#ভালোবাসি_বলেই_তো ♥️
লেখিকা – #আদ্রিয়া_রাওনাফ
পর্ব – ৮
মিরপুর ১১ তে পৌঁছে আবরন গাড়ি রাস্তার এক কিনারে পার্ক করে পূর্ণতা আর প্রেনা কে নামতে বলে নিজে গাড়ি লক করে নেমে দাঁড়ালো । পূর্ণতা আর প্রেনা বেনারসি পট্টির সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই দেখলো সেখানে আয়মান , তাসিন আর ফাহিম ও দাঁড়িয়ে আছে ।
আয়মান , তাসিন আর ফাহিম ওদের খেয়াল করতেই পেছনে ওদের সাথে আবরনকেও লক্ষ্য করলো । তারপর ভ্রু কুচকে ঘটনা বুঝতে চেষ্টা করলো । পূর্ণতা ওদের দিকে এক নজর দেখে প্রেনার হাত ধরে সামনে এগিয়ে যেতে লাগল । আবরন ফাহিম , আয়মান আর তাসিন কে উদ্দেশ্য করে জিজ্ঞেস করল ,
– কতক্ষন যাবত এসেছিস ?
ফাহিম বলল ,
– ১৫ মিনিটের মতো । বাই দ্য ওয়ে , ওরা দুইজন এখানে তোর সাথে কেন ?
আবরন বলল ,
– হাঁটতে হাঁটতে বলি ।
তারপর প্রেনা আর পূর্ণতার ৬-৭ হাত পেছনে ওরা হাঁটতে লাগল । আবরন বলল ,
– ওদের নিয়েই তো আসলাম ।
আয়মান বলল ,
– প্রশ্ন তো এটাই যে , ওদের নিয়েই তোর কেন আসতে হলো ?
তাসিন বলল ,
– ওয়েট ওয়েট !! ডু ইউ লাইক হার ?? প্লিজ বি অনেষ্ট আবরন !!
আবরন শুধু ঠোঁট বাকা করে হাসল ।
আর ওদের বুঝতে বাকি রইল না ।
আয়মান বলল ,
– তাহলে তো আমাদের সন্দেহ বিন্দুমাত্র ভুল না !!
আবরন ভ্রু কুচকে বলল ,
– তোরা আবার কবে সন্দেহ করলি ?
ফাহিম বলল ,
– যেদিন তুই রোমিও হয়ে জুলিয়েটের জন্য গান গেয়েছিলি ।
ফাহিমের কথা শুনে সবাই হেসে উঠলো ।
পূর্ণতা আর প্রেনা ওদের হাসির শব্দে পেছনে ঘুরে তাকাতেই আবরন বিষয়টা লক্ষ্য করে হাসি থামিয়ে বাকিদেরও ইশারা করে হাসতে নিষেধ করল । সবাই হাসি থামিয়ে ওদের আরেকটু কাছাকাছি এগিয়ে গেল ।
পূর্ণতা একটা বড় দোকানে গিয়ে ঢুকতেই স্টাফদের দুইজন হুড়মুড় করে বিয়ের বেনারসি দেখানো শুরু করলো । পূর্ণতা বলল ,
– আরে ভাই , বেনারসি কেন দেখাচ্ছেন ??
আমাকে লাল পাড়ের কালো শাড়ি দেখান । জর্জেট ছাড়া দেখাবেন ।
– আচ্ছা আপু । সবাই মিলে এসেছেন তাই ভাবলাম বিয়ের শাড়ি কিনবেন ??
আবরন দুষ্টুমি করে পূর্ণতার কানের কাছে এগিয়ে বলল ,
– বিয়ের শাড়িটা নাহয় কিনেই ফেলো !! কয়দিন বাদে তো বিয়ে এমনিতেই করতে হবে ।
পূর্ণতা রক্ত চক্ষু করে আবরনের দিকে তাকিয়ে বলল ,
– দলবল নিয়ে বাহিরে গিয়ে দাঁড়ালে আল্লাহর ওয়াস্তে চিরকৃতজ্ঞ থাকতাম !!
