এক_কাপ_চা পর্ব-৩৮

#এক_কাপ_চা
#পর্বঃ৩৮
#সাদিয়া_খান(সুবাসিনী)

(১৯২)

“আজকে আমার স্ত্রীর বিয়ের সম্বন্ধ এসেছে৷ বিয়ের সম্বন্ধ নিয়ে আসা ব্যক্তিটা আর কেউ নয় স্বয়ং আমার বেস্ট ফ্রেন্ড।”

উপহাসের সুরে কথাটা বলল তাশদীদ। তার চেহারায় ফুটে উঠেছে বিরক্তি। শুধু তাই নয়, তাকে দেখে মুনিরের মনে হচ্ছে চারপাশে ব্যাপক ধ্বংসলীলা সংঘটিত হয়েছে।হাতে থাকা সিগারেটে লম্বা টান দিয়ে সামনে থাকা এশট্রেতে রাখলো তাশদীদ।

তাকে স্বান্তনা দিতে মুনির বলল,

” আচ্ছা শান্ত হয়ে বোস। দেখ তোর আর সাগরিকার বিয়ের কথাটা কিন্তু এখনো কেউ জানে না।কোনো অনুষ্ঠান কিংবা এনাউন্সমেন্ট করিস নি।তো এই দিক থেকে তোর বন্ধুর দোষ খুঁজে লাভ নেই।”

“বিয়ে করলে ঢাক-ঢোল পিটিয়ে জানাতে হবে?”

“তবুও। স্বাভাবিক ব্যাপারটা তুই জটিল করছিস।সম্পর্কে তোর চাচাতো বোন সাগরিকা।বিয়ের পর কী সে অন্য বাড়িতে গিয়েছে?আগের মতোই এক বাড়িতেই আছে। মাত্র রুম বদল করেছে সে। বাইরের মানুষ অবশ্যই দেখতে যাচ্ছে না একটা সংসারে কি হচ্ছে না হচ্ছে। আমার পরামর্শ মানলে আমি বলবো একটা গেট টুগেদার প্ল্যান করতে পারিস। সেখানে অফিশিয়ালি এনাউন্সমেন্ট করে দিলে আর এমন পরিস্থিতি আসবে না।”

নিজের ফোন থেকে মাথা তুলে মুনিরের দিকে তাকালো তাশদীদ। কথাটা মন্দ নয় কিন্তু তবুও সে অশান্ত।অন্য একটা সমস্যা মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে তার মনে। একটা সন্দেহ, সাগরিকাকে নিয়ে।
মুনিরের বিয়ের সময়টাতেই তার বন্ধু রাফির ফোনে সাগরিকার ছবি দেখেছিল সে। জিন্স ফতুয়া পরনে ছবি। রক্ষণশীল পরিবারের মেয়ে হওয়ার কারণে সাগরিকার এসব পরে বাইরে যাওয়া বরাবর নিষেধ। তবুও তার জিন্স পরা ছবি রাফির ফোনে গেল কী করে?এটা নিয়ে তখন কথা বলার সময় পায়নি তাশদীদ। রাফি দেশের বাইরে গিয়েছিল আর সাগরিকাকে কোনো কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই সে ভয়ে জমে যেতো।কিন্তু এখন এসবের একটা বিহিত করা প্রয়োজন।

মুনিরকে কোনো জবাব না দিয়েই সেখান থেকে চলে এলো তাশদীদ। মাথায় অসম্ভব যন্ত্রণা হচ্ছে তার। ড্রাইভিং সিটে বসতেই রাফির কল এলো।

“বাসায় জানিয়েছিস?”

“রাফি তোর এত তাড়া কেন?”

“আমি মাস খানেক পর আবার ইন্ডিয়া যাচ্ছি।তোর বোনকে সাথে নিয়ে যেতে চাই। তাছাড়া বিয়ে নিয়ে ওর কিছু ইচ্ছে আছে। কিছু অনুষ্ঠান এসবে সময় লাগবে।”

“কাকে তুই বোন বলছিস?একটু সামলে বল।কারন সম্পর্ক বদলাতে সময় লাগে না।”

“তুই কি সব বলছিস?”

“যাকে বিয়ে করতে চাইছিস সে কী তোকে পছন্দ করে?”

