ভালোবাসি_বলেই_তো সারপ্রাইজ পর্ব – ৩

0
1150

#ভালোবাসি_বলেই_তো ♥️
লেখিকা – #আদ্রিয়া_রাওনাফ
সারপ্রাইজ পর্ব – ৩

চট্টগ্রাম শহর থেকে মাইক্রোবাসে চেপে পতেঙ্গার পথে চলতে চলতে সবাই মিলে গান ধরল ,

Yeh dosti hum nahin todenge
Todenge dam magar
Tera saath na chhodenge
Yeh dosti hum nahin todenge
Todenge dam magar
Tera saath na chhodenge

গান শেষ হতেই সবাই একসাথে হাত তালি দিয়ে উঠল ।

নাদিরা বলল ,

– ইশশ , আমাদের সবার সম্পর্কটা যেন সবসময় এরকম ই মধুর থাকে । তোমাদের কারো কাছ থেকে আলাদা হতে চাই না ।

পূর্ণতা নাদিরার কথা শুনে পেছন থেকে বলে উঠল ,

– সবাই বলো , “আমিন” ।

সবাই একসাথে বলল ,

– আমিন ।

আয়মান বলল ,

– আমাদের গ্ৰুপে সব আগে কোন জোড়া লাভ বার্ডস এর বিয়ে হবে ??

জিব্রান হেসে বলল ,

– তোর আর প্রেনার বিয়েই আগে খাবো আমরা ?? কি বলিস তোরা ??

সবাই হু হা করে হেসে উঠল ।

পূর্ণতা ও হাসলো । পূর্ণতা কে হাসতে দেখে আবরন ওর কানের কাছে গিয়ে আস্তে করে ফিসফিস করে বলল ,

– এত খুশি হয়ো না , শেষে দেখা যাবে তোমার বিয়েটাই আগে হবে ।

এই বলে আবরন দাঁত কেলাতে লাগল ।

পূর্ণতা চোখ গরম করে বলল ,

– আমার আগে আপনার বিয়ে হবে , হুহ !!

আবরন বলল ,

– সেটা তো হবেই । তোমার বিয়ে হলে তো আমাকেও বিয়ে করতে হবে । তার চেয়ে ভালো একদিনেই দুজনের বিয়েটা সেড়ে ফেলি কি বলো ??

পূর্ণতা ভেংচি কেটে বলল ,

– হুহ !!

…………………………………………………

সকাল ১১ টা বেজে ১৫ মিনিট ,

পতেঙ্গা পৌঁছে একটা পার্কিং লর্ডে ওদের গাড়িটা থামানো হলো ।

একে একে গাড়ি থেকে সবাই নেমে দাঁড়ালো ।

সবাইকে একসাথে দেখতে ভীষন সুন্দর লাগছে কারন সবাই আজ প্রায় সেইম ড্রেস পড়েছে ।

সব ছেলেরা পড়েছে হোয়াইট উইথ স্কাই ব্লু পলো শার্ট এর সাথে ডেনিম জিন্স আর মেয়েরা পড়েছে হোয়াইট ইউথ স্কাই ব্লু লং শার্টের সাথে ডেনিম জিন্স আর ম্যাচিং করে স্কাই ব্লু ওরনা ।

আজকে বিচে ভ্রাম্যমাণ সবার থেকে ওদের লুকটাই ইউনিক ।

গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়াতেই দুজন ছেলে ওদের সামনে এসে দাঁড়ালো ।

– আসসালামু আলাইকুম । আপনি নিশ্চয়ই আবরন চৌধুরী ??

আবরন বলল ,

– ওয়ালাইকুমুসসালাম । তোমাদের কি শাদমান চৌধুরী পাঠিয়েছে ??

– জি , মিষ্টার চৌধুরী আপনাদের কে গাইড করার জন্য আমাদের নিযুক্ত করেছেন ।

জিব্রান আবরন কে আস্তে করে বলল ,

– কিরে ?? তুই না আঙ্কেলকে বললি গাইডের ব্যবস্থা যেন না করেন , তাহলে ?

আবরন বলল ,

– আমার নিজের‌ই এর উত্তর জানা নেই ।

এই বলে আবরন ঐ ছেলে দুটোর উদ্দেশ্যে বলল ,

– আমি একটু শাদমান চৌধুরীর সাথে কথা বলে তোমাদের সাথে ব্যাপার টা ক্লিয়ার করছি । ওয়েট !

– ওকে , স্যার ।

আবরন একটু সাইডে গিয়ে পকেট থেকে ফোনটা বের করে শাদমান চৌধুরী কে কল করল । ঐপাশ থেকে কল রিসিভ করতেই শোনা গেল ,

– yes my boy , তোমরা পৌঁছে গিয়েছো ?

