#Journey
#২৫
জেসমিন আইসিইউর সামনে দাঁড়ায়,বাইরে কাঁচের ভেতর দিয়ে জাফারকে দেখা যাচ্ছে।উনার ডক্টরের সাথে কথা হয়েছে।একটা নল ওর মুখ দিয়ে বের হয়েছে,আরেকটা নল নাকে লাগানো,বুকে,পেটে হাতে আরো কত কিছু লাগানো।বড়সড় মানুষটা শুকিয়ে কি হয়ে গেছে,জেসমিন মুখে হাত চেপে নিজের কান্না আটকানোর চেষ্টা করে,কিন্তু তাতে লাভ হয় না।না চাইতেও কান্নার আওয়াজ বেরিয়ে যায়,আর বাঁধভাঙা চোখের পানি হাত উপচিয়ে গাল বেয়ে পড়তে থাকে।কষ্ট সহ্য করতে না পেরে ঘুরে দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে কিছুক্ষণ কাঁদে।মানুষটার কি হাল হয়েছে একদিনের মাঝেই! মনে মনে বারবার দুয়া করে আল্লাহর কাছে,যেন সেলিম পুরোপুরি এতিম না হয়।ধীর পায়ে রাইফের কাছে এগুতে গিয়ে খেয়াল হয়,ওদের কারো কিছু খাওয়া হয়নি।ক্যান্টিন থেকে কিছু খাবার নিয়ে রাইফের দিকে রওনা দেয়।এসময় রেবেকা ওর কাঁধে হাত রাখে।
“আরে,জেসমিন,তুমি এখানে?সে কি…এ কি হাল হল তোমার?!মাথায় কি হয়েছে!”
“আসলে…”
জেসমিন আর কিছু বলতে পারে না,রেবেকাকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়ে।রেবেকা হতবাক।হয়েছে কি মেয়েটার? ওর ব্যাপারে বেশি কিছু না জানলেও এটুকু জানে যে খুব কষ্ট পাওয়ার পর এই দেশে এসেছে আর রাইফও ওর জীবনের অনেক সাধনার ফল।কিন্তু এখন এই হাসপাতালে এইভাবে কেন ও?আচ্ছা,ওর বা রাইফের কি কোন বিপদ হয়েছে?অজানা আশঙ্কায় রেবেকার মন দুলে ওঠে।জেসমিনকে পাশের একটা ওয়েটিং চেয়ারে বসিয়ে ব্যাগ থেকে পানি বের করে খাওয়ায়।
পানি খেয়ে জেসমিন কিছুটা ধাতস্থ হয়।রেবেকা ওর কাঁধে হাত রাখে।
“কি হয়েছে?তুমি ঠিক আছ?রাইফ কি ঠিক আছে?”
“নাহ,কিচ্ছু ঠিক নেই বান্ধবী,কিচ্ছু না!”
“কি হয়েছে সেটা তো বলবে?”
“আজ তো সিসিলি চলে যাবার কথা ছিল আমাদের নতুন বাড়িতে।কিন্তু পথেই ঝামেলা হয়ে গেছে,অনেক বড় এক্সিডেন্ট হয়ে গেল”
‘কি বলছ!কিভাবে?!”
জেসমিন একে একে সব কিছু খুলে বলে।রেবেকা মুখে হাত দিয়ে বসে থাকে,
“ও মাই গড!এখন তোমরা কি করবে?”
“আমি জানি না।আমার শত্রু কে,সেটাও যদি জানতে পারতাম,তবে অনেকটাই আগানো যেত।কিন্তু…আমার কাছে কোন ক্লুও নেই ,সবচেয়ে খারাপ ব্যাপার হল জাফার ভাই! এমনিতেই আমাদের কেউ নেই।যেই একজন বড় ভাই ছিল,তারও…”
জেসমিন আবার মুঝ ঢেকে কাঁদতে শুরু করে।রেবেকা ওকে বুকে টেনে নেয়।
“জেসমিন,তোমাকে এখন অনেক শক্ত হতে হবে,নিজের জন্য,রাইফের জন্য,সেলিমের জন্যও।জাফার ভাইয়ের কি হবে আমি জানি না,তবে আমি প্রে করব,গড যেন বাচ্চাটাকে একা না করে।আমার বাআব মা কেউ নেই,আমি জানি একা বেঁচে থাকার কি কষ্ট। শুনো… তুমি এখন রাইফকে এতকিছু বলতে যেও না।কারণ সেও ভাল রকম ইঞ্জুরড। তুমি আগে দেখ সব কিছু একটু ঠিক করার”
“কিচ্ছু ঠিক হবে না রেবেকা,বরং সবকিছু আরো খারাপের দিকে যাবে।তবে আমার ভইয় অন্য যায়গায়।যদি আমাদের শত্র এখানে চলে আসে?আমি তো তাকে চিনিও না!”