“গত দুই বছর ধরে আমরা কমিটেড।তাছাড়া আমার ধারণা তুই আমার ফোনে ওর ছবিও দেখেছিস। যে মেয়ে ওড়না ছাড়া তোদের সামনে আসে না সে মেয়ের জিন্স পরা ছবি আমার কাছে থাকাটা তুই বুঝিস।বুদ্ধিমান তুই। সম্পর্কে সিরিয়াস না হলে এমন হতো না।”

ছবির কথা মনে করাতে তাশদীদের মাথার যন্ত্রণা আরো বাড়তে লাগলো।দপ করে ফোন কেটে দিয়ে দ্রুত ছুটে চলল বাসার দিকে।

(১৯৩)

ড্রয়িং রুমে মাথা নিচু করে বসে আছে তাজবিদ। তার পাশেই জুবুথুবু হয়ে বসে আছে সাগরিকার বেস্ট ফ্রেন্ড সীমা।এর আগে বহুবার সে এই বাসায় এসেছে কিন্তু আজকে আসার মাঝে পার্থক্য রয়েছে। তাজবিদ সীমাকে বিয়ে করে নিয়ে এসেছে। এহেন ঘটনায় বাড়ির সবাই অবাক।সাগরিকা যেন বেশি ক্ষেপেছে।সে কিছুতেই তার বান্ধুবীকে এই বাড়িতে মেনে নিতে পারছে না।
এক দফা তাজবিদের সাথে রাগারাগি করে গিয়ে ডায়নিং টেবিলের দিকটায় দাঁড়িয়ে আছে সে।গলা ফেটে কাঁদতে ইচ্ছে করছে তার।

কিছুক্ষণ পর দৌড়ে এসে তাজবিদ এবং তার বান্ধুবী কে বলল,

“আজ থেকে তোরা দুই জনেই আমার জন্য মরে গেলি।আমার সামনে আসবি না তোরা। কত স্বপ্ন ছিল তোদের বিয়ে নিয়ে। আর তুই আমার ঘরটাই দেখলি?আমি বার বার তোদের বারণ করেছিলাম। আমার ভাই থেকে দূরে থাকতে আর তুই এটা কেন করলি?”

সাগরিকার কথায় সীমা কোনো জবাব দিলো না।সে জানে সাগরিকা তাকে খুব ভালোবাসে কিন্তু তাদের জীবনে একটা বাজে অভিজ্ঞতা আছে। বান্ধুবীকে ভাবী বানানোর কারণেই তাদের এক প্রিয় ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। সাগরিকা ভয় পায়, তাদের সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যাওয়ার। আজ তাই হলো সাগরিকা সব সম্পর্ক শেষ করে দিলো তার সাথে।

সাগরিকাকে কাঁদতে দেখে তাশদীদের মা তাকে ধমক দিয়ে বলল,

“চুপ থাক।তুই নিজেও খুব ভালো ভাবে আমার ছেলের ঘাড়ে উঠিস নি। নাটক করে বিয়ে করেছিস। ওকে কেন বলছিস?”

তাশদীদের মায়ের কথায় সবাই যেন হতবিহ্বল হয়ে পড়লো।সে সাগরিকাকে এমন কথা বলতে পারে এটা বিশ্বাস হচ্ছে না কারোর। তবুও তার কথার জবাব দিয়ে সামিনা বলল,

“তোমার ছেলে না চাইলে অবশ্যই বিয়ে হতো না।আর ঘাড়ে উঠেছে এটা কেমন কথা?তুমি বাড়ির বড়, বাড়ির বাচ্চাদের এমন ভাবে বলা কী উচিৎ?

“তুই অন্তত আমাকে উচিৎ, অনুচিত শিখাতে আসিস না।নিজের পাপ আগে দেখ।”

“আমি জানি আমি খারাপ,তাই বলে তোমাদের খারাপ হতে হবে?বিয়ে সংসার নিয়ে সব মেয়ের স্বপ্ন থাকে।সাগরিকার ও আছে তেমনি সীমার ও আছে।”

“ইখুমের ছিল না?তুই ওর সব নষ্ট করতে চাইনি?”

“আর যদি বলি এসবের জন্য তোমরাই দায়ী।আমার স্বামীর মৃত্যুর জন্য তোমরাই দায়ী এবং আমার এসব ভুলে তোমাদের কিছুটা হলেও সমর্থন ছিল।”

“কী বলতে চাইছিস?”

