স্বয়ম্বরা (১২তম পর্ব)
রাজিয়া সুলতানা জেনি
১২
কিডন্যাপড অবস্থায় ভেবে রেখেছিলাম ছাড়া পেলেই কমিশনার আঙ্কেলকে বলে এই হারামজাদাকে সবার আগে একটা ধোলাই দেওয়াব। তারপরে কড়া কোন চার্জ লাগিয়ে বছর দশেকের জন্য জেলে ঢোকাব। কিন্তু গত পরশু যখন ফিরে আসলাম, অবাক হয়ে আবিষ্কার করলাম…ইচ্ছেটা আর নেই।
আই এগ্রি, আসিফ ওরফে ইশতিয়াকের সাথে বিদায়টা পুরোপুরি মধুর না হলেও অনেকটাই সহনশীল হয়েছিল। যখন ও নিজেই স্বীকার করল, সে ই ইশতিয়াক, এরপরে সরি টরি বলল, তখন কিছুটা হলেও রাগ কমে গিয়েছিল। এক মুহূর্তের জন্য মনে হয়েছিল, ‘ছেড়ে দিই ব্যাটাকে’। ফাইনালি কি সিদ্ধান্ত নিতাম জানি না বাট সেদিন যখন জানাল, তিন তারিখে বিয়ে হচ্ছে, তখন রাগ আবার সপ্তমে চড়ল।
কড়া কিছু বলতে গিয়েও নিজেকে সামলে নিয়েছিলাম সেদিন। নিজেকে বোঝালাম, ছেড়ে তো দিচ্ছেই। এরপরে বিয়ে করা বা না করা তো আমার হাতে। শুধু শুধু রিয়াক্ট করছি কেন?
এনিওয়ে, এরপরে তেমন বড় কোন অঘটন আর ঘটে নি। ডিনার শেষে আমার কাছে শুধু জানতে চাইল, ঠিক কটায় রওয়ানা হতে চান। জানালাম, অ্যাজ আর্লি অ্যাজ পসিবল। আর কোন কথা হয়নি। ও নিজের ঘরে চলে যায়। আমিও ঢুকে যাই নিজের ঘরে। ব্যাটা আমার থট পড়তে পারছে। তাই ইচ্ছে করেই ওকে শাস্তি দেয়ার চিন্তাগুলো করলাম না। গল্পের বইয়ের প্রায় শেষ দিকে ছিলাম। ওটা নিয়েই বসে পড়লাম।
সকালের ঘটনাগুলোও গতানুগতিক স্টাইলে ঘটল। ব্রেকফার্স্টের সময় ও একটু আনমনা ছিল, এই যা। সাথে যেহেতু কিছু নেয়ার নেই, কোন প্যাকিং নেই, তাই ব্রেকফার্স্ট শেষ মানেই আমি যাওয়ার জন্য তৈরি। জিজ্ঞেস করলাম
–কখন যাচ্ছি?
— চলুন
ওর চাল চলনে কনফিডেন্স ঝড়ে পড়ছে। হিসাব মেলাতে পারছি না। কিভাবে…? নাহ, এসব নিয়ে ভাবব না। আগে এখান থেকে বেরোই। একসাথেই বাসার বাইরে বেরলাম। প্রথম বারের মত। এখানে বন্দী হওয়ার পরে, ঘরের ভেতরে আমার চলাফেরায় কোন বাধা ছিল না। কেবল সদর দরজা বন্ধ ছিল। ফলে বুঝতে পারিনি, এটা আসলে কি? কোন ফ্ল্যাট? না বাসা?
