#ভালোবাসি_বলেই_তো ♥️
লেখিকা – #আদ্রিয়া_রাওনাফ
পর্ব – ২৫
পূর্ণতা আবরনের দিকে তাকিয়ে দেখতেই আবরন পূর্ণতাকে দুই হাত দিয়ে গাল চেপে ধরে ওর দিকে এগিয়ে গেল । পূর্ণতার বুক ভয়ে ধুকপুক ধুকপুক করছে । পূর্ণতা চোখ বন্ধ করে ফেলল । আবরন ঠোঁটে বাঁকা হাসি দিয়ে পূর্ণতার কানের সামনে গিয়ে বলল ,
– ভরসা করতে শিখো মিস. পূর্ণতা জামান । আমি তেমন না যেমন তুমি মাঝেমাঝে আমার বিহেইভ দেখে মনে করে বসো ।
তারপর পূর্ণতার কানে কিছুটা জোরে কামড় দিয়ে বলল ,
– এটা তোমার শাস্তি । দেখো কেমন লাগে কামড় খেতে !! ঐদিন আমার সুন্দর ফেস তুমি কামড়ে কামড়ে লাল করে দিয়েছিলে !!
পূর্ণতা চোখ খুলে তাকিয়ে আবরনের নাকে স্বজোরে কামড় দিয়ে মুচকি হেসে বলল ,
– টিট ফর ট্যাট !!
আবরন পূর্ণতার কান্ড দেখে নাকের আগা ঘষতে ঘষতে বলল ,
– তুমি আগের চেয়ে সত্যিই অনেক চালাক হয়ে গিয়েছো !!
– আগে ম্যান্দা ছিলাম , তাই চালাক হচ্ছি যেন এই কথাটা আর কারো কাছ থেকে শুনতে না হয় ।
আবরন ফোনের ফ্রন্ট ক্যামেরা অন করে নাকের দিকে তাকিয়ে দেখল ,
নাক লাল হয়ে গিয়েছে । আবরন রক্ত চক্ষু করে পূর্ণতার দিকে তাকালো । পূর্ণতা ভ্রু নাচিয়ে বলল ,
– কি সমস্যা ? সুন্দর লাগছে তো !! 😁
আবরন দাঁতে দাঁত চেপে বলল ,
– ওয়েট , বের করছি তোমার সুন্দর দেখানো !!
এই বলে আবরন পূর্ণতার গাল আবারো চেপে ধরে ওর নাকেও একইভাবে কামড় দিয়ে দিল ।
পূর্ণতা গাড়িতে সবাই আছে বলে কোনোরকম শব্দ করলো না । সব শব্দ ভেতরেই জমা করে রাখল । পূর্ণতা আবরনের হাত থেকে ফোনটা টান দিয়ে নিয়ে ক্যামেরায় তাকিয়ে দেখল আবরন ওর নাকটাও লাল করে দিয়েছে ।🤥
তারপর আবরনের দিকে তাকিয়ে দেখল , ও ভ্রু নাচাচ্ছে আর বলছে ,
– কি সমস্যা ? সুন্দর লাগছে তো !! 🤣
পূর্ণতা ফোনটা আবরনের কোলে ছুড়ে দিয়ে বলল ,
– ধুর , অসভ্য লোক কোথাকার !
আবরন হেসে কপালে হাত রেখে চোখ বন্ধ করে রইল ।
পূর্ণতা বাহিরে তাকিয়ে দৃশ্য দেখতে লাগল ।
……………………………………………..
