Ragging To Loving 2পর্ব-১৪

0
3114

#Ragging_To_Loving__2
#পর্বঃ- ১৪
#রিধিরা_নূর

আফরান — মনে থাকবে না! সব মনে আছে। যা কিছু করেছে তার পায় পায় হিসাব নিব। তুই তো বললি না যে আনন্দিতা ফিরে এসেছে। কবে এসেছে?

রিহান — (তার মানে আফরানের আনন্দিতা নামটি মনে আছে। নূর নাম মনে নেই।) প্রায় তিন মাস।

আফরান — তিন মাস! (অবাক হয়ে) আর তুই আমাকে জানালি না। আচ্ছা ওর কি মনে আছে সেসব স্মৃতি?

রিহান — উমম? হয়তো না। কারণ কখনো এই বিষয় নিয়ে উল্লেখ করেনি। তখন তো ওর মানসিক বিকাশ তেমন হয়নি। স্মৃতিশক্তি ধারণ ক্ষমতা কম ছিল। বড় বড় হতে হতে সব ভুলে গিয়েছে।

আফরান — ওহ্!

রিহান আফরান দুজনেই নীরব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

ওয়াসিম বেঞ্চের উপর হাটু ভাজ করে বসে আছে। কপালে চিন্তার ভাজ পড়ল। আহিল চুইংগাম চিবুতে চিবুতে সরু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আরিফের চোখে মুখে গম্ভীর ভাব। ইয়াশও বেশ উৎসুক হয়ে বসে আছে।

ওয়াসিম — তারপর? (ভাবগম্ভীর হয়ে)

আহিল — প্লিজ কন্টিনিউ। (অনবরত চুইংগাম চিবুচ্ছে)

ইয়াশ আরিফ একটু নড়েচড়ে বসল। জানার আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে আছে আফরান ও রিহানের দিকে। কারণ বহুদিন পর তারা আফরানের চোখে অদ্ভুত এক ঝলকানি দেখতে পেল। আনন্দিতা নামটি উচ্চারণের সময় আফরানের মাঝে আনন্দের আভাস পেল। এর কারণ জানতে কৌতূহলী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আফরান রিহান একে অপরের দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে দিল।

আরিফ — এখানে হাসার কি হলো? আমরা পুরো কাহিনী শুনতে চায়।

ইয়াশ — বাহ্! এখন তো আমাদের ঘেঁচড়ার মাঝেও উৎসাহের ঢেউ খেলেছে। বল শুনি।

রিহান — আচ্ছা শোন।

আহিল মুখ থেকে চুইংগাম ফেলে আরেকটা পকেট থেকে নিয়ে মুখে দিতেই ওয়াসিম হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়ে নিজের মুখে দিল। গম্ভীর মনোভাব পোষণ করে চিবুচ্ছে। আহিল তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে নিজেও একটা মুখে দিল। ইয়াশ অসহায় ভঙ্গিতে আহিলের দিকে হাত বাড়িয়ে দিল। আহিল খানিকটা তাকিয়ে তাকেও একটা দিল।

রিহান — তোরা কি শুনবি নাকি এসব করবি?

আরিফ — এদের বাদ দে। আমি শুনছি বল।

রিহান — তাহলে শোন। নূ… মানে আনন্দিতা আমার বোন। তখন আমরা দাদু বাড়ি থাকতাম যা আফরানদের বাড়ির কাছেই ছিল। পরে আব্বু জমি জায়গা কিনে বর্তমান বাড়ি তৈরি করেন। আফরানের সাথে প্রথম পরিচয় হয় কিন্ডারগার্ডেন স্কুলে।

______________________________

শাহারা হায়দার ছোট ছোট দুটো বাচ্চাকে সুন্দর, পরিপাটি করে স্কুলের পোশাক পরিয়ে দিল। একটি ছোট ছেলে। আরেকটি ছোটু-মোটু, গুলুমুলু মেয়ে। রসগোল্লার মতো গাল দুটো। মাথায় দুটো তালগাছ ঝুটি করা। সু পরিয়ে দিয়ে একেবারে তৈরি করে দিল।

শাহারা হায়দার — রিহান, নূর। তোমরা সবসময় একসাথে থাকবে। কারো সাথে ঝগড়া করবে না। সবাইকে বন্ধু বানাবে। নূর তুমি রিহানের কথা শুনবে। ঝগড়া করবে না। রিহান তোমার বড় ভাইয়া না?

