#ভালোবাসি_বলেই_তো ♥️
লেখিকা – #আদ্রিয়া_রাওনাফ
পর্ব – ১১
রাত ১২:৩০ টা ,
পূর্ণতার ঘুম আসছে না কিছুতেই । বার বার শুধু আজকের ঘটে যাওয়া ঘটনা গুলো মাথায় ঘুর ঘুর করছে । চোখ বন্ধ করতেই বার বার সেই একই অনুভূতি ছবির মতো ভেসে উঠছে ।
স্টেজে গান গাওয়ার প্রথম এক্সপেরিয়েন্স যে এতটা রোমাঞ্চকর হবে তা পূর্ণতা ভাবতেই পারে নি ।
পুরোটা গান ই পূর্ণতা আবরনের কথা মতো ওর দিকে তাকিয়েই গেয়েছে ।
সবার এত হৈ চৈ আর অন্ধকারে ফ্লাস লাইটের আলো সেই মূহুর্তটাকে আরো বেশি সুন্দর করেছে ।
গান গেয়ে স্টেজ থেকে নামতেই আবরন ওকে বলেছিল ,
– গানের প্রথম লাইন গুলো কিন্তু আজকের মূহুর্ত্তের জন্য সত্যি ছিল ।
পূর্ণতা শুধু হেসেছিল । জিব্রান তখন আবরনকে গিয়ে জড়িয়ে ধরে বলেছিল এই প্রথম আমার বোনটাকে ম্যান্দা মার্কা মনে হয় নি । থ্যাংকস টু ইউ ।
আবরন তখন বলেছিল ,
– তুমি চাইলে আমি ওকে ফুল ফিল ট্রেনিং দিতে রাজি আছি ।
– হ্যা , কেন চাইবো না !! একমাত্র তুই ই পারবি ওকে অল ইন ওয়ান বানাতে । আমার বিশ্বাস আছে । আমি চলে গেলে ওকে দেখে রাখিস , আম্মু তো একা একা সব সামলাতে পারবে না রে ।
আবরন বলেছিল ,
– তুমি চিন্তা করো না ভাইয়া । আমি সব সামলে নেব ।
পূর্ণতা এসব কথা ই শুয়ে শুয়ে ভাবছিল । তারপর মনে মনে নিজেকে প্রশ্ন করল ,
– কেন এত ভাবছিস পূর্ণ ?? কেন ?? এমন তো না যে তুই ওকে পছন্দ করতে শুরু করেছিস ??
হঠাৎ ভাবনার মাঝেই পূর্ণতার ফোনটা বেজে উঠলো । ভাবনা থেকে বেরিয়ে পূর্ণতা ফোনটা বেড সাইড টেবিল থেকে নিয়ে দেখল আবরন কল দিচ্ছে ।
ফোন রিসিভ করার আগে উপরে স্ক্রিনে সময় পৌনে একটা দেখে পূর্ণতা ভরকে গেল । তারপর কল টা রিসিভ করে কানে দিতেই ঐপাশ থেকে শোনা গেল ,
– এতক্ষন লাগে কলটা রিসিভ করতে ?? আমাকে এক্সকিউজ দেবে না যে তুমি ঘুমাচ্ছিলে , কজ আই নো দ্যাট , তোমার চোখে ঘুম নেই । ফোন দেড়ি করে তুললে কেন তা বলো !!
পূর্ণতা শোয়া থেকে উঠে বসে বলল ,
– যখন আমার সব উত্তর ই আপনার জানা তাহলে নিশ্চয়ই এটাও জানার কথা ছিল যে আমি কেন দেড়ি করে কল টা রিসিভ করলাম ??
আবরন বলল ,
– বাদ দাও । বারান্দায় এসো একটু ।
পূর্ণতা ৪৪০ ভোল্টের ঝটকা খেয়ে চোখ বড় বড় করে বলল ,
– মানে ??
আবরন ধমকের সুরে বলল ,
– তুমি সবসময় বেশি বেশি প্রশ্ন করো !! বারান্দায় এসো !!