আবরন হেসে বলল ,
– ওদের পাঠাচ্ছি , কিন্তু আমি তো যাবো না ।
পূর্ণতা ভেংচি কেটে শাড়ি দেখায় মনোযোগ দিল । আবরন ওদের বাহিরে পাঠিয়ে পূর্ণতার পেছনে এসে দাঁড়ালো ।
প্রেনা স্টাফকে বলল,
– ভাই , এত ভারি শাড়ি না । আপনি বরং টাঙ্গাইল শাড়ি দেখান ।
স্টাফ দুজন লাল পাড়ের কালো টাঙ্গাইল শাড়ি দেখাতে শুরু করলো ।
পূর্ণতা প্রতিটা শাড়ি ই দেখছে কিন্তু পছন্দ হচ্ছে না।
প্রেনার ও পছন্দ হচ্ছে না ।
আবরন ব্যপারটা বুঝতে পেরে বলল ,
– ভাই , এই শাড়ি ই একটু ইউনিক ডিজাইন নেই ??
– হ্যা আছে ।
– ঐগুলো দেখান না তাহলে !
স্টাফরা টাঙ্গাইল শাড়ির ইউনিক ডিজাইন বের করতেই প্রেনা আর পূর্ণতার মাথা খারাপ হয়ে গেল । কারন প্রতিটা শাড়ি এত সুন্দর যে মন চাইবে সব গুলোই নিয়ে নিতে ।
পূর্ণতা বলল ,
– এতক্ষন এই শাড়ি কোথায় লুকিয়ে রেখেছিলেন ভাই ?
স্টাফরা হাসল । এখন পূর্ণতা ডিসাইড করতে পারছে না কোন শাড়িটা নেবে ?? কারন প্রতিটা শাড়ি ই অসম্ভব সুন্দর । সব গুলোই লাল পাড়ের কালো শাড়ি তবে ডিজাইন ভিন্ন ।
আবরন একটা শাড়ি হাতে নিল যেটার জমিন কালো তার উপর সোনালি জড়ি সুতোর ছিটে কাজ করা আর টকটকে সিদুর লাল রং এর পাড় , তাতেও সোনালি সুতোর কাজ করা , আর আঁচল সম্পূর্ণ লাল এবং সোনালি সুতোর মিশ্রনে কাজ করা । সব মিলে শাড়ি দেখতে সিম্পলের ভিতর গর্জিয়াস ।
তারপর পূর্ণতা কে বলল ,
– এটা দেখো তো !!
পূর্ণতা দেখে বলল ,
– ওয়াও !!
তারপর আবরনের হাত থেকে শাড়িটা নিয়ে আয়নাতে নিজের কাধে শাড়িটা ধরে দেখলো ওকে আসলেই শাড়িটাতে বেশ মানিয়েছে । পূর্ণতা যখন শাড়িটা খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছিল আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে তখন আবরন ওর পেছনে এসে দাঁড়িয়ে বলল ,
– চাইলে এটাই নিয়ে নিতে পারো । কিন্তু প্লিজ তুমি একা নিও । প্রেনার জন্য অন্য একটা শাড়ি পছন্দ করো ।
পূর্ণতার আবরনের কথা গুলো কেন যেন ফেলতে ইচ্ছা হলো না । ওর কেন যেন মনে হচ্ছে এই শাড়িটা হয়তো আবরন শুধু ওর জন্যই বাছাই করেছে । তাই পূর্ণতা মনের কথা শুনে রাজি হয়ে গেল । প্রেনা বলল ,
– এই শাড়িটাই আরেক পিস হবে ভাই ?
পূর্ণতা বলল ,
– শোন না , তুই অন্য আরেকটা নে । তাহলে ভালো হবে । কারন দুইজন দুই রকম ইউনিক শাড়ি পড়লে সবাই তাকিয়ে থাকবে বুঝলি !!
প্রেনা বলল ,
– তা অবশ্য ঠিক । আচ্ছা , তাহলে অন্য একটা পছন্দ করে দে ।
পূর্ণতা ওর জন্য অন্য একটা শাড়ি পছন্দ করে দিল ।
সব শাড়ি গুলোর একই দাম । ফিক্সড প্রাইস ২৬৫০/- , তবে ওদের কাছে কিছু কমিয়ে ২৫০০/- করে দিল । শাড়ি নিয়ে দোকান থেকে বের হওয়ার সময় আবরন পূর্ণতাকে বলল ,
– থ্যাংকস ।
পূর্ণতা কিছু বলল না । প্রেনার হাত ধরে হাঁটতে শুরু করলো ।
আবরন ফাহিম , আয়মান আর তাসিন কে উদ্দেশ্য করে বলল ,
– তোদের গার্লফ্রেন্ড কে তোরা কি কি কিনে দেস রে গিফট হিসেবে ?
