Mr_Calculus (পর্ব – ৯)

0
297

#Mr_Calculus (পর্ব – ৯)

রিফাত নাশতা শেষ করে শিস বাজাতে বাজাতে তৈরি হচ্ছিল বাজারে যাবার জন্য। পুষ্প তার আশপাশ দিয়ে ঘুরঘুর করছে সেই তখন থেকে। রিফাত তৈরি হয়ে বলল-

-আমি বের হচ্ছি কিছু লাগবে মহারাণীর?

-ভিডিওটা…

রিফাত মুচকি হাসি দিয়ে ঘড়ি দেখে বলল- আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে… সে আর দাঁড়াল না, চলে গেল। পুষ্প রাগে চিড়বিড়ি করতে লাগল।

রিফাত বাজারে যাবার ১০মিনিট পর রাইয়ান ফোন দিয়ে বলল- কোথায় তুই?

এই তো ভাইয়া বাজারে ঢুকেছি। মাছের বাজারে আছি।

-ঠিক আছে দাঁড়া আমি ১মিনিটে আসছি। রিফাত অবাক হয়ে গেল, ভাইয়া এখানে! রাইয়ান এসে রিফাতকে খুঁজে বের করে তার কাছে গিয়ে বলল- চল দেরি করলে ভালো মাছ অন্য কেউ নিয়ে ফেলবে।

-কিন্তু ভাইয়া তুমি এখানে?

-হুম, চল কী কী নিতে হবে দেখিয়ে দেই।

রিফাত বুঝল ভাইয়া কেন তাকে বের হবার আগে ফোন দিতে বলেছিল আর বাজারের লোকেশনই বা কেন জানতে চেয়েছিল? তার ভাইয়া এমন কেন? সে কখনো মহাপুরুষ দেখেনি কিন্তু তার ভাইয়াকে দেখলে “মহাপুরুষ” কী সেটা দেখতে বা জানতেও ইচ্ছে করে না তার। রাইয়ান রিফাতকে নিয়ে বাজার করল। কীভাবে কী কিনতে হয় সব দেখিয়ে দিল। বাজার শেষ করে দুই ভাই মিলে ঠান্ডা খেয়ে নিল। তারপর যে যার গন্তব্যে চলে গেল।

রিফাত বাজার নিয়ে ফেরার পর পুষ্পদের বাড়ির সবাই বাজার দেখে অবাক। একে তো এত বাজার তার উপর সব গোছানো! রিফাত এত ভালো বাজার করতে পারবে কেউ আশা করেনি। রিফাত ঘরে এসে ফ্রেস হয়ে নেয়। পুষ্প তখন এক গ্লাস ঠান্ডা শরবত নিয়ে হাজির হয়। রিফাত সেটা দেখে মুচকি হেসে বলে-

-যদিও আমার ধারণা- শ্রদ্ধেয় শ্বাশুড়ি আম্মা এটা করে পাঠিয়েছন তবু তুমি যখন নিয়ে এসেছ তখন এর পেছনে যত্ন, ভালোবাসা নাকি তেল মারা কোনটা আছে?

পুষ্প দাঁতে দাঁত চেপে বলল- তেল মারা।

রিফাত শব্দ করে হেসে ফেলল। তারপর উঠে গিয়ে দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে টেবিলের উপর রাখা ব্যাগটা নিয়ে পুষ্পর কাছে এগিয়ে এসে বলল- এটা তোমার জন্য।

পুষ্প ব্যাগ খুলে দেখে একগুচ্ছ জারবেরা আর দুটো বেলি ফুলের মালা! সে একইসাথে ভীষণ অবাক এবং খুশি হল। বলল- আপনি কী করে জানেন যে এগুলো আমার খুব পছন্দ?

-বেলি ফুল সব মেয়েদেরই পছন্দ এটা খুব কমন বিষয় আর বিয়ে এবং বৌ-ভাতের রিসিপশন দুটোতেই তোমাকে গোলাপের পরিবর্তে জারবেরা পরতে দেখেছি তাই ধারণা করেছি। সহজ হিসাব।

রিফাত ছোট ছোট বিষয়গুলো নোটিশ করছে পুষ্পর কাছে ব্যাপারটা ভালো লাগল। সে রিফাতকে ধন্যবাদ জানায়। রিফাত তখন বলে- শোনো, বিকেলে সবাই মিলে ঘুরতে যাব। শালা-শালীর পুরো পঙ্গপাল নিয়ে যাব। ওদের তৈরি থাকতে বলবে। দুটো অপশন দিচ্ছি তারা কোথায় যেতে চায় সেটা যেন ঠিক করে নেয়। তারপর পুষ্পর হাতে আরও কয়েকটা ব্যাগ দিয়ে বলে এখানে বাসার সব সিনিয়রদের জন্য শাড়ি পাঞ্জাবি আছে দিয়ে দিও। আর এটা তোমার জন্য…

-পুষ্প ব্যাগ খুলে দেখে নীল রঙের একটা কাতান শাড়ি। শাড়ি দেখে পুষ্পর মুখে যে খুশি ঝিলিক দিয়ে উঠেছিল সেটা দেখে রিফাত বুঝে গেছে শাড়িটা ওর পছন্দ হয়েছে তবু জিজ্ঞেস করে- পছন্দ হয়েছে?

