#Mr_Calculus (পর্ব – ১০)
রিফাতদের বাড়িটা ডুপ্লেক্স। রিফাত আর পুষ্প নিচতলায় থাকে বাকিরা উপরে। প্রেগন্যান্সির কারণে রেহানা ইসলাম তানিয়াকে নিচে শীফট করে দিয়েছে। তিনি ইদানীং ভাবছেন রিফাত আর পুষ্পকে উপরে পাঠিয়ে দিয়ে তারা নিচে রিফাতদের ঘরে থাকবেন। কারণ তানিয়ার কখন কী লাগে তিনিই ভালো বুঝবেন। সেটাই হল। তানিয়ার উপরে খুব একটা প্রয়োজন হয় না। কিছু লাগলে অন্যরাই করে দেয়। সেদিন দুপুরে তার ঘুম আসছিল না, কেমন আস্থির অস্থির লাগছে সেই সাথে মাথাটাও খুব ব্যথা করছিল। সে ঘর থেকে বের হয়ে শ্বাশুড়ির ঘরে উঁকি দিয়ে দেখে তিনি ঘুমাচ্ছেন। তার ইচ্ছে হচ্ছিল কেউ তার মাথায় বিলি কেটে কেটে তেল দিয়ে দিক, আরাম হত। সে ভাবল আস্তে আস্তে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে পুষ্পর কাছে গেলে ও তেল লাগিয়ে দিবে। ও খুব সুন্দর করে বিলি কেটে তেল দিয়ে দেয়। প্রথমে তেলটা দুই মিনিট ফ্রিজে রেখে ঠান্ডা করে নেয় তারপর দেয়। কি যে আরাম লাগে… সে আস্তে আস্তে উঠে গেল। গিয়ে দেখে পুষ্পও ঘুমাচ্ছে। মেয়েটা ভার্সিটি থেকে ফিরে ক্লান্ত হয়ে ঘুমাচ্ছে তার ইচ্ছে হল না জাগাতে। এদিকে সিঁড়ি বেয়ে এসে সে হাপিয়ে গেছে… আজকাল অল্পতেই সে হাপিয়ে যায়। সে খুব আস্তে পুষ্পর পাশে বিছানার উপর বসল কিন্তু তাতেই পুষ্পর ঘুম ভেঙে যায়। সে ভাবিকে দেখে লাফিয়ে উঠে বলে-
-ভাবি তুমি এখানে! কিছু লাগবে? আমাকে ডাকলে না কেন? নাকি আমি ঘুমের জন্য শুনতে পাইনি? ফোন করতে?
-আরে বাবারে কত প্রশ্ন করছে! থাম থাম, ইচ্ছে করেই ডাকিনি। আমার তো একটু হাঁটা চলাও করতে হবে নাকি?
-ওহ… কিছু লাগবে? খাবে কিছু?
-না। মাথা ব্যথা করছে খুব… আর কেমন অস্থির অস্থির লাগছে… একটু তেল দিয়ে দাও।
-ও এই কথা? দিচ্ছি দাঁড়াও। পুষ্প তেল ঠান্ডা করে নিয়ে আসে তারপর সময় নিয়ে বিলি কেটে মাথার তালুতে ঘষে ঘষে দিয়ে দেয়। পুরো সময়টা তানিয়া চোখ বন্ধ করে উপভোগ করে। তারপর বলে-
-তোমার ঘুম ভাঙিয়ে দেয়ার জন্য দু:খিত। কিন্তু আমার কী যে ভালো লাগছে এখন!
