#Ragging_To_Loving__2
#পর্বঃ- ১৭
#রিধিরা_নূর
আরিফ — কি আবোল তাবোল বকছিস?
আফরান — রসগোল্লা।
আহিল — হারামি পুরো এক হাড়ি রসগোল্লা নিজে একাই সাবাড় করে দিলি। এখন আবার রসগোল্লা চাস কোন সাহসে। (রেগে)
রিহান — আফরান কি হয়েছে তোর? এমন হাবাগোবা হয়ে আছিস কেন?
আফরান গালে হাত দিয়ে রিহানের দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। মনে মনে বলল, “ভাই তোকে কোন মুখে বলব তোর বোনের কীর্তি।”
ইয়াশ — বলবি? কি হয়েছে? গালে হাত দিয়ে আছিস কেন?
আফরান — ব্যা..ব্যাথা করছে।
আহিল — আরও খা রসগোল্লা। ওপস সরি। কলকাতার রসগোল্লা।
আফরানের — আর জীবনেও খাব না। রসগোল্লা। কলকাতার রসগোল্লা। (নিষ্পলক বিস্মিত হয়ে বলল)
রিহান — অনেক রাত হয়েছে। ঘুমোতে চল। (সবাই যেতে নিলে হঠাৎ লক্ষ্য করে ওয়াসিম নেই।) ওয়াসিম কোথায় গেল?
চারদিকে খোঁজাখুঁজি করে রান্নাঘরে গিয়ে দেখে ফ্রিজে কিছু খুঁজছে। আরিফ অবাক হয়ে বলল, “কি করছিস তুই?”। ওয়াসিম কাঁদো কাঁদো চেহারা বানিয়ে বলল, “রসগোল্লা খুঁজছি। আমিও কলকাতার রসগোল্লা খাব।” রিহান ওয়াসিমের মাথায় টোকা দিল।
.
.
দাদু দাদী ঢাকার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কারো অপেক্ষায় বসে আছে।
দাদী — সময় তো হয়ে গেল এখনো আসছে না কেন?
দাদু — জানি না। এখানে অপেক্ষা কর আমি দেখে আসছি।
দাদু কাউন্টারে গিয়ে জানতে পারে যুক্তরাজ্যের ফ্লাইট আবহাওয়ার কারণে বিলম্ব করা হয়েছে। পরবর্তী ফ্লাইটে যাত্রীরা আসবে। পরবর্তী ফ্লাইট আসবে পরের দিন দুপুরে। দাদু নিরাশ হয়ে দাদীর কাছে গিয়ে খবরটি দিল। দাদীর চেহারাটাও মলিন হয়ে গেল। ঢাকায় পরিচিত কেউ নেই। তাই হোটেলেই উঠলেন তারা।
.
সকালে আফরান সবার পূর্বে উঠল। ফ্রেশ হয়ে বেলকনিতে দাঁড়ালো। সকালের বিশুদ্ধ হিমেল হাওয়ায় মনটা ফুরফুরে লাগছে। চোখ বন্ধ করে অনুভব করছে মূহুর্তটা। পাশের বেলকনি থেকে টিং টিং আওয়াজ, বাগিচার ফুলের সুবাস, গাছের ডালে বসে থাকা পাখিদের কলরব সবই যেন মনোমুগ্ধকর দৃশ্য। আফরান নীরবে অনেক্ষণ সময় কাটাল। ধীরে ধীরে সোনালি রোদের আলো মুখ ছুঁয়ে পড়ছে। অন্যরকম প্রশান্তি অনুভব করছে এখানে।
পাশের রুমে নূর ঘুমে বিভোর। চাদর মুড়িয়ে কোমর থেকে উপরিভাগ মেঝেতে, পা দুটো বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে আছে। ঘড়ির এলার্ম ক্রমশ বেজেই যাচ্ছে। নূর চেপে ধরে আছে।
নূর — উফফ। প্রতিদিন সকাল হওয়ার কি প্রয়োজন। একটু ঘুমোতেও পারি না।
