মেঘভেলায় প্রেমচিঠি” পর্ব ২১

0
456

“মেঘভেলায় প্রেমচিঠি ”

২১.

ভীতু চোখে একবার মহিলাটির দিকে তাকিয়ে কেঁপে থরথর করে উঠলো রোদসী। মহিলাটা ওর হাত ধরে আছে চোখ বড় করে। রোদসী কাঁপতে কাঁপতে বলল,

‘ছাড়ু..ন আমাকে! ‘

মহিলাটি মুখে করুণা ফুটিয়ে বললেন,

‘বুঝেছি। সবার কাছে ব্যাপারটা ধামাচাপা দিতে চাইছো! জানি জানি ধর্ষিতা মেয়েদের বিয়ে দেয়া কঠিন। ‘

রোদসীর দম গলায় কাঁটার মতো আঁটকে আছে। শ্বাসকষ্ট হচ্ছে একরকমের। অনেক দিনের জমানো কান্না গুলো বের হয়ে আসছে। জায়গাসহ নিজেকেও তো কতোটা পরিবর্তন করেছে, শুধু এই কারণে। নিজের ভয়ঙ্কর অতীতটা নিয়ে কেউ যেনো তাঁকে বারবার প্রশ্নবিদ্ধ করে রক্তাক্ত না করে। সেই ঘটনাটা এখনো খোঁচায় বারংবার। রোদসী সহ্য করতে না পেরে বলল,

‘চুপ করুন আপনারা। এমন কিছু হয়নি। ‘

নিজেকে জোর করে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে রোদসী। দু’টো মহিলা ওকে জোঁকের মতো ধরে রেখেছে। এতো দিনের পুরনো ঘটনা ভুলেনি তারা। এমন সময় শহর এসে উপস্থিত হলো। প্রথমে কিছু না বুঝলেও যখন দেখলো রোদসী কাঁদছে তখন রেগে গেলো। মহিলার কাছে থেকে টেনে রোদসীকে নিয়ে আসলো। চেঁচিয়ে বলল,

‘সমস্যা কী আপনাদের? আমার বউকে ডিস্টার্ব করছেন কেনো! ‘

মহিলা দু’জন একে অপরের দিকে তাকিয়ে রইলো অবাক হয়ে। এতোক্ষণ ধর্ষিতাদের বিয়ে হয়না দেখে হা হুতাশ করলেও, এখন তাদের মুখ দেখে মনে হয়
হচ্ছে যে ধর্ষিতা কারোর বিয়ে হওয়া উচিত ছিলো না।
রোদসীর কীভাবে বিয়ে হলো! এটা হওয়া একদমই উচিত হয়নি। শহর রোদসীর দিকে তাকিয়ে দেখে ভয়ে সিটিয়ে গায়ের সাথে শার্ট খামচে দাঁড়িয়ে আছে। এর কারণ বুঝতে পারলো না। রোদসী তো এমন না! ভয় পেতে কখনো দেখেনি সে। মহিলা দুজনের দিকে কড়া চোখে তাকিয়ে রোদসীকে নিয়ে বাসায় ঢুকলো। রোদসী একদৌড়ে বাসায় এসে দরজা লক করে দিলো। দিলারা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলেন। শহরকে জিজ্ঞেস করতেই শহর বলল,

‘ঐ আমি বকেছিলাম তো তাই। ‘

দিলারা বেশ বকাঝকা করলেন। তবুও শহরের কোনো হেলদোল হলো না। ওর মন পড়ে আছে একটু আগের ঘটনায়। অগত্য দিলারা চলে গেলে শহর ক্লান্ত হয়ে সোফায় বসে পড়লো। তারপর বাহিরে গেলো। সন্ধ্যার দিকে ঘরে ফিরে দেখলো দরজার লক খোলা কিন্তু চাপানো। ঢুকে রোদসীকে ঘরে না পেয়ে বারান্দায় চেক করলো। ও ঢুকতেই তিতুস চেঁচিয়ে ডাকলো। যেনো ওরই অপেক্ষায় ছিলো। বারান্দাটা ঘুটঘুটে আঁধারে ঢেকে আছে। কিছু দেখতে পেলো না। হঠাৎ পায়ে কিছু বাঝলে নিচে তাকিয়ে দেখে রোদসী বারান্দার ফ্লোরে জুবুথুবু হয়ে হাঁটু মুড়ে বসেছে। থুতনি হাঁটুতে ঠেকানো।
শহর চমকে দ্রুত রোদসীকে ধরলো। রোদসী একটুও চমকালো না। মলিন চোখে শহরকে দেখলো। শহর রোদসীর দিকে তাকিয়ে বলল,

‘এই রোদচশমা,কী হয়েছে তোমার? এখানে বসে আছো কেনো? ‘

রোদসী চুপ করে আছে। গালের পাশে চোখের পানি শুকিয়ে যাওয়া দাগ। শহর আলতো হাতে রোদসীর মুখ উঠিয়ে বলল,

‘আমাকে বলবে না? ‘

রোদসীর কী হলো বোঝা গেলো না। শহরকে অবাক করে রোদসী হুট করে জড়িয়ে ধরলো শহরকে। শহর নিজের বুকের পাশে ভেজা অনুভব করতেই বুঝতে পারলো মেয়েটা নিঃশব্দে কাঁদছে। শহর রোদসীর মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো আর কোনো কিছু বলল না।
নিরবতা কাটিয়ে রোদসী একাই বলল,