নূর — মাতলো চাল মিনিতের বল। [মাত্র চার মিনিটের বড়]

শাহারা হায়দার — হ্যাঁ জানি। কিন্তু বড় তো।

নূর — না। বল না। দমত। [না। বড় না। জমজ।]

শাহারা হায়দার — আচ্ছা মা আমার। জমজ।

নূর — আমি তোমাল মা না। তুমি আমাল মা।

শাহারা হায়দার কথার আগ বাড়ালো না। কারণ মেয়ে একটা বাচাল তা খুব ভালো করে জানেন। দীর্ঘ নিশ্বাস ফেললে তাদের স্কুলে পৌঁছে দিল। গেইটের বাইরে দাঁড়িয়ে দেখে একটি ছোট বাচ্চা ছেলে মায়ের আঁচল ধরে অনবরত কাঁদছে। কোনভাবেই স্কুলের ভেতরে যেতে চাইছে না।

মহিলাটি — আফরান বাবা স্কুলে তো যেতে হবে। নাহলে বড় হবে কি করে? তুমি তো বাবার মতো বড় হতে চাও। তাই না?

আফরান — হুম। (উপর নিচে মাথা নাড়ালো)

আফরানের মা — তাহলে তো স্কুলে যেতে হবে।

আফরান — আমি যাব না। (আবারও কান্না শুরু)

আফরানের মা — আফু। (থুতনিতে হাত দিয়ে) তুমি তো ভালো ছেলে। ভালো ছেলেরা কি এভাবে কান্না করে?

নূর — এহেহেহে আফু। আম্মু ও তো তেলে। তেলে তো ভাইয়া হয়। কিত্তু ও তো আফু। হিহি হিহি। আফু কাঁদে। (নূর অবাক হয়ে আফরানের কান্না দেখছিল। আফরানের মা তাকে আফু বলায় নূর খিলখিল করে হেসে উঠল।)

আফরান — আমি কাঁদি না। আমি আফু না। আমি আফরান। মা আমি যাব স্কুলে।

রিহান ছোট ছোট পায়ে দৌড়ে এলো আফরানের কাছে। আফরানের হাত ধরে টানতে লাগলো। টানতে টানতে তারা স্কুলের ভেতরে গেল। প্লে ক্লাসে বসল তারা। মেয়েরা এক সারিতে, ছেলেরা এক সারিতে। রিহান আফরানের হাত ধরে আছে। কেন জানি আফরানকে তার ভীষণ ভালো লাগলো। আফরান নাক টানছে। কাঁদতে কাঁদতে হেচকি উঠে গেল। রিহান এক ধরে অন্য হাত দিয়ে ব্যাগ থেকে পানির বোতল বের করে আফরানকে দিল। ছোট একটি বোতামে চাপ দিতেই একটি সরু ফাইপ বের হলো। আফরান পানি পান করে মৃদু হেসে রিহানের দিকে তাকাল। রিহানও এক গাল হেসে আফরানের দিকে তাকাল।

রিহান — তুমি আমার বন্ধু হবে? আমরা পতিদিন একসাথে বসব। একসাথে খেলব। পানিও খেতে দিব। নুড় আমাকে মারে। আমার চকলেট খেয়ে ফেলে।

আফরান — নুড় কে?

রিহান — ওই যে। (আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল) ও নুড়। আমার বোন।

আফরান ভ্রু কুচকে তাকাল নূরের দিকে। একটু আগে যে নূর তাকে নিয়ে হাসলো বিষয়টা আফরানের মোটেও পছন্দ হয়নি। নূর ঠোঁট উল্টিয়ে রিহান ও আফরানের দিকে তাকিয়ে আছে। রিহান আফরানের কথা বলছে বিষয়টা নূরের ভালো লাগলো না।

নূর — আম্মু তো লিয়ানকে বলতে আমাল চাতে থাকতে। তাহলে লিয়ান আফুর চাতে বচছে কেনু? [আম্মু তো রিহানকে বলেছে আমার সাথে থাকতে। তাহলে রিহান আফুর সাথে বসছে কেন?]

রিহান — আমি রিহান হায়দার। তুমি?

আফরান — আফরান আহমেদ।

ক্লাস শেষে রিহান আফরানের হাত ধরে বেরিয়ে গেল। নূর পিছন পিছন হাটছে আর রাগী দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে তাদের দিকে। গেইটের বাইরে এসে আফরান হাসিমুখে দৌড়ে গেল মায়ের কাছে। রিহানও মায়ের কাছে গেল। নূর গুটিসুটি পায়ে এলো।

বিকালে রিহান নূর খেলা করছে। খেলতে খেলতে নূর হঠাৎ থেমে দৌড়ে তেড়ে গেল রিহানের কাছে। ইচ্ছে মতো মার দিল রিহানকে। রিহান চিৎকার করে কাঁদছে।

নূর — আমাকে ফেলে আফুর চাতে বচলি কেন? আম্মু বলতে না আমাল চাতে থাকতে। আফুর চাতে কেন বচলি? (রিহানকে মারছে আর এসব বলছে)

রিহানের কান্নার আওয়াজ শুনে শাহারা হায়দার দৌড়ে এলো। এসে দেখে নূর রিহানকে হুদুম খেলানি দিচ্ছে। দৌড়ে গিয়ে রিহানকে ছাড়াল।

শাহারা হায়দার — নূর এসব কি হচ্ছে? মারছ কেন রিহানকে?