পূর্ণতা জলদি জলদি বিছানা থেকে নেমে বারান্দার দরজা টা খুলে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়াতেই দেখল নিচে রাস্তায় আবরন দাঁড়িয়ে আছে । রোড ল্যাম্পের আলোতে ওকে একটু অন্যরকম দেখাচ্ছে ।
আবরন নিচ থেকে পূর্ণতা কে দেখেই হাত তুলে “হাই ” দিল ।
পূর্ণতা দেখে বলল ,
– আপনি এত রাতে কেন এসেছেন ?
– এমনি !
– একা এসেছেন ?
– উহু , সাথে ফাহিম আর তাসিনের ঘুম নষ্ট করিয়ে ওদের নিয়ে এসেছি ।
পূর্ণতা বিরক্ত হয়ে বলল ,
– কিন্তু কেন ?? এক্ষুনি চলে যান ।
– কেন যাবো ?
– কারন আমি বলেছি ।
– তুমি বললে কেন যাবো ? কি লাগো তুমি আমার যে তোমার কথা শুনতে হবে ??
– কিছুই লাগি না । সত্যি করে বলেন তো রাত বিরাতে এমন কয়জন মেয়ের বাড়ির সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন ??
– একজনের ও না । এই প্রথম । আমি আবরন চৌধুরী কিনা কারো বাসার সামনে গিয়ে রাতের বেলা দাঁড়িয়ে মশার কামড় খাবো !! কি করে ভাবতে পারো তুমি এটা ?
– উউউহহহ !! হঠাৎ এত ভাব নিয়ে চৌধুরীর ছেলে আপনি তা শোনাচ্ছেন কেন ??
– তোমাকে বোঝাতে !
– কি বোঝাতে ??
– কিছু না । আমি গেলাম ।
-তো ধরে রেখেছে কে ?? যান না !
– যাবোই তো , কিন্তু শোনো !
-কি শুনবো ?
– কালকে একটা সারপ্রাইজ আছে । রেডি থেকো ।
– সেটা কি ?
– বলা যাবে না ।
– ধুর
আবরন হেসে বলল ,
– সারপ্রাইইইইজ !!
পূর্ণতা ফোন টা কেটে দিল ।
আবরন হেসে ওকে বায় দিয়ে কারে উঠে বসলো । ফাহিম আর তাসিন কারেই বসা ছিল এতক্ষন । ওরা দুইজন কারের পেছন সিটে ঘুমাচ্ছে । আবরন দুষ্টুমি করে ওদের ছবি তুলে পূর্ণতা কে পাঠালো । পূর্ণতা ছবি দেখে হাসলো । আবরনকে চলে যেতে দেখেই পূর্ণতা আবার দরজাটা লাগিয়ে রুমে চলে গেল ।
বিছানায় গিয়ে বসতেই ওর শরীর কাপতে লাগল । হার্টবিট বেড়ে গেল ।
মনে মনে ভাবছে ,
– এমন কেন হয় বার বার ? যখন কথা বলি তখন তো এসব থাকে না , পরে এমন হওয়ার মানে কি ??
পূর্ণতা এসব ভাবতেই হঠাৎ ওর জলের বলা কথা গুলো মনে পড়ল । তারপর আবার মনে পড়ল আবরন ওকে বলেছিল , আশেপাশের কারো কোনো কথায় কান দিতে না , কারন হিংসে তারাই করে যখন কেউ তার চেয়ে উপরে উঠে যায় ।
এসব ভাবতে ভাবতেই ঘুমিয়ে গেল ।
……….………….……………………………
আবরন গাড়িটা গ্যারাজে পার্ক করে ফাহিম আর তাসিনকে সাথে নিয়ে আস্তে করে মেইন ডোরের এক্সট্রা কি দিয়ে ডোর আনলক করে পা টিপে টিপে নিজে ঘরে ঢুকে ফাহিম আর তাসিনকে ও ঘরে ঢুকতে ইশারা করলো বিনা শব্দে । ওরা ঘরে ঢুকতেই আবরন আস্তে করে দরজাটা লক করে পা টিপেই নিজের ঘরের দিকে এগিয়ে গেল ফাহিম আর তাসিনকে নিয়ে । অন্ধকারে ওদের নিয়ে আবরন নিজের রুমে প্রবেশ করে আস্তে করে দরজা লাগিয়ে দিয়ে লাইট অন করে পেছনে ঘুরতেই তিনজনে ভুত দেখার মতো স্বজোরে চিৎকার করে উঠল । আধিরা আনজুম ঘর ঝাড়ু হাতে নিয়ে ওদের দিকে শকুনের মতো চোখ করে তাকিয়ে আছে । আবরন , ফাহিম , তাসিন এই মূহুর্তে তার শিকার । আবরন তোতলাতে তোতলাতে বলল ,
– আ আ আম্মু ।। ত ত তুমি এত রাতে এ এ এখানে কি করছো ?