– হ্যা বাবা পৌঁছেছি বাট হোয়াট দ্য হেল ইজ গোয়িং অন হিয়ার ??

– কি হয়েছে ?

– তোমাকে তো বললাম , গাইড এর ব্যবস্থা করার দরকার নেই তা ও তুমি কেন করলে ?

– আচ্ছা , এই ব্যাপার । তুমি চিন্তা করো না , আমি ওদের বলে দিচ্ছি যেন ওরা তোমাদের গাইড না করে ।

– ওকে , এক্ষুনি বলো । এন্ড ….

– হুম বলো ?

– আই লাভ ইউ বাবা ।

শাদমান চৌধুরী মুচকি হেসে জবাব দিলেন ,

– এই প্রথম তোর মুখে এই কথাটা শুনে মনটাতে একটা ভালো লাগা কাজ করছে রে । বাই দ্য ওয়ে , আই লাভ ইউ ঠু ।

এনজয় দ্য ডে এন্ড বি সেইফ , বেষ্ট অফ লাক !

– থ্যাংকস বাবা । আল্লাহ হাফেজ ।

– আল্লাহ হাফেজ ।

আবরন কথা শেষ করে আবার আগের জায়গায় গিয়ে দাঁড়িয়ে বলল ,

– তোমাদের সাথে বাবার ডিল হয়েছে , সো বাকিটা বাবা হ্যান্ডেল করবে । আপাতত , তোমরা যেতে পারো । থ্যাংক ইউ ।

– ইটস ওকে স্যার । হ্যাভ আ নাইস ডে !

এই বলে ছেলে দুটো চলে গেল ।

ওরা চেলে যেতেই আবরন সবার দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে বলল ,

– so , আমি ই গাইড । চলো সবাই !!

সবাই জোরেসোরে চিল্লিয়ে উঠল ,

– ইয়েএএএএএএএএ !!

রাস্তা পেরিয়ে সবাই দল বেধেঁ বিচে এসে নামল । জিব্রান বলল ,

– সবাই এখানেই দাঁড়িয়ে পড় , আগে একটা গ্ৰুপ ছবি তুলি ।

সবাই একসাথে জড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে গেল ।

জিব্রান সেলফি স্টিকের সাহায্যে সামনে থেকে সবাইকে নিয়ে ছবি তুলল কয়েকটা ।

রুহি বলল ,

– ভাইয়া এবার কাপল ছবি তোলা যাক , কি বলেন ?

নাদিরা বলল ,

-ওকে , তাহলে সবার আগে তোমার আর ফাহিমের ছবি ই তোলা যাক ।

ফাহিম এসে রুহির সাথে দাঁড়ালো ।

একে একে সবার জোড়া ছবি ক্যামেরায় বন্দি করে অবশেষে এলো আবরন আর পূর্ণতার পালা ।

প্রেনা বলল ,

– আবরন ভাইয়া , দাঁড়িয়েই থাকবেন নাকি প্রিয় মানুষটার সাথে একটা মূহুর্ত্তের স্মৃতি ক্যামেরায় বন্দি করবেন ??

আবরন হেসে পূর্ণতার দিকে তাকিয়ে ভ্রু নাচালো । পূর্ণতার কেমন যেন লাগছে , কারন সবাই এখন ওদের কাপল ভাবছে কিন্তু ওদের দুইজনের মাঝে তো এমন কিছু হয় নি ।

ভাবনা ছেড়ে আবরনের দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়তেই আবরন ওর হাত ধরে ওর কাছে এসে দাঁড়ালো ।

ওরা একসাথে দাঁড়াতেই সবাই হাত তালি দিল খুশিতে । আবরন মুচকি হেসে পূর্ণতার দিকে তাকিয়ে দেখল ওর গাল আর নাক লাল হয়ে গিয়েছে ।

আয়মান বিষয়টা লক্ষ্য করে ওদের একটা ক্যান্ডিড ছবি তুলে নিল ।

আবরন পূর্ণতার দিকে তাকিয়ে আছে সেটা পূর্ণতা বুঝতে পেরে পূর্ণতা ও ওর দিকে তাকালো । এই মূহুর্তে দুজন‌ই দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে ।

আয়মান ঝটপট আরো কিছু ছবি তুলে নিল ।

জিব্রান নাদিরার কানে কানে বলল ,

– বেশ মানিয়েছে না ওদের দুজনকে ??

নাদিরা হেসে বলল ,

– হু , দেখছো না ছবি তুলবে ক্যামেরার দিকে তাকাবে তা না করে দুজন দুজনকে দেখতেই ব্যস্ত !!

এর‌ই মধ্যে তাসিন বলল ,

– আরে তোরা কি আদৌ ছবি তোলার মুডে আছিস ??