নূর — তুমি না বললে লিয়ানকে আমাল চাতে থাকতে। লিয়ান আমাকে ফেলে আফুর চাতে থাকচে। (মুখ গোমড়া করে)

শাহারা হায়দার — আমি এটাও বলেছিলাম সবাইকে বন্ধু বানাবে। রিহান তাই করেছে। সে আফুকে বন্ধু বানিয়েছে।

রিহান — ও-র না-ম আ-ফু না। আ-ফ-রা-ন। (কান্নার ফলে শব্দ ভেঙে যাচ্ছে)

শাহারা হায়দার — কি?

রিহান — আ-ফ….রা-ন।

শাহারা হায়দার — আচ্ছা। নূর? কাল স্কুলে গিয়ে তুমি আফরানকে বন্ধু বানাবে। ঠিক আছে?

নূর — হু।

শাহারা হায়দার ভেতরে চলে গেলেন। নূর রাগী দৃষ্টিতে রিহানের দিকে তাকাল। রিহান “আম্মু” বলে চিৎকার দিয়ে মায়ের পিছনে দৌড় দিল।

পরের দিন স্কুলে গিয়ে নূর সিদ্ধান্ত নিল আফরানকে বন্ধু বানাবে। তাই রিহান নূর একে অপরের হাত ধরে ক্লাসের বাইরে দরজায় দাঁড়িয়ে আফরানের অপেক্ষা করছে। নূর দূর থেকে দেখতে পেল আফরান আসছে।

নূর — লিয়ান ওই যে আফু আচছে। (আঙুল দিয়ে দেখাল)

আফরানকে দেখা মাত্রই রিহান নূরের হাত ছাড়িয়ে আফরানের কাছে দৌড়ে গেল। নূর ভ্রু কুচকে রিহানের যাওয়ার পানে তাকিয়ে আছে। রিহান দৌড়ে গিয়ে আফরানের হাত ধরল। হেসে হেসে হাত ধরে হাটছে। অপরদিকে নূর রাগে ফুঁসছে। আবারও সিদ্ধান্ত পাল্টে গেল। ফোঁপাতে ফোপাঁতে ধুম ধড়াম করে বেঞ্চে বসে পড়ল। রিহান আফরান হেসে হেসে ক্লাসে প্রবেশ করে একসাথে বসল। রিহান ব্যাগ থেকে চকলেট বের করে আফরানকে দিল। তা দেখে নূর হা হয়ে তাকিয়ে আছে। রেগে উঠে রিহানের পিঠে থাপ্পড় দিল।

নূর — কালকে আব্বু চকলেত আনতিলো। আমাকে দুতা তুকে দুতা দিছে। আমি দখন চকলেত চাইতি আমাকে বললি চকলেত চেস। তাহলে এতা কত্তেকে? [কালকে আব্বু চকলেট আনছিল। আমাকে দুইটা তোকে দুইটা দিছে। আমি যখন চকলেট চাইছি আমাকে বললি চকলেট শেষ। তাহলে এটা কোত্থেকে?]

রিহান কাঁদতে কাঁদতে বলল।

রিহান — আমার একটা চকলেট খাইছি। একটা আফরানের জন্য রাখছি।

নূর রেগে আফরানের হাত থেকে চকলেট ছিনিয়ে নিল। আফরানের ভ্রু কুচকে রাগী দৃষ্টিতে তাকাল নূরের দিকে।

নূর — এতা আমাল। হুহ্! (ভেঙচি কেটে চলে গেল। বেঞ্চে বসে চকলেটের প্যাকেট ছিড়ে রিহান আফরানকে দেখিয়ে দেখিয়ে খেতে লাগলো।)

আফরান — বেশি চকলেট খেলে আরও ভুটকি হয়ে যাবে।

ভুটকি শব্দটা শুনে নূর অবাক হয়ে তাকাল আফরানের দিকে। যার মানে সে ভুটকি অর্থ জানে না। নূর ভাবছে ভুটকি কি?

.
.
.

চলবে

বিঃদ্রঃ বানানোর কিছুটা বিকৃতি করা হয়েছে। তাই ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
আর ছোট্ট রিহান, নূর, আফরানকে কেমন লাগলো অবশ্যই জানাবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here