ঘুমে বিভোর হয়ে কোন রকম উঠে দাঁড়ালো। চোখ দুটো বন্ধ। নিভু নিভু চোখে ঘড়ি নিয়ে বেলকনিতে রাখল। ফিরে আসতে কপালে ওয়াইন্ড চিমনের ঘন্টা লাগলো। কপাল ঘেষতে ঘেষতে থাপড়ান দিল। বেলকনির অন্যদিকে আফরান পাশ ফিরে নূরের বেলকনিতে তাকাল। বিপরীতমুখী হয়ে দাঁড়ানোর কারণে আফরান তার চেহারা দেখতে পায়নি। এলোমেলো চুলে কোন পাগলের চেয়ে কম লাগছে না। কিন্তু নূরের কান্ড দেখে নিঃশব্দে হাসছে। নূর ঢুলতে ঢুলতে রুমের ভেতর গিয়ে আবারও শুয়ে পড়ল। ঘড়ির এলার্মের রিহানের ঘুম ভেঙে গেল। ঘুমের ঘোরে বলল।
রিহান — সকাল সকাল এই মেয়ের আতংক শুরু হয়ে গেল। (অপর পাশে ফিরতেই হাত পড়ল কারো মুখের উপর। চোখ খুলে দেখে ওয়াসিম শুয়ে আছে। অপর পাশে ফিরে দেখে আহিল। গতকালের কথা মনে পড়তেই লাফিয়ে উঠে বসে।) নূর এতো সকালে বাসায়। আর এরাও বাসায়। (তড়িঘড়ি বেলকনিতে গিয়ে দেখে আফরান দাঁড়িয়ে আছে। ভয়ে ভয়ে নূরের বেলকনিতে তাকিয়ে দেখে এলার্ম ঘড়ি বাজছে। এটা যে নূরের নিত্যদিনের কাজ। নিজে এলার্ম দিয়ে রাখবে কিন্তু উঠবে না। বেলকনিতে ঘড়ি রেখে যাবে আর রিহানের ঘুম হারাম করবে।)
আফরান — কি হয়ছে?
রিহান — কয়টা বাজে? (আফরান হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে। রিহান ভেতরে গিয়ে দেখল সাতটা বাজতে চলল।) ওয়াসিম, আহিল, ইয়াশ, আরিফ উঠ তাড়াতাড়ি। (টেনে টেনে সবাইকে জাগ্রত করল।)
ওয়াসিম নিভু নিভু চোখে তাকিয়ে আবারও ঘুমিয়ে পড়ল। রিহান তাকে টেনে বসালো। পরক্ষণে আহিলও ঢলে পড়ল বিছানায়।
রিহান — তোরা উঠবি নাকি ঠান্ডা পানি ঢেলে দিব তোদের উপর। (চেচিয়ে)
আফরান — তোর হয়েছে কি? সকাল সকাল এতো চেচাচ্ছিস কেন?
রিহান — হেহে না মানে। ওই…। ভার…ভার্সিটি যেতে হবে না। আর দেখ বাসায় কেউ নেই যে আমাদের জন্য নাশতা তৈরি করবে। বাইরেই খেতে হবে। তাইলে তাড়াতাড়ি বের হলে নাশতা করে ভার্সিটি ঠিক সময়ে পৌঁছে যাব৷
আফরান বলতে নিয়েছিল বাসায় আনন্দিতা আছে। হঠাৎ গতরাতের কথা মনে পড়তেই গালে হাত দিয়ে চুপ হয়ে গেল।
আরিফ — ভার্সিটি যে যাব পরার জন্য জামাকাপড় কিছুই তো আনি নি। আফরানের ফার্ম হাউসে আমাদের এক্সট্রা জামা আছে। কিন্তু এখানে তো নেই।
রিহান — আমার জামা পরে নে। সবার তো প্রায় একই সাইজ। এখন দেরি না করে যা। আটটার পূর্বেই বেরিয়ে যেতে হবে। গো ফাস্ট।
আহিল — তুই এমন তাড়াহুড়া করছিস কেন? মনে হচ্ছে যুদ্ধে যাবি।
রিহান আরিফ-ওয়াসিমকে নিয়ে পাশের রুমে গেল। কারণ এক ঘন্টা সে একাই কাটিয়ে দিবে। রিহান নিজের রুমে এসে দেখে রুমের বারোটা বাজিয়ে দিল। মনে হচ্ছে আলমারি বিছানার উপর উল্টে দিল। পুরো বিছানায় জামা কাপড়। অন্যদিকে ইয়াশ আহিল একটা শার্ট নিয়ে টানাটানি করছে। এক পর্যায়ে ফড়াৎ করে শার্ট মাঝখানে ছিড়ে দুইভাগ হয়ে গেল। এক ভাগ ইয়াশের হাতে, অন্যভাগ আহিলের হাতে। দুইজনের একে অপরের মুখে ছুড়ে মারল।
রিহান — পাঁচ মিনিটের মধ্যে ভূমিকম্প নিয়ে এলি রুমে। (তখনই ওয়াশরুম থেকে আফরান বের হলো সাদা রঙের শার্ট পরিধান করে। রিহান ভয়ার্ত চোখে তাকাল৷) এই শার্ট নূর গতবছর জন্মদিনে উপহার দিয়েছিল।