-তোমার ভালো লেগেছে এর কাছে আমার ঘুম কিছুই না। তোমার যখন মন চাইবে আমাকে বলবে। আর হ্যাঁ এভাবে আসতে হবে না, ডেকে পাঠাবে আমি টুকুস করে চলে আসব। তানিয়া আরও কিছুক্ষণ বসল তারপর নিচে যেতে চাইলে পুষ্প তাকে নামিয়ে দিতে চাইল কিন্তু তানিয়া বলল-
-ধুর, আমি যেতে পারব তুমি একটু শুয়ে থাকো। যদিও এখন তোমার আর ঘুম আসবে না, তবুও। বলে তানিয়া নেমে গেল পুষ্প তবু পেছন পেছন এগিয়ে গেল। তানিয়া দুটো সিঁড়ি নামতেই তার পা হড়কে গেল! সে রেলিং ধরতে চাইল কিন্তু তার হাত বাতাসে খামচি মেরে ফিরে গেল… সে একটা আর্তচিৎকার করে একদম উপুর হয়ে সিঁড়ির উপর পড়ে গেল!!! সরাসরি পেটে আঘাত পেয়ে তানিয়া গগনবিদারী চিৎকার দিয়ে ওঠে। সে পুরো সিঁড়ি গড়িয়ে নিচে পড়ে যায়। রক্তে ভেসে যেতে থাকে সিঁড়ি… সিঁড়ি থেকে নিচের ফ্লোর… পুষ্প ভয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। তানিয়ার চিৎকার আর কান্না শুনে রেহানা আর বড় চাচী দুজনের ঘুম ভেঙে যায় তারা ছুটে আসে, এসে তানিয়া আর পুষ্পকে এই অবস্থায় দেখে তারাও চিৎকার করে কান্না শুরু করেন। রেহানা দ্রুত রিফাতকে ফোন দিয়ে এম্বুলেন্স পাঠাতে বলে সেই সাথে রাইয়ানকেও জানাতে বলে। এসব শুনে রিফাতের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে! সে দ্রুত এম্বুলেন্সকে খবর পাঠিয়ে অফিস থেকে বের হয়ে যায়। রিফাত নিজেরও দিশেহারা হয়ে যায়, এই খবর সে তার ভাইকে কী করে দেবে??? সে ভাইয়াকে ফোন করে শুধু বলল-
-ভাইয়া ইমার্জেন্সি হাসপাতালে চলে আয়, ভাবিকে নিয়ে বাকিরা যাচ্ছে।
রাইয়ান আতঙ্কিত গলায় বলল- কী হয়েছে তানিয়ার?
-কী হয়েছে আমি জানি না… মা শুধু দ্রুত হাসপাতালে যেতে বলেছে তুই দেরি করিস না। বলে রিফাত আর কিছু না বলে ফোন কেটে দেয়। সে প্রাণপণ চেষ্টা করছে শক্ত থাকতে। দ্রুত কয়েক জায়গায় ফোন করে রক্তের ব্যবস্থা করে ফেলে। তারপর পুষ্পকে ফোন করে। পুষ্প ফোন ধরে কাঁদতে থাকে। সে মারাত্মক ভয় পেয়েছে। কিছু বলতেই পারছে না শুধু হাউমাউ করে কেঁদে চলেছে… রিফাতের চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ল… সে জানে না কী হবে কিন্তু প্রাণপণ আল্লাহকে ডাকছে খারাপ কিছুই যেন না হয়।
সবাই হাসপাতালে অপারেশন থিয়েটারের সামনে অপেক্ষা করছে। ডাক্তার বলেই দিয়েছেন রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক! তারা যেন আল্লাহকে ডাকেন, এখন তার হাতেই সব কিছু। রেহানা ইসলাম আকুল হয়ে কাঁদছেন। রিয়ানা, পুষ্প বড় চাচী সবাই কান্নায় ভেঙে পড়েছে। এক ঘন্টা পার হয়ে গেছে… ডাক্তার এর মাঝে একবার বলে গেছেন- পেশেন্ট উপুর হয়ে পড়ার কারণে সরাসরি পেটে আঘাত পেয়েছেন। ৮মাস চলছিল এই অবস্থায় এত জোরে চাপ খেয়ে ovary ফেটে গিয়েছে। বাচ্চা মাথায় মারাত্মক আঘাত পেয়েছে, যার ফলে এখানে আসার আগেই সে মারা গেছে। প্রচুর রক্তক্ষরণের কারণে মায়ের অবস্থাও আশঙ্কাজনক। ব্লাড দেয়া হচ্ছে কিন্তু ব্লিডিং থামছে না। আরও ব্লাড রেডি রাখতে হবে। আর… পেশেন্টের ovary এতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যে, ওটা ফেলে দিতে হয়েছে! আশা খুব সামান্য হলেও আল্লাহপাক চাইলে মাকে হয়ত বাঁচানো সম্ভব হতে পারে তবে তার মাতৃত্বকে বাঁচানো সম্ভব হল না। আমরা খুব দু:খিত…