বাইরে বেরিয়ে বুঝতে পারলাম, এটা আসলে একটা রিসোর্ট। বেশ বড় এলাকা নিয়ে তৈরি। সম্ভবতঃ পুরোটা বুকিং করে নিয়েছিল। জায়গাটা বেশ নিরিবিলি। আই গেস, ঢাকার ভেতরে না। বাইরে। এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখতে দেখতে এগোচ্ছিলাম তখন ইশতিয়াক জানাল
–এটা সাভারে।
মহা সমস্যা। এভাবে মনের সব কথা বুঝে গেলে ভাল লাগে? প্রাইভেসি লাগে না একটা মানুষের? মুখে কিছু বললাম না। চুপচাপ এগিয়ে যেতে থাকলাম।
মূল দরজার বাইরে বেরিয়ে দেখি আমার গাড়ি। ওটা দেখে আইডিয়াটা মাথায় আসল। বললাম
–আই ক্যান ড্রাইভ। আমি নিজেই চলে যেতে পারব।
উত্তরে কিছু জানাল না। হাতের ইশারায় গাড়িতে প্রবেশ করতে বলল। এক মুহূর্ত ভাবলাম, পেছনে বসব, না সামনে। এরপরে এগিয়ে গিয়ে সামনের সিটেই বসলাম। ইশতিয়াক বসল ড্রাইভিং সিটে। এরপরে উত্তরটা দিল
–আমি নিজ দ্বায়িত্বে নিয়ে এসেছি, আই থিঙ্ক, সেফলি বাসায় পৌঁছে দেয়াও আমার দ্বায়িত্ব।
উত্তরে কিছু বললাম না। ফিল করলাম, খারাপ লাগছে না। ইনফ্যাক্ট, কেমন যেন ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। ‘মিস করছি নাকি ব্যাটাকে?’ আড় চোখে তাকালাম ওর দিকে। হাসছে। শিট। এই ব্যাটা সব বুঝতে পারছে। আপ্রাণ চেষ্টা করছি অন্য কিছু ভাবতে। এমন সময় ও নিজে থেকেই আলাপ শুরু করল।
–আপনার মনে যেসব প্রশ্ন ঘোরাফেরা করছে, তার কতোগুলোর উত্তর আমি দেব না। আমার ধারণা বেশ কিছু প্রশ্নর উত্তর আপনি নিজে ভেবেই বের করে ফেলতে পারবেন।
উত্তর না দিয়ে কেবল এক ঝলক তাকালাম। ইশতিয়াক বলে চলল
–এই মুহূর্তে আমার রিসার্চের টপিক হিউম্যান ব্রেন। সেদিন যে আমার রুমে ডাক্তারি বই পেয়েছিলেন, সেটা এই কারণেই।
এই কথার উত্তর দেয়ার কিছু নেই। একবার ওর দিকে আরেকবার সামনে রাস্তার দিকে তাকাচ্ছি। বেশ কিছুক্ষণ চুপচাপ গাড়ি চালাল। আমিও সেভাবে আর আলাপ বাড়ালাম না। কিছুক্ষণের ভেতরেই ঢাকায় ঢুকে গেলাম। এমন সময় ইশতিয়াক আবার কথা বলে উঠল
— ব্রেন যা কিছু ভাবে বা করতে চায়, তা এক্সিকিউট করে বিভিন্ন ধরনের সিগন্যালের মাধ্যমে। কম্পিউটারের মতই ব্রেনেও রয়েছে সার্কিট। এসব সার্কিটের মাধ্যমে সারাক্ষণ চলছে বিভিন্ন ধরনের সিগন্যাল ট্রান্সফার। এই সিগন্যালগুলোকে ট্রেস করে, থট রিডিং সম্ভব কি না, এনিয়েই কাজ করছি।
বেশ সকাল সকাল বেরিয়েছিলাম। তার উপর আজকে ফ্রাইডে। রাস্তা মোটামুটি ফাঁকাই ছিল। কিছুক্ষণের ভেতরেই বাসায় পৌঁছে গেলাম। এরপরে ইশতিয়াকের দিকে তাকিয়ে একটা সোশ্যাল স্মাইল দিয়ে গাড়ী থেকে নামলাম। চলে যাওয়ার জন্য ঘুরেও দাঁড়িয়েছিলাম। এরপরে আবার গাড়ির দিকে ফিরলাম। কেন যেন মন চাইছে, একটা ভদ্র এন্ডিং হোক।
— থ্যাংকস।
ইশতিয়াকও গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়িয়েছে। আমার কথার উত্তরে শুধু বলল
— ফর কিডন্যাপিং?