আয়মান বলল ,
– আমার তো গার্লফ্রেন্ড ই নেই । এসব ফাহিম আর তাসিন ই ভালো বলতে পারবে ।
তাসিন বলল ,
– আমার এত টাকায় ছিনিমিনি করে না , যেদিন ইনকাম করবো সেদিন কিনে দিব ।
ফাহিম বলল ,
– আমার জিএফ অনেক লক্ষী । যখন মিট করি তখন ই ৫০ টাকা দিয়ে একটা আইসক্রিম খাওয়ালেই আইসক্রিমের মতো গলে যায় ।
ওদের উত্তর শুনে আবরন বলল ,
– ধুর !! তোদের প্রশ্ন করাটাই ভুল হয়েছে ।
এই বলে আবরন আবারো পূর্ণতা আর প্রেনার পেছন পেছন এগিয়ে গেল । আয়মান , ফাহিম আর তাসিন ও পেছন পেছন গেল ।
পূর্ণতা আর প্রেনা বেনারসি পট্টি থেকে বের হয়ে পাশের গলির মার্কেটে গেল । এই দিকটায় সব জুয়েলারি আর অর্নামেন্টস এর দোকান । ওরা একটা দোকানে প্রবেশ করলো শাড়ির সাথে ম্যাচিং কিছু অর্নামেন্টস নেবে বলে ।
প্রেনা ভেতরে ঢুকেই পছন্দ মতো কানের দুল , গলার সেট , চুড়ি ইত্যাদি ইত্যাদি নিতে লাগল । পূর্ণতা এত ভারি জিনিস পড়তে পারে না , তাই দাঁড়িয়ে ভাবছে কি নিবে ?
আবরন প্রেনাকে বলল ,
– প্রেনা , পুরো মার্কেটই তো কিনে নিচ্ছো , বান্ধবী কে ও পছন্দ করে দাও কিছু !
প্রেনা বলল ,
– ভাইয়া , ও এসব পড়ে না আমি জানি । তাই আমি আগে নিচ্ছি ।
আবরন পূর্ণতার দিকে এগিয়ে গিয়ে বলল ,
– তুমি কি আমার সাথে একটু যাবে ?
পূর্ণতা ভ্রু কুচকে বলল ,
– কোথায় ?
– চলোই না ।
– কিন্তু প্রেনা !!
– প্রেনা আছে এখানে । ওর সাথে আয়মান , ফাহিম , তাসিন আছে । চিন্তা করো না ।
পূর্ণতা আবরনের সাথে যেতে রাজি হতেই আবরন ওর হাত ধরে এই দোকান থেকে বের হয়ে অন্য দিকে যেতে লাগল ।
পূর্ণতার কেমন যেন ফিল হচ্ছে । এই প্রথম ওর হাত কোনো ছেলে নিজের হাতের ভেতর মুষ্ঠিবদ্ধ করে নিয়েছে । যেন সেই মুষ্ঠিতে অন্য কেউ আঘাত করলেও তা ওর নিজের হাতে লাগবে না । পূর্ণতা আবরনের দিকে তাকিয়ে হেঁটে চলেছে আর ভাবছে ,
– এমন কেন এই লোকটা ? মাঝে মাঝে ঠান্ডা বরফের মতো আবার মাঝে মাঝে আগুনের লাভার মতো । এত কেন কেয়ার করছে আমার ? কেন এত জড়িয়ে যেতে চাচ্ছে আমার সাথে ? কেন ?
