#Mr_Calculus (পর্ব – ২)
প্রভাষক হিসেবে রিফাতের আজ ক্যাম্পাসে প্রথম দিন। ২য় ক্লাসটা সেকেন্ড ইয়ারের সাথে। রিফাত সেই ক্লাসটার জন্যই অপেক্ষা করছে, ভীষণভাবে অপেক্ষা করছে। এই মুহূর্তে সে ডিপার্টমেন্ট হেডের কক্ষেই বসে আছে। হেড তার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন। তিনি ভালো করেই বুঝতে পারছেন ছেলের মনে কী চলছে, তাই তিনি বললেন-
-রিফাত তুমি ক্লাসে যাচ্ছ, রেস্টুরেন্টে গার্লফ্রেন্ডের সাথে দেখা করতে যাচ্ছ না এটা মনে রাখবে।
-ওকে স্যার। আর আপনিও মনে রাখবেন এখানে আমি আপনার ছেলে নই, সহকর্মী। আমাকে এত গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ না করলেও চলবে। আমার ক্লাস শুরু হয়ে যাচ্ছে আমাকে বরং অভিনন্দন জানান আমি যেন আমার মিশন দ্রুত কমপ্লিট করতে পারি। আমার হাতে সময় খুব কম।
-সময় কম কেন?
-মানে তুমি ভালো করেই জানো যে শিক্ষক হবার কোন ইচ্ছে আমার নেই। শুধুমাত্র পুষ্পর কারণে আটকে গেছি। আমার অলরেডি ২/৩ জায়গায় চাকরির ব্যাপারে সম্ভাবনা হয়েছে। সব ঠিক থাকলে শীঘ্রই আমি কোথাও জয়েন করছি।
-কোথায়?
-এখনই বলা যাচ্ছে না। সময় আসুক জানবে। ক্লাসে যাচ্ছি।
রিফাত সেকেন্ড ইয়ার ক্লাসে ঢুকল। ঢুকে তার বুদ্ধিদীপ্ত চোখজোড়া যে মুখটাকে খুঁজতে লাগল তাকে পেছনের দিকে পেয়ে স্থির হল। পুষ্প সেদিনের দেখা সেই ছেলেমেয়েগুলোর সাথে বসে আছে। রিফাতকে দেখেই পুষ্পর মুখের হাসি চলে গেল। সেটা দেখে রিফাত মুচকি হেসে পরিচয় পর্ব শুরু করল। সাথে এটাও খেয়াল করল মেয়েগুলো সব তার প্রতি কেমন আগ্রহী দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে। সে প্রথমে ছেলেদের পাশ থেকে জানতে চাইল। ছেলেরা একে একে খুব আনন্দের সাথে নিজেদের নাম বলতে লাগল। ৬/৭ জন বলার পরই রিফাতের খটকা লাগল। তখন সে মেয়েদের পাশ থেকে নাম জিজ্ঞেস করল। দেখল তারাও আনন্দের সাথে নিজেদের পরিচয় দিতে লাগল- মোছা: জরিনা, পিয়ারী আক্তার, বিউটি খাতুন, ববিতা মন্ডল, অঙ্গুরীবালা… একজন তো বলে বসল “ভালোবাসা খান”! নামগুলো সবাই খুব স্বাভাবিকভাবে বললেও এদের চোখেমুখে দুষ্টুমির ঝিলিক ঠিকই দেখা যাচ্ছে। রিফাত বুঝল এরা সবাই তার সাথে মজা নিচ্ছে। এরা যে একেকটা হারে হারে দুষ্টু সেটা বুঝতে আর বাকি রইল না তার। সে কিছু না বলে নামগুলো মনে রাখার চেষ্টা করল। শুধু পুষ্পকে নিজের নামটা ঠিক মত বলতে হল। পরিচয় পর্ব শেষ হলে রিফাত বলল- ধন্যবাদ সবাইকে। তোমাদের সাথে পরিচিত হয়ে আনন্দ হল। মনে হল ৬০ এর দশকের কোন অজপাড়া গাঁয়ের প্রাইমারি স্কুলে চলে এসেছি! সত্যিই আমি অভিভূত। ঠিক আছে, আজ প্রথম দিন তোমাদের সাথে। তাই আজ তেমন কিছু পড়ব না। শুধু ক্যালকুলাস কী সেটা একটু জেনে নেই। ক্যালকুলাস বলতে তোমরা কী বোঝ? মুখস্ত বলতে হবে না, যা জানো বা বোঝ সেটাই বল।
সবাই একসাথে বলল- “জি স্যার”
-ঠিক আছে কেউ একজন আমাকে বল ক্যালকুলাস কী? কে বলবে? ক্লাসে তখন পিনপতন নীরবতা… যেন কেউ তার ভাষা বুঝতে পারছে না এখন! রিফাত তখন সামনে বসা মেয়েটার দিকে তাকিয়ে বলল- আপনি তো বালুর বাসা খান আপনি বলুন, ক্যালকুলাস কী?
