মন_বাড়িয়ে_ছুঁই পর্ব-৪ লেখা: ফারজানা ফাইরুজ তানিশা .

মন_বাড়িয়ে_ছুঁই
পর্ব-৪
লেখা: ফারজানা ফাইরুজ তানিশা
.
এতক্ষন তো পৃথুলার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। এবার চলো কেক কাটি।”
বলেই দুহাতে বাবা আর পৃথুলাকে ধরে এগিয়ে গেল কেকের কাছে। টেবিলের উপর বিশালাকৃতির চতুর্কোণ একটি চকলেট কেক। যার উপরে গোটা গোটা অক্ষরে লেখা ‘HAPPY BIRTHDAY BIBHOR’। বিভোর কেক কেটে প্রথমে আসাদুল হকের মুখে দেয়, তারপর পৃথুলার মুখে এগিয়ে দেয়। পৃথুলা একটু ইতস্তত করে একটুখানি কেক মুখে নেয়। তারপর বিভোরের হাতের বাকি কেকটুকু নিয়ে বিভোরের মুখে দিয়ে বলল,
“শুভ জন্মদিন।”

পার্টিতে অনেকেরই দৃষ্টি পৃথুলার দিকে। তারা একেকজন যেন চোখ দিয়েই গিলে খাচ্ছে পৃথুলাকে। যুবক থেকে শুরু করে বয়স্ক কয়েকজন পুরুষও এমন দৃষ্টি নিক্ষেপ করছে পৃথুলার দিকে। অস্বস্তিতে কাঁটা দিচ্ছে পৃথুলার শরীর।

কেক কাটার কিছুক্ষন পরেই বাসা থেকে ফোন আসে পৃথুলার। পার্স থেকে মোবাইল বের করে দেখল স্ক্রীণে প্রত্যাশার নামটা ভাসছে। পৃথুলা একটু সাইডে গিয়ে ফোন ধরল।
“হ্যাঁ, প্রত্যাশা বল।”
ওপাশ থেকে মাহিমা বেগমের কণ্ঠ ভেসে এলো।
“আমি বলছি পৃথু।”
“বলো মা।”
“কোথায় তুই? কখন আসবি?”
“এইতো এখনি বের হব, মা।”
“তাড়াতাড়ি আয়। রাতের বেলা! একা একটা মেয়ে! আমার চিন্তা হচ্ছে খুব।”
“আহ মা তুমি চিন্তা করো না। কিছুক্ষনের মধ্যেই চলে আসছি। রাখছি।”

পৃথুলা ফোন কেটে বিভোরের সামনে এসে দাঁড়াল। বলল,
“আমাকে এখনি যেতে হবে বিভোর। বাসা থেকে মা ফোন করেছে।”
“এত তাড়াতাড়ি যেতে চাচ্ছ কেন? আরেকটু থাক।”
“না বিভোর। আমি বিকেলেই তোমাকে বলেছি শুধু কেক কাটার সময়টুকু থাকব। আমাকে এখনি যেতে হবে।”
“কিন্তু..”
“প্লিজ…”
“আচ্ছা চলো আমি তোমাকে বাসায় পৌঁছে দিই।”
এতে বাধ সাধলেন আসাদ হক। বললেন,
“এ কেমন কথা বিভোর! এখনো অনুষ্ঠানের সবই বাকি। সবাই আছে। আর অনুষ্ঠানের মধ্যমণি তুমি এখন বেরিয়ে যাচ্ছ!”
বিভোর বলল,
“আমি ওকে পৌঁছে দিয়েই চলে আসব আব্বু।”
“তোমার এখন বেরোনো ভালো দেখায় না বিভোর।”
“কিন্তু আব্বু পৃথুলাকে আমি একা যেতে দিই কি করে!”
পৃথুলা বলল,
“আঙ্কেল ঠিকই বলছেন বিভোর। তোমার জন্মদিনে সবাই এসেছে। সবাইকে রেখে তোমার এখন বাইরে যাওয়া ঠিক দেখাবেনা। সমস্যা নেই, রাত এখনো বেশি হয়নি। আমি একাই যেতে পারব।”
“যেতে পারলেও আমি তোমাকে একা যেতে দেব না।”
এরপর আসাদুল হকের দিকে তাকিয়ে বলল,
“ডোন্ট ওরি, আব্বু। বেশি সময় লাগবে না। আমি ওকে পৌঁছে দিয়েই চলে আসব।”

