জীবনের জলছবি
পর্ব ২৫
কলেজে পর পর দুটো ক্লাস হলো না আজকে, তারপরের প্রাকটিক্যাল ক্লাস টা অনেক দেরিতে ছিলো, তাই টুসি সোমার সঙ্গে ফুচকা খেতে বেরিয়ে পড়লো। রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে দার্জিলিং বেড়ানোর কথা জানতে চাইছিলো সোমা, একটু ভেবে সব কিছু বলেই ফেললো টুসি।
তোর যে ওকে ভালো লাগে, ও জানে সেটা?
সোমার কথায় একটু অন্যমনস্ক হলো টুসি, সত্যি কি তপু দা জানে? কোনো কোনো সময় এমন করে কথা বলে, যে টুসির মনে হয় সবই বোঝে তপু দা, আবার কোনো কোনো সময় অদ্ভুত আচরণ করে যেনো ওকে চিনতেই পারছে না।
কি রে কিছু বললি না তো? কি ভাবছিস!
ওকে চুপ করে থাকতে দেখে বললো সোমা,
আমি না ঠিক বুঝতে পারছিনা নিজেই, তোকে কি বলি বলতো!
খানিকটা হতাশ গলায় বললো ও।
ও তোকে ভালোবাসে?
মনে তো হয়!
তাহলে তো মিটেই গেলো, তুই নিজেই বলে দে না! কি আর হবে,
সোমার কথা শুনে একটু ভয় পেলো টুসি,
কি হবে মানে! তুই কি পাগল নাকি! যদি কাকিমা কে বলে দেয় তপু দা! তাহলে মা ও জেনে যাবে!
ধুস! তুই খুব ভীতু, তোর দ্বারা কিছুই হবে না,
এবার একটু রাগ হয়ে গেলো টুসির,
ছাড় তো! তুই কতো সাহসী আমি জানি! নিজের হলে বলতে পারতিস? শুধু লোক কে জ্ঞান দেওয়া!
তাহলে বসে থাক, কবে বলবে তোকে!
কথা বলতে বলতে ফুচকার দোকান এসে গিয়েছিলো, এখন আর কথা বলার সময় নেই, দুজনেই ফুচকা খেতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।
কলেজ নেই তোর? ক্লাস না করে এখানে দাঁড়িয়ে ফুচকা খাচ্ছিস!
পেছনে তাকিয়েই টুসির ফুচকা ভর্তি হাঁ করা মুখটা আরো বেশি হাঁ হয়ে গেলো,
তপু দা আর শুভ দা ঠিক ওদের পেছনেই দাঁড়িয়ে আছে! দুজনের হাতেই দুটো বড়ো বড়ো ব্যাগ। মুখ ভর্তি ফুচকা সামলে কোনো রকমে মাথা নাড়লো টুসি, সোমা একটু অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে,
তোমরা এখানে কি করছো! বিয়ের বাজার নাকি!
ফুচকা টা শেষ করে এতক্ষনে কথা বললো টুসি,
হ্যাঁ, বাজার হয়ে গেছে, এবার বাড়ি ফিরবো, আইসক্রিম খাবি ?
টুসির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো তপু, ও সোমার দিকে তাকালো। ওর নিজের তো খুব যেতে ইচ্ছে করছে, বেশ খানিকটা সময় একসঙ্গে কাটতো তাহলে, কিন্তু সোমা যেতে রাজি হবে কি!
সোমা যাবি?
সোমার সঙ্গে ওদের আলাপ করিয়ে দিয়ে টুসি একদম অনুনয়ের দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকালো, ওর তাকানো দেখেই সোমা বুঝলো কি বলতে চায় টুসি, ও একটু হাসলো। সোমার হাসি দেখে শান্তি পেলো টুসি, যাক বাবা! উফ! সোমা যদি রাজি না হতো, তাহলে এতো সুন্দর প্ল্যান টা এক্ষুনি নষ্ট হয়ে যেতো!
তপু দা আর শুভ দা দুজনে মিলে গাড়ির পেছনে ব্যাগ গুলো ঢোকাচ্ছিল, এই সুযোগে সোমার হাত টা চেপে ধরে আস্তে করে থ্যাংক ইউ বলে দিলো টুসি।
তপু কোনটা রে?
সোমা আস্তে করে জানতে চাইলো,
গেস কর তুই,
টুসি একদম ফিসফিস করে উত্তর দিলো, সোমা গেস করার আগেই শুভ নিজেই বললো,
আমার বিয়েতে বরযাত্রী যাবি কিন্তু টুসি,
ধ্যাত,শুভ দা টা সব মজাটাই মাটি করে দিলো, টুসি একটু সোমার সঙ্গে মজা করবে ভাবছিলো, সেসব আর হলো না। বরযাত্রী তো ও যাবেই, সেটা শুভ দা না বললেও এমনই যেতো, তপু দার সঙ্গে একসাথে সময় কাটানোর এই সুযোগ ও একটুও হাতছাড়া করতে চায় না।
তোমরা দুজনে একা একা বাজার করতে এসেছো?
আইসক্রিমের দোকানে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করলো টুসি, শুভ বেশ অবাক হলো,
দুজনে আবার একা একা হয় কি করে?