“তুমি ভালো করেই জানো।ইখুম এই বাড়িতে আসার আগে রাশেদের সাথে আমার বিয়ের কথা তুমিই আমার ভাইয়ের কানে দিয়েছিলা। শুধু তাই নয় স্নেহা অসুখে পড়লে রাশেদকে আমার ঘরে থাকার জন্য তুমিই বলতে ভাবী।”

সামিনার কথায় তাশদীদের মা আরো রেগে গেলো।তার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে রইল ইখুম।হ্যাঁ তার মনে পড়েছে, সামিনার অসুখ কিংবা স্নেহার জ্বর হলে ভাবীই রাশেদকে ডেকে নিয়ে যেত।ঘর থেকে এক গাল হেসে বেরিয়ে যাওয়ার সময় বলতো

“ওর কেউ নাই রাশেদ ভাই।তুমি ওরে ফেলে দিও না।কায়সার ভাইয়ের শেষ স্মৃতি স্নেহা।তোমার দায়িত্ব। আমরা আর কয় দিন বাঁচবো?”

(১৯৪)

বাসায় ফিরে ওসব দেখে তাশদীদের মনে হচ্ছিলো তার মাথাটা যন্ত্রণায় ফেটে যাচ্ছে। তার সামনে দাঁড়িয়ে সাগরিকাও কেঁদে যাচ্ছে। বাচ্চাদের মতোন বায়না ধরেছে সে এই বাসায় থাকবে না।
তাশদীদ আপাতত কোনো কিছু পাত্তা না দিয়ে ড্রয়িং রুমে সোফায় গা এলিয়ে দিলো।সাগরিকাকে বলল,

“দ্রুত এক কাপ চা নিয়ে রুমে আয়।”

বাধ্য মেয়ের মতোন সাগরিকা তার জন্য চা বানাতে গেলে তাজবিদ ইশারায় তাশদীদকে বলল তার ফোন চেক করতে। ফোন হাতে নিতেই দেখতে পেলো তার ফোনে একটা ম্যাসেজ এসেছে,

” ভাই, সীমা মা হতে চলেছে ওর তিন মাস চলছে।বাধ্য হয়েই ওকে বাড়ি নিয়ে এসেছি।”

তাশদীদ পড়ে তাশদীদ সীমাকে বলল,

“রুমে যাও সীমা।বাবা কাকারা চট্টগ্রাম থেকে আগামীকাল আসবে। এরপর তোমার পরিবারের সাথে কথা হবে। আজ তুমি সাগরিকার রুমে থাকবে।”

তাশদীদের কথা শুনে সাগরিকা দৌড়ে এসে বলল,

“ও আমার ঘরে থাকলে আমি বাসা থেকে চলে যাবো।কোনো বিশ্বাস ঘাতকের জায়গা এই বাড়িতে নেই।”

সাগরিকার কথা শুনে তাশদীদ মনে মনে বলল,

“তবে তোর নিজেরো এই বাড়িতে জায়গা নেই।”

কিন্তু মুখে তুলিকে আদেশ দিলো সীমাকে উপরে নিয়ে যেতে। সাগরিকা রাগ করে ঘর থেকে বের হয়ে যাওয়ার ভান করতেই তাশদীদ সকলের সামনে সাগরিকাকে তুলে নিয়ে উপরে উঠতে লাগলো।রুমে এসে তাকে বিছানায় ধপাস করে ফেলে দিয়ে পাশে থাকা টেবিল থেকে এক গ্লাস পানি শেষ করে ফেলল।ছাড়া পেয়ে সাগরিকা দরজা খুলতে যাচ্ছিলো তাকে টেনে ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে তাশদীদ বলল,

“তোর সাথে ভালো হলে আমার চলবে না।তুই কোথাও যেতে পারবি না।যদি মরিস তো আমার সামনেই মরবি, আমার সামনেই মরে পড়ে থাকবি। তাও কোথাও যেতে পারবি না।তোর অনুষ্ঠান করে বিয়ের স্বাদ আমি মেটাচ্ছি।”

চলবে (যারা গল্প পড়েন একটু রেসপন্স করার অনুরোধ রইল।কারণ অনেক দিন পর গল্প দিচ্ছি।অনেকেই জানে না যে গল্পটা আবার শুরু হয়েছে।আর হ্যাঁ এখন থেকে নিয়মিত হওয়ার চেষ্টা করছি।আপনাদের দোয়াতে আব্বু এখন অনেকটা সুস্থ, হাটতে পারে। দোয়া করবেন আমার আব্বুর জন্য।)

#ছবিয়ালঃ বৈচিত্র্যময় বাংলাদেশ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here