ডাক্তারের কথাগুলো উপস্থিত সবার মনে মুহূর্তেই শোকের চরম স্তব্ধতা নামিয়ে নিয়ে এলো… রাইয়ান স্তব্ধ হয়ে গেল। রিফাত ধীরে ভাইয়ার কাছে এগিয়ে গেল… যে মানুষটা সব সময় তার মাথার উপর ছায়া হয়ে থেকেছে, শক্ত হয়ে দাঁড়াতে শিখিয়েছে আজ তার পায়ের তলার মাটি সরে গেছে! রিফাত ভাইয়ার কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে আস্তে করে তাকে জড়িয়ে ধরে… মুহূর্তেই রাইয়ান ঝড়ে ভেঙে পড়া গাছের মত কান্নায় ভেঙে পড়ে… রিফাত ভাইয়াকে শক্ত করে ধরে রাখে… তার নিজের চোখও যে বাঁধ মানছে না! রিয়ানাও উঠে এসে ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগল। পুষ্প বড় চাচীকে ধরে কাঁদছে। আমানত উল্লাহ খান রেহানার পাশে স্তম্ভিত হয়ে বসে আছেন… পুরো হাসপাতালের মাঝে এ এক হৃদয়বিদারক দৃশ্য! সবাই শোকে মুহ্যমান পরিবারের দিকে ব্যথিত চোখে তাকিয়ে আছে। করিডোরের মাঝখানে দাঁড়িয়ে ৩ভাইবোন জড়াজড়ি করে কাঁদছে! দুই ঘন্টা পর সার্জারি শেষ হয় কিন্তু তানিয়ার অবস্থা তখনো শঙ্কামুক্ত নয় বলে দিলেন ডাক্তার। তার ব্লিডিং তখনো থামেনি! রাইয়ান হাসপাতাল থেকে বের হয়ে মসজিদে চলে যায়। তানিয়ার জন্য দুই রাকাত নফল নামাজ পড়ে অঝোরে কাঁদে। রাইয়ানের দোয়ার শক্তিতেই হয়ত আল্লাহ মুখ তুলে তাকান। রাতে ব্লিডিং কমে যায়। দীর্ঘ সময় ধরে জমে মানুষের টানাটানির পর তানিয়া আশঙ্কামুক্ত হয়। তানিয়া আশঙ্কামুখ হতেই সবাই নতুন করে ভাবনায় পড়ে যায় তানিয়াকে জানাবে কী করে তার সাথে কী ঘটে গেছে? রিফাত সবাইকে শক্ত হতে বলে। সে পুষ্পকে ডেকে নিয়ে আলাদা করে বলে-
-তুমি শান্ত হচ্ছ না কেন? সবাই একসাথে ভেঙে পড়লে চলবে? ভাইয়াকে, মাকে সামলাতে হবে। এটা একটা এক্সিডেন্ট, আল্লাহ চেয়েছেন তাই হয়েছে, এর উপর আমাদের কারো হাত নেই।
তানিয়া কিছুটা সুস্থ হলে সে প্রথমেই তার সন্তানের কথা জানতে চায়। তার মা কেঁদে ফেলেন… রেহানা ইসলাম নিরবে চোখের পানি ফেলেন… কেউ তাকে সন্তানের কথা বলতে পারে না। তানিয়া অস্থির হয়ে যায়। পুষ্প বলে-
-ভাবি অস্থির হয়েও না… ও আছে… তুমি সুস্থ হও আগে।
-ওর কথা তোমরা কেউ বলছ না কেন? ছেলে হয়েছে না কি মেয়ে সেটাও বললে না?
-তোমার চাঁদের মত ছেলে হয়েছে ভাবি।
-আমি ওকে দেখব… দেখাও না কেন?
পুষ্প প্রাণপণ চেষ্টা করে চোখের পানি আটকাতে… পারে না। গাল বেয়ে দুফোঁটা পানি ঠিক নেমে আসে… সে তানিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে- ও তো ব্যথা পেয়েছে… তাই ওকে আলাদা রাখা হয়েছে তুমি সুস্থ হও তোমাকে ওর কাছে নিয়ে যাব আমরা। তানিয়ার মা রুম থেকে উঠে বের হয়ে যায়। রেহানা ইসলাম তার পিছু নেন। এই দৃশ্য তাদের পক্ষে আর দেখা সম্ভব হচ্ছে না। রাইয়ান ক্রমাগত চোখের পানি মুছে যাচ্ছে…
৪দিন পর তানিয়া হাসপাতাল থেকে ছাড়া পায়। এই ৪দিনে অসংখ্যবার সে তার ছেলের কথা জানতে চেয়েছে কিন্তু কোন এক অদ্ভুত কারণে সবাই এটা সেটা বলে এড়িয়ে যেতে চেয়েছে… তখন সে আন্দাজ করতে পেরেছে তার সন্তান হয়ত বেঁচে নেই। এক রাতে রাইয়ানকে একা পেয়ে সে তার ছেলের কথা জানতে চায়। রাইয়ান মিথ্যা বলতেই যাচ্ছিল কিন্তু তানিয়া তাকে থামিয়ে দিয়ে কড়া গলায় বলে- আমি কোন মিথ্যে গল্প শুনতে চাইছি না। যা ঘটেছে ঠিক তাই বলবে।
রাইয়ান তানিয়ার দিকে তাকায়, তানিয়ার মুখ তখন থমথমে কঠিন হয়ে আছে… রাইয়ান বুঝতে পারে তাকে এখন সত্যটাই বলতে হবে। সে তানিয়ার হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে সত্যটা বলে দেয়। সে ভেবেছিল এটা শুনে তানিয়া খুব কাঁদবে কিন্তু আশ্চর্য, তানিয়া কিছুই বলল না! শুধু একফোঁটা চোখের পানি ওর গাল বেয়ে নি:শব্দে নেমে এলো! সেই যে তানিয়া চুপ হল আর কথা বলল না। তাকে বাসায় আনার পরও সে কোন কথা বলল না। সবাই তাকে ভয় পেতে শুরু করল। ডাক্তার বলল-
-সে বড়সড় একটা শক পেয়েছে এই কারণেই এমন চুপ হয়ে গেছে। আপনারা তার সাথে স্বাভাবিক আচরণ করুন, বেশি করে সময় দিন। ভালো রাখার চেষ্টা করুন। সময়ে সব ঠিক হয়ে যাবে। সবাই তানিয়াকে খুশি রাখার চেষ্টা করছে কিন্তু তানিয়া স্বাভাবিক হতে পারছে না। অথচ তাকে এখনো তার ব্যাপারটা তো জানানোই হয়নি!
