#ভালোবাসি_বলেই_তো ♥️
লেখিকা – #আদ্রিয়া_রাওনাফ
পর্ব – ৪৮
জিব্রান ওদের সাথে না পেরে অবশেষে ওদের বুঝিয়ে অর্থাৎ ভুলিয়ে ভালিয়ে ৩৫ হাজার টাকা ওদের হাতে নগদ দিয়ে নাদিরা কে নিয়ে রুমে ঢুকতে পেরেছে ।
রুমের ভেতরে ঢুকেই জিব্রান দরজা জলদি জলদি লাগাতে বলল ,
– ভালো হয়ে যা তোরা । এর শোধ হারে হারে তুলবো দেখিস !
সবাই হেসে উঠলো । আয়মান হাসতে হাসতে বলল ,
– গাইজ , লেটস গো ! এখনো আবরন – পূর্ণতা এবং সায়ন ভাইয়া আর জল বাকি !
নাদিরা হেসে বলল ,
– আমাদের থেকে তো ৩৫ নিলে , ওদের থেকে কত নিবে ?
– আরো বেশি ।
জিব্রান হেসে দরজা লাগাচ্ছিল আর আয়মান সহ সবাই চলে যেতে যেতে বলল ,
– বেষ্ট অব লাক ভাইয়া এন্ড ভাবি । কিছু লাগলে কিন্তু অবশ্যই জানিও ।
জিব্রান ঠাস করে দরজা লাগিয়ে দিয়ে নাদিরা কে বলল ,
– ফাজিলের দল সবগুলো ।
নাদিরা হেসে খাটে বসতে বসতে বলল ,
– ওরাই তো মজা করবে , নাহলে আর কে করবে বলো ??
জিব্রান ও খাটে বসতে বসতে বলল ,
– হ্যাঁ , সেটা ঠিক । এখন আবার বাকিদের জীবন বেদনা করতে গিয়েছে ।
নাদিরা হেসে উঠল । জিব্রান মুগ্ধতার দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ নাদিরার দিকে তাকিয়ে রইল । নাদিরা হাসি থামিয়ে ভ্রু নাচিয়ে বলল ,
– কি দেখছো ?
জিব্রান বলল ,
– তোমাকে ।
– আমাকে কি নতুন দেখছো নাকি ?
– উহু , কিন্তু নতুনভাবে দেখছি ।
নাদিরা বলল ,
– যেমন ?
– যেমন আগে তুমি আমার গার্লফ্রেন্ড ছিলে আর এখন আবার বউ ।
– আচ্ছা । কিন্তু মানুষটা আর মনটা তো সেই একই !
– হুম । তুমি ই তো আমার প্রথম আর শেষ ভালোবাসা । অনেক ভালোবাসি তোমাকে নাদিরা ! আমি যে তোমাকে নিজের করে পাবো কখনো ভাবতেই পারি নি । আল্লাহ যা করে ভালোর জন্যই করে ।
– সব ই কিন্তু পূর্ণতার জন্য হয়েছে । ওকে একটু জড়িয়ে ধরতে চেয়েছিলাম । কিন্তু ও তো অজ্ঞান হওয়ার পর পর ই আবরন ওকে নিজের রুমে নিয়ে চলে গেল ।
– আবরনের বিয়ে করা বউ বলে কথা ! তাই ভালোবেসে কষ্ট না দিয়ে নিয়ে গিয়েছে । এই কয়দিন অনেক কষ্ট পেয়েছে , অবশ্য সব ই আমাদের প্ল্যান করা অংশ । কি করবো আর !
জিব্রান আর নাদিরার খাটের নিচে উপুড় হয়ে শুয়ে আছে আবরন আর পূর্ণতা । প্রথম ওদের কথা এনজয় করলেও যখনই পূর্ণতা শুনলো যে সব কিছু প্ল্যান করে করা হয়েছে , ওকে জেনে শুনে ইচ্ছে করে কষ্ট দেওয়া হয়েছে তখনই পূর্ণতা চোখ গরম করে নাক ফুলিয়ে আবরনের দিকে তাকালো ।
আবরন ওকে দেখে দাঁত কেলাচ্ছে । পূর্ণতা আস্তে আস্তে আবরনের কানে কানে বলল ,
– সবাই আমার সাথে নাটক করলো ? এত বড় নাটক ?? মন তো চাইছে আপনাদের ………..
পূর্ণতা কথা বলে শেষ না করার আগেই আবরন পূর্ণতার কানে আস্তে করে বলল ,
– সবাই ই কম বেশি বুদ্ধি দিয়েছে । মার খেলে আমি একা কেন খাবো , সবাইকে নিয়েই খাবো !
পূর্ণতা বলল ,
– কে কে জানে সব কিছু ?
আবরন বলল ,
– জল বাদে সবাই ।
– মানে ?
– মানে তোমার ফ্যামিলি , আমার ফ্যামিলি , আমাদের ফ্রেন্ড সার্কেল , প্রেনাসহ প্রেনার ফুল ফ্যামিলি । সবাই ই জানে ।
পূর্ণতা অবাক হয়ে বলল ,
– আর সায়ন ভাইয়া ?
