#নিভৃতে_যতনে
#Part_03
#Writer_Asfiya_Islam_Jannat
বিয়ে-শাদির ঘর বলে সকাল হতে না হতেই বাড়ির বড়রা জেগে উঠে। নামাজের পর্ব চুকিয়ে যে যার মত কাজে লেগে যায়। এরপর আরেকটু বেলা হতেই রিলেটিভরা, বড় ভাই-বোনেরা আর পিচ্চি-বাচ্চারা উঠে পড়ে। কালকে হলুদের অনুষ্ঠান শেষে তারা এইখানেই থেকে গিয়েছিল। তারা উঠেই পরিবেশ গরম করে ফেলে। হৈ-হুল্লোড়ে মেতে উঠে আর ছোট বাচ্চা-কাচ্চারা মেতে উঠে নিজের মধ্যে। সকলে নাস্তার পর্ব চুকিয়ে উঠতেই আমার ঘুম ভাঙে। আমিও আড়মোড়া ভেঙে উঠে পড়ি আর রুম থেকে বেরিয়ে আসি। নিজের মত নাস্তা পানি খেয়ে রুমে বসে মোবাইলে গেমস খেলতে থাকি। বেশ কিছুক্ষণ পর হৃদিপু আর কিছু কাজিন হাতে বিয়ের সাজসজ্জা নিয়ে রুমের ভিতর আসে। অতঃপর একেক করে সব আমাকে দেখিয়ে ব্যাগে ভরতে থাকে। একটু পরই নাকি সকলে আমাকে নিয়ে পার্লারের উদ্দেশ্যে রওনা দিবে। আমিও তাদের কথা অনুযায়ী হা হু মিলাতে থাকি। আর তা দেখে হৃদিপু বার বার আমার দিকে আড়চোখে তাকাতে থাকে। কিন্তু মুখ ফুটে কিছু বলে না। হয়তো কালকে রাতে বেরিয়ে যেতে বলায় অভিমান করেছে। বোনটাও না আমার আবার মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণে অভিমানী।
ঘন্টা খানিকের মধ্যেই সবকিছু গুছিয়ে সবাই আমাকে নিয়ে রওনা দেয় পার্লারে উদ্দেশ্যে। মোট ৪ টা রিকশা ভাড়া করা হয় পার্লারে যাওয়ার জন্য। সকল রিকশা ২ জন করে।তো আমার সাথে হৃদিপু এই উঠলো। রিকশা চলছে আপন গতিতে। আমি চুপচাপ বসে আছি। হৃদিপুও আজ নিরব। কোন কথা নেই তার মুখে। তা দেখে আমি এক হাত দিয়ে আপুকে জড়িয়ে ধরে বলি,
— আমার বইনাটা কি আমার সাথে রাগ করেছে?
হৃদিপু আমার হাত সরাতে সরাতে বলে,
— যা সর তো। আর আহ্লাদ দেখাতে হবে না।
আমি আপুকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলি,
— সরি তো। ভালো লাগছিল না বিধায় চলে যেতে বলেছিলাম তোমায়। আচ্ছা যাও এত গুলা সরি। এইবার মাফ করে দাও।
— হুহ! হুহ! সর সর!
আমি আপুকে ছেড়ে দিয়ে নাক ফুলিয়ে বলি,
— আর কিছু ঘন্টাই তো আছি। জ্বালিয়ে নাও। এরপর আর পাবা না আমায়। হুহ!
— এই মেয়ে! এই! কি বললি তুই? মাইর দিব এক। তোকে পাবো না মানে কি? তোকে না পেলে তুই যেখানেই থাকস না কেন একবারে উঠিয়ে নিয়ে আসবো। হুহ!
আমি হালকা হেসে বলি,
— আমাকে উঠাতে পারবা তো?