আধিরা আনজুম বললেন ,
– তোরা আগে বল কোথায় গিয়েছিলি এত রাতে চুরি ডাকাতি করতে ??
ফাহিম আধিরা আনজুমের দিকে এগিয়ে গিয়ে কাদো কাদো ফেস করে বলল ,
– আন্টি , তোমার ছেলে রাত করে আমাদের ঘুম থেকে উঠিয়ে এই হরতালেও টেম্পু চালাতে নিয়ে গিয়েছিল ।
তাসিন ও আধিরা আনজুমের দিকে এগিয়ে গিয়ে বলল ,
-হ্যা , আন্টি , তোমার ছেলে আমাদের ঘুম নষ্ট করে চুরি করতে নিয়ে গিয়েছিল ।
আবরন ওদের দুইজনের দিকে রাগি রাগি চোখ নিয়ে তাকাতেই ওরা বলল ,
– দেখো দেখো আন্টি !! কেমন কেমন করে তাকাচ্ছে আমাদের দিকে যেন চোখ দিয়েই আমাদের গিলে খাবে ।
আধিরা আনজুম বললেন ,
– বল কোথায় গিয়েছিলি ? কি চুরি করতে গিয়েছিলি ??
আবরন জোড়পূর্বক হেসে বলল ,
– ইয়ে মানে , মন !
আধিরা আনজুম বললেন ,
– তা আমার ছেলে কার মন চুরি করে আনলো ?
আবরন ঠোঁট উল্টিয়ে বলল ,
– আজ ও পারি নি ।
– তোকে পই পই করে গত পরশু বলেছি আমাকে ওর সাথে দেখা করাতে , তা তো করালি ই না , কাল সারা সময় একসাথে ছিলি ,এখন আবার রাত করে গিয়েছিস ওকে দেখতে !!
– ইয়ে মানে আম্মু !! আজ সকালে ওকে আনবো , সেটাই ওকে বলতে গিয়েছিলাম যে তোমার জন্য সারপ্রাইইইইজ আছে ।
আধিরা আনজুম বললেন ,
– তোর ফোনটা দে !
– কেন ?
– দিতে বলছি দিবি !!
আবরন পকেট থেকে ফোনটা বের করে আধিরা আনজুমের দিকে বাড়িয়ে দিল ।
আধিরা আনজুম ফোনটা নিয়ে ওর দিকে এগিয়ে বলল ,
– সর , আমি বের হবো ।
আবরন সরে দাঁড়াতেই আধিরা আনজুম দরজা খুলে ওর রুম থেকে বের হয়ে যেতে যেতে বলল ,
– তোকে আর ফোন দিব না । ফোন থাকতে যখন ম্যাসেজ করে বা কল করে ওকে জানাতে পারিস নি যে সারপ্রাইজ আছে , ওর বাসার সামনে গিয়ে তোর জানাতে হলো তাহলে তোর ফোনের কি দরকার ?? এটা থাক আমার কাছেই আমানত ।
আবরন বলল ,
– লক্ষি আম্মু , এমন করে না প্লিজ 🥺
আধিরা আনজুম কথা না শোনার ভান করে নিজের রুমে চলে গেলেন ।
ফাহিম আবরনের দিকে এগিয়ে এসে বলল ,
– দোস্ত , তুই আমার ফোনটা নিয়ে নে , তবুও কাদিস না ।
এই বলে নিজের ফোনটা এগিয়ে দিল আবরনের দিকে ।
আবরন রেগে ওকে কিল ঘুষি মারতে মারতে বলল ,
– আমার নামে বিচার দিয়ে এখন আসছোস সহানুভূতি দেখাতে , তোর আজকে খবর আছে ।
তাসিন বলল ,
– ভাই , মাফ কর ভাই । এমন করিস না !!
