#Child_Of_Night
Writer : Tanjima Islam
[13]
ফোন হাতে নিয়ে পায়চারি করতে করতে ল্যাপটপ অন করে বসল নীরা। ওরহান আসার আগে মায়ের সাথে কথা বলা দরকার।
নিউজ ফিডে ঢুকেই একটা আর্টিকেলে দৃষ্টি আঁটকে গেলো নীরার,
“প্রায় অন্তত চার হাজার বছর আগে মেসোপটেমিয়াতে ভ্যাম্পায়ার নিয়ে বিশ্বাস প্রচলিত ছিল।
তাছাড়া ইহুদি বিশ্বাসে লিলিথ নামে একটি পৌরাণিক চরিত্র রয়েছে। লিলিথ স্বর্গ থেকে রেগে কিংবা বহিষ্কৃত হয়ে পৃথিবীতে চলে আসে এবং অশুভ হয়ে দাঁড়ায়। লিলিথকে বলা হয় সকল অশুভ জীবের মাতা, যত Demons রয়েছে সব কিছু এসেছে লিলিথ থেকে- তারই সন্তান এরা।
ঈশ্বর তখন তিন জন ফেরেশতা প্রেরণ করলেন লিলিথকে ফিরিয়ে আনবার জন্য।
কিন্তু লিলিথ ফিরে যেতে অস্বীকৃতি জানালো। ফেরেশতারা জানালো, সে ফিরে না এলে প্রতিদিন লিলিথের ১০০ সন্তানকে হত্যা করা হবে।
তখন প্রতিশোধ নিতে লিলিথ ঘোষণা করে যে, সে মানব শিশু হত্যা করতে থাকবে।
ইহুদি বিশ্বাসে লিলিথকে অপরূপা সুন্দরী হিসেবে দেখানো হয়। এটাও বলা হয় যে, সুন্দরী নারী সেজে পুরুষের গৃহে রাতের বেলা সে প্রবেশ করত।
পুরুষদের বীর্য সংগ্রহ করাই ছিল তার আসল উদ্দেশ্য; উল্লেখ্য, লিলিথের সাথে মিলন শেষে কোনো পুরুষ বেঁচে থাকত না।
লিলিথ তখন সেই পুরুষদের রক্ত পান করত এবং সেই বীর্য ব্যবহার করে নিজে গর্ভবতী হতো, যেন সে আরো অশুভ জীবের জন্ম দিতে পারে।
আদমের দুই পুত্র হাবিল (অ্যাবেল) ও কাবিল (কেইন) এর কাহিনী সকলেরই জানা। খুন করবার পর, কেইন পালিয়ে যায়।
ঠিক এরকম সময়ে, যখন সে নড উপত্যকায় ছিল, কিংবা লোহিত সাগরের কাছে, তখন লিলিথের সাথে দেখা হয় তার।
লিলিথ তাকে শীতার্ত ও ক্ষুধার্ত হিসেবে খুঁজে পায়, সে নিজেকে আদমের প্রথম স্ত্রী হিসেবে পরিচয় দেয়। তারা একত্রে বসবাস করতে শুরু করে এবং পরস্পরের ভালোবাসার মানুষ হয়ে দাঁড়ায়।
কেইন বুঝতে পারে যে, লিলিথের চমৎকার জাদুকরি ক্ষমতা আছে, তারও সেগুলো চাই। লিলিথ প্রথমে রাজি হয় না, ইতস্তত করবার পর রাজি হয়ে যায়। একটি ছোরা নিয়ে সে নিজের চামড়া বিদীর্ণ করে একটি পাত্রে রক্ত ঢেলে দেয়।
সেই পাত্র কেইনের হাতে দেবার পর তাকে সেটা পান করতে বলে লিলিথ। কেইন সেটা পান করে ফেলে।
ঠিক এই ঘটনার পরই ফেরেশতা তিনজন এসে হাজির হন সেখানে। তারা কেইনকে ভাই হত্যার অপরাধের জন্য প্রায়শ্চিত্ত করে ক্ষমা পাবার সুযোগ দেয়, কিন্তু কেইন মানা করে দেয়।
তখন ফেরেশতারা তাকে অভিশাপ দেন, সে আগুন সহ্য করতে পারবে না। এরপর আবারও অনুতপ্ত হবার আহ্বান করেন তারা, এবারও কেইন না বলে; ফেরেশতারা এবার অভিশাপ দিলেন, সূর্যের আলো সহ্য করতে পারবে না সে।
