশ্চিত ভবিষ্যতের অধিকার আছে তাই আমি ঠিক করেছি তুমি মীনার সাথে কলেজে যাবে ব্যাস,,
উনার এভাবে অনুরোধ করলেন আমি আর উনাদের বারন করতে পারলাম না।।
সিয়াম মীনার কাছে এসে ফিসফিস করে বলতে থাকেন,,,
-মিনি প্যাকেট তোর আবার হিংসা হচ্ছে নাতো দেখ দেখ তোর রাজত্ব কিন্তু বাবা-মা অন্যকারো হাতে তোলে দিচ্ছে।।
মীনা সিয়ামের কান টেনে বলে,,
-তোকে আমার কথা ভাবতে হবে না,,, তোর রাজত্ব গেল বুঝেছিস,, আমি তো একটা বেস্ট ফ্রেন্ড পেয়েছি,,তাই না আপু,, (দৌড়ে এসে আমাকে জড়িয়ে)
এখন আমিও এ বাড়ির একজন মেম্বার।।মাথার উপর একটা ছাদ খুজে পেয়েছি বটে।। মাঝে মাঝে বাবার কবর যিয়ারত করে আসি।। সিয়াম আমাকে নিয়ে যায়।। ছেলেটা সম্পূর্ণ আলাদা।। একদম অন্যরকম।। খুব স্টাইলিশ কিন্তু সময়মত নামাজ আদায় করেন।। মানুষের বিপদে এগিয়ে আসেন।। মেয়েদের থেকে সবসময় যথারীতি দূরত্ব বজায় রাখেন।।
দিন যেতে লাগল আমরা অন্য শহরে চলে যাই।। সেখানে ডক্টর কাকুর নতুন চেম্বার ।। পরিবারটা মধ্যবিত্ত হলেও খুব সুখী।। আমি হাজার খুশি ওদের সাথে আমার দেখা হয়েছে বলে।।
চা হাতে ছাদে দাড়িয়ে আছি সিয়াম কানের কাছে এসে এক বিকট শব্দ করলে আমি ভয়ে ছাদ থেকে প্রায় পড়েই যাচ্ছিলাম কিন্তু উনি আমার হাতটা ধরে ফেলেন,,,,
– ভয় পাইয়ে দিয়েছেন একদম,,
-আপনি এমন করলেন কেন,,
-সরি সরি,,
-হুমম
আমার দিকে কাঠ গোলাপ এগিয়ে দিয়ে,,,
-আপনার জন্য,,
-Wow,,,আপনি কিভাবে জানলেন আমার কাঠ গোলাপ পছন্দ,,
-আমার ভালো লাগে তাই ভাবলাম আপনারও,,,
-আপনার পছন্দ তাই আমারও পছন্দ হবে,, এমনটা কেন ভাবলেন,,,??
সিয়াম আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে চলে গেল,, পেছন থেকে মীনা এসে আমাকে আলতো ধাক্কা দিয়ে বলে,,,
-ভাইয়া কিন্তু আজ পর্যন্ত আমার জন্য গাছের পাতাও আনে নাই,,,
-তাহলে তুমি রেখে দাও,,
-না ভাবী তুমিই রাখ,,
-কি??