ছেলের এহেন অবাধ্যতায় বেশ মনঃক্ষুন্ন হলেন আসাদ হক। তবু সৌজন্যমূলক স্মিত হেসে বললেন,
“ঠিকাছে। তবে দ্রুত ফিরে এসো।”
নাছোড়বান্দা বিভোরকে পৃথুলাও বোঝাতে পারল না। তাই বাধ্য হয়ে আসাদ হককে সালাম জানিয়ে বিভোরের সাথে বেড়িয়ে গেল।

বাইরে এসে পৃথুলা বলল,
“তুমি অযথাই কষ্ট করছ। আমি একটা রিকশা নিয়ে চলে যেতে পারতাম।
“বেশি বুঝোনা। এখানে দাঁড়াও, আমি গ্যারেজ থেকে গাড়িটা নিয়ে আসি।”
পৃথুলা মাথা নেড়ে সায় জানাল। বিভোর গেলে একা পৃথুলা দাঁড়িয়ে রইল।

“একা একা দাঁড়িয়ে আছেন যে?”
পৃথুলা পেছনে ফিরে তাকাল। তার পেছনে রাফসান দাঁড়িয়ে আছে। বিভোরের এই কাজিনটাকে অসহ্য লাগে পৃথুলার।
“বাসায় যাব।”
“তাই? চলুন আমি আপনাকে লিফট দেই। আফটার অল ইউ আর মাই উড বি ব্রাদার ইন ল। দেবর হিসেবে একটু খেয়াল তো আপনার রাখতেই হয়। একটা দায়িত্ব আছে না আমার।”
কথাটা বলে একটা নোংরা দৃষ্টি ছুঁড়ে দিল পৃথুলার দিকে। দু কদম এগিয়ে গেল ওর দিকে।
পৃথুলা দ্রুত সরে দাঁড়াল। যথাসম্ভব নিজেকে স্বাভাবিক রেখে বলল,
“কোনো দরকার নেই ভাইয়া। আপনাকে কেউ দায়িত্ব পালন করতে বলেনি। বিভোর আছে তো। ওই আমাকে পৌঁছে দেবে।”
রাফসান কিছু বলতে যাচ্ছিল তখনই বিভোর চলে এলো গাড়ি নিয়ে। বিভোরের গাড়ি দেখে কেটে পড়ল রাফসান।

“গাড়িতে ওঠো।”
বিভোরের কথায় গাড়িতে উঠে বসল পৃথুলা। বিভোর ড্রাইভিং সিটে বসে সিটবেল্ট বাঁধল৷ তারপর পৃথুলার দিকে তাকিয়ে ওর দিকে খানিকটা ঝুঁকল৷ পৃথুলা আতঙ্কিত গলায় বলল,
“কি করছ বিভোর?”
বিভোর কিছু না বলে পৃথুলার সিটবেল্ট বেঁধে দিল। তারপর সোজা হয়ে গাড়ি স্টার্ট দিল। পৃথুলা লজ্জিত গলায় বলল,
“স্যরি!”
বিভোর কিছু বলল না। মৃদু হাসল কেবল। কিছুক্ষন পর পৃথুলা বলল,
“একটা কথা বলব?”
“অনুমতি নেওয়ার কি আছে? বলো।”
“আমার মনে হয়, আঙ্কেলের আমাকে পছন্দ হয়নি।”
বিভোর ভ্রু কুঁচকে তাকালো পৃথুলার দিকে। পৃথুলা বলল,
“এটাই স্বাভাবিক। কোথায় তোমরা আর কোথায় আমরা। তোমাদের মত পরিবারে বউ হওয়ার যোগ্য হয়তো আমার নেই।”
বিভোর বিরক্ত হয়ে বলল,
“ফালতু কথা বোলো না তো পৃথা। আব্বুর তোমাকে পছন্দ না করার কোনো রিজন নাই। তাছাড়া, আমিতো তোমাকে আগেই বলেছি, আব্বু মানুক বা না মানুক আমি তোমাকেই বিয়ে করব। তোমাকে ছাড়া আমি অসম্পূর্ণ। ভালবাসি তোমায়, অনেক ভালবাসি।”