— নো, ফর হসপিট্যালিটি।
নোড করে ব্যাপারটা গ্রহণ করল। এরপরে আমার দিকে তাকিয়ে ছোট্ট কর শুধু বলল
–সরি ফর এভ্রিথিং।
শেষ কথাটায় কিছু একটা ছিল। ফিল করলাম রাগ এক ঝটকায় অর্ধেক কমে গেল। অন্ততঃ প্রথম দিন যেভাবে রেগেছিলাম, তার খুব অল্প অংশই আর অবশিষ্ট আছে। রাগের বদলে কেমন যেন একটা রোমাঞ্চ টাইপের অনুভুতি কাজ করছে। মনে হচ্ছিল এই কটা দিন কি এমন খারাপ কাটল? প্রসেডিওরটা বাজে ছিল, বাট…
‘গুড বাই’ গ্রিটিং শেষে ঘুরে দাঁড়াব, ঠিক তার আগে প্রশ্নটা মাথায় আসল। জানতে চাইলাম
–আমার শরীর থেকে মাইক্রোচিপটা বের করবেন না?
উত্তরে কিলার স্মাইল দিয়ে শুধু বলল
–ওটা আপনিই পারবেন।
এরপরে গাড়ির চাবিটা আমার হাতে দিয়ে, ও চলে গেল।
বাসায় ঢুকতেই বাবার সাথে দেখা। বাবা তেমন কিছু রিয়াক্ট করল না। কারণটা জানি। ইশতিয়াক হয়তো প্রতিদিন ফোনে আমার কন্ঠে কথা বলেছে। আমিও কেন যেন ব্যাপারটা খুলে বললাম না।
নিজের রুমে ঢুকে বিছানায় শুয়ে ব্যাপারটা নিয়ে আবার ভাবতে বসলাম। মুক্ত হওয়ার কারণে কি না জানি না, লক্ষ্য করলাম ব্যাপারটা নিয়ে যত না রাগ হচ্ছে, তার চেয়ে বেশি পাচ্ছি লজ্জা। স্পেশালি আমার থটগুলো ও জানে, এটা ভেবে। কি ভাবছে ও আমার সম্পর্কে?
এই কদিনের ঘটনাগুলো চোখের সামনে ভেসে উঠল। স্পেশালি আমার পালাবার চেষ্টাগুলো।
প্রথমে, মানে যখন আমি ওর পরিচয় জানতাম না, তখন ওকে আসিফ ভেবে ওকে সিডিউস করার কিছুটা চেষ্টা করেছিলাম। ভেবেছিলাম, ওকে হাতে করে, এই বন্দী দশা থেকে পালাব বলে। এখন যখন পুরো ব্যাপারটা নিয়ে ভাবছি, কেমন অস্বস্তি লাগছে। কি ভাবছে আমার সম্পর্কে? এই মেয়ে নিজের সৌন্দর্য্য ইউজ করে একটা ছেলেকে ফাঁসাচ্ছে, তাকে দিয়ে ডাবল ক্রস করাবার জন্য। ইস, থট রিডের ব্যাপারটা যদি আগে বুঝতে পারতাম!
এটা ঠিক, ইশতিয়াক আমার সাথে কোন মিসবিহেভ করেনি। এই কদিন সময়ও বেশ সুন্দর কেটেছে। গল্প গুজব আড্ডা আর দারুণ সব মজাদার খাবার। অনেক ব্যাপার নিয়েই গল্প হয়েছে। আড্ডা হয়েছে। আর ধরা পরে যাওয়ার পরে, আমাকে বাসায় রেখে যাওয়ার আগে পর্যন্ত নিজের সম্পর্কে বেশ অনেক তথ্যই জানায়েছে। ইশতিয়াকের নাম করে যে গল্পটা ও ফেঁদেছিল, সেটায় কোন কোন অংশ সত্য, সেটাও জানাল। জানাল, বেশ কিছু নতুন নতুন ইনভেনশান ও করেছে। প্রথমে আবিষ্কার ছিল দারুণ রোবাস্ট সিকিউরিটি সিস্টেম। যা এখনও কেউ হ্যাক করতে পারেনি।
হিউম্যান ব্রেন প্রজেক্টও বেশ সাকসেসফুলি শেষ করেছে। থট রিডার বের করে ফেলেছে। ছোট্ট একটা মাইক্রোচিপ শরীরে প্রবেশ করিয়ে দিতে পারলে সে সারাক্ষণ ট্রান্সমিট করতে থাকে এসব থট। এরপরের কাজ ছিল এসব সিগন্যাল ডিকোড করার সফটওয়ার। সেটাও ও বানিয়ে ফেলে। খুব গোপনে এই সফটওয়ার এফবিআই ব্যাবহারও করছে। আর সেটাই ও ইউজ করেছে আমার ওপর।
