জীবনের জলছবি (পর্ব ২৯)

জীবনের জলছবি
পর্ব ২৯
সেদিনের ঘটনার পরে প্রায় দিন চারেক হয়ে গেছে, বেশ কয়েকবার যাবে ভেবেও কাকুর খবর নিতে আর লজ্জায় তপু দাদের বাড়ি যেতে পারেনি টুসি। আজ কলেজ থেকে ফেরার পথে অনেক সাহস সঞ্চয় করে হসপিটালের গেট দিয়ে ঢুকে পড়লো, দরজায় কড়া নাড়তে কাকিমা এসে দরজা খুলে দিলেন, তপু দা ডিউটি তে আছে শুনেই খানিকটা স্বস্তির শ্বাস ফেললো ও।

আজ ও সত্যি তপু র মুখোমুখি হতে চাইছিলো না, কাকুর খবর টা নেবার জন্যেই এসেছিলো শুধু। কাকু এখন ভালো আছে, এটা শুনেই ও উঠে যাচ্ছিলো, কিন্তু কাকিমা ছাড়লেন না, জোর করে চা খাওয়ানোর জন্যে বসিয়ে রাখলেন। কাকিমা রান্না ঘরে চা করতে করতেই দরজায় কড়া নাড়ার আওয়াজ হলো।

টুসি, একটু দরজাটা খুলে দে,

রান্নাঘরের থেকে কাকিমার গলা শুনে টুসি দরজা খুলেই দেখলো সীমা এসেছে, ওকে দেখেই আরও বেশি করে এবার চলে যেতে ইচ্ছে করছিলো টুসির। কোনো রকমে চা টা শেষ করেই বেরোতে যাবে তপু দা ফিরে এলো, এসে ওকে প্রায় না দেখার ভান করেই ঘরে ঢুকে পড়লো। টুসির ও কথা বলার একদমই ইচ্ছে ছিলো না আজ, ও কাকিমা বলে বেরিয়ে পড়তে চাইছিলো, কাকিমা আটকে দিলেন,

দাঁড়া, তপু তোকে বাসে তুলে দেবে,

তপু দা কে ঘর থেকে ডাকলেন কাকিমা, প্রতিবার যখনই এখানে এসেছে সব সময় ওকে তপু দা বাসে তুলে দিয়েছে, এবার তাই কাকিমার মুখের ওপর না বলার কোনো অজুহাত ও খুঁজে পাচ্ছিলো না। বাস স্ট্যান্ডে আসা পর্যন্ত টুসি একটাও কথা বললো না, তপুও চুপ করেই রইলো। এমনকি বাস যখন ছেড়ে যাচ্ছে তখন টুসি হাত তুললেও, তপু না দেখার ভান করেই রইলো, অনেকটা মন খারাপ নিয়েই আজ বাসে বসেছিলো ও।

বাস থেকে নেমে বাড়িতে ঢুকেই দেখলো, বাড়িটা আজ যেনো একটু বেশিই গোছানো মনে হচ্ছিলো।

কি ব্যাপার মা, এত পরিষ্কার করেছো, বিছানার চাদর টাও নতুন, কেউ আসবে নাকি?

চিৎকার করে ঘর থেকেই জিজ্ঞেস করলো মাকে, মা এগিয়ে এসে একটু নরম সুরে বললো

কিছুদিন আগে বলেছিলাম না তোকে ওই ভদ্রমহিলার কথা, উনি আসলে আজ ছেলে কে নিয়ে আসবেন বলেছেন সন্ধ্যে বেলায় তাই।

মাথায় প্রায় বাজ পড়ার মত অবস্থা হলো টুসির।

কি ভাবো বলোতো তুমি নিজেকে? আমার বিয়ে আর আমাকে জিজ্ঞেস করার কোনো প্রয়োজন মনে করছো না, নিজের মতো ডিসিশন নিয়ে নিচ্ছ সব কিছু, উন্মাদের মতো চিৎকার করছিলো ও।