-অপ্স সরি,, হা হা হা
খুব হ্যাপি ছিলাম।। কিন্তু এ সুখ আমার কপালে বেশি দিন সইল না।। একদিন আন্টি বাজার থেকে এসে বিরক্তির লুক নিয়ে সোফায় বসে বলতে লাগলেন,,,,
-সব আত্মীয় স্বজনদের মুখে শুধু একটাই কথা আমার বাড়িতে মেয়েটি কে? কি তার পরিচয়? কেউ কেউ তো বলছে,,,,,,, আমার ছেলেকে নিয়ে বাজে কথা বলার সাহস পায় কোথায় ,,, উফফ কিছুই ভাবতে পারছি না,,,
মীনার সাথে বসে লুডু খেলছিলাম কিন্তু আন্টির চেঁচামেচিয়ে উঠে আসি,,,
-কি হয়েছে আন্টি,,
-নাহ নাহ কিছু নাতো,,,, দেখ তোর পছন্দের মাছ এনেছি,,, চল আমাকে সাহায্য করবি অনেক কাজ,,,
-হুমম
রাতে শুয়ে আছি।। আন্টির কথাগুলো ভাবছি।।সেই আবারও আমার জন্য একটা সুখী সংসারে আগুন লাগছে।।উনারা ভালো মানুষ তাই আমাকে কিছু বলছেন না।। আচ্ছা আমি এত অপয়া কেন।।এখানে আর থাকতে পারব না।। আমি চলে যাব।। এতেই সমার ভালো।।
সকালে এ বিষয়ে কাকু জানালে উনি খুব রেগে যান,,
-অসম্ভব,,, তুই আমার মেয়ে এই ঘরের একজন,, তোর কাছ থেকে এটা আশা করিনি মা,,
-কিন্তু কাকু আমি এখানে থাকলে আপনারা অনেক প্রব্লেমে পড়ে যাবেন অনেকে অনেক কথা শুনাবে আমি এটা সহ্য করতে পারব না তাই,,,
-মানুষের কাজই কথা বলা,,,, তাই বলে কি আমরা থেমে যাব,,,
-না কাকু কিন্তু,,,
আন্টি এসে বলে উঠেন,,,,
-একটা উপায় আছে মানুষের মুখ বন্ধ রাখার,,,
-কি উপায়
-যদি নীলাকে আমি আমার পুত্র বধূর স্বীকৃতি দেই,,,, নীলার মধ্যে সেইসব গুণ আমি পেয়েছি যা আমার বৌমার হবে বলে আশা করেছিলাম।। নীলা তুই আর না করিস না,,,
-তা বেশ তো আজকেই হয়ে যাক তাহলে কি বলিস নীলা মা,,
পাশ থেকে মীনা বলতে লাগল,,
-কিন্তু বাবা ভাইয়া কি মেনে নিবে,,,না মানে নীলার আপুর প্রেগন্যান্সি,,,,
আন্টি নীলাকে থামিয়ে দিয়ে,,,
-তুই চুপ কর আমি সিয়ামের চোখে নীলার জন্য গভীর অনুভূতি দেখেছি,, কয়েক মাস পরে নাতি/ নাত্নীর মুখ দেখতে পারব এর থেকে খুশির আর কিছু হয় নাকি,,,কি বল তুমি,,,
-হ্যা গো,,, তাই ভালো হবে,,
সবকিছুই সপ্নের মত লাগছে।। আমি নিচের দুকে তাকিয়ে চোখের পানি ফেলতে লাগলে আন্টি এসে আমার সামনে হাত জোড় করে করুন কন্ঠে বলতে লাগলেন,,
-দেখ সবাই কত খুশি প্লিজ রাজি হয়ে যা,,,
চলবে,,,,,,,
#নসীব
#পার্ট_১৫ #শেষ_পার্ট
#আরবি_আরভী
-দেখ সবাই কত খুশি প্লিজ রাজি হয়ে যা,,,
মনের মধ্যে ভয় কাজ করতে লাগল।।সবাই আবার আমাকে বোকা বানাচ্ছেন নাতো।।নীলয়ের পর কাউকে বিশ্বাস করতে খুব কষ্ট হয় আমার।। সিয়াম নিসন্দেহে ভালো ছেলে তাই বলে,,,
-অন্তত বাচ্ছাটার কথা ভেবে হ্যা বলে দে ,,,,এতেই সবার ভালো হবে দেখিস,,
চিন্তায় পড়ে গেছি।। জানি না কি হবে কিন্তু এই মানুষগুলোকে আমি কিছুতেই কষ্ট দিতে পারব না।।