এনিওয়ে, একটু আগে, আই মিন, আমাকে ড্রপ করে চলে যাওয়ার আগে, ইশতিয়াক বেশ মোলায়েম স্বরে শুধু জানাল, বিয়ের অ্যারেঞ্জমেন্টটা সে ক্যানসেল করেনি। আরও বলল, পুরো ব্যাপারটা আমার ওপর ছেড়ে দিয়েছে। যদি আমি যাই, তাহলে এই বিয়ে হবে, আর যদি না যাই, হবে না। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত যেহেতু ও অপেক্ষা করবে, তাই বিয়ের দাওয়াত কিংবা কোন অনুষ্ঠান কোনটাই ও ক্যান্সেল করছে না।
গত দুদিন, তেমন কিছু ঘটেনি। স্বাভাবিক রুটিনেই আমার দিন কেটেছে। কিছুটা স্মৃতি রোমন্থন ছিল। তবে সবচেয়ে বেশি ছিল অ্যানালাইসিস। অ্যান্ড দেন…
ইয়েস। আজকে বিয়ে। আমার আর ইশতিয়াকের। কিভাবে? জানি না। বাট আই ট্রাইড মাই বেস্ট টু কন্ট্রোল মাইসেলফ। নিজেকে আটকাবার চেষ্টা কম করিনি। পারিনি। এই কদিনের ঘটনা নিয়ে ভাবলে, ব্যাপারটাকে অবিশ্বাস্যই লাগছে। স্পেশালি যে ছেলে আমাকে কিডন্যাপ করল, এই কদিন আঁটকে রাখল, যার জন্য মনে একরাশ ঘৃণা এসে জড়ো হওয়ার কথা, যার জন্য ভয়ঙ্কর সব শাস্তি ভেবে রেখেছিলাম, প্রতিশোধের আগুন জ্বলছিল, সেই মানুষটাকেই বিয়ে করছি! আই রিয়েলি ডোন্ট নো হোয়ায়।
এমন না যে, শাস্তি দেয়ার কোন চেষ্টা আমি করিনি। আসবার দিনই ফোন করেছিলাম। কমিশনার আংকেল বাবার বন্ধু। বেশ আদর করে আমার খবরাখবর নিলেন। জানালেন, বিয়ের দাওয়াত পেয়েছেন। ইশতিয়াকের ব্যাপারটা মুখে আসতে গিয়েও আসল না। ইভেন গতকাল আবার ট্রাই করলাম। ফোন ডায়াল করে কেটেও দিলাম। বুঝে উঠতে পারছি না কি হচ্ছে এসব?
এনিওয়ে, প্ল্যান অনুযায়ী সকাল বেলা একটা মাইক্রোবাস এসেছিল। গত রাত পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারিনি। অবশেষে ঠিক করে রেখেছিলাম, আজ সকালে মন যা চাইবে, তাই করব।
সকালে যখন মাইক্রোবাস আসল, কেমন যন্ত্রচালিতের মত সেটায় উঠে গেলাম। পার্লারে গেলাম। বউয়ের ড্রেস সব পাঠিয়ে দিয়েছিল মাইক্রোবাসে। ওগুলো নিয়ম অনুযায়ী যেভাবে বরের বাসা থেকে কেউ নিয়ে আসে, সেভাবে আসেনি ঠিক, তবে… মেনে নিয়েছি। ড্রেস পড়ে, বউ সেজে, সোজা চলে আসি কাজী অফিস। অরনামেন্টও সব পাঠিয়েছিল।
এরপরে কাজী অফিসে আমাকে ড্রপ করে যায় মাইক্রোবাস। এটাও ইশতিয়াকের অনুরোধ। এখানে বিয়ে হবে, এরপরে আমরা এখান থেকে কমিউনিটি সেন্টারে যাব।
এতো নাটকীয়তা কেন? ও কি শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত আমাকে সুযোগ দিয়েছিল, এই বিয়ে থেকে বেরিয়ে যাওয়ার? ইনফ্যাক্ট এখনও সময় আছে এই বিয়ে থেকে বেরিয়ে যাওয়ার। কি করছি আমি? আমার তরফ থেকে বিয়েতে ‘না’ হওয়ার সম্ভাবনা ফিল করছি না। আমি মনে হচ্ছে সত্যি সত্যিই এই বিয়েতে রাজী।
