Journey part-32

0
398

#Journey

#৩২

হাঁটু ভাঁজ করে মেঝেতে বসে হাঁটুতে মাথা রাখে জেসমিন।নিজেকে যতটা না নির্দয় লাগছে,তারচেয়ে বেশি অসহায় লাগছে।লোকটা এখন মরে গেলে এখন কি করবে?ঝোঁকের বশে মেরে তো মুখের মানচিত্র বদলে দিয়েছে,নাক,কান মুখ কোন দিক থেকে রক্ত পড়া থেমে নেই।নিশ্বাস নিচ্ছে কিনা সেটাও দেখার ব্যাপার! জেসমিনের দম আটকে আসসে হুট করেই,রক্ত আর বেজমেন্টের পুরানো গন্ধে বমি বমি লাগছে।এতক্ষণে এত সাহস আর বীরত্ব হুট করে কোথায় গেল কে জানে! দুহাতে মাথা চেপে এক দৌড় দেয় দরজার দিকে।বেরিয়ে এসে বুক ভরে অক্সিজেন নেয়।বাইরের নির্মল বাতাসে এসে কিছুটা হালকা মনে হয়।কিন্তু পেছন দিকে তাকিয়ে রক্তাক্ত গেব্রিয়েল নামের লোকটাকে দেখে হড়হড় করে বমি চলে আসার উপক্রম হয়। হাঁটু ভেঙে ঘাসের উপর পড়ে বমির চেষ্টা করে,কিন্তু মুখ দিয়ে সেটা বের হয় না।পেট চেপে ভাবে,ওর আবার কি হল?!বমি এসেও আসছে না কেন? এটা কি কোন প্যানিক এটাক?

কোনোমতে উঠে বাসার ভেতর যায়,হাত মুখ ধুতে হবে,সহ্য হচ্ছে না।এমনও হতে পারে অনেক দিন পরে এত বেশি উত্তেজিত হয়ে পড়েছে বলে এরকম হচ্ছে।লোকটা কি মরে গেল? নাকি এখনও বেঁচে আছে? খুব খারাপ অবস্থা হলে ও এখন কি কবে?মরে গেলেও ও এটাকে কিভাবে সামলাবে?! আর না মরলে এটাকে কি করবে?! ওর মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে!!

ঘরে পা রেখে কিচেনের দিকে তাকিয়েই জমে যায়!

রাইফ!!!

ও এখন এখানে কি করছে?!তাও আবার এই অসময়ে ?! রাইফকে দেখে জেসমিন বরফের মত জমে যায়।রাইফ পানি খাচ্ছিল।মুখ নামিয়ে জেসমিনকে দেখে ভ্রু কুঁচকে কাছে আসে।
“তু তু তুমি এখানে?তু তু তুমি না আজকে রাতে আসবা না?”
“খারাপ লাগছিল,তাই চলে এসেছি বাসায়,কিন্তু…সেলিম কোথায়?”
“ও তো অদ্রের বাসায়”
জেসের মুখভঙ্গী,অঙ্গভঙ্গী দেখে কিছুটা বিস্ময় নিয়ে বলে,
“তোমার কি হয়েছে!তুমি ঠিক আছ তো?!”
জেসমিন চুপ করে তাকিয়ে আছে।কি উত্তর দিবে?রাইফের চেহারা আরো বিস্মিত রূপ ধারণ করে যখন খেয়াল করে ওর শরীরের দিকে।
“একি! তোমার হাতে কি হয়েছে?!তোমার শরীরে এরকম রক্ত কেন!শার্টে প্যান্টে……জেস!এই জেস! কথা বল না কেন! তোমার হাত দেখি? মাই গড! হাতে কি হয়েছে!হাতে এত ক্ষত কেন! এই…জেস?এই…???!!”

রাইফ দুহাতে ধরে জেসমিনকে ঝাকাচ্ছে।জেসমিন ভীত চোখে বলে ফেলে,
“আমি মনে হয় একটা খুন করে ফেলেছি!”
“হোয়াট!!! কাকে খুন করেছ!এই মেয়ে?তুমি কি ড্রাংক? পাগল হয়েছ,অ্যাঁ!!”