মেয়েটা তখন দাঁড়িয়ে বলল- স্যার আমার নাম তো “ভালোবাসা খান”। আপনি আমাকে শুধু “ভালোবাসা” বলে ডাকবেন। ক্লাসে তখন হাসির রোল পড়ে গেল।
যদিও রিফাত সকল পরিস্থিতি সামাল দিতে জানে তবু মনে মনে এই মুহূর্তে একটু অসহায় বোধ করল। একে “এই ভালোবাসা…” বলে ডাকতে হবে! ভাবা যায়? সে মুচকি হেসে বলল-
নাম ছাড়া তো কাউকে ডাকা যায় না সো, ডোন্ট ওয়ারি।
পাশ থেকে জসিম বলে পরিচয় দেয়া ছেলেটা বলল- স্যার আমি বলব… ক্যালকুলাস কী?
রিফাত বলল- হুম বল।
-স্যার “গণিতের যে শাখায় সীমা, অন্তরা, সামা ও অসীম শ্রেণি নিয়ে আলোচনা করে তাকে ভালোবাসা… সরি, ক্যালকুলাস বলে।” বলে সে অনুর দিকে তাকিয়ে বলল- ঠিক না ভালোবাসা?
ভালোবাসা তার দিকে তাকিয়ে যেন ভালোবাসায় গদগদ হয়ে নুয়ে গিয়ে বলল- “ইসস… হ্যাঁ তো”।
রিফাত “ভালোবাসা” নামক মেয়েটার “হ্যাঁ তো” বলার ভঙ্গি দেখে মনে মনে বলল, “হাউ ডিজগাস্টিং!”। তারপর জসিমের দিকে তাকিয়ে বলল- তোমার মনে ক্যালকুলাসের প্রতি এতই ভালোবাসা যে অন্তরকলন, সমাকলনকে মেয়েদের নাম দিয়ে ফেলেছ! আমি বলতে বাধ্য হচ্ছি নামের ব্যাপারে তোমরা অনেক স্মার্ট!!! যা হোক পীথাগোরাসের জটিল উপপাদ্য আপনি দাঁড়ান?।আপনি ক্যালকুলাস সম্পর্কে আমাদের বুঝিয়ে বলবেন।
রিফাতের কথায় ক্লাসের সবাই একটু অবাক হল, “পীথাগোরাসের জটিল উপপাদ্য” টা আবার কে? এই নাম তো কেউ বলেনি! কিন্তু যাকে উদ্দেশ্য করে বলা হয়েছে সে ঠিকই বুঝতে পেরেছে এবং সে বুঝেও না বোঝার ভান করে বসে আছে।
পুষ্প রিফাতের দিকে তাকাতেই রিফাত বলল- হুম আপনাকেই বলেছি। বলতে শুরু করুন… বলে রিফাত পুষ্পর দিকে এগিয়ে গেল।
-বলতে পারি না স্যার।
-তখন তো সবাই বললেন “পারি”, এখন “না” বললে হবে না। যা পারেন তাই বলতে হবে।
পুষ্প বুঝল “না” শুনে ইনি ছাড়বেন না তাই যা মনে আসল বলে দিল।
সেটা শুনে রিফাত বলল- ব্যস এটুকুই! আমি তো জানতাম সুন্দরী মেয়েদের বুদ্ধি কম থাকে কিন্তু এখন দেখছি মেধাও কম! বলে রিফাত সেখান থেকে সরে আসছিল আর পুষ্প তখন পেছেন থেকে বলে উঠল- আসছে অংকের গডফাদার, মি. ক্যালকুলাস।