৮ বছর পেরিয়ে গেল।। সাথে জীবন ধারনটাও অনেকটা বদলে গেছে ।আমার মেয়েই আমার সব।।টুশিকে ছাড়া আমরা কিছুই ভাবতে পারি না ওঁ আমাদের জীবন ।। বলে রাখা ভালো,,,, আমার ননদিনী মীনা তার বরের সাথে অস্ট্রেলিয়াতে সেটেল।। আমার শশুড় বাবা আর শাশুড়ি মায়ের মৃত্যুর পর সিয়াম আর আমি নতুন শহরে চলে আসি।।সেখানেই শুরু হয় আমার আর সিয়ামের ছোট সংসার।। বর্তমানে সিয়াম একজন সাকসেসফুল বিজনেসম্যান।। টাকা পয়সা ভালোবাসার কোনো কিছুর কমতি নেই আমাদের।।
সিয়ামের রাজকুমারী টুশি।।বয়স ৮।।অফিস থেকে ফেরার সময় সিয়ামের টুশির জন্য কিছু না কিছু আনতেই হয় তা না হলে সিয়ামকে কানে ধরে বাহিরে দাড়িয়ে রাখে সে।। খুব হাসি পায় বাবা- মেয়ের কান্ড দেখে।।ভালোবাসা কি তা উনার সাথে দেখা না হলে বুঝতেই পারতাম না।। প্রতি রাতে আমার দিকে তাকিয়ে “ভালোবাসি” না বললে নাকি উনার ঘুম হয় না।। ছুটির দিনে তিনজন একসাথে ঘুরতে যাওয়া,খেলাধুলা করা সবকিছু মিলে খুব সুখে আছি আমরা।।
এমনই একদিন টুশিকে স্কুল থেকে নিয়ে আসছি।। টুশি তার বাপ্পীর জন্য একটা কার্ড বানিয়েছে আজ নাকি বাবা দিবস তাই সে এটা দিয়ে তার বাপ্পীকে উইস করবে।। দুজন গাড়িতে উঠবো ঠিক সেই মুহূর্তে একজন লোক পেছন থেকে আমার নাম ধরে ডেকে উঠে,,,,
-নীলা,,,
আমি পেছনের দিকে তাকিয়ে কিঞ্চিৎ ভয় পেলাম।। লম্বা চুল গাঢ় পর্যন্ত।। দাড়ির বাড়ে চেহারা নির্ণয় করা যাচ্ছে না।। শরীর চাদর দিয়ে ঢাকা।। সে ইশারায় কাছে যেতে বলে,,আমি আস্তে করে বলে উঠলাম,,,
– কে? সরি চিনতে পারছি না,,
সে আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে,, ভাবলাম ভিখারী হয়তো,,
-সাহায্য প্রয়োজন?? কিছু খাবেন,,??
-আমার সন্তান কোথায়,, তুমি অপারেশন করনি তাই না,,
আমার উপর যেন আকাশটা ভেঙে পরলো বুকের ভেতরটা মুচড়ে উঠলো।।চোখদুটো খুব চেনা।। আমি কাঁপাকাঁপা কন্ঠে বললাম,,,
-আ,,আ,,আবির,,
আবির আমার দিকে তাকিয়ে রীতিমত কাদছে।। আমি তাড়াতাড়ি করে টুশিকে নিয়ে দৌড়ে চলে এলাম।। পেছন থেকে আবির চেঁচিয়ে বারেবারে একটা কথায় বলল,,
-আমার সাথে শুধু একবার কথা বল,,প্লিজ শুধু একবার,,
গাড়িতে বসে টুশি আমাকে জিজ্ঞাসা করতে লাগল,,
-পাগলটা কে মামনি??
-কেউ না বাবা,, (মাথায় হাত বুলিয়ে)
বাসায় এসে কাঁন্না করতে লাগলাম।। আমার সাজানো সংসার বুঝি এবার ধ্বংস হয়ে যাবে খুব ভয় লাগছিল।।আবির কি আমার মেয়েকে আমার কাছ থেকে কেড়ে নিবে?? উনি সব করতে পারেন? আমি এখন কি করি।।
রাতে অন্যমনস্ক হয়ে থাকলে সিয়াম আমাকে জিজ্ঞাসা করতে থাকেন আমি কিছু না বলে চুপ করে থাকি ।।
কয়েকদিন পর আবির তখন অফিসে শুয়ে আছি হঠাৎ ছকিনা এসে বলে আমার সাথে নাকি একজন দেখা করতে এসেছে,,, নিচে এসে দেখি আবির।।মেজাজটা খারাপ হয়ে গেল।। সোফায় বসে আছেন।। আমাকে দেখে উঠে দাড়ালেন আমি দৌড়ে গিয়ে উনাকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য দরজাটা দেখিয়ে দিলাম,,,,
