গোধূলীর_রঙিন_ছোঁয়া #লেখায়_ফারহানা_ছবি #পর্ব_৪২

#গোধূলীর_রঙিন_ছোঁয়া
#লেখায়_ফারহানা_ছবি
#পর্ব_৪২
.
.
🦋
সাদমান মাথা নেরে সম্মতি জানিয়ে ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি স্টাট দেয়৷ প্রাণোদের গাড়ি চোখের আড়াল হতেই স্মরণের সামনে এসে একটা গাড়ি থামে স্মরণ বিনা বাক্য সেই গাড়িতে উঠে বসতে গাড়িটা স্মরণকে নিয়ে চলে যায়৷

একটা নির্দিষ্ট স্থানে গাড়িটা থামতে স্মরণ গাড়ি থেকে বের হতেই কয়েকজন গার্ড এসে স্মরণের চারপাশে বন্দুকহাতে দাড়িয়ে গার্ড দিয়ে স্মরণকে সাবধানে বিশাল একটা বাংলোর ভিতরে নিয়ে যায়৷ স্মরণ ভিতরে ঢুকতে কতো গুলো কালো পোষাক পড়া ব্যক্তি স্মরণের দিকে এগিয়ে এসে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে, ” ওয়েলকাম ওয়েলকাম মিস্টার স্মরণ ৷ আসতে কোন অসুবিধা হয়নি তো?”

” না মিস্টার এলভার্ট আমার আসতে কোন অসুবিধা হয়নি কিন্তু আমাকে এখন এখানে ডাকার কারণ কি মিস্টার এলভার্ট ?”( স্মরণ)

” মিস্টার স্মরণ আপনাকে ডাকার কারণ তো নিশ্চয়ই আছে ৷ আগামিকাল আমার বোন এলিনা আসছে আর ও আপনার সাথে কাজ করতে চায়৷ ”

” মিস্টার এলভার্ট ইউ নো দ্যাট ভ্যারি ওয়েল আমি কোন মেয়ের সাথে কাজ করছে পছন্দ করি না৷ এটা আমার রুলসের বাইরে৷ ”

” ওকে ওকে কুল ডাউন মিস্টার স্মরণ ৷ আমি আপনাকে জোর করছি না কিন্তু রিকুয়েস্ট তো করতে পারি? আপনি প্লিজ না করবেন না৷ আর আপনার কোম্পানির সাথে যে ডিল টা করেছি তার সাথে সাথে আমি আপনাকে আরো একটা ডিল পাইয়ে দিতে পারি৷ ”

” মিস্টার এলভার্ট আপনি খুব ভালো করেই জানেন আমি এক কথার মানুষ ৷ আমি যেহেতু বলেছি আমি আপনার বোনের সাথে কাজ করবো না তার মানে দুনিয়া উল্টে গেলেও আমি কাজ করবো না৷ ”

” মিস্টার স্মরণ আমাকে প্লিজ রাগিয়ে দিবেন না৷ আর আপনি ভুলে যাচ্ছেন আপনার সিক্রেট মিশণ সম্পর্কে আমি সব কিছু জানি ৷ আপনি যদি আমার কথা না মানেন তাহলে!”

” ওয়াট মিস্টার এলভার্ট? ” পায়ের উপর পা রেখে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে জ্বিজ্ঞাসা করলো স্মরণ৷

” আমি আপনার মিশণটার সম্পর্কে সব ইনফরমেশন আমি তাদের জানিয়ে দিবো৷”

স্মরণ এলভার্ট এর কথা শুনে বাঁকা হাসলো শুধু, স্মরণের মুখে বাঁকা হাসি দেখে এলভার্টের কপালে ভাজ পড়ে গেল৷ এলর্ভাট কিছু বলতে যাবে তখনি স্মরণ হাতের ইশারায় এলভার্ট এর কপালে শুট করে দেওয়া সাথে সাথে পেছন থেকে একটা গুলি গিয়ে এলভার্টের কপালে গেথে যায়৷ মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়ে এলভার্ট ৷

স্মরণের ঠোঁটের কোনে এখনো লেগে আছে সেই বাঁকা হাসি৷ স্মরণ এলভার্ট এর মৃত্যু নিশ্চিত করে স্মরণ উঠে দাড়াতে পেছন থেকে একজন গার্ড এসে বলে ,” বস গাড়ি রেডি আপনাকে এখুনি এই প্লেসটা থেকে বেড়িয়ে যেতে হবে৷ যে কোন সময় জঙ্গিরা এখানে এসে হাজির হতে পারে৷ ”