মনে এমন হাজারো প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে পূর্ণতার । এরই মধ্যে আবরন ওকে নিয়ে একটা সবচেয়ে বড় দোকানে হাজির হলো । দোকানটি তিন তলা পর্যন্ত । আবরন ওকে নিয়ে সরাসরি তিন তলায় এসেছে । আবরন ওর হাত ছেড়ে দিয়ে বলল ,
– নাও , এবার নিজের পছন্দের জিনিস নিয়ে নাও ।
পূর্ণতা আবরনের কথায় নিজের ভাবনা থেকে বের হয়ে চার পাশটা তাকিয়ে দেখলো । এখানো শত শত ডিজাইনের চুড়ি । রেশমি চুড়ি থেকে শুরু করে গর্জিয়াস মোটা ভারি চুড়ি সবই আছে । পূর্ণতা কালো আর লাল রেশমি চুড়ি নিল দু মুঠো । আর এক জোড়া বালা নিল আরেক হাতে পড়তে । এরপর গলার সেট পছন্দ করতে অন্য দিকটায় গেল । পূর্ণতা অনেক গুলো গলার সেট দেখলো কিন্তু সবই একটু গর্জিয়াস । আবরন দোকানের স্টাফকে বলল ,
– ব্রো , কাইন্ডলি চিকনের ভেতর সুন্দর ইউনিক ডিজাইনের কিছু দেখান । শুধু সোনালি হতে হবে ।
লোকটা ভেতর থেকে বের করে দিল । সেখান থেকে পূর্ণতা কে চয়েস করতে বলল আবরন ।
পূর্ণতা কিছু একটা ভাবতে ভাবতে হঠাৎ করে আবরনকে বলেই ফেলল ,
– শাড়িটা যেহেতু আপনি পছন্দ করে দিলেন , এটাও আপনি ই একটা পছন্দ করে দিন না । আমাকে সবসময় আম্মুই পছন্দ করে দেয় । আমি নিজে কখনো পছন্দ করে কিছু কিনি নি ।
আবরন বিনয়ের সাথে হেসে অনেক গুলো সেট ঘেটে একটা সেট পছন্দ করলো যেটাতে গলার হাড়ের সাথে এক জোড়া এডজাস্ট কানের দুলও আছে ।
কানের দুলটা মিডিয়াম সাইজের ঝুমকার মধ্যে, আর গলার হাড়টা চিকনের মধ্যে , কিছুটা সিতার হাড়ের মতো । পূর্ণতা মনে মনে ভাবছে ,
– বাহ , চয়েস তো দেখছি সবই মাশাআল্লাহ । তাহলে উনি ঐ শাকচুন্নি কে নিজের হবু হিসেবে কি করে চুজ করলেন !! আশ্চর্য !!
ওর ভাবনার মাঝেই হঠাৎ আবরন ওর পেটের দিকে ছুঁতেই পূর্ণতা কেপে উঠে দেখল আবরন ওকে একটা বিছা পড়াচ্ছে । আবরন বিছাটা কোমড়ে পড়িয়ে দিয়েই পূর্ণতা কে জিজ্ঞেস করল ,
– সুন্দর না ? এটাও নিয়ে নাও । আর কিছু নিতে হবে না ।
পূর্ণতা মাথা নাড়ল । আবরন ওর কোমড় থেকে আবার বিছাটা খুলে নিয়ে স্টাফের হাতে দিয়ে বলল ,
– এগুলো সব প্যাক করে দিন ।
সব প্যাক করে দিতেই পূর্ণতা বিল পরিশোধ করে প্যাকেট গুলো হাতে নিল । আবরন ওর থেকে প্যাকেট গুলো নিয়ে নিজের বাম হাতে নিল আর ডান হাত দিয়ে আবারো পূর্ণতার হাত মুষ্ঠিবদ্ধ বদ্ধ করে হাঁটতে লাগল ।
প্রেনা ও বিল পরিশোধ করে বেরিয়ে দেখল বাহিরে আয়মান দাঁড়িয়ে । প্রেনা এগিয়ে গিয়ে বলল ,
– বাকিরা কোথায় ?
– ওরা গাড়ির সামনে । চলো ।
প্রেনা আর আয়মান গেল গাড়ির কাছে ।
সবাই একসাথে হতেই আবরন বলল ,
– লেডিস ফার্স্ট বলে তোমাদেরটা আগে
শেষ করলাম । এখন আমরা কিনবো ।
পূর্ণতা বলল ,
– কি কিনবেন ?
– পাঞ্জাবি । কাল আমাদেরও পাঞ্জাবি পড়তে হবে কালো রং এর ভেতর লাল কাজ করা ।
প্রেনা বলল ,
– সবাইকে কি একই রং দেওয়া হয়েছে ?
