মেঘভেলায় প্রেমচিঠি” পর্ব ১৩

0
469

“মেঘভেলায় প্রেমচিঠি”

১৩.

রোদসী সবেমাত্র ভার্সিটি থেকে বাসায় এলো। এসেই হাত মুখ ধুয়ে রান্না ঘরে ঢুকে গেলো। ভাতটা সহজে বসিয়ে দিলেও চিন্তায় পড়ে গেলো, আর কী রাঁধবে ভেবে। শেষে আরেক চুলোয় ডাল বসিয়ে, ডিম ভেজে নিলো। গত এক সপ্তাহ যাবৎ রোদসীর মায়ের শরীরটা খুব একটা ভালো যাচ্ছে না। বেশিরভাগ সময়ই জ্বরে পুড়ে থাকে। তাই রান্নার দিকটা রোদসীকেই দেখতে হচ্ছে। কেয়া হোসেন প্রথম দিনে অসুস্থ হওয়া সত্ত্বেও রান্না করেছিলেন, কিন্তু হিতে বিপরীত হলো। আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়লেন ৷ ডাক্তার পর্যবেক্ষণ করে বলেছেন,সিজনাল জ্বর। কিন্তু কেয়া হোসেন বেশ ভয়ে আছেন। তাঁর মতে তিনি আর বেশি দিন বাঁচবেন না।
তাই তাঁর এই অসুস্থতা। আর্শ মায়ের পাশে বসেছিলো। ওকে খাবার দিয়ে রোদসী মায়ের পাশে বসলো খাবারের প্লেট নিয়ে। কেয়া হোসেন খেতে চাইলেন না। রোদসী বলল,

‘এসব কী আম্মু? তুমি বাচ্চাদের মতো জেদ করছো কেনো? ‘

তিনি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বললেন,

‘জেদ কী আর এমনি এমনি করছি। তুই রাজি হলে তো আর জেদ করতে হয়না। ‘

‘তুমি কী চাও আমি আবার বাড়ি ছেড়ে চলে যাই?’

‘দেখ, তোকে কোথাও যেতে হবে না। ‘

‘আমার বিয়ে হলেই বুঝি তুমি সুস্থ হয়ে যাবে?’

‘রোদি,আমি যদি মারা যাই তাহলে তোদের কী হবে বল তো! আরু এখনো ছোট। তোর যদি মরে যাওয়ার আগে একটা গতি করে দিতে পারি, শান্তি পাবো আমি।’

‘কিন্তু.. ‘

‘কিন্তু টিন্তু না। তুই রাজি না হলে আমি না খেয়েই মরবো। ‘

‘উফ আম্মু! আচ্ছা ঠিকাছে। ‘

‘ সত্যি, তুই রাজি? ‘

‘হ্যা হ্যা, এবার তুমি খাও। ‘

কেয়া হোসেন মনে মনে মিটিমিটি হাসলেন। রোদসী বিষন্ন মুখে মা’কে খাইয়ে দিয়ে ঘরে ঢুকে গেলো। রোদসীকে ঘরে যেতে দেখেই বালিশের তলায় থেকে ফোনটা তুলে কাউকে ফোন দিয়ে বিজয়ী হাসি দিয়ে বলল,

‘আপা, মেয়েকে রাজি করিয়ে ফেলেছি। ‘

ওপাশ থেকেও ভেসে এলো উৎফুল্লতার স্বর। দুইজনের হাসিতে সরব হলো ঘর।

_

মলিন মুখে শুয়ে সিলিং ফ্যানটার দিকে তাকিয়ে রইলো রোদসী। জীবন কোন দিকে মোড় নিচ্ছে জানেনা সে। জানতেও আর আগ্রহ জাগেনা। সব ছেড়ে যদি মুক্ত পাখির মতো আকাশে উড়ে যেতে পারতো তবে বেশ হতো। হাসফাস করা জীবন থেকে মুক্তি পাওয়া যেতো। দুই চোখের পাতায় ঘুম নেমে আসতেই অন্ধকারে তলিয়ে যায় সে।

পরদিন সকালে শুনতে পেলো, আজকে নাকি পাত্র পক্ষ দেখতে আসবে তাঁকে। বড্ড বিরক্ত লাগলো তাঁর। এতো কীসের তাড়া? সে তো বুড়িয়ে যাচ্ছে না। তাহলে সবে মাত্র অনার্সে ভর্তি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কেনো তাঁকে বিয়ে দিয়ে দিতে হবে! অঙ্কের হাজার হাজার হিসেব মিলাতে পাকা হলেও আজকের হিসেবটা মিলাতে পারলো না। আনমনা হয়ে কিছুক্ষণ বসে থেকে তারপর মায়ের কাজে সাহায্য করতে লাগলো। কেয়া গদগদ হয়ে কাজ করতে লেগে গেছেন। রোদসীর বারণ শোনেননি। রোদসী নিজের অমত হলেও মাকে এটা ওটা এগিয়ে দিচ্ছে। ভালো না লাগলেও হাসি ফুটিয়ে রাখছে।

বিকেলবেলা মেহমানের জন্য টেবিলে খাবার সাজিয়ে রোদসীকে তৈরি হতে পাঠালেন। রোদসী আগেই বলেছে, ভালো করে খোঁজ নিতে পাত্রের ব্যাপারে। নাহলে, এবার রোদসী বাড়ি মাথায় তুলবে। তিনি আশ্বাস দিয়েছেন, পাত্র নাকি লাখে এক। সোনার টুকরো ছেলে। রোদসী মনে মনে ভেংচি কেটে বলেছে,
কী এমন সোনার টুকরো ছেলে সেও দেখবে,না জানি কোন হাবাগোবাকে এনে বসানো হবে। অনীহা নিয়েই তৈরি হয়ে নিলো। আরু একটু আগে বলেছে, মেহমান এসে গেছে। রোদসী হঠাৎ করেই খানিকটা নার্ভাস হয়ে গেছে। তবুও সেটা প্রকাশ করলো না। ধীর পায়ে মায়ের পিছু পিছু হেঁটে মাথা নিচু রেখে সোফায় বসলো। সামনে থেকে অতি পরিচিত আওয়াজ কানে আসতেই রসগোল্লার মতো চোখ করে সামনে তাকাল।
মুখ বরাবর যাদের দেখলো, বিশ্বাস করে উঠতে পারলো না।
অস্ফুটস্বরে বলল..

চলবে-

(ছোট হওয়ার জন্য দুঃখিত। কালকে বড় করার চেষ্টা করবো। )

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here