রিহান তড়িঘড়ি সবাইকে নিয়ে পেছনের দরজার দিয়ে বেরিয়ে পড়ল ভার্সিটির উদ্দেশ্যে।
ততক্ষণে নূরও তৈরি হয়ে নিল। রিহানের রুমে গিয়ে দেখে সব ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।
নূর — এই রিহাইন্নার কি হলো? কালকে বলেছিল বাসায় ফিরবে না। আমাকেও বারণ করেছে বাসায় আসতে। কিন্তু নিজেই আমার পূর্বে চলে এলো। আর ঘরের এই অবস্থা। অগোছালো রুম তার একদম পছন্দ না। আমি রুমে এলেই তাড়িয়ে দেয় সব অগোছালো করে ফেলব বলে। আজ তো মনে হয় এখানে তুফান এসেছে। হয়েছে কি রিহানের? ফোন দিয়ে দেখি। (ড্রাইভ করছে বিধায় ফোন রিসিভ করল না।) ভার্সিটি গিয়ে একা পেলে কথা বলব।
ভার্সিটিতে___________________
ওয়াসিম — ওরে ক্ষিধায় মেরে ফেলবি নাকি? আধ ঘন্টা ঘুরে ফিরেও একটা রেস্তোরাঁ খোলা পেলাম না। সব রিহানের জন্য। এতো সকাল সকাল বেরুনোর কি দরকার ছিল।
রিহান — ক্যান্টিন খোলা থাকবে এখন। চল সেখান থেকে হালকা কিছু খেয়ে নিই৷
আরিফ — সকাল সকাল খালি পেটে এসব অস্বাস্থ্যকর খাবার খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়বি৷
রিহান — কি আর করার।
আহিল — ভাই আমার ক্যান্টিনে যেতে ইচ্ছে করছে না। খাবার নিয়ে মিউজিক হলে আয়৷ সেখানে চিল করব।
ওয়াসিম — আফরান গিয়ে আন। কালকে যে আমাদের না দিয়ে পুরো এক হাড়ি রসগোল্লা খেয়ে নিলি তারই শাস্তি। যা এবার নিয়ে আয়। আমরা গেলাম মিউজিক হলে। তাড়াতাড়ি আয়।
আফরানকে কিছু বলতে না দিয়ে তারা চলে গেল। আফরান হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
আফরান — আরে আজব তো। এই নিয়ে কয়বার খোটা দিল আমায়। রসগোল্লা আমি না আনন্দিতা… (মূহুর্তে চুপ হয়ে গেল। আচমকা শিউরে উঠল।)
ক্যান্টিনে গিয়ে খাবারের অর্ডার দিল। নূরও তাড়াতাড়ি ভার্সিটি চলে এলো। বাসায় একা ভালো লাগছে না। আর ক্ষিদেও পেয়েছে খুব। দাদী দাদুও নেই যে সেখানে যাবে। নূর খাবারের উদ্দেশ্যে ক্যান্টিনে গেল। আফরান বিপরীতমুখী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
নূর — রিহাইন্না? অন্য কেউ তো হতে পারে। (হঠাৎ নজর পড়ল শার্টের হাতায়। কালো সুতোর ডিজাইন করা।) রিহানই তো। শার্টের হাতায় আমিই ডিজাইন করেছিলাম। অসভ্য অভদ্র নির্লজ্জ বেহায়া খাচ্চোর খাটাশ খবিশ পোলা। খাড়া আমি আইতাছি।
দ্রুত পায়ে হেটে গিয়ে মাথায় সজোরে থাপড়ান দিল। আফরান কপাল কুচকে তাকাল। নূর না তাকিয়েই আফরানের কাঁধে হাত দিল। ততক্ষণে আফরানের অর্ডার করা খাবার পরিবেশন করা হলো। ক্ষিদের চোটে নূর না থাকিয়েই একটা বার্গার নিয়ে কামড় বসিয়ে দিল। চিবুতে চিবুতে বলল।
নূর — কি রে উগান্ডার প্রেসিডেন্ট। বাকি উগান্ডাবাসীরা কোথায়?