-যদিও আপনার টেস্ট খুব বাজে বলেই ধারণা তবু… চলে আরকি…

রিফাত হেসে বলল- আসলেই আমার টেস্ট খুব বাজে নইলে কী আর তুমি আমার বউ হও?

পুষ্প কল্পনাও করেনি এভাবে পাল্টা জবাবে ধরাশায়ী হবে সে! সে রেগে গিয়ে বলল- আপনার পছন্দ “বাজে বাজে বাজে”। তারপর শাড়িগুলো নিয়ে চলে গেল। রিফাত তখন হা হা করে হাসতে লাগল।

পুষ্প সারাক্ষণ খেয়াল রাখছিল রিফাতের ফোনটা কখন হাত করা যায়। কারণ পাসওয়ার্ড তো তার কাছে, একবার হাতে পেলে হয় শুধু… কিন্তু রিফাত এই কারণেই বোধহয় ফোন এক মুহূর্তের জন্য হাতছাড়া করছে না। ওয়াশরুমে পর্যন্ত নিয়ে যাচ্ছে! আর তার কাছে ফোন দুটো থাকাতে ঝামেলা হয়েছে বেশি নয়ত ঠিকই এতক্ষণে একটা কিছু করে ফেলা যেত। কী যে করবে পুষ্প বুঝে উঠতে পারছে না… ওদিকে পুষ্পকে চাপে ফেলতে পেরে রিফাত খুব শান্তিতে আছে অথচ তার কাছে কোন ভিডিও চিত্রই নেই!

দুপুরের পর সবাই ঘুরতে যাবার জন্য যখন তৈরি হচ্ছিল পুষ্প তখন ঘোষণা করল তার খুব মাথা ব্যথা সে এখন ঘুমাবে, কোথাও যেতে পারবে না। রিফাত বুঝতে পারল পুষ্পর মাথা ব্যথার কারণ কী? সে পুষ্পকে বিছানা থেকে টেনে তুলে বলল- যাবে না কেন?

-বললাম তো মাথা ব্যথা।

-নাকি সবার সাথে গেলে আমাকে একা পাবে না সেই দু:খে যেতে চাইছ না?

-আপনার সাথে একা থাকার চেয়ে বান্দরের গ্রুপে বসে বাদর নাচ দেখাও শান্তি।

-তোমার যা ফ্রেন্ড সার্কেল তাতে অবশ্য তোমাকে সেটাই বেশি মানায়।

-এই আপনি যেখানে যাচ্ছিলেন যান তো।

-ইসস… এভাবে “জান” বলে ডাকলে সরাসরি বুকে এসে লাগে গো!

-আমি “জান” বলে ডাকিনি, বলেছি- য আকারে দন্ত ন “যান” মানে ভাগুন।

-ওহ তাই বল… আমি তো তোমাকে রোমান্টিক মেয়ে ভেবেছিলাম কিন্তু তুমি দেখছি…

পুষ্প চোখ সরু করে বলল- কী?

-মহা রোমান্টিক!

-পুষ্প এটা শুনবার জন্য প্রস্তত ছিল না। সে চুপ হয়ে গেল। রিফাত তখন বলল- যদিও তোমাকে সব অবস্থাতেই আমার ভালো লাগে তবে শাড়িতে একটু বেশিই মিষ্টি লাগে। তোমাকে কখনো নীল শাড়িতে দেখার সুযোগ হয়নি… আজ ইচ্ছে হয়েছে। তাছাড়া তোমাকে ছাড়া পঙ্গপালেরও বেড়াতে ভালো লাগবে না। বাকি তোমার ইচ্ছে। বলে রিফাত উঠে গেল।

পুষ্প উঠে রিফাতের আনা নীল শাড়িটা পরে নিল। চুলে বেলি নাকি জারবেরা কোনটা লাগাবে বুঝতে পারছিল না… রিফাত বিছানায় আধশোয়া হয়ে ফোন ঘাটছিল আর পুষ্পকে দেখছিল। সে বিষয়টা খেয়াল করে বলল- “মানুষ যে ছোটখাটো বিষয় নিয়ে কেন এত সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগে বুঝি না! বেলি লাগিয়ে নিলেই পারে?”