বলে সামনের দিকে তাকিয়ে গাড়ি চালাতে লাগল বিভোর।
পৃথুলা মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে রইল বিভোরের মুখপানে। নিজেকে খুব ভাগ্যবতী মনে হচ্ছে। বিভোরের মত এমন একজন মানুষকে তার জীবনে পেয়েছে। এ যে তার পরম সৌভাগ্য।
কিন্তু পৃথুলা জানেনা ভবিতব্যে তার জন্য কি অপেক্ষা করছে! এত ভালবাসা তার কপালে লেখা আছে কি! কে জানে!

ব্যস্ত শহরের ব্যস্ত রাস্তায় শো শো শব্দে যানবাহন চলছে। কেউ থেমে নেই। সবাই যার যার মত ছুটছে নিজেদের গন্তব্যে। পৃথুলা চুপটি করে গাড়ির জানালার কাচের সাথে মাথা ঠেকিয়ে বাহিরে তাকিয়ে আছে।
“পৃথা…”
বিভোরের ডাকে ঘাড় ফিরিয়ে তার দিকে তাকাল পৃথুলা।
“বলো।”
“চুপচাপ যে? কিছু বলো।”
“কি বলব?”
“আচ্ছা, অনুষ্ঠানে কি তোমার খুব অস্বস্তি লেগেছে? তোমার মুখে কিন্তু আমি অস্বস্তির ছাপ দেখেছি। এখনো কেমন আনমনা হয়ে আছো। এনিথিং হ্যাপেনড?”
“না সেরকম কিছু না।”
“তোমার মুখ দেখে মনে হচ্ছে কিছু একটা হয়েছে৷ আমার কাছ থেকে লুকিয়ো না। বলো কি হয়েছে?”
পৃথুলা একটু ইতস্তত করে বলল,
“আসলে.. তোমার ওই কাজিনটা..মানে রাফসান ভাইয়া। উনি একটু কেমন যেন!”
“বুঝেছি তুমি কি বলবে! ও এমনই। মেয়ে দেখলেই ছোঁক ছোঁক স্বভাব। আসলে রাফসান দীর্ঘদিন ইংল্যান্ড ছিল। দেশে ফিরেও সেখানকার কালচার ছাড়তে পারেনি। এনিওয়ে, তোমার সাথে কোনো খারাপ বিহেভ করেছে কি?”
“হ্যাঁ, উনি পুরোটা সময় ধরে আমার দিকে তাকিয়ে ছিলেন। যেন চোখ দিয়েই গিলে খাবেন আমাকে। বারবার বিভিন্ন অযুহাতে আমাকে ছোঁয়ার চেষ্টা করেছেন। তুমি যখন কেক কাটছিলে তখন উনি পাশ থেকে আঁচলের নিচ দিয়ে আমার কোমড়ে হাত দিয়েছেন।”
বিভোর গাড়ির ব্রেক কষল। বিষ্মিত স্বরে বলল,
“তুমি এসব তখন কেন বলোনি আমাকে?”
পৃথুলা নিভলো। বলল,
“আসলে তখন তোমাকে কিছু বলে তোমার জন্মদিনের আনন্দটা নষ্ট করতে চাইনি।”

বিভোর আর কিছু বলল না। দ্রুত গাড়ি চালাল। পৃথুলাকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে নিজের বাসায় চলে গেল৷ ড্রয়িংরুমে ঢুকেই প্রথমে রাফসানের কাছে গেল।
.
চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here