কি করবো বলতো, তোর বাবার শরীর টা ভালো যাচ্ছে না, তোর জন্য খুব চিন্তা করছেন সব সময়। এর মধ্যেই হটাৎ করে খবর পাঠিয়েছেন ওঁরা তোর বাবাকে, এখন কি বা বলতে পারি, কোনো ভদ্রমহিলা কে কি আর বলা যায় যে আপনি আসবেন না। আসুক না , এলেই তো আর বিয়ে হয়ে যায় না, কথায় বলে বিয়ে মানে লাখ কথা, এত সহজ নাকি সব কিছু, এমনিও তো মানুষ, মানুষের বাড়ি আসে নাকি!

যদি এমনই আসার ছিলো, তাহলে তুমি বাড়ি গোছাতে লেগে যেতে না এরকম ভাবে, সব বুঝি আমি,

কিছুতেই নিজেকে সামলাতে পারছিলো না টুসি।

জেনে রেখো ওই ছেলেটার সঙ্গে একটা কথাও বলবো না আমি, তুমি ডেকেছো তুমিই বুঝবে এবার।

মা কোনো উত্তর না দিয়েই ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। টুসি জানে এত সহজে কিছুই থামবে না আর, মায়ের শেষ অস্ত্র কান্না, মা বার করে ফেলবে একটু পরেই, আর তার সঙ্গে চলবে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইলিং, তাই পরবর্তী অশান্তির জন্য রেডী হচ্ছিলো ও। যাই হোক না কেনো ও কিছুতেই ছেলেটার সামনে বসবে না।

বাবা অফিস থেকে ফিরতেই মা কেঁদে সব কথাই বললো বাবাকে, টুসি গোমড়া মুখে বসেছিলো, ঘরে ঢুকে এলো বাবা।

তুমি কি এতটাই বড়ো হয়ে গিয়েছ যে তোমার ব্যাপারে কোনো ডিসিশন নেবার অধিকার আমরা হারিয়েছি?

ওর চোখের দিকে সরাসরি তাকিয়ে প্রশ্ন করলো বাবা। বাবার এই তুমি ডাক টা কে ভয় পায় টুসি, যেই মুহূর্তগুলোয় বাবা তুমি বলেছে ওকে, সেই মুহূর্তগুলোয় কিছু ভয়ঙ্কর হয়েছে আজ পর্যন্ত জানে ও। তাই অসহায় চোখে বাবার দিকে তাকিয়ে শেষ চেষ্টা করলো ও,

বাবা আমার গ্র্যাজুয়েশনও তো হয়নি এখনও, প্লিজ এত তাড়াতাড়ি আমি বিয়ে করতে চাইনা, এখন আগামী দু বছর আমি বিয়ের কথা ভাবছি না কোনো মতেই,

যত সাহস ছিলো সব টা কে এক জায়গায় এনে কথাগুলো বলে ফেললো ও।

তুমি ভাবছো না?
কেটে কেটে কথাগুলো রিপিট করলো বাবা,

মানে এখন তোমার ভালো মন্দ ভাবার দায়িত্ব তুমি নিজেই নিচ্ছ তাহলে? বেশ, বারণ করে দিচ্ছি আমি ওদের কে, আর নিজের দায়িত্ব নেবার মত ক্ষমতা যখন তুমি রাখো, আশাকরি নিজের খরচ তুমি নিজেই চালিয়ে নিতে পারবে এবার থেকে, আমার বাড়িতে থাকতে গেলে ভালো মন্দের ভাবনাগুলো আমার ওপরেই ছেড়ে দিতে হবে তোমাকে, সেটা যখন একান্তই পারছো না, তখন নিজের থাকার ব্যবস্থা করে নিয়ে এই বাড়ি থেকে চলে যেও, সাত দিন সময় দিলাম তোমাকে,

বলেই ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো বাবা। ক্রমশ সব কিছুই ওর হাতের বাইরে বেরিয়ে যাচ্ছে, বুঝতেই পারছিলো টুসি।

ক্রমশ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here