– নে , তুই ও মাইর খা ।
এই বলে দুইজনকেই ইচ্ছামতো মারতে লাগলো ।
আবরন হয়রান হয়ে খাটে বসে যেতেই তাসিন আর ফাহিম দৌড়ে গিয়ে গেষ্ট রুমে ঢুকে পড়ল । কারন ওদের আর মাইর খাওয়ার ইচ্ছা নেই ।
………………………………………………..
সকাল ১০ টা ,
পূর্ণতা ঘুম থেকে উঠেই ফ্রেশ না হয়ে চোখ ডলতে ডলতে রান্নাঘরে গেল । সেখানে গিয়ে মিলি রহমানকে না পেয়ে জিব্রানের রুমটা খোলা দেখতে পেয়ে সেদিকে এগিয়ে গেল ।
জিব্রানের দরজার কাছাকাছি যেতেই হাসির আওয়াজ শোনা গেল । মিলি রহমান সেখানে আছেন বুঝতে পেরে রুমের ভিতর ঘুমু ঘুমু চোখ নিয়েই ঢুকে গেল । তারপর চোখ বন্ধ করেই বলল ,
– আম্মুউউউউ !!
মিলি রহমান তাকিয়ে বলল ,
– একি , ফ্রেশ না হয়ে চলে এসেছিস !! যা , ফ্রেশ হ ।
জিব্রান বলল ,
– তোর ছোট বেলার অভ্যাস এখনো যায় নি তাহলে । মাঝে মাঝেই এমন করিস ।
আবরন এসেছে পূর্ণতা কে ওদের বাসায় নিয়ে যেতে । তাই ও জিব্রানের রুমে বসে এই ব্যাপারেই মিলি রহমান আর জিব্রানের সাথে কথা বলছিল ।
হঠাৎ পূর্ণতা কে এমন অগোছালো চুল আর ঘুমু ঘুমু ফেস নিয়ে রুমে আসতে দেখে ওর দিকে এক নজরে তাকিয়ে ভাবছিল ,
– তুমি এত্ত কিউট কেন পূর্ণ ?? মাঝে মাঝে আমারই কেন যেন জেলাস হয় !!
মিলি রহমান বললেন ,
– আবরন এসেছে তোকে নিতে !
এই কথা শুনে পূর্ণতা চোখ খুলে বড় বড় করে তাকিয়ে বলল ,
– কোথায় উনি ! কেন এসেছে ?
জিব্রান বলল ,
– তুই কি কানা ? এই যে আমার পাশে বসা !!
পূর্ণতা ওর দিকে তাকাতেই আবরন দুষ্টুমি করে সবার দৃষ্টি এড়িয়ে ওকে চোখ টিপ মারলো । পূর্ণতা এইটুকু দেখেই সেখান থেকে ছুটে নিজের রুমে চলে গেল ।
পূর্ণতা ফ্রেশ হচ্ছে আর আবরনের চৌদ্দ গোষ্ঠি উদ্ধার করছে । ফ্রেশ হয়ে বের হতেই মিলি রহমান ওর রুমে এসে বলল ,
– আবরন তোকে এক জায়গায় নিয়ে যাবে , সুন্দর করে রেডি হয়ে নাস্তা খেতে আয় ।
পূর্ণতা মুখ টাওয়াল দিয়ে মুছতে মুছতে বলল ,
– আম্মু একটা কথা বলি !
মিলি রহমান ভ্রু কুচকে বলল ,
– বল !
– তোমরা কি উনাকে একটু বেশি ই ভরসা করছো না ? এগুলো কি না করলেই নয় ??
মিলি রহমান বললেন ,
– কেন তুই করিস না ভরসা ?
পূর্ণতা চুপ করে রইল । ওর মুখ থেকে উত্তর না পেয়ে মিলি রহমান হালকা হেসে বললেন ,
– আমাকে আর জিব্রানকে বিশ্বাস করিস তো ??