আয়মান বলল ,
– না । ভার্সিটির সিনিয়র এবং জুনিয়রদের সেইম রং দেওয়া হয়েছে আর ২য় বর্ষ আর ইন্টার্নির নতুন স্টুডেন্টস দের এক কালার দেওয়া হয়েছে । আর ৩য় এবং ৪র্থ বর্ষ দের অন্য আরেক কালার ।
– ও আচ্ছা । এই জিনিস গুলো খুব ভালো লেগেছে । দেখতে সুন্দর লাগবে কাল সবাইকে ।
তাসিন বলল ,
– শুধু তাই নয় ! কালকে সিট প্ল্যানিং ও করা হয়েছে । যে যার যার মতো বসতে পারবে না । সেখানে ভাগ আছে । সৌন্দর্যের জন্য এমনটা করা ।
ফাহিম বলল ,
– কালকের দিনটার জন্য আর সহ্য হচ্ছে না !!
কিন্তু আমি আগেই বলে দিচ্ছি , ডেকোরেশনের কোনো কাজে কিন্তু আমি যাবো না । আমার বেলাতেই শুধু কুফা লাগে আর আকাম হয় ।
ওর কথা শুনে সবাই হাসতে লাগল ।
আবরন বলল ,
-এখন গাড়িতে উঠ । ১০ নাম্বারে যাবো পাঞ্জাবি কিনতে ।
ফাহিম , আয়মান আর তাসিন একদম পিছনের সিটটায় বসল । মাঝে প্রেনা আগে আগে বসল । পূর্ণতা আবরনকে উদ্দেশ্য করে ড্রাইভিং সিটের পাশের সিটেই আবার বসতে বসতে বলল ,
– আপনি তো আবার উবারের ড্রাইভার নন । আমাকেই তো সামনে বসতে হবে ।
আবরন হেসে গাড়িতে বসতে বসতে বলল ,
– যাক , ঘিলুতে তাহলে একটু হলেও বুদ্ধি হয়েছে । কিন্তু একটা জিনিস কিন্তু তুমি ভুলেই গিয়েছো ।
পূর্ণতা ভ্রু কুচকে বলল ,
– কি জিনিস ?
আবরন ঠোঁটে বাকা হাসি দিয়ে ওর কাছে আসতে লাগল ।
পূর্ণতা চোখ বড় বড় করে তাকালো ।
আবরন হঠাৎ করে ওর কাধের ওপর থেকে সিট বেল্ট টা টেনে নিয়ে লাগিয়ে দিয়ে বলল ,
– এটা ভুলে গিয়েছিলে ।
ওদের দুজনের কাহিনী দেখে ফাহিম গান গাইতে শুরু করলো ,
– কথা হবে , দেখা হবে , প্রেমে প্রেমে মেলা হবে , কাছে আসা-আসি আর হবে না !!
চোখে চোখে কথা হবে ঠোঁটে ঠোঁটে নাড়া দেবে ভালো বাসা-বাসি আর হবে না !!
শত রাত জাগা হবে , থালে ভাত জমা রবে , খাওয়া-দাওয়া কিছু মজা হবে না ।।
হুট করে ফিরে এসে লুট করে নিয়ে যাবে , এই মন ভেঙ্গে যাবে জানো না ??
আমার এই বাজে স্বভাব , কোনোদিন যাবে না ।।
আমার এই বাজে স্বভাব কোনোদিন যাবে না !!
এই টুক গাইতেই প্রেনা সহ আয়মান , তাসিন হুহা করে হেসে উঠলো ।
পূর্ণতা ব্যাপারটা বুঝেও না বুঝার ভান করে বসে রইল ।
আবরন মুচকি হেসে গাড়ি টান দিল । গন্তব্য মিরপুর ১০ ।
১০ মিনিটেই ওরা পৌছে যেতেই একটা বড় শপিং মলে প্রবেশ করলো ।
আবরন একটা একটা করে ডিসপ্লে করা পাঞ্জাবি দেখছে । তারপর সেখান থেকে একটা কালো রং এর মধ্যে বুকের কাছে লাল এবং সোনালি সুতোর কাজ করা পাঞ্জাবি পছন্দ করে ট্রায়াল রুমে গিয়ে সেটা পড়ে বাহিরে বেরিয়ে এলো । বাহিরে বের হতেই ওকে দেখে যেন পূর্ণতা আরেক দফা ক্রাশ খেল ওর উপর ।
আবরন বিষয়টা খেয়াল করে সকালের মতো আবারো ওর কাছে আসতে আসতে বলল ,
– আমার মত “কাউয়ার” উপর আবারো ক্রাশ খেলে বুঝি !!