“তোমরা চেষ্টা কর যত দ্রুত সম্ভব এই শহর ছেড়ে যাবার।আমার মনে হয় এটা তোমার জন্যে ভাল হবে।এখানে তো রাইফের তেমন পরিচিত মানুষ কম,তুমিও সেভাবে কাউকে চিন না।এই শহরটা এখন আর নিরাপদ নেই তোমাদের জন্য”
জেসমিন চোখ মুছে ভাবে,রেবেকা ভুল বলেনি,ওদের যত দ্রুত সম্ভব এখান থেকে চেল যেতে হবে।সিসিলিতে রাইফের অনেক স্ট্রং নেটওয়ার্ক আছে,সেখানে এসব কিছু করা এতটা সহজ হবে ন্টানিজেকে আবারো শক্ত করে,নিজের জন্য না হোক,অন্যদের জন্য ওকে শক্ত হতেই হবে।
রেবেকাকে বিদায় জানিয়ে ও রাইফের কাছে আসে।দেখে,রাইফ সেলিমকে বুকে চেপে ঘুমিয়ে পড়েছে।কি সুন্দর একটা দৃশ্য! জেসমিনের মনে পড়ে যায় সেলিমের সাথে জাফারের বন্ডিং এর কথা।ছোট মানুষটা কেমন করে মিশে গেছে,বোঝাই যায় না যে ওরা বাবা ছেলে না।দরজায় দাঁড়িয়ে হুট করে জেসমিনের মনে হয়,জাফার ভাইয়ের যাই হোক,সেলিমকে তার অভাব কখনো বুঝতে দেয়া যাবে না।
পরক্ষণেই সে অবাক হয়ে ভাবে,কে সে এত কুফা কথা ভাবছে?কেন ভাবছে জাফার ভাইয়ের কিছু হবে? না,না,জাফার ভাইয়ের কিছু হবে না,আল্লাহ সেলিমকে এতটা কষ্ট দিবেন না।খাবারটুকু নিয়ে ওদের কাছে যায়।দুজনকে ঘুম থেকে তোলে খাওয়ায়।
খাওয়া শেষে রাইফ ওকে জিজ্ঞাসা করে,
“কিছু জানলে?”
“নাহ,কিছুই না।”
“জাফার ভাইয়ের কি অবস্থা?”
“জানি না,ভাল মন্দ কি হচ্ছে জানি না।”
“উনার জ্ঞান ফেরা নিয়ে ডক্টর কি বললেন?”
“পুরো ব্যাপারটা আনসার্টেন,কি হবে কিছুই বলা যাচ্ছে না।তবে ২৪ ঘন্টা উনারা দেখবেন,তারপর একটা সিদ্ধান্তে আসা যাবে।”
“হুম,এই ছেলেটাকে কি বলব আমরা?ও তো সমানে আমাকে প্রশ্ন করেই যাচ্ছে ওর পাপাকে নিয়ে।”
“দেখি ওকে জাফার ভাইয়ের কাছে নিয়ে যাব”
“হুম,ওর দেখা উচিৎ”
“ছোট মানুষ,যদি ভয় পায়?”
“আমরা ছেলেরা ছোট বেলা থেকেই শক্ত হয়ে বড় হই,আল্লাহ আমাদের এভাবেই বানিয়েছেন।ও ভয় পাবে না দেখো।ও এখন থেকে যা যা দেখবে,ও নিজেই শক্ত হয়ে যাবে”
“হুম…যাক শুনো,রেবেকার সাথে দেখা হয়েছিল।ও বলছিল আমাদের যত দ্রুত সম্ভব এই শহর থেকে চলে যেতে,কারণ হয়ত খুনি এখনও আশেপাশে আছে।”
“কিন্তু জাফার ভাইয়ের এই অবস্থায় কিভাবে…?”
“জানি না।আবার যদি এটাক আসে?”
“এটাক আসলে সেটা রুখতে হবে তো,আমরা নাহয় এর আগে কিছু করতে পারিনি,কিন্তু এখন কি চুপ থাকব নাকি?”
“আমি নিতে পারছি না,এই শহরটা আমার কাছে বিষাক্ত লাগছে!”
“চিন্তা করিও না,সব ঠিক হয়ে যাবে”
“আল্লাহ যেন তাই করেন!”
“আচ্ছা,এক্টু ধারণা করতে পারছ কে হতে পারে?”
জেসমিনের মাথায় এখন বেশ কিছু নাম আসছে,কিন্তু এসব বলে রাইফকে চিন্তায় ফেলা যাবে না,ওর ধারণার সত্যতা প্রমাণে যথেষ্ট প্রমাণ লাগবে,তারপর মুখ খোলা যাবে।
ঠিক এই সময় একজন নার্স দরজা ঠেলে ঢুকে হনহন করে ওদের কাছে আসে।
“সিনর জাফার এর রিলেটিভ আপনারা?”
“জ্বী…?”
“উনার জ্ঞান ফিরেছে,উনি আপনাদের খুঁজছেন”
জেসমিন একাই চলে যেতে নেয়।রাইফ ওর হাত ধরে থামায়।
“আমাদের ছাড়া যাবে নাকি?আমাকে উঠতে সাহায্য কর,সেলিমকেও নিয়ে যাব”
‘চলো!”
চলবে…
লেখনীতে, #AbiarMaria