জেসমিন ঝপ করে ফ্লোরে বসে পড়ে।রাইফ ওকে পাঁজাকোলা করে ওয়াশরুমে নিয়ে যায়।টুলে উপর বসিয়ে হাত মুখ ধুইয়ে দেয়।তখন ওর হাতের ক্ষতগুলো স্পষ্টভাবে দেখা যায়।গেব্রিয়েলকে হাতে শেকল আটকে দিয়ে মারার সময় ওর নিজের হাতও কেটে গেছে।রাগে তখন কিছু বুঝতে পারেনি,ব্যথাটা টের পায়নি।যখন রাইফ ডেটল দিয়ে সব ক্লিন করছিল,তখন “উহ” করে ওঠে।রাইফ মনোযোগ দিয়ে ড্রেসিং করে ওর শার্টে হাতে দেয় বদলে দেয়ার জন্য।জেস কোন বাঁধা দিতে পারছে না।শার্টের বাটন খুলতে খুলতে মাঝামাঝি আসার পর জেসমিন ওর এক হাত চেপে ধরে ফিসফিসিয়ে প্রায় কাঁদো কাঁদো হয়ে বলে,

“বিশ্বাস কর,আমি মনে হয় একজনকে খুন করেছি! না,না! মনে হয় না,আমি সত্যি সত্যিই একজনকে খুন করেছি!”
“কাকে করেছ?”
“জাফার ভাইয়ের খুনিকে!”
“পাগল হয়েছ!তাকে কোথায় পেলে! আর…সেই জাফার ভাইয়ের খুনি,এটা কিভাবে জানো!”
“লোকটা সব স্বীকার করেছে!আমি অনেক মেরেছি,তাই…!”
“তা তাকে মারার জন্যে কোথায় পেলে?”
“সেই আমার কাছে এসেছে!”
“জেস,stop this nonsense! you are damn crazy!now stop…!”
“তুমি বিশ্বাস করছ না?!তুমি আমাকে বিশ্বাস করছ না?ঠিক আছে,আমার সাথে আসো!”

রাইফের হাত ধরে টেনে ওকে সহ বেজমেন্টের দিকে আসে।দরজা খুলে ওকে দেখায়।রাইফের চোখ গুলো বিস্ময়ে বড় বড় হয়ে আসে,এসব কি দেখছে সে! জেসমিন কাকে না কাকে মেরে বেঁধে ফেলে রেখেছে!এক টানে দরজা লাগিয়ে ওকে টেনে বাসার ভেতর নিয়ে আসে।

“কিভাবে কি হল?! কে এটা! প্রথম থেকে বলবা!”

জেসমিন বড় একটা নিশ্বাস নিয়ে মাথা নিচু করে থাকে।রাইফ রেগে ওর পাশে টেবিলে জোরে থাবা দেয়,
“মুখের মধ্যে এরকম কুলুপ আঁটলা কেন! আওয়াজ দাও! তিন মাস ধরে চিল্লাতে চিল্লাতে তো পাগল বানিয়েছ,এখন মুখ দিয়ে শব্দ নাই কেন!আমি একটা প্রশ্ন করেছি জেস,উত্তর দাও!”

রাগে কাজ হল,জেসমিন মুখে খুলে বলতে শুরু করে।

“ঘটনার শুরু আমার সাথে রুবায়েতের শত্রুতা থেকে,আমি জানি রুবায়েতের কথা তুমি জান।ঐ ছেলের সাথে মায়ের শত্রুতা শুধু টাকা বা আমার কারণে ছিল না,আরো একটা কারণ ছিল,যেটা মা আমাকে মৃত্যুর সময় বলে গেছে।সে যাই হোক,মা ঐ জিনিসটার একচ্ছত্র অধিকারী ছিল আর রুবায়েতের বাবা মা সেটা হাতিয়ে নেয়ার পায়তারা করেছিল,বিশেষ করে মা যেহেতু তাদের কাছে ঋনী ছিল তাই। মা তাতে রাজী হয়নি,তাই সেই জিনিসটা নিজের কাছেই রাখে আর আমাকে পাওনা টাকার জের ধরে সেটা শোধের বিনিময়ে রুবায়েতের সাথে…।

মায়ের প্ল্যান ফেল হবার পর ওরা খুব রেগে যায়।শুধু যে নিজেদের পাওনা উদ্ধারের নেশায় পাগল হয়ে যায়,তা না,তারা ঐ জিনিসটা পাওয়ার জন্যেও যথাসাধ্য চেষ্টা চালায়”

