#Journey
#৩৮
জেসমিনের গলা ফাটান চিৎকার একবারই শনা যায়,তারপর সব নিশ্চুপ।অর চিৎকার শুনে রাইফের আত্মা যেন শরির থেকে বেরনোর উপক্তম! সেলিমকে গাড়ি থেকে না বের করেই হাতের সব কিছু ফেলে একদৌড়ে বাসার ভেতর দৌড়ে প্রবেশ করে,তারপর যা দেখে,তা দেখে ওর দুচোখ চড়ক গাছ।
দেখছে জেসমিন মুখে হাত চেপে বাবুকে বুকে চেপে দাঁড়িয়ে আছে,সামনে ওদের পুরো ফ্রেন্ড সার্কেল দাঁড়িয়ে আছে,সবার মাথায়ই বার্থডের টুপি,মুখে বাঁশি,হাতে বেলুন,আর পুরো ঘর অনেকরকম বেলুন,ফুল,কাগজ দিয়ে সাজানো।ডাইনিং এর দেয়ালের মাঝখানে কাগজ কেটে লাগানো “Welcome Home New Love!” সবাই জেসমিনকে নিয়ে হৈচৈ করছে আর হাসছে,কেউ কেউ সেলফি তোলায় ব্যস্ত।রাইফ এর মাঝেই একটানে জেসমিনকে বুকের সাথে মিশিয়ে ফেলে।
“তুমি জানো আমি কি ভয় পেয়েছি!আমি ভেবেছিলাম বুঝি খুব খারাপ কিছু হয়ে গেছে!আমি মনে হয় তোমাকে হারিয়ে ফেললাম এবার!”
জেসমিন হেসে রাইফের ঘাড়ে নাক মুখ ঘষতে ঘষতে বলে,
“কি যে বলো না!ইনশাআল্লাহ তুমি থাকতে আমার কিচ্ছু হবে না,আমি জানি!”
রেবেকা এগিয়ে এসে রাইফের কাঁধে হাত রাখে,
“সরি,রাইফ,আমরা তো শুধু তোমাদের সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছি।আমি খুব সরি যে তুমি ভয় পেয়েছ”
“কি যে বলো!সরি কেন হচ্ছো?আমি অনেক খুশি হয়েছি যে তোমরা আমাদের জন্য এত কিছু করেছ,থ্যাংক্স আ লট!”
সবাই মিলে হৈচৈ শুরু করে,রাইফকে এন্টোনিও আর ডিয়েগো সাহায্য করে গাড়ি থেকে বাবুর জন্য কিনে আনা এক্সেসরিজ নামাতে।সবাই মিলে ওদের জন্য কিনে আনা কেক কাটে তারপর।জেসমিন আর রাইফ জানতে পারে,এসব হল রেবেকার বুদ্ধি,এমনকি ওদের জন্য ডিনারও রেবেকা কিনেছে,যেন রান্নার ঝামেলায় না যেতে হয়।জেস রেবেকাকে জড়িয়ে ধরে,
“তুই আমার বেস্ট ফ্রেন্ড! আমি কিছুই করতে পারলাম না,কিন্তু তুই কত কি করলি! তুই…তুই আমার বাচ্চাদের গডমাদার!”
“যাক,নিজের বাচ্চাদের মা হতে না পারলেও তর বাচ্চাদের গডমাদার হতে পারলাম,সেটাই অনেক!আর কে বলল তুই আমার জন্যে কিছু করিস নি?তুই আমার জন্যে যা করেছিস,তা আর কেউ করতে পারেনি!”
রেবেকা ভালবেসে বিয়ে করেছিল মার্কো নামের এক ইটালিয়ান যুবককে, ওরা একই অফিসে চাকরী করত।বিয়ে চারবছরের মাথায় ওদের মাঝে ডিভোর্স হয়ে যায়।তখন মার্কো ওর দুবছরের মেয়েকে নিয়ে যায়,কারণ রেবেকার অবস্থা খুব খারাপ ছিল।তখন ওর কোন আর্থিক সচ্ছলতা ছিল না।ফলে কোর্টে ও হেরে যায়,মার্কো ওদের নিয়ে যায়।মা হয়ে নিজের মেয়েকে এভাবে হারিয়ে রেবেকা খুব ভেঙে পড়েছিল।যেহেতু ওর এক্স হাজবেন্ড সন্তানকে নিয়ে এখানেই আছে,তাই ও এই দেশ ফেলে নিজের দেশে অস্ট্রেলিয়াতেও যেতে পারছিল না।তখনই জেসমিনের সাথে পরিচয়।ওরা তখন থেকে এক রুম শেয়ার করে থাকত।জেস ওকে নানা ভাবে মানসিক শক্তি যোগায়,আর রেবেকাও সেসব মনে রেখেছে।তাই সুযোগ পেলেই ছুটে এসেছে জেসের কাছে।
সবাই আনন্দ শেষে ওদের অনেক অনেক ভালোবাসা জানিয়ে গিফট দিয়ে বিদায় নেয়।অবশ্য বেশিরভাগ গিফটই সেলিমের দখলে।ওর যুক্তি হল, বাবু তো এখন কিছুই বুঝে না,তাই সব গিফট ওর।বাবু যখন বুঝবে,তখন ও বাবুকে দিবে।জেস আর রাইফ সব গুছিয়ে দোতলায় চলে যায়,ওদের ঘরে।সেলিমকে ঘুম পাড়িয়ে ঘরে এসে দেখে,জেস বাবুকে খাওয়াচ্ছে।রাইফ এসে চুপটি করে গালে হাত দিয়ে পাশে বসে দেখতে থাকে।
“কি দেখ অমন করে?”
