জোর পায়ে দৌড়াচ্ছে প্রাণো ৷ পেছনে চার পাঁচ জন ছেলে তাড়া করেছে প্রাণোকে, ঝিরিঝিরি বৃষ্টির মাঝে দৌড়াতে প্রাণোর কষ্ট হচ্ছে ৷ তবুও বিড় বিড় করে বলে যাচ্ছে,
” ও মাই আল্লাহ এবারের মতো বাচিঁয়ে দেও প্লিজ কথা দিচ্ছি এই হনুমান গুলো কে ঠিক শাস্তি দিবো কিন্তু এখনকার মতো বাচিঁয়ে দেও আল্লাহ প্লিজ প্লিজ প্লিজ”
প্রাণোর দৌড়াতে দৌড়াতে বাস স্টান্ডে এসে তার বান্ধবীদের খুজতে লাগলো৷ তখনি পাশ থেকে একটা মেয়ে চিৎকার করে বলতে লাগলো৷
” প্রাণো আমরা এই বাসে দ্রুত বাসে উঠে আয় এখুনি বাস ছেড়ে দিবে৷”
প্রাণো একবার পেছনে তাকিয়ে ছেলে গুলো কে দেখতে পায়৷ ছেলে গুলো তার দিকে দৌড়ে আসছে৷ প্রাণো ছেলে গুলো কে দেখে এক দৌড়ে বাসে উঠে যায়৷ ছেলে গুলো দাড়িয়ে পরে একে অন্যকে বলতে লাগলো, ” মেয়েটা তো পালালো ম্যাম কে কি বলবো? ম্যাম যদি জানতে পারে মেয়েটাকে আমরা আটকাতে পারিনি তাহলে নির্ঘাত আমাদের জানে মেরে দিবে”
” ঠিক বলছিস ৷ এখন ম্যামকে কি বলবো ভাব৷ ” বলতে বলতে একজনের ফোন বেজে ওঠে৷ তাকিয়ে দেখে ফোনের স্কিনে ম্যাম নাম টা ভেষে উঠেছে৷ ম্যামের কল দেখে ভয়ে শুকনো ঢোক গিললো লোক গুলো৷
প্রাণো বাসে উঠে তার তিন বেস্টুকে দেখে স্বস্থির নিশ্বাস ফেলে বলে, ” দাভাই তোদের আগে থেকে সবটা জানিয়ে দিয়েছিলো তাই না চুড়েল ডাইনি পেকাটি?”
” একদম দোস্ত সাদমান ভাইয়া আজ দুপুরে আমাদের সাথে দেখা করে সব প্লান করে ফেলে ৷ “(ঐশী)
” প্রাণো জান তোর দাভাই এর মতো আমারও যদি একটা ভাই থাকতো তাহলে আমার জীবনটা জিঙ্গা লা লা হয়ে যেত৷ ” (স্মিতা)
স্মিতার কথা শুনে প্রাণো হেসে ফেলে হিজাবের পিন খুলতে খুলতে বলে, ” আমার দাভাই হচ্ছে ওয়ান পিচ ৷ এর কোন কপি নেই তাই এমন ভাইয়ের আশা পরিত্যাগ করো জানুরা”
” বাই দ্যা ওয়ে তোর বাড়ির এখন অবস্তা কি? বউ পালিয়েছে কথাটা মনে হয় এতোক্ষনে সবাই জেনে গেছে?”(সাফা)
প্রাণো স্মিত হেসে সাফা কে বলল,
” মে বি তবে চিন্তা নেই ৷ এখন আমি আর বলির পাঠা হচ্ছি না অন্য কেউ হবে৷ যার জন্য এতো কিছু করা৷”
” মানে! কি বলতে চাইছিস তুই প্রাণো?” অবাক হয়ে জ্বিজ্ঞাসা করলো স্মিতা৷
প্রাণো জানালার সিটে বসে মাথা এলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে কয়েক ঘন্টা আগের কার কথা ভাবতে লাগলো৷
