#তাসনিম_তামান্না
#মহব্বত
পর্ব-৩
🍁🍁🍁
মিথিলা নিজের হাত চেপে মাথা নিচু করে বসে আছে। হার্টবিট ধুকপুক করছে। ওদের মধ্যে থেকে একজন বলে উঠলো ‘কি গো বউ দেখি তোমার চাঁদ মুখখানা দেখি আমার নাতিনের পছন্দ কেমন’
মিথিলা কথা শুনে বুঝলো এটা তার বরের নানি। পাশ থেকে আবার বলল ‘মিথুপুই তুমি মাথা নিচু করে আছ কেনো এখানে তো আমাদের সবাইকে চিনো এতো লজ্জা পেও না তো’
মিথিলা চমকালো ‘মিথুপুই’ তো একমাত্র ফাইজা বলে ডাকে। মিথিলা আস্তে আস্তে মাথা উঠিয়ে সামনে বসে থাকা মানুষগুলাকে দেখতে। প্রথম সামনে বরাবর তাকাতেই ফাইয়াজকে দেখে চোখ বড়বড় হয়ে যায়। ফাইয়াজ পাশে বসে থাকা একটা হ্যাগলা পাতল ছেলের সাথে খুব সিরিয়াস মুখ নিয়ে কথা বলছিলে এছেলেটাকে মিথিলা চিনে ওটা ফাইয়াজের পিএ।
মিথিলা দেখলো সবাইকে সে চিনে আগের নেয় মাথা নুয়ে নিলো। এখন আগের চেয়ে ঘামছে,হাত অনবরত কাঁপছে। মিথিলার হার্টবিট বহুগুণে বেড়ে গেছে। ফাইয়াজের নানি কয়েকটা প্রশ্ন করলো মিথিলা কাঁপা গলায় সেগুলোর উত্তর দিলো। কথায় কথায় তিনি বললেন কাল আসতে চাইছিল কিন্তু কিছু সমস্যার কারণে আসতে পারি নাই তারা। মিথিলা জেনো বসে থাকতে পারছে না মাথা ঘুরছে ওট। প্রশ্নরা দল বেধে হানা দিয়েছে। কি হচ্ছে কিছু বুঝতে পারছে না। মিথিলা মৌসুমির হাত ধরলো। মৌসুমি সবাইকে বলে মিথিলাকে রুমে নিয়ে আসলো। মিথিলার সাথে ওর ফেন্ডরাও আসলো কাজিনরা সবাই আপায়ন করতে ব্যাস্ত। মিথিলাকে রেখে ফের বাইরে চলে গেলো।
-এটা কি ছিল? (সুমু)
-ভুল দেখলাম নাকি ভুত দেখলাম ফাইয়াজের ভুত (নাফু)
-এই তোর কাজিনরা একটাবারের জন্য বললও না তোর বর ‘ফাইয়াজ আরহাম’ (তানু)
-হায় মে মার গেয়া সামনা-সামনি মডেলকে দেখলাম ইশ একটা সেল্ফি নিবো (সেতু)
-এই সেতু একদম না এসব করতে গিয়ে না আবার মানসম্মান খাওয়াস (নাফু)
-আরে আমি তো শুনছি ‘ফাইয়াজ আরহাম’ এমনিতেই অনেক ভালো কিন্তু রেগে গেলে ওনার হিতাহিত জ্ঞান শূন্য এরজন্য ইন্ডাস্ট্রির অনেকেই ভয় পাই এটা নিয়ে একবার নিউজ হইছিল মনে আছে (সুমু)
-হ্যাঁ হ্যাঁ খুব মনে আছে মডেল রাহিকে ওনি সুট করার সময় থাপ্পড় মারছিলাম তাও হাত ধরার জন্য (সেতু)
-হাই হাই তোর কি হবে মিথু (নাফু)
-আব তু গেয়া (তানু)