হৃদিপু আমার বাহুতে চাপড় মেরে বলে,
— সবসময় ফাজলামো।
আমি আর কিছু না বলে আপুকে জড়িয়ে ধরি। আপু আমায় এক হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে বলে,
— জীদ বা রাগ বিয়েটা করিস না সিয়া। নিজের মন থেকে বিয়েটা না করতে চাইলে পালিয়ে যা।
আমি অবাক চোখে হৃদিপুর দিকে তাকিয়ে থেকে বলি,
— বাহ রে! এই তুমি না কালকে বললা বিয়েটা করতে। এখন তুমিই বলছো বিয়েটা না করতে?
— হ্যাঁ বলছি। কারণ আমি চাই না তুই রাগের মাথায় কোন সিদ্ধান্ত নিস আর নিজের জীবন নষ্ট করিস। তোর নিজের জীবন নিয়ে অনেক এমবিশন আছে আমি জানি। আমি চাই তুই সেগুলো পূরণ কর। কেউ তোর পাশে থাকুক আর নাই থাকুক আমি আছি।
আমি হালকা হেসে বলি,
— তুমি যা ভাবছো তেমন কিছুই না আপু। আমি কোন কিছু এইভাবেই হুট করে বলি না জানোই তো। সিদ্ধান্তটা আমি অনেক ভেবে চিন্তেই নিয়েছি। বিয়েটা হচ্ছে হতে দাও। এতেই হয়তো সবার ভালো হবে। আর রইলো আমার কথা? আমি তো নরকেও ভালো থাকার উপায় জানি। তো আমাকে নিয়ে চিন্তা করার তো প্রশ্নই আসে না। এন্ড ইউ নো আমি কখনো আমার নেওয়া সিদ্ধান্তের উপর আফসোস করি না। যদি সেটা আমার মৃত্যুও বয়ে আনে তাও না।
— জানি কিন্তু তোর ইচ্ছা,স্বপ্ন ওইগুলো?
— যেখানে জীবনের মূল লক্ষ্যটাই ছেড়ে দিয়েছি সেখানে আর আমার এই ক্ষুদ্র ইচ্ছা বা স্বপ্ন তো অতি তুচ্ছ। আর মোট কথা আমি এখন সব আল্লাহ এর হাতে ছেড়ে দিয়েছি। আমাকে নিয়ে তার যা করার সে করবে। আমি শুধু এখন নিজের মত থাকতে চাই। যেভাবে আমি চাই।
হৃদিপু কিছু না বলে আমার মুখপানে তাকিয়ে থাকে।
______________________
ভেনুতে এসেছি ঘন্টা খানিক আগেই। আমাকে স্টেজে সঙ সাজিয়ে বসিয়ে দিয়ে সবাই এখন পরাগপার। আমিও মূর্তির মত বসে নিবিড় দৃষ্টিতে চারদিকটা দেখছি। সকলের মনে কত উচ্ছাস, কত আনন্দ। অথচ যাকে ঘিরে এই অনুষ্ঠান সেই নির্জীব। ক্ষণে ক্ষণে মানুষ এসে দেখে যাচ্ছে। হালচাল জিজ্ঞেস করে যাচ্ছে। আমিও ঠোঁটে কোনে স্মিত হাসি ঝুলিয়ে জবাব দিচ্ছি৷ মাঝে দুইবার ফটোগ্রাফার এসে ছবি তুলার প্রস্তাব দিয়ে গিয়েছে। কিন্তু আমি প্রতিবারই নাকচ করে দিয়েছি৷ এত ঢঙ ভাঙ করে ছবি তুলার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা হচ্ছে না আমার।
বেশ কিছুক্ষণ হৃদিপু আর বাদবাকী কাজিনরা স্টেজে উঠে আসে। সাথে তারা ফটোগ্রাফারকেও নিয়ে আসে ছবি তুলার জন্য। সকলেই একেক করে আমার সাথে ছবি তুলতে থাকে। ছবি তুলা শেষে অনেকে নেমে যায় অনেকে আবার স্টেজে দাঁড়িয়ে ছবি তুলতে থাকে। তখন হৃদিপু এসে আমার পাশে বসে। হাল্কা গলায় ঝেড়ে বলে,
— কে যেন আমায় বলেছিল সে তার নেওয়ার সিদ্ধান্তের উপর কখনো আফসোস করে না।
আমি হৃদিপুর কথা শুনে সুরু দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে বলি,
— আফসোস কে করছে?