পাশে ফিরতেই টাস্কি খেল। চোখ দুটো কোটর থেকে বেরিয়ে আসার উপক্রম হলো। আফরান ক্রুদ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নূরের দিকে। নূর কাঁধ থেকে হাত নামিয়ে জোর পূর্বক হাসার চেষ্টা করল। বার্গারের বাকি অংশ রেখে দিয়ে আবারও হাসলো। তবুও আফরানের চেহারার ভঙ্গিমা পরিবর্তন হলো না। নূর এবার মুখে দেওয়া বার্গারের অংশটুকু চুপচাপ খেয়ে নিল।
নূর — সরি। আমি ভেবেছিলাম অন্য কেউ।
নূর যেতে নিলে আফরান তার হাত চেপে ধরে।
আফরান — সব কিছু ভুলে তোমাকে ইগনোর করার চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু তুমি? তোমার তো গায়ে পড়ার শখ। উড়নচণ্ডীর মতো উড়ে এসে গায়ে পড়ার অভ্যাস।
নূর — কি বলতে চাইছেন আপনি? আমি ইচ্ছাকৃতভাবে আপনার সাথে ঝামেলা করি?
আফরান — তা নয়তো কি? সেইদিন রাস্তায় মিথ্যা নাটক করেছ। এরপর ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছ। এরপর না জেনে না শুনে গায়ে পড়ে ঝগড়া করেছ। এরপর ফুটবল ফুটো করে দিয়েছ। এসরের শুরু আমি করেছি? নাকি তুমি?
নূর অসহায় ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে। কারণ আফরান যা বলল সবই সত্যিই ছিল। জেনে না জেনে বিবাদের শুরু সেই করেছিল। পরক্ষণে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে আফরানের দিকে তাকাল।
নূর — আপনি মনে হয় সাদু সন্ন্যাসী। আপনি তো কিছুই করেনি। ভার্সিটির সবার সামনে কান ধরে উঠবস করতে বলেছেন। এরপর আমাদের মাথায় ডিম ফাটিয়ে ছিলেন।
আফরান — কারণ…..
রিহান — আফরান। আর কতক্ষণ লাগবে তোর। ওয়াসিম চিল্লিয়ে সবার কান খেয়ে ফেলছে। তাড়াতাড়ি আয়।
নূরকে দেখে রিহান হতচকিত হয়ে আছে। নূর অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। যেন চোখ দিয়েই রিহানকে ভস্ম করে দিবে। রিহান ভয়ে ঢোক গিলল। আফরান খাবার নিয়ে চলে গেল।
নূর — এটা তোর শার্ট না?
রিহান হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ালো। আর কিছু বলার পূর্বেই আফরানের ডাক পড়ল। রিহান দৌড়ে চলে গেল।
ঘন্টা খানেক পর আলিফা ছাড়া বাকিরা চলে এলো। নূর আলিফার কথা জিজ্ঞেস করতেই আলিফা ধুম ধাড়াম এট্রি নিল। সবুজ থ্রি-পিচ পরিধান করা। হাতে দুটি বই। চুল খোলা দিয়ে লক্কর ঝক্কর ভাবে এলো। নূর হাবাগোবা হয়ে তাকিয়ে আছে।
মেহের — কাল সারা দিনরাত কীসব মুভি দেখছে। সকালে সেজেগুজে রেডি হয়ে বই হাতে নিল।
নূর — বই হাতে নিল কেন? ব্যাগ কোথায়?