রাইয়ান তানিয়াকে নিয়ে দিন দিন চিন্তিত হয়ে পড়ছে। সে তার মেডিকেল রিপোর্ট গুলো নিয়ে আবার ডাক্তারের কাছে যেতে চাইল। রিয়ানা বলল সেও সাথে যেতে চায়। রাইয়ান রিয়ানাকে সাথে নিয়ে তানিয়ার ডাক্তারের কাছে গেলেন। সিরিয়ালের জন্য তারা ওয়েট করছিল তাদের সিরিয়াল এসেছে যখন তখন একটা ছেলে এসে হুরমুর করে ঢুকে পড়ছিল, রাইয়ান দ্রুত তাকে থামিয়ে বলল- শুনুন…
ছেলেটা দাঁড়িয়ে গেল। বলল- আমাকে বলছেন?
-হ্যাঁ। এখন তো আমাদের সিরিয়াল আপনি ঢুকে পড়ছেন যে?
-আমি আসলে পেশেন্ট নই…
-তাহলে তো আপনার এখানে ঢোকারই কথা না পরে আসুন।
ছেলেটা কিছু বলতে যাবে তখনই পাশ থেকে রিয়ানা বলে উঠল- “আরে তূর্য ভাইয়া আপনি এখানে?”
তূর্য তাকিয়ে দেখে রিয়ানা! সে বিস্ময়ের সাথে বলে- আপনি! ও, এটা আমার বাবার চেম্বার। ডাক্তার সাহেব আমার বাবা হন। আমি একটু জরুরি কাজে এসেছিলাম। ঠিক আছে আপনারা ভেতরে যান, আমি নাহয় পরেই যাচ্ছি।
রাইয়ান রিয়ানাকে বলল- তুই একে চিনিস?
-হ্যাঁ, আচ্ছা ভাইয়া তুমি ভেতরে যাও আমি এক মিনিটের মধ্যে আসছি। “ঠিক আছে” বলে রাইয়ান ভেতরে চলে গেল। রিয়ানা তখন তূর্যকে বলল- আপনার সাথে তাহলে আবার আমার দেখা হয়েই গেল!
-সেটাই তো দেখছি! উনি তোমার ভাইয়া? Upss sorry… “তুমি” বলে ফেলেছি! আসলে আপনি বয়সে আমার থেকে অনেক ছোট তাই “তুমি” এসে গিয়েছে। Again sorry…
-It’s okay, no problem… আপনি আমাকে “তুমি” করেই বলুন সমস্যা নেই। হুম, উনি আমার বড় ভাইয়া।
-তোমার মোট কতজন ভাইয়া আছেন?
রিয়ানা হেসে ফেলল বলল- দুইজন।
-ও আচ্ছা। বাবার কাছে কী জন্য? কার কী হয়েছে?
-বড় ভাবির জন্য। ভাবির বড় একটা এক্সিডেন্ট হয়েছে… বেবি মারা গিয়েছে। এসব নিয়ে ভাবি মেন্টালি খুব আপসেট।
-ও… দু:খিত…
-আমার যদি আপনার গান শুনতে ইচ্ছে হয় আপনি কী শোনাবেন?
-শোনাব, কিন্তু কীভাবে?
-আপনার ফোন নাম্বারটা কী দেয়া যাবে? আমি ফোন করব?
