#Ragging_To_Loving__2
#পর্বঃ- ১৩
#রিধিরা_নূর
নূর ফ্রেশ হয়ে দুপুরে খাবার না খেয়েই চলে গেল দাদী দাদুর কাছে।
নূর — বিএফ। (চিল্লিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে থমকে গেল। দাদু তড়িঘড়ি চোখের জল মুছে চশমা পরে নিল। হাসি মুখে নূরের তাকাল দিকে। কিন্তু নূরের চোখে বিষয়টি এড়ালো না। খুব স্বাভাবিকভাবে নিল। কারণ এই প্রথম না। বহুবার দেখেছে একটি ছবি হাতে নিয়ে কাঁদতে। ছবিটি তারই সন্তানের।) বিএফ চল। আজ তোমাদের সাথে খাব। ভীষণ ক্ষিধে পেয়েছে। চল।
দাদু — হ্যাঁ! অবশ্যই।
নূর দাদী দাদুর সঙ্গে পাটি পেতে বসল খেতে।
.
.
সিমা স্নান করে এসে ওয়াসিমকে ইচ্ছেমতো ধুয়ে দিচ্ছে।
সিমা — নাইজেরিয়ান টাকলা, আফ্রিকার উল্লুক, লেজ কাটা বান্দর, আবুইল্লা কোথাকার। (চুলের ঘ্রাণ নিতেই বমি করার মতো অবস্থা) ছিঃ! গন্ধ এখনো গেল না। (উল্টো ফিরে দিল দৌড় বাথরুমে)
.
.
আলিফা লুকিয়ে মেহেরকে রুমে নিয়ে গেল। বাথরুম থেকে মেহের বেরিয়ে এসে বসল আলিফার সঙ্গে।
আলিফা — ওই ছেলেটা যখন তোর উপর ডিম ফুটালো তুইও ফুটালি না কেন? বজ্জাত একটা।
মেহের — আমি কোন ঝামেলা চায় না। এবার অন্তত সে শান্ত হবে। এখন যদি আমি কিছু করি তাহলে সেও পাল্টা কিছু করবে। এভাবে ঝামেলা চলতে থাকবে। আর তুই জানিস বাবার অবস্থা। আমি কোন ধরনের ঝামেলা চায় না। এমনিতেই জীবনে কম ঝামেলা নেই।
আলিফা — হুম। আমার মনে হয় এসব ব্যাপারে আহিল, আরিফ জানতো না। কারণ আমি দেখেছি আরিফকে। সে খুব গম্ভীর এবং খোলা মেজাজের মানুষ। এসব প্রাংক করা তার স্বভাব নয়।
মেহের — ও হো। (কাঁধে হালকা ধাক্কা দিয়ে) মাত্র কয়েকদিনের পরিচয়ে এত কিছু লক্ষ্য করেছিস। এটা শুধু ভালো লাগার মধ্যে সীমাবদ্ধ নাকি আরও বেশি।
আলিফা — জানি না। কিন্তু এই অনুভূতি অন্যরকম। যা আগে কখনো অনুভব করিনি। ভার্সিটিতে গিয়ে এই চোখ জোড়া সর্বপ্রথম তাকেই খুঁজে। তাকে দেখলে মনে হয়….
মেহের — হাজার বছর তাহার সাথে ছিল পরিচয়… (এক কানে হাত অন্য হাত লম্বা করে গানের সুরে বলল)
দুজনেই খিলখিল করে হেসে উঠল।
.
.
আফরান সবাইকে নিয়ে তাদের ফার্মহাউসে গেল। ফ্রেশ হয়ে পুল সাইডে বসল।
আরিফ — আফরান শুধু শুধু ঝামেলা বাড়িয়ে লাভ নেই। যা হওয়ার হয়েছে। এখন এসব বন্ধ কর। জীবনটা সম্পূর্ণ বিশৃঙ্খল হয়ে গিয়েছে। রোজ নতুন ঝামেলা। শান্ত ভাবেও সব ঠিক করা যায়। শুধু শুধু ঝগড়া বিবাদ করা আমাদের মাঝে নয় বরং ভার্সিটির পরিবেশটাও নষ্ট হচ্ছে। আর ইয়াশ। সেদিন কিন্তু মেয়েটা তোকে সরি বলেছিল। কিন্তু তুই তা উপেক্ষা করে আজ যা করলি তার সাথে তা কিন্তু অন্যায়। চাইলে অন্যদের মতো সেও তোর উপর ডিম ছুড়তে পারতো। কিন্তু সে করেনি। এখন প্লিজ স্বাভাবিক ভাবেই চল। ওরা ওদের রাস্তায় চলুক আমরা আমাদের রাস্তায়। ওকে?