অবশেষে শেষ বিকেলে ওদের মাইক্রোবাস একটা বিশাল বড় গেইট দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করল । গেইটের ভিতরে ঢুকতেই একটা কৃত্রিম ঝর্না । ঝর্না পাড় হয়ে কিছুক্ষণ চলার পর একটা দোতলা ডুপ্লেক্স ডিজাইনের বাংলোর সামনে গাড়ি গিয়ে থামল ।
একে একে সবাই গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়াতেই ৫ জন লোক ওদের ভেতরে ঢুকতে বলে গাড়ি থেকে স্যুটকেস , ব্যাগ নামাতে শুরু করলো । সবাই বাড়ির ভেতরে ঢুকতেই চমকে গেল । বাড়িটা সব দিক থেকে চিকচিক করছে । দামি দামি নিত্য নতুন জিনিস পত্র দিয়ে সাজানো । ঢুকতেই সোফা আর টি টেবিল চোখে পড়ে তার ডান দিকে ডায়নিং স্পেস আর এরপরই কিচেন ।
সোফা বরাবর এক কোনায় ৬৫” ইঞ্চি টিভি লাগানো ।
বাম দিকে একটা সিংগেল ডিভাইন রাখা আর একটা বিশাল বড় বারান্দা । সেখানে এক পাশ জুড়ে বিশাল একুয়ারিয়াম আর অপর পাশটায় বিভিন্ন ছোট ছোট ইনডোর প্লান্টস্ দিয়ে সাজানো । সেখানেও বসে আড্ডা দেওয়ার জন্য বেতের সোফা আর টেবিল দিয়ে সাজানো । সিড়ির পেছন দিকটায় নিচে একটা বেড রুম আছে , সাথে এডজাস্ট বাথরুম । পাশে একটা স্টোর রুম আছে ।
সিড়ি দিয়ে দোতলায় উঠতেই আরো একটা স্পেস যেখানে আরো একটা ৪৮” ইঞ্চি ওয়াল টিভি ফিট করা , সেখানেও সোফা আর টি টেবিল রাখা । এর পর চারপাশে ঘুরিয়ে ৮ টা বেড রুম আছে গেস্ট রুম সহ । একটা লাইব্রেরি রুমও আছে , সেখানে সব বিখ্যাত বইয়ের কালেকশন গুলো ই আছে ।
নীরা , রুহি একটা রুম বেছে নিয়েছে থাকার জন্য । পূর্ণতা আর প্রেনা আরেকটা রুম বেছে নিয়েছে থাকার জন্য । নাদিরা সবার চেয়ে বড় তাই ও নিজের জন্য আলাদা রুম পছন্দ করে নিয়েছে । ফাহিম , তাসিন একটা রুমে ঢুকেছে । আয়মান আর আবরন আরেকটা রুমে ঢুকেছে । জিব্রান একা ঘুমাতে অন্য একটা রুম বেছে নিয়েছে । সবার রুম গুলো পরপর পাশাপাশি একসাথে ।
সবাই যার যার রুমে নিজস্ব কাপড় চোপড়ের ব্যাগ নিয়ে ঢুকেছে ।
পূর্ণতার রাতে ঘুম হয় নি আর গাড়িতেও তেমন একটা ঘুমাতে পারে নি , তাই মাথা ব্যথা করছিল বলে একেবারে শাওয়ার নিয়ে একটা light yellow কালার এর ওপর লাল কাজের ড্রেস , সাথে লাল চুরিদার আর ওরনা পড়ে বাথরুম থেকে বেরিয়ে এলো ।
প্রেনা পূর্ণতা কে দেখে বলল ,
– কিরে ! অবেলায় গোসল করলি যে !!
পূর্ণতা চুল মুছতে মুছতে বলল ,
– মাথা ব্যথা করছিল তাই শাওয়ার নিলাম । এখন একটু ফ্রেশ লাগছে ।
– ঠিক আছে , আমি ফ্রেশ হয়ে আসি ।
পূর্ণতা চুল মুছে টাওয়াল বারান্দায় মেলতে গিয়ে দেখল বারান্দা টা গ্ৰিল বিহীন রেলিং টানা খোলামেলা । ওদের রুমটা বাংলোর পেছন সাইডে । পূর্ণতা বারান্দা থেকে দাঁড়িয়ে দেখল পেছন দিকটার পুরোটাই সবুজ ঘাসের মাঠ ।
দুই পাশে বড় বড় গাছ গাছালি ।
পূর্ণতা বারান্দায় রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে প্রকৃতি বিলাস করতে লাগল ।
………………………………………………..
আবরন শাওয়ার নিয়ে একটা ব্ল্যাক ট্রাউজার আর হোয়াইট টিশার্ট পড়ে বেরিয়ে এলো । টাওয়াল দিয়ে চুলগুলো মুছতে মুছতে বারান্দায় এসে দাঁড়াতেই দেখল বাম পাশের বারান্দায় পূর্ণতা দাঁড়িয়ে আছে ।
আবরন দেখল পূর্ণতার চুল দিয়ে টুপটুপ করে পানি পড়ছে । পূর্ণতার সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই । ও চুপচাপ দাঁড়িয়ে বাহিরের দৃশ্য দেখায় ব্যস্ত । আবরন পূর্ণতা কে বলল ,
– ওও ম্যাডাম ! আপনি কোন ধ্যানে হারিয়ে গিয়েছেন ?? এতক্ষন যাবৎ আমি এখানে দাঁড়িয়ে , একবারও তো তাকালেন না !!