পূর্ণতা হ্যা সূচক মাথা নাড়ল ।
মিলি রহমান বললেন ,
– ছেলেটা ভালো , ওর ভবিষ্যত ও ভালো । তোকে কেয়ার করে খুব । আমাদের সম্মান করে । আর কি লাগে বল ? দেখতে ও তো মাশাআল্লাহ !! একটা পারফেক্ট ছেলের মধ্যে যা যা থাকা দরকার সবই তো ওর আছে । যেমন নম্র – ভদ্র , তেমনি অহংকার বোধ বিহীন । ওর ওপর আস্থা করা যায় । তুই চাইলেই পারিস । এখন এসব কথা বাদ দিয়ে , তৈরি হয়ে নে ।
মিলি রহমান চলে যেতেই কথা গুলো ওর কানে বার বার বারি খেতে লাগল । আনমনে আলমারি থেকে একটা সাদা চিকেন কাপড়ের গোল ফ্রক আর সাদা চুরিদার পায়জামা পড়ে একটা মাল্টি কালারের হাফ সিল্কের চুন্ডি ওরনা পড়ে নিল । তারপর মুখে একটু হালকা পাউডার লাগিয়ে একটা বেবি পিংক কালারের লিপ গ্লোজ দিয়ে নিল । তারপর চুলটা ফ্রান্স বেনী করে নিয়ে হ্যান্ড ব্যাগ নিয়ে নিজের রুম থেকে বের হয়ে ডায়নিং রুমে গেল ।
জিব্রান আর আবরন বসার ঘরে বসে আড্ডা দিচ্ছিল । পূর্ণতার খেতে দেড়ি হবে বলে মিলি রহমান ওকে নিজের হাতে জলদি জলদি খাইয়ে দিয়ে বললেন ,
– যা । আর সাবধানে থাকিস ।
পূর্ণতা মাথা নেড়ে শু র্যাক থেকে এক জোড়া সাদা জুতো হাতে নিয়ে বসার ঘরের সামনের ডোর দিয়ে বের হতে লাগল । আবরন ওকে দেখে জিব্রানের সাথে কথা শেষ করে নিজেও বের হতে লাগল । জিব্রান পূর্ণতা কে বলল ,
– ওর সাথেই কারাতিতে চলে যাস !!
পূর্ণতা মাথা নাড়ল ।
আবরন পূর্ণতা কে উদ্দেশ্য করে বলল ,
– চলো ।
জিব্রান আর মিলি রহমান দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বলল ,
– আল্লাহ হাফেজ ।
– আমার বোনটার খেয়াল রাখিস আবরন ।
আবরন নিচে নামতে নামতে বলল ,
– চিন্তা করো না ।
নিচে নেমে পূর্ণতা গাড়িতে উঠে বসতেই আবরনও ড্রাইভিং সিটে গিয়ে বসে ডোর লক করে সিট বেল্ট বেধে পূর্ণতার দিকে তাকালো । পূর্ণতা সিট বেল্ট না বেঁধে চুপ চাপ বসে আছে ।
আবরন ওর দিকে এগিয়ে ওর সিট বেল্ট টা বেঁধে দিয়ে বলল ,
– মুড অফ ??
পূর্ণতা আবরনের দিকে তাকিয়ে বলল ,
– আপনি কি আমাকে নিয়ে একটু বেশিই চিন্তা করছেন না ? আই মিন , বেশি কেয়ার করছেন না ?? আপনি তো নিজেই বলেন যে আপনার কাউকে নিয়ে ভাবার এত টাইম নেই বা কোনো মেয়েকে এত কেয়ার করার সময় নেই !! তাহলে আমার বেলায় ঠিক এর উল্টোটা কেন বলবেন ??