আফরান চোখ বন্ধ করে নিস্তব্ধ হয়ে সব শুনছে। ইয়াশ আফরানের দিকে তাকিয়ে আছে।
রিহান — এই দুইটাকে তো বললি। ওয়াসিমকে?
ওয়াসিম — না মানে আমিও একটু…. করলাম আর কি।
রিহান, আরিফ ভ্রু কুচকে তাকাল ওয়াসিমের দিকে। ওয়াসিম জোর পূর্বক হাসি দিয়ে আফরানের কোলে বসে পড়ল। এসবের মাঝে আহিলের কথা কারো মনে নেই। সে যে চুপচাপ বসে আছে তার দিকে কারো খেয়াল নেই।
পরের দিন ভার্সিটিতে_____________________
নূর আফরান সামনাসামনি হয়েও একে অপরকে উপেক্ষা করে। কারণ উভয়ই সিদ্ধান্ত নিল নতুন কোন ঝামেলা চায় না। তাই যথাযথ সম্ভব এড়িয়ে চলার চেষ্টা করছে। সিমা ওয়াসিমকে দেখেই তার দিকে যেতে নিলে পুষ্প থামিয়ে দেয়। এবং সবাইকে বলেছে যাতে তাদের এড়িয়ে চলে। আলিফা করুণ দৃষ্টিতে তাকাল।
আমরিন আলিফাকে নিয়ে লাইব্রেরীতে গেল। অপরদিকে আহিল এই সুযোগের অপেক্ষায় ছিল কবে আমরিনকে একা পাবে। গতকালকের ভুল বোঝাবুঝি দূর করবে। কাউকে কিছু না বলে সেও লাইব্রেরীতে গেল। কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজির পর অবশেষে আমরিনকে পেল। বুকশেলফের অপর পাশে হাতে বই নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তার পাশে আলিফা বই নিচ্ছে। অনেক সংকোচে আহিল আমরিনের দিকে এগিয়ে গেল। আহিল দেখেই আমরিন বলল,
আমরিন — আলিফা হয়েছে? চল তাড়াতাড়ি। (আহিলকে উপেক্ষা করে)
আহিল — আমরিন আমার কথাটা শোন। কাল যা কিছু হয়েছে….
আমরিন — আর কতক্ষণ লাগবে? থাক। বাকি গুলো বই পরে নিস। এখন চল।
আহিল — আমরিন?
আমরিন — প্লিজ। আমি আপনার সাথে কোন কথা বলতে চায় না। আবারও নিশ্চয় নতুন কিছু প্লান করেছেন। কিন্তু আমরা আর নতুন কোন ঝগড়া বা ঝামেলা চায় না।
আহিল — আমি সত্যি বলছি আমি কালকের ব্যাপারে কিছু জানতাম না। আই সুয়ের।
কেন জানি আহিলের চোখে সত্যতা দেখতে পাচ্ছে আমরিন। ইচ্ছে করছে তাকে বিশ্বাস করতে। আমরিন মৃদুস্বরে হুম বলে চলে গেল। এদিকে যে আলিফা দাঁড়িয়ে আছে সেই খেয়াল পর্যন্ত তার নেই। আহিল মন খারাপ করে দাঁড়িয়ে আছে। আলিফা আহিলের কাঁধে চাপড়ান দিয়ে ভ্রু নাচিয়ে তাকাল। আহিলও ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করল “কি?”। আলিফা চোখের ইশারায় আমরিনের যাওয়ার দিকে দেখাল। আহিল কিছু বুঝতে না পেরে মুখেই বলল,
আহিল — কি? কিছু বলবে?
আলিফা — আমি না আপনি বলবেন। আমরিনকে এতো কৈফিয়ত দিচ্ছেন কেন? বন্ধুত্ব করলেন সবে মাত্র কিছু দিন হলো। কিন্তু আপনার বাকি বন্ধুদের সাথে আরও আগে থেকে। তাহলে আপনি তো তাদেরই সাইড নিবেন। কিন্তু আপনি দেখছি আমরিনের পিছনে ঘুরছেন। কেন? হুয়াই?
আহিল — কারণ আমরিন আমাকে ভুল বুঝছে। গতকাল যা হলো তার কিছুই আমি জানতাম না। কিন্তু আমরিন ভাবছে এসবে আমিও যুক্ত। যার কারণে সে আমার সাথে রেগে আছে।
আলিফা — আপনি আমরিনকে পছন্দ করেন। তাই না?
আহিল — (মাথা চুলকে) হ্যাঁ! লাভ এট ফার্স্ট সাইট। প্রথম যখন দেখেছিলাম নিজের অজান্তেই মনটা তার কাছে চলে গেল। ওর জন্য আমার ফিলিংস অন্যরকম। এমন অনুভূতি যা আগে কখনো অনুভব করিনি। ওকে দেখলেই….
আলিফা — মনটা লাফিয়ে উঠে। ইচ্ছে করে দেখতেই থাকি। মন চায় যেন সেও আমার মতো অনুভব করুক।
আহিল — একদম। এই ওয়েট। তুমি এসব জানো কি করে?
আলিফা — হিহি না মানে। আপনার ওই খাম্বা ফ্রেন্ড আছে না। ওই যে মুখটা সবসময় করলার মতো করে রাখে।
আহিল — আরিফ? (হেসে)
আলিফা — হ্যাঁ! প্রথম দেখায় ঠাস করে উনার উপর ক্রাশ খাইছি। এখন আমি উনাকে পটাইতে চায়। ইউ নো হোয়াট আই মিন।
আহিল — অফকোর্স আই নো। (আলিফার গাল টেনে) কিন্তু তার যেমন স্বভাব। ভীষণ গম্ভীর প্রকৃতির। এসব প্রেম ভালবাসা ওর দ্বারা হবে না।
আলিফা — তা আমি ম্যানেজ করে নিব। আর রইলো আমরিনের কথা। খুবই শান্তশিষ্ট মেয়ে। কি করে যে আমাদের ফ্রেন্ড হলো ভেবেই পায় না। কিন্তু আমাদের ভীষণ ভালবাসে তাই তো আপনার সাথে এমন করল। কিন্তু চিন্তা করবেন না। আপনি যে এখন তাকে বুঝালেন সে মেনে নিয়েছে। শুধু মুখে প্রকাশ করছে না। এই যে আমি যে তার সাথে আছি সেই খেয়ালও নেই। চলে গিয়েছে ভাবনায় মগ্ন হয়ে।
আহিলের মুখে অবশেষে প্রশান্তির হাসি ফুটলো।
আহিল — আরে বন্ধুত্ব করেছ ভুলে গেলে? আপনি নয় তুমি করে বল।
আলিফা মাথা নেড়ে তাকে আশ্বাস দিয়ে চলে গেল।
ক্লাস শেষে মেয়েরা ক্যান্টিনে বসে আছে। আলিফা চিপে চাপে আমরিনের গা ঘেঁষে বসল। আহিলকে নিয়ে তার অনুভূতি জানার চেষ্টা করছে।
আলিফা — আমরিন। আহিলকে তোর কেমন লাগে? (মৃদুস্বরে)
আমরিন — মানে? (উচ্চস্বরে)
নূর — কি মানে?
আলিফা — না কিছু না। (ফকিন্নি মাইয়া। আস্তে কথা বলতে পারে না। দেখছে আমি ফিসফিস করে কথা বলছি। আমরিনের দিকে সরু দৃষ্টিতে তাকিয়ে)
সিমা — নূর দেখ না ডিমের গন্ধ লাগে নাকি। (চুল নূরের মুখে দিয়ে)
নূর — ছিঃ ফকিন্নি। খাচ্চর খাটাশ খবিশ মাইয়া। ভালো করে শ্যাম্পু দেস নি? এখনো গন্ধ লাগে। আমার চুল দেখ। আহা আহা কি খুশবু। দেখ দেখ। (সিমার দিকে এগিয়ে দিল)
সিমা — ওই একই গন্ধ তোর চুলে।
নূর — হাহ্ ঢং। হিংসে হয় তোর আমার চুল নিয়ে।
সিমা — ঢংগী।
নূরের ফোন বেজে উঠল।
নূর — জি আম্মু বল।
শাহারা হায়দার — আমি তন্বী আর তোর আব্বু আমরা তোর মামার বাড়ি যাচ্ছি। দূরের পথ তাই রাতে ফিরতে পারব না। তুই আর রিহান সাবধানে থাকিস। দরজা, জানালা ভালো করে বন্ধ করিস। ঘরের চাবি তোর দাদীর কাছে দিয়ে যাচ্ছি। নিয়ে নিস। আর হ্যাঁ রিহান তো তোর সাথেই আছে তাকেও জানিয়ে দিস।
নূর — আচ্ছা ঠিক আছে। তোমরা সাবধানে যেও।
শাহারা হায়দার — রাতের খাবার কিন্তু রান্না করিনি। তোর দাদুর কাছে খেয়ে নিস তোরা।
নূর — আচ্ছা ঠিক আছে চিন্তা কর না তুমি। ভালো মতো পৌঁছে ফোন দিও।
ছেলেরা মিউজিক রুমে বসে আড্ডা দিচ্ছে। আহিলের মুখে ঔজ্জ্বল্য হাসি। রিহান সরু দৃষ্টিতে তাকিয়ে তাকাল আহিলের দিকে।
রিহান — কিরে আহিল্লা। ভার্সিটি আসার সময় দেখলাম মুখটা লটকনের মতো লটকে আছে। পরে আবার ক্লাসে দেখলাম আনমনে পাগলের মতো হাসছিস। আর এখনো হাসছিস বিনা কারণে। কি হয়েছে বল তো।
আহিল — হয়নি কিছু। তবে হাওয়ার অপেক্ষায় আছি।
রিহান — মানে?
আহিল — অপেক্ষায় আছি কবে আমরিনও আমার প্রেমে পড়বে।
আফরান ফোন হাতে নিয়ে দেখে পান্নার কল। উঠে একপাশে গিয়ে কথা বলছে। রিহানের ফোন বেজে উঠল। ফোনের স্ক্রিনে নাম উঠল “আতঙ্ক”। রিহান ভাবছে হঠাৎ নূর ফোন দিল কেন? রিহানের ফোনের দিকে তাকিয়ে ওয়াসিম হেসে উঠল। বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞেস করল,
ওয়াসিম — এই আতঙ্কটা কে?
রিহান — আমার বোন। (আনমনে বলল। হঠাৎ নূরের কথা মনে করে এগিয়ে গেল। ফোন রিসিভ করে কথা বলতে লাগলো।)
রিহানের মুখে “আমার বোন” শুনে আফরান চমকে উঠল। অপর পাশে পান্না তাকে ডেকে যাচ্ছে সেই খেয়াল নেই। অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে রিহানের দিকে। আফরান কৌতূহলী হয়ে রিহানের পিছে দাঁড়িয়ে আছে। রিহান ফোনে কথা বলে পিছনে ফিরতে চমকে উঠল। হঠাৎ আফরানকে দেখে ভয় পেয়েছে।
আফরান — ফোনে কে ছিল?
রিহান — আ..আমার বো..বোন। (ভয়ে ঢোক গিলল। আফরান সব শুনেনি তো? তাহলে যে সে জেনে যাবে নূরই তার বোন।)
আফরান — আনন্দিতা? (বিস্মিত হয়ে)
রিহান অবাক হয়ে তাকাল।
রিহান — তোর মনে আছে? (অবাক হয়ে)
.
.
.
চলবে