পুষ্প চুলে বেলি ফুল আটকাতে আটকাতে বলল- মানুষকে পিঞ্চ কাটা ছাড়া পাবলিকের আর কোন কাজ নেই বলেই দেশে বেকারের সংখ্যা এভাবে চক্রবৃদ্ধিহারে বেড়ে চলেছে।

রিফাত হেসে বলল- পাবলিকের জীবনে নেবার জন্য অনেক বড় বড় সিদ্ধান্ত পড়ে আছে এইসব নিয়ে পড়ে থাকা তাদের কর্ম নয়। বলে রিফাত উঠে গিয়ে পুষ্পর পেছনে দাঁড়িয়ে আয়নায় তাকিয়ে বলে “মাশা-আল্লাহ”। আমার টেস্ট যদি বাজে হয় তাহলে “বাজেই জিন্দাবাদ”।

পুষ্পর গাল ঈষৎ লাল হয়ে উঠল। রিফাত হালকা করে পুষ্পর কোমর জড়িয়ে ধরে ঘাড়ে আলতো করে একটা চুমু খেল। পুষ্প অপ্রস্তুত হয়ে গেল… অস্ফুটস্বরে বলল- সবাই অপেক্ষা করছে…

-এই জন্যই বলে সুন্দরী মেয়েরা আনরোমান্টিক হয়! “যাব না আমি” বলে বিছানায় দুম করে বসে পড়ল।

পুষ্প হেসে ফেলল। তারপর রিফাতকে টেনে নিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে গেল।

রিফাত পুষ্পদের বাড়িতে দুদিন থেকে তারপর এসেছে। বিয়েবাড়ির আমেজ ফুরিয়ে যেতে শুরু করেছে। পুষ্প এবাড়ি ঘুরে ঘুরে দেখে। নতুন বউ বলে তাকে কোন কাজ করতে হয় না। রিফাতও অফিস শুরু করে দিয়েছে। এখানে তার একরকম শুয়ে বসেই দিন কাটে। সারাদিন সে রিফাতের ফেরার অপেক্ষা করে। রিফাতের সাথে এখনো তার সারাক্ষণ লেগেই থাকে তারপরও এই পাজি ছেলেটাকে ছাড়া পুষ্প থাকতে পারে না। এর নামই কী ভালোবাসা? এর নামই কী প্রেম? হবে হয়ত… পুষ্প রিফাতকে ভালোবাসে, খুব খুব খুউব ভালোবাসে। পুষ্প নিজেও ক্লাস করতে শুরু করে দিল। এবাড়িতে তার বেশ ভালোই কাটছে। রিয়ানা সারাদিন পড়াশোনা নিয়ে পড়ে থাকে। সে ঘরে থাকলেও টের পাওয়া যায় না। তাই তার সাথে খুব কম গল্পই হয়। বাকি সবার সাথে তার খুব আড্ডা হয়। আর তানিয়া ভাবি তো পুরাই অন্য রকম। প্রথম প্রথম পুষ্পর ভয় লাগত যদি তার সাথে মানিয়ে নিতে না পারে? কিন্তু ক্রমেই তার ধারণা পাল্টেছে। তানিয়া খুব সাধারণ টাইপ মেয়ে। আর এখনকার দিনে সাধারণ টাইপ মানুষ মানেই অসাধারণ কিছু! তাকে দেখলে হুট করে বোঝা যায় না সে কেমন। তার সাথে মিশলে বোঝা যায় তিনি কী চমৎকার একজন মানুষ। পুষ্পকে তিনি সব কিছু এত সহজভাবে শিখিয়ে নেন যে, কোন কাজকে আর কষ্ট মনেহয় না। পুষ্পর শ্বাশুড়িও একজন চমৎকার মানুষ। তিনি কেমন করে যেন সবাইকে খুব সুন্দর করে গুছিয়ে রাখেন। তবে পুষ্পর সবচেয়ে বড় ঝামেলা হয়েছে তার শ্বশুরকে নিয়ে! তার এমনই ঝকঝকে কপাল যে তার ভার্সিটির তারই ডিপার্টমেন্টের হেড তার শ্বশুর!!! ফাঁকিবাজি তো দূরে থাক একটু দুষ্টুমিও করা যায় না। এই বয়সে বন্ধুবান্ধব নিয়ে একটু হৈ হুল্লোড় করবে সে সুযোগই নাই! এইজন্য বন্ধুগুলাও দিন দিন পর হবার জোগাড় হয়েছে। বিরাট আফসোস!

এর মধ্যে এক সকালে তানিয়া রাইয়ানকে জানায় সে মা হতে যাচ্ছে! রাইয়ানের খুশি কে দেখে? তাকে ঘিরে বাড়ির সবার নতুন করে উৎবের আমেজ তৈরি হয়ে গেল। সবাই মিলে তানিয়ার যত্ন নিতে লাগল। পুষ্প তখন ভাবির কেয়ার নেয়ার পাশাপাশি ঘরের কাজে মন দেয়া শুরু করে। সব দিক সামলে নেয়। শ্বাশুড়িকে বলে- আমি সব তো পারব না তবে আপনি পাশে থাকলে সব ঠিক উতরে যাবে। তাছাড়া আপনি পাশে থাকার অনেক বড় ফায়দাও আছে।

রেহানা ইসলাম অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করেন- কী রকম ফায়দা?

