#এক_বৃষ্টিস্নাত_সন্ধ্যা
৬৫(অন্তিম অংশ)
#WriterঃMousumi_Akter
মন চাইছে আজ বৃষ্টি নামুক,ভীষণ বৃষ্টি যে বৃষ্টিতে প্লাবিত হবো দুজনে।কিন্ত এই অবেলায় কি বৃষ্টি নামবে মেঘেরা কি আমার প্রার্থণা শুনবে।ওই মেঘ তোমরা আমার চাওয়া গুলো বুঝো না কেনো বিহানের মতো।বিহানের যদি বৃষ্টি হয়ে নামার ক্ষমতা থাকতো এক্ষুনি আমার মন পড়ে বৃষ্টি হয়ে নামতো।খুব মন চাইছে এই সন্ধ্যায় বৃষ্টি নামুক তার সাথে এক বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যা উপভোগ করি।
দরজায় কলিং বেল বাজতেই ছুটে গেলাম।দরজা খুললাম হাঁপাতে হাঁপাতে উনার ক্লন্ত মুখে আমাকে দেখে তৃপ্তির হাসি।বিন্দু বিন্দু ঘামে গায়ের শার্ট ভিজে গিয়েছে।আমি উয়ার ঘামে ভেজা শরীরে দুই হাতে জড়িয়ে ধরলাম।উনার এই ঘামে ভেজা শরীরের গন্ধ টা তে অভ্যস্ত আমি,ভীষন অভ্যস্ত,।উনি আমাকে তুলে বললেন দিয়া এভাবে ছুটে আসতে নিষেধ করেছি না।কোথায় পড়ে যাবে আমাদের বেবি আর তুমি দুজনের ই ক্ষতি হতে পারে।এইভাবে ছুটে আসে কেউ পাগলি।এই ঘামযুক্ত শরীরে প্রচুর জীবানু থাকে তুমি আর কখনো আমি বাইরে থেকে এলে এভাবে আমাকে জড়িয়ে ধরবে না।
-উনার শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে বললাম এগুলো আমার নেশা।আপনার কাছে ছুটে যাওয়ার মতো নেশা নেই।
-কিছু চাই নাকি পাগলি?মুখ টা এমন গম্ভীর গম্ভীর কেনো?
-জানেন আমার না খুব বৃষ্টি দেখতে মন চাইছে বাট হচ্ছেই না।আপনি একটু বলুন না মেঘ কে আমাদের ঘরে বৃষ্টি দিতে।
-তাই প্রকৃতির সাথে এত অভিমান।
-হ্যাঁ।
-আজ সন্ধ্যায় আমার বৃষ্টি চাই ই চাই।আপনার বুকে মাথা রেখে বৃষ্টি উপভোগ করতে চাই আজ।
-এই যে মেঘ মশাই রা আমার বৃষ্টিবিলাসি বউ এর আজ তোমাদের প্রয়োজন প্লিজ কাম।এই যে বলেছি বৃষ্টি আসবে।
-আপনি যখন বলেছেন নিশ্চয়ই আসবে বৃষ্টি।
-শ্যাম্পু করবে না চুলে আজ।
-আজ না আগামিকাল করবো।
-আজ ই করো সাওয়ার নিতে চলো আমি সুন্দর ভাবে শ্যাম্পু করিয়ে দিবো তোমায়।
-আপনার হাতে শ্যাম্পু করার ভীষণ অভ্যাস হয়ে গিয়েছে জানেন।আমি বড্ড অলস হয়ে গিয়েছি এখন।নিজে থেকে অনেক কিছুই করতে মন চাই না আমার।সব কিছু আপনার উপর ডিপেন্ডেন্ট হয়ে গিয়েছে।
-আমি যে তোমার অভ্যাসে পরিনত হতে পেরেছি এর চেয়ে বড় পাওয়া কি আর কিছুতে আছে দিয়া।
সাওয়ার এ উনার সাথে এই প্রথমবার না আমার এর আগে সহস্রদিন উনার সাথেই সাওয়ার নিয়েছি আমি।উনি শ্যাম্পুর ফ্যানা তুলে পুরা মাথা সাদা মেঘের ন্যায় করে ফেলছেন।মানুষ টা কত যত্ন সহকারে আমার মাথায় শ্যাম্পু করে দেন রেগুলার।উনার হাত ধরে বললাম আসুন না আজ আপনার মাথায় ও আমি শ্যাম্পু করিয়ে দেয়।উনি বাচ্চার ছেলের মতো মাথা টে এগিয়ে দিলেন।আমি উনার ছোট্ট চুলে আঙুল গুজে শ্যাম্পু করে দিলাম।