আলিফা — কালকে একটা মুভি দেখছি। নায়ক নায়িকা হেটে যায়। নায়িকা নায়কের সাথে ধাক্কা লেগে বই পড়ে যায়। তারপর বই উঠাতে গিয়ে নায়ক নায়িকার দিকে তাকাতেই প্রেমে হাবুডুবু খায়।
আমরিন — যদি সেদিনের মতো হয়? আরিফ স্ট্যাচু হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে? তোর দিকে না থাকায়?
আলিফা — তাই তো? তাহলে এই প্লান ক্যান্সেল। প্লান বি আছে।
সিমা — প্লান বি কী?
আলিফা — মোস্ট রোমেন্টিক সিন। এবার তো আরিফ তাকাবেই।
পুষ্প — কী তা তো বল।
আলিফা — দক্ষিণা বাতাসে, ওড়না উড়ে আকাশে। নায়কের মুখে পড়ে। এরপর লালালা মিউজিক বাজে। তারপর… তারপর…
সবাই একসাথে — তারপর কী?
আলিফা — ধিক তানা ধিক তানা রোমেন্টিক গান বাজে। রাস্তাঘাটে, বিল্ডিংয়ের পাশে, নরম ঘাসে লাফিয়ে লাফিয়ে নাচে।
মেয়েরা একে অপরের দিকে অট্টহাসি হাসতে লাগলো। কারো হাসি থামার নাম নেই। আলিফা সরু দৃষ্টিতে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে। কারো হাসি থামছে না।
সিমা — ওরে ফকিন্নি। লাফিয়ে লাফিয়ে….. ব্যাঙ নাচে। তুই একটা ব্যাঙ।
আলিফা — তোর…। ওই যে আমার ব্যাঙ থুক্কু নায়ক।
দ্বিতীয় তলায় বেলকনিতে আরিফ এবং আহিল দাঁড়িয়ে আছে। আহিল কথা বলতে বলতে হঠাৎ লক্ষ্য করল আমরিন সহ বাকিরা মাঠে দাঁড়িয়ে আছে। আহিল তাদের উদ্দেশ্যে হাত নেড়ে হাই দিব। আমরিনও প্রফুল্লিত হয়ে অনবরত হাত নাড়ছে। নিজের এমন আচরণে আমরিন বেশ অবাক হলো। সাথে লজ্জিতও হলো। ভাবছে হঠাৎ আহিলকে দেখে তার এতো খুশি লাগছে কেন? আলিফাও হাত নেড়ে হাই দিল। ইশারায় তাদের আসতে বলল। আহিল আসতে চাইলেও আরিফ বাঁধা দেয়। আহিল জানালো এখন তাদের ক্লাস আছে ক্লাস শেষে দেখা করবে।
একটানা তিন ঘন্টা ক্লাস করে মেয়েরা ক্লাস থেকে বেরিয়ে এলো। আলিফা মেহেরকে সামনে দাঁড় করালো। নিজে খানিকটা দূরে দাঁড়িয়ে ওড়না হাওয়ায় ছুড়ে দিল যাতে ওড়না উড়ে মেহেরের উপর পড়ে। কিন্তু ছুড়ে দিতেই ওড়না নিচে পড়ে যাচ্ছে। এসব করার মূল উদ্দেশ্য হলো আরিফের উপর ওড়না পড়ার প্রেকটিস করছে। আলিফার এসব আকাম কুকাম দেখে সবাই বিরক্ত প্রকাশ করছে৷ কেউ কিছু বললেই তাকে ধমক দেয়। তাই বাধ্য হয়ে তার আকামে ভাগিদার হচ্ছে।
পুষ্প — আলুর বস্তা। সিনেমায় ওড়না এমনি এমনি উড়ে না। ওসব এডিটিং করে দেখায়।
আলিফা — আইডিয়া! আমি দোতলায় উঠে দাঁড়াব।আরিফ এখানে নিচে দাঁড়াবে। উপর থেকে ওড়না ফেললে তার অবশ্যই আরিফের উপর পড়বে। বাহ্! বাহ্! আলু। ইউ আর গ্রেট।
নূর — এই মাইয়ার মাথায় এতো বুদ্ধি আসে কোত্থেকে। আগে তো মাথায় এতো বুদ্ধি ছিল না। আরিফের প্রেমে পড়ে মাথার কুল্লি খুলে গেছে৷ লোকে বলে প্রেমে নাকি মানুষ পাগল হয়ে যায়। কিন্তু এই আলুর দেখি হাড়ে হাড়ে বুদ্ধি বেড়ে গেল।