পূর্ণতা আবরনের গলা শুনে ডানদিকে তাকাতেই খেয়াল করলো পাশের বারান্দায় আবরন দাঁড়িয়ে আছে । পূর্ণতা এতক্ষন খোয়ালই করে নি পাশের রুমের বারান্দা গুলো ও এখান থেকে দেখা যায় । আর বারান্দা গুলো এতোটা কাছাকাছি যে এক বারান্দা থেকে আরেক বারান্দায় অনায়াসে ঝাপ দিয়ে আসা যায় ।
পূর্ণতা আবরনের দিকে তাকিয়ে বলল ,
– জায়গাটা সত্যিই খুব সুন্দর । আপনার বাবার রুচি অনেক ভালো এসব দেখলেই বোঝা যায় ।
আবরন বলল ,
– হুম । আমি এই প্রথম এলাম । তবে ছবিতে ডেকোরেশনের পর দেখছি । এই বাংলোটা একদম নতুন ।
– ও ।
আবরন বলল ,
– তুমি শাওয়ার নিয়েছো ভালো কথা চুল গুলো ভালো করে মুছো নি কেন ??
চুল দিয়ে তো পানি পড়ছে ।
পূর্ণতা হাতে থাকা টাওয়ালটা দিয়ে চুল গুলো মুড়িয়ে নিল ।
আবরনকে টাওয়াল শুকাতে দিতে দেখে পূর্ণতা বলল ,
– আপনিও শাওয়ার নিয়েছেন নাকি ?
– হুম । আমার মাথা ব্যথায় ছিড়ে যাচ্ছিল ।
পূর্ণতা বলল ,
– আমারো একই অবস্থা । রাতে ঘুম না হলে মাথা ব্যথা করে ।
আবরন বলল ,
– চলো , নিচে যাই । প্রচুর ক্ষুধা পেয়েছে । পেটের ইঁদুর মরে পঁচে যাচ্ছে ।
পূর্ণতা বলল ,
– আপনি বের হন । আমি আসছি ।
পূর্ণতা ঘরের ভেতরে ঢুকতেই দেখল প্রেনা বের হচ্ছে ওয়াশরুম থেকে ।
পূর্ণতা প্রেনাকে উদ্দেশ্য করে বলল ,
– রেডি হয়ে নিচে আয় খেতে । আমি যাচ্ছি ।
– আচ্ছা ।
পূর্ণতা ওরনাটা গলায় পেঁচিয়ে দরজা খুলে রুম থেকে বের হতেই দেখল আবরন নিজের রুমের দরজার বাহিরে সামনের রেলিংয়ে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে কার সাথে যেন ফোনে কথা বলছে ।
আবরন কথা বলতে বলতে পূর্ণতার দিকে তাকিয়ে হাত দিয়ে ইশারা করলো ওর দিকে এগিয়ে যেতে ।
পূর্ণতা আবরনের সামনে এগিয়ে যেতেই আবরন পূর্ণতার হাত ধরে হাটতে শুরু করলো ওকে নিয়েই আর আরেক হাত দিয়ে ফোনে কথা বলছে ।
আবরন বলছে ,
– আমরা একসাথেই আছি ।
– ……………
– কথা বলবে ?
– ……………
আবরন পূর্ণতার দিকে ফোনটা বাড়িয়ে দিয়ে বলল ,
– আম্মু কথা বলবে তোমার সাথে ।
পূর্ণতা ফোনটা হাতে নিয়ে সালাম দিয়ে বলল ,
– কেমন আছেন আন্টি ?
– আলহামদুলিল্লাহ মা । তোমার কি অবস্থা ? অসুবিধা হয় নি তো যেতে ?
– না , ভালোভাবেই এসেছি । কোনো সমস্যা হয়নি ।
– যাক , ভালো । তোমার আম্মুকে গিয়ে আমাদের বাসায় নিয়ে এসেছি । ভাবলাম , মিলি ও বাসায় একা , আমিও একা । তাই নিয়ে আসলাম ।
– বাহ , ভালোই হয়েছে । তোমরা এখন গল্প করে দিন কাটাতে পারবে ।
আধিরা আনজুম হেসে বলল ,
– খাওয়া দাওয়া করো ঠিক মতো । ঔষধ গুলো ঠিক মতো খেয়ে নিও ।
– আচ্ছা ।
– মিলির সাথে কথা হয়েছে ?