গায়ে হলুদের সাজে নিজেকে আয়নায় দেখে নিজেকে চিন্তে পারছিলো না প্রাণো ৷ এতো সুন্দর লাগছে যে নিজেকে দেখে প্রাণো অবাক হয়ে গেছে৷ ফোন হাতে নিয়ে কয়েকটা সেলফি তুলে হবু বর সাজিত কে পাঠিয়ে দিলো৷ পাঠিয়ে দেওয়ার দু’মিনিট পর সাজিতের নম্বর থেকে কল আসতে প্রাণোর ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে ওঠে৷ ঝটপট কল রিসিভ করে প্রাণো৷
” প্রাণ তোমাকে বড্ড সুন্দর লাগছে একদম পরীর মতো” সাজিতের কথা শুনে প্রাণ ভিষণ লজ্জা পায়৷ বিয়ে ঠিক হবার একমাস আগে থেকে সাজিত আর প্রাণোর পরিচয় হয়৷ সাজিত একটা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে জব করে আর প্রাণো অনার্স ৩য় বর্ষের ছাত্রী৷ সাজিত আর প্রাণোর পরিচয় টা হঠাৎ করে হয়ে যায় সাজিতের বোন স্মিতার মাধ্যমে, স্মিতার কাজিন সাজিত , একদিন হঠাৎ স্মিতাকে ভার্সিটিতে থেকে নিতে আসে তখনি স্মিতার তিন বান্ধবীর সাথে পরিচয় হয় ৷ সাজিত প্রথম দেখায় প্রাণোকে ভালোবেসে ফেলে , সাজিত তার কিছুদিন পর প্রাণোকে প্রপোজ করে প্রাণো না করে দেয়৷ সাজিত প্রাণোর জন্য এতোটা পাগল ছিলো যে বিয়ের প্রপোজাল পাঠায় প্রাণোর বাড়িতে , সাজিত প্রতিষ্ঠিত বিধায় প্রাণোর বাবা মা না করেনি সেদিন এঙ্গেজমেন্ট হয়ে যায় প্রাণো আর সাজিতের ৷ দু’জনে প্রেম পুরোদমে চলতে লাগলো বিয়ের দিন ঘনিয়ে এলো৷ আর আজ প্রাণোর গায়ে হলুদ ৷
হঠাৎ দরজায় কেউ নক করতে প্রাণো সাজিত কে বলে ওঠে, ” আমি রাখছি পরে কথা হবে”
” ওকে প্রাণ তবে মনে করে কল দিবে”
” তা দিবো কিন্তু আমার নাম প্রাণো তুমি প্রাণ কেন বলো?”
” কারন আমার ভালো লাগে , আমার প্রাণ তুমি”
প্রাণো মিষ্টি করে হেসে কল কেটে দরজার লক খুলে দিতে হুরমুর করে প্রাণোর ছোট বোন প্রিয়া ঢুকে প্রাণোর পা জড়িয়ে ধরে কেঁদে দেয়৷ প্রিয়াকে এভাবে কাঁদতে দেখে প্রাণো প্রচন্ড ঘাবড়ে যায়৷ প্রিয়াকে পা থেকে টেনে বিছানায় বসিয়ে প্রাণো বলে, ” কাঁদছিস কেন প্রিয়া? কি হয়েছে তোর?”
” আপু আপু আমি আর পারছি না ৷ বিশ্বাস কর আমার মরে যেতে ইচ্ছে করছে৷”
ছোট বোনের মুখে মরার কথা শুনে প্রাণো রেগে থাপ্পড় মারে প্রিয়ার গালে, প্রিয়া আবারও কাঁদতে লাগলো৷
” চুপ একদম মরার কথা বলবি না৷ কি হয়েছে আমাকে সবটা বল ৷”
” আপু আমি যে মানুষটাকে ভালোবাসি কাল তার বিয়ে ৷ আমি এখন কি করবো বল আপু?”