গোসল শেষে আমার মাথা মুছিয়ে উনি নিজের হাতে গাড় লাল একটা শাড়ি পরিয়ে দিলেন।উনি খালি গায়ে আমার পেছনে দাঁড়িয়ে আছেন।পরনে সাদা টাওয়াল উনার।কেনো জানি ভীষণ লজ্জা লাগছে হঠাত।এত দিন বিয়ে হয়েছে অথচ আজ ও আমার লজ্জা আগের মতোই থেকে গিয়েছে।সহস্র বার উনাকে আলিঙ্গন করেও আমার লজ্জা সেই আগের মতোই থেকে গিয়েছে।উনার বুকের দিকে তাকিয়ে আছি আমি।সুঠাম দেহের অধিকারী বিহান ভাই।যাকে দেখে ভাল লাগার শেষ নেই।যার কেয়ার,শাষন,ভালবাসা কোনটায় কম নয়।একটা মানুষ এতটা দায়িত্বশীল কিভাবে হতে পারে।উনার বুকের আমার ডান হাতের পাঁচ আঙুল লাগিয়ে হাতের ছাপ লাগিয়ে দিলাম।ভীষণ লাজুক ভাবে চাহনি দিলাম।উনি আমার চিবুক ধরে উঁচু করে বললেন বার বার সহস্রবার এই নতুন লাজুকতার রুপ দেখেছি তোমার মাঝে।প্রতিদিন নতুন রুপে আমার কাছে ধরা দিয়েছো তুমি।
জানালায় ভীষণ হাওয়ায় দিচ্ছে সত্যি কি বৃষ্টি নামবে আজ।প্রকৃতি কি আমার চাওয়া পূরণ করবে।মাত্রই সন্ধ্যা নেমেছে বাইরে টুপটাপ বৃষ্টি শুরু হয়েছে।আমি দৌড়ে গিয়ে বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ালাম।বেলকনির গ্রিল দিয়ে হাত বাড়িয়ে বৃষ্টির ফোঁটা ধরছি।হাতের উপর টুপটাপ বৃষ্টি পড়ছে।বিহান ভাই আমার কোমর এক হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে আরেক হাত আমার হাতের নিচে রাখলেন।উনার হাতের উপর আমার হাত রয়েছে সেখানে পড়ছে বৃষ্টির টুপটাপ ফোঁটা।উনি কিছুটা পানি আমার চোখে মুখে ছিটিয়ে দিলেন আমার মুখ ঝাড়ি দিতেই ভেজা চুল উনার চোখ মুখ স্পর্শ করলো।
উনার দুই হাতে আমাকে ভীষণ আদরের সাথে জড়িয়ে ধরে বললেন,
-শ্যামাপাখি জানো আমি না বড্ড ছেলে মানুষ হয়ে গিয়েছি।আমি বাইরের সবার সাথে এক রকম আর তোমার কাছে এলে অন্যরকম হয়ে যায়। জীবনে কতশত স্মৃতি আমার তোমাকে ঘিরে।আমার জীবনে কোনো মেয়ের সাথে একটা ফান ও আমি করিনি।জানো কেনো করিনি আমার মনে হতো আমার সব কিছুর প্রতি আমার শ্যামাপাখির অধিকার।অহেতুক একটা মেয়েকে ইমপ্রেস করতে দুই চারটা কথা বলে লাভ কি।আদেও কি কোনো আছে।যাকে ভালবাসতে পারবো না তাকে ইমপ্রেস করে লাভ কি।দুই চার টা বানিয়ে বানিয়ে কথা বলে হয়তো মেয়েদের ইমপ্রেস করা যায়।মেয়েদের কাছে রোমিও হওয়া যায়, বন্ধুদের কাছে প্রাউড ফিল করা যায় কত গুলা মেয়েকে ইমপ্রেস করতে পেরেছি।এটা কি কোনো পুরুষের কাজ।প্রকৃত পুরুষ তো সেই যে একজনের জীবনে রোমিও হয়ে বেঁচে থাকতে চাই।শতজন কে শতভাবে ইমপ্রেস করে ভাল না বেসে একজন কে শতভাবে ইমপ্রেস করে শত উপায়ে ভালবাসার নাম ই প্রকৃত ভালবাসা যেটা প্রকৃত পুরুষ করে থাকে।শুধু কি গায়ের ভাল রং, ভাল হাইট হলেই প্রকৃত পুরুষ হওয়া যায়।ভেতরের মনুষ্যত্ত্ব টাই মেইন।আমার মন এই পিচ্চি শ্যামাপাখিতে আসক্ত আজীবন।
-আপনি কেনো সুন্দরী বেছে নিলেন না বলুন তো?
-পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সুন্দরী নারীতে আসক্ত আমি।তাছাড়া রুপ চেহারা এগুলো ক্ষনিকের জন্য।আজীবন স্হায়ী নয়।যেখানে মানসিক শান্তি মিলে সেখানে রুপ চেহারা, হাইট সব তুচ্ছ।
উনার প্রতিটা কথাই মুগ্ধ করার মতো।উনি না থাকলে বুঝতাম ই না চেহারা,হাইট,যোগ্যতা,বয়স এগুলো কিছুই না ভালবাসার কাছে।
আমাদের বাসায় বিভোর ভাই রিয়া, মেহু আপু ভাইয়া,তোহা আপু তিয়াস ভাইয়া,নির্বান স্যার, বিভা আপু দুলাভাই,মামা মামিরা,বাবা,মা কাকি মনি, কাকুরা সবাই এসছে।আজ আমাদের ম্যারেজ ডে।সবাই অনেক অনেক গিফট নিয়ে এসছে।সোফায় বসে মামা,বাবা গল্প করছে।মেহু আপু বাবুকে সামলাতে বিজি আছে।আম্মু আমার রুম গোছাচ্ছে।কাকি মনি,মামি রা সবাই রান্নাঘরে বিজি আছে।রান্নার জিনিসপত্র গোছাচ্ছে।রুই মাছের মাথা দিয়ে মুড়ি ঘন্টা, খাসি,মুরগি,ছোট মাছ,চিংড়ি রান্না হচ্ছে।বাসায় আজ প্রাণ ফিরে পেয়েছে সবার আগমনে।আমি বেডের উপর বসে আছি বিহান ভাই,বিভোর ভাই,শুভ ভাইয়া আর দুলাভাই কেরাম খেলছে বারান্দায়।আমি বারান্দায় যেতেই বিহান ভাই আমার দিকে তাকাতেই উনার নিশানা হারালেন।আমি আর বিহান ভাই অজস্র বার কেরাম খেলেছি।রাতে দুজনে ব্যাডমিন্টন খেলেছি।রান্না শেষে সবাই আজ কবজি ডুবিয়ে খেলো।
কিছুক্ষণ পরেই দেখি বিভোর ভাই আর রিয়া দুজনে মারামারি করছে কি নিয়ে জানিনা।রিয়া বিভোর ভাই এর পিছে ছুটছে আর বিভোর ভাই দৌড়াচ্ছে।ছুটতে ছুটতে রিয়া বিভোর ভাই এর গায়ের উপর গিয়ে পড়লো।বিভোর ভাই কোলে তুলে পাশের রুমে নিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলেন অতপর কি হলো জানিনা।
সবার গল্পের মাঝেই আমার লেবার পেইন শুরু হলো।ধীরে ধীরে ব্যাথা ক্রমশ বাড়তে শুরু হলো।বিহান দ্রুত গাড়ি বের করলো।আমাকে গাড়িতে করে হসপিটাল নেওয়া হলো।বিহান শক্ত করে আমার হাত চেপে ধরে রেখেছে।ওর চোখে মুখে ভীষণ চিন্তা। আমি যন্ত্রনায় কাতরাচ্ছি বিহান আমার কপালে চুমু দিয়ে বললো কিছু হবে না তোমার।ওর ভালবাসায় সত্যি কিছু হলো না আমার।খুব সহজেই নরমাল ডেলিভারি হলো আমার।বিহানের মতো কিউটের ডিব্বা মেয়ে হলো আমার।যার নাম বিহান সকাল রাখলো।