রিফাত শুনল তবে কিছু বলল না। সে মুচকি হেসে ভাবল, মিস্টার ক্যালকুলাসের “মিসেস পীথাগোরাসের জটিল উপপাদ্য”! মন্দ নয়। তারপর সামনে গিয়ে সময় নিয়ে ক্যালকুলাস পুরোটা বুঝিয়ে বলল। রিফাতের লেকচার দেয়ার দক্ষতাটা অসাধারণ। সবাই খুব সুন্দর বুঝে গেল। লেকচার দেবার সময় কে কী করছিল তার সবই রিফাত খেয়াল করছিল। ভালোবাসা নামক মেয়েটাকে সে ক্লাসের সবচেয়ে অমনোযোগী মনে করলেও একমাত্র তাকেই দেখা গেছে লেকচার নোট করতে। সে একটু তো অবাক হয়েছেই সাথে সন্দিহানও। লেকচার শেষ করে সে সবার উদ্দেশ্যে বলল-
-ক্যালকুলাস খুবই সহজ এবং মজার একটা বিষয়। শুধুমাত্র লেকচার মনোযোগ দিয়ে শুনলেই হয়ে যায়। বালুর বাসা আপনার খাতাটা দিন।
অনু একটু ইতস্তত হয়ে গেল… তাকে কেমন দ্বিধান্বিত দেখাচ্ছে।
রিফাত বলল- কই দিন?
অনু আস্তে করে খাতাটা বাড়িয়ে দেয়।
লেখা দেখে রিফাতের ভ্রু কুঁচকে গেল। সে পুরো পৃষ্ঠাটা পড়ল। তাতে পয়েন্ট আকারে যা লিখা ছিল-
“বিষয়: ক্যালকুলাস 💔
লেকচারার: রিফাত জানটুসটা ❤️
*স্যার আপনার এত হ্যান্ডসাম হবার কী দরকার ছিল?
*মেয়েগুলা সব জানটুসটার দিকে এমন রাক্ষুসীর মত তাকায় আছে কেন? why???
*ইসসস কী সুন্দর করে বলে… “ধরুন…” আহহা… “তুমি ছুঁয়ে দিলে হায় আমার কী যে হয়ে যায়…”
*স্যার আমার দিকে একবারও তাকাচ্ছে না! এ আমি বিশ্বাস করি না… “ওহ সামবাদি খিল মি”
*পাপিয়া তুই এমন ড্যাবড্যাব করে স্যারকে কী দেখিস? চোখ ট্যারা করে দিব।
*স্যার আপনি কী ম্যারেড? “হ্যাঁ” বললে আমি মারা যাব! please say “NO”.
*আপনি ৩ বার পুষ্পকে প্রশ্ন করেছেন আমাকে একবারও না। why??
*আপনার যন্ত্রণাটা… এত পড়াবার কী দরকার? গল্প করুন না? ভালো লাগে…
*স্যার আপনার হাসিটা… Ufff…
রিফাত খাতাটা ফিরিয়ে দিয়ে বলল- আপনি খুব ভালো ক্লাস করেছেন। তারপর সবার উদ্দেশ্যে বলল, এই মেয়ে চমৎকারভাবে আমার লেকচার এনজয় করেছে এবং নোটও করেছে। আমি এতক্ষণ যা বুঝিয়েছি তা এবার সে আপনাদের বোঝাবে। হুম, বলতে শুরু করুন?
