Journey part-20

0
330

#Journey

#২০

ভালোবাসায় পরিপূর্ণতা কে না চায়? সবারই আকাঙ্খা থাকে পরিপূর্ণ ভালবাসার স্বাদ পাবার।আজ জেসমিনেরও ভালবাসা পূর্ণতা পেতে যাচ্ছে।জেসমিন এখন ওর ঘরে বসে আছে,ঠিক বুঝতে পারছে না কি করবে,কিংবা কি করা উচিৎ, অথচ রাইফ আর জাফার কি সুন্দর করে ওকে সব বলে দিল।জেসমিন চুপচাপ শুধু ভাবছে,আজকের মাঝে জীবন কতটা বদলে গেল! আজ সকালে ঘুম ভেঙেও তো রাইফের প্রতি এক বুক ভর্তি অভিমান ছিল,ছিল অনেক কষ্ট আর বিরহের ছটফটানি। কিন্তু এই মুহুর্তে তার কিছুই নেই,বরং ঐ অনুভুতির ১৮০ ডিগ্রি বিপরীত অবস্থানে সে বসে আছে!

রাইফ ওকে বলে গেছে নিজে নিজে আপাতত যতটুকু সম্ভব সাজতে,কারণ এই মুহুর্তে পার্লারে যাওয়া সম্ভব না,হাতে সময় কম।এসব বলেই জেসমিনের হাতে দুটা বিশাল ব্যাগ ধরিয়ে দিয়েছে।একটা ব্যাগে কিছু গয়না আর কসমেটিক্স,আরেকটা ব্যাগে বিয়ের গাউন আর জুতো।রাইফ ওকে খুব আফসোস করে বলেছে,ওর অনেক ইচ্ছে ছিল নিজের বউকে বিয়েতে লাল বেনারসিতে দেখবে,অন্ততঃ লাল শাড়ী যোগাড় করতে পারলেও হতো।কিন্তু সেটা পায়নি।তাই লাল গাউন নিয়ে এসেছে।

জেসমিন দাঁড়িয়ে কাঁপা কাঁপা হাতে গাউনটা বের করে,সিল্কের কাপড়ের উপর নেটের কাপড় দেয়া,তাতে সুতো আর স্টোন দিয়ে কাজ করা।রাইফ জানে জেসমিনের রুচি সম্পর্কে,তাই ফুল স্লিভ গাউন এনেছে,সাথে ম্যাচিং হিজাব।জুতো জোড়া খুব বেশি কাজ করা বা হিলের নয়,তবে খুব আরামদায়ক।জেসমিন ধীরে ধীরে সব ছুঁয়ে দিচ্ছে,বিয়ের কাপড়,গহনা,জুতো…সত্যিই কি এসব হচ্ছে?ওর বিশ্বাস হতে চায়না।জীবনে কত স্বপ্ন ছিল বিয়ে নিয়ে,সব ধূলিসাৎ করে দিয়েছে মায়ের করা অবিচার,রুবায়েতের অপকর্ম।কেন রুবায়েত ভাল হল না?হয়ত ওর জন্যে রাইফ আছে বলেই! আল্লাহ হয়ত ওর পরীক্ষা নিল।জীবনে একটা মানুষের কত কি পরীক্ষাই না দিতে হয় একটা মানুষকে! জেসমিন গাউন বুকে চেপে ধরে ঘ্রাণ নেয়,নতুন কাপড়ের নয়,বিয়ের ঘ্রাণ!

যদিও আজ খুব কেঁদেছে,রাইফের উপর রাগ দেখিয়েছে,কিন্তু সত্যি বলতে পুরোটা ছিল সুখের কান্না।রাইফকে এভাবে পাবে তা ভাবেনি,বিশ্বাসও হয়নি।এদিকে রাইফ জাফারকেও ম্যানেজ করে নিয়ে এসেছে,সাথে করে আরো বন্ধুবান্ধব নিয়ে এসেছে।জেসমিনের কিছু বন্ধুদেরও দাওয়াত দিয়েছে।সবাই ভীষণ উৎসাহে এগিয়ে এসেছে ওদের বিয়ের জন্য,কারণ সেটা আজই হতে যাচ্ছে!