এরপরের বারও একই প্রস্তাব দিলে কেইন অস্বীকার করে। এবারের অভিশাপটা ছিল, কেইন কেবল রক্তের স্বাদের দ্বারাই পরিতৃপ্ত হবে এবং এই রক্ততৃষ্ণা তাকে তাড়া করে বেড়াবে।
সময় যেতে যেতে কেইনের ক্ষমতা বাড়তে লাগলো। এক সময় সে লিলিথকে ত্যাগ করে আবার ঘুরতে বেরুলো, সে বেশি দিন থাকতে পারত না এক জায়গায়।
দীর্ঘজীবী কেইন পরে উবার নামের যে জনপদে পৌঁছায়, সেখানে বাস করত সেথ বা শীষ (আ) এর বংশধরেরা। আর সে জনপদের শাসক ছিলেন ইনখ। এখানে কেইনের নাম হয়ে যায় ‘ডার্ক ফাদার’।
ভাইকে হত্যার পর ঈশ্বর কেইনকে অভিশাপ দিয়েছিলেন যে, সে আজীবন পৃথিবীতে ঘুরতে থাকবে, মৃত্যু তাকে রক্ষা করবে না। মৃত্যু থেকে দূরে রাখার জন্য কেইনের শরীরে একটি চিহ্ন দিয়ে দেওয়া হয়, যার নাম মার্ক অফ কেইন।
এই চিহ্ন দেখলে লোকে বুঝবে, একে হত্যা করা নিষিদ্ধ। এই চিহ্ন দেখেই লোকে চিনে গিয়েছিল যে, এটাই কেইন।
দিনকে দিন তার ক্ষমতা দেখতে দেখতে এক সময় কেইনকে পুজো করা শুরু করল জনপদবাসী। ইনখকে তার সিংহাসন ছেড়ে দিতে হয় কেইনের জন্য।
কথিত আছে, এক সন্ধ্যায় এক তরুণ প্রেমিক-প্রেমিকাকে ভালবাসা করতে দেখে কেইনের মাঝেও ভালোবাসা জেগে ওঠে। সে তাদের ডেকে পাঠায় নিজের কাছে এবং তাদেরকে অমরত্বের ক্ষমতা দেয়, এক কথায় তাদেরকেও ভ্যাম্পায়ার বানিয়ে দেয়। কিন্তু যখন সেই যুগল আবিষ্কার করল যে, ভ্যাম্পায়ার হবার কারণে তাদের আর কোনোদিন বাচ্চা হবে না, তখন তারা এই জীবন আর না রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। তারা প্রখর সূর্যালোকে হেঁটে যায় এবং আত্মহত্যা করে। দুঃখে কেইন সেই যুগলের নাম উচ্চারণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।
আগের রাজা ইনখ কেইনের কাছে এই অতিপ্রাকৃত ক্ষমতা চায়, কেইন প্রথমে দিতে অস্বীকার করলেও পরে দিয়ে বসে।
ইনখ নতুন ভ্যাম্পায়ার হিসেবে আবির্ভূত হয়। ইনখের নামানুসারে কেইন এই শহরের নাম ঘোষণা করে ‘সিটি অফ ইনখ’।
ইনখ তার মতো আরো ভাই চাইলো, যাদের এই ক্ষমতা আছে। কেইন তখন আরো অনেক ভ্যাম্পায়ার তৈরি করে দিল।
সিটি অফ ইনখ অনেক উন্নত ছিল বলে উপকথায় বর্ণিত আছে। কিন্তু নুহের মহাপ্লাবন সেই শহর ধ্বংস করে দেয়।
কিন্তু গল্পে এটাও বলা হয়েছে কেন ভ্যাম্পায়ার ধ্বংস হয়নি। কারণ, ইনখের কোনো এক বংশধর ছিল নুহের নৌকায়! উল্লেখ্য, ইহুদি ও খ্রিস্টান ধর্মতত্ত্ব অনুযায়ী, এ সকল অশুভ জীবের হাত থেকে পৃথিবী রক্ষার্থেই ঈশ্বর মহাপ্লাবন প্রেরণ করেন।