“তোমাদের দেখি”
“আমাদের এভাবে দেখার কি আছে?”
“বাহ রে,আমি আমার বৌ বাচ্চাকে দেখতে পারব না বুঝি?”
“উম,পারবা।কিন্তু আমার লজ্জা লাগছে তো!”
“ওরে আল্লাহ!বাচ্চা হয়ে গেল তোমার,তাও আমার সামনে,এখনও লজ্জা গেল না?!”
“যাহ,তুমি এভাবে তাকাও তাই লজ্জা লাগে,বাচ্চা হওয়া তো অন্য কিছু!”
রাইফ উঠে জেসমিনের ডান হাত নিয়ে তাতে অসংখ্য বার ঠোঁটের স্পর্শ দেয়।
“তুমি এত কষ্ট করেছ বাবুর জন্য!আসলে সব দোষ আমার!আমার কারণে তুমি প্রেগনেন্ট হয়েছ,এত কষ্ট পেয়েছ…”
জেস ফিক করে হেসে দেয়।রাইফ ভ্রু কুঁচকায়।
“তুমি হাসো কেন?আমি কি মজা করতেছি?”
“বোকা ছেলে,সন্তান জন্ম দিতে এরচেয়েও কষ্ট করতে হয় একটা মাকে।এটাই স্বাভাবিক।কেউ পৃথিবীতে এমনি এমনি আসেনি।আর এতে তুমি কেন নিজেকে দোষ দিচ্ছ?আল্লাহ আমাদের দিয়েছে তাই সন্তান হয়েছে।আর এজন্য আমাদের আল্লাহ অনেক সম্মানও দিয়েছেন।তাছাড়া এসব কষ্ট তো শুধুই এই পৃথিবীর জন্য।ওপাড়ে গেলে তো আর এসব আমাদের পেতে হবে না।শুধু এত ভেব না।আমাকে অনেক অনেক ভালোবেসো,তাতেই আমার হবে”
রাইফ জেসমিনের পাশে শুয়ে ওর কোমড় জড়িয়ে কাছে এনে ঘাড়ে মুখ গুঁজে রাখে।জেস কিছুটা ইতস্তত করে বলে,
“শোনো,তোমাকে একটা কথা বলা হয়নি”
“কি?”
“মা আমাকে কল করেছিল”
রাইফ রেগে ওর দিকে তাকায়।
“তা সেটা এতক্ষণে কেন বলছ!কখন কল করেছিল?”
“এইত,গতরাতে”
“আর আমি কোথায় ছিলাম?”
“তুমি ডিনার আনতে গিয়েছিলে”
“তা সে কি বলল শুনি?”
“বলল অনেক কিছুই।সে জেনেছে যে আমাদের ছেলে হয়েছে।আমি বুঝি না সে এত স্পাই পায় কোথায়! আমাদের পিছে যে লেগে আছে,সেটাও আমি বুঝি না!”
‘তুমি আবার সোস্যাল মিডিয়াতে আপলোড দাওনি তো?”
“পাগল তুমি?জানো আমার সব সাইট ডিএক্টিভ?”
“আচ্ছা,আলামিন ভাই আবার…”
“রাইফ! আমার ভাইকে নিয়ে খবরদার সাবধানে কথা বলবে! ভাইয়াই সব দেখে শুনে রেখেছে।ভাইয়াই নিজে সব সামলাচ্ছে।আর ভাইয়াকে নিয়ে কিনা তুমি এরকম ভাবছ?!”
“আরে বাবা আমার কথা শেষও করতে দিলা না! বলতে চাচ্ছিলাম যে,আলামিন ভাই এরকম কাউকে বলছে না তো যে কিনা সব জানাচ্ছে?কারণ উনাকে ছাড়া আর কাউকে তো জানাইনি আমাদের ছেলের ব্যাপার”
“জানি না।তবে আমার এই হীরে গুলো নিয়ে অনেক বিরক্ত লাগছে।সত্যিই,সম্পদ থাকার চেয়ে না থাকা ভাল।অবশ্য আমার মাথায় একটা আইডিয়া এসেছে,হয়ত এটা আমাদের এত ঝামেলা থেকে মুক্তি দিতে পারে”
“কি সেটা?”
চলবে…
লেখনীতে, #AbiarMaria