#Ragging_To_Loving__2
#পর্বঃ- ১০
#রিধিরা_নূর
আহিল আরিফকে টেনে নিয়ে আমরিনের পিছনে গেল। দৌড়ে গিয়ে আমরিনের সামনে দাঁড়ালো।
আহিল — হাই! (আমরিন ভ্রুক্ষেপহীন চলার পথে পা বাড়ায়) আরে চিনতে পার নি? আরে আমি। ওই দিন রিকশার চাকায় ওড়না আটকে যাওয়া থেকে বাঁচিয়েছি।
আমরিন — ওহ হ্যাঁ! মনে পড়েছে।
আহিল — কেমন আছো?
আমরিন — ভালো। আপনি কেমন আছেন?
আহিল — (এতক্ষণ ভালো ছিলাম না। তোমাকে দেখে খুশিতে মন লাফাচ্ছে।) ভালো। নিউ কামার?
আমরিন — জি।
আহিল — (হায়। এই তো দেখি মেঘ না চাইতে বৃষ্টি।) আমরা থার্ড ক্লাস স্টুডেন্ট।
আমরিন — কি? (অবাক হয়ে)
আহিল — আই মিন থার্ড সেমিস্টার স্টুডেন্টস।
আমরিন — ওহ!
আহিল — আমরা কি ফ্রেন্ডস হতে পারি? (হাত বাড়িয়ে)
আমরিন — ফ্রেন্ডস? (দ্বিধান্বিত হয়ে) কিন্তু আপনি তো আমাদের সিনিয়র। আর সিনিয়ররা তো বড় ভা…
আহিল — স্টপ! ডোন্ট ইউজ দ্যাট ওয়ার্ড। (এদিকে আমি সাইয়া হওয়ার স্বপ্ন দেখছি আর ম্যাডাম আমাকে ভাইয়া বানানোর জন্য লেগে পড়েছে। মনে মনে বলল) কে বলল জুনিয়র-সিনিয়র ফ্রেন্ডস হতে পারে না। অবশ্যই পারে।
আলিফা — (ফ্রেন্ডস! হায়। মি. ক্রশ এবং এই ভাইয়া তো বন্ধু। যদি ভাইয়ার সাথে বন্ধুত্ব হয় তাহলে সবসময় মি. ক্রাশের আশেপাশে থাকতে পারব।) অবশ্যই। আপনি ঠিক বলেছেন ভাই। জুনিয়র-সিনিয়র অবশ্যই ফ্রেন্ড হতে পারে। (গার্লফ্রেন্ড বয়ফ্রেন্ডও হতে পারে। আরিফের দিকে তাকিয়ে বলল)
আহিল — আরে একদিকে ফ্রেন্ড হবে বলছ অন্যদিকে ভাইয়া ডাকছ। নাম ধরেই ডাক। আমি আহিল। এই হলো আমার বন্ধু আরিফ৷ আরও চারজন বন্ধু আছে। পরে পরিচয় করিয়ে দিব।
আলিফা — (আরিফ? আলিফা আরিফ। সেম সেম। হাউ কিউট।) আমি আলিফা। আর এই হলো…
আহিল — আমরিন। (মধু মিশ্রিত স্বরে বলল)
আরিফের ধ্যান অন্যদিকে। সেই কবে থেকে আহিলকে থামানোর চেষ্টা করছে। আহিল তো আমরিনকে দেখে লাট্টু হয়ে আছে। কিন্তু আরিফ সবকিছু ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নেয়। আমরিনের চক্করে আহিল ভুলেই গেল আফরানের কথা। কিন্তু আরিফের মনে আছে। আলিফা ও নূর বান্ধবী। তাহলে আমরিনও তাদের বান্ধবী। সবকটা যদি সামনা-সামনি আসে তাহলে যে বিস্ফোরণ ঘটবে। আফরানের রাগ সম্পর্কে বরাবরই তার জ্ঞান আছে। সেই দিন নূরের রাগও দেখল।
.