স্মরণ গার্ডের দিকে তাকিয়ে ঠান্ডা গলায় বলে উঠলো , ” একজন জঙ্গি যেন বেঁচে না থাকে মিলন ৷ প্রত্যেকের লাশ আমি নিজের চোখে দেখতে চাই৷ ”

” ওকে বস আপনি যা চান তাই হবে৷ ”

স্মরণ আর কোন কথা না বলে বাংলো থেকে বেড়িয়ে গাড়িতে উঠতে ড্রাইভার গাড়ি স্টার্ট দেয়৷

অন্যদিকে সাদমান প্রাণো বাড়িতে ফিরতে দেখতে পায় সবার কান্না মাখা মুখ , প্রাণো সাদমানের প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছে মা বোনের কান্না মাখা মুখ দেখে , কিন্তু দুজনে নিরুপায় কারো হাতে কিছু নেই অলরেডি সবকিছু শেষ হয়ে গেছে৷

প্রাণোকে দেখে প্রাণোর মা বোন দৌড়ে এসে প্রাণোকে জড়িয়ে কান্না করতে করতে বলে ওঠে , ” প্রাণোরে তোর বাবাকে পুলিশ এখনো খুজে পায়নি৷ মানুষটা কোথায় আছে কেমন আছে? কি করবো আমি বল প্রাণো?”

” আম্মু কেঁদো না আব্বুকে খুজে পাওয়া যাবে তুমি চিন্তা করো না ৷ পুলিশ তো খুজছে৷ আর আমি দাভাই চেষ্টা করছি আব্বুকে খুজে বের করার৷”

প্রিয়া ফুফাতে ফুফাতে প্রাণোর হাত টেনে আলাদা সাইডে নিয়ে গিয়ে বলে, ” আপু তুই কোথায় গিয়ে ছিলে?”

” কেন আব্বুকে খুজতে৷”

” মিথ্যে বলিস না আপু৷ তুই আব্বুকে মটেও খুজতে যাসনি ৷ তুই খুজতে গেলে তোর চোখে মুখে আব্বু কে খুজে না পাওয়ার কোন কষ্ট চিন্তা তোর চোখ মুখে আমি দেখতে পাচ্ছি না আপু৷”

” তুই আমাকে ভুল ভাবছিস প্রিয়ু ৷”

প্রিয়ু হাতের ইশারায় প্রাণোকে থামিয়ে দিয়ে বলে উঠলো, ” তোকে আর মিথ্যে বলতে হবে না আপু ৷ তোর চোখ মুখ বলে দিচ্ছে তুই একবিন্দু চিন্তিত নয় আব্বুর জন্য , আমার ধারণা যদি ঠিক হয় তাহলে তুই নিশ্চয়ই জানিস আব্বু কোথায় আছে?”

” কি ভুলভাল বলে যাচ্ছিস প্রিয়ু?”

” আমি কোন ভুলভাল বকছি না আপু৷ তুই অস্বীকার করতে পারিস গতকাল তুই টর্চার সেলে কাউকে নির্মম নৃশংস ভাবে টর্চার করে মেরে ফেলেসনি? নাকি এটাও অস্বীকার করবি আজ ওখানে তুই দুজন মানুষকে টর্চার সেলে ভয়ংকর শাস্তি দিয়ে মারিস নি?”

” তুই এগুলো কি ভাবে জানলি প্রিয়ু?”

” তুই ভুলে যাচ্ছিস আপু আমিও তোর টিমে কাজ করি ৷ হ্যাঁ এটা ঠিক বিয়ে হবার পর থেকে আমি তোর কোন কাজে জয়েন করতে পারেনি তবে এটা কেন ভাবছিস আমি অফিসের কোন খোজ খবর রাখি না? ”

প্রিয়ার কথা শুনে প্রাণো চমকে ওঠে ৷ প্রাণো মনে মনে ভাবতে থাকে, ” প্রিয়া সব জানতে পারেনি তো? যদি সবটা জেনে যায় তাহলে সহ্য করতে পারবে না৷ প্রিয়া কষ্ট পাবে জেনে প্রাণো চোখ মুখ ভয়ে শুকিয়ে গেল৷ প্রিয়া কঠিন মুখ করে প্রাণোর দিকে তাকিয়ে আছে ৷ প্রাণোর উওরের আশায় তাকিয়ে আছে প্রিয়া ৷ এটা ভেবে যে প্রাণো হয়তো সব সত্যিটা তাকে বলে দিবে৷ টর্চার সেলে নতুন বন্দিদের ইনফরমেশন পেলেও কে বা কারা সেই বন্দি এই ইনফরমেশন প্রিয়াকে দেওয়া হয়নি কারণ এটা তাদের রুলসের বাইরে , তাই এটা জানার জন্য প্রিয়া প্রাণোকে একের পর এক প্রশ্ন করে গেল ৷