-তূর্য নাম্বারটা বলল। রিয়ানা সেটা সেইভ করে আসি বলে ভেতরে চলে গেল।
তানিয়ার মেডিকেল রিপোর্ট আর কন্ডিশন শুনে ডাক্তার তাকে সাইকোলজিস্ট দেখানোর সাজেস্ট করলেন। তিনি ভালো একজন সাইকিয়াট্রিস্ট এর নামও বলে দিলেন। সাথে ডিপ্রেশনের কিছু ওষুধ দিলেন।
রাইয়ান তানিয়াকে সাইকিয়াট্রিস্টের কাছে নিয়ে যেতে চাইলে সে যেতে চাইল না কিছুতেই। বলল- আমি ঠিক আছি। তাকে কোন অবস্থাতেই রাজি করানো গেল না।
ওদিকে রেহানা ইসলামও আর আগের মত নেই। তিনিও কেমন চুপচাপ ধরনের হয়ে গেছেন। তানিয়া হাসপাতাল থেকে ফেরার পর কিছুদিন তানিয়ার যত্ন নিলেও ধীরে ধীরে তার সবই ফিকে হয়ে আসতে লাগল! ইদানীং তানিয়ার সাথে প্রয়োজন ছাড়া তেমন কথা বলেন না। বাকিরা স্বাভাবিক থাকলেও তিনি পারছেন না। আমানত উল্লাহ খান ব্যাপারটা খেয়াল করলেন, তিনি সরাসরি এই বিষয়ে তার সাথে এক রাতে কথা বললেন। রেহানা কোন রকম রাখ ঢাক না করে বললেন- আমি তানিয়াকে আর মেনে নিতে পারছি না। আমার রাইয়ান কী নির্বংশ হয়ে থাকবে? আমার রাইয়ানের মত ছেলে পাওয়া যায় না। তার মত সোনার টুকরো ছেলের সাথে এমনটা আমি হতে দিব না। কিসের কমতি আমার? আমি রাইয়ানকে আবার বিয়ে দিতে চাই।
-তুমি রাইয়ানের বিয়ে চাও তার বংশ দেখতে চাও সবই ঠিক আছে কিন্তু রাইয়ান নিজে চায় কিনা সেটাও তো তোমাকে দেখতে হবে?
-ও এসবের কী বোঝে? ও তো তানিয়া ছাড়া এখন চোখে কিছুই দেখছে না!
-সেটাই তো হওয়া স্বাভাবিক। একটা মেয়ের এইরকম দু:সময়ে তার স্বামী ছাড়া পাশে কে থাকবে? আমি আমার ছেলেকে নিয়ে গর্ব করি। আলহামদুলিল্লাহ, আমি তাকে মানুষ বানাতে পেরেছি। আমি চাই সে তার স্ত্রীর পাশে থাকুক।
-তাহলে তুমি তোমার স্ত্রীর পাশে থাকছ না কেন?
-কারণ তুমি অন্যায় কথা বলছ।
-আমি আমার ছেলেটার কথা ভাবব না?
-অবশ্যই ভাববে কিন্তু তানিয়ার কথা কেন ভাবছ না? যে মেয়েটা সন্তান আর মাতৃত্ব সব কিছু হারিয়ে বসে আছে তার কাছ থেকে তুমি শেষ অবলম্বনটাও কেড়ে নিতে চাও? তানিয়া যদি তোমার নিজের মেয়ে হত তাহলে?
-আমি এত কিছু ভাবতে পারব না। আমার ছেলের কথা আমাকেই ভাবতে দাও।
-ভাবো কিন্তু অবশ্যই এসব ভুল ভাবনা নয়।
-আমি কী ভাবব সেটা তোমাকে বলে দিতে হবে না।
আমানত উল্লাহ সাহেব ধৈর্য হারিয়ে ফেললেন। বললেন- “আমি আমার কোন সন্তানকেই কষ্ট পেতে দেব না” বলে উঠে গেলেন তিনি।
তানিয়া চা নিয়ে আসছিল তার শ্বশুরের জন্য কিন্তু দরজায় এসে দাঁড়াতেই শ্বাশুড়ির মুখে উচ্চস্বরে তার নামটা কানে যেতেই দাঁড়িয়ে গিয়েছিল তারপর বাকি সব কথাই তার কানে যায়। সে নিরবে দাঁড়িয়ে চোখের পানি ফেলে… এত বড় একটা সত্য তার কাছ থেকে সবাই আড়াল করে গেছে! রাইয়ানও তাকে কিছু বললনা? সে আর ওঘরে না গিয়ে নিজের ঘরে চলে আসে। এসে প্রেসক্রিপশনগুলো চেক করে। সেগুলো ঘাটাঘাটি করতেই পেয়ে যায় সব কিছু। সে পাথরের মত জমে যায়… তার যে কিছুই বাকি রইল না!
রাইয়ান সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে দেখে তানিয়া ব্যাগ গুছিয়ে বসে আছে। সে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, ব্যাগ গুছিয়েছ কেন?