নূর,পুষ্প,সিমা,মেহের মাঠে ছায়ার নিচে দাঁড়িয়ে আমরিন ও আলিফার অপেক্ষা করছে। কিন্তু তাদের আসার কোন খবরই নেই। অবশেষে নূর বিরক্ত হয়ে তাদের আনতে গেল। দুই কদম ফেলতেই দেখে আফরান সামনে থেকে আসছে। সেই ঘটনা মনে পড়তেই উল্টো দিকে দিল দৌড়। মাঝপথে থেমে ভাবতে লাগলো।
নূর — আরে আমি শুধু শুধু দৌড়াচ্ছি কেন? সেই দিনের ঘটনা আমার মনে আছে কিন্তু উনার তো মনে নেই। জাস্ট চেও চেও নূর।
আবারও সোজা পথে হাটা ধরল। পুষ্প,সিমা, মেহের চুপচাপ দাঁড়িয়ে দেখছে। নূর গেল, আবার ফিরে এলো, আবার গেল। কিছুই তাদের মাথায় ঢুকল না। নূর তিরিং বিরিং করে এগিয়ে গেল। আফরানের দিকে তাকিয়ে ভাব নিয়ে পাশ কেটে যেতেই আফরান সামনে এসে দাঁড়াল। নূর ভ্রু কুচকে তাকাল। আবারও পাশ কেটে যেতেই পিছন থেকে আফরান নূরের হাত ধরে ফেলে।
আফরান — কোথায় যাচ্ছ?
নূর — কচু গাছে ঝুলতে। হুহ্! (ভেঙচিয়ে হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছে। ততই আফরান আরও শক্ত করে তার হাত চেপে ধরছে।)
আফরান — কচু গাছে না। তোমাকে তো শেওড়া গাছে ঝুলাবো। কি ভুলে গিয়েছ? মনে নেই কিছু? (নূর ভয়ে ঢোক গিলল) আমি মনে করিয়ে দিচ্ছি। পুচ্চু পুচ্চিকে মনে আছে? (কথাটা বলতেই নূরের গলা শুকিয়ে এলো। আফরান এক টান দিয়ে নূরকে তার সামনাসামনি দাঁড় করালো। চোয়াল শক্ত করে দন্তঘর্ষণ করে বলল।) কি ভেবেছ তুমি। আমি সব ভুলে গিয়েছি? নো নেভার। তোমার মিথ্যা নাটকের জন্য সেদিন আমার ইমেজে কুপ্রভাব পড়েছে। আমাকে আনপ্রোফেশনাল বলা হয়েছে। যেখানে আমার কোন দোষ-ই ছিল না। সব দোষ ছিল তোমার। আমি সব ক্ষমা করতে পারি কিন্তু যদি প্রশ্ন আমার প্রিয়জন এবং প্রিয় জিনিসের উপর উঠে তাহলে আমি কখনো ছাড়ি না। আর না তোমাকে ছাড়ব। সেদিন তো নাটক করে পালিয়ে গিয়েছিলে। কিন্তু আজ? আমি তোমায় সিনেমা দেখাব।
নূর — দেখুন আপনি…..
আফরান — জাস্ট শাট আপ। আমি অনেক দেখেছি। এখন তোমার দেখার পালা। কাল কি যেন বলেছিলে? (চিন্তার ভান করে) ওহ্ হ্যাঁ! ইয়াশ তোমার ফ্রেন্ডকে ভার্সিটির সবার সামনে কান ধরে উঠবস করতে বলেছে। তোমার ফ্রেন্ডকে অপমান করেছে। তাই তো? ওয়েল। এখন তুমিও তাই করবে?
নূর — মানে? (ভ্রু কুচকে)
ইয়াশ — মানে কান ধরে উঠবস করবে। শুধু তুমি না বরঞ্চ তোমার প্রিয় সখী… তুমি (মেহেরকে উদ্দেশ্য করে)। তুমিও করবে। (মেহের হতভম্ব হয়ে তাকাল)
ওয়াসিম — মিস পিংকিও। খুব তো ঝগড়া করছিলে আমার সাথে।
সিমা — এই আপনাকে কতবার বলব আমার নাম পিংকি না। আরেকবার যদি আমাকে ওই নামে ডাকেন তাহলে আপনাকে এখানেই মুরগী বানাবো।
ওয়াসিম — হাহ্ বুদ্ধু। ছেলেরা মুরগী নয় মোরগ হয়। গাধা কোথাকার। এটাও জানে না।
সিমা — মেয়েরাও গাধা হয় না গাধি হয়। মোরগ কোথাকার।
ওয়াসিম — আর তুমি গাধি।
আফরান — চুপ। (চিল্লিয়ে)
রিহান — সবাই যখন করবে মিস ভদ্রবেশী বাদ যাবে কেন? তুমিও কান ধরে উঠবস কর। (পুষ্পকে উদ্দেশ্য করে। রিহান হেসে আফরান এবং নূরের দিকে তাকিয়ে দেখে দুজনেই ভ্রু কুচকে একই দৃষ্টিভঙ্গিতে তাকিয়ে আছে। নূরের তাকানোর কারণ বুঝতে পারল কারণ তার সখী বলে। কিন্তু আফরানের তাকানোর কারণ বুঝল না।)
পুষ্প — মাঝখান দিয়ে আপনাকে বা হাত ঢুকাতে বলল কে? চুপচাপ যেখানে আছেন দাঁড়িয়ে থাকেন। বেশি ওভার স্মার্টগিরি দেখাতে হবে না। আসছে আমাকে কান ধরাতে।
আফরান — চুপ করবে? এন্ড ইউ মিস চাশমিশ। কান ধরে উঠবস কর। রাইট নাও। নাহলে সোজা ভার্সিটি থেকে এক্সপেল করে দিব। আর হ্যাঁ ভেবো না হাওয়ায় ভাসানো কথা বলছি। এমন করার ক্ষমতা আমি রাখি। সো ডু ইট।
নূর ভদ্র হাসি দিল। রিহানসহ মেয়েরা নূরের হাসি দেখে বিস্মিত হলো। কারণ নূর এটা মেনে নেওয়ার মতো মেয়ে নয়। নিশ্চয় খুরাফাতি চিন্তা ভাবনা করছে।
আফরান — দাঁত না খেলিয়ে কান ধরে উঠবস কর।
নূর — ওকে। (সবাই অবাক হয়ে তাকাল)
নূর আফরানের দুই কান ধরে টেনে ওঠবস করতে লাগলো। আফরান বিষয়টা বুঝতে না পেরে দুই তিন বার ওঠবস করল। পুষ্প, সিমা,মেহের হাসতে লাগলো। রিহান, ওয়াসিম, ইয়াশ অবাক হয়ে দেখছে। আফরান বুঝতে পেরে তৎক্ষনাৎ নূরের হাত চেপে ধরে দাঁড় করালো।
আফরান — কি করছ?
নূর — আপনি তো বললেন কান ধরে ওঠবস করতে। তাই করছি।
আফরান — আমি তোমার কান ধরে ওঠবস করতে বলেছি।
নূর — এ্যাহহ! প্রথমত আপনি তমার শব্দটা উল্লেখ করেন নি। দ্বিতীয়ত এই তমা কে? আমি তমার কান কেন ধরতে যাব? আজব।
পুষ্প — দিছে কথায় প্যাচ লাগিয়ে। এখন জিলাপির মতন গোল গোল প্যাচিয়ে ভাইকে পাগল করে দিবে। (সিমা মেহেরকে বলল। তারা মুখ টিপে হাসছে।)
আফরান — তুমি কি পাগল?
নূর — আমি পাগল নয়। মাথার স্ক্রু একটু ঢিলা। আপনি কথা ঘুরানোর চেষ্টা করবেন না। আগে বলুন এই তমাকে? আপনার গিএফ? দেখুন আপনার ব্যক্তিগত বিষয় আপনি সামলান। হুদাই আমাকে জড়াবেন না। ওকে বাই।
আফরান হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে নূরের দিকে। এসবের মাঝে আবার তমা এলো কোত্থেকে। ভাবতে ভাবতে ডিপ্রেশনে চলে যাওয়া আফরান। কোমর দুলিয়ে ক্লাসে চলে যাওয়া নূর।
.
.
.
চলবে