#Ragging_To_Loving__2
#পর্বঃ- ১৮
#রিধিরা_নূর
নূর — মানে আহিল আর আমরিনের মধ্যে ইটিসপিটিস চলছে।
আলিফা — না। আহিলের দিক থেকে সামথিং সামথিং। কিন্তু আমরিনের দিক থেকে নাথিং। এখন আমার সামথিং সামথিং কে আরিফের এভরিথিং করতে হবে। কিন্তু এই আহিল্লা…. (চুল থেকে ক্লিপ খুলে আহিলের মাথায় মারল। আহিল মাথা চুলকিয়ে উপরে তাকিয়ে দেখে আলিফা ক্রুদ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আহিল জোর পূর্বক হেসে চোখের ইশারায় আস্বাস দিল।)
নূর — একটা বস্তা ফালাও এই আলু রে তুলে নাও। (উপরে হাত তুলে) না জানি আর কি কি দেখতে হবে।
মেহের — আরও অনেক কিছু দেখার বাকি আছে।
আহিল কথার ছলে আরিফকে একপাশে দাঁড় করালো। আহিল, আমরিন, সিমা, পুষ্প আড়চোখে আলিফার কান্ড দেখছে। আলিফা আলতো করে ওড়না আরিফের দিকে ধরে ছুড়ে দিল।
আলিফা — ওই ওড়না যাহ যাহ যাহ ওড়না যাহ যাহ যাহ। সিনেমার মতো করে তুই আরিফের উপর পড়ে যাহ। (গানের সুর ধরে।)
আলিফার গান শুনে নূর, মেহের হাসছে। লা লা লা লা লা লা লা লা লা। (একটু ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক দিলাম।) আচমকা সবার নজর পড়ল উড়ন্ত ওড়নার উপর। থমথমে পরিবেশে জমজমাট অবস্থা। সবাই হা হয়ে ওড়নার দিকে তাকিয়ে আছে। ওড়না আরিফের উপর পড়বে পড়বে ভাব। আরিফ চোখ মুখ কুচকে তাকিয়ে আছে পড়ন্ত ওড়নার দিকে। কিন্তু….. (ধুম তানা না না ধেরে রে না না) হঠাৎ এক দমকা হাওয়া এসে ওড়না অন্যদিকে উড়িয়ে নিয়ে গেল। উড়ে গিয়ে ওড়না আটকে গেল গাছের ডালে। সবার উপর যেন ঠাস করে ঠাডা পরল।
নূর — দক্ষিণা বাতাসে, ওড়না উড়ে আকাশে। দমকা হাওয়ার তালে তালে, ওড়না আটকে গেল গাছের ডালে। ওরে ওরে বাটপার ওড়না রে, কেউ আমার হাসি থামা রে।
হাসতে হাসতে মেঝেতে বসে গড়াগড়ি খাচ্ছে। তার সাথে তাল মিলিয়ে মেহেরও হাসছে।নিচে দাঁড়িয়ে বাকিরা নিস্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সবার নজর গাছে ঝুলে থাকা ওড়নার উপর। থমথমে পরিবেশের মাঝে বিকট হাসির শব্দে ছেলেরা কেঁপে উঠল। ওয়াসিম এক লাফে ইয়াশকে জড়িয়ে ধরল। তার বিপরীতে পুষ্প, আমরিন, সিমা উচ্চস্বরে হাসছে। ছেলেরা কিছুই বুঝতে পারছে না। হঠাৎ এরা হাসছে কেন?
আহিল — হাসছো কেন তোমরা?
আলিফা রাগ করবে নাকি দুঃখ প্রকাশ করবে কিছুই বুঝতে পারছে না। একদিকে আরিফ এবং বাতাসের উপর রাগ হচ্ছে, তো অন্যদিকে প্রিয় ওড়নার জন্য দুঃখ লাগছে। রাগের মধ্যে দুঃখ চাপা পড়ে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করল। আলিফা রেগে হনহনিয়ে নিচে নেমে গেল। তার পিছন পিছন মেহেরও নেমে গেল। নূর হামাগুড়ি দিয়ে সিড়ি পর্যন্ত এলো। হাসির ঠেলায় সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারছে না। সিড়ির রেলিং-এর উপর বসে সুরসুর করে নেমে গেল।
আলিফা রেগে আরিফের মুখোমুখি হয়ে দাঁড়ালো। আরিফ কোন ভাবান্তর না করে অন্যপাশে মুখ ফিরিয়ে আছে। এতে আলিফার রাগ যেন আরও বেড়ে গেল। আরিফের হাত ধরে টেনে হিছড়ে নিয়ে গেল।
রিহান — আই থিংক শী লাইক আরিফ।
পুষ্প — ইউ থিংক? এটাই সত্যি। আলিফা আরিফ ভাইয়াকে পছন্দ করে। এখন বোধহয় পছন্দের চেয়েও বেশি। কারণ আরিফ ভাইয়ার প্রতি আলিফার পাগলামি দিন দিন বেড়েই চলেছে।
রিহান — সত্যি! আরিফ হলো একগুঁয়ে স্বভাবের। ঘেঁচড়া।
পুষ্প — আর আলিফা এক নাম্বারের ছ্যাচড়া।
রিহান-পুষ্প একসাথে বলে উঠল, “এক দিকে ঘেঁচড়া, অন্যদিকে ছ্যাচড়া। হোয়াট এ কাপল।” দুজনে একসাথে হাই ফাইভ দিয়ে গিয়ে হঠাৎ থেমে গেল।
রিহান — আচ্ছা অন্যদের মাঝে নাহয় ঝামেলা আছে। আমাদের মাঝে তো কোন ঝামেলা নেই। আমরা ফ্রেন্ড হতে পারি? (হাত বাড়িয়ে)
পুষ্প আড়চোখে আফরানের দিকে তাকাল। সে আর যায় হোক বন্ধু এবং বোনের মাঝে ঘনিষ্ঠতা এক ভাই কখনো মেনে নেই না। আফরানের ক্ষেত্রেও তাই। এক দিকে তার বেস্টফ্রেন্ড, অন্যদিকে আপন ছোট বোন। আফরান পলক ফেলে আশ্বাস দিল।
পুষ্প — অবশ্যই।
.
.
আলিফা আরিফকে নিয়ে গাছের নিচে দাঁড়ালো। আলিফা ক্রুদ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে। আরিফ ভাবলেশহীন দাঁড়িয়ে আছে।
আলিফা — সমস্যা কি আপনার? (রেগে)
আরিফ — আমার কোন সমস্যা নেই।
আলিফা — আপনার যদি সমস্যা না থাকে আমি যে আপনার জন্য এতকিছু করছি দেখতে পাচ্ছেন না।
আরিফ — দেখতে পাচ্ছি বলেই উপেক্ষা করছি। (বলে চলে যেতে নিলেই আলিফা সামনে এসে দাঁড়ালো।)
আলিফা — (ক্রাশ বলে দেমাগ দেখাচ্ছে তাই না। কিন্তু আমার অনুভূতি যে শুধু ক্রাশ বা পছন্দের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এর উর্ধ্বে। অনুভূতি আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না। সে তো অবাধ্য হয়ে চলে। কখন কার জন্য কেমন অনুভব করি তা আমরা পূর্ব থেকে সিদ্ধান্ত নেয় না। ব্যাস হয়ে যায়।)
আলিফা ভাবনায় মগ্ন। এরই মাঝে আরিফ তাকে উপেক্ষা করে চলে যায়। আলিফা মাথা উঁচু করে গাছের ডালে ঝুলে থাকা ওড়নার দিকে তাকিয়ে আছে।
.
.
নূর হাসতে হাসতে এসে আলিফার কাছে গেল। ভাবলো এই সুযোগে আলিফাকে একটু পঁচানো যাক। কিন্তু কিছু বলে গিয়েও থেমে যায়। আলিফার চেহারা মলিন দেখে নূরের চেহারার ভঙ্গিমা পাল্টে যায়। নূর জিজ্ঞেস করায় আলিফা “কিছু না” বলে মলিন হেসে চলে যায়।
আলিফা এসে বাকিদের সাথে কথা বলছে। আড়চোখে আরিফের দিকে তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিল।
আমরিন — মেহের আমার সাথে চল লাইব্রেরী। বই ফেরত দিতে হবে।
আহিল — আমি যায়? না মানে আমারও কিছু কাজ আছে। তাই।
আমরিন সায় দিল। দুজনেই পাশাপাশি হাটছে। আহিল ভাবছে কীভাবে কথা শুরু করবে। গভীর নিশ্বাস নিয়ে আমরিনের দিকে তাকাতেই নিশ্বাস আটকে গেল। ছোট ছোট একগুচ্ছ চুল এলোমেলো হয়ে আমরিনের গাল ছুঁয়ে পড়ছে। জ্যোৎস্নায় পেঁজা তুলোর মতো মেঘ আলতো করে ছুঁয়ে দেওয়া অপরূপ দৃশ্য সে যেন দিনের আলোয় দেখতে পাচ্ছে। নিষ্পলক চোখে এই দৃশ্য উপভোগ করছে। আহিল আমরিনের পাশাপাশি হাটছে ঠিকই কিন্তু আশেপাশের কোন খেয়াল তার নেই। হাটতে হাটতে আচমকা দেয়ালের সাথে কপালে আঘাত লাগে। আমরিন কেঁপে উঠল। তড়িঘড়ি আহিলের কপাল ঘেষতে লাগলো।
আমরিন — বেশি লাগেনি তো? ব্যাথা করছে? কি করেন আপনি? হাটার সময় লক্ষ্য করে হাটতে পারেন না? কোন ভাবনায় ডুবে আছেন?
কপালে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আর এক নাগাড়ে বলেই যাচ্ছে। আহিল নীরবে সব শুনছে। আমরিনের বলা প্রতিটি শব্দ যেন তাকে মন্ত্রের ন্যায় সম্মোহন করছে৷ আঘাত পাওয়া সত্ত্বেও ব্যাথা অনুভব হচ্ছে না। বরং তার ইচ্ছে করছে আরও দুই-তিন বার দেয়ালে মাথা ঠুকা দিতে। (কিন্তু ভাই তখন তো একেবারে কোমায় চলে যাবি।) আমরিন বিড়বিড় করতে করতে আহিলের দিকে তাকাল। কেমন যেন ঘোর লাগা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। সেই ঘোরে যেন আমরিন নিজেও বিলীন হয়ে গেল।
আফরান — উহুম উহুম। আমার মনে হয় তোমরা ভুল রুমে যাচ্ছ। এটা লাইব্রেরী। কেমিস্ট্রি ল্যাব ওই যে ডান দিকে।
তড়িঘড়ি দুজনে পিছিয়ে গেল। আমরিন লজ্জায় উল্টো দিকে দৌড় দিল। আফরান দুষ্টু হাসি দিয়ে ভ্রু নাচিয়ে আহিলের দিকে তাকাল। আহিল চোখ দুটো সরু করে বলল।
আহিল — রোং টাইমে রোং এন্ট্রি নিলি।
আফরান হেসে দিল।
.
.
.
চলবে