#একটু_একটু_ভালোবাসি
#পর্বঃ০৬
লেখিকাঃ #শাদিয়া_চৌধুরী_নোন
—— এই ছেলে! তোমার সাহস তো কম না! তুমি ওকে জড়িয়ে ধরলে কেনো?
সাবিরের চোখমুখ কঠোর দেখালো খুব। ঠোঁট বা দিকে চেপে হাসলো সে।
—- সাহসের কি দেখেছেন আপু?
বলেই সে সিরাতকে কাছে টেনে আরও একবার জড়িয়ে ধরলো। সিরাতের মাথা আবার ভনভন করতে শুরু করলো। এই মুহূর্তে ওর যে কোনো পাল্টা প্রতিক্রিয়া করা উচিত, তা যেন ভুলেই গেলো। ইফতি দু’হাতে দু’টো পেয়ারা নিয়ে হা করে তার দিকে তাকিয়ে আছে। তানিশা আন্টির চেহারা দেখেই বোঝা যাচ্ছে, সে বেশ অবাক হয়েছে।
সিরাতকে জড়িয়ে ধরা অবস্থাতেই সাবির বললো,
—- আপু, আর কিছু করতে হবে?
ভাইকে তাকিয়ে থাকতে দেখে সিরাতের এবার টনক নড়লো। সাবিরের হাত কাঁধ থেকে সরাতে চাইলো সে। তোতলাতে তোতলাতে বললো,
—- তানিশা আন্টি! এই লোকটাই সেই পাগল। এই লোকটা খুব বাজে।
সাবিরের গলায় অভিমানের সুর,
—– জান! তুমি আমাকে এভাবে বলতে পারলে? তোমাকে না আমি ভালোবাসি? এভাবে বলতে হয়না। আর এই যে আপনি ( তানিশাকে উদ্দেশ্য করে) আমার সাহস কতটুকু সেটা আপনি ভাবতেও পারবেন না। শুধুমাত্র সিরাতের জন্য আমি সহ্য করছি। এখনো চেনেন নি আমাকে….
সাবির কথাগুলো বেশ গম্ভীর শোনালো। তানিশা সাবিরকে আগাগোড়া স্ক্যান করলো একবার। বেশ বলিষ্ঠ শরীর। বামহাতের কালো রোলেক্স ঘড়ি আর পায়ের চকচকে শো দেখে আন্দাজ করলো, ছেলেটা বেশ অভিজাত পরিবারের। কথা বলার ধরণও দারুণ। মনে মনে হাসলো তানিশা। বিড়বিড় করলো সে।
—- তেজ আছে বটে!
পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নিয়ে গলা খাকারি দিয়ে বললো,
—– তুমি আমার সামনে আমার ভাতিজীকে জড়িয়ে ধরে, তোমার সাহস দেখাচ্ছো? তুমি তো বেশ খারা….
সাবির বলতে দিলো না,
—- ওহ্! আপনি তাহলে সিরাতের খালা? সরি শাশুড়ী মা। আসলে বুঝতে পারিনি। মাফ করবেন তখন আপু ডাকলাম। এবার থেকে খালা শাশুড়ী বলেই ডাকবো।
তানিশা বেকুব বনে সিরাতের দিকে তাকালো। সিরাতকে দেখে মনে হবে, সে যেকোনো মুহূর্তে কেঁদে দিতে পারে। ইফতি যদি বাড়িতে গিয়ে মা’কে বলে দেয় তাহলে তো সব শেষ! এক ধাক্কায় সাবিরকে দূরে সরিয়ে দিলো সে। বোকা বোকা কণ্ঠে বলতে লাগলো,
—- আপনি এখানেও চলে এসেছেন? আপনাকে না বলেছিলাম আমার সামনে আসবেন না? আপনি এক্ষুনি চলে যান প্লিজ! বাড়ির কেউ দেখলে সর্বনাশ হয়ে যাবে। আল্লাহর দোহায় আপনাকে। আপনি আমার সাথে যা করছেন, আমার জায়গায় অন্য কোনো মেয়ে থাকলে এসব একদমই সহ্য করতে পারতো না।
—- আমার মতো হ্যান্ডসাম ছেলে দেখলে, মেয়েরা এমনিতেই গলায় ঝুলতে চায়। আর তুমি আমাকে দেখলে শুধু চলে যান! চলে যান! পালাই!পালাই করো।
সিরাত এবার হাতজোড় করে বললো,
—- আপনি চলে যান দয়া করে…..