কাল বিয়ে কথাটা শুনে প্রাণো এক মুহূর্তের জন্য চমকে ওঠে এটা ভেবে যে তার ছোট বোনের ভালোবাসার মানুষটা সাজিত নয়তো?
“নাহ আমি কি যাতা ভাবছি৷ সাজিত তো আমাকে ভালোবাসে ও কেন আমার বোনের সাথে এমন টা করবে ? আমি ভুল ভাবছি হয়তো৷”(মনেমনে)
” প্রিয়া ছেলেটার নাম বল কথা দিচ্ছি তার সাথে তোর বিয়ে হবে ৷”
” সা-সাজিত যার সাথে তোর বিয়ে হবে আগামিকাল”
প্রিয়ার মুখে সাজিতের নামটা শুনে প্রাণো যেন থমকে গেল৷ গলা দিয়ে কোন আওয়াজ বের হচ্ছে না৷ কাজল কালো নীলচে চোখ জোড়া দিয়ে অনবরত পানি গড়িয়ে পড়ছে৷ প্রাণো তার চোখের পানি মুছে প্রিয়াকে বলে, ” চিন্তা করিস না সাজিতের সাথে তোর বিয়ে হবে৷ নিজের রুমে যা আর দাভাই কে আমার রুমে পাঠিয়ে দে৷”
” আপু তুই সত্যি বলছিস সাজিতের সাথে আমার বিয়ে হবে?”
” হুম হবে এখন তোকে যা বললাম তুই তাই কর”
” হ্যাঁ, আমি এখুনি দাভাই কে তোর রুমে পাঠিয়ে দিচ্ছি ৷”
প্রিয়া রুম থেকে বের হতে প্রাণো কান্নায় ভেঙে পড়ে৷ হঠাৎ কারো পায়ের আওয়াজ শুনতে পেয়ে প্রাণো চোখের পানি মুছে ফেলে স্বাভাবিক হয়ে ওঠে৷
” বনু আমাকে ডেকেছিস?”
” হ্যাঁ দাভাই ভিতরে এসো”
সাদমান ভিতরে ঢুকতে প্রাণো ভিতর থেকে দরজা লক করে দিয়ে সাদমান কে বলতে লাগলো, “দাভাই এই বিয়েটা আমার পক্ষে করা সম্ভব নয়৷”
প্রাণোর মুখে কথাটা শুনে সাদমান যেন আকাশ থেকে পড়লো৷
” কি বলছিস প্রাণো , বিয়ে করবি না মানে? তুই জানিস এই বিয়েটা না হলে বাবা মায়ের মাথা নিচু হয়ে যাবে৷ সমাজের লোক থু থু ফেলবে৷”
” দাভাই আমি বলেছি এই বিয়েটা আমার পক্ষে করা সম্ভব নয় কিন্তু এটা বলেনি বিয়েটা হবে না৷ ”
” মানে তুই বিয়ে টা করবি না তাহলে বিয়েটা হবে কি করে?”
” সাজিতের সাথে প্রিয়ার বিয়ে হবে দাভাই ৷ কারন প্রিয়া সাজিতকে ভালোবাসে ৷ আমি আমার ছোট বোনের মুখের হাসি কেড়ে নিয়ে নিজে সুখি হতে পারবো না৷”
সাদমান তার বোনের কথা শুনে স্তব্ধ হয়ে দাড়িয়ে রইল৷
” দাভাই আমাকে পালাতে হবে তুমি যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব তার ব্যবস্থা করো৷”
সাদমান আর কিছু বললো না দরজা খুলে বেড়িয়ে গেল৷ ঠোঁটের কোনে প্লাস্টিক হাসি ঝুলিয়ে স্টেজে বসে আছে ৷ একে একে প্রত্যেককে প্রাণোকে হলুদ ছুইয়ে যায়৷ তার এক ফাঁকে সাদমান প্রাণোর হাতে টিকিট গুজে দিয়ে বলে , ” রাত আটটায় বাস আমি পেছনের গেট খুলে রাখবো তুই ঠিক সময়ে বেড়িয়ে যাস৷”
প্রাণো ছল ছল চোখে তার দাভাইয়ের দিকে তাকিয়ে মাথা নেড়ে সম্মতি জানায়৷
হঠাৎ ঐশীর কথায় প্রাণো চোখ মেলে তাকায় ৷
” দোস্ত একটা সমস্যা হয়ে গেছে”
” কি হয়েছে আবার?”