না, মানে আর কেউ আসেনি, বিয়েতে তো অনেকে মিলেই বাজার করে,
বললো টুসি, ও আসলে সীমার কথা জানতে চাইছিলো। সেদিন তপু দা যে বললো সীমা এখন থাকবে! ও কি ওদের বাড়িতেই আছে কাকীমার সঙ্গে, নাকি তপু দা মজা করেছিলো সেদিন! কিন্তু কিভাবে জিজ্ঞেস করবে কিছুতেই বুঝতে পারছে না ও!
আমরা যে বাজার গুলো করতে এসেছি সেগুলো অনেকে মিলে আসেনা। যেগুলো অনেকে মিলে করার বাজার, সেগুলো অনেকে মিলেই করছে। বাজার করার লোকের অভাব নাকি! মা, মাসি, মামী ছাড়াও আরো কতো লোক আছে,
টুসির দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো তপু, আর ধৈর্য্য ধরতে পারছে না টুসি, তার মানে সত্যিই সীমা এখানেই আছে!
আরো লোক আছে মানে! আর কে কে বাজার করছে!
বলবে না ভেবেও এবার বলেই ফেললো টুসি। তপু কিছু বলার আগেই শুভ বললো,
তুই কি সবাই কে চিনিস নাকি! নে আইসক্রিম খা,
টুসি আর লজ্জায় কিছু জিজ্ঞেস করতে পারলো না, কিন্তু খুব কৌতুহল হচ্ছে! তপু ও আর কিছু বলছে না, পেছনে লাগার স্বভাব টা তপু দার আজও গেলো না। কি হতো যদি একটু বলেই দিতো! টুসির খুব রাগ হচ্ছিলো।
আইসক্রিম খাওয়া শেষ হয়ে যাবার পর তাড়া লাগলো সোমা, টুসিও ঘড়ি দেখলো। এবার কলেজে ফিরতে হবে না হলে আর প্রাকটিক্যাল ক্লাস টায় ঢুকতে পারবেনা কেউই। সীমার খবর টা জানা হলো না, কিন্তু কিছু করারও নেই! তপু দা যে ইচ্ছে করেই ওকে বলছে না, সেটা বুঝতেই পারছে টুসি। ধুস! আর জিজ্ঞেস করবে না ও কোনো দিনও, যা হয় হবে।
আসছি আমরা, দেরি হয়ে যাচ্ছে,
শুভ দার দিকে তাকিয়ে বললো টুসি, ইচ্ছে করেই তপু র দিকে তাকালো না ও, ওর খুব রাগ হয়ে যাচ্ছিলো, যেই ও একটু ভালো করে কথা বলতে যায়, অমনি ইচ্ছে করে তপু দা ওকে টেনশনের মধ্যে রাখতে চেষ্টা করে। দার্জিলিং গিয়েও একই জিনিষ করেছিলো। প্রথম দিন একটুও কথা বললো না, যেই টুসি রাগ করেছে বুঝলো অমনি পরের দিন ওকে নিয়ে ঘুরতে বেরোলো। আজও তাই করছে!
তুই আবার কলেজে ফিরবি নাকি!
টুসি সোমার সঙ্গে পেছন ফিরে হাঁটতে লেগেছে দেখে বললো তপু, টুসি ঘুরে তাকালো,
হ্যাঁ, প্রাকটিক্যাল আছে আমার,
একটু দাঁড়া,
শুভ কে গাড়ি তে উঠতে বলে টুসির দিকে এগিয়ে গেলো তপু। সোমা কে এগোতে বলে ওখানেই দাঁড়িয়ে পড়লো টুসি,
আমি ভেবেছিলাম শুভ কে বাড়িতে নামিয়ে তোকে পৌঁছে দিয়ে আসবো, আমার কিছু কথা বলার ছিলো তোকে,
টুসির বুকের ভেতর টা ধক করে উঠলো, তপু দা ওকে কিছু বলতে চায়! ইস! আজকেই প্রাকটিক্যাল ক্লাস টা হবার ছিলো! ওটা খুব জরুরি, কিছুতেই বাদ দেওয়া যাবে না। এমন সময়ে বলে না তপু দা! কিন্তু কি বলতে চায় এটা না জেনে কিছুতেই যেতে পারবে না ও!
প্রাকটিক্যাল ক্লাস আছে এখন, ওটা মিস করা যাবে না, কি বলার ছিলো তুমি এখানেই বলো না!
আর ধৈর্য্য রাখতে না পেরে বলে ফেললো টুসি, তপু একটু থমকলো,
এখানে! নাহ! ঠিক আছে, তুই কলেজে যা, পরে বলবো, একটু সময় নিয়ে বলতে হবে, এখন হবে না,
তপু গাড়িতে উঠে পড়লো, টুসির মন টা খুব খারাপ হয়ে গেলো, এখন কতো দিন যে আবার অপেক্ষা করতে হবে কে জানে! এই সুযোগ আর বার বার আসবে কি!
ক্রমশ
( কেমন লাগলো আজকের পর্ব? টুসি আর তপুর জীবনের এই নতুন মোড় কেমন লাগছে আপনাদের, জানার ইচ্ছে রইলো🙏)