হসপিটাল থেকে ফেরার পর সবাই আমাদের বেবি নিয়ে ভীষণ আনন্দের সাথে দিন কাটাচ্ছে।
আজ আবার ও একটি বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যা পেলাম।প্রচন্ডবৃষ্টিতে সুয়ে আছি। বিহান আমাকে ওর বুকের সাথে জড়িয়ে নিয়ে আছে।বাইরের ঠান্ডা হাওয়া প্রেমিক প্রেমিকা যুগলের মাঝে প্রেমময় আসক্তির সৃষ্টি করছে।বিহান আলতো পরশের ছোয়ায় আমাকে কাছে টানছে।আমি ওর গালে চুমু দিয়ে বললাম আমি কি তোমার কাছে পূরন হবো না।ও আরো শক্ত ভাবে জড়িয়ে ধরে বললো উহু আমার শ্যামাপাখি পিচ্চি আমার বুকে পিচ্চি হয়েই থাকবে।বার বার বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যা ফিরে আসুক। আর সাক্ষী হয়ে থাকুক আমাদের ভালবাসার।
“কোন প্রার্থনা নেই? কিছুই চাওয়ার নেই
তোমার রক্তের স্রোতে বাসনার বুনোজল আছে।
তোমার অরন্যে আছে অপরুপ চিতল হরিন,
সাদা খরগোশ, সবুজ হরিয়াল।
তোমার কিনারে আছে জলের পরশ,
শিমুল বৃক্ষের ছাঁয়া, নিরতিশয় মিষ্টি বায়ু।
তোমার পরনে আছে শীতের চাদর
আর পায়ে কুয়াশা মাখানো জলকণা।
কোন প্রার্থনা নেই? কিছুই চাওয়ার নেই
আঁধার দেখা তোমার ভাষায়।
আঁধারে পোকা জন্মে, জন্মে কালো।
তোমার আঁধার রাখে জড়ায়ে তোমার খাঁচায়।
তোমার জীবন শুধু আমাকে তাড়ায়।
খেয়াঘাটে অপর পাড়ে শূন্য চোখে
অদেখা মেঘ হয়ে আমার অবস্থান।
বিশ্বাসের কাছে আকাঙ্ক্ষার মূল্য আছে,
তাই জন্ম নেয় নীল পোকা।
শীতল ব্যাথায় বাঁধা হরিনটিও বোঝে
অরন্যের শৃঙ্গ, জলের উত্কলিকা।
শুধু কেবলি তোমার মস্তিষ্কে ধরে না।
কোন সংশোধনী নেই? কিছুই পাওয়ার নেই
শুধু তোমার ভালো থাকাটাই পার্থিব।
(ফেসবুক থেকে কালেক্টেড)”
বিহানের সাথে আমার ভালবাসা চলুক আজন্মকাল।আমাদের প্রেমের যাত্রা হউক দীর্ঘ।
সমাপ্ত।
(সবার প্রতি রইলো অসংখ্য ভালবাসা।দীর্ঘ একটা সময় বিহান দিয়া কে নিয়ে লিখেছি।সুর কেটেছে লেখার অসংখ্যবার, কখনো সিনেমার মতো মনগড়া হয়েছে,বানানে ত্রুটি ছিলো,। অসংখ্য ভুল থাকার পরেও অনেক ভালবাসা পেয়েছি।এই উপন্যাস আমাকে বিহান দিয়ার মতোই ভালবাসা দিয়েছে।এই উপন্যাসে খুব একটা মন গড়া লিখিনি আমি।নিজেরা যা করি সেসব ই ফুটিয়েছি।উপন্যাস টা আপনাদের কত টুকু মন ছুঁয়েছে অবশ্যই জানাবেন)