ফাহিম বলল ,

– ধুর , এত সুন্দর রোমান্টিক মূহুর্ত টা নষ্ট করে দিচ্ছিস কেন ?

সবার কথা শুনে পূর্ণতা আর আবরন একে অপরের থেকে নজর সরিয়ে কিছু টা ফাঁকা হয়ে দাড়ালো ।

আয়মান বলল ,

– ঐ , তোরা এত ফাঁকা হয়ে দাঁড়ালে তো ক্যামেরায় তোদের না , তোদের মাঝ দিয়ে ফোকাস চলে যাবে । আরেকটু ক্লোজ হ ।

আবরন বলল ,

– তাই নাকি ? দাড়া দাড়া !

এই বলে আবরন পূর্ণতা কে টেনে নিজের কাছে এনে বলল ,

– নে , এখন ছবি তোল ।

ফাহিম বলল ,

– এবার পারফেক্ট !

এই বিশেষ মূহুর্তটা আয়মান ক্যামেরা বন্দী করে ফেলল ।

……………………………………………….

প্রায় অনেকক্ষন সবাই মিলে ছবি তোলার পর এবার পালা পানিতে নামার ।

মেয়েরা কেউ পানিতে নামবে না ঠিক করেছে শুধু হাতে আর পায়ে পানি লাগাবে ।

আর ছেলেরা সবাই পানিতে নামবে , কিছুক্ষণ ডুবাবে বলে ঠিক করেছে ।

যেমন কথা তেমন কাজ ।

ছেলেরা আবার গাড়িতে গিয়ে জিন্স চেঞ্জ করে থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট পড়েছে ।

তারপর একে একে সবাই পানিতে নামল শুধু তাসিন বাদে । ওর একটাই কথা , ” আমি সাঁতার জানি না , ডুবে মরে যাবো ।”

ফাহিম বলল ,

– তুই গাঁধা নাকি ? তুই কি মাঝ সমুদ্রে নামছিস যে ডুবে যাবি ?

জিব্রান বলল ,

– নিচে পায়ের কাছে বালি আর পাথর আছে । আয় তুই ! আমরা আছি তো ?

তাসিন নীরার দিকে ভয়ার্ত দৃষ্টি তে তাকালো । নীরা বলল ,

– তুমি নামবে নাকি আমি ধাক্কা দেবো ??

তাসিন জলদি জলদি নেমে পড়লো কারন ও রিস্ক নিতে চায় না ।

ওর কান্ড দেখে সবাই হাসতে শুরু করলো ।

পূর্ণতা জিনস প্যান্ট টা একটু উপরে তুলে নিচে বসে পা দুটো পানিতে ডুবিয়ে দিল ।

ওর দেখা দেখি একে একে প্রেনা , নাদিরা , রুহি আর নীরা ও বসে পড়ল ।

সবাই যার যার মতো আনন্দ করছে , হৈ চৈ করছে ।

পূর্ণতা চোখ বন্ধ করে একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে মনে মনে ভাবছে ,

– এই সুখের দিনগুলো যেন সব সময় থাকে আল্লাহ । কখনো যেন কষ্ট আর দুঃখ দেখতে না হয় ।

ভাবনার মাঝেই হঠাৎ এক ঝাপটা পানি ওর মুখে এসে পড়তেই ও চোখ খুলে ফেলল ।

চোখ মেলে তাকাতেই দেখল আবরন হু হা করে হাসছে । ওর বুঝতে বাকি নেই আবরন‌ই ওর মুখে পানির ঝাপটা মেরেছে ।

পূর্ণতা ও রেগে পানিতে হাত ডুবিয়ে আবরনের দিকে একাধারে পানির ঝাপটা মারতে লাগল ।

আবরন‌ও থেমে নেই । দুজনেরই এক ই কান্ড ।

পূর্ণতা আর আবরনের দেখা দেখি এবার বাকিরাও সেইম কাজ করতে লাগল ।

সবাই এক অপরের দিকে পানির ঝাপটা দিচ্ছে আর চিল্লাচিল্লি করছে । সবাইকে চিল্লাচিল্লি করতে শুনতে পেয়ে আবরন আর পূর্ণতা থেমে গিয়ে ওদের দিকে তাকালো ।

ওরা সবাই ই ভিজে একাকার । আবরন আর পূর্ণতা তা দেখে হাসতে শুরু করলো ।

জিব্রান বলল ,

– এই থাম , থাম , থাম । তোরা না বললি ভিজবি না । এখন যে ভিজে গেলি ??