এখানে অপেক্ষা করছি। কাজী সাহেব কোথাও বিয়ে পড়াতে গেছেন। এদিকে ইশতিয়াকও অবশ্য এখনও আসেনি।
মিনিট পনের পরে কাজী সাহেব এসে হাজির হলেন। সরি বলে ক্ষমা চাইলেন। এরপরে জানতে চাইলেন, বর কোথায়। আমি নিজেও খানিকটা অবাক হচ্ছিলাম। বিয়ের জন্য যে ছেলের এতো জেদ, আজ বিয়ের দিনে সেই ছেলেই হাওয়া। প্রথমে ভেবেছিলাম, সব যেহেতু একাই সামলাচ্ছে, তাই দেরী হচ্ছে। কিন্তু এতো দেরী? এক ঘন্টা হয়ে গেল, ইশতিয়াকের পাত্তা নেই।
হঠাৎ সম্ভাবনাটা মাথায় আসল। নাহ, এটা কিভাবে সম্ভব। মাথা থেকে ঝেড়ে ফেললাম। আবার কাজী অফিসের দরজার দিকে তাকালাম। এমন সময় একটা গাড়ি এসে থামল। ইশতিয়াক নামল গাড়ী থেকে। থ্রি পিস স্যুট পড়েছে। কালো কালার আসলেই ইশতিয়াককে দারুণ স্যুট করে। রিয়েলি, হি ইজ লুকিং ড্যাম গুড। এগিয়ে আসছে।
কাজী সাহেবকে বললাম
— এসে গেছে।
উনি বেশ করিৎকর্মা লোক। দ্রুত লেখালেখি শুরু করে দিলেন। আমার নাম, বাবার নাম জানতে চাইলেন। সব বললাম। এমন সময় ইশতিয়াক এসে বসল। কাজী সাহেবের সাথে হ্যান্ডশেক করল। আমার দিকে তাকিয়ে অ্যাপলজির হাসি হাসল। বললাম
— ইউ আর লুকিং গুড।
দুষ্টুমির হাসি হাসল। বোঝাল, কথাটা বলবার দরকার নেই, ‘আমি জানি।’ মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। এ তো মহা সমস্যা হল। এমনভাবে কি কারো সাথে থাকা যায়? প্রাইভেসী বলে কিছু থাকবে না? একান্ত নিজস্ব কিছু ব্যাপার তো থাকেই সবার। বিয়ের পরে প্রথম এটাই শর্ত দেব। মাইক্রোচিপ বের কর। এভাবে আমি থাকতে পারব না।
— আপনার পুরো নাম?
কাজী সাহেব ইশতিয়াকের দিকে তাকিয়ে জানতে চাইলেন। সেদিকে এক নজর তাকাল ইশতিয়াক। এরপরে আমার দিকে তাকিয়ে কথাটা বলল। কথাটা শুনে মনে হল, এক টানে কেউ আমার পায়ের নীচ থেকে মাটি সরিয়ে নিল। কি বলছে ইশতিয়াক এসব? কিছুক্ষণ আগে খুব অল্প সময়ের জন্য চিন্তাটা মাথায় এসেছিল। সেটা এভাবে সত্য হবে ভাবিনি। তাহলে একারণেই ইশতিয়াক আমাকে কিডন্যাপ করে? প্রত্যাখ্যানের প্রতিশোধ নিতে? তখনও অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি আমি ওর দিকে। এমন সময় ইশতিয়াক কথাটা আবার বলল
— ইউ হার্ড ইট রাইট। এই বিয়ে হচ্ছে না।
কাঁপা কাঁপা গলায় জানতে চাইলাম
— কেন?
— কারণ আমি এই বিয়ে করছি না।
অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকলাম ইশতিয়াকের দিকে।
— প্রতিশোধ?
উত্তরে কিছু বলল না ইশতিয়াক। শুধু স্মাইল দিল। কোন প্রশ্নের উত্তরে ‘ইয়েস’ বলার জন্য যে কিলার স্মাইল দিত, ঠিক সেই স্মাইল না। স্মাইলটা অনেক ম্লান। বজ্রাহত বলতে যা বোঝায়, আমার অবস্থা বোধহয় এখন তাই।
ইশতিয়াক টুক হিজ রিভেঞ্জ।
চলবে