পূর্ণতা ভেংচি কেটে বলল ,
– আমি কাউয়ার উপর কেন ক্রাশ খেতে যাবো ?? হুহ !!
– কারন তুমি কাউয়ার বউ ।
এই বলে দাঁত কেলিয়ে হেসে নিজেকে আয়নায় দেখে বলল ,
– দেখো তো কেমন লাগছে ??
পূর্ণতা বলল ,
– সুন্দর ।
– তারমানে ক্রাশ তুমি খেয়েছো কিন্তু বলছো না । থাক , সেটা নাহয় সময় হলেই জেনে নেব ।
এই বলে সেখান থেকে চলে গেল আবার চেঞ্জ করতে ।
পূর্ণতা মনে মনে ভাবছে ,
– এই লোকটা পাগল করে দিচ্ছে । ছেলেদের এতো সুন্দর হওয়ার কি কোনো দরকার ছিল !! আর উনার এমন ভাব সাব দেখে তো দিনে ১০০ বার ক্রাশ খাবে সবাই , এটাই স্বাভাবিক । না পারছি বলতে আর না পারছি সইতে !! ধুর !!
অবশেষে সবাই পছন্দ মতো পাঞ্জাবি নিয়ে টাকা পে করে যার যার গন্তব্যে চলে গেল । বাকি রইল প্রেনা , পূর্ণতা আর আবরন ।
আবরন প্রেনা আর পূর্ণতা কে নিয়ে রওনা হলো প্রেনাদের বাসার উদ্দেশ্যে । পূর্ণতা প্রেনাদের বাসায় থাকবে , তাই ওদের ঠিক বাসার সামনে নামালো । প্রেনা আর পূর্ণতা চলে যাচ্ছিল কিন্তু তখন আবরন গাড়ির গ্লাস নামিয়েই পূর্ণতা কে পেছন থেকে ডাক দিল । প্রেনা ইচ্ছা করেই ওদের রেখে ভেতরে চলে গেল । পূর্ণতা গাড়ির সামনে এসে দাঁড়াতেই আবরন বলল ,
– কাল বেশি সেজো না । যা কিনেছো শুধু সেগুলোই পড়ে নিও ।
পূর্ণতা বলল ,
– কেন ?
আবরন কি বলবে ভেবে না পেয়ে বলল ,
– কারন বেশি সাজলে তোমাকে কাউয়ার বউ বলে মনে হবে ।
পূর্ণতা গাল ফুলিয়ে বলল ,
– ধুর !!
আবরন বলল ,
– আচ্ছা যাও এখন ।
পূর্ণতা চলেই যাচ্ছিল । তখন আবরন আবার ওকে ডাক দিল ।
পূর্ণতা বলল ,
– উফফফ , আবার কি ?
– ভুলেই গিয়েছিলাম । তোমার ফোন নাম্বারটা দাও তো !!
– ফোনই তো নেই , ফোন নাম্বার কি করে দেব ?
– মিথ্যা বলে লাভ নেই । আন্টিই বলেছে তোমার ফোন নাম্বার নিয়ে রাখতে । জলদি দাও ।
পূর্ণতা রেগে বলেই দিল ,
– ফোন কি করে থাকবে ? সেটা তো আপনার হবু ফিওন্সে নিয়ে নিয়েছে ।
আবরন গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়িয়ে বলল ,
– মানে ??
পূর্ণতা বলল ,
– মানে ঐ সিনিয়র আপু লম্বা করে দেখতে , পেত্মীর মতো , ও নিয়েছে ।
– জলের কথা বলছো ??
– আমি নাম জানি না । এখন গেলাম !!
আবরনের চোখ মুখ লাল হয়ে গেল এই কথা শুনে , ও রেগে আগুন হয়ে বাসার উদ্দেশ্য নিয়ে রওনা হলো ।
#চলবে♥️
বিঃদ্রঃ এখন থেকে এই সময়ই গল্প পাবেন । আজ একটু বড় করে দিতে চেষ্টা করেছি । কার কেমন লেগেছে জানাতে ভুলবেন না । ভুল ত্রুটি মার্জনীয় । ধন্যবাদ । ♥️