– হু , এসে বলেছিলাম একটু । কিন্তু আম্মু তখন আমাকে বলে নি যে আম্মু তোমাদের বাসায় ।
– সারপ্রাইজ দিল তোমাকে । আচ্ছা , রাখছি এখন । এনজয় করো তোমরা । সাবধানে থেকো । একা একা কোথাও যেও না কেমন ?
– চিন্তা করো না আন্টি । ওকে , রাখছি তাহলে । আল্লাহ হাফেজ ।
– আল্লাহ হাফেজ ।
পূর্ণতা যতক্ষন ফোনে আধিরা আনজুমের সাথে কথা বলছিল ততক্ষন আবরন ওর দিকে তাকিয়েছিল । আধিরা আনজুমের সাথে বিনয়ের সাথে হেসে কথা বলা আবরনের মনে প্রশান্তি নিয়ে আসে ।
পূর্ণতা আবরনের দিকে ফোনটা বাড়িয়ে দিতেই আবরনের ধ্যান ভাংলো । আবরন ফোনটা পকেটে নিয়ে বলল ,
– চলো , নিচে গিয়ে বসি । সবাই আসলে তারপর এক সাথে খেতে বসবো ।
– আজান দিয়েছে মাগরিবের ?
– না , আরেকটু পর দিবে ।
– ওও , আচ্ছা চলুন ।
পূর্ণতা আর আবরন হেঁটে সিড়ির দিকে যাচ্ছিল তখন দরজা খুলে রুহি আর নীরা বের হলো ।
পূর্ণতা আর আবরনকে একসাথে দেখে বলল ,
– ওয়াও , এরাই কি সুন্দর সবসময় একসাথে থাকে । আর রুহি আপু আর আমি দুইটা গাছ বলদের সাথে প্রেম করি যাদের কিনা টেনে হিচড়ে কাছে আনতে হয় ।
পূর্ণতা ওদের দেখে আবরনের কাছ থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নেওয়ার জন্য হাত মোচড়াতে শুরু করলো । আবরন ইচ্ছে করেই ওদের দেখিয়ে পূর্ণতা কে টেনে ওর কাছে এনে বলল ,
– আমরা ইউনিক কাপল , তাই সবার থেকে আমাদের সম্পর্ক টা একটু ভিন্ন !! তোমাদের বুঝতে হবে ছোট বোনেরা ।
রুহি হেসে বলল ,
– কারো নজর যেন না লাগে তোমাদের ওপর !!
পূর্ণতা মনে মনে বলল ,
– অসভ্য লোক কোথাকার !! খালি সবাইকে উপর উপর ভালোবাসা দেখিয়ে যাচ্ছে কখন থেকে , যদি সত্যিই ভালোবেসে থাকেন তাহলে আমাকে বললেই তো হয় । কি একটা ব্যাপার ?? সবাইকে দেখাচ্ছে আমরা কাপল আর এদিকে উনার আর আমার সম্পর্ক কচুর মতো !! যত্তসব ।
পূর্ণতা ভাবনা থেকে বেরিয়ে আবরনকে উদ্দেশ্য করে বলল ,
– আমার খুব ক্ষুধা পেয়েছে । নিচে চলুন ।
আবরন বলল ,
– ওকে , চলো ।
………………………………………………..
খাবার দাবার খেয়ে সবাই ড্রয়িং স্পেসে একসাথে বসেছে ।
জিব্রান বলল ,
– আজকের দিনটা তো এভাবেই কেটে গেল । কাল কোথায় বের হবো ??
ফাহিম বলল ,
– যেহেতু , কালকের দিনটায় ঘুরতে বের হবো , সেহেতু সরকারি ছুটিতে বন্ধ এমন জায়গায় গেলে চলবে না । কারন কাল ২৬ শে মার্চ ।
তাসিন বলল ,
– তা ঠিক । কাল তো সে হিসেবে সবই বন্ধ । তাহলে যাবো কোথায় ?
আয়মান বলল ,
– আবরন বল ! তোর তো জানার কথা !
আবরন বলল ,
– পাহাড় দেখতে চাও নাকি সমুদ্র সৈকত ?? যেকোনো একটা বলতে হবে !!