– সায়নও জানে । ওকে তো জলের ছবি দেখিয়েই এদেশে নিয়ে এসেছি । তোমার খালামনি পাত্রী দেখছিল ওর জন্য । তাই তো ওকে আনলাম । আর জল তো এখন বদলে গিয়েছে । আর যতদিন যাবত সায়ন এসেছে ততদিন যাবত ও যা যা করেছে সব প্ল্যানের মধ্যেই ছিল । শুধু জল এ বিষয়ে কিচ্ছু জানতো না । আর জলও সায়ন কে দেখার পর থেকে ওকে পছন্দ করে কিন্তু ওকে বলেনি কারন ও সায়নকে তোমার হবু বর ভেবে বিয়েটা ভাঙতে চায় নি । তাই নিজে নিজে মনে কষ্ট পাচ্ছিল আর আমাকে বিয়ে করতেই রাজি হয়েছিল ।
পূর্ণতা বলল ,
– আপনারা সবাই খারাপ । আমি খেলবো না । আমি এখন চলে যাবো ।
আবরন ওর হাত চেপে ধরে ওকে বলল,
– পাগল হলে নাকি ?? ভাইয়া আর নাদিরা ভাবি কি করে দেখি আগে !!
– না আমি দেখবো না ।
আবরন পূর্ণতার হাত শক্ত করে চেপে ধরে বলল ,
– তুমি এখন চলে যেতে চাইলে কিন্তু আমি তোমাকে রুমে নিয়ে ধোলাই করবো দেখো ।
– আমি আপনাকে ভয় পাই না ।
এরই মধ্যে নাদিরা আর জিব্রানের রোমান্টিক কথা বার্তার সাউন্ড ভেসে আসতে লাগল । আবরন আর পূর্ণতা কথা বাদ দিয়ে ওদের কথা শোনার দিকে মনোযোগ দিল ।
– বিয়ে করলাম সবে মাত্র , এখন একটু রোম্যান্স করবো তা না আমাকে তোমার থেকে দূরে চলে যেতে হচ্ছে । সবসময় আমার সাথেই এমন হয় ।
– সমস্যা কি ? যে কয়দিন আছো সে কয়দিন ভালো মতো রোম্যান্স করে নাও তাহলেই তো হয় ।
– তবুও হবে না । আমাদের হানিমুনে যাওয়ার মতো ও সময় নেই দেখো । কতটা ব্যাড লাক !
– মানুষের স্বভাব ই এমন ! থাকতে দিলে খেতে চায় , খেতে দিলে বসতে চায় আর বসতে দিলে শুতে চায় । যেখানে আমাদের বিয়ে হওয়ার ই কোনো চান্স ছিল না সেখানে বিয়েটা হয়ে আজ বাসর ঘরে একসাথে আছি তার কোনো খবর নেই , তুমি আছো তোমার হানিমুন আর রোম্যান্স নিয়ে ।
জিব্রান হেসে নাদিরাকে কাছে টেনে বলল ,
– তাহলে দেড়ি করছো কেন ? চলো শুরু করি ।
– কি ?
– রোম্যান্স !
এই বলে জিব্রান নাদিরার ঠোঁটের দিকে চুমু খেতে এগিয়ে যেতেই নাদিরাও এক গাল হেসে সায় দিল ।
পূর্ণতা শব্দ শুনে লজ্জায় লাল হয়ে আছে । আর আবরন মুচকি হেসে পূর্ণতা কে আস্তে করে ধাক্কা মেরে বলল ,
– দেখেছো , ভাইয়া আর ভাবি কত রোম্যান্টিক । আর তুমি একটা গাছ বলদ !
পূর্ণতা রেগে জোরেই বলল ,
– ওরা ভালোবেসে কিস করছে । আপনি কি আমাকে ভালোবাসেন নাকি ??
আবরন জিহ্বে কামড় দিয়ে পূর্ণতার মুখ ঠেসে ধরল । পূর্ণতা মনে মনে বলল ,
– আয় হায়! কি আকাম টা ই না করলাম !!
জিব্রান আর নাদিরা শব্দ পেয়েই দুজন দুজনের থেকে ১০ হাত দূরে সরে গিয়ে একে অপরের দিকে ভয়ার্ত চোখে তাকালো । জিব্রান বলল ,
– এটা পূর্ণতার গলা না ?
নাদিরা বলল ,
– আমারও তো তা ই মনে হলো । কিন্তু ও তো নিশ্চয়ই আবরনের সাথে বাসর ঘরে আছে ।
– তা ই তো ! কিন্তু আমি তো স্পষ্ট ওর গলা শুনতে পেলাম !