-এই… যা কিছু ভুলভাল হবে সব আপনার উপর চাপিয়ে দেয়া যাবে।

রেহানা ইসলাম শব্দ করে হাসলেন। বললেন- ঠিক আছে সব আমার উপর চাপিয়ে দিও। কিন্তু কথা হল এবাড়িতে ভুল করলে সেটা নিয়ে বলবার জন্যই তো কেউ নেই!

-এটাই তো এবাড়ির সমস্যা। কোন ভুল করে শান্তি নেই! তবে আপনার ছোট ছেলের কথা আলাদা। উফফ কী করে আমাকে পঁচানি দেয়া যায় সারাক্ষণ সেসব খুঁজে বেড়ায়। ও পেটে থাকাকালীন আপনি মনেহয় জংলি কচু খেতেন রোজ সকাল বিকাল আর বাকিদের বেলায় মিষ্টি, মন্ডা, মধু। নয়ত এমন একটা পরিবারে এমন একটা ছেলে হয়?

রেহানা ইসলাম আবার হেসে ফেললেন। বললেন- তুমি আমার সামনে দাঁড়িয়ে আমারই ছেলেকে নিয়ে আজেবাজে বকছ? সাহস তো কম না মেয়ের!

পুষ্প খুব ভাব নিয়ে “আমার অনেক সাহস” বলে হেসে ফেলল।

এভাবেই দিন গড়িয়ে যেতে লাগল। রিয়ানা ঢাকা মেডিকেলে চান্স পেয়ে গেছে। ভর্তি হবার পর সে এক মাস বইয়ের সাথে কোন সম্পর্ক রাখবে না বলে ঘোষণা করেছে। বড় ভাইয়াকে বলেছে এই কয়দিনে তাকে ইচ্ছে মত ঘুরতে নিয়ে যেতে হবে। সে ফ্রি না থাকলে ছোট ভাইয়াকে নিয়ে যেতে হবে তবে ঘুরতে তো তাকে হবেই। বিয়ের পর অফিসের চাপে রিফাত পুষ্পকে নিয়ে বিশেষভাবে কোথাও ঘুরতে যেতে পারেনি তাই রিফাত অফিস থেকে ৩দিনের ছুটি নিয়ে শুক্র শনি মিলিয়ে মোট ৫দিনের ছুটি নিল। সবাই মিলে সেইন্ট মার্টিন ঘুরতে যাবে। তবে তানিয়ার এখন এত দূর জার্নি করা ঠিক হবে না বলে সে আর রাইয়ান থেকে যায়। রেহানা ইসলাম তানিয়াকে একা রেখে যেতে চাইলেন না বলে বললেন-

-আমি রাইয়ানের বড় চাচীকে আসতে বলে দেই। অনেকদিন হয় তিনি আসেন না তিনি এসে থাকলে তোমার ভালো লাগবে। আর তিনি মুরুব্বি মানুষ তার কাছ থেকে অনেক কিছু শিখতে পারবে। তানিয়া তার শ্বাশুড়ির কথা মেনে নিয়ে বলল-

-তাহলে তো খুবই ভালো হয়, বলে দিন আসতে। আর আপনারা নিশ্চিন্তে ঘুরে আসুন কোন সমস্যা নেই। রাইয়ান তো আছেই। রেহানা ইসলাম তানিয়ার ভালো থাকার সব ব্যবস্থাই করলেন। সবাই সেইন্ট মার্টিনের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হবার দুই দিন আগেই বড় চাচী চলে এলেন। আর মায়ের নির্দেশে রাইয়ানও ছুটি নিয়ে নিয়েছে অফিস থেকে। তারপর ওরা সবাই সেইন্ট মার্টিনের উদ্দেশ্যে উড়াল দেয়।