-অনেক দিন হয় মা’র বাসায় যাই না। খুব ইচ্ছে হচ্ছে যেতে।
-ইচ্ছে হচ্ছে যাবে। কিন্তু হুট করেই এভাবে ইচ্ছে হল কেন বুঝলাম না! আমাকে আগে বলতে আমি নাহয় অফিস থেকে ছুটি নিয়ে আরও আগেই চলে আসতাম?
-তুমি না গেলেও সমস্যা নেই। আমি একা যেতে পারব। পথ তো অচেনা নয়।
-এভাবে বলছ কেন? কী হয়েছে? কেউ কিছু বলেছে?
-কেউ কিছু বলে না আমাকে এটাই সমস্যা।
-মানে কী?
-মানে কিছুই না। সব কথার মানে হয় না। আমি আজই যাব, এক্ষুনি যাব। তুমি যেতে চাইলে চলো নয়ত আমি বের হচ্ছি।
-ঠিক আছে চলো।
-আমি কিন্তু বেশ কিছু দিন থাকব। আসার জন্য একদম তাগাদা দেবে না।
-ঠিক আছে। রাইয়ান তানিয়ার আচরণে অবাক হল একই সাথে কষ্টও পেল। কিন্তু কিছু বলল না। ওর শরীর মন কোনটাই ভালো নেই তাই কিছু বলে কথা বাড়াল না। মন ভালো হলে হয়ত নিজেই সব বলবে।
রাইয়ান তানিয়াকে নিয়ে বের হল রেহানা ইসলাম কিছু বললেন না। আমানত উল্লাহ খান কবে ফিরবে জানতে চাইল।
তানিয়া বলল- দেখি… থাকব কিছুদিন।
-ঠিক আছে। কিছুদিন নাহয় থেকে আসো। ভালো লাগবে তোমার।
-আপনারা ভালো থাকবেন। বলে তানিয়া আর দাঁড়াল না।
রাইয়ান তানিয়াকে নিয়ে গেলে একদিন থাকতে চেয়েছিল কিন্তু তানিয়া থাকতে দিল না। ভুজুংভাজুং দিয়ে পাঠিয়ে দিল। রাইয়ান চলে এলো কিন্তু কেন যেন এই তানিয়াকে, তার এভাবে চলে যাওয়াটা ওর ভালো লাগল না। বার বার মনে হচ্ছিল কিছু একটা হয়েছে তানিয়ার।
তানিয়া চলে গেছে বেশ কিছুদিন হল। তাকে ফোন দিলে সহজে ধরে না। ১০বার ফোন দিলে হয়ত ১বার ধরে, দায়সারাভাবে কথা বলে। আসতে বললে আসতে চায় না। রাইয়ান যেতে চাইলে তাও মানা করে। কি হয়েছে তাও বলে না। এসব নিয়ে ইদানীং রাইয়ান নিজেও আপসেট থাকছে। তার ধারণা হচ্ছে তানিয়া কিছু অনুমান করতে পেরেছে নয়ত কেউ তাকে কিছু বলেছে। কেউ তাকে কিছু বলবে এবাড়িতে তেমন কেউ নেই… তাহলে সে নিজেই কি কিছু জেনে ফেলল?
রিফাত আজকাল খেয়াল করেছে ভাইয়া কেমন উদাস থাকে। বুঝতে পারে ভাবির কারণে হয়ত। সে ভাবিকে ফোন দেয় কিন্তু ভাবি তো ফোনই ধরে না! আগে তো কখনো এমন হয়নি! পুষ্প ফোন করে ওর ফোনও ধরে না। কিছু কী হয়েছে ভাইয়ার সাথে? সে রাইয়ানের সাথে এক সন্ধ্যায় চা নিয়ে ছাদে চলে যায় তারপর কথায় কথায় ভাবির প্রসঙ্গ তোলে। রাইয়ান রিফাতকে বলে দেয় যে, তানিয়ার হয়ত কিছু একটা হয়েছে। রিফাত তখন বলে-
-ভাইয়া তুই তাহলে দেরি না করে কালই ভাবির কাছে যা। ভাবিকে জিজ্ঞেস কর কী হয়েছে? এমন কেন করছে? তার মুখ থেকে শুনে তবে ছাড়বি। তারপর ভাবিকে নিয়ে আয়।
রাইয়ান এটাই ভাবছিল। বলল- ঠিক আছে। পরদিন সে অফিস থেকে একদিনের ছুটি নিয়ে তানিয়াদের বাড়ি চলে যায়। দুপুরের দিকে তানিয়ার জন্য একগুচ্ছ লাল গোলাপ নিয়ে তাদের বাড়ি গিয়ে হাজির হয়। এই দুপুর বেলা তাকে দেখে তানিয়ার ভীষণ অবাক হবার কথা অথচ আজ তার চেহারায় কোন ভাবান্তর নেই! রাইয়ান মনে মনে আহত হল কিন্তু সেটা প্রকাশ করল না। সে তানিয়ার হাতে ফুলগুলো দিয়ে বলল- তানি, আজ তোমার হাতে সর্ষে ইলিশ খেতে ইচ্ছে হয়েছে, আমি ইলিশ মাছ নিয়ে এসেছি তুমি ঝটপট রেঁধে ফেল আমি গোসল দিয়ে আসছি, খুব খিদে পেয়েছে। বলেই সে তানিয়ার ঘরে চলে গেল। তানিয়া দেখল বেশ বড় সাইজের একজোড়া ইলিশ মাছ নিয়ে এসেছে রাইয়ান। সে মাছগুলো রান্নাঘরে রেখে চলে এলো। অন্য সময় হলে তানিয়া অবশ্যই খুশি হয়ে রান্না করত কিন্তু আজ ইচ্ছে করেই করল না। রাইয়ান খেতে বসে দেখল ইলিশ মাছ রান্না হয়নি! সে তানিয়ার দিকে তাকিয়ে বলল-
-তোমার কী শরীর খারপ?