ভাবনার জগতে যখন জেসমিন বারবার ডুবে যাচ্ছে,আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতায় বুক ভরে উঠছে,তখন দরজায় আওয়াজ হয়।দরজা হাল্কা ফাঁকা করে জেসমিনের এক বান্ধবী রেবেকা আর সেলিম উঁকি দেয়।রেবেকা অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক,ওর রুমমেট ছিল একসময়,তবে কর্মক্ষেত্র বদলে যাওয়ায় ও বাসা বদলে ফেলে।দূরে গেলেও দুজনের মাঝে সবসময়ই খুব ভাব ছিল।ওর বিয়েতে যতগুলো মানুষ খুব বেশি খুশি হয়েছে,তার মাঝে রেবেকা একজন।পেছনে আরো বেশ কয়েকজন মেয়ে আছে।জেসমিনের অনুমতি পেয়ে সবাই হুড়মুড়িয়ে ঘরে ঢুকে পড়ে।ওকে জড়িয়ে সবাই কংগ্রেজুলেট জানায়।রেবেকা গাউন বের করে ওকে পড়তে সাহায্য করে,অন্যরা ওর চুল ঠিক করে দেয়।আর সেলিম একটু পর পর জেসমিনের গলা জড়িয়ে ধরে,গালে চুমু খায়,আর প্রশংসা করে।জেসমিন হাসে।

এদিকে রাইফ এক দৌড়ে জাফারের বাসায় যায়,সেখানেই তৈরি হয়। বিয়ে হবে জেসমিনের বাসাতেই,এরপর নবদম্পতি তাদের বুক করে রাখা হানিমুন স্যুটে চলে যাবে।যদিও জেসমিনের ছুটি নেয়ার ব্যাপারটা অনেকটা অসম্ভব ছিল,কিন্তু প্রফেসর বিয়ের কথা শুনে হাসিমুখে তা মঞ্জুর করেছেন,বিনিময়ে তাকেও বিয়ের দাওয়াত দিয়েছে রাইফ।

সব কাজ শেষ বরযাত্রী দুই গাড়ি মিলে জেসমিনের বাসায় চলে আসে।এলাকার কিছু বাঙালী মুসলমানেরা সেখানে আছে,যাদের মাঝে একজন হুজুরও আছেন।তিনি সোমালিয়ান,তবে ওদের বিয়ের কথা শুনে চলে এসেছেন।বিয়েতে প্রথমে রাইফকে কবুল পড়ানো হয়, তারপর পর্দার আড়ালে থাকা জেসমিনের পালা আসে।যতবার ওকে কবুল বলতে বলা হয়, জেসমিন চুপ করে থাকে,কিছু বলে না।ওর পাশে বসা সেলিম ওর মুখ ঢেকে রাখা ওড়না ধরে টানে।ছেলেটা পুরোটা সময় জেসমিনের সাথে লেগেছিল,দেখলে মনে হবে,সেলিম ওরই ছেলে।

এদিকে জেসমিনের বুক ধুকপুক করছে।রুবায়েতের সাথে এসব হওয়ার কথা ছিল,তা না হয়ে এত খারাপ কিছু ঘটনা জীবনে ঘটে গেল যে এখন রাইফকে কবুল করতেও এই মুহূর্তে দ্বিধা হচ্ছে।আচ্ছা,রাইফ যদি বিয়ের পর বদলে যায়? রুবায়েত যা বিয়ের আগে করেছে,রাইফ যদি তা বিয়ের পর করে? ওদের মাঝে তো সেভাবে ভালোবাসাটা বেড়ে ওঠেনি।অথচ আজ রাতে যদি রাইফ আর দশজন স্বামীর মত অধিকার চায়,তাতে হয়ত কোন অন্যায় থাকবে না,কিন্তু জেসমিনের কাছে রাইফের কোন বিশেষত্ব থাকবে না।ভালবাসা কেমন? জেসমিনের ভালবাসার স্বাদ জানে না।ওর খুব ইচ্ছে হচ্ছে আজ ভালোবাসার স্বাদ চেখে দেখতে,কিন্তু সেই সাথে অজানা ভয়ও বুকে চেপে ধরেছে।