সেইন্ট মার্টিন যেতে না পারার কারণে তানিয়ার একটু মন খারাপ লাগছিল কিন্তু যখন দেখল রাইয়ান অফিস থেকে ছুটি নিয়েছে তখন তার মন খারাপ অনেকটাই কমে গেল। আর রাইয়ান এত চমৎকার একজন মানুষ যে, তার মত কেউ আশেপাশে থাকলেই মন ভালো হয়ে যায়। বড় চাচী তো পুরো অন্য রকম একজন। তিনি আশেপাশে থাকলে মনেহয় বটবৃক্ষের সুশীতল ছায়ায় শুয়ে আছি… তিনি খুব যত্ন নিচ্ছিল তার। কী করতে হবে, কী না করতে হবে সব কিছু শিখিয়ে দিচ্ছিলেন। তিনি নিয়মিত কোরআন তেলোয়াত করতে বললেন। প্রেগন্যান্সির কততম মাসে কী দোয়া তেলোয়াত করলে সন্তান নেক, ঈমানদার, সুন্দর আর বরকতময় হবে সেসবই শিখিয়ে দিলেন। তানিয়া ভেবেছিল উনি মুরুব্বি মানুষ কোন কুসংস্কার টাইপ উনার ভেতর আছে কিনা? কিন্তু এখন দেখল- না, তিনি খুবই আধুনিক এবং জানাশোনা ওয়ালা ব্যক্তিত্ব। উনার তুলনায় তানিয়ার মা বরং পিছিয়ে আছে। ফোন দিলেই সারাক্ষণ- চুল খুলে রাখবে না সন্ধ্যাবেলায়, ওই সময়ে বাইরে যাবে না, বারান্দায় যাবে না, এটা খাবে না ওটা খাবে না, সাথে সারাক্ষণ রসুন, লোহা জাতীয় কিছু একটা, ম্যাচ বাক্স এসব রাখবে। এসব সাথে থাকলে নাকি ভূত-প্রেত কাছে আসে না! কী সব অদ্ভুত কথা বার্তা! তানিয়া মাঝে মাঝে খুব বিরক্ত হয়ে যায়। কিন্তু বড় চাচী কখনো এসব বলেন না। বরং তিনি বলেছেন, এসবই কুসংস্কার আর কুসংস্কার মানা ইসলামে সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। এগুলো শিরকের পর্যায়ের গুণাহ! বদনজর আর দুষ্টু জিনের আছর থেকে বাঁচার জন্য সব সময় দোয়া দরুদ পাঠ করতে হয়। আয়াতুল কুরসি পাঠ করতে হয়। আল্লাহর পবিত্র কালাম আমাদের সব সময় রক্ষা করেন, ওসব কুসংস্কার না। তিনি সেটাই খেতে নিষেধ করেন যেটা তার জন্য এবং অনাগত সন্তানের জন্য এখন ক্ষতিকর। সন্তান হবার পর কী কী করতে হবে তার যত্ন কীভাবে নিতে হবে তিনি এ সব গল্পই করেন। তানিয়ার তাকে নতুন করে ভালো লাগতে শুরু করে। কেন যেন তার সান্নিধ্য তাকে শান্তি দেয়। এইজন্যই একটা পরিবারে মুরুব্বিদের ছায়া থাকা অনেক জরুরি। তবে বড় চাচীর যে ব্যাপারটা তার সব চেয়ে বেশি ভালো লাগে সেটা হল, তিনি নামাজ শেষ করে দোয়া দরুদ পড়ে তানিয়াকে ফু দিয়ে দেন। তানিয়ার এখন ৬ মাস চলছে… এখনও প্রায় ৩মাস বাকি আছে সন্তান জন্ম নেবার। তানিয়ার খুব ইচ্ছে বাকি সময়টা বড় চাচী তাদের সাথেই থাকুক। বড় চাচী তার কথা শুনে হাসেন। তিনি বলেন- পুরো সময়টা তিনি থাকতে পারবেন না। তার নিজেরও তো সংসার, ছেলেমেয়ে, নাতি নাতনি আছে। তবে চেষ্টা করবেন যতটা সম্ভব এখানে সময় দেবার।

ওদিকে সেইন্ট মার্টিনে বাকিদের সময়ও খুব ভালো কাটছে। বেড়াবার জন্য পুষ্পর কাছে সেইন্ট মার্টিন সবচেয়ে সুন্দর জায়গা তবে এরচেয়েও সুন্দর জায়গা তার কাছে ছেঁড়া দ্বীপ। ছেঁড়া দ্বীপ অলরেডি দুবার যাওয়া হয়ে গিয়েছে। আজ আবার যাবে। রিফাত বলেছে, ছেঁড়া দ্বীপে তাকে মাছ আর প্রবালের সাথে রেখে যাবে। রিয়ানা বলেছে, ছোট ভাবির সাথে তাহলে সেও থেকে যাবে। রিফাত তখন দুজনকে ধমক দিয়ে সেখান থেকে ফিরিয়ে নিয়ে গেছে। বিকেলে তারা ৩জন মিলে সাইকেল রেস করেছে আর সন্ধ্যা হলেই সাগর পাড়ে বসে গর্জন শুনতে শুনতে গল্প আর গানের আড্ডায় মেতে উঠেছে সাথে সামুদ্রিক কোরাল অথবা রুপচাঁদার বারবিকিউ তো আছেই। রিফাত হুটহাট পুষ্পকে নিয়ে “একটু ওদিকে চল তো হেঁটে আসি” বলে দুজনে একা হতে চেয়েছে। রিয়ানা তখন আম্মু আব্বুকে সঙ্গ দিয়েছে। ওরা যখন ওখানে বসে আড্ডা দিত তখন ওদের খুব কাছে দুদিন ছেলেদের একটা গ্রুপকে দেখেছে গিটার নিয়ে গান করতে। এদের গান শুনতে ভালো লাগত রিয়ানার। গান শোনার ফাঁকে টুকরো কিছু কথাও ওর কানে এসেছে। সেখান থেকেই বুঝতে পেরেছে এরা সব ঢাকা থেকেই এসেছে। আমানত উল্লাহ খান ওদের কাছে গিয়ে একদিন গল্পও করলেন। ওরা সব বুয়েটের স্টুডেন্ট, CSE তে পড়ে। পরীক্ষা শেষে ঘুরতে এসেছে। পরদিনই চলে যাবে। আমানত উল্লাহ খান ওদের সাথে কথা বলে চলে আসতেই এদের মধ্যে একটা ছেলে “আমার ভিতর বাহিরে অন্তরে অন্তরে আছো তুমি হৃদয় জুড়ে” গানটা ধরল… গানটা এত সুন্দর করে গাইল যে রিয়ানার কেমন গা শিউরে উঠল… সে মুগ্ধ হয়ে গেল। সে বাবাকে বলল-