তাছাড়া মানুষ ও ফলেন এঞ্জেলদের মিলনে সৃষ্ট নেফিলিম জাতি ধ্বংস করাও ছিল অন্যতম কারণ।
অ্যালবেনিয়াতে স্ত্রীগা, গ্রিসে ভ্রিকলাকাস ও রোমানিয়াতে স্ত্রিগই নামে পরিচিত উপকথার এ রক্তচোষা প্রজাতি।
প্রাচীন গ্রিসে বিশ্বাস করা হতো, রাজা বেলাসের মেয়ে লামিয়া ছিল দেবরাজ জিউসের গোপন প্রেমিকা। জিউসের স্ত্রী দেবী হেরা যখন জেনে যায় লামিয়ার কথা, তখন লামিয়ার সকল সন্তানকে সে হত্যা করে ফেলে।
প্রতিশোধস্বরূপ লামিয়া ভ্যাম্পায়ার হয়ে যায় এবং রাতের বেলা শিশুদের রক্ত পান করত। তাছাড়া দেবী হেক্যাটির মেয়ে এম্পুসাও ভ্যাম্পায়ার ছিল বলে কথিত আছে।
মধ্যযুগে ইউরোপে ভ্যাম্পায়ার ভীতি এত প্রবল ছিল যে, লাশকে হৃৎপিণ্ড বরাবর ফেঁড়ে দেয়া হতো, কারণ বিশ্বাস করা হতো যে, এতে ভ্যাম্পায়ার হয়ে লাশ ফেরত আসতে পারে না।
যেমন তেমন মানুষকে তখন ভ্যাম্পায়ার বলে অভিযুক্ত করা হতো। রোমানিয়ার কাউন্ট ভ্লাদ বা কাউন্ট ড্রাকুলার নিষ্ঠুরতা থেকে ব্রাম স্টোকার তার উপন্যাসে তাকে ভ্যাম্পায়ার বানিয়ে দেন। তবে এর আগে তাকে ভ্যাম্পায়ার বলা হয়েছে বলে জানা যায় না।
ভ্যাম্পায়ার নিয়ে রচিত হয়েছে হাজারো উপন্যাস, নির্মিত হয়েছে শত শত চলচ্চিত্র।
তবে এই আধুনিক যুগে এসে ভ্যাম্পায়ারকে আলো ঝলমলে মডেল নায়ক হিসেবে দেখা গেলেও, চিরাচরিত উপকথায় ভ্যাম্পায়ার যে কতটা ভীতিকর ছিল, সেটা ভুলে গেলে চলবে না।”
আর্টিকেলটা পড়ে কিছুক্ষণ থম মেরে বসে থাকলো নীরা। ভ্যাম্পায়ার এর অস্তিত্ব কি সত্যিই আছে!
নাকি নেই? সে ভেবেছিলো এটা নিতান্তই একটা উপকথা। কিন্তু লেখাটা পড়ে বাস্তব অবাস্তব কিছুই পার্থক্য করতে পারছেনা নীরা।
কেমন যেন এলোমেলো লাগছে সবকিছু। নীরার ধ্যান ভাংলো কলিংবেলের শব্দ পেয়ে।
নিশ্চয়ই ওরহান এসেছে। নীরা দ্রুত পায়ে উঠে গিয়ে দরজা খুলে দিল।
_____________________
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
বসে থাকতে থাকতে রবার্ট এর চোখেও ঘুম নেমে এসেছে। হেনা ঘুমিয়ে আছে সোফায়, সারলোটও গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন।
শীতের রাত, নিস্তব্ধ পরিবেশ। মাঝেমধ্যে দূর থেকে ভেসে আসছে হাইওয়েতে চলতে থাকা দূরপাল্লার যানবাহনের শুব্দ।
হটাৎ একটা খুটখাট শব্দ পেয়ে ঘুম ভেঙে গেল সারলোটের। আস্তে-ধীরে চোখ মেলে দেখল, চারপাশটা অন্ধকারে ডুবে আছে।
ধীরে ধীরে অন্ধকারে চোখ সয়ে আসতেই দেখল, তার বাবা-মা ঘুমিয়ে আছে। কেবিনের লাইটও অফ। তাহলে শব্দটা কোত্থেকে এলো?
সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে আবারও ঘুম লেগে গেল সারলোটের। ঘুমের মধ্যেই টের পেলো কেউ তার গলায় হাত বুলাচ্ছে।
গতরাতের সেই ক্ষত জায়গাটায়! অথচ এখন তার ব্যাথা করছে না বরং সুড়সুড়ি লাগছে।
ধীরে ধীরে হাতটা তার ঘাড় কাত করে দিল। আচ্ছন্ন অবস্থাতাতেই সব টের পাচ্ছে সারলোট।
কিন্তু একচুলও নড়াচড়া করতে পারছেনা। এমনকি চোখ জোড়া মেলেও দেখতে পারছেনা কে তার গলায় হাত বুলাচ্ছে।
ধীরে ধীরে তার আচ্ছন্ন ভাবটা আরও প্রগাড় হতে লাগল। সারা শরীর অসার হয়ে যাচ্ছে।
ঠিক তখনই সুচ ফোটার মতো অনুভূতি হল সারলোটের। হালকা ঝাকি দিয়ে উঠল তার শরীরটা। ঝাকি দিতে দিতে একপর্যায়ে নিথর হয়ে বেডে পড়ে রইলো।
সারলোটের কাছ থেকে সরে এলো একটা ছায়ামূর্তি। অন্ধকার কেবিনের আধ খোলা জানালা দিয়ে পুঞ্জ পুঞ্জ ধূলিকণারূপে বেরিয়ে গেলো ছায়ামূর্তিটা।
ক্ষীণ হয়ে এলো চাঁদের আলো। ঘন কুয়াশায় ছেয়ে গেলো প্রকৃতি। সেই কুয়াশা ভেদ করে ডানা মেলে গেলো এক অতিকায় বাদুড়।
______________________
|
|
|
|
|
বেড রুমের মুখোমুখি সিংগেল সোফা দুটোয় বসে আছে ওরহান আর নীরা। কিছুক্ষণ আগেই ইলেক্ট্রিসিটি চলে গেছে।
চার্জার লাইটেও চার্জ নেই। কতদিন ধরে ওটাতে চার্জ দেওয়া হয় না কে জানে। অগত্যা নীরা দুটো বড়বড় ক্যান্ডেল জ্বালিয়ে একটা মিলিয়ানের রুমে দিয়ে আরেকটা নিজের রুমে এনে রেখেছে।
টি টেবিলের ওপর রাখা ক্যান্ডেলের দিকে তাকিয়ে আছে ওরহান। আর নীরা তাকিয়ে আছে তার দিকে। ওরহানের মুখেচোখে কিরকম একটা অদ্ভুত ভাবের প্রতিফলন লক্ষ্য করল নীরা।
সি সাইডে যেদিন তার সাথে নীরার প্রথম দেখা হয়েছিলো, ওরহানকে যেন সেদিনের চেয়েও আরও জোয়ান লাগছে। যেন তার বয়স আরও কমে গেছে। ব্যাপারটা সামান্য হলেও নীরা’কে বিস্মিত করল। নীরা কিছু বলছে না দেখে ওরহান একটা গলা খাঁকারি দিয়ে বলল,
” নীরা! আপনি কি ঠিক আছেন?
” জ্বি! মানে, কেন?
” তখন ফোনে আপনার ভয়েস শুনে মনে হল বেশ অস্বস্তিতে আছেন। তাই আর কি।
নীরা উত্তর দিলো না। দু’হাত বারবার কচলাতে কচলাতে বলল,” আসলে আমি ঠিক নেই ওরহান। আজকাল অনেক অদ্ভুত কিছু ঘটছে যার কোনো সদুত্তর পাচ্ছিনা। মনে হচ্ছে দিনকে দিন আরও বেশি ঘোলাটে হয়ে যাচ্ছে সবকিছু।
নীরার কথায় ওরহানের মধ্যে কোনো ভাবান্তর ঘটল না। সে নির্বিকার হয়ে বলল, ” যেমন?
ওরহানের কথায় নীরার অস্বস্তি আরও বেড়ে গেলো। কিন্তু এখন তাকে চুপ থাকলে চলবেনা। নীরা বার কয়েক পলক ফেলে বলল,
” মীরা’পু কিভাবে মারা গেছে আপনি জানেন?
” কেন ওনার আত্না কি আপনাকে আজকাল দেখা দিচ্ছে?
বলতে বলতে ওরহানের ঠোঁটের কোণায় বিদ্রুপাত্মক হাসি ফুটে উঠেছে। নীরা সন্দেহের দৃষ্টিতে সেদিকে তাকিয়ে বলল, ” আপনি সব জানেন তাই না?
মুহুর্তেই বিদ্রুপাত্মক হাসি সরে গিয়ে থমথমে হয়ে গেলো ওরহানের চেহারা। মনে হচ্ছে নীরার হটাৎ এমন প্রশ্নে সে বেশ অপ্রস্তুত হয়ে পড়েছে। নীরা তার দিকে একটু ঝুকে বলল,
” মিলিয়ানের এমন অস্বাভাবিক আচরণের কারণও জানেন!