‘বলবো বলবো, অনে..ক কিছু বল.বো। ‘

শহর রোদসীর কপাল ছুঁয়ে দেখে গা অনেক গরম। তাই কথা জড়িয়ে যাচ্ছে। শহর রোদসীকে টেনে তুলে রুমে নিয়ে শুইয়ে দিলো। গায়ে কাঁথা দিয়ে বলল,

‘এখন না, কালকে বলো। অসুস্থ তুমি। ‘

রোদসী জোড় করে শোয়া থেকে উঠে বসলো। শহরের হাতটা আঁকড়ে ধরে আছে দুই হাতে। চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে। শহরের দিকে তাকিয়ে বলল,

‘নাহ! আমি এখনি বলবো। সব বলবো। কি.ন্তু আপনি চলে যাবেন না ঠিক আছে? সবাই চলে যায় আমাকে ছেড়ে শহর। কেউ থাকে না আমার সাথে! ‘

শহর বুঝতে পারলো না কী বলবে। এতোদিনে কতোবার রোদসীর সঙ্গে কথায় কথায় ঝগড়া
করেছে। এখন কীসের একটা টান অনুভব হচ্ছে। অদ্ভুত মায়ায় জড়িয়ে যাচ্ছে। শহরের বুকের পাশে কেমন কষ্ট লাগলো। রোদসীর পাশে বসে ওর মাথাটা নিজের বুকে চেপে ধরে বলল,

‘তোমাকে আমি চাইলেও ছেড়ে যেতে পারবো না রোদি। ‘

রোদসী নেতিয়ে পড়েছে। ফুপিয়ে কেঁদে উঠছে মাঝে মধ্যে। রোদসী জ্বরের ঘোরে আশেপাশের কিছু দেখতে পাচ্ছে না। ওর চোখে ভাসছে একটা রঙিন মাঠ। যেখানে দুটো মেয়ে কানামাছি খেলছে। আবার কখনো
ক্লাসরুমের বাহিরে কান ধরে দাঁড়িয়ে আছে। তো আবার কারোর বাড়ির গাছের আম চুরি করায় লোকজন এসে বাবার কাছে বিচার দিচ্ছে। অসংখ্য ধোঁয়াটে স্মৃতির পাতায় ফিরে গেলো রোদসী। শহরকে বলতে শুরু করলো স্মৃতির একাংশ –

কেয়া হোসেন চিৎকার করে রাগারাগি করছেন,

‘এবারও ফেল! হে আল্লাহ । পাশ কবে করবি তুই! ‘

‘মা, মনের পাশই বড় পাশ। ‘

‘থাপ্পড় খেলে তোর মনের পাশ বের হবে। ‘

মায়ের কথায় কান দিলো না রোদসী। হাতের আপেলটায় আরেক কামড় দিয়ে হেলেদুলে গুনগুন করে বাসা থেকে বের হলো। সারাজীবন মায়ের এই ফেল কেনো? ফেল কেনো? শুনেই গেলো। লম্বা একটা হাই তুলে মোবাইলে রিম্মিকে কল করলো। রিম্মি রিসিভ করে চিৎকার দিয়ে বলল,

‘দোস্ত! ‘

‘আস্তে আস্তে! কানটা তো নষ্ট করে দিলি। ‘

‘দোস্ত আমি ফেল করেছি! ‘

‘ওহ, তাই তো বলছিলাম, রিমু ভালো মতো পড়, পড়’

‘তুই কী চাপা মারিস! নিজেও তো ফেল, ভুলে গেছিস?’

‘ওও তাইতো! এবার?’

রিম্মি ওপাশ থেকে কপাল চাপড়ে বলল,

‘এবার আর কী? সবাই যা করে তাই! স্যারের কোচিং এ ভর্তি হবো চল।’

‘কোন স্যার? ‘

‘উফ, সূর্য স্যার! ‘

রোদসী বিরবির করে বলল,

‘স্যারের কাছে পড়লেই পাশ! এটা করা ঠিক হবে নারে। ‘

রিম্মি ধমক দিয়ে বলল,

‘আমার সামনে বলদামি করবি না তুই! শোন রোদ, দুনিয়াতে বেশি ভালো মানুষ টিকতে পারেনা। কাল থেকেই আমরা স্যারের কোচিং-এ ভর্তি হবো। এটা ক্লাস টেনের প্রথম টেস্ট। পরের টেস্টে খারাপ করলে
গার্ডিয়ান ডাকাবে। আমি সোহাকেও বলবোনে। তুই কল করে নে একবার, নাম্বার সেন্ড করছি। ‘

‘আচ্ছা ঠিক আছে। ‘

রোদসী ফোনের দিকে তাকিয়ে রইলো। রিম্মি আর সোহা ওর বেস্ট ফ্রেন্ড। ক্লাস ফাইভ থেকেই তিনজন সুপার গ্লুর মতো একসাথে চিপকে থাকে। যেকোনো বাঁদরামোতে স্কুলে সবার আগে ওদের নামই পাওয়া যায়। রোদসী মোবাইলের নাম্বারটায় কল করলো। চার বার রিং হওয়ার পর ওপাশ থেকে পুরুষালী কন্ঠ ভেসে এলো,

‘হেলো, সূর্য মাহতাব স্পিকিং। ‘

চলবে-
লেখিকা -নাঈমা হোসেন রোদসী।

১০+ কমেন্ট হলে কালকে দিবো। নাহলে, পরশু দিন। পরীক্ষার পড়ার মধ্যেও কষ্ট করে লিখি। কমেন্ট হয় মাত্র তিন চারটা। তাও নাইস, নেক্সট। গঠনমূলক মন্তব্য দেখলে অনুপ্রেরণা জাগে ৷ ধন্যবাদ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here