-গানটা কী চমৎকার গাইল তাই না বাবা?

-হ্যাঁ।

-কী নাম ওই ছেলেটার?

-ওদের নাম তো জানা হয়নি!

-আমি জেনে আসি?

-যা।

রিয়ানা সেখানে গিয়ে বলল- এক্সকিউজ মি… ভাইয়া আপনি গানটা চমৎকার গেয়েছেন।

চশমা পরা শ্যামলা বর্ণের ছেলেটা রিয়ানার কথা শুনে পেছন ফিরে তাকায়। দেখল শুভ্র সাদা পোশাক পরা খোলা চুলে এক অষ্টাদশী কন্যা দাঁড়িয়ে! চাঁদের উজ্জ্বল আলোয় তাকে হুট করে দেখে তূর্যর অপ্সরা বলে ভ্রম হয় একই সাথে সে চমৎকৃতও হয়… কয়েক সেকেন্ড সময় লাগল তার বাস্তবে ফিরে আসতে, বলল- “অনেকেই এমনটা বলে” ধন্যবাদ।

-ওহ… আমি রিয়ানা। একটু আগে যার সাথে কথা বললেন? তিনি আমার বাবা।

ছেলেটা উঠে দাঁড়িয়ে বলল- ও…তাই? আমি তূর্য, তূর্য মাহমুদ। স্টুডেন্ট?

-হুম, এবারই ভর্তি হয়েছি।

-ইন্টারে?

-আরে না, ঢাকা মেডিকেলে। সেইজন্যই সবার সাথে ঘুরতে বের হয়েছি। পড়াশোনা থেকে কয়েকদিনের জন্য ব্রেক নিচ্ছি।

-ও আচ্ছা। আর কে কে আছে সাথে? ওই তো বাবা, আম্মু আর ভাইয়া ভাবি।

-ঠিক আছে রিয়ানা, কথা বলে ভালো লাগল।

-আপনারা কী আরও কিছুক্ষণ গান করবেন?

-না, উঠব এখন।

-আমি আরেকটা গান শুনতে চাই… প্লিজ শোনাবেন? প্লিজ???

তূর্য “ঠিক আছে” বলতেই যাচ্ছিল কিন্তু “ঠিক” পর্যন্ত বলতেই পাশ থেকে ওর বন্ধু আবরার ওকে থামিয়ে দিয়ে বলল- রিয়ানা, আজ আর গান হচ্ছে না। আমাদের এক্ষুনি হোটেলে ফিরতে হবে, আর্জেন্ট কাজ আছে। তূর্য বুঝল না আবরারের হটাৎ কী হল যে আর্জেন্ট কাজের কথা বানিয়ে বলছে! ওর দিকে তাকাতেই আবরার তূর্যকে চোখের ইশারা করে রিয়ানাকে বলল-

-আপনি গান শুনতে চাইলে তূর্য অবশ্যই শোনাবে ও খুব ভালো ছেলে। কিন্তু এখন আমাদের তাড়া আছে। আপনি এক কাজ করতে পারেন আপনার ফোন নাম্বারটা ওকে দিয়ে রাখতে পারেন। আপনার যখন ইচ্ছে হবে ও ফ্রি থাকলেই গান শোনাবে। তূর্যর কাছে এবার স্পষ্ট হল আবরার তখন কেন তাকে থামিয়ে দিয়েছে। এই না হলে বন্ধু? “বেঁচে থাক বন্ধু” বলে মুচকি হেসে সে রিয়ানার দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাল কী বলে ও সেটা জানতে।

রিয়ানা ওদের ব্যাপারটা ঠিক বুঝতে পারল কিন্তু না বোঝার ভান করে বলল- কিন্তু ভাইয়া আমার নাম্বার নিয়ে আপনি কী করে বুঝবেন আমার কখন গান শুনতে ইচ্ছে হবে?

আবরার বুঝল না মেয়েটাকে যতটা বোকা ভেবেছিল আসলেই ততটা বোকা নাকি অতি বুদ্ধিমতী? তূর্য তখন বলল- it’s okay… নাম্বার লাগবে না। বিধাতা যদি লিখে রাখেন আপনি আমার গলায় আরও একটা বা তারও বেশি গান শুনবেন তাহলে সেটা যেকোনো উপায়েই হবে। পৃথিবীটা গোল হুট করে কোথাও না কোথাও কোন একদিন দেখা হলেও হয়ে যেতে পারে। ভালো থাকবেন, বিদায়। তারপর ওরা সবাই চলে গেল। ৫জনের একটা দল। আবরার ব্যর্থ আর তূর্য মন খারাপ নিয়ে সমুদ্র সৈকত থেকে চলে গেল। তূর্যর মনে হল সে পেছনে কেবল সমুদ্র আর সমুদ্রের বিশালতাকেই নয় ফেলে যাচ্ছে আরও কিছু… সেটা কী শুধুই একটুকরো ভালো লাগা নাকি আরও কিছু?

ওরা চলে যেতেই রিয়ানার অদ্ভুত এক অনুভূতি হল… কী হত নাম্বার দিলে? ছেলেটাকে অভদ্র তো মনে হল না। নামটাও কী সুন্দর… “তূর্য!”

রিয়ানা যখন এসব ভাবছিল পেছন থেকে রিফাত তাকে ডাক দেয়। গিয়ে দেখে কোরাল বারবিকিউ, আর নান রুটি এনেছে। সাথে হাবিজাবি আরও কিছু ভাজাপোড়া আছে। তারা খেয়ে দেয়ে হোটেলে ফিরে গেল। এখানে ৩দিন থাকা হয়েছে। পরদিন ঢাকা ফিরতে হবে। তাই আজ আর বীচে খুব বেশি রাত করল না। হোটেলে ফিরে সবাই ঘুমাতে চলে গেল। কিন্তু রিয়ানার ঘুম এলো না… তার মনের দুয়ারে চশমা পরা শ্যাম বর্ণের তূর্য নামক ছেলেটা আর তার গান “আমার ভিতর বাহিরে অন্তরে অন্তরে আছো তুমি হৃদয় জুড়ে…” আটকে রইল। কী অদ্ভুত, কোথা থেকে এসে ছেলেটা হুট করে জুড়ে বসেছে মনের ভেতর! ছেলেটার সাথে সত্যিই কী তার আর কখনো দেখা হবে? আচ্ছা ছেলেটা তাকে ভাবাচ্ছে নাকি তার গাওয়া গানটা? রিয়ানা বুঝতে পারে না… তার কেমন শূন্য শূন্য অনুভব হয়! অনেক রাত অব্দি জেগে রইল সে… তারপর হুট করেই তার একটা ব্যাপার খেয়াল হল, সে দ্রুত ফোন বের করে “তূর্য মাহমুদ” লিখে ফেসবুকে সার্চ দিল। এই নামের অনেক প্রফাইল দেখল কিন্তু সে যাকে খুঁজছে শুধু তাকেই পেল না! রিয়ানা ভেবেছিল এখানে তাকে পেয়ে যাবে কিন্তু… সে আশাহত হল। তারপর ভাবল, আচ্ছা সে কেন এই ছেলেকে নিয়ে এত ভাবছে? একে তো জানেও না! এসব ভাবতে ভাবতেই সে ভোরের দিকে ঘুমিয়ে যায়।

পরদিন দুপুরের ফ্লাইটে সবাই ঢাকা ফেরে। তানিয়া এই কদিন ভালোই ছিল। সবাইকে দেখে তার মন আরও ভালো হয়ে উঠল। মজার ব্যাপার হল সেইন্ট মার্টিন থেকে সবাই টুকটাক কেনাকাটা করেছে যার সবই তানিয়ার জন্য! এমন কী বোতলে ভরে ছেঁড়া দ্বীপ থেকে সেইন্ট মার্টিন থেকে আলাদা করে সমুদ্রের পানিও নিয়ে এসেছে পুষ্প তাকে দেখাতে। আর সব কিছুর আলাদা করে ছবি তো আছেই। এসব দেখে তানিয়ার চোখে পানি চলে আসে… সবাই এত ভালো কেন?