“কোন জিনিস এটা?আমি বুঝতেছি না”
“ব্যংকের ভল্টে মা আমার জন্যে যেটা রেখে গেছে,সেটা”
‘সেটা কি?”
” বলছি। রুবায়েতের পরিবার সবরকম ভাবে তাদের কূটকৌশলে ব্যর্থ হয়।তাছাড়া আমি ওদের সব দেনা শোধ করে দেয়ায় আমিও মোটামুটি নিশ্চিত ছিলাম যে,ওদের সাথে সকল প্রকার শত্রুতা শেষ,ওরা লিগ্যালি আমার কিছু করতে পারবে না।আমি তাই সে জিনিসটার সিকিউরিটি নিশ্চিত করে এই দেশে এসেছি।

কিন্তু আমি ভুল ছিলাম!আমি এত্ত বোকা কেন সেটা ভেবেই এই তিন মাসে অবাক হই! আমি এত বড় একটা জিনিস বাংলাদেশে রেখে নিশ্চিত হয়ে বসে আছি! যেহেতু আমি নির্বোধের মত কাজ করেছি,তাই রুবায়েতের পরিবার আবার আমার পিছে লেগেছে,তবে সেটা কিছুটা ভিন্নভাবে।

তারা পারিবারিকভাবে আমার অবস্থান,সেই জিনিসের অবস্থান যে বদলেছে সব কিছু জেনেছে।তারপর এটা নেয়ার জন্য সব রকম চেষ্টা করেছে।এই যে,আমাদের মারার চেষ্টা করা,সব এই প্ল্যানের অংশ।
“পারিবারিকভাবে মানে?তোমার পরিবারে তোমা ভাই ছাড়া আর তেমন কেউ নেই,তবে কি…”
“আরে নাহ!ভাইয়ায় নাহ।অন্যভাবে,সে কথায় সব শেষে আসছি।তবে জানো, ওরা আমাকে কখনো মারতে চায়নি,চেয়েছে কাকে মারতে জানো?”
“কাকে?”

“তোমাকে!!!”

“হোয়াট! কিন্তু আমাকে কেন!!আমার দোষ কি!যা আছে তোমার কাছে আছে,আমার কাছে কি??!!”
জেসমিন হাসে।নাক দিয়ে একটা তাচ্ছিল্যের বাতাস ছাড়ে,
“তুমি মরলে আমাকে দেশে যেতে হবে,আমি বাধ্য হব,বা আমকে বাধ্য করতে পারবে,তারপর আমাকে জোর করে বাধ্য করবে সেটা দিয়ে দিতে!”
“হোয়াও! হোয়াট আ প্ল্যান! আমাকে মেরে তোমাকে বিপদে ফালানো!আর কিছু?”
“হুম।সে যাই হোক,ওরা সেটাও করতে পারেনি,তোমার যায়গায় জাফার ভাইকে মেরে দিয়েছে।তাই প্ল্যান বদলে এবার আমাকে কিডন্যাপ করতে এসেছে।দুইবারই তারা গ্যাব্রিয়েলকে পাঠিয়েছে।এই লোক বোধ হয় কন্ট্রাক্টে কাজ করে,তবে তেমন প্রফেশনাল না।তাই আমি ধরে ফেলেছি।তুমি যখন বিকালে এসেছিলে,তখন সে বেজমেন্টে আটকানো।তোমাকে কিছু বুঝতে দেইনি।তুমি চলে যাবার পর তার জ্ঞান ফেরে।যখন সে স্বীকার করে সেই জাফার ভাইকে মেরেছে,তখনা আই আর…আমি আর…”
“বুঝেছি।তা সেই জিনিসটা কি আমাকে বলা যাবে?প্লিজ,বলো না এটাও আমার কাছে থেকে লুকাতে হবে?”

জেসমিন মাথা ঝাঁকায়।ঘরের মাঝে একটা বোম পড়লেও রাইফ এতটা অবাক হত না,
“জিনিসটা…না,জিনিসগুলো হল চার বিলিয়ন,মানে চারশ কোটি টাকার কিছু হীরে!!!”

চলবে…

লেখনীতে, #AbiaMaria

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here