” দোস্ত স্মিতা আর সাফার সিট এক জায়গায় আর তোর আমার সিট আলাদা আলাদা পড়েছে ৷”
” কিহ! ”
” হুম জানিস এই সিট টা একটা হ্যান্ডসাম ছেলের , আমি তাকে কতো করে রিকুয়েস্ট করলাম আমাকে এখানে বসতে দেওয়ার জন্য কিন্তু ব্যাটা শুনলো না ৷ ওই যে দেখ দাড়িয়ে আছে বসার জন্য,”
প্রাণোর রাগ হলো , অন্য সিটে বসলে সমস্যাটা কি ছিলো সেটাই বুঝতে পারছে না৷ প্রাণো ঘাড় ঘুড়িয়ে পেছনে তাকিয়ে দেখে বাসের লাল নীল আলোতে ছেলেটার মুখ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে না তবে হেসে হেসে তার সামনের সিটে বসা কয়েকটা ছেলের সাথে কথা বলছে৷
” এই দোস্ত কি করতাম বল না?”
” বসতে দে ছেলেটাকে তারপর আমিও দেখাচ্ছি এই প্রাণো কি জিনিস”
” বেস্ট অফ লাক দোস্ত তাহলে আমি গেলাম”
” শোন আমার লাগেজ কোথায়? আর আমরা যাচ্ছি কোথায়?”
“”আমরা বান্দরবন যাচ্ছি আর সব ঠিক মতো আছে সাদমান ভাই সব কিছু আগে ঠিক করে রেখেছে সো ডোন্ট ওয়ারি”
কথাটা বলে ঐশী পেছনের একটা সিটে বসে পড়ে৷ তখন ওই ছেলেটি এসে প্রাণোর পাশে বসে পড়ে৷
প্রাণো ছেলেটার দিকে না তাকিয়ে প্রানোর চোখ জোড়া জানালার কাঁচ ভেদ করে বাইরে তাকিয়ে দেখছে৷ ধিরে ধিরে রাত বাড়ছে ৷ বাসের প্রত্যেকটা লোক ঘুমিয়ে পড়েছে শুধু ঘুম নেই দুটো মানুষের , রাত জাগা পাখির মতো বাইরে তাকিয়ে আছে৷ হঠাৎ পেছন থেকে কারো গলার আওয়াজ শুনে প্রাণোর ধ্যান ভেঙে যায়৷ পাশ ফিরে তাকিয়ে দেখে এক ছেলে কানে হেডফোন গুজে ফোন টিপছে৷ পেছনের ছেলেটি স্মরণ বলে বার বার ডেকে চলেছে ৷ প্রাণোর মনে হলো পেছনের ছেলেটি তার পাশে বসা ছেলেটিকে ডাকছে৷ প্রাণো ইচ্ছে না থাকা সত্যেও ছেলেটির মুখের সামনে তুরি বাজাতে ছেলেটি প্রাণোর মুখের দিকে তাকিয়ে ব্রু-যুগল কুচকে কান থেকে হেডফোন খুলে প্রাণোকে প্রশ্ন করে,” ওয়াট!”