— তুই যে রকম ফেস করে বসে আছিস তাতেই তো তাই মনে হচ্ছে তুই আফসোস করছিস। মনমরা হয়ে আছিস কেন তুই?
আমি থমথমে গলায় বলি,
— ভাল্লাগছে না কিছু।
হৃদিপু আমার হাতের উপর হাত রেখে বলে,
— সিদ্ধান্ত যখন নিয়েই নিয়েছিস সেহেতু নিজের মত করেই সেটা এক্সেপ্ট কর। নিজেকে কেন পরিবর্তন করছিস?
আমি অবাক সুরে বলি,
— পরিবর্তন দেখলে কোথায়?
— নিজেকে নিজেই এই প্রশ্নটা কর উত্তর পেয়ে যাবি। দেখ যত যাই হোক না কেন নিজেকে চেঞ্জ করিস না প্লিজ। তুই আগে যেমন ছিলি তেমনই থাক।
কথাটা শুনে আমি হৃদিপুর দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম। হৃদিপু একটু থেমে আবার বলে,
— তুই কথাটা এডমিট কর আর নাই কর। কালকের ঘটনাটা তোর উপর ইফেক্ট করেছে। আর তুই সেটাই ধরে বসে আছিস। কিন্তু কেন? আমি যে সিয়াশাকে চিনি সে তো এইসব কথা ধরে রাখার মানুষ নয়। সে তো জীবনকে উপভোগ করতে যানে। হাজার কষ্টের মাঝেও হাসতে জানে। তাহলে সে কেন আজ নিজের মুখে হাসি ফুটাতে পারছে না। কেন? তোর ডেমন কেয়ার ভাবটা আজ কই?
আমি হৃদিপুর কথা শুনে আনমনে ভাবি, “আসলেই তো আমি কেন মনমরা হয়ে আছি? কাকে দেখানোর জন্য? এইখানে তো মা আর আপু বাদে কেউ আমার আপন নয়। আমি মরি নাকি বাঁচি তাতে কারো কিছু যায় আসে না। তাহলে? আমি কেন নরমাল হতে পারছি না। সিয়াশা ইউ হ্যাভ টু বি ফাইন। আজ তোর বিয়ে, ইঞ্জয় কর। ফিল ফ্রি। সবাইকে দেখিয়ে দে তোর উপর কোন কথার ইফেক্ট পরে না। ইউ ডোন্ট কেয়ার এবাউট এনিওয়ান”
কথাটা নিজেই নিজেকে বলে দীর্ঘ নিঃশ্বাস নিয়ে মুখে হাসি ফুটিয়ে তুললাম। তারপর হৃদিপুর দিকে তাকিয়ে বলি,
— আ’ম ফাইন। এত টেনশন কেন করো আমাকে নিয়ে বলতো? জানো না বেশি টেনশন করলে মুখে ভাঁজ পরে যায়? অল্প বয়সে বুড়ি হতে চাও নাকি? দেইখো কিন্তু, বুড়ি হয়ে গেলে কিন্তু তোমার ডট ডট পালিয়ে যাবে।
হৃদিপু আমার বাহুতে চাপড় মেরে বলে,
— আস্তাগফিরুল্লাহ! বইন হইয়া বোনের জন্য বদদোয়া করোস। খাটাশ মাইয়া।
আমি দুষ্টুমির সুরে বলি,
— বাতাসে প্রেম প্রেম গন্ধ পাচ্ছি। আহা কি প্রেম!
হৃদিপু সুরু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,
— চুপ কর বইনা। আশেপাশে বহুত মানুষ। কেউ শুনলে কেলেঙ্কারি লেগে যাবে।
— জানো! আমার না মাঝে মাঝে সন্দেহ হয় তুমি আদৌ প্রেম করো কি না। প্রেম করতে ভাই সাহস লাগে আর তোমার মধ্যে সাহসের ‘স’ ও নাই। কেমনে কি ভাই? কাঁঠালের সাথে বাঙ্গী।
কথাটা শুনে হৃদিপু রাগী দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকায়। তারপর বলে,
— আপনা টাইম ভি আয়গা। বিয়ে তো করছিস। এরপর বুঝাবো নে আমি, কত ধানে কর চাল।
আপুর কথা শুনে হঠাৎ আমার গুণধর বরের কথা মস্তিষ্কে টনক নাড়ে। আমি চটজলদি বলে উঠি,
— বাই দ্যা রাস্তা ওই ব্যাটার আজ খবর আছে। এখন যা হচ্ছে সব টারই মেহেরবানী। দুই নাম্বারি করার অনেক শখ তাই না। বোঝাচ্ছি আমি। এর জীবন যদি আমি ত্যানাত্যানা না করেছি আমার নামও সিয়াশা না।
আমার কথা শুনে আপু হু হু করে হেসে উঠে। তারপর বলে,
— আহা! বেচারা আমার দুলাভাই।
— দুলাভাই না কঁচু। হুহ!
হৃদিপু হঠাৎ আমার হাতে হাত রেখে বলে,
— এই সিয়াকেই তো আমি এতক্ষণ খুঁজছিলাম। সবসময় এইভাবেই থাক বোন। আচ্ছা এখন চল ছবি তুলবি।
কথাটা বলেই আপু ফটোগ্রাফারকে ডেকে এনে আমায় টেনে নিয়ে যায় ছবি তুলার জন্য। এর ঘন্টা খানিক বাদেই বরযাত্রী এসে হাজির হয়। চারদিকে কোলাহল বেড়ে যায়। চারদিকে থেকে সকলে বলে উঠে, “বর এসেছে! বর এসেছে।” সকলে ব্যস্ত হয়ে তাদের আপ্যায়নের জন্য আর ছোটরা হামলে পরে গেটের উপর। উদ্দেশ্য সালামি আদায়। এই সালামির এমাউন্ট নিয়েই দুইপক্ষের মধ্যে একপ্রকার দ্বন্দ্ব লেগে যায়। অতঃপর একটা জায়গায় এসে দুইপক্ষ মিলে বোঝাপড়া করে নেয়। গেট ছাড়া হয়। বরকে নিয়ে এসে আমার পাশে বসানো হয়। আমার পাশে বর এসে বসতেই আমি তার দিকে কটমট দৃষ্টিতে তাকাই। পরক্ষণেই নিজের দৃষ্টি সরিয়ে নিয়ে নিচের দিকে তাকাই। নিজের রাগ সংযত করি। এইভাবে ইচ্ছে তো করছে একে এইখানেই ধুয়ে দেই। কিন্তু কথায় আছে না, “সবসময় মনের জোর চলে না।” আমার বেলায়ও তাই হচ্ছে আজ।
কিছুক্ষণের মাঝেই কাজী এসে হাজির হয়। আমাদের পাশের সোফায় তাকে বসানো হয়। সে মিনিট পাঁচেক এর মধ্যেই বিয়ে পড়াতে শুরু করে। সকলেই আমাদের ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে। আর আমি! কোন এক ঘোরের মধ্যে যেন ঢুবে গিয়েছি। খানিকক্ষণ বাদেই কাজীর কথা কানে এসে বারি খায়।
— জনাব ওসমান আলী ও জনাবা আয়েশা বেগমের কনিষ্ঠ কন্যা ‘সিয়াশা ইয়াসমিন’ এর সাথে জনাব শাহরিয়ার তৌসিফ ও জনাবা সালমা বেগমের একমাত্র ছেলে ‘আদনাফ জুহায়র রোয়েন’ এর সাথে এত টাকা দেনমহরে দুইজনের বিবাহ ধার্য করিয়া হইলো। বাবা তুমি কি এই বিয়েতে রাজি? রাজি থাকলে বলো কবুল।
বরকে কথাটা জিজ্ঞেস করতেই সে কবুল বলে দেয়। অতঃপর আমাকে কবুল বলতে বললে আমিও ঝামেলা ছাড়া কবুল বলেই। দেখতেই দেখতে আমার বিয়ে হয়ে যায়। হয়ে যাই আমি কারো অর্ধাঙ্গিনী। জড়িয়ে যাই এক নতুন সম্পর্কে আর ভেঙ্গে দেই পুরনো সকল সম্পর্ক। শুরু হয় জীবনের নতুন এক অধ্যায়।
______________________
মিনিট দশেক আগেই সকলে মিলে আমায় একটি রুমে বসিয়ে দিয়ে গিয়েছে। যাওয়ার আগে বলে দিয়ে গিয়েছে, এখন থেকে এইটাই নাকি আমার রুম। তার রুম থেকে যেতেই আমি চারদিকে চোখ বুলিয়ে নেই। চারদিকটা ফুলের ঘ্রাণে মো মো করছে। খুব সুন্দর করে ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে রুমটি। রুমে তেমন আসবাবপত্র না থাকলেও যা আছে তা পরিপাটিভাবেই রাখা। দেয়ালে তেমন কোন ফটোফ্রেম নেই। শুধু বেড সাইড টেবিলে একটি ফটোফ্রেম রাখা। তাতে ভাসছে এক শ্যাম বর্ণ ছেলের প্রতিচ্ছবি। ছেলেটা আর কেউ নয় বরং ঘন্টাখানিক আগে হওয়া আমার জামাই। হুহ! আমি চারদিকে চোখ বুলিয়ে উঠে দাঁড়াই। কাবার্ডের কাছে রাখা আমার লাগেজটার দিকে এগিয়ে যাই। প্রচন্ড অস্থির লাগছে। ফ্রেশ হওয়ার দরকার। তাই লাগেজটা খুলে এক সেট কামিজ আর টাওয়াল বের করে নিলাম। রুমের সাথে ওয়াশরুম থাকায় আমার অসুবিধা হলো না। ঢুকে পড়লাম ওয়াশরুমে। ওয়াশরুমে ঢুকেই আগে মুখে কতক্ষণ পানির ঝাপটা দিলাম। অতঃপর সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে আয়নায় নিজেকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগলাম। ক্লান্তিতে মুখটা একদম শুকিয়ে এসেছে। হঠাৎ মনের দুয়ারে আমার বিদায়ের ঘটনাটা কড়া নারে। চোখের সামনে ভেসে উঠে সেই দৃশ্যটি।
বিদায়ের সময় ঘনিয়ে আসতেই আমাকে ধরে সবাই বাইরে নিয়ে আসে। তুলে দেওয়া হয়ে আমাকে। মা আর হৃদিপু বাদে কাউরো চোখে পানি ছিল না। শুধুমাত্র হাতে গনা কয়েক কাজিনদের চোখ নরম হয়ে এসেছিল। এর বাদে সকলেই মুখ ঘুরিয়ে রেখেছিল। অনেকে নিজেদের মধ্যে মত্তো ছিল। বাবা উরফ ওসমান সাহেব শক্ত মুখে দাঁড়িয়ে ছিলেন। নাসরিন বেগম তো ছিলেন দৃষ্টির বাইরে। আমি সবকিছুই নির্বিকার ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে পর্যবেক্ষণ করছিলাম। আমার ছিল না তখন পানি। ছিল এক রাশ হতাশা আর ধিক্কার। শুধুমাত্র আসার আগে আমি মা আর হৃদিপুকে বলে আসি। অতঃপর ওসমান সাহেবের সামনে গিয়ে শুধু বলি,
— অন্যায় করে কেউ কখনো পার পায় না। কথাটা মনে রাখবেন আর ভালো থাকবেন!
কথাটা বলেই আমি গাড়িতে উঠে বসেছিলাম। তখন চোখ দিয়ে দুই ফোটা নোনাজল গড়িয়ে পড়লেও কেউ দেখার আগেই মুছে ফেলি। নিজেকে শক্ত করে ফেলি। একবারের জন্যও পিছনে ফিরে তাকাইনি আর। চুপচাপ চলে আসি অন্যের নীড়ে।
ঘটনাটা মনে পড়তেই আমি দীর্ঘ নিঃশ্বাস নেই। মনে মনে ভেবে নেই, “অতীত ভুলে যা সিয়াশা। ভবিষ্যতে ফোকাস কর।” অতঃপর সবকিছু মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে লম্বা একটা শাওয়ার নিয়ে বেরিয়ে আসি। বেরিয়ে এসে দেখি রুম এখনো ফাঁকা। বুঝতে আর দেরি নেই সে এখনো রুমে আসে নি। আমি কিছু না বলে চলে যাই বেলকনিতে। টাওয়ালটা মেলে দিয়ে রুমে এসে পায়চারী করতে থাকি। মূলত সেই মহান ব্যক্তিটির অপেক্ষা করতে থাকি। যে নাকি এখন আমার বর। আমি হাটছি আর মনে মনে ভাবছি, “একবার রুমে আসুক ওই ব্যাটা। দেখাচ্ছি মজা। আমাকে বিয়ের করার স্বাদ মিটাচ্ছি”
কথাটা ভেবেই রাগে ফুঁসতে থাকি। বেশ কিছুক্ষণ পর দরজা খোলার আওয়াজ কানে আসে। আমি দরজার দিকে তাকাতেই দেখি মহাশয় এসে হাজির হয়েছেন। তাকে দেখা মাত্র আমি দাঁড়িয়ে যাই। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রই তার দিকে। সে রুমে এসে দরজা ভিজিয়ে দেয়। অতঃপর আমার দিকে চোখ পড়তে সে আমার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকায়। আমি কিছু বলতে যাব তার আগেই সে বলে উঠে,
— লেট্ মে বি ফ্রেশ ফার্স্ট।
কথাটা বলেই সে গটগট করে কাবার্ডের দিকে চলে যায় আর নিজের এক সেট কাপড় বের করে ঢুকে পরে ওয়াশরুমে। আর আমি সেইদিকে হা হয়ে তাকিয়ে থাকি। ঘটনাটা ক্রমে আমার বুঝতে সময় লেগে যায়। অতঃপর যখন বুঝতে পারি তখন ক্রোধে ফেটে যাই আমি। প্রায় মিনিট দশেকের উপরে কেটে যায় কিন্তু ব্যাটার বের হওয়ার কোন নামই নেই। আমি পুনরায় পায়চারী করতে থাকি। পাক্কা আধাঘন্টা পর সে বেরিয়ে আসে৷ সে বেরিয়ে আসতেই আমি তার দিকে প্রশ্ন ছুঁড়ে মারি,
— এই বিয়ে কেন করেছেন আপনি? হুয়াই? আপনাকে সব জানানোর পরেও কিভাবে করলেন আপনি এই বিয়েটা?
আমার কথা শুনে সে পুনরায় ভ্রু কুঁচকে তাকায়। অতঃপর ভাবলেশহীন গলায় বলে,
— কি জানিয়েছিলে তুমি আমায়?
কথাটা শুনে আমি একটু অপ্রস্তুত হয়ে পড়ি। পরক্ষণেই নিজেকে সামলে বলি,
— এইটাই যে আমি অন্য কাউকে ভালবাসি।
তারই ভালবাসার চিহ্ন এখন আমার গর্ভে বেড়ে উঠছে।
কথাটা শুনে সে ধীর পায়ে আমার দিকে এগিয়ে আসে। কিন্তু তাতে আমার মধ্যে কোন ভাবান্তর দেখা গেল না। আমি এখনো নিজের স্থানে ঠাই দাঁড়িয়ে আছি। সে আমার কাছে এসে আমার মুখের সামনে এক ঝুঁকে বলে,
— সবই বুঝলাম বাট বাচ্চাটা কার? ভূতের নাকি জ্বীনের? নাকি কোন ভ্যাম্পায়ারের?
#চলবে