-অনু কী বলবে? সে তো লেকচারের ল ও শোনেনি! ওদিকে সবাই মিটিমিটি হাসছে। কারণ অনু সম্পর্কে সবারই ধারণা আছে।
-আপনারা যখন ক্লাসে থাকবেন তখন ক্লাসেই মনোযোগী হবেন। এইরকম মনোযোগী ছাত্র হবার কোনো দরকার নেই যে, লেকচার শেষে একটা শব্দও বলা যায় না। প্রথম দিন বলে আমি কঠিন কোন শব্দ বলতে চাচ্ছি না। তারপর সে পুষ্পর দিকে তাকিয়ে বলল- মিসেস পীথাগোরাসের জটিল উপপাদ্য, এবার আপনি বলতে শুরু করুন…
আমি “মিসেস নই” বলে পুষ্প পড়া বলতে শুরু করল কিন্তু এই শুরু পুষ্পর জন্য আর শেষ হল না! রোজ ক্লাসে ঢুকে পুষ্পকে পড়া জিজ্ঞেস করাটা রিফাতের নির্দিষ্ট একটা রুলস। পড়া ঠিকঠাক বলতে না পারলেই সেটা নিয়ে এ্যাসাইনমেন্ট করে জমা দিতে হয়। পুষ্প রোজই চেষ্টা করে পড়া শিখে আসতে কিন্তু রিফাত কোন না কোন প্রশ্ন দিয়ে ঠিক তাকে আটকে দেয়। আর এ্যাসাইনমেন্ট করতে হয় সেটা নিয়ে! বাকিদের যেখানে সপ্তাহে ১ দিন এ্যাসাইনমেন্ট জমা দিতে হয় পুষ্পকে সেখানে প্রায় প্রতিদিন জমা দিতে হয়। তার উপর মজা করে বলা নামগুলোই এখন সবাইকে বহন করতে হচ্ছে। আর এ্যাসাইনমেন্ট জমা দিতে হবে টিচার্স রুমে গিয়ে এবং নিজের নাম বলে। ক্লাসে যাই হোক সেটা ঠিক আছে কিন্তু টিচার্স রুমে গিয়ে যখন অন্য শিক্ষকের সামনে নাম বলতে হয় তখন হয়ে যায় ঝামেলা। নিজেদের দেয়া নামে নিজেরাই এখন ফেঁসে গেছে! আর পুষ্প তো এ্যাসাইনমেন্ট করতে করতে হাপিয়ে গিয়ে এখন এ্যাসাইনমেন্ট শেষে “Mr. Calculus” লিখে তার পাশে এ্যাংরি কার্টুন, গুলি ছোড়া পিস্তল, ছুড়ি আরও কী কী সব এঁকে রাখে। সেসব দেখে রিফাত খুব মজা পায় কিন্তু কিছুই বলে না। তবে পুষ্প যতই মনে করিয়ে দিক না কেন রিফাত তাকে “মিসেস” বলা ছাড়ল না। এটা নিয়ে এখন বাকি সবাই মজা নিতে শুরু করেছে। সবার ধারণা হয়ে গেছে রিফাত স্যার পুষ্পর প্রেমে পড়ে গেছে। ব্যাপারটা পুষ্পকেও ইদানীং ভাবাচ্ছে… এ কারণেই কী রিফাত স্যার প্রথম দিন তাকে নতুন অধ্যায় শুরু হচ্ছে বলে অভিনন্দন জানিয়েছিল? কারণ যেটাই হোক এর অত্যাচার আর টলারেট করা যাচ্ছে না। তাই সে ডিপার্টমেন্ট হেডের কাছে বিচার নিয়ে গেল। আমানত উল্লাহ খান মুচকি হেসে বলল-
-বাহ্, রিফাত স্যার তোমাকে এত সুন্দর নামে ডাকেন? ভেরি ইন্টারেস্টিং! তুমি নিশ্চই ক্যালকুলাস খুব ভালো পারছ সেজন্যই এই নাম দিয়েছে। এটা তো ভালো কথা।
-স্যার আমি তো মিসেস নই। বার বার মনে করিয়ে দেবার পরও স্যার আমাকে মিসেস কেন ডাকে?
-ওহ তাই তো! এটা তো ভারি অন্যায়… তার তো মনে রাখা উচিৎ। কিন্তু এটা তো এমন কিছু সমস্যা না যে অভিযোগ করতে হবে?
-স্যার ক্লাসের সবাই এটা নিয়ে হাসাহাসি করে।
-ও… তিনি কেন তোমাকে মিসেস বলে সেটা তো তিনিই বলতে পারবেন। তুমি কী শুধু এটা বলতেই এসেছ?