– আমি ও তো ।
নাদিরা কিছু একটা ভেবে জিব্রানকে বলল ,
– তুমি এক কাজ করো , আবরনকে কল দাও ।
জিব্রান ফোনটা হাতে নিয়ে জলদি আবরনকে কল দিল ।
এদিকে আবরন পূর্ণতার মুখ চেপে ধরায় পূর্ণতা ইশারা করলো ,
– হাত সড়ান । আমি দম আটকে মরে যাচ্ছি তো ।
আবরন হাত সরিয়ে পূর্ণতার দিকে তাকিয়ে আছে । আর পূর্ণতা জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিতে ব্যস্ত ।
আবরন পূর্ণতা কে এক দৃষ্টিতে দেখছে আর ভাবছে ,
– আমাদের ভালোবাসা কেমন অদ্ভুত ! মনে মনে ভালোবাসি একে অপরকে । তার উপর কেউ এখনো নিজের মুখ দিয়ে সত্যিটা বলি নি । অথচ বিয়ে হয়ে গেল । আমরা এখন ম্যারিড কাপল আর এখনো ভালোবাসার রহস্যটা অপ্রকাশ্য ই রয়ে গিয়েছে ।
পূর্ণতা আবরনকে তাকিয়ে থাকতে দেখে ওর চোখের সামনে হাত নাড়িয়ে ভ্রু নাচালো । আবরনের দৃষ্টি তবুও বিচ্যুত হচ্ছে না । হঠাৎ ই স্বজোরে কারো ফোন বেজে উঠতেই আবরন চমকে গেল । পূর্ণতা বলল,
– কার ফোন ?
আবরন চোখ বড় বড় করে বলল,
– আমার । ওওওও শিট !! আমি ফোনটা সাইলেন্ট করতে ভুলে গিয়েছি ।
জিব্রান আর নাদিরার বুঝতে বাকি নেই আবরন আর পূর্ণতা এই রুমেরই কোথাও লুকিয়ে আছে ।
ওরা খাট থেকে নেমে দাড়াতেই আবরন জলদি জলদি ফোনটা চাপ দিয়ে সাইলেন্ট করে দিল ।
পূর্ণতা হাত দিয়ে গলায় ইশারা করে দেখালো ,
– নাউ উই আর ডেড !!
আবরন পূর্ণতার দিকে কাদো কাদো ফেস নিয়ে তাকাতেই জিব্রান রুমের লাইট অন করে কান ধরে আবরনকে খাটের নিচ থেকে টেনে বের করতে করতে বলল ,
– বদমাইশের দল ! আমার থেকে টাকা তো মারলি ই সাথে আমার রোমান্টিক টাইমও বরবাদ করলি । তোর আজকে খবর আছে ।
আবরন বলল ,
– আউউউ , ভাইয়া । কানটা ছেড়ে দাও । ভুল হয়ে গিয়েছে । আর কক্ষোনো হবে না ।
জিব্রান বলল ,
– আর কক্ষোনো হবে কি করে রে ?? এই দিনটা তো আর প্রতিদিন ই ফিরে আসবে না ।
– আসলেই তো ।
জিব্রান আরো জোরে কান মুচড়ে বলল ,
– আবার আসলেই তো বলছিস ?? ফাজিল কোথাকার ??
পূর্ণতা চুপচাপ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে আর নাদিরা মুখ টিপে হাসছে ।
আবরন বলল ,
– ভাইয়া , এভাবে কেউ বোনের হাজবেন্ডের সাথে ব্যবহার করে বলো ?
জিব্রান কান ছেড়ে আবরনের কাধে চাপড় মেরে বলল ,
– ওরেএএএএ ! আসছে আমার বোনের হাজবেন্ড রে !! বলি আমিও তো তোর বউর বড় ভাই !! আমার সাথে তো এসেছিস মশকরা করতে । এখন বল তোকে কি করবো ?
আবরন নাদিরার দিকে কাদো কাদো ফেস করে বলল ,
– ভাবি !! দেখছো ভাইয়া বকা দিচ্ছে । তুমি কিছু বলবে না ?
নাদিরা হেসে আবরনকে বলল ,
– আমি আর কি বলবো ভাই ? তোমরা যা দুষ্টুমি করলে , শাস্তি পাওয়া উচিত ।
জিব্রান বলল ,
– দেখেছিস , ভাবিও আমার সাথে একমত !
আবরন ঠোঁট উল্টে পূর্ণতার দিকে তাকালো । পূর্ণতা আবরনকে দেখে কি করবে বুঝতে পারছে না ।
জিব্রান আবরনকে ছেড়ে দিয়ে পূর্ণতা কে বলল ,
– তুই ও জড়িত ?
পূর্ণতা চুপ করে আছে ।
জিব্রান বলল ,
– কি পাপ করেছিলাম যে আমাদের বাসরের সময় নষ্ট করছিস ? তোদের বাসর তো আমি আটকে রাখি নি । যা না , গিয়ে নিজেরা রোম্যান্স কর । আমাদের কেন ডিষ্টার্ব করছিস ।
পূর্ণতা বলল ,
– একদম উচিত হয়েছে । আমাকে যে এই এতদিন যাবত কষ্ট দিয়ে দিয়ে মারছিলে তাই এমনটা হয়েছে ।
জিব্রান ভ্রু কুচকে পূর্ণতার দিকে তাকিয়ে নাদিরার দিকে তাকিয়ে পূর্ণতা কে উদ্দেশ্য করে বলল ,
– কষ্ট পেয়েছিস তুই ??
পূর্ণতা বলল ,
– শুধু কষ্ট না অনেক কষ্ট পেয়েছি ।
জিব্রান বলল ,
– এখন কষ্ট থেকে মুক্তি পেয়েছিস ?