মিথিলা থম মেরে বসে আছে। মিথিলা ভালো করেই ফাইয়াজকে চিনে। মিথিলা বাবা রাফিক আর ফাইয়াজে বাবা মারুফ ভালো বন্ধু হওয়ায় যাতায়াত ও হয় এবাড়ি ওবাড়ি। মাঝে কয়েকদিন দুবাড়ির দেখাই হতো না। মিথিলা যেদিন ফাইয়াজদের বাড়ি গিয়েছিলো। সেদিন ফাইজা স্কুলে ছিল। তাই মা আর আন্টির গল্পের মাঝে বোর হচ্ছিল তখন ফাইয়াজের মা ই বলছিল বাড়ি ঘুরে ঘুরে দেখতে। মিথিলা ঘুরতে ঘুরতে ফাইয়াজের রুমে গিয়ে দেখতে থাকে ফাইয়াজের ছবি রুমে দেখে মিথিলা প্রথমে ভেবেছিল ফাইজার রুম হয়ত ওর মতোই মডেল ফাইয়াজ আরহামকে ভালো লাগে তাই সারা রুমে ছবি লাগিয়ে রাখছে। সবটা কুটিয়ে কুটিয়ে দেখতে থাকে। তখনি পিছন থেকে ধমক শুননে চমকে পিছনে তাকায় পিছনে ফিরে হা করে তাকিয়ে থাকে ফাইয়াজের দিকে।
-‘এই মেয়ে হা করে তাকিয়ে আছ কেনো আর এই রুমে কি করো জানো না কারোর রুমে আসার আগে তার কাছ থেকে পারমিশন নিয়ে আসতে হয় না হলে সেটাকে ব্যাড মেনারস বলে’
মিথিলা ফাইয়াজের ধমকে ভয় পেয়ে যায় থেমে থেমে বলে
-স সরি ভাইয়া
ওনি রেগে বলেছিল ‘আউট’
মিথিলা একদৌড়ে বেরিয়ে মায়ের পাশে বসেছিল তারপর থেকে মাঝে দেখা হতো ওদের শুধু কথা হতো ‘ভালো আছেন’ তার উত্তর হত ‘হ্যাঁ’ একবারও মিথিলা কেমন আছে শুনতো না কেনো জানি না মিথিলার খুব খারাপ লাগতো। তারপর থেকে মিথিলা ওবাড়ি যাওয়া বন্ধ করে দেয়। বাহানা দেখায় পড়াশোনার। মিথিলা মনে করতো ফাইয়াজ তাকে সহ্য করতে পারে না তাই দূরে দূরে থাকত। মিথিলা ফাস্ট টাইম ফাইয়াজের ওপর ফিদা হয়ে গেছিলো ফাইয়াজের পারসোনালিটি, এটিটিউড, নিল চোখের মনির জন্য টিভিতে দেখে মনে করতো ফাইয়াজ লেন্স লাগিয়েছে কিন্তু সামনা-সামনি দেখে ওর ভুল ধারণাটা ভেঙে গিয়েছিল। কিন্তু ব্যবহার দেখে মিথিলা ফাইয়াজকে মনে মনে গালি দিয়ে ধুয়ে দিত।
.
.
খাওয়াদাওয়ার পর্ব শেষ হতে হতে দুপুর ৩:৩০ বেজে গেলো। কলেজ টাইম শেষ হতেই সেতু,সুমুর বাসা থেকে অনবরত কল আসতেছে তাই ওরা চলে যেতে চাইছিলো কিন্তু মিথিলার আম্মু না খাইয়ে আসতে দিলো না ওরা খেয়ে চলে গেছে কিছুক্ষণ আগে। মিথিলা রুমে একা জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে আর প্রশ্নের উত্তর খোঁজর বৃথ্য প্রয়াস চালাছে কিন্তু ফলাফল শূন্য। মিথিলা নিজ মনে ভাবছে ‘আচ্ছা ওনি কি আমার আর ওনার বিয়েটা মেনে নিয়েছে? নাকি আমার মতো ওনাকেও জোর করে বিয়েতে বসিয়ে দিয়েছে? কিন্তু ওনাকে কে জোর করবে ওনি তো অনেক রাগী? আমি জানি ওনি আমাকে একবিন্দু সহ্য করতে পারে না? যদি কথায় কথায় চড় মেরে দেয় তখন?
মিথিলা ভাবনার সুতা ছিড়লো দরজা বন্ধ করার শব্দে। দরজার দিকে তাকাতেই মিথিলার চোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম ফাইয়াজকে দেখে। ফাইয়াজ একবার মিথিলার দিকে তাকিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো। মিথিলা ভেবে পাচ্ছে না ও কি রুমে থাকবে নাকি চলে যাবে? চলে গেলে কোথায় যাবে এখন সবরুম বুক একমাত্র ছাঁদ ফাঁকা। মিথিলা ছাঁদে যাওয়ার জন্য দরজা খুলে বাইরে আসতে গেলে ওয়াসরুমে দরজা খট করে খুলে যায়। মিথিলা ওভাবে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে গেলো ফাইয়াজ তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে মিথিলার দিকে ভ্রু কুচকে তাকালো। ওনি গম্ভীর কণ্ঠে বলল
-ওখানে দাড়িয়ে আছো কেনো? (ফাইয়াজ)
মিথিলা কি বলবে ভেবে পেলো না। মনে মনে ভয় পেলো। থেমে থেমে বলল
– কো থা ও না
ফাইয়াজ তোয়ালেটা স্টাডি টেবিলে চেয়ারে রেখে আয়নায় চুল ঠিক করতে করতে বলল
-দূরে দাড়িয়ে আছো কেনো? কথা আছে বসো। (ফাইয়াজ)
মিথিলা মনে মনে বলল ‘আমার সাথে আপনার আবার কি কথা?’ কিন্তু মুখে কিছু না বলে বিছানার একপাশে বসলো মিথিলার নিজের রুমেই নিজেকে কেমন অচেনা লাগছে। মিথিলা বসতেই ফাইয়াজ বলতে শুরু করলো ‘বিয়ের অনুষ্ঠান হবে তোমার ইয়ার চেজ্ঞ এক্সামের পর সো মন দিয়ে এস্টাডি করো পড়াশোনায় ঢিলেমি আমি টলারেড করবো না মাইন্ড ইট বুঝলে মথায় ভালো করে ডুকিয়ে নাও’
মিথিলা অবাক হয়ে বলল ‘আপনি এ বিয়ে মানেন?’
ফাইয়াজ চুল থেকে হাত সরিয়ে মিথিলার দিকে তাকিয়ে বলল ‘মানি না কিন্তু মানতে তো হবেই বিয়েটা তো হয়ে গেছে তাই এখন আর কিছুই করা যাবে আর আমি চাইছি না তোমার বা আমার জন্য দুপরিবারের বনন্ডিংটা নষ্ট হোক তাই মানিয়ে নেওয়ায়টাই শ্রেয় মনে করছি’
ফাইয়াজের কথাটা মিথিলার কাছে যুক্তিপূর্ণ মনে হলো। কিন্তু তার পরক্ষণে বলে উঠলো ‘কিন্তু আপনি তো আমাকে স….’
এইটুকু বলে মিথিলা থেমে গেলো। ফাইয়াজ বলল ‘কি?আমি তোমাকে কি?’
-না না কিছু না (মিথিলা)
ফাইয়াজ আর কিছু বলতে যাবে তার আগে। দরজার ওপাশ থেকে হাসাহাসির শব্দ শোনা যাচ্ছে। মিথিলার কাজিনরা হাসাহাসি করে বলল ‘ভাইয়া রুমের মধ্যে এখন থেকে শুরু করে দিলেন সারারাত তো এখনো পড়ে আছে। কালকের মতো আজ চলে যেতে দিচ্ছি না মনে রেখেন’
মিথিলা ওদের কথা কানে আসতেই মিথিলার মেদযুক্ত মুখ রক্তিম আভার ছড়িয়ে পড়লো। ফাইয়াজ সেটা দেখে নিভৃতে হাসলো। ফাইয়াজ দরজা খুলে দিতেই ওরা রুমে এসে আরো পচাতে লাগলো।
#চলবে
#Tasnim_Tamanna
[ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। গঠন মূলক কমেন্ট করবেন। রি-চেক করি নাই ]