” আপনাকে মেবি পেছনে একটা ছেলে ডাকছে”
প্রাণোর কথা শেষ হতে আবার স্মরণ বলে ডাকতে ছেলেটি পেছনে তাকিয়ে বলে, ” কি হয়েছে আকাশ এভাবে চেচাচ্ছিস কেন?”
” দোস্ত হেব্বি খিদে পেয়েছে ৷ বাস কি সামনে কোন রেস্টুরেন্টের সামনে দাড়াবে কিনা শোন না”
আকাশের কথা শুনে মনে হলো স্মরণ খানিকটা বিরক্ত হলো ৷ বিরক্ত মাখা মুখ নিয়ে বলল, “আর কিছুক্ষন পর একটা রেস্টুরেন্টের সামনে বাস থামবে ৷”
খুব শান্ত গলায় স্মরণের কথা গুলো শুনে প্রাণো কিছুক্ষন দম মেরে বসে থাকলো ৷
” এই গলার আওয়াজ আমি আগে কোথাও শুনেছি কিন্তু কোথায়?” প্রাণো কিছুতেই মনে করতে পারলো না ৷ কুমিল্লায় এসে মায়াবি রেস্টুরেন্টের সামনে বাস থামায়৷ স্মরণ তার বন্ধুদের নিয়ে বাস থেকে নেমে যায়৷ প্রাণো বসে না থেকে স্মিতা ঐশী আর সাফা কে ঘুম থেকে তুলে বাস থেকে নেমে রেস্টুরেন্টে ঢুকে যায়৷
” দোস্ত আমাদের তো একটু ফ্রেস হতে হবে”(ঐশী)
” হুম আমার সাথে আয় আমি ওয়াশরুমে নিয়ে যাচ্ছি তোদের” মুচকি হেসে বললো প্রাণো৷
অন্যদিকে এক জোড়া চোখ সর্বক্ষন প্রাণোকে নজরে রাখছে ৷ এক সেকেন্ডের জন্য নজর সরাচ্ছে না৷
________________
” বাবা প্রাণো এটা কেন করলো? এটা আমি সত্যি জানি না ৷ কিন্তু এখন আমরা কি করবো কাল বিয়ে আর আজ বউ পালিয়েছে খবর টা পাঁচ কান হলে কি হবে বুঝতে পারছো?”(সাদমান)
সাদমানের কথা শুনে জুনাইদ কবির বুকে হাত দিয়ে সোফায় বসে পড়ে বলে, ” আ-আমার মেয়েটা এমন কাজ কেন করলো নিশি ? আমাদের মান সন্মান নিয়ে কেন খেললো প্রাণো?”
” তুমি শান্ত হও প্রাণোর বাবা ৷ এখন আমাদের ভাবতে হবে কাল কি করবো ৷ ছেলে পক্ষ কে কি বলবো?”
” মা আমি একটা কথা বলি; প্রাণোর জায়গায় প্রিয়াকে বসিয়ে দিলে কেমন হয়?”
” কি বলছিস সাদমান! প্রিয়া সবে মাত্র অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্রী ৷ এখুনি ওর বিয়ে দিবো?”(জুনাইদ কবির)
” বাবা পড়াশুনা প্রিয়া বিয়ের পরও করতে পারবে কিন্তু মান-সন্মান এক বার গেলে তা ফেরত পাবো?”
” প্রিয়া কি রাজি হবে সাজিত কে বিয়ে করতে?”