-আর একটা কথা স্যার…
-হুম, বল?
-রিফাত স্যার আমাকে দিয়ে রোজ এ্যাসাইনমেন্ট করায়… এটা নিয়ে তিনি কোন কথাই শোনেন না। রোজ রোজ এ্যাসাইনমেন্ট করা যায়?
আমানত উল্লাহ খান হেসে ফেললেন। বললেন- তোমার সমস্যা আসলে কোনটা? রোজ রোজ এ্যাসাইনমেন্ট করা, মিসেস ডাকা, পীথাগোরাসের জটিল উপপাদ্য নাম না কি রোজ রোজ পড়া করে আসা, কোনটা?
-সমস্যা আসলে রিফাত স্যার নিজেই। কারণ তিনি আর কারো সাথে এমন করছেন না!
-আচ্ছা… বুঝতে পেরেছি। তুমি আসলে চাইছ রিফাত স্যার বাকিদের সাথেও এমন করুক?
পুষ্প অবাক হয়ে বলল- আমি এটা কখন বললাম! আর এটা চাইবই বা কেন? আমি চাই স্যার আমার সাথে আর এমন না করুক।
-কেমন না করুক?
পুষ্প তখন হতাশ গলায় বলল- “জানি না স্যার… মনে হচ্ছে নিজেই কিছু বুঝতে পারছি না এখন…”
-ঠিক আছে পুষ্প, তুমি আসলে কী চাও সেটা যখন বুঝতে পারবে তখন এসো, কেমন? এখন যাও।
পুষ্পর মাথা ঘুরতে লাগল… কী বলতে এলো আর কী শুনে গেল! সে আনমনে বের হয়ে যাচ্ছিল আর এমন সময় রিফাত হনহন করে ঢুকছিল… দরজার কাছে এসে জম্পেশ একটা ধাক্কা খেয়ে গেল দুজন। পুষ্প প্রায় পড়েই যাচ্ছিল রিফাত তাকে দুহাতে ধরে ফেলল। পুষ্প তাড়াতাড়ি সরে গিয়ে শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল-
-সরি স্যার…
রিফাত বুঝতে পারল তার নিজের তাড়াহুড়ার কারণে ধাক্কাটা লেগেছে। তবু বলল- “দেখে চলবে”। পুষ্প মাথা দুলিয়ে চলে গেল।
রিফাত এগিয়ে এসে তার বাবাকে বলল- পুষ্প এখানে কেন?
-“পুষ্প” নাকি “মিসেস পীথাগোরাসের জটিল উপপাদ্য” কোনটা?
-তুমি এটা কী করে জানলে? পুষ্প বলে গেল?
-হুম, সাথে আরও অনেক কিছু বলেছে। রোজ রোজ ওকে দিয়ে এ্যাসাইনমেন্ট কেন করাও?
-বাহ্, পড়া না বুঝলে বেশি করে করতে হবে না?
-করতে হবে। কিন্তু ওর ক্লাসের সবাই মনেহয় বুঝে যাচ্ছে যে, তুমি বোকার মত ওকে মিসেস কেন ডাকো?
-বাবা তোমার স্টুডেন্টস যেখানে আমার বয়সই ধরতে পারে না সেখানে আমি পুষ্পকে “মিসেস” কী উদ্দেশ্যে বলি সেটা কী করে বুঝবে?
-মানুষকে আন্ডার এস্টিমেট করে বসে থাকাটাই চূড়ান্ত বোকামি সেটা ভুলে যাচ্ছ।
-এটা ঠিক বলেছ। ঠিক আছে মনে রাখব। তো, তোমার তো এখন খুশি হবার কথা। আলহামদুলিল্লাহ বল?
– Alhamdulillah for what?
-আমার নামে নালিশ করার যে ঝুলিটা তোমার খালি ছিল সেটা পূর্ণ হয়ে গেল এবার।
-ও আচ্ছা… হুম, আলহামদুলিল্লাহ। মেয়েটা নালিশ নিয়ে এসেছিল আর আমি তাকে পাজল করে দিয়েছি। এখন মায়া লাগছে। It’s all your fault.