নাদিরা বলল ,
– কোন জায়গায় গেলে বেশি মজা পাবো ?
আবরন বলল ,
– চালন্দা গিরিপথে গেলে মজা পাবে ! কারনটা হচ্ছে , সেখানে গেলে বন , পানি , পাহাড় সবই দেখতে পারবে । আর সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে জায়গাটা কিছুটা এডভেঞ্চার টাইপ । সেখানে দলবল নিয়ে গেলেই ভালো । তবে একসাথে থাকতে হবে । কারন এবড়োথেবড়ো পথ , হারিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে । আমরা টোটাল ১০ জন আছি । আমি বাবাকে বলে দুজন গাইডের ব্যবস্থা করে টোটাল ১২ জন যেতে পারবো চালন্দা গিরিপথে । এখন সবাই রাজি থাকলে বিষয়টা এগিয়ে নিয়ে যাব ।
সবাই বলল ,
– তাহলে এখানেই যাবো ।
আবরন বলল ,
– আরেকটা সমস্যা আছে ।
সবাই প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো ,
– কি সমস্যা ??
আবরন বলল ,
– সমস্যা টা মেয়েদের নিয়ে । তোমরা মেয়েরা যেই ড্রেস এনেছো , সেগুলো পড়ে তো ঐ জায়গায় যেতে পারবে না ।
ঐখানে যেতে হলে সবচেয়ে ভালো হবে জিনস্ , টি-শার্ট আর কেডস্ পড়ে গেলে । কারন ওখানকার মেইন প্লেস টা রাইড করতে হলে অন্য ড্রেসে গেলে পিছলে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে , কারন জায়গা এমন যে দুই পাহাড়ের মধ্যবর্তী ফাঁকা স্থান দিয়ে আমাদের দুই পায়ে দুই পাহাড়ের গায়ে ভর করে হেঁটে চলতে হবে আর নিচে পানির স্রোত । বুঝতেই তো পারছো এখন যে জায়গাটা যতটা এডভেঞ্চার টাইপ ততোটাই বিপজ্জনক ও ।
জিব্রান বলল ,
– যারা মেয়ে আছো , তোমরা কেউ টিশার্ট , জিনস্ , কেডস্ এনেছো ?
নাদিরা বলল ,
– আমার জিনস্ আর কেডস্ আছে ।
রুহি আর নীরাও একই কথা বলল ।
প্রেনা বলল ,
– আমার শুধু কেডস্ আছে ।
পূর্ণতা বলল ,
– আমি শুধু স্নিকারস্ এনেছি । কিন্তু জিনস্ , টি শার্ট তো আমি পড়ি না ।
আবরন বলল ,
– ওকে গাইজ । চিন্তার কিছু নেই । আজকে রাতের ভেতর সব ব্যবস্থা করছি ।
জিব্রান বলল ,
– ওকে , তাহলে সব তোর উপর ছেড়ে দিলাম ।
আয়মান বলল ,
– বাই দ্য ওয়ে , এখন কি কেউ একটু বাহিরে যাবে ??
আবরন বলল ,
– পেছনে বিশাল বড় জায়গা আছে । সেখানে ঘুরে দেখতে পারিস ।
জিব্রান বলল ,
– নাদিরা তুমি কি বাহিরে যেতে চাইছো ?
নাদিরা বলল ,
– তুমি রাজি হলে যাবো ।
– না , আসলে আমার খুব টায়ার্ড লাগছে । কিন্তু তুমি চাইলে আমি তোমার সাথে ঘুরতে রাজি আছি ।
নাদিরা জিব্রানের কপালে গালে হাত দিয়ে বলল ,
– জ্বর এসেছে নাকি ??
– না , মাথা ভার হয়ে আছে ।
– আচ্ছা , ঠিক আছে । যেতে হবে না কোথাও । তোমার রুমে চলো । আমি মাথা ম্যাসাজ করে দিচ্ছি ।
– সত্যি বলছো ? রাগ করবে না তো ?