নাদিরা দাঁত কেলিয়ে বলল ,

– সব পূর্ণতা আর আবরনের দোষ ! ওদের দুজনকে মজা করতে দেখেই তো আমাদের তর স‌ইলো না ।

সবাই হাসলো ।

আবরন বলল ,

– ওকে , অনেক হয়েছে পানিতে ভেজা । চলো , উঠি নাহলে ঠান্ডা লেগে যাবে ।

সবাই সহমত প্রকাশ করে উঠে আসলো ।

সবাই ভেজা শরীর নিয়ে গাড়ির দিকে যাচ্ছে চেঞ্জ করবে বলে ।

পূর্ণতা নিজের ওরনা দিয়ে ভালো করে শরীর পেঁচিয়ে ওদের সাথেই হাঁটতে শুরু করছিল কিন্তু পেছন থেকে আবরন ওর হাত ধরে টেনে ধরে নিজের ভেজা চুল গুলো আরেক হাত দিয়ে ঝেড়ে পূর্ণতার চোখে মুখে পানির বিন্দু ফেলল ।

পূর্ণতা চোখ মুখ বন্ধ করে বলল ,

– এই এই , কি করছেন টা কি ??

আবরন বলল ,

– সকালে আমার ব্রাশ দিয়ে দাঁত ব্রাশ করেছো সেটার রিভেঞ্জ নিলাম ।

পূর্ণতা ভেংচি কেটে বলল ,

– এটা কোনো রিভেঞ্জ হলো !

আবরন বলল ,

– তাই নাকি ? এটা কোনো রিভেঞ্জ মনে হলো না তোমার কাছে ?

পূর্ণতা বলল ,

– না । আপনার জায়গায় আমি থাকলে কি করতাম জানেন ??

আবরন ভ্রু কুচকে 🤨 বলল ,

– কি করতে শুনি ?

পূর্ণতা বলল ,

– আরেকটা নতুন ব্রাশ কিনতাম যেটা দেখতে সেইম আপনার ব্রাশের মতোই হবে । তারপর সেই ব্রাশ দিয়ে একবার আমি দাঁত মেজে সময় বুঝে আপনার ব্রাশের জায়গায় একচেঞ্জ করে সেই নতুন ব্রাশ যেটা আমি একবার ইউজ করেছি সেটা রেখে দিতাম । আপনি যথারীতি সেই ব্রাশ দিয়ে দাঁত মাজতেন তারপর আমিও সময় বুঝে আপনাকে বলতাম যে , আপনিও আমার ইউজ করা ব্রাশ দিয়ে দাঁত মেজেছেন ।

তারপর আপনি আমার মতোই ফিল করতেন আর ওয়াক , থু করতেন । 🤭

আবরন বলল ,

– ওরে ইনটেলিজেন্ট !!

ঠিক আছে চলো এখন । সবাই তো আমাদের রেখেই চলে গিয়েছে ।

– হুম চলুন ।

………………………………………………..

একে একে সবাই ভেজা ড্রেস চেঞ্জ করে নিল । এবার সবাই randomly ড্রেস পড়েছে । কারো সাথে কারো মিল নেই ।

দুপুর ১:৩০ টা বাজে ,

সবাই চিন্তা করল লাঞ্চ করে তারপর আরেকটু ঘুরোঘুরি করে সবশেষে বার্মিজ মার্কেট গুলো তে একটা চক্কর দিবে ।

যেমন ভাবনা তেমনি কাজ ।

রোডের ডান দিকেই সব খাবারের হোটেল আর বাম দিকে বার্মিজ মার্কেট ।

সবাই একটা হোটেলে ঢুকে লাঞ্চ অর্ডার করে অপেক্ষা করছে । অর্ডার মেন‍্যু হচ্ছে গরম গরম সাদা ভাত সাথে ১২ রকমের শুটকি ভর্তা আর ডাল ।

সবাই খেতে খেতে খাবারের অনেক প্রশংসা করছে । আবরন বলল ,

– এইজন্য ই বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাঘুরি ক‍রলে সব বিষয়েই এক্সপেরিয়েন্স বাড়ে ।

প্রেনা বলল ,

– আবরন ভাইয়া , মেডিক্যাল থেকে কি আমাদের শিক্ষা সফরে নিবে ??

আবরন বলল ,

– হা নিবে । তবে শীতের সময় ।

পূর্ণতা বলল ,

– কোথায় নিবে ??

– একেক বছর একেক জায়গায় যাওয়ার প্ল‍্যান করা হয় । গতবছর সাজেক নিয়ে গিয়েছে । আর এর আগের বছর রাঙামাটি গিয়েছিলাম ।

– ওও ।

– সেখানেও মজা হবে । এখন না বলি , মজা নষ্ট হয়ে যাবে তাহলে ।

প্রেনা বলল ,

– থাক , থাক , বলো না ।

গল্প করতে করতে খাওয়া শেষ হতেই সবাই আবার বেরিয়ে পড়ল ।

জিব্রান বলল ,

– মাত্র বাজে ২ টা ৫ মিনিট ।

আবরন বলল ,

– শোনো , এখন বিচে না যাই । অনেক রোদ । এখন বঙ্গবন্ধু টানেল এ যাই , তারপর বার্মিজ মার্কেটে ঘুরে তারপর ৪ টার দিকে বিচে ব্যাক করে স্পিড বোটে উঠাব সবাইকে ।

সবাই এক সঙ্গে বলল ,

– সত্যি ??

আবরন বলল ,

– হ্যাঁ সত্যি ।

সবাই একমত হয়ে হাঁটা ধরল বঙ্গবন্ধু টানেলের দিকে ।

সবাই জোড়াবদ্ধ হয়ে হাঁটছে ।

আবরন আর পূর্ণতা একসঙ্গে সবার পেছনে হাঁটছে ।

আবরন হাঁটতে হাঁটতে বলল ,

– এখানে এসে কেমন ফিল হচ্ছে ?

– অনেক ভালো ।

– তাই ?

– হুম । কারন এই প্রথম একা এত দূরে আসলাম ঘুরতে । সবসময় আম্মুর সাথেই এখানে ওখানে গিয়েছি । একবার আমার যখন ১০ বছর বয়স তখন আম্মুর সাথে ছোট খালামনির বাসায় সিলেটে বেড়াতে গিয়েছিলাম । কিন্তু আমার দুই খালাতো ভাই যাদের আমি জন্মের পর থেকে সামনাসামনি নিজ চোখে দেখিনি তারাও ছিল না যে কোথাও ঘুরতে নিয়ে যাবে ।

আবরন বলল ,

– তাই নাকি ? খালাতো ভাইরা কোথায় থাকে যে কখনো দেখোনি তুমি ?

– ওরা দুজন‌ই অষ্ট্রেলিয়া থাকে । আমি যত দূর শুনেছি বড় জন আরকি সায়ন ভাইয়া আমার ভাইয়ার এক বছরের ছোট , ও নাকি ছোট থাকতেই আমার খালুজির কাছে চলে গিয়েছে অষ্ট্রেলিয়া তে । আর ছোট জন , ওর নাম অয়ন , ও আমার চেয়ে এক – দেড় বছরের ছোট হবে , ওকেও নিয়ে গিয়েছে । তাই দেখা হয়নি ।

আবরন বলল ,

– কখনো ভিডিও কলে কথা বলোনি ?

– নাহ , আসলে ছোট থেকে দেখা সাক্ষাত হলে ফ্রি হতাম , কিন্তু এখন এতোটা ফ্রি না তাই কখনো কথা বলিনি আর ওরাও কখনো কথা বলে নি ।

– ওহ , তোমার খালামনির সাথে আন্টির রিলেশন কেমন ??

– ওনাদের মাঝে অনেক টান আছে । কিন্তু খালামনি সিলেটে নিজের শশুড় বাড়িতে থাকে বলে আসতে পারেন না , আর আম্মুও আমাদের পড়াশোনা নষ্ট হবে বলে আমাদের নিয়ে যেতে পারেন না ।

– ওহ । যাক , সমস্যা নেই । আমাদের বিয়ের সময় সবাইকে ইনভাইট করবো ।

পূর্ণতা হাঁটা বন্ধ করে দাঁড়িয়ে গেল আবরনের মুখে এই কথা শুনে ।

আবরন‌ও দাঁড়িয়ে গিয়ে বলল ,

– কি হলো , মাঝ পথে এভাবে হার্ড ব্রেক মারলে যে ??

পূর্ণতা বলল ,

– আমাদের বিয়ে মানে !! কি বোঝাতে চাইছেন আপনি ??

আবরন হেসে বলল ,

– এত জলদি ভুলে গেলে ?? তোমাকে না তখন বললাম তোমার বিয়ের দিন আমিও বিয়ে করবো । সেটাই বুঝিয়েছি ।

আবরনের উত্তর শুনে পূর্ণতার রাগ লাগছে খুব ।

– মন চাইছে নিজের চুল নিজেই ছিড়ি । এত চেষ্টা করেও অসভ্য লোকটার মুখ দিয়ে আসল কথা টা বের করতে পারলাম না । ধুর !!

আবরন বলল ,

– কি হলো ?? এখানেই দাঁড়িয়ে থাকার ইচ্ছা আছে নাকি ??

পূর্ণতা রেগে বলল ,

– না !!!

এই বলে আবরনকে রেখেই হাঁটা ধরল । আবরন বলল ,

– আরে আরে , রকেটের গতিতে কোথায় যাচ্ছো ?

– জাহান্নামে যাচ্ছি , যাবেন ??

আবরন কিছুটা জোরে হেঁটে পূর্ণতার হাত ধরে নিয়ে পূর্ণতার গতিতেই হাঁটতে হাঁটতে বলল ,

– জাহান্নামে কেন যাবো ? গেলে জান্নাতেই যাবো দুজনে একসাথে ।

পূর্ণতা মনে মনে ভাবছে ,

– যত কথা বলে এই লোকটা সব ইনডাইরেক্টলি !! এত ধৈর্য্য কিভাবে পোষণ করেছে নিজের মধ্যে উনি নিজেই জানেন ।

সবাই বঙ্গবন্ধু টানেলের সামনে পৌঁছে ছবি তুলতে শুরু করলো । কিছুক্ষণ ছবি তুলল তারপর একটু ঘুরোঘুরি করে আবার ফিরে এলো বার্মিজ মার্কেটে ।

বার্মিজ মার্কেটে ঢুকতেই নানা রকম আচার , চকলেট এবং আরো অনেক রকমের প্যাকেটজাত খাবার চোখে পড়ল । প্রেনা , নীরা , রুহি আর নাদিরা আচার আর চকলেট কিনতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল ।

ওদের সাথে আয়মান , তাসিন , ফাহিম আর জিব্রান ও গিয়ে সেই দোকানে ভিড় করল ।

আবরন পূর্ণতা কে বলল ,

– আজকে এই দোকানে মনে হয় একটাও আচার চকলেট বাঁচবে না তোমার জন্য । সব ওরাই নিয়ে নিবে ।

পূর্ণতা হেসে বলল ,

– আমার আর এগুলো খাওয়ার শখ নেই । ভাইয়া কক্সবাজার থেকে আমার জন্য এক স্যুটকেস ভরে এনেছিল , সেগুলো এখনো আছে ।

আবরন বলল ,

– তাহলে চলো তোমাকে আরেকটা জায়গায় নিয়ে যাই !

পূর্ণতা ভ্রু কুচকে বলল ,

– কোথায় ??

আবরন ওর হাত ধরে বলল ,

– আহা , চলোই না ।

– ঠিক আছে চলুন ।

আবরন পূর্ণতার হাত ধরে মার্কেটের আরো ভেতরের দিকে গেল ।

ভেতরে যেতেই দেখল এখানে সব ঝিনুকের আর মুক্তার তৈরি অলংকার এর দোকান ।

পূর্ণতা এত এত অলংকার দেখে অবাক হয়ে সব দোকানের দিকে ভালো করে চোখ বুলিয়ে দেখছে ।

আবরন মুচকি হেসে বলল ,

– ম্যাডাম , শুধু চোখ দিয়ে দেখলেই হবে ?? হাত দিয়ে ছুঁয়ে দেখবে না ??

পূর্ণতা খুশি হয়ে বলল ,

– হ্যাঁ দেখবো । চলুন চলুন ।

এই বলে আবরনের হাত ধরে নিজেই ওকে টেনে নিয়ে একটা দোকানের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো ।

ঝিনুকের তৈরি মালা , ব্রেসলেট , কোমরের বিছা , পায়ে পড়ার জন্য পায়েল ইত্যাদি বিভিন্ন রকমের জিনিস ।

পূর্ণতা সব হাত দিয়ে তুলে তুলে দেখছে ।

আবরন একটা মালা তুলে পূর্ণতার সামনে ধরে বলল ,

– দেখো তো , এটা কেমন ?

পূর্ণতা দেখলো এই ঝিনুকের মালাটা অসম্ভব সুন্দর ।

পূর্ণতা আবরনের হাত থেকে নিতেই যাচ্ছিল কিন্তু আবরন ওকে থামিয়ে দিয়ে ওর কাছে এগিয়ে গিয়ে ওর গলায় মালাটা পড়িয়ে দিয়ে বলল ,

– বেশ মানিয়েছে এটা তোমাকে !

বিক্রেতা চাচা বলল ,

– হ মা , বাপের পছন্দ ভালা । তুমি এডাই ল‌ও ।

পূর্ণতা আবরনের দিকে তাকালো । আবরন ভ্রু নাচালো ।

পূর্ণতা হেসে মালাটা খুলে আবরনের হাতে দিয়ে বলল ,

– আপনার পছন্দ বেশ ভালো । ধন্যবাদ ।

আবরন বলল ,

– আচ্ছা , আর কি কি নিবে বলো ?

বিক্রেতা চাচা বলল ,

– মা , তুমি এডার পুরা সেড ডা ল‌ও ।

পূর্ণতা বলল ,

– পুরো সেটে কি কি আছে ??

বিক্রেতা চাচা বলল ,

– কানের দুল , হাতের ব‍্যাসলেট , আর এক জোড়া নুপূর ।

পূর্ণতা কিছু বলার আগেই আবরন বলল ,

– আচ্ছা চাচা , আপনি পুরো সেট‌ ই প্যাকেট করে দিন ।

চাচা খুশি হয়ে প্যাকেট করতে করতে বলল ,

– অনেক ভালো একজন জীবনসাতি পাইছো মা , তোমার চাওনের আগে সে সব বুইজ্জা লায় ।

পূর্ণতা কিছুই বলল না । আবরন ও বলল না । দুজনেই নিশ্চুপ ।

আবরন দাম দিয়ে পকেটে ওয়ালেট ঢুকাতেই বাকিরা এসে হাজির ।

নাদিরা বলল ,

– তোমরা দুজন আমাদের রেখেই কিনে ফেললে ??

আবরন বলল ,

– তোমরা ও কিন্তু তখন আমাদের রেখে কিনেছো ।

নাদিরা হেসে বলল ,

– আচ্ছা । আমরা ও কিনি কিছু ।

সবাই একমত হয়ে ভিড় করলো দোকানে ।

আবরন বলল ,

– তোমরা থাকো , আমরা অন্য দোকানে যাচ্ছি ।

– ওকে । ( সবাই বলল )

আবরন পূর্ণতা কে নিয়ে আবারো সামনে এগিয়ে গেল ।

এখানে অনেক বড় বড় ঝিনুক দেখা যাচ্ছে । পূর্ণতা ভ্রু কুচকে বলল ,

– এখান থেকে ঝিনুক কিনব ??

– হুম , ঝিনুক কিনতে পারবে আবার চাইলে ঝিনুকের উপর নিজের নাম ও খোদাই করে লিখিয়ে নিতে পারবে ।

– ওয়াও । তাহলে চলুন , দেখি ।

– চলো ।

পূর্ণতা একটা ধবধবে সাদা রং এর ঝিনুক হাতে নিয়ে সেটা উল্টে পাল্টে দেখছে । তারপর কি ভেবে যেন ঝিনুকটা নিজের কানের সামনে তুলে নিল । তারপর চোখ বন্ধ করে ফিল করতে চেষ্টা করছে কিছু একটা ।

আবরন বিষয়টা লক্ষ‍্য করে বলল ,

– ওও মিস ! কি করছো ?

পূর্ণতা আবরনের ডাকে সাড়া দিতে চোখ খুলে তাকিয়ে বলল ,

– আমি অনেকের কাছে শুনেছি ঝিনুকের ভেতর থেকে নাকি সমুদ্রের মিষ্টি স্রোতের শব্দ শুনতে পাওয়া যায় ।

– হুম , যায় তো ।

– সত্যি ? কিন্তু আমি তো শুনতে পেলাম না ।

– পাবে তবে এখানে না ।

– তাহলে কোথায় গিয়ে শুনতে পাবো ?

– সেটা একটা সারপ্রাইজ থাকুক ।

– ওকে । তাহলে এটা নিয়ে নিই ?

– তা তো নিবেই । কিন্তু নিজের নাম লিখে নিবে না অন্য একটাতে ।

– হুম , সেটাও নিব । কিন্তু আপনি যা টাকা দিচ্ছেন সেটা কিন্তু ধার হিসেবে । আপনি হিসেব করে রাখেন তারপর আমি ভাইয়ার কাছে বলে আপনার টাকা ফেরত দিয়ে দেব ।

– ওকে , ফাইন । এখন নাও তুমি ।

– ওকে ।

পূর্ণতা একটা ঝিনুক পছন্দ করে তারপর সেটাতে নিজের নাম লিখিয়ে নিল ।

আবরন টাকা দিতে দিতে পূর্ণতা কে বলল ,

– চলো দেখি অপর পাশের দোকানটায় কি বিক্রি করছে ?

– চলুন ।

– তুমি যাও , আমি টাকা দিয়ে আসছি ।

– ঠিক আছে ।

পূর্ণতা একা ঐপাশের মার্কেটের দিকে এগিয়ে গিয়ে দেখল এখানে সব ঘর সাজানোর জিনিস বিক্রি হচ্ছে । পূর্ণতা সব দেখছে একটা একটা করে । কয়েক মিনিট পর আবরন এসে ওর পাশে দাঁড়িয়ে বলল ,

– কি ম্যাডাম , কিছু পছন্দ হলো ??

– সব‌ই সুন্দর ।

– কিছু নিবে না ।

– চিন্তা করছি ।

– আরে নিয়ে নাও ।

– কোনটা নিব বলুন তো ??

– যেগুলো বেশি পছন্দ হয় সেগুলো ।

পূর্ণতা কিছু জিনিস পছন্দ করে আবরন কে দেখিয়ে বলল ,

– দেখুন তো , আপনার কাছে ভালো লাগছে কি না ??