– হু ।
– কষ্ট কেন পেয়েছিস ? সায়নের সাথে বিয়ে হচ্ছিল বলে ?
– অবশ্যই ।
– আবরনের সাথে বিয়ে হয়েছে শুনে খুশি হয়েছিস ?
পূর্ণতা এক্সাইটেড হয়ে বলল ,
– খুশি মানে ! অনেক খুশি । কারন আমি তো উনাকেই …………
পূর্ণতা কথাটা বলতে বলতে আবরনের দিকে তাকাতেই দেখল আবরন এক ভ্রু উঁচু করে ওর দিকেই তাকিয়ে আছে ।
পূর্ণতা থেমে যাওয়ায় নাদিরা বলল ,
– কি ? কথাটা শেষ করো !
পূর্ণতা বলল ,
– ভাবি , সরি ।
– সরি কেন ?
– তোমাদের সময় নষ্ট করেছি ।
জিব্রান বলল ,
– কথা ঘোরাচ্ছিস কেন পূর্ণ ??
পূর্ণতা মাথা নিচু করে আছে ।
আবরন জিব্রান কে ইশারা করতেই জিব্রান বলল ,
– অনেক হয়েছে । যা তো তোরা । দূর হ। রাত থেকে মাঝরাত হয়ে যাচ্ছে আর আমরা এখনো এখানেই আটকে আছি । যা বলছি । ভাগ এখান থেকে ।
জিব্রান কথা বলতে দেড়ি নেই আর ওদিকে আবরন আর পূর্ণতা গায়েব ।
…………………………………………………
জিব্রানের বাংলোর নিচে দাঁড়িয়ে আবরন আর পূর্ণতা জোরে জোরে হাসছে । কি বাঁচাটাই না বেঁচেছে ওরা ।
আবরন হাসির মাঝেই বলল ,
– ওরা অনেক ভালোবাসে দুজন দুজনকে ।
পূর্ণতা আবরনের কথা শুনে হাসি থামিয়ে বলল ,
– হুম ।
আবরন বলল ,
– অনেক রাত হয়েছে । চলো যাই ।
– বাকিরা কোথায় ?
– ওরা সায়ন আর জলের বাসরের ১২ টা বাজাচ্ছে নিশ্চিত ।
পূর্ণতা হাসলো । আবরন বলল ,
– চলো , চলো । কেউ দেখলে বকা খাবো ।
– চলুন ।
আবরন আর পূর্ণতা হেঁটে নিজেদের বাংলোর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে । পূর্ণতা কিছু বলছে না । চুপচাপ ওর সাথে হেঁটে যাচ্ছে । তাই আবরন হঠাৎ হাঁটা থামিয়ে দিয়ে বলল ,
– তুমি যেভাবে কচ্ছোপের মতো হাঁটছো এভাবে চললে তো আমাদের বাংলোতে পৌঁছাতে পৌঁছাতে সকাল হয়ে যাবে ।
পূর্ণতা হেসে উঠতেই আবরন ওকে পাজকোলা করে নিয়ে বলল ,
– এখন দেখবে খরগোশের মতো দৌড়ে ২ মিনিটেই পৌঁছে যাবো ।
পূর্ণতা বলল ,
– আমি গুনছি , দেখি আপনি যেতে পারেন কিনা !
– ওকে , লেটস গো ।
আবরন পূর্ণতা কে কোলে নিয়ে হেঁটে এগিয়ে যাচ্ছে আর পূর্ণতা আবরনের গলা না পেচিয়ে ধরে ১ , ২ , ৩ গুনে যাচ্ছে ।
বাংলোতে ঢুকে সিড়ির সামনে যেতেই পূর্ণতা বলল ,
– ব্যস , ব্যস । নামিয়ে দিন এখানেই ।
আবরন বলল ,
– কেন ?
– আপনার কষ্ট হবে তো আমাকে নিয়ে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠলে ।
– তাই ? হবে না কষ্ট । তুমি গুনো ।
পূর্ণতা বলল ,
– না না , আপনার কষ্ট হবে । আপনি নামান আমাকে । আমি হেঁটেই যেতে পারবো ।
আবরন পূর্ণতা কে বলল ,
– আমার কষ্ট হলে তোমার কি ?
আবরনের প্রশ্ন শুনে পূর্ণতা মন খারাপ করে বলল ,
– আমার কি মানে ? আপনি বোঝার চেষ্টা করুন । তিনতলায় আমাদের রুমটা । কি করে আপনি আমাকে নিয়ে ঐ পর্যন্ত উঠবেন । আপনার যদি দম আটকে যায় ?
– কিছুই হবে না । চেন্নাই এক্সপ্রেস মুভিটা দেখেছো ?
– হু ।
– সেখানে শাহরুখ খান দীপিকা কে কোলে নিয়ে কয়টা সিড়ি বেয়ে উপরে উঠেছে মনে আছে ??
পূর্ণতা বলল ,
– ৩০০ সিড়ি ।
– হু । আর এখান থেকে তিন তলা পর্যন্ত তো মাত্র ৩৯ টা সিড়ি ।
– আপনাকে ফিল্মের নায়কের অভিনয় দেওয়া হয় নি !