– বোকা নাকি তুমি ? এখানে রাগ করার কি আছে ? চলো চলো , উপরে চলো ।
জিব্রান বলল ,
– ওকে , তোরা থাক , এনজয় কর । আলাদা হয়ে কোথাও যাস না । আর বাংলোর সীমানার ভেতরেই থাকিস ।
সবাই জিব্রানের কথা মতো ওকে বিদায় জানিয়ে বেরিয়ে পড়ল । শুধু দাঁড়িয়ে রইল আবরন আর পূর্ণতা ।
জিব্রান আর নাদিরা উপরে রুমে চলে গিয়েছে ।
পূর্ণতা দাঁড়িয়ে আবরনের দিকে তাকিয়ে থেকে সিড়ির দিকে যেতে নিচ্ছিল আর আবরন ওকে তখনই থামিয়ে দিয়ে বলল ,
– উপরে কোথায় যাচ্ছো ?
– আমি খুব টায়ার্ড । একটু রেষ্ট নিব ।
– উহু , কোনো রেষ্ট এর দরকার নেই । তুমি একটু ওয়েট করো এখানে । আমি আসছি ।
এই বলে সিড়ি বেয়ে উপরের দিকে যেতে যেতে পূর্ণতা কে আবারো দাঁড়াতে বলল ।
পূর্ণতা আবরনের যাওয়ার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল ।
আবরন উপরে গিয়ে নিজের রুমে ঢুকলো । পূর্ণতা সোফায় বসে রইল ।
কিছুক্ষনের মধ্যেই আবরন ওর গিটারের ব্যাগ সাথে নিয়ে নিচে নেমে এলো ।
– চলো !
পূর্ণতা ভ্রু কুচকে বলল ,
– কোথায় ??
আবরন পূর্ণতার হাত আলতো করে ধরে ওকে সাথে নিয়ে যেতে যেতে বলল ,
– চলোই না । গেলেই দেখতে পাবে ।
বাহিরে যেতেই পূর্ণতা খেয়াল করলো বাকিরা সবাই ঝর্ণার আলোর ধারে ।
ঝর্নার দিকটায় হেঁটে যেতেও মিনিমাম ৩-৪ মিনিট সময় লাগবে ।
আবরন পূর্ণতা কে সাথে নিয়ে বাড়ির পেছন দিকটায় গেল ।
পূর্ণতা আবরনকে বলল ,
– সবাই তো ঐদিকে । আমরা এদিকে কোথায় যাচ্ছি ??
আবরন বলল ,
– সসসসসসস্ !! ওরা দেখলে আমাদের এসে জ্বালাতন করবে । তার চেয়ে বরং আমরা একাই যাই ।
– কিন্তু যাচ্ছি টা কোথায় বলবেন তো ??
আবরন কোনো জবাব দিল না। পূর্ণতার হাত ধরে ওকে নিয়ে হেঁটে যেতে লাগল । রাতের অন্ধকারে নরম তুলতুলে ঘাস গুলো মাড়িয়ে ওরা হাঁটছে । দুপাশে দোয়ালে লাইট । ৫ মিনিট হাঁটার পর আবরন পূর্ণতা কে একটা এমন জায়গায় নিয়ে পৌঁছালো যেখানে গাছগাছালি ভেদ করে হালকা আলো সায় দিচ্ছে । কিন্তু সেখানে দাঁড়ালে আকাশটা পরিষ্কার দেখা যায় ।
আবরন দাঁড়িয়ে গিয়ে কাউকে কল করে বলল ,
– আজ রাতের মধ্যে আমার পলো শার্ট , আর জিনস্ গুলো চাই । সাইজ গুলো ম্যাসেজ করে দিচ্ছি ।
তারপর কলটা কেটে ফোনটা পকেটে ঢুকিয়ে আবরন সেখানেই ঘাসের উপর বসে পূর্ণতাকে ও বসতে বলল ।
পূর্ণতা আশেপাশে তাকিয়ে জুতো খুলে রেখে আবরনের সামনে মুখোমুখি হয়ে বসলো ।
আবরন গিটারের ব্যাগ থেকে গিটারটা বের করে বলল ,
– এখন আমার একটা খুব পছন্দের আবার খুব অপছন্দের একটা গানই গাইবো ।
পূর্ণতা ভ্রু কুচকে বলল ,
– মানে ? একটা গান মানুষের কি করে একসাথে পছন্দ আর অপছন্দের হতে পারে ??
– গানের কিছু লাইন খুবই অপছন্দের আবার কিছু লাইন পছন্দের ।
– ইন্টারেস্টিং !!
– শুনবে ??
