#তাসনিম_তামান্না
#মহব্বত
শেষ পর্ব
🍁🍁🍁
-‘কি হলো এভাবে হা করে আছো কেন?’
-‘বুঝলাম এটা ফেক নিউজ কিন্তু এমন নিউজ কেনো বের করবে? আর এতে কার কি না লাভ? কিন্তু রাহি যে ঔ একটা ভিডিওতে কাঁদতে কাঁদতে বলছিলো আপনি ওকে ঠকিয়েছেন? ও কেনো মিথ্যা বলবে? আর যতই হোক একটা মেয়েতো আর নিজের সম্মান নিয়ে মিথ্যা বলতে পারে না’
ফাইয়াজ মিথিলাকে বিছানায় বসালো।তারপর বলল
-‘তাহলে কি তুমি বলতে চাইছ আমি মিথ্যা বলছি? আমি ওকে ঠকিয়েছি?’
-‘ আ আরে সেটা ক কখন বললাম?’
-‘তাহলে কি বলতে চাইছ?’
-‘আমি আসলে কিছু বুঝতেছি না প্লিজ বুঝিয়ে বলেন ও কেনো এমনটা করলো এসব করে লাভটা কি ওর’
-‘আমাকে সবার সমানে আপমান করে ফেসলস করা’
-‘কিন্তু এসব করে ওর কি লাভ?’
-‘ভুলে গেছো একটা নিউজ হইছিল। সুট করার সময় ও আমার হাত ধরে ছিলো যেখানে আগে থেকেই বলে দিয়েছিলাম এমনটা আমার পছন্দ না তাও ও আমাকে নিজে একটা মেয়ে হয়ে রাত বেডসেয়ার করার জন্য ডাকছি কোন মেয়ে এমন করে? আর সেদিন শুধু সবটা চাপা রেখে আমার হাত ধরার কথাটা বলছিলাম আর চড় মারছিলাম আর সেটার শোধ তুলতে ও এমনটা করেছে’
-‘ও একটা মেয়ে হয়ে এমনটা করতে পাড়ল? কিন্তু তাহলে এখন কি হবে?’
-‘কি আবার হবে যা হবার হয়ে গেছে’
-‘যা হবার হয়ে গেছে মানে?আপনি নির্দোষ সেটা প্রমান করবেন না’
-‘ম্যাডাম আপনি ঘুমিয়ে থাকলে জানবেন কি করে সবাই সবটা জেনে গেছে আর রাহির ফ্যানসরা হেইটারছে প্রমানিত হয়েছে রাহি এমন ভুল আর সেকেন্ড টাইম করবে বলে মনে হয় না’
-‘সত্যি? ‘
-‘তিন সত্যি’
মিথিলা ফাইয়াজের বুকে মাথা রেখে বলল
-‘আপনাকে আর কেউ বাজে কথা বলবে না তো? জানেন আমার খুব কষ্ট হয় আপনার নামে খারাপ কিছু দেখলে’
-‘ওরে আমার পেত্নী বউটারে’
-‘এই আপনি আমাকে পেত্নী বলেন কেনো?’
-‘তাছাড়া কি বলব? দুদিনে কি করছ দেখছ? পেত্নীরাও লজ্জা পাবে তোমাকে দেখে?’
-‘আপনি খুব শয়তান’
-‘তোমারই তো বর’
★★★
সোসালমিডিয়ায় কোনো একটা কিছু ভাইরাল হলেই শুরু হয়ে যায় সেটা নিয়ে ট্রল করা। সেটাতে আবার মসলা মিশিয়ে গরম খবর বানানো কিছু রোস্টারদের কাজ। সেটা নিয়ে হাসাহাসি করতে করতে তারা ওপরে উঠিয়ে ফেলে। যারা কইদিন আগে রাহির ফ্যান ছিল রাহির নেকাকান্না দেখে যাদের মন খারাপ হচ্ছিল তারা ছিঃ ছিঃ করছে। আবার যারা ফাইয়াজকে নিয়ে ক’দিন আগে খারাপ কথা বলছিল তারা এখন ফাইয়াজকে নিয়ে কি মাতা মাতি। ভারচুয়াল জগৎ কি যে অদ্ভুত ক্ষনেক্ষণে রূপ বদলাই। যা দেখে তাই বিশ্বাস করে ফেলে।
শুরু হয়ে গেছে ফাইয়াজ মিথিলার বিয়ের তোরজোর দুবাড়ি নানারকমের রংবেরঙের কৃত্রিম আলোয় ভরপুর সাথে গান-বাজনা, নাচ, হাসিঠাট্টা চলছে দুবাড়ির মধ্যে। মিথিলা সবার সামনে হাসি মুখে থাকলেও মনে চলছে বাবা-মা’কে ছেড়ে চলে যাওয়ার কষ্ট তীব্র ভাবে অনুভব করছে। মিথিলার বাচ্চাদের মতো কাঁদতে ইচ্ছে করছে চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করছে ‘আমি কোথাও যাবো না তোমাদের ছাড়া’ কিন্তু বলতে পারছে না কান্না পাচ্ছে শুধু।
অনুষ্ঠান শেষে মিথিলা রুমে আসতেই অাফরোজা বেগম খাবার প্লেট নিয়ে রুমে ডুকলেন মিথিলা আর নিজেকে ধরে রাখতে না পেরে মাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলো। অাফরোজা বেগম ও কেঁদে দিলো ছোট মেয়েটাকে তিনি সবচেয়ে বেশি ভালোবাসেন সেই ছোট মেয়েটা দেখতে দেখতে কতবড় হয়ে গেলো যার কি না কাল নাকি বিয়ে।
.