আবরন কথা না বাড়িয়ে পূর্ণতা কে কোলে নিয়েই একেবারেই অর্ধেকটা পর্যন্ত চলে গেল ।
আবরন থেমে নিঃশ্বাস নিচ্ছিল , পূর্ণতার তখন খুব মায়া হচ্ছিল আবরনের জন্য । আবরন আবারও সিড়ি বেয়ে উঠতে উঠতে দোতলা ছেড়ে তিনতলার সিড়ির কাছাকাছি পর্যন্ত যেতেই পূর্ণতা আবরনের দিকে ছল ছল দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে দেখল আবরন তিনতলায় অলরেডি পা রেখেছে ।
তবুও ওকে নামিয়ে দেয় নি কোল থেকে । ওকে নিয়ে একেবারে বিছানায় নামাতেই পূর্ণতা আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারলো না । আবরনকে বলল ,
– আপনি এমন কেন করেন ?
আবরন দরজা লক করে এক গ্লাস পানি ঢকঢক করে খেয়ে নিয়ে পূর্ণতা কে বলল ,
– কেমন করি ?
– এইযে , পাগলামি করেন মাঝে মাঝে ।
আবরন পূর্ণতার একদম কাছে এসে ওর কানে কানে বলল ,
– তুমি কথা চালাতে থাকো , আমি উত্তর দিচ্ছি । থামবে না । এই রুমে তুমি আমি ছাড়াও আরো কেউ আছে । এখন কিছু বলো না , চুপচাপ কথা চালিয়ে যাও ।
এইটুকু আস্তে করে বলে আবরন আবার জোরে জোরেই বলল ,
– আমি পাগল বলেই তো পাগলামি করি ।
পূর্ণতা বলল ,
– আপনি আমাকে এতো কষ্ট দিলেন কেন ?
– কোথায় কষ্ট দিলাম ?
– এই যে , এই কয়দিন ।
– তুমি কষ্ট পেয়েছো কেন ?
পূর্ণতা আবরনের শিখানো কথা মনে রেখেছে তবে সিরিয়াস হয়েই আবরনকে বলল ,
– আজ কিছু সত্যি কথা বলতে চাই শুনবেন ?
আবরন পূর্ণতার কথা শুনবে বলে ওর সামনেই বিছানায় পা উঠিয়ে বসে বলল ,
– শুনবো । কিন্তু তোমার কোলে মাথা রেখে ।
পূর্ণতা নিজের কোলে আবরনকে শোয়ার জন্য জায়গা করে দিল । আবরন মুচকি হেসে ওর কোলে মাথা রেখে শুয়ে ওর হাত দুটো নিজের কপাল আর চোখে রেখে বলল ,
– এখন বলো । আমি শুনছি ।
পূর্ণতা আবরনের মাথা ম্যাসাজ করে দিতে দিতে বলল ,
– যখন বাবা প্রথম আমাকে বলল সায়ন ভাইয়ার সাথে আমার বিয়ে ঠিক করেছে ঠিক সেই মূহুর্ত থেকে শুরু করে বিয়েতে কবুল বলার আগ পর্যন্ত আমি প্রতিনিয়ত কষ্ট পেয়ে গিয়েছি । জানি না কেন মনে হতো সবসময় যে আপনার চেয়ে ভালো আমাকে অন্য কেউ বুঝতে পারবে না । আপনার চেয়ে বেশি খুশি অন্য কেউ আমাকে রাখতে পারবে না । আপনার মতো করে অন্য কেউ আমার খেয়াল রাখতে পারবে না । আপনার মতো করে আমার মনের না বলা কথা আর কেউ বুঝতে পারবে না । আপনার মতো করে কেউ আমাকে আগলে রাখতে পারবে না । সবসময় এসব কথা মনে ঘুর ঘুর করেছে । আমার মনে হয়েছে আপনিই একমাত্র একজন মানুষ যে কিনা সব দিক থেকে আমার জন্য বেষ্ট । আপনি কি শুনছেন ?
আবরন চোখ বন্ধ করে থেকেই বলল ,
– হুম ।
পূর্ণতা আবারো বলতে শুরু করলো ,
– আপনি আমার আশেপাশে থাকলে আমি প্রথম প্রথম নার্ভাস ফিল করলেও চিটাগাং গিয়ে আপনার সাথে সব জায়গায় গিয়ে মনে হয়েছে আমি আপনার সাথে থাকা কালেই সবচেয়ে বেশি সেইফটি ফিল করি । আপনার সাথে কাটানো প্রতিটা মূহুর্ত আমি অসাধারণ ভাবে উপভোগ করেছি । আমার মনে হয়েছে আপনি ও হয়তো আমাকে ঠিক আমার মতো করেই ফিল করতে পারেন । কিন্তু …….
এইটুকু বলে পূর্ণতা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলল ।
আবরন বলল ,
– কিন্তু কি পূর্ণতা ?