-না।
-তাহলে মাছটা রান্না করলে না যে?
-ইচ্ছে হয়নি তাই করিনি। যখন তখন চাইলেই সব হয় নাকি?
রাইয়ান খুব কষ্ট পেল তানিয়ার কথার ধরনে তবু শুধু ছোট করে বলল- হয় না।
-তুমি হুট করে এখানে কেন এসেছ?
-তোমাকে অনেক দিন দেখি না। তাছাড়া অনেকদিন তো থাকলে আর কত? তাই নিতে এসেছি।
-আমি তো বলেছি এবার অনেকদিন থাকব আমাকে নিতে আসবে না তাও চলে আসলে কেন? আর এসব ফুল আনতে কে বলেছে তোমাকে? বিরক্তিকর।
রাইয়ান অবাক হয়ে গেল। লাল গোলাপ তোমার খুব পছন্দ তাই এনেছি, তোমার কাছে এসব বিরক্তিকর লাগছে!
-হ্যাঁ লাগছে। আমি কোথাও যাব না। তুমি খেয়ে দেয়ে বিদেয় হবে। বলে টেবিল থেকে উঠে গেল তানিয়া।
রাইয়ান দু:খিত চোখে তানিয়ার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল। তার শ্বাশুড়ি এসে বলল- বাবা তুমি ওর কথায় কষ্ট পেও না। মেয়েটার কী যে হয়েছে সব সময় বিরক্ত হয়ে থাকে কথাই বলা যায় না। সব কিছুতেই রাগ দেখায়। যখন একা থাকে তখন একটানা চুপচাপ আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে! মেয়েটা এত বড় আঘাত পেয়েছে সেটা আসলে সইতে পারছে না। ভেতরে ভেতরে ভেঙেচুড়ে যাচ্ছে। অথচ বাইরে থেকে কেমন শক্ত পাথর, একটুও কাঁদে না! একনাগাড়ে কথাগুলো বলে তিনি আঁচলে চোখ মুছলেন।
রাইয়ান তাকে আশ্বস্ত করে বলল- আপনি চিন্তা করবেন না মা, আল্লাহ যেমন দুর্দিন দিয়েছেন তেমনি এই দিন কাটিয়েও দিবেন তিনি। আমি দেখছি কী করা যায়।
রাইয়ান খাওয়া শেষ করে তানিয়ার ঘরে গিয়ে দেখে সে বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে, তার দৃষ্টি আকাশের দিকে। রাইয়ান গিয়ে তাকে পেছন থেকে আলতো করে জড়িয়ে ধরে বলে- তানি বেড়াতে যাবে? চলো দূরে কোথাও থেকে ঘুরে আসি দুজনে?
তানিয়া নিজেকে ছাড়িয়ে নেবার চেষ্টা করল কিন্তু পাড়ল না… বলল- আমি কোথাও যাব না। যেতে হলে তুমি যাও।
-তোমাকে ছাড়া একা একা গিয়ে কী করব ?
-তোমার ভালো লাগা দিয়ে আমার এত কী? ছাড়ো তো? তোমাকে না বলেছি খাওয়া হয়ে গেলে বিদেয় হবে? এখনো দাঁড়িয়ে আছ কেন?
-বউয়ের সাথে রোমান্স করতে মন চেয়েছে… কতদিন পর দেখলাম বলতো তোমাকে? আমাকে মিস করোনি?