.
ফাইয়াজ আর মিথিলাকে লাল গোল্ডেন কালারের লেহেঙ্গা আর শেরওয়ানিতে দুজনকে অসম্ভব সুন্দর দেখাছে। দু’জনকে পাশাপাশি পার্ফেক্ট কাপল লাগছে। প্রেসমিডিয়া এটা নিয়ে নিউজ ও ছাপাছে। আজকের ব্রেকিং নিউজ আর হেডলাইন হলো ‘মডেল ফাইয়াজ আরহামের বিবাহ অনুষ্ঠান’
বিদায়ের সময় মিথিলা কাঁদতে দেখে ফাইয়াজের খুব খারাপ লাগতেছিলো কিন্তু ওর-ই বা কি করার আছে এটাই তো বিধির বিধান প্রতিটা মেয়েকেই তার বাবার রাজকন্যা থেকে অন্যর বাড়ির রাণী হতে হয়।
.
-‘মিথি তেমার সাথে আমার একটা ইনপটেন কথা আছে যেটা না বললে আমি শান্তি পাচ্ছি না আমি জানি না তুমি এ কথাটা কি ভাবে নিবে আমার আগেই উচিৎ ছিল তোমাকে সব সত্যিটা জানিয়ে দেওয়া’
ফাইয়াজ বাসর ঘরে ডুকেই মিথিলাকে কথাটা বলল।ফাইয়াজের কথায় মিথিলা অবাক না হয়ে পারলো না।
-‘হ্যাঁ বলেন কি বলবেন? আর কিসের সত্যি?’
-‘এই যে তোমাকে হুট করে বিয়ে করার কারণ আর আমি তোমাকে মিথ্যা বলছি!’
-‘মানে?কি সত্যি মিথ্যা আমি কিছু বুঝতেছি না আপনি হেয়ালি না করে বলুন প্লিজ’
-‘আসলে আমি তোমার বাবা-মা’কে মিথ্যা কথা বলছিলাম যে তোমার পিছনে খারাপ ছেলেরা পড়ে আছে আর তারা তোমারকে ডিস্টার্ব করে তোমার ক্ষতি করতে চাই। আর এগুলা বলছি তোমাকে হারিয়ে ফেলার ভয়ে তুমি যখন জিসানের প্রপোজাল একসেপ্ট করো তখনই আমার মথা খারাপ হয়ে যায় কিছু না ভেবেই এগুলা বলে দি আর তোমার বাবা-মাও রাজি হয়ে যায় আমি তোমার প্রটেকশনে দিবো বলছিলাম
ফাইয়াজের কথা শুনে মিথিলা থম মেরে যায়।
-‘ মিথি তু তুমি প্লিজ আমাকে শাস্তি দাও তবুও আমাকে ছেড়ে যাওয়ার কথা বলবে না আর না আমি তোমাকে যেতে দিবো’
ফাইয়াজ মিথিলাকে অনেক কথা বলছে মিথিলা কিছু বলছে না চুপ করে আছে। ফাইয়াজ মিথিলাকে চুপ থাকতে দেখে উঠে বেলকনিতে গিয়ে নিকোটিনের বাষ্প ছাড়তে লাগলো। কিছুক্ষণপর মিথিলাকে পাশে দাড়িয়ে থাকতে দেখে কোন রূপ প্রতিক্রিয়া দেখালো না নিজের মতো বাষ্প ছাড়তে লাগলো। মিথিলা ফাইয়াজের হাত থেকে টান মেরে ফেলো দিলো। রেগে বলল ‘আমি ছেড়ে চলে গেছি না-কি চলে যাবো বলছি কোনটা? যে ছেঁকা খেয়ে বসে আছেন। শুনেন আমি আপনাকে খুব ভালোবেসে ফেলছি না ভালো না বাসতাম তাহলে চলে যেতাম’
ফাইয়াজ হেসে মিথিলাকে জড়িয়ে ধরে বলল ‘আমি ও তোমাকে ভালোবাসি পাগলী জানি তুমি আমাকে ছেড়ে যাবে না’
.
শুরু হলো নতুন পথ চলা যেখানে থাকবে না কোনো বাঁধা থাকবে না কোনো নিষিদ্ধ মানা রবে শুধু ভালোবাসার মানুষের পাশে হাতে হাত রেখে সারাজীবন পথ চলা। বাঁধা বিপত্তি পেরিয়ে সুখের রাজ্য হবে যেখানে ফাইয়াজ রাজা আর মিথিলা হবে রাণী। অটুট থাকুক তাদের বিশ্বাস ভালোবাসা আগলে রাখুক দু’জন দু’জনকে।
___________________সমাপ্ত ___________________
[ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। গঠন মূলক কমেন্ট করবেন। প্রথম পর্ব থেকে শেষ পর্ব পর্যন্ত গল্পটা কেমন লাগলো জানাবেন। আল্লাহ হাফেজ।রি-চেক করি নাই ]