” প্রিয়ার সাথে আমি কথা বলবো বাবা তুমি শুধু ছেলে পক্ষকে মেনেজ করবে৷ ”
” ঠিক আছে তবে প্রাণো যা করলো তার জন্য আজ থেকে এ বাড়ির দরজা চিরতরে বন্ধ হয়ে গেল৷ আজ থেকে প্রাণোর নামটাও কেউ এ বাড়িতে উচ্চারন করবে না”
স্বামীর কথা শুনে নিশিতা বেগম শাড়ির আচঁল মুখে চেপে ধরে কাঁদতে লাগলেন৷ সাদমান দরজা খুলে প্রিয়ার রুমের সামনে গিয়ে নক করলো৷
____________________
প্রাণো, ঐশী, সাফা , স্মিতা পরোটা গরুর মাংস আর সবজি অর্ডার করে দিলো৷ চার বান্ধবী এক সাথে বসে আলোচনা করছে কখন কোথায় কোথায় ঘুরতে যাবে৷ প্রাণো আগে বলে দিয়েছে রিসোর্টে গিয়ে আগে রেস্ট নিবে ৷ ঘুড়াঘুড়ি পড়ে হবে৷ স্মিতা প্রাণোর কথায় সায় দেয়৷
“স্মরণ দোস্ত এভাবে গম্ভীর মুখ নিয়ে কেন আছিস? বলবি কি হয়েছে তোর? আর হঠাৎ করে এই টুরের আয়োজন বা কেন করলি?”(নিলয়)
” ইয়েস প্রশ্ন টা আমার মনেও এসেছিলো নিলয়৷ যে ছেলে নিজের বিজনেস ছাড়া কিছুই বুঝে না সে ছেলে হুট করে এমন টুর কেন আয়োজন করলো তাও সর্ট নটিশে?”
” কি হলো স্মরণের বাচ্চা বল না কারন টা কি?” (সাগর)
স্মরণ খিচুড়ি মুখে দিয়ে আরামছে খাওয়া শেষ করে বলল, ” আমি তোদের অফার করেছি তোরা এক্সেপ্ট করেছিস দ্যাট’স ইট এখানে তোদের কেউ জোর করেনি আসতে ৷ আর সাগর আমার এখনো যেহেতু বিয়ে হইনি তো ফাউল কথা বলা বন্ধ কর নাহলে তোর মুখ কি করে বন্ধ করতে হয় আমার জানা আছে৷”
সাগর আর কথা বলার সাহস পেলো না৷ চুপচাপ খেয়ে নিলো৷ কিন্তু নিলয় পরোটা খেতে খেতে স্মরণ কে প্রশ্ন করলো” স্মরণ দোস্ত শুনলাম তোর ছোট ভাইয়ের নাকি কাল বিয়ে আর তুই আজ বান্দরবান টুরে যাচ্ছিস বিষয় টা কেমন যেন না?”
স্মরণ নিলয়ের কথা শুনে স্থির দৃষ্টিতে নিলয়ের দিকে তাকাতে নিলয়ের মুখটা ছোট হয়ে যায় ৷ মিন মিন করে বলতে লাগলো, ” ইস কি বলে ফেললাম স্মরণকে এবার হয়তো স্মরণ আমার সাথে কথাই বলবে না ৷ ”
স্মরণ নিলয়কে কিছু না বলে বিল পে করে রেস্টুরেন্টের বাইরে চলে গেল৷ এদিকে সাফা ড্যাব ড্যাব করে স্মরণ আর তার বন্ধুদের দেখে যাচ্ছে ৷ দেখে বোঝা যাচ্ছে এরা চার বন্ধু ৷ সাফা সাগর কে দেখে ক্রাশ খায়৷ সাফাকে ওভাবে ছেলে গুলোর দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে ঐশী সাফার হাতে চিমটি কেটে বলে, ” এই ছেমড়ি ওই ভাবে ছেলে গুলোর দিকে তোর রাক্ষুসী নজর দিয়ে গিলে খাচ্ছিস কেন ?”