– কিন্তু আমার সব ফিলিংস আর ভাবনাকে মিথ্যা প্রমাণ করে আপনি আমার সামনেই জল আপুকে নিজের করে নিতে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন । তখন আমার মনে হয়েছে কেউ আমাকে মিথ্যা মোহ দেখিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরেই আমার পেছন থেকে চাকু মেরে দিয়ে চলে গিয়েছে । তারপর থেকে প্রচুর অস্থিরতা কাজ করেছে , রাতে ঘুম পর্যন্ত হতো না । তারপর যখন দেখতাম আপনি দিব্যি হাসি খুশি ভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছেন তখন নিজেকে বোঝাতাম এসব শুধুমাত্র মোহ । ইমোশন ছাড়া আর কিছুই না । কিন্তু বাহির থেকে শক্ত হয়ে থাকলেও ভেতরে ভেতরে কষ্ট পেতে পেতে আর কষ্ট জমা করতে করতে আমি পাগল হয়ে যাচ্ছিলাম । আর সায়ন ভাইয়ার কোনো কথাই আমার ভালো লাগতো না । অনেক রাগ লাগত উনি কিছু বললে । কিন্তু কে জানতো ভাইয়াও মিথ্যে নাটক করছিল আমার সাথে । এমনকি আমার আপন ভাই আর ছোট্ট বেলা থেকে এক সাথে বড় হয়েছি সেই বান্ধবী পর্যন্ত আমার সাথে মিথ্যা নাটকটা চালিয়ে গেল । আমি ব্যতীত সবাই জানতো সব কিছু । কিন্তু আমার প্রশ্ন হচ্ছে কেন ? কেন আমাকে এত কষ্ট দেওয়া হলো ? কি দোষ করেছি আমি ? কেন আমাকে কষ্টের বোঝা বয়ে বেড়াতে হলো । একটু সত্যিটা জানালে কি এমন মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যেত ??
পূর্ণতা বলতে বলতে কাদতে শুরু করলো । চোখ থেকে ফোটা ফোটা করে পানির স্রোত বেয়ে নামতে লাগলো ।
আবরন এতক্ষন মনোযোগ দিয়ে পূর্ণতার প্রতিটা কথা শুনছিল আর ওর কষ্টটা ফিল করতে চেষ্টা করছিল । কিন্তু পূর্ণতা হঠাৎ কেদে উঠায় আবরন শোয়া থেকে উঠে জলদি জলদি পূর্ণতা কে জড়িয়ে ধরে ওকে নিজের বুকে আকড়ে ধরে বলল ,
– শশশশশ ,, কেদো না । প্লিজ কেদো না । তুমি যে এতোটা কষ্ট পাবে যদি আমি জানতাম তাহলে আমি তোমাকে এতোটা কষ্ট কখনোই দিতাম না , বিশ্বাস করো । তোমার মতো ধৈর্য্য শীল মানুষ খুব কমই হয় । এত এত কষ্ট পেয়েও অপেক্ষা করেছো শেষ পর্যন্ত কি হয় তা দেখার জন্য !
আমি তো চেয়েছিলাম তোমাকে সারপ্রাইজ দিবো । কারন , তুমি সারপ্রাইজ খুব পছন্দ করো । কিন্তু আমি তো জানতাম না তুমি এতোটা কষ্ট পাবে । আমার বোঝা উচিত ছিল কিন্তু আমি ………
পূর্ণতা হু হু করে কাদছে ।
আবরন পূর্ণতার মাথা নিজের বুক থেকে তুলে ওর চোখ নিজের আঙুল দিয়ে মুছে দিতে দিতে বলল ,
– তুমি এত কষ্ট না করে মুখ দিয়ে সত্যিটা যদি একবার বলতে আমি তখনই সত্যিটা তোমাকে জানিয়ে দিতাম । কিন্তু তুমি তো ধৈর্য্য ধরতে ধরতে নিজেই কষ্টের বোঝা বয়ে এই পর্যন্ত নিয়ে এলে । একবার বলতে আমাকে ।
পূর্ণতা আবরনের বুকে কিল ঘুষি মেরে কাদতে কাদতে বলল ,
– কেন , আমাকে মুখ দিয়ে এসে বলতে কেন হবে ? আপনি বোঝেন নি আমি কি চাই ? আপনি তো সব কথাই আমার বলার আগে বুঝে নেন তাহলে এই কথাটা কেন বোঝেন নি বলুন ?? কেন বলেন নি !!
আবরন হেসে বলল ,
– ব্যথা পাচ্ছি তো । বিয়ের প্রথম রাতে এভাবে কেউ মারে ??
পূর্ণতা রেগে বলল ,
– একদম ফাজলামি করবেন না । আল্লাহর দুনিয়ার সব কথা আপনি বলতে পারেন আর সত্যিটা বলতে পারেন না । বাজে লোক আপনি একটা ।
আবরন হেসে পূর্ণতার দুই গাল নিজের দুই হাত দিয়ে চেপে নিজের কপাল পূর্ণতার কপালের সাথে ঠেকিয়ে বলল ,
– চোখ বন্ধ করো ।
পূর্ণতা চোখ বন্ধ করে নিল । আবরন বলল ,
– এবার আমি যা বলি তা শুধু শুনবে । কোনো প্রশ্ন করবে না । আর চোখ ও খুলবে না যতক্ষন না পর্যন্ত আমি চোখ খুলতে বলছি ।
পূর্ণতা বলল ,
– হুম ।
আবরন বলতে শুরু করলো ,
– সারাটা জীবন আমি আমার ক্যারিয়ার নিয়ে ভেবে ভেবে কখনোই কোনো মেয়েকে পাত্তা দিই নি । কত কত মেয়ে প্রোপোজ করেছে , আমার বাসায় প্রোপোজাল নিয়ে গিয়েছে কিন্তু আমি এক্সেপ্ট করি নি । কারন ওদের কাউকে দেখেই আমার মনে হয় নি ওরা পারফেক্ট । একটা মেয়ে একটা ছেলেকে সরাসরি প্রোপোজ করার সাহস রাখে এমন মেয়েদের আমার কখনোই পছন্দ না । আমার তো ইচ্ছা ছিল আমি কাউকে যদি ভালোবাসতে না পারি তাহলে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে তারপর ফ্যামিলির চয়েজেই বিয়ে করবো এবং বিয়ের পর তাকে ভালোবাসবো । কিন্তু তোমাকে দেখার পর থেকে আমার জীবনের রাস্তাটা বদলে গেল । আমি নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে তোমাকেই বিয়ে করবো ভেবেছি । কিন্তু তোমাকে যত দেখলাম ততই বদলে যেতে শুরু করলাম ।
তোমার খুশিতেই নিজের সুখ গুলো খুঁজে খুঁজে বের করতে করতে আজ আমি এই পর্যন্ত এসেছি ।
হ্যাঁ , ভালোবাসি আমি তোমায় । অনেক অনেক ভালোবাসি । আর #ভালোবাসি_বলেই_তো ♥️ নিজের মনে একটু একটু করে তোমার জন্য এত এত ভালোবাসা জমিয়েছি যে এই ভালোবাসা কখনো শেষ হবার নেই । তোমার মতো মিলিয়ন বিলিয়ন পূর্ণতাকে ভালোবাসলে এই ভালোবাসা এই মন থেকে ফুরাবে না । আমার এই অপ্রকাশিত ভালোবাসা আজ আমি তোমার কাছে প্রকাশ করলাম । আর ভালোবাসার জোরেই আজ আমরা এক হতে পেরেছি যদিও সেটা হোক আমাদের অপ্রকাশিত ভালোবাসা । অনেক অনেক ভালোবাসি । ♥️
তুমি জানো , তোমার আমার বিয়ের সব প্ল্যানিং আমিই করেছি । কেনা কাটা থেকে শুরু করে প্রতিটা মূহুর্তকে তোমার জন্য আমি নিজে সাজিয়েছি । আমি জানি তোমাকে অনেক কষ্ট দিয়ে ফেলেছি , এই জন্য সরির পাশাপাশি বলছি তুমি যা শাস্তি দিবে আমি মাথা পেতে নিব । আই প্রমিজ । কিন্তু তোমার হলুদের শাড়ি , বিয়ের লেহেঙ্গা , জুয়েলারি , কসমেটিকস সব আমার চুজ করা । হলুদের দিন তুমি না দেখলেও আমি ই তোমাকে হলুদের ছোঁয়া দিয়েছি । হলুদের দিন রাতেই তুমি ঘুম থেকে জাগার আগেই আমি লাল বাটির হলুদ নিয়ে গিয়ে তোমার রুমে ডুপ্লিকেট চাবি ইউজ করে তোমার গালে ছুঁয়ে দিয়ে তোমার সাথে কথা ও বলেছি কিন্তু তুমি তো আরামের ঘুমে তলিয়ে ছিলে । তোমার জন্য আগের থেকেই হলুদ বেটে রেখেছে প্ল্যান মোতাবেক । আমি চাইলে তোমার গালের হলুদ টুকু না মুছে সেভাবেই রেখে আসতে পারতাম কিন্তু আমি চাই নি তুমি বিষয়টা জেনে যাও । তাহলে সারপ্রাইজ টাই মাটি হয়ে যেত । আর হলুদের দিন তোমাকে লাল বাটি থেকে হলুদের ছোঁয়া দেয়া হয়েছে একই বাটি থেকে আমাকেও হলুদ ছোঁয়ানো হয়েছে । অর্থাৎ আমার ছোঁয়া ই তুমি প্রথম পেয়েছো । আর বিয়ের দিন তো জলের সাথে সায়নের বিয়ে হয়েছে । কিন্তু তোমাকে শোনানোর জন্য সবাই বলেছে আমি কবুল বলেছি । কিন্তু আমি তো তোমাকে কবুল বলেছি আর তোমাকে শোনানো হয়েছে সায়ন কবুল বলেছে । তাই তো তুমি মনকে চাপ দিয়ে কবুল বলেছো আর অজ্ঞান হয়ে গিয়েছো । আর রেজিস্টার পেপারে সাইন যখন করেছো তখনও তুমি কাদছিলে নাহয় নিশ্চয়ই দেখতে তোমার সাথে সায়নের না আমারই বিয়ে হয়েছে ।
পূর্ণতা কে আবরন কথা বলতে নিষেধ করেছে তাই তো ও কথা না বলে আবরনের কথা গুলো শুনে চোখ দিয়ে বন্ধ চোখেই পানি ফেলছে ।
আবরন বলল ,
– এত কিছুর পর আমি তোমার । তুমি কি বলবে না আমায় তোমার অপ্রকাশিত ভালোবাসার গল্প ?? আমি শুনছি , তুমি বলো ।
পূর্ণতা চোখ না খুলেই কাদতে কাদতে বলল ,
– আমিও আপনাকে খুব ভালোবাসি মিষ্টার শাহরিদ আহনাফ আবরন । খুব খুব খুব ভালোবাসি আপনাকে। আর #ভালোবাসি_বলেই_তো ♥️ আজ সকল কষ্টকে জয় করে আপনাকে নিজের করে পেয়েছি । সারাটা জীবন এভাবেই ভালোবেসে আপনার সাথে আপনারই হাত ধরে পাশাপাশি চলতে চাই । আপনি কি পারবেন আমাকে আপনার পাশে সারাজীবন নিয়ে চলতে ??
আবরন পূর্ণতা কে জড়িয়ে ধরে বলল ,
– সবসময় ।
পূর্ণতা ও শক্ত করে আবরনকে জড়িয়ে ধরল ।
আবরন পূর্ণতা কে কানে কানে বলল ,
– এভাবে ধরো না আমায় , তাহলে পুরোপুরি নিজের করে নিব তোমায় ।
পূর্ণতা মুচকি হাসল ।
আবরন পূর্ণতার কানে কানে আস্তে করে বলল ,
– ফাজিলগুলো এই রুমেই লুকিয়ে আছে । ওরা সবার বাসরের ১২ টা বাজিয়ে এখন আমাদের বাসর টা খারাপ করতে এসেছে ।
– আসলেই সবাই এই রুমে ?
– দাঁড়াও দেখাচ্ছি ।
এই বলে আবরন বলল ,
– সব এই মূহুর্তে রুম থেকে বের হ , কোনো নাটক করবি না । বের হ সব ।
আমি ১-৫ গুনবো । বের হ , নইলে ধোলাই কাকে বলে , কত প্রকার ও কি কি কাল হারে হারে বুঝাবো । আমি গুনছি , ১, ২ , ৩ , ৪
৪ বলতেই সব রুমের একেক জায়গা থেকে বেরিয়ে আসতে শুরু করলো । কেউ খাটের নিচ তো কেউ আলমারির ভেতর থেকে , কেউ দরজার চিপা তো কেউ আলমারির চিপা । একেক জন বেরিয়ে আসতেই পূর্ণতা অবাক হয়ে সবাইকে দেখছে । আয়মান , প্রেনা , ফাহিম , রুহি , তাসিন , নীরা এমনকি সায়ন আর জলও আছে ।
সবাই বলল ,
– তোরা টের কি করে পেলি ? আমরা তো একটু ও শব্দ করি নি !
আবরন বলল ,
– নেক্সট কোথাও আকাম করতে গেলে ডিম পচা গন্ধের পারফিউম ইউজ করিস না , নাহলে সবাই বুঝে যাবে যে ঘরে ডাকাতি হচ্ছে ।
সবাই হু হা করে হেসে উঠল ।
সায়ন বলল ,
– অবশেষে আমাদের আবরন পূর্ণতার অপ্রকাশিত ভালোবাসা প্রকাশিত হলো ।
সবাই হাসল ।
আবরন বলল ,
– এখনো কিছু অপ্রকাশিত রয়ে গিয়েছে । তোরা বের হলে তা একটু প্রকাশ করতাম আরকি !
জল বলল ,
– এই সবাই চলো , চলো ! কাল ধরবো এদের । আজ মাফ করলাম ।
এই বলে একে একে সবাই বেষ্ট অব লাক জানিয়ে বেরিয়ে গেল রুম থেকে ।
আবরন দরজা লক করে পূর্ণতার কাছে এগিয়ে এসে বলল ,
– আমার স্বপ্ন ছিল আমি আমার বিয়ের প্রথম রাতে বউকে নিয়ে আইসক্রিম খাবো । তুমি কি আমার সেই স্বপ্ন পূরন করবে ??
পূর্ণতা হেসে বলল ,
– চ্যালেঞ্জ করছেন ?
– ওই না , স্বপ্ন বলেছি , চ্যালেঞ্জ না ।
পূর্ণতা হাসতে শুরু করলো । আবরনও দুষ্টুমি করে হেসে পূর্ণতা কে জড়িয়ে চেপে ধরে বলল ,
– দরকার নাই আইসক্রিম খাওয়ার । কিস খাওয়ার চ্যালেঞ্জ করি ।
পূর্ণতা হেসে আবরনের বুকে মুখ লুকালো লজ্জা পেয়ে । আজ এদের ভালোবাসা পূর্ণ হতে যাচ্ছে ।
#চলবে ♥️
বিঃদ্রঃ আপনারাও কি আয়মান , ফাহিম , তাসিন , প্রেনা , রুহি , নীরা এদের মতো করে বাসরের ১২ টা বাজাবেন নাকি ?? 🤨
তাহলে এখনো তাকিয়ে দেখছেন কি ?? যান , যান । রুম থেকে বের হন । 😁
গল্পের ভুল ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন । ধন্যবাদ । ♥️