প্রাণো ঠান্ডা স্বরে প্রিয়ার দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে উঠলো, ” প্রিয়া আমি বাইরে থেকে এসেছি ৷ আমি ভিষণ ট্যায়ার্ড বাকি কথা পরে হবে ওকে৷”

প্রিয়া কিছু বলতে যাবে তার আগে প্রাণো দ্রুত পায়ে হেটে নিজের রুমের দিকে চলে গেল৷

মিহু সাজিত দুজনে প্রাণোকে লক্ষ্য করে ৷ প্রাণোকে একদম স্বাভাবিক দেখে দুজনে ভিষণ ভাবে অবাক হয়৷ কারণ তাদের বাবাকে খুজে পাওয়া যাচ্ছিলো না বলে তারা পাগলের মতো করে খুজে পাওয়ার চেষ্টা করেছে৷ চিন্তায় অস্থির হয়ে ছিলো কিন্তু প্রাণোর ভিতরে সেই অস্থিরতার চিন্হমাত্র রেস দেখতে পেলো না ৷

” ভাই প্রাণো মানে ভাবি এতো নিশ্চিন্ত কি করে? যেখানে তার বাবাকে খুজে পাওয়া যাচ্ছে না?”

” আমিও সেটাই ভাবছি মিহু৷ ভাবি এতোটা নিশ্চিন্ত কি করে? কিন্তু তুই খেয়াল করেছিস ৷ সাদমান ভাইয়ের মুখেও সেই চিন্তার ছাপ নেই বরং বিরক্তি ভাব প্রকাশ করছে ৷ ”

” কিন্তু কেন? ”

” আই ডোন্ট নো মিহু৷”

” ভাবির উপরে নজর রাখতে হবে ভাই ৷ আমার মনে হচ্ছে আমাদের আড়ালে এমন কিছু হচ্ছে যেটা আমরা কেউ অবগত নই৷ এখন আমাদের সেটাই খুজে বের করতে হবে যেটা আমাদের আড়ালে ঘটছে৷”

” ইউ আর রাইট মিহু৷ এবার আমরা নজরে রাখবো ৷ এখন তুই মায়ের রুমে গিয়ে মাকে দেখে আয় ৷ আর আমি প্রিয়া আর শাশুড়ি মাকে নিয়ে রুমে যাচ্ছি ওনার এখন একটু রেস্টের প্রয়োজন৷ ”

” ওকে যাচ্ছি তাহলে”

মিহু চলে যাওয়ার পর পর সাজিত প্রিয়াকে আর প্রিয়ার মাকে জোর করে রুমে নিয়ে যায়৷ সাদমান স্বস্থির নিশ্বাস ফেলে গেস্ট রুমের দিকে হাটতে লাগলো৷

.
.
.
.

অন্ধকার রুমে ফোনের ফ্লাশ লাইটের আলোতে কেউ ফাইল চেক করছে৷ কাক্ষিত ফাইল পেয়ে যেতে খুব সাবধানে ফাইল গুলো হাতে নিয়ে বেড়িয়ে গেল প্রাণোর অফিস রুম থেকে,,,,,

গাড়িতে বসে লোকটা কাউকে ফোন করে, ” হ্যালো বস আপনি যেটা চেয়েছিলেন সেটা পেয়ে গেছি৷”

” গুড ফাইলটা যথা স্থানে রেখে আমাকে ইনফ্রম করবে৷”

” ওকে বস ”

______

হাওয়ার গতিতে এলভার্টের মৃত্যুর খবর এলিনার কানে এসে পৌছায় ৷ খবর টা শোনার পর এলিনা ক্ষিপ্ত হয়ে বিডিতে আসার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে৷ প্রচন্ড রেগে ওয়াইনের গ্লাস ফ্লোরে আচরে ফেলে বলতে লাগলো .” আ’ম কামিং মিস্টার স্মরণ ৷ এলর্ভাট এর মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে আমি আসছি ৷”
.
.
.
#চলবে…………..
[আজকের পর্বটা ছোট হয়ে গেল তাই না? চিন্তা নেই নেক্সটে বিশাল এক পর্ব দিবো৷ ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here