” উফফ দোস্ত ছেলে গুলো কি জোস দেখতে মাইরি৷ আমি ক্রাশ খাইছি”
” লুচ্চা বেটির লুচ্চামি সব জায়গায় শুরু হয়ে যায় ” বির বির করে কথা টা বলে প্রাণো হাত ধুয়ে উঠে বিল পে করে বলে” আমি বাইরে দারাচ্ছি তোদের হয়ে গেলে চলে আসিস৷ ”
প্রাণো আগে ওয়াশরুমে গিয়ে বোরকা খুলে ফেলে তাই তার লম্বা চুল গুলো এখন হাওয়ার সাথে সাথে দুলছে৷
প্রাণোর পাশে স্মরণ দাড়িয়ে সিগারেটের ধোয়া উড়াচ্ছে৷ প্রাণোর নাকে সিগারেটের গন্ধ আসতে নাক মুখ চেপে ধরে আশে পাশে তাকিয়ে দেখে তার পাশে বসা ছেলেটির হাতে সিগারেট ৷ প্রাণোর বুঝতে বাকি নেই কে সিগারেট খাচ্ছে৷ প্রাণো মুক্ত বাতাসে নিশ্বাস নিতে এসে এখন তার দম বন্ধ হয়ে আসছে ৷ প্রাণো রেগে স্মরণের সামনে গিয়ে দাড়িয়ে বলে, “এই যে মিস্টার আপনি একটু দুরে গিয়ে সিগারেট খান আমার সমস্যা হচ্ছে ৷”
স্মরণ প্রাণোর চোখের দিকে তাকিয়ে বললো,” সমস্যা আপনার মিস আমার নয় ৷ তাই দুরে যেতে হলে আপনাকে যেতে হবে৷ ”
” আপনি তো দেখছি ভিষন ঘাড় তেরা লোক৷”
” বুঝতে পেরেছেন তাহলে! যান রেস্টুরেন্টের ভিতরে গিয়ে বান্ধবীর সাথে গিয়ে বসুন বাইরে নানা রকম বিপদ অত পেতে থাকে৷”
” বিপদ আসলে আমি নিজে তা হেন্ডেল করতে পারবো মিস্টার আপনার উপদেশের কোন প্রয়োজন নেই আমার” কথাটা বলে প্রাণো স্মরণের থেকে একটু দুরে দাড়িয়ে কাউকে কল করলো৷
প্রাণো সরে যেতে স্মরণ সিগারেট টা নিচে ফেলে পায়ে পিসে ফেলে ফোন বের করে টিপতে লাগলো৷
________________
” ম্যাম আমরা মেয়েটিকে ধরতে পারিনি তার আগে মেয়েটি চলন্ত বাসে উঠে পড়ে” লোকটির কথা শেষ হতে একটা থাপ্পড় পড়লো লোকটির গালে,
” আগামিকালের ভিতরে যদি মেয়েটিকে আমার সামনে হাজির করতে না পারিস তাহলে তোরা কেউ বাচঁবি না সে তোদের প্রত্যেককে মেরে ফেলবে৷”
” ম্যাম আমরা যে ভাবে হোক মেয়েটিকে আমরা স্যারের সামনে হাজির করবো-ই”
” করতে তো তোদের হবে-ই , নাহলে তোরা যে কেউ বাঁচবি না ৷ সে তোদের কাউকে ছাড়বে না৷ কিন্তু প্রাণো কোথায় গেল? কাল যদি ওর বিয়েটা না হয় তাহলে সব প্লান ভেস্তে যাবে৷ আর আমি বেঁচে থাকতে তা কখনো হতে দিবো না৷ কাউকে তার ভালোবাসার মানুষকে পেতে দিবো না৷ আমি যেভাবে কষ্ট পেয়েছি ঠিক সেভাবে তোমাদের কষ্ট দিবো৷ কেউ ছাড় পাবে না কেউ না৷
.
.
.
#চলবে…….
গোধূলীর_রঙিন_ছোঁয়া সূচনা_পর্ব
#লেখায়_ফারহানা_ছবি
[নতুন গল্প নতুন জুটিকে নিয়ে চলে এলাম ৷ ভুল-ট্রুটি হলে সুন্দর ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন]