নিভৃতে_যতনে পর্ব ৬

0
3372

#নিভৃতে_যতনে
#Part_06
#Writer_Asfiya_Islam_Jannat

খাটের এক কোনে তব্দা মেরে বসে আছি। শীতল চোখে সামনে তাকিয়ে আছি৷ আমাকে ঘিরে প্রায় আট-দশজন ছেলেমেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সকলের পরিচয় তারা রোয়েনের কাজিন। রাহি,কুহু,ইশান হচ্ছে একদম আন্ডা-বাচ্চা টাইপ। জেরিন,ফাহিম হচ্ছে কিশোর-কিশোরী। নিহান,রেশমি,রাত হচ্ছে আমার বয়সী বা আমার চেয়ে হয়তো একটু বড়। নুরি,শুভ,নীলা এরা হচ্ছে রোয়েনের বয়সী বা তার চেয়ে বড়। নুরি আর নীলা আপু দুইজন বিবাহিত আর সেই আন্ডা-বাচ্চাগুলো তাদের দুইজন এরই। বাচ্চারা রুমের এক কোনে বসে খেলছে আর বাদ-বাকি সকলেই মিলে আড্ডার আসর জমিয়ে দিয়েছে। সকলেই এই সেই প্রশ্ন করে চলেছে। আমার কি পছন্দ না পছন্দ? হ্যানত্যান! এত প্রশ্নের ভীড়ে মাথাটা একদম ধরে এসেছে। কিন্তু তাও নিজেকে সংযত করে বসে আছি। এইদিকে কথায় কথায় নুরি আপু বলে উঠে,।

— বুঝলে সিয়াশা! তোমার ভাগ্যে এক রোবট জুটেছে।

আমি নুরি আপুর কথা শুনে কৌতহুল দৃষ্টিতে তার দিকে তাকাই। পাশ থেকে শুভ ভাই বলে উঠে,

— শুধু কি রোবট বইন? ওই তো রোবটের চেয়েও অধম।

শুভ ভাইয়ার কথা শুনে বাকিরা হেসে উঠে। আমি এখনো গোলগাল চোখে তাদের দিকে তাকিয়ে আছি। আমার দৃষ্টির মর্ম বুঝতে পেরে নীলা আপু হাসি মুখে আমাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে,

— কি কিছু বুঝো নি?

আমি দুইপাশে মাথা দোলালাম। যার অর্থ আমি বুঝিনি। নুরি আপু বলে উঠে,

— ভাই আমাদের সেই ইন্ট্রোভার্ট। বলতে গেলে হাই লেভেলের ইন্ট্রোভার্ট। এর মুখ দিয়ে কথা বের করানো আর পাহাড় খুঁড়ে ইঁদুর খুঁজে বের করা একই কথা। সবসময় নীরব আর একা থাকতে ভালোবাসে। বলতে গেলে একঘেয়ে টাইপ।

নুরি আপুর কথার মাঝেই নীলা আপু বলে উঠে,

— এইভাবে ভাই আমার ভালোর ভালো। শান্ত-শিষ্ট। কিন্তু একবার রেগে গেলে কেয়ামত আনতে দেরি নেই। কথায় আছে না, ‘শান্ত-শিষ্ট মানুষদের কখনো রাগাতে নেই। নাহলে আজাব বয়ে যায়।’ রোয়েনের বেলায়ও কথাটা শতভাগ সত্য।

হঠাৎ নীলা আপুর কথার মাঝে শুভ ভাই ফোঁড়ন দিয়ে বলে,

— আসল কথা বলস না কেন তোরা? নাহলে ভাবী বুঝবে কিভাবে রোয়েন আসলে কোন উচ্চতর জাতের প্রাণী।

কথাটা বলে শুভ ভাইয়া আমার দিকে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলেন,

— তো শুনেন ভাবী। আপনার অতি প্রিয় বরের কান্ড। সে বিয়ের কোন অনুষ্ঠান এই করতে রাজি ছিল না। বিয়েতে নাকি সোরগোল বেশি হয়, গেদারিং বেশি হয় তাই সে চায় না কোন প্রকার অনুষ্ঠান হোক৷ তার কথা অনুযায়ী সে যাবে, কবুল বলবে আর বউ নিয়ে চলে আসবে। এর মধ্যে এত হৈ-হুল্লোড়ের কি আছে? কিন্তু মামা-মামী কি আর তা মানে? একমাত্র এর ছেলের বিয়েতে নাকি কোন প্রকার অনুষ্ঠান করবে না তা কি মানা যায়? অবশেষে মামা-মামীর অতি জোড়াজুড়িতে সে রাজি হয়। মানে মানুষ কোন লেভেলের রস-কসহীন হলে এমন কথা বলে বলুন তো ভাবী?

শুভ ভাইয়ার কথা শেষ হতেই পাশ থেকে নীলা আপু বলে উঠে,

— হলুদের দিন কি করলো মনে নেই? বড়দের হলুদ ছোঁয়ানোর পর যখন আমাদের পালা এলো তখন সে উঠে রুমে চলে আসলো। আর দরজাও খিল মেরে রাখলো৷ বেয়াদব একটা!

নুরি আপু হেসে বলে,

— কারণ তোরা যে ওকে হলুদ আর রঙে ভূত বানানোর মাস্টার প্ল্যান করছিলি তা ও জেনে গিয়েছিল। তাই তো তোদের পালা আসতেই পালিয়েছে।

কথাটা বলেই নুরি আপু হু হু করে হেসে উঠে। নীলা আপু ও শুভ ভাই মুখ ভোতা করে একেক অপরের দিকে তাকায়৷ হঠাৎ শুভ ভাই একটু গম্ভীর হয়ে বলার চেষ্টা করে,

— এইখানে কে মীরজাফর গিরি করেছে তা বলে দে। তার গর্দান নিব আমি আজ।

কথাটা শুনার সাথে সাথে জেরিন দাঁড়িয়ে গিয়ে বলে,

— শুভ ভাই! মীরজাফরের দিন শেষ ঘষেটি বেগমের বাংলাদেশ।

কথা বলেই জেরি৷ দাঁত কেলিয়ে এক দৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। তা দেখে শুভ চেঁচিয়ে বলে,

— রোয়েন ভাইয়ের চামচি! আমাদের গোপন কথা পাচার করিস, সাহস তো কম না। আজ তোকে পেয়ে নেই খবর আছে।

কথাটা বলতেই বলতে শুভ ভাই রুম থেকে বেরিয়ে যায় জেরিনের খোঁজে। আর তা দেখে বাকি সব হাসিটে গড়াগড়ি খায় এমন অবস্থা। আর এইদিকে আমি সবার কথা শুনে বিরবির করে বলে উঠি,

— ব্যাটা দেখি আস্ত নিরামিষও।

আমাকে বিরবির করতে দেখে নীলা আপু জিজ্ঞেস করে উঠে,

— কিছু বললে?

আমি তার কথায় ভড়কে গিয়ে আমতা আমতা করে বলি,

— না তো।

আমার কথার প্রত্যুত্তরে নীলা আপু কিছু বলবে এর আগেই রুমে আমার শ্বাশুড়ি মানে সালমা বেগম এসে হাজির হোন। রুমের ভিতর ঢুকতে ঢুকতে তিনি সকলের উদ্দেশ্যে বলেন,

— নতুন সদস্যকে পেয়ে বুঝি ছাড়তে ইচ্ছে করছে না? কিন্তু তাকেও তো একটু আরাম করতে দিতে হবে নাকি?

তার কথা শুনে নুরি আপু বলে উঠে,

— কথার তালে ভুলে গিয়েছিলাম চাচী। এই নীলা চল। ভাবী এখন যাই তুমি রেস্ট নাও। পরে আবার আসব নে।

আমি কিছু না বলে মিষ্টি এক হাসি হেসে মাথা দুলাই। নীলা আর নুরি আপু সবাইকে নিয়ে বেরিয়ে যায়। সকলে বেরিয়ে যেতেই সালমা বেগম আমার দিকে এগিয়ে আসে। আমার পাশে বসে বলে,

— ঠিক আছো তো মা? তোমার কোন সমস্যা হচ্ছে না তো?

আমি মাথা নিচু করে বলি,

— জ্বী না আন্টি৷

সে আমার হাত তার কোলে নিয়ে বলে,

— আন্টি কি হ্যাঁ? মা বলে ডাকবা। সকালে ছাড় দিয়েছি বলে এখন দিব না কিন্তু।

আমি মাথা নিচু রেখেই ইতস্তত সুরে বলি,

— জ্বী আচ্ছা।

সে আমার থুতনি ধরে মুখ উঁচু করে ধরে বলে,

— আমাকে মা ডাকতে তোমার কোন সমস্যা আছে?

আমি সাথে সাথে বলে উঠি,

— না! না! তেমন কিছু না।

— তাহলে মা বলে ডাকো।

আমি নিভু নিভু স্বরে বলি,

— মা!

সে স্মিত হেসে বলে,

— পরিবেশ নতুন, খাপ খাওয়াতে সময় লাগবেই৷ জানি বিষয়টা এতটা সহজ নয়৷ নতুন এক পরিবারে এসে, তাদের আপন করে নেওয়া,খাপ খায়িয়ে নেওয়া। কিন্তু চেষ্টা তো করতে হবেই নাকি?

আমি হ্যাঁ সূচক মাথা দুলিয়ে বলি,

— জ্বী।

সে আমার থুতনি থেকে হাত সরিয়ে বলে,

— আমার সাথে এতটা জড়তা নিয়ে কথা বলতে হবে না। স্বাভাবিক ভাবেই কথা বলো। হয়তো তোমার আমাকে মনে নেই, কিন্তু আমার যে আছে। সেই ছোট থেকে চিনি তোমায়।

আমি তার কথা শুনে মুখ চাই। কৌতহুল ভরা কন্ঠে জিজ্ঞেস করে উঠি,

— আমাকে আপনি ছোট থেকে চিনেন?

— হ্যাঁ চিনি। তোমার ৩ বছর হওয়ার আগ পর্যন্ত আমরা তোমাদের পাশের ফ্ল্যাটটাই ছিলাম। সেখানে থাকাকালীন এই তোমার পরিবারের সাথে আমাদের খুব ভালো সম্বন্ধে গড়ে উঠে। এমনকি মাঝে মধ্যে তোমায় আমি নিজের হাতে খায়িয়েও দিয়েছি।

— আমার মনে নেই।

কথাটা বলেই মাথা নিচু করে ফেললাম। সালমা বেগম হালকা হেসে বলে,

— আরেহ বোকা! এতে মন খারাপ করার কি আছে? অতটুকু বয়সে এইসব মনে থাকার কথা নাকি?

আমি কিছু না বলে চুপ করে রই। সে স্মিত হেসে বলে,

— দেখো মা! আমার যাওয়ার পরে যেহেতু তোমায় এই সংসার দেখতে হবে সেহেতু কিছু বিষয় সম্পর্কে তোমার আগ থেকে জেনে রাখা ভালো।

আমি তার কথা শুনে মুখ তুলে তাকিয়ে বলি,

— আপনার যাওয়ার পরে মানে?

— আমি আর তোমার শ্বশুর তো এইখানে থাকি না। দেশের বাড়িতে থাকি। তোমার শ্বশুর সেখানেই একটা স্কুলের হেডমাস্টার। তো সেই সুবাদে তার সাথে আমাকেও তার সাথে দেশের বাড়িটাতেই থাকতে হয়।

আমি তার দিকে গোলগাল চোখে তাকিয়ে বলি,

— তার মানে আমাকে এইখানে একাই থাকতে হবে?

সে হালকা হেসে বলে,

— একা কোথায়? রোয়েন আছে না। তার উপর একটা কাজের লোক আছে যে তিনবেলার খাবার রেঁধে দিয়ে যাবে আর সেই সাথে সব কাজও করে দিয়ে যাবে৷ চিন্তা নেই, আমিও মাঝে মধ্যে এসে বেড়িয়ে যাব।

আমি কিছু না বলে মাথা নুয়ে ফেলি৷ সে তা দেখে আবার বলতে শুরু করে,

— আমার ছেলেটা জানো বড্ড চাপা স্বভাবের। বলতে পারো অন্তর্মুখী। বেশি মানুষ পছন্দ করে না। সহজে কারো সাথে মিশতে পারে না। নিজের মনের কথা কাউকে বলতে পারে না। একবারেই দরকার ছাড়া বেশি একটা কথাও বলে না। ওর মধ্যে ভাবান্তর জিনিসটা তেমন নেই। একটু কেমন যেনো ও। তাই ওকে ভুল বুঝো না তুমি। ছেলে আমার ছোট থেকেই মেধাবী। ছোট থেকেই পড়ালেখার প্রতি ওর যত আগ্রহ। আর এখন কাজ নিয়ে। কাজের উর্ধ্বে ওর জন্য কিছু নেই৷ কাজ একদিকে পুরো পৃথিবী একদিকে। বুঝতে পারছো আমি কি বলছি?

— জ্বী পারছি।

সে আমার হাত আরেকটু চেপে ধরে বলে,

— তোমার কাছে আমার একটাই অনুরোধ, আমি চাই তুমি আমার ছেলেটাকে দেখে রাখো। ওকে বুঝার চেষ্টা করো। ওর অর্ধাঙ্গিনী হয়ে সর্বদা ওর পাশে থাক। আগলে রাখো ওকে। বিপদে ওর পাশে দাঁড়াও। কি পারবে না?

আমি মাথা নেড়ে বলি,

— হ্যাঁ পারবো মা।

সে হেসে বলে,

— শাড়ি পড়ে থাকতে অস্বস্তি লাগছে না? যাও চেঞ্জ করে নাও। আর কাউরো কোন কথা কানে নিবে না। মানুষের কাজই হলো বলা। এক কান দিয়ে শুনবে আরেক কান দিয়ে বের করবে। কেমন?

আমি পূর্ণ দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে সৌজন্য মূলক হাসি দেই৷ এই হাসির মধ্যে নেই কোন কৃত্রিমতা৷ আছে শুধু এক রাশ ভালবাসা আর শ্রদ্ধা।

___________________

রাতে খাবারের পর্ব চুকিয়ে রুমের ভিতরে আসতেই দেখি রোয়েন খাটের উপর বসে ল্যাপটপ চালাচ্ছে। আমি তার দিকে কিছুক্ষণ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে ডেসিং টেবিলের দিকে চলে যাই। চুলে বিনুনি করতে করত আজকের কথা ভাবতে থাকি।

আজ আমার আর রোয়েনের বৌ-ভাতের অনুষ্ঠান ছিল। অনুষ্ঠানে রোয়েনের পক্ষ থেকে সকলে উপস্থিত থাকলেও আমার পক্ষ থেকে শুধু ছিল মা,চাচা-চাচী,হৃদিপু আর কিছু কাজিনস। বাকি আর কেউ আসে নি। হয়তো আসার দরকার মনে করে নি। অবশ্য আমি নিজেও আশা রাখি নি যে এদের বাদে আর কেউ আসবে। আমার আপন বলতে হৃদিপু আর মায়েই। তো তারা যেহেতু এসেছে আমার কি আর কারোর দরকার আছে?
হৃদিপু এসেই আমায় জড়িয়ে ধরে। আবেগে প্রায় কেঁদে দেয় দেয় অবস্থা। মেয়েটা আমায় এত ভালবাসে যে বলার মত না। এইদিকে মা তো প্রায় কেঁদেই দিয়েছিল। কত কষ্টে যে থামিয়েছিলাম। পুরো অনুষ্ঠানেই মা ও হৃদিপু আমার আশেপাশেই থেকেছে। ভালোয় ভালোয় অনুষ্ঠান শেষ হতেই যখন চাচা আমায় আর রোয়েনকে যাওয়ার কথা বললো তখন আমার শ্বশুর বাবা কালকের কথা বললেন। আজ নাকি তাদের সকল আত্মীয় চলে যাবে তাই তাদের বিদায়ের সময় আমাদের থাকা প্রয়োজন। চাচাও এক কথায় মেনে গেলেন। সবাইকে নিয়ে চলে গেলেন। আর এইদিকে শুধু উপহাস দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম। ঠোঁটের কোনে ঝুলিয়ে নিলাম তাচ্ছিল্যের হাসি। হাসির আড়ালেই লুকিয়ে নিলাম নিজের কষ্ট গুলো। এই কষ্টগুলো যে দেখার কেউ নেই।

হঠাৎ রোনের কন্ঠ কানে আসতেই আমি নড়েচড়ে উঠিম আয়নার মধ্যে দিয়েই আড়চোখে রোয়েনের দিকে তাকাই। রোয়েন গম্ভীর গলায় বলে উঠে,

— কালকে সকাল ১০ টার মধ্যে রেডি থাকবে। ১০ টায় আমরা রওনা দিব।

কথাটা শুনে আমি ঘুরে দাঁড়াই। ছোট ছোট চোখ করে বলি,

— না গেলেও চলবে।

রোয়েন নিজের ভ্রু কুটি কুঞ্চিত করে বলে,

— তুমি থাকতে চাইলে থেক যেও। আই হ্যাভ নো প্রবলেম।

আমি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলি,

— তা আপনার প্রবলেমটা আসলে কোথায় শুনি?

সে ভ্রু কুটি আরও কুঞ্চিত করে বলে,

— আমার প্রবলেম জেনে তোমার লাভ কি? সালুয়েশন বুক নাকি তুমি?

তার কথায় আমি ফোঁস করে বলে উঠি,

— আমি সালুয়েশন বুক কি না জানি না বাট আপনি একটা অসহ্য।

সে ল্যাপটপ বন্ধ করতে করতে বলে,

— আর তুমি একটা বুঁচি।

আমি ফোঁসফোঁস করতে করতে বলি,

— এই কি বললেন আপনি আমায়?

সে ল্যাপটপ সাইড টেবিলের উপর রেখে শুতে শুতে বলে,

— মিস বুঁচি! লাইট অফ করে দিও তো। ঘুমাবো আমি এখন।

বলে পাশ ফিরে শুয়ে পড়লেন। আর আমি রাগে ফোঁসফোঁস করতে থাকলাম। বিরবির করে বলে উঠলাম,

— ব্যাটা খাটাশ! এর শোধ যদি আমি না নিয়েছি তাহলে আমার নামও সিয়াশা না।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here