– হুম ।
– ওকে ফাইন ।
আবরন কাশি দিয়ে গলা ঝেড়ে গিটারে সুর তুললো ।
পূর্ণতা সুর শুনেই বুঝলো গানটা খুব ভালো করেই ও জানে । তাই মুচকি হেসে আবরনের দিকে তাকালো ।
আবরন গিটারের দিকে তাকিয়ে সুর দিচ্ছিল । গিটার থেকে চোখ তুলে পূর্ণতার দিকে তাকিয়ে গাইতে শুরু করলো ,
Dua Bhi Lage Na Mujhe
Dawa Bhi Lage Na Mujhe
Jab Se Dil Ko Mere Tu Laga Hai
Neend Raaton Ki Meri
Chahat Baaton Ki Meri
Chain Ko Bhi Mere Tune
Yun Thaga Hai
Jab Saanse Bharu Main
Band Aankhein Karun Main
Nazar Tu Yaar Aaya
Dil Ko Karaar Aaya
Tujhpe Hai Pyaar Aaya
Pehli Pehli Baar Aaya Oh Yaara
🎶🎶🎶🎶🎶🎶
Dil Ko Karar Aaya
Tujhpe Hai Pyaar Aaya
Pehli Pehli Baar Aaya Oh Yaara
Har Roj Puche Yeh Hawayein
Hum Toh Bata Ke Haare
Kyun Jikar Tera Karte Hai Humse Taare
Har Roj Puche Yeh Hawayein
Hum Toh Bata Ke Haare
Kyu Jikar Tera Karte Hain Humse Taare
Ab Kisse Hai Tere
Inn Hothon Pe Mere
Izhaar Aaya Yaara
Dil Ko Karar Aaya
Tujhpe Hai Pyaar Aaya
Pehli Pehli Baar Aaya Oh Yaara
Dil Ko Karaar Aaya
Tujhpe Hai Pyaar Aaya
Pehli Pehli Baar Aaya Oh Yaara ♥️♥️♥️♥️♥️
আবরন গান গেয়ে থামতেই দেখল পূর্ণতা এক ধ্যানে ওরই দিকে তাকিয়ে আছে ।
আবরন ঠোঁটের কোণায় দুষ্টু হাসি এনে পূর্ণতার চোখের সামনে তুড়ি বাজিয়ে বলল ,
– ম্যাডাম , বাকি সবার মতো আপনিও কি আমার প্রতি বিমোহিত এবং ক্রাশিত ??
পূর্ণতা আবরনের তুড়ির শব্দে ধ্যান ভাংতেই আবরনের কথা গুলো শুনে ভেংচি কেটে বলল ,
– জি না ।
তারপর পূর্ণতা উঠে দাঁড়িয়ে জুতো পড়ে বলল ,
– আমি গেলাম ।
আবরন ও গিটার হাতে নিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে গিটার ব্যাগে ঢুকিয়ে ওর পেছনে দৌড়ে যেতে যেতে বলল ,
– যেও না , দাঁড়াও ।
পূর্ণতা দাঁড়িয়ে পেছনে তাকাতেই দেখল আবরন ওকে বলছে ,
– চলো , আরেকটা জায়গায় নিয়ে যাবো ।
– আবার কোথায় ?
– ছাদে ।
– এই রাতের বেলা ?
– হুম ।
আবরন পূর্ণতার হাত ধরে ওকে নিয়ে ছাদের সিড়ির দিকে গেল । ছাদের সিড়িটা পেছনের দিকে । তাই ওদের সুবিধা হলো । সামনে গিয়ে কারো মুখোমুখি হতে হয় নি ।
আবরন পূর্ণতার হাত ধরেই ওকে নিয়ে সিড়ি বেয়ে তিনতলায় ছাদে প্রবেশ করলো ।
ছাদটা অসম্ভব সুন্দর । ছাদে রেলিং করার পরেও সামনে বারতি জায়গা রেখে বাগান করা হয়েছে । ছাদের এক কোনায় দোলনা আছে । সেখানে দুইপাশে গাছ আর মরিচা বাতি দিয়ে ডেকোরেশন করা ।
আরেক দিকে চা-নাস্তা খেতে খেতে আড্ডা দেওয়ার জন্য কিছু চেয়ার আর একটা টেবিল রাখা আছে । সেখানটায় ও সুন্দর ঝুলন্ত বাতি দিয়ে সাজানো । সব কালার ফুল লাইট গুলো এখন জ্বলছে বিধায় ছাদ খুব সুন্দর লাগছে । আর সবচেয়ে বেশি সুন্দর লাগছে ছাদে থাকা ছোট খাটো একটা সুইমিংপুল । বিভিন্ন রং এর আলোতে পুলের পানি চিকচিক করছে ।
আবরন ডেকে বলল ,
– দেখো , আজ আকাশে কত তারা !