সেইন্ট মার্টিন থেকে আসার কিছুদিন পর থেকে রিয়ানার ক্লাস শুরু হয়ে গেল। সে আবার ডুবে গেল পড়াশোনায়। তানিয়ার দিন কাটে অনাগত সন্তানের আগমনের আয়োজনে। রেহানা ইসলাম সারাদিন তানিয়ার কী লাগবে না লাগবে সেই খেয়ালে দিন কাটান। পুষ্পর থার্ড ইয়ার ফাইনাল শেষ হয়ে গেছে। পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ততা কিছুটা কমে গেল। পড়াশোনার পাশাপাশি তাকে সংসারের কাজও দেখতে হয়। যদিও রেহানা ইসলাম তাকে পরীক্ষার জন্য কিছু করতে দেন না তবু সে যতটা পারে সাহায্য করে। রাত জেগে পড়তে হয় তাকে। রিফাত মাঝে মাঝে পড়াশোনায় হেল্প করে কিন্তু সেটা না করাই বরং তার কাছে ভালো মনেহয়। এত পঁচানি দেয় এই ছেলেটা… এখনো মানুষ হল না। সেদিন রাতে রিফাতের সাথে তার ঝগড়া হয়েছে। এখন পড়া বুঝে নেবার জন্য রিফাতের কাছে সে কিছুতেই যেতে পারছে না। গেলেই এখন ইচ্ছামত লেগপুলিং করা শুরু করবে তাই সে তার বন্ধু তারেককে ফোন দিল। ও নিশ্চই বুঝিয়ে দিতে পারবে। তারেক ফোন ধরে বলল-

-হ্যাঁ বল?

-কী করছিস? একটু দরকার ছিল…

-কী দরকার? আমি একটু বাইরে আছি, বাসার গেটের সামনে লাঠি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি।

-এত রাতে তুই গেটের সামনে লাঠি নিয়ে কী করিস?

-কুত্তা পাহারা দেই।

-মানে কী?

-আরে বলিস না, কই থেকে কুকুর এসে রোজ গেটের সামনে হাগু করে রেখে যায়। কি একটা বিশ্রী অবস্থা! এগুলো পরিষ্কার করা যায়? এখন লাঠি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। বাবা বলেছে- আজ কুকুর হাগু করলে আমার ভাত বন্ধ!

-কুকুর কী তোকে বলে আসবে যে, “আমি আসছি… হাগু করব…?” কতক্ষণ পাহারা দিবি?

-বাবা বলেছে দুইটা পর্যন্ত থাকতে। গত দুই রাত বাবা ছিল আজ আমাকে থাকতে হবে।

-তুই রাত জেগে কুত্তাই পাহারা দে। তোকে দিয়ে এসবই হবে, ছাগল কোথাকার। বলে কট করে লাইন কেটে দিল। পুষ্পর মেজাজ খারাপ না থাকলে এই মুহূর্তে হা হা করে হেসে ফেলত কিন্তু এখন তার মেজাজ আরও বেশি খারাপ লাগছে… তার পড়ার কী হবে?

বিছানায় আধশোয়া হয়ে রিফাত ফোন ঘাটছিল। পুষ্পর ফোনালাপ তার কানেও গেছে। বলল-

-রাত বাজে সাড়ে ১২টা তোমার বন্ধু এখন গেটে দাঁড়িয়ে কুকুর পাহারা দিচ্ছে! কেন?

-কুকুর এসে নাকি রোজ রাতে গেটের সামনে ইয়ে করে রেখে যায়…

-রিফাত প্রথমে “ইয়ে” মানে বুঝল না যখন বুঝল তখন হো হো করে খুব হাসল। তারপর এগিয়ে এসে পুষ্পর পাশে বসে বলল- কী বুঝতে পারছ না দেখি?

পুষ্প বই এগিয়ে দিল…

দেখতে দেখতে তানিয়া এখন আট মাসের অন্ত:স্তত্বা। তার শরীর ইদানীং খুব বেশিই ভারী লাগে। রেহানা ইসলাম তাকে বলেছে তার যদি মায়ের কাছে যেতে ইচ্ছে করে সে যখন খুশি যেতে পারবে কিন্তু তানিয়ার এখানেই ভালো লাগে। এখানে সবাই তার খুব খেয়াল রাখে। রাইয়ানকে ছাড়া তার চলে না। তাছাড়া বড় চাচীও এসে এসে থেকে যান তার জন্য। উনি আসলে তানিয়ার সময় খুব ভালো কাটে। রাইয়ান তাকে নিয়মিত চেকাপ করাতে নিয়ে যায়। সে রাতদিন মা ও শিশু সম্পর্কে পড়াশোনা করে। তার সন্তান যেন সুন্দরভাবে এই পৃথিবীতে আসে সেজন্য সে ডাক্তারের সাথে বিভিন্নি বিষয়ে আলাপ করে। সন্তান জন্ম দেয়ার জন্য সিজার নাকি নরমাল ডেলিভারি কোনটা ভালো হয় সেটা নিয়ে পড়াশোনা করেছে। সেই অনুযায়ী সে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তার সন্তান অবশ্যই নরমাল ডেলিভারিতে হবে। যদি না কোন রকম কম্পলিকেশন তৈরি হয়। তার বড় চাচীরও একই কথা। বাড়ির সবাই এখন দিন গুনছে কবে ছোট্ট চাঁদের কণা তাদের হাতের মুঠোয় আসবে? এই নিয়ে আনন্দে ঝলমল করে সারাবাড়ি। কিন্তু অতি আনন্দেও যে কখনো কখনো গ্রহণ লেগে যায়…!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here