রিফাত হাসল তারপর বলল- তোমাকে বাবার ভূমিকায় থাকতে কে বলেছে? যা হোক, আমি তোমাকে জরুরি একটা কথা বলতে এসেছি।
-কী কথা?
-আমার চাকরি হয়ে গেছে।
-আলহামদুলিল্লাহ। কিন্তু কোথায় হল?
-সিটি ব্যাংক এ। সিনিয়র এক্সিকিউটিভ অফিসার হিসেবে। ১৫ দিন পর থেকে ট্রেনিং শুরু হয়ে যাবে আমার।
-বাহ্… তাহলে মিশন পুষ্পর কী হবে?
-ওটা চলবে, তবে কিছুদিন বিরতি দিয়ে। এই কদিন ওকে অনেক বেশি জ্বালাতন করা হয়েছে। এখন আমার অনুপস্থিতি ওকে ভীষণভাবে ভাবাবে, আমাকে একটা সময় মিস করতে শুরু করবে। আর আমি সেটাই চাই।
-তারপর?
-তারপর আমার ট্রেনিং শেষ হোক। অফিস জয়েন করে দুটো মাস যাক। চাকরিটায় নিজেকে গুছিয়ে নেই। তারপর এক মাস সিঙ্গেল লাইফটা এনজয় করব। তারপর তোমার কাজ।
-আমার কী কাজ?
-বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে কে যাবে পুষ্পের বাড়ি?
-হুম, বুঝলাম। ঠিক আছে। তবে পুষ্প তোমাকে মিস করবে তো?
-আলবাত করবে। করতে তো হবেই। এমনিতেই ওকে এত জ্বালাতন করেছি?
-তুমি তাহলে আর কতদিন ক্লাস নিতে পারছ?
– ৩ দিন।
-আমার ধারণা তোমাকে আরও কেউ মিস করবে ভীষণভাবে।
-কে?
-“ভালোবাসা”।
-মানে? কার ভালোবাসা?
-তোমার স্টুডেন্ট “ভালোবাসা”।
-উফফ বাবা এর কথা বলো না তো… মুডটাই নষ্ট করে দিলে। এমন ঢঙ্গী মেয়ে আমি জীবনে দেখিনি। প্রতিদিন আমার কাছে এসে ঘ্যান ঘ্যান করে তাকে পড়াতে হবে।
আমানত উল্লাহ খান শব্দ করে হেসে ফেললেন। বললেন- তার মানে এখানে একটা ট্রায়েঙ্গেল তৈরি হয়েছে? সে নিজের জন্য ভালো একটা নামই বেছে নিয়েছে ” ভালোবাসা” হা হা হা…
-কিন্তু তুমি এই মেয়ের নাম জানলে কী করে?
-আমার ছেলে যেখানে একটা মিশন নিয়ে কাজ করছে সেখানে আমার কোন খোঁজ খবর থাকবে না সেটা তো হয় না।
-বাবা, আমি এখন বড় হয়েছি আমার সব ব্যাপারে তোমার থাকাটা কী ঠিক?এই ব্যাপারটা অন্তত ছেড়ে দাও?
-ছেলেমেয়েরা কোনদিন বড় হয় না। তারা সারাজীবন “ছেলে-মেয়ে” শব্দেই আটকে থাকে।
আমানত উল্লাহ খান এমনভাবে কথাটা বললেন রিফাত আর কিছু বলতে পারল না। ব্যাপারটা তো তাই-ই। বাবা মায়ের কাছে সন্তান কখনো বড় হয় না। তারা সেই ছোট্ট পুতুলটাই থেকে যায়। আমরা যতই বড় হবার বাহানায় তাদের ছায়া থেকে বের হতে চাই না কেন এদের ছায়া ছাড়া আমরাও তো বাঁচি না। বাবা মা আছে বলেই তো জীবন সুন্দর আর গোছানো। এরা বৃদ্ধ অচল হয়ে গেলেও সন্তানকে ছায়া দেয়া থেকে বের হতে পারে না। কী অদ্ভুত এদের ভালোবাসা!! “পৃথিবীর সকল বাবা মা থাকুক দুধে-ভাতে”।