-না করিনি। আমার ঘুম পাচ্ছে। তোমার যা ইচ্ছে করোগে। বলে সে ঘরে এসে শুয়ে পড়ে। রাইয়ান হতাশ হয়ে সেদিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল… মেয়েটা তো কিছুতেই co operate করছে না! এভাবে করলে কীভাবে চলবে? সে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ঘরে ঢুকল। তানিয়ার পেছনে গিয়ে ওর গা ঘেঁষে শুয়ে পড়ল। কিছুক্ষণ পর তানিয়া ওর পিঠে ভেজা অনুভব করে… পেছন ঘুরে দেখে রাইয়ান কাঁদছে! সে রাইয়ানের দিকে ফিরে চুপচাপ তাকিয়ে থাকে… আজকাল সে কেমন পাথর হয়ে গেছে! কোন কিছুই যেন তাকে স্পর্শ করে না। তবু সে রাইয়ানকে বলল- কী হল তোমার?
-রাইয়ান ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল… মন খুলে কিছুক্ষণ কাঁদল তারপর বলল- ছেলেটার জন্য আমারও খুব কষ্ট হয় তানি… তোমার কী মনেহয় সন্তান হারাবার কষ্টটা কেবলই তোমার?
-না, তবে তোমার আর আমার কষ্ট কখনোই এক নয় রাইয়ান… তুমি তাকে গর্ভে লালন করোনি, তার চেয়েও বড় সত্য তুমি শুধু সন্তান হারিয়েছ আর আমি তো সন্তানের সাথে আমার মাতৃত্বকেও হারিয়েছি! তানিয়া উঠে বসে বলতে থাকল- মানুষ হিসেবে আমি এখন বাতিল, অকেজো, মূল্যহীন!
রাইয়ান উঠে তানিয়ার হাত ধরে বলল- তুমি এভাবে কেন বলছ? তুমি মাতৃত্ব হারালে সেটা একতরফা কেন হবে? তুমি আমি কী আলাদা?
-অবশ্যই আলাদা। আমরা এক কী করে হব? আমার কারণে তুমি কেন থেমে থাকবে? তোমার তো সুযোগ আছে!
-সুযোগ আছে মানে? আজ যদি ব্যাপারটা উল্টো হত তাহলে সুযোগটা কী তুমি নিতে পারতে?
তানিয়া এই কথার তাৎক্ষণিক কোন জবাব দিতে পারল না… বলল- দুটো বিষয় এক নয়…
-“দুটো বিষয় এক নয়” ব্যাপারটা এমন নয়। আমরা আসলে নিজেদের স্বার্থের কারণে দুটো বিষয়কে আলাদা প্রমাণের চেষ্টা করি।
-দেখ অযথা তর্ক করে কোন লাভ নেই। তুমি আজ হয়ত এভাবে ভাবছ কিন্তু কাল যখন সবাই তোমার দিকে আঙুল তুলবে তখন এই তোমার কাছেই সব কিছু বাঁকা হয়ে যাবে। তাছাড়া তুমি তোমার পরিবারের বাইরে নও তাদেরও নিশ্চই একটা মতামত থাকবে? সেটাকে নিশ্চই তুমি অস্বীকার করতে পারবে না?
-পরিবারকে আমি বরাবরই সম্মান করি কিন্তু তার মানে এই নয় যে তারা আমার লাইফের ১০০% বিষয়ের সিদ্ধান্ত নেবে। আর তার চেয়েও বড় কথা তুমি আমাকে এতদিনে এই চিনেছ? কারো কথায় আমি বদলে যাব এটা তুমি বলতে পারছ বা বিশ্বাস করছ সেটাই আমার জন্য চূড়ান্ত লজ্জাজনক। আমার জীবনে এরচেয়ে লজ্জার বিষয় আর কিছুই হতে পারে না।
তানিয়া বুঝতে পারল রাইয়ানকে কিছু বলে আসলে লাভ নেই। এই লোকটা তাকে প্রচন্ডরকম ভালোবাসে… তার জন্য সমস্ত পৃথিবীর সাথেও সে লড়তে পারবে কিন্তু এই লড়াইটা যে খুব কঠিন! সে নিজে কষ্ট পাচ্ছে কিন্তু রাইয়ান কষ্ট পাবে এটা কী করে দেখবে? সে আর কিছু না বলে উঠে গেল।
-কোথায় যাচ্ছ?
-মাথা ধরে গেছে, চা খাব।
-আমাকেও এক কাপ দিও।
তানিয়া কিছু না বলে চলে গেল।
রাতে খেতে বসে রাইয়ান দেখল সর্ষে ইলিশ রান্না হয়েছে। সে খুশি হয়ে গেল। নিশ্চই তানিয়ার রাগ পড়েছে। কাল অফিস থেকে ছুটি কয়েকটা দিন বাড়িয়ে নিতে হবে। তারপর কিছুদিনের জন্য দূরে কোথাও ঘুরতে যাবে দুজনে।