পূর্ণতা আকাশের দিকে তাকাতেই দেখল সেখানে হাজারো তারার মেলা ।
দক্ষিণ দিক থেকে মিষ্টি ফুলের ঘ্রাণ নিয়ে হাওয়া বেসে আসছে । আবরন বলল ,
– চলো , রেলিংয়ের উপরটায় বসে গল্প করি ।
– কি গল্প করবো ?
– যে কোনো কিছু । চলো বসি । এসো , মজা হবে ।
পূর্ণতা আবরনকে ‘না’ করলো না । ওর কথা মতো ওর সাথে রেলিংয়ের উপর উঠে বসলো ।
আবরন বলল ,
– এখানে পড়ে যাওয়ার ও কোনো সম্ভাবনা নেই কারন বাড়তি জায়গা রেখে গাছ লাগানোর জন্য ।
পূর্ণতা বলল ,
– হুম , ছাদটা খুব সুন্দর । বিশেষ করে এই বাসাটা । মন চাইছে , সারাজীবন এখানেই থেকে যাই ।
– তাই ?
– হুম ।
আবরন পূর্ণতার মাথায় হাত রেখে বলল ,
– ওকে , দোয়া করে দিলাম যেন একদিন তোমার এই আশা পূর্ণ হয় ।
পূর্ণতা হেসে বলল ,
– আপনার দোয়া কাজে না-ও আসতে পারে ।
আবরন হেসে বলল ,
– সেটা সময়ই বলে দেবে ।
পূর্ণতা বলল ,
– চলুন , গুনে দেখি আকাশে কয়টা তারা বেশি চিকচিক করছে ।
– কি বলছো কি ? তারা গুনতে গুনতে তো বুড়ো হয়ে যাবো ।
– আরে না । যেখুলো বেশি উজ্জ্বল , শুধু সেগুলো । যেমন , শুকতারা । ওটা বেশি উজ্জ্বল । তারপর কোনটা বেশি উজ্জ্বল সেপা খুঁজে বের করবো ।
– ওকে , ফাইন ।
আবরন আর পূর্ণতা তারা গননার প্রতিযোগিতায় নামলো । পূর্ণতা তারা গুনতে গুনতে ঘুমে আবরনের কাধে মাথা রেখে ঢলে পড়ল । আবরন বিষয়টা টের পেতেই ঘূমন্ত পূর্ণতার গালে হাত রেখে কিছু একটা ভেবে তারপর সেখানেই চুপচাপ বসে রইল ।
হঠাৎ আবরনের ফোনটা বেজে উঠতেই আবরন পকেট থেকে ফোনটা বের করে দেখল জিব্রান কল করছে । আবরন ফোনটা রিসিভ করে কানে দিতেই ওপাশ থেকে জিব্রান বলল ……………..
#চলবে ♥️
বিঃদ্রঃ প্রথম গল্প লিখছি আর তার মধ্যেই কতবার গল্পটা বিভিন্ন সমস্যার কারনে আটকে যাচ্ছে । সত্যি বলতে স্টুডেন্ট লাইফটাই এমন । আম্মু কিছুটা সুস্থ্য তবে সামনের সপ্তাহে আবারো হসপিটালে যেতে হতে পারে । আর অন্যদিকে পরীক্ষা ধেয়ে আসছে আমার দিকে । সব কিছু মিটিয়ে দিন শেষে যখন আপনাদের কমেন্ট গুলো পড়ি তখন মনে হয় যে মনটা ভালো হয়ে যায় নিজ থেকেই । তখন ইচ্ছা জাগে গল্পের পরের পর্বটা দিই । আপনাদের সাপোর্ট ই আমার কাছে সব । মানুষের জীবনে সমস্যা থাকতেই পারে , সেই বিষয় গুলো একটু বোঝার চেষ্টা করে সাথেই থাকুন । আর দোয়া করবেন যেন সব সমস্যা গুলো মিটে যায় । গল্পটা ছুটির দিন গুলোতে এক দিন পর পর দিনের যে কোনো সময়ই দিব । আপনারা একটু ম্যানেজ করে পড়ে নিবেন ।
আর গল্পের ভুল ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন । ধন্যবাদ । ♥️