ওরহানের শান্ত গাঢ় নীল চোখে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নীরা। ওরহানের শান্ত চোখ জোড়া ক্রমশ কঠিনরূপ নিতে শুরু করেছে।
নীরা বুঝতে পারছে ওরহান রেগে যাচ্ছে। কিন্তু কেন? তাহলে কি এসব অস্বাভাবিক ঘটনার সাথে ওরহানের কোনো যোগ আছে?
কিন্তু তা কিভাবে সম্ভব? নীরার ভাবনায় ছেদ ঘটল কাচের জানালায় ডানা ঝাপটানোর শব্দে। ত
ৎক্ষণাৎ সেদিকে তাকালো নীরা।
দৃষ্টি অন্যদিকে সরাতেই ওরহান খপ করে নীরার গাল টিপে ধরে হিসহিসিয়ে বলল,
” এখন, এই মুহুর্তে তুমি রেগেন্সবুর্গ ছেড়ে চলে যাবে।
ঘটনার আকস্মিকতায় হতভম্ব হয়ে গেছে নীরা। ওরহান হটাৎ এমন আচরণ করছে কেন? ওরহানের ইস্পাত-দৃঢ় হাতের আঙুল গুলো যেন গেথে যাচ্ছে নীরার নরম গালে। নীরা ব্যাথা সইতে না পেরে চেচিয়ে উঠলো,
” ওরহান কি করছেন? ছাড়ুন আমাকে!
প্রায় সাথেসাথেই ওরহান নীরা’কে ছেড়ে জানালার ধারে গিয়ে দাড়ালো।
ডানা ঝাপটানোর শব্দটা নিমিষেই বন্ধ হয়ে গেছে। নীরা গালে হাত বোলাতে বোলাতে সোফা ছেড়ে উঠে ওরহানের দিকে তাকিয়ে দেখল, সে প্রচন্ড রাগে ফুসছে।
সে ভেবে পাচ্ছেনা ওরহানের হটাৎ কি হয়েছে। পরক্ষণেই ওরহানের বলা কথাটা মনে পড়ল। একটু আগে কি বলল ওরহান? নীরা কথাটার আগামাথা কিছু বুঝতে না পেরে ওরহানের উদ্দেশ্যে বলল,
” আমি কিছু জানতে চেয়েছি ওরহান। আর আপনি আমাকে চলে যেতে বলছেন?
ওরহান না তাকিয়েই বলল, ” কারণ এতেই সবার মঙ্গল।
নীরা এবারও কিছু বুঝতে পারলো না। ওরহানকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই ওরহান ঘুরে তাকিয়ে নীরার কাছে এসে বলল,
” জানি, তোমার মনে এই মুহুর্তে হাজারো প্রশ্নের ঝড় বইছে। কিন্তু সেসব প্রশ্নের উত্তর কোনোদিন না জানলেই তুমি ভালো থাকবে। এখান থেকে চলে যাও নীরা, অনেক দূরে কোথাও। নয়তো তোমার অবস্থাও মীরার মতো হবে।
নীরা’কে মুখে চলে যেতে বললেও নীরার মনে হচ্ছে ওরহানের আহত চাহনি বলছে, “যেওনা নীরা, আমার সাথে থেকে যাও।
কিন্তু ওরহানের বলা শেষ কথাটা শুনে আরেক দফা অবাক হয়ে গেছে সে।
তার অবস্থা মীরার মতো হবে এর মানে কি? তার মানে মীরার মৃত্যুর ব্যাপারে নিশ্চয়ই ওরহান জানে। নীরা উদ্বিগ্ন কন্ঠে বলল,
” আপুর মতো অবস্থা হবে এর মানে কি ওরহান? আমার আপুর কি হয়েছিলো?
ওরহান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, ” আমি এখনই গিয়ে ট্যাক্সি পাঠিয়ে দিচ্ছি।
এবার বেডের পাশে রাখা লাগেজটা নিয়ে বেরিয়ে যেতে যেতে বলল,
” মিলিয়ানকে বায় বলে এসো।
বলেই হনহনিয়ে বাড়ির বাইরে চলে গেলো ওরহান। নীরা সেখানেই থ হয়ে দাড়িয়ে রইলো।
এসব কি ঘটছে তার সাথে? আর ওরহানই বা তাকে হটাৎ চলে যেতে বলছে কেন?
মিলিয়ানকে বায় বলতে বলছে! তাহলে কি মিলিয়ানকে ছাড়াই তাকে চলে যেতে বলছে ওরহান?
________________________
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
[চলবে]