আবরন কিছুক্ষণ ওর দিকে তাকিয়ে চুপ করে থেকে একটু মুচকি হাসার চেষ্টা করে বলল ,
– উত্তরটা আমার নিজেরই জানা নেই । হয়তো সময়ের সাথে সাথে এর উত্তরটা জেনে যাবো , তখন তোমাকে জানাতে সক্ষম হবো ।
পূর্ণতা কিছু বলল না ।
আবরন ড্রাইভিং করতে করতে কিছুক্ষণ নীরবতা পালন করল । পূর্ণতা ও চুপ ছিল । তবে আড় চোখে কয়েকবার আবরনকে খেয়াল করেছিল । পূর্ণতা কিছু একটা ভেবে আবরনকে নিজ থেকেই জিজ্ঞেস করল ,
– আমার জন্য যে সারপ্রাইজ টা রেখেছেন সেটা কখন দিবেন ?
আবরন ওর দিকে না তাকিয়েই বলল ,
– ধৈর্য্য ধারন করো !!
পূর্ণতা বুঝল যে কোনো কারনে আবরনের মুড ও এখন অফ হয়ে গিয়েছে । পূর্ণতার নিজেরই গিল্টি ফিল হচ্ছে । আবরনকে আবার আগের মুডে আনতে পূর্ণতা ইচ্ছে করেই বলল ,
– এই যে মিঃ কাউয়্যা !! আমাকে ড্রাইভিং শেখাবেন বলেছিলেন !!
আবরন কিছু বলল না । পূর্ণতা ব্যাপারটা বুঝতে পেরে সাহস করে নিজের কাপা কাপা হাতটা আবরনের গিয়ার কনট্রোলারের উপর থাকা হাতটার উপর রাখলো ।
আবরন ওর দিকে কিঞ্চিত ভাব নিয়ে তাকিয়ে বলল ,
– সূর্য কোন দিকে উঠলো বলোতো ?
– কেন !! প্রতিদিন যেদিক দিয়ে উঠে !
আবরনের রাগ অভিমান সব ধুয়ে গিয়েছে পূর্ণতার এমন বিহেইভে । মনে মনে ভাবল ,
– মিসঃ কাউয়্যার বউ , আমার মান অভিমান তোমার ভালো লাগে না , তা আজ প্রমান করে দিলে !! সময় হলে বুঝিয়ে দেব পই পই করে যে তুমি আর আমি একে অপরের জন্য তৈরি ।
এসব ভেবে নিজের হাতটা পূর্ণতার হাতের উপর রেখে ড্রাইভিং শুরু করল ।
কিছুক্ষণ পরে আবরন একটা রেস্টুরেন্টের সামনে গাড়ি টা থামালো । পূর্ণতা ভ্রু কুচকে বলল ,
– এখানে কেন এলাম !!
আবরন গাড়ি থেকে নেমে পূর্ণতা কে নামতে বলে বলল ,
– ভেতরে চলোই না আগে !!
পূর্ণতা আবরনের সাথে গিয়ে রেস্টুরেন্টের গেইটের সামনে দাঁড়াতেই পূর্ণতা দেখল সেখানে ফাহিম আর তাসিন ও আছে । পূর্ণতা ভ্রু কুচকে আবরনের দিকে তাকিয়ে বলল ,
– এখানেই কি আমার সারপ্রাইজের এরেঞ্জ করা হয়েছে ?
আবরন ঠোঁটে বাকা হাসি দিয়ে বলল ,
– তোমার ভাগ্য ভালো ! আমি তোমার জন্য ১ টা সারপ্রাইজের ব্যবস্থা করেছিলাম কিন্তু প্রকৃতি চাইলো আজ তোমাকে আরো একটা সারপ্রাইজ দিতে । অর্থাৎ , তোমার জন্য দুটো সারপ্রাইজ ওয়েট করছে ।
পূর্ণতার ভাবনার শেষ নেই । ও যেমন এক্সাইটেড তেমনি কিছুটা ভীত । আবরন ওর হাত ধরে রেস্টুরেন্টের ভিতরে প্রবেশ করতেই ……………….
#চলবে ♥️
বিঃদ্রঃ আমার প্রথম লিখা গল্পে এত এত সাপোর্ট পাবো আমি আশাই করি নি । সবাইকে রিকোয়েস্ট !! এভাবেই সাপোর্ট করে যাবেন আশা করি । আর নিয়মিত গল্প পেতে আমার পেইজে ফলো দিয়ে সাথেই থাকুন । ভুল ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন । ধন্যবাদ । ♥️