-নীলা আমার সাথে একবার কথা বল প্লিজ আমি একবার আমার সন্তানকে দেখব,, আর কিচ্ছু না,,
– আমি আপনাকে চিনি না বেরিয়ে যান,, আমাকে পুলিশ ডাকতে বাধ্য করবেন না,,,
গেইটের দারোয়ান এসে আবিরকে বের করে দিল।।আমি স্তব্ধ হয়ে পরেছি।।এত বছর পরে কেন ফিরেছেন উনি কি চান আমার কাছে।।
বাহিরে বের হতে পারছি না উনার জন্য যেখানেই দেখা হয় উনার একটি কথা শোনার অনুরোধ রয়েই যায়।।রাতে ঘুমিয়ে আছি হঠাৎ ফোনে কল আসে।। আমি ঘুম ঘুম কন্ঠে,
-হ্যালো,,
-নীলা,,
-প্লিজ দয়া করেন আমাকে আর কল দিবেন না,, আমি আপনাকে চিনি না,,
-নীলা তুমি কি ভয় পাচ্ছ আমি যদি তোমার সন্তানকে কেড়ে নেই,,, বিশ্বাস কর আমি এমন কিছুই করবনা শুধু নয়ন ভরে একবার ওঁকে দেখব প্লিজ আগামীকাল দেখা কর জাস্ট একবার প্লিজ প্লিজ আমি কোনো ক্ষতি করব না তোমাদের প্লিজ একবার তারপর আর কখনো তোমাকে বিরক্ত করব না প্রমিস,,
-ঠিক আছে আগামীকা দেখা করব কিন্তু এটাই লাস্ট বলে দিলাম,,,
-অনেক ধন্যবাদ তোমাকে অনেক,,
-টুট টুট,,
টুশিকে স্কুল থেকে নিয়ে এসে আবিরের সাথে দেখা করতে গেলাম,,,উনি আমাদের জন্য অপেক্ষা করছেন।।টুশি আইস্ক্রিম খেতে খেতে চেয়ারে গিয়ে বসে পড়লো।। হাতে মেনু কার্ড নিয়ে অর্ডার করে আবিরের দিকে তাকিয়ে দেখি আবির নয়ন ভরা জল নিয়ে টুশির দিকে তাকিয়ে আছেন,,
-চোখ দুটো আম্মুর মত, ঠোঁটের নিচের তিলটা তোমার আর ঠোঁট দুটো,,,,,
আমি বিরক্তির ভাব নিয়ে চোখ পাকিয়ে বলতে লাগলাম,,,
-ঠোঁট দুটো আপনার মত তো ওঁ আপনার মেয়ে এটাই বলতে চাচ্ছেন,,আমার কাছ থেকে দূরে নিয়ে যাবেন ওকে,,,
আবির আমার কোনো কথাই শুনছেন না টুশির কাছে গিয়ে ওঁর হাতে অনেকগুলো চকলেট দিয়ে পাগলের মত চুমু খেতে থাকেন,,,
– শুধু জন্ম দিলেই পিতা হয় না আবির,, আপনি যে দায়িত্ব কর্তব্য গুলো এড়িয়ে গিয়েছিলেন সিয়াম তা পূর্ণ করেছেন,,, ভেবেছেন সবকিছু ভুলে গেছি।। না।। আপনি আমার বাবার খুনী।।তাই আমাদের আর বিরক্ত না করে আপনার পরিবার নিয়ে আপনি সুখে থাকেন আমাদেরো ছেড়ে দিন এটাই চাই,,,
– আমার তো কেউ নেই,,হয়তো কদিন পরে আমিও থাকব না
-কেন তরী আপু খালামনি??
-বিয়ের দিন রাতে তরী অন্য কারো সাথে পালিয়ে যায়,,,,খুব ভালোবাসতাম তাকে,, এই ঘটনার পর থেকে কোনো মেয়েকে আর বিশ্বাস করে উঠতে পারিনি,,,
-খালামনি,,(আগ্রহ নিয়ে)
-যখন তুমি একদম হারিয়ে গেলে তখন নিপা আম্মুকে তোমার প্রেগন্যান্সির ব্যাপারে জানায়,, তোমাকে করা জুলুমগুলোর কথা মনে করে হঠাৎ আম্মুর হার্ট এটাক হয় তারপর পরকালে চলে যান,, সবসময় বলতো তোমাকে দেখতে চায় তোমার কাছে ক্ষমা চাইবে বলে,, কিন্তু তোমাকে খুজে পাইনি,,,
-আপনার এই অবস্থা ?আর এখানে কিভাবে এলেন??