সবাই হাসতে লাগলো।
ক্লাস শেষে ছেলেরাও বেরিয়ে এলো। আমরিন, পুষ্প, সিমা তোরা এখানে দাঁড়া। আমরিনকে দেখে আহিল এমনিতেই এখানে ছুটে আসবে। আর আমি, নূর, মেহের উপরে যাচ্ছি।
আমরিন — আহিল আমার কাছে ছুটে আসবে কেন? (অবাক হয়ে)
আলিফা — (জিবে কামড় খেল) না মানে এখন তো তোরা ফ্রেন্ড তাই আর কি। আচ্ছা আমরা যায়।
আলিফা উপরে চলে গেল। আহিল আমরিনকে দেখে বাকিদের নিয়ে গেল সেদিকে।
আহিল — হাই গাইজ। কেমন আছ সবাই? (মেয়েরা কুশল বিনিময় করল। সবাইকে উদ্দেশ্য করে আহিল বলল) গাইজ। দেখ আমরা সবাই একই ভার্সিটিতে পড়ি। তাই কোন ঝামেলা না করে একসাথে মিলেমিশে থাকতে পারি না? আমাদের জন্য রোজ ভার্সিটিতে নানান বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। আমরা যদি একে অপরের সাথে ফ্রেন্ডশিপ করি তাহলে আমাদের ফ্রেন্ড সার্কেল বড় হবে। সবাই একসাথে আনন্দ হৈচৈ করব।
পুষ্প — আমার কোন সমস্যা নেই।
আমরিন — আমারও কোন সমস্যা নেই।
ওয়াসিম — আর কারো সমস্যা থাক না থাক মিস পিংকির থাকবে।
সিমা — আপনাকে কতবার বারণ করেছি আমার নাম পিংকি না। সিমা। ছোট্ট একটি নাম। এতেই আপনার সমস্যা?
আহিল — একটু আগেই আমি কি বললাম?
আফরান — যার সবচেয়ে বড় সমস্যা সে-ই তো নেই।মিস খিটখিট। সামনে এলেই তার খিটখিট শুরু।
আহিল — তোরা ভালো হবি না। আচ্ছা ফ্রেন্ডশিপ না কর। অন্তত ঝগড়া তো করিস না।
আরিফ কিছু একটা আভাস পাচ্ছে। পরিবেশ এতো শান্ত নিস্তব্ধ। এই যেন তুফান আসার পূর্বকালের শান্তি।
আহিল আমরিনের দিকে তাকাতেই ইশারায় উপরে দেখতে বলল। আহিল উপরে তাকিয়ে দেখে আলিফা। ডাকতে গেলেই আলিফা ঠোঁটে আঙুল দিয়ে চুপ করতে বলে। ইশারায় বলল আরিফকে সাইডে দাঁড় করাতে। আহিল হতভম্ব হয়ে তাকাল। আমরিন আহিলের কানে কানে বলল।
আমরিন — যা বলছে করুন। আর ফ্রী তে বিনোদন নিন।
বলে মুখ টিপে হাসছে। হঠাৎ নিজেকে আহিলের এতটা কাছে দেখে শিউরে উঠল। আহিলের দিকে তাকিয়ে দেখে সে চোখ বুজে আছে। আমরিন কাছে আসতেই এক প্রকার তড়িৎ শিহরণ অনুভব করল আহিল। আমরিনের মিষ্টভাষী কণ্ঠ যেন কানে সংগীতের ন্যায় দোল খাচ্ছে। তড়িঘড়ি আমরিন সরে এলো। লজ্জায় গাল দুটো লাল হয়ে গেল। আহিল চোখ খুলে আমরিনের দিকে তাকাতেই তার দম যেন আটকে গেল। লজ্জায় রাঙা চেহারা হৃদস্পন্দন থমকে গেল।
আলিফা — আরে ইয়ার। এই আহিলকে বলছি আরিফকে সাইডে আনতে। কিন্তু এই নিজেই প্রেমে ডুবে আছে। আমার প্রেম হবে কি করে?
নূর-মেহের — প্রেম? মানে?
আলিফা — আহিল আমরিনকে ভালবাসে।
নূর মেহের দুজনেই অবাক।
.
.
.
চলবে