এদিকে হুজুর বারবার ওকে কবুল বলার জন্যে বলে যাচ্ছে,দশ মিনিট পেরিয়ে গেছে।জেসমিন এক সময় কবুল বলেই কেঁদে ফেলে,ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদতে থাকে ও,আর সবাই আলহামদুলিল্লাহ বলে।কবুল বলা শেষে সবাই হাত তোলে,নবদম্পতির জন্য দোয়া করে।সব শেষে তাদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করা হয়।আপ্যায়ন শেষে ওদের দুজনের জন্য সাজিয়ে রাখা গাড়িতে সবাই মিলে তুলে দেয়।তখন জাফার মুচকি হেসে ফিসফিসিয়ে দুজনের উদ্দেশ্যে বলে,
“আজকের রাত স্মরণীয় করতে ভুলো না কিন্তু!নব দম্পতির বাসর সুখের হোক!”
বলেই চোখ টিপে দেয়।জেসমিন মুখ নিচু করে লজ্জায় লাল হয়ে যায়,রাইফ হাসে।

গাড়ি ছেড়ে রওনা দেয় হানিমুন স্যুটের উদ্দেশ্যে। রাইফ এখন পর্যন্ত সেভাবে জেসমিনকে দেখেনি,ও কিভাবে সেজেছে,কেমন লাগছে,সে ব্যাপারে তেমন কিছু বলতে পারবে না।তবে খুব ইচ্ছে করছে জেসমিনের দিকে ফিরতে,ঘোমটা দিয়ে ঢেকে রাখা মুখ খানা তুলে দেখতে।কিন্তু না,উহু,এখনও সে সময় আসে নি।

জেসমিন অপেক্ষা করছে,রাইফ যদি একটু হাত ধরে, অথবা ঘোমটা তুলে দেয়,ওর দিকে স্বামীর দৃষ্টিতে তাকায় যা আগে কখনও হয়নি…ওর সে ইচ্ছা পূরণ হয়না।চুপ করে দুজন দুপাশে বসে থেকেই ওরা পৌঁছে যায় স্যুটে। সেখানে থামার পর দুজন মেয়ে জেসমিনের দরজা খুলে দেয়,ওকে স্বাগতম জানায় আর গাড়ি থেকে নামতে সাহায্য করে।দুজন মেয়ে পেছন থেকে ফুল ছিটিয়ে দেয়।আর পাশ থেকে হুট করে রাইফ এসে জেসমিনের হাত ধরে টান দেয়।এই প্রথম রাইফ স্বামী হিসেবে হাত ধরল।দুজনে ধীরে ধীরে তাদের ঠিক করা ভিলাতে রওনা দেয়।

ছোট একটা সুমিং পুল আছে সামনে, একপাশে ছোট বাগান আর তাতে একটি দোলনা।পাশেই যে ঘরটা দেখা যাচ্ছে,তার দরজা বা সেপাশের দেয়ালটা কাঁচের,অর্থাৎ ঘর থেকে সুমিংপুল দেখা যাবে।কমন ডাইনিং বাইরে,তবে চাইলে অর্ডার করে খাওয়া যাবে।

রাইফ হাত ধরে জেসমিনকে নিয়ে সেখানে ঢুকে যায়,আর গেট আটকে দেয়।চারপাশে ভিলার সাদা আলোতে সবকিছু স্বপ্নীল মনে হচ্ছে। জেসমিন এক হাতে গাউন সামলানোর চেষ্টা করছে,আর রাইফ ওর আরেক হাত ধরে আছে।

জেসমিনকে নিয়ে রাইফ এগিয়ে যায় বাসর ঘরের দিকে।দূর থেকে দেখা যাচ্ছে অনেক সুন্দর করে পুরোটা সাজানো।কিন্তু জেসমিনের খুব ভয় করছে।

স্বপ্নের রাতে আবার দুঃস্বপ্ন রচিত হবে না তো?

চলবে…

লেখনীতে, #AbiarMaria

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here