– হুম , সুন্দর । প্যাকিং করিয়ে নাও । আমি দাম দিচ্ছি ।

– ওকে ।

অবশেষে বার্মিজ মার্কেট থেকে কেনা কাটা শেষ করে ওরা বিকেল ৪:৫০ এর দিকে বাহিরে বেরিয়ে এলো ।

সবাই কেনা কাটার ব্যাগ গুলো নিয়ে আবার গাড়ির দিকে এগিয়ে গেল । সেগুলো রেখে তারপর আবারো বিচে যাবে ।

ব্যাগ রাখতে গিয়ে দেখা গেল সবচেয়ে বেশি আবরন আর পূর্ণতার হাতেই ব্যাগ রয়েছে ।

আবরন সবাইকে বলল ,

– দেখো কি হলো বিষয়টা ! তোমাদের সবাইকে দেখলাম একসাথে জড়ো হয়ে সব কিনে নিচ্ছো , এখন তো দেখছি তা ভুল প্রমাণিত হলো । তোমাদের হাতে ৩ টার বেশি ব্যাগ নেই আর এদিকে আমার এবং পূর্ণতার হাতে ৯-১০ টা ব্যাগ ।

জিব্রান বলল ,

– তাহলে তো মার্কেট আমরা না তোরাই কিনে নিয়েছিস ।

সবাই হেসে উঠল ।

ব্যাগ গুছিয়ে রেখে এবার এগিয়ে গেল স্পিড বোটে উঠবে বলে ।

সবাই খুশিতে কিছুটা দৌড়েই বিচের দিকে গেল ।

আবরন পূর্ণতা কে বলল ,

– স্পিড বোটে উঠেছো এর আগে ??

– না ।

– উঠার আগে অনুভূতি কেমন ??

– ভয় লাগছে ।

– বাইকে তো উঠেছো ??

– হু ।

– তাহলে ভয় পাওয়ার কিছুই নেই । লেটস গো ।

– হু , কিন্তু কে চালাবে ?

– এক বোটে দুজন উঠতে পারবে সর্বোচ্চ । jet ski boat বলে এটাকে । আমি চালাবো তুমি পেছনে বসবে ।

– না , আমার ভয় লাগছে ।

– এক্সপেরিয়েন্স এর দরকার আছে । একবার উঠে ই দেখো । ভয় পেলে আর উঠবে না কখনো । চলো , চলো ।

দুটো jet boat ভাড়া করলো কিছু সময়ের জন্য । প্রথমে জিব্রান আর নাদিরা , আর ফাহিম আর রুহি গিয়েছে ।

ওরা ফিরে আসতেই তাসিন , নীরা আর আয়মান-প্রেনা গেল ।

সব শেষে পালা আবরন আর পূর্ণতার ।
দুজনেই লাইফ জ্যাকেট পড়ে রেডি । আবরন বোটে উঠে বসতেই পূর্ণতাকে জিব্রান ধরে আবরনের পেছনে বসালো ।

পূর্ণতা আবরনকে শক্ত করে চেপে ধরে বসতেই আবরন বলল ,

– Are you ready for this ??

– yes , but I’m feeling a little scared .

– Don’t be afraid .. Let’s go ….

এই বলে ইঞ্জিন স্টার্ট করে এক টানে মাঝের দিকে এগিয়ে গেল ।

পূর্ণতার মনে হচ্ছে …………………….

#চলবে ♥️

বিঃদ্রঃ সারপ্রাইইইইইইজ !!! আজ প্রায় ১ মাস ৪ দিন পর আমি গল্প নিয়ে আবারো আপনাদের মাঝে ফিরে আসলাম । আপনাদের দোয়া আর ভালোবাসার টানেই কিন্তু আমি ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছি । আমি খুবই দুঃখিত এত গুলো দিন আপনাদের কে অপেক্ষা করিয়েছি । প্রথম লেখা চলমান গল্পের মাঝে এত বড় বিরতি মানায় না , তবুও সবাইকে রিকোয়েস্ট আমাকে ভালোবেসে সাদরে গ্ৰহণ করে নেওয়ার জন্য । আর যারা ভালোবেসে পাশে ছিলেন তাদেরকে বলবো আপনাদের প্রতি আমার ভালোবাসা অসীম । আমিও আপনাদের ভালোবাসি বলেই তো আবার ফিরে এলাম ।

ইনশাআল্লাহ এখন প্রতিদিন গল্প দিব । কেউ মিস করবেন না । আর সারপ্রাইজ টা কেমন ছিল কমেন্টে অবশ্যই জানাবেন ।

ধন্যবাদ । ♥️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here