-আম্মুর চলে যাওয়ার পর রোবট হয়ে গিয়েছিলাম দিন-রাত কাজে ব্যাস্ত থাকতাম কিন্তু আমার পিঠে চুরি দিয়ে আমার সেক্রেটারি আমাকে ধোকা দিয়ে কোটি কোটি টাকা আত্নসাৎ করে ফেলে,,,হিসাব না পাওয়ায় অন্যান্য কম্পানি শেয়ারিং বন্ধ করে দেয়,, ফলে কম্পানি অচল হয়ে পড়ে,,, ব্যাংকের loan পরিশোধ করতে না পারায় একপর্যায়ে আমি সবকিছু হারিয়ে ফেলি,,,, তারপর ভীষণভাবে ডিপ্রেশনে চলে যাই,,, আর এখন তো,,সবকিছুই আমার কর্মের ফল।। আমি অন্য শহরে থাকি খুব কষ্ট করে তোমার ঠিকানাটা জোগাড় করেছি তোমার কাছে একটিবার ক্ষমা চাইব বলে।।জানি কখনো পারব না তবুও বলব আমাকে ক্ষমা কর,,তুমি ক্ষমা না করলে আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করবেন না,,, ক্ষমা কর,,(হাত জোর করে চোখের পানি ফেলে,,
আমি নিস্তব্ধ হয়ে গেছি।। মনের অজান্তেই চোখ বেয়ে পানি পড়ছে,,
-আর এখন তো কি,,?? বলেন
-আমার ভেতর এমন এক রোগ বাসা বেঁধেছে যা থেকে কখনোই মুক্তি পাবো না,, ডক্টর মিথ্যা আশা দিচ্ছে আমি তো জানি আমার আর বেশি দিন নেই,,,
তার কথাগুলো শুনে আমি যেন পাথর হয়ে গেছি।। ওয়েটার বিল দিয়ে গেলে আবির এক নজর মানিব্যাগটার দিকে তাকিয়ে আমার কাছ থেকে চোখ লুকাতে শুরু করল,,, আমি কিছু না দেখার ভান করে বিলটা প্যায় করে দেই।। তারপর উনাকে ১ লাখ টাকার চেক দিলাম।। উনি কিছুতেই নিতে চাচ্ছেন না খুব জোর করেই দিলাম।। উনি মৃদু হেসে চলে যাচ্ছেন,,,মনের মধ্যে অনেকগুলো কথা নাড়া দিতে লাগল।।এই সেই ব্যক্তি যে একসময় আমার পুরো দুনিয়াটা উলোটপালোট করে দিয়েছিলেন।। যার জন্য আমার বাবাকে হারিয়েছি।।সমাজ আমাকে অন্য নামে ডেকেছে।। মানুষ আমার দিকে বদনজরে তাকিয়েছে।।উনি চাইলেই আমাকে মেনে নিতে পারতেন কিন্তু উনি তা করেননি।। কিন্তু সৃষ্টিকর্তা একজন আছেন তিনি সব দেখেন।। কাউকে কষ্ট দিয়ে কেউ কোনোদিন সুখী হতে পারে না,, আল্লাহ বিচার করেছেন,, আমিও বলব আপনাকে ক্ষমা করেছি আবির আপনি মুক্ত আপনি মুক্ত আবির,,,
হঠাৎ সিয়ামের কল,,,
-কি করছ?
-কিছু না,, (চোখের পানি মুছে)
-ভালোবাসি,,
– অনেক বেশি ভালোবাসি
(উপরের দিকে থুথু ছুড়লে সেই থুথু নিজের উপরে এসে পরে।। সময় পরিবর্তনশীল।।জীবনে চলার পথে আবিরের মত একজন আসে যে জীবনটা একদম ধ্বংস করে দেয় সেই সুযোগে মুখোশ পড়া কয়েকটা মানুষ পাশে দাঁড়িয়ে প্রকাশ করে যে ওঁরা আসলে আমাদের বন্ধু যেমনটা করেছে নীলয় আসলে তা নয় ওরাও হতে পারে আরও বেশি ভয়ংকর তাই বলে যে ভালো মানুষ নেই তা না আমরা খারাপের সাথে পরিচয়ের ভীড়ে কিছু ভালো মানুষকেও বিশ্বাস করতে ভয় পাই যেমন সিয়াম)
♪♪♪♪♪♪সমাপ্ত ♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪
(আমি #Arobi_ArVy #নসীব গল্পটার লেখিকা,, চেষ্টা করেছি যেন গল্পটা মনের মাধুর্যতা দিয়ে লিখে উপহার দিতে পারি,, গল্পটার মধ্যে আমি সবাইকে একটা মেসেজ দিতে চেয়েছি,,,,,, যারা গল্পটা নিয়মিত পড়েছেন তাদের জানাই অনেক অনেক ভালোবাসা,, আপনাদের ভালোবাসা ছাড়া আমি লিখার উৎসাহ পেতাম না,,,,,,,,,, সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন ,,,, ধন্যবাদ ☺)