সাবির একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। চোখে-মুখে স্পষ্ট রাগ। তবুও হাসি নিয়ে বললো,
—- আমি এমনিতেও চলে যেতাম রাত! তোমাকে একবার দেখতেই এতদূর আসা। ঠিক আছে চলে যাচ্ছি।
সাবির পেয়ারা বাগানের সামনের ছোট গেইটটা পেরিয়ে হেঁটে চলে গেলো। পথের বাঁকে ধীরে ধীরে অদৃশ্য হয়ে গেলো। সিরাত, তানিশা সবার চোখ সাবিরের দিকে স্থির। চারদিকে আঁধার নেমে আসছে। কোনো এক অজানা পাখি ভুতুড়ে কণ্ঠে ডাকছে। তানিশার গলায় হতাশার সুর,
—- এভাবে না বললেও পারতি সিরাত! ছেলেটাকে আমার খারাপ মনে হয়নি। যা একটু পাগলাটে স্বভাব, তাও তোর জন্য।
সিরাত আরও হতাশভাবে উত্তর দিলো,
—- তুমি আমাকে কি করতে বলো আন্টি? কেউ যদি দেখে ফেলতো? তোমার বোনকে তো চেনোই, দুদিন পরপর সম্বন্ধ আনছে। তারউপর এই লোকটা! এসব কি কখনো সম্ভব? তুমিই বলো… আমি এসবে জড়াতে চাইনা। আমার কোনো ব্যক্তিত্ব নেই। ঠিকটাক কথাটাই বলতে পারিনা। সবচেয়ে বড় কথা, আমি নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবছি আন্টি। আমার এসব ভালো লাগছে না। কত বয়স আমার? মা কেনো আমাকে বিয়ে দিতে চাইছে? আমার স্থানে যদি কোনো ছেলে থাকতো তখনি কি তাকে বিয়ে নিয়ে এতো কথা শুনতে হতো? আমাকেই কেন সবসময় বোকা হতে হবে? সবসময় মা-বাবার ভয়ে তটস্থ থাকতে হবে? আমি কেনো কোনো প্রতিবাদ করতে পারি না? আল্লাহ কেনো আমাকে এতো ভীতু বানিয়েছে?
সিরাতের অসহায় কণ্ঠে গুমরে কেঁদে দিলো। নিজের প্রতি ব্যর্থতায় সে নিরাশ। তানিশা তাকে সামলালো,
—- ছিহ্! এসব বলতে হয়না। পাপ হয়। প্রত্যেক মানুষই সেরা। নিজস্ব স্বকীয়তায়, প্রত্যেক মানুষ সেরা। আমাদের শুকরিয়া আদায় করা উচিত। তোর জীবনও একদিন ভীষণ সুন্দর হবে সিরাত। একটু ধৈর্য্য ধর। চল বাড়ি ফিরে যাই।
তানিশা ইফতির দিকে তাকালো। বেচারা বোনের দিকে তাকিয়ে আছে। তানিশাকে সে ভীষণ ভয় পায়। কোনো কারণ ছাড়াই তাকে ভয় পায়। তানিশাকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকাতে দেখে দৌড়ে বোনের আড়ালে চলে গেলো সে। তানিশা কঠোর গলায় বললো,
—– কিছু দেখেছিস তুই?
— ঐ ছেলেটা আপুকে জড়িয়ে ধরেছিলো কেন? আমি আম্মুকে বলে দেবো।
তানিশা এবার ভয় দেখিয়ে বললো,
—– কি বললি তুই? বলে দিবি? ঠিকআছে তোকে আমি রাত তিনটাই তেঁতুল গাছের তলায় রেখে আসবো। একটা রাক্ষসী বুড়ি তোকে চিবিয়ে চিবিয়ে খাবে। রেখে আসবো? আবার বল কিছু দেখেছিস?
ইফতি এবার জোরে জোরে ডানে-বামে মাথা নাড়লো। যার অর্থ “সে কিছুই দেখেনি”।
খানিকটা আঁধারের ভীড়ে সিরাতরাও ধীরেধীরে বাড়িতে ফিরে গেলো। বাড়িতে সবকিছুই স্বাভাবিক। কেউই তাদের খুঁজেনি। শুধু তানিশাকে ওর ভাবী খুঁজছিলো, কিছু একটা বলার ব্যাপারে।
কেটে গেলো আরো কয়েকটা দিন। সিরাতদের এবার শহরে ফেরার পালা এলো। বাবার অফিস, ভাইয়ের স্কুল, সিরাতের কলেজ সবকিছু মিলিয়ে আর থাকা যাবে না। সিরাত খুশি মনে ব্যাপ প্যাক করছে। কারণ তানিশাও যাবে তাদের সাথে। সিরাতের মা নিজেই বলেছে, কয়েকদিন থেকে আসতে। সিরাত বাড়িতে মনমরা হয়ে থাকে। দুজন কয়েকদিন একসাথে থাকলো, ঘুরলে-ফিরলে মন্দ হবে না। তানিশা যাওয়ার ইচ্ছে হলো। কারণ ঐ ছেলেকে নিয়ে তার কৌতুহল কাটছেই না। কিছু একটা ব্যাপার তো আছেই ওই ছেলের মধ্যে।
#চলবে
#Sadiya_Chowdhury_noon
(আসসালামু আলাইকুম। কত সুন্দর করে ‘নেক্সট’ বলিতে পারেন আপনারা। কিন্তু একটা সুন্দর কমেন্ট করতে পারেন না হুহ!)