Ragging To Loving 2পর্ব-২

0
4203

#Ragging_To_Loving__2
#পর্বঃ- ২
#রিধিরা_নূর

ঘরের আঙিনায় বেতের তৈরি চেয়ারে বসে আছেন একজন প্রবীণ ব্যক্তি। সামনে অবস্থিত বেতের তৈরি টেবিলে বিদ্যমান গরম চায়ের কাপ। চা থেকে উঠা গরম ধোঁয়া বাষ্প হয়ে বিলীন হয়ে গেল বাতাসের ছোঁয়ায়। চায়ের কাপ হাত নিতেই পাশ থেকে প্রতিধ্বনি হয়ে ভেসে এলো এক তরুণীর কণ্ঠ। “বিএফ”। তার চিৎকারে হাত থেকে চায়ের কাপটি ছুটে পড়ে গেল মেঝেতে। একটুর জন্য পায়ে পড়ে নি। কিন্তু লোকটির মুখে রাগ-ক্ষোভ বা বিরক্তি নয় বরং খুশির ঝলক ফুটে উঠেছে। গুটিসুটি পায়ে দাঁড়িয়ে আনন্দিত হাসি দিয়ে ফিরে তাকাল। দুই হাত মেলে দিয়ে বলে উঠল ” জিএফ”। তরুণীটি দৌড়ে এসে লোকটিকে জড়িয়ে ধরল। হাস্য উজ্জ্বল চেহারা তার। সে আর কেউ নয় বরং নূর। কাপ ভাঙার আওয়াজে তড়িঘড়ি ঘর থেকে বেরিয়ে এলেন একজন প্রবীণ মহিলা। তিনি হলেন নূরির দাদী। তবে তার বাবার চাচী হোন। এবং লোকটি হলেন নূরের দাদা।

দাদী — কি হয়েছে? কীসের আওয়াজ ছিল? (নূরকে দেখে থেমে গেলেন।)

নূর — সতিন… (দাদুকে ছেড়ে দাদীকে জড়িয়ে ধরল) কেমন আছ তোমরা? তুমি ভালোই আছ আমাকে ছাড়া। আমার বিএফকে নিয়ে। হুহ্।

দাদী — তাই না। (নূরির কান মুড়িয়ে) তোমাকে ছাড়া যে এই ঘরটা নিষ্প্রাণ। তোমার দাদু এবং আমি অধীর আগ্রহে দুয়ারের পানে তাকিয়ে থাকি কবে আমাদের উড়ু পাখিটা আসবে এবং আনন্দে ঘরটা ভরিয়ে দিবে।

নূর — আহারে। বুঝি বুঝি সব বুঝি। বিএফ তুমি মোটেও সতিনের কথা শুনবে না বুঝছ। এসব তোমাকে পটানোর ধান্দা।

দুজনে খিলখিল করে হেসে উঠল। নূরও তাদের সাথে তাল মিলিয়ে হেসে উঠল। দাদী দাদু সাদরে নূরকে ভেতরে নিয়ে গেল।

দাদী দাদু একা থাকেন। তাদের একমাত্র সন্তান ইমরান রহমান স্ত্রী এবং সন্তান সন্ততি নিয়ে বিদেশ থাকেন। দাদু ছেলের চাকরির জন্য বিদেশে পাঠান। দাদী দাদু না জানিয়ে সেখানে একজন পরদেশী নারীকে বিবাহ করেন। প্রথমে নারাজ হলেও পরবর্তীতে মেনে নেন। কিন্তু ঝামেলা বাঁধে তখন যখন ই তারা দাবি করে বিদেশেই স্যাটল হবেন। কিন্তু এতে দাদু নারাজ হোন। কারণ নিজ দেশে আত্মীয় স্বজন রয়েছে। নানান স্মৃতি জুড়ে আছে। এসব থেকে বিছিন্ন হতে চান না। তাই ইমরান তাদের দেশে রেখেই বিদেশ চলে যায়। যাওয়ার পর কিছু দিন দাদী দাদুর খোঁজ খবর নিলেও পরবর্তীতে উপেক্ষা করে। না কোন ফোন কল, না কোন খোঁজ খবর। নূর জন্মের পূর্বের তার দাদা দাদী ইন্তেকাল করেন। তাই দাদী দাদুর কাছেই সেই আদর পায়। নূরির বাড়ি এবং দাদুর বাড়ি সামনাসামনি। এক পা ফেলতেই এই ঘর থেকে ওই ঘরে পৌঁছে যায়।
.
.
রিহান কক্ষে প্রবেশ করতেই কিছু একটা আভাস পেল। কিন্তু সব তো আগের মতোই আছে। কোন হেরফের নেই৷ কিন্তু তার মাঝেও যেন কিছু খটকা লাগছে। চোখ বুলিয়ে সমস্ত কক্ষ দেখে নিল। না তো সবই ঠিক আছে। কক্ষ থেকে বের হতে পিছন ফিরে খেল এক ধাক্কা। এক ধাক্কায় একেবারে মেঝেতে লুটিয়ে পড়লো। হাতে এক বড় বাক্স নিয়ে দরজায় একজন কিশোরী। বয়স তার ১৪-১৫ হবে। দুপাশে ঝুলে আছে লম্বা বিনুনি। রিহানকে পড়ে যেতে দেখে উচ্চশব্দে হেসে উঠল।

রিহান — তন্বী। দেখে চলতে পারিস না। আহ্ আমার কোমর…।

তন্বী — ওহ হ্যালো আগে নিজ চরকায় তেল দাও। নিজে না দেখেই চলছ আর আমাকে বলছ। এখন কথা বলার সময় নেই। তাড়াতাড়ি নিজের জিনিসপত্র গুছিয়ে টুচুক করে বেরিয়ে পড়। রুম গোছাতে হবে। অনেক কাজ আমার।

রিহান — মানে কি! (বিস্মিত হয়ে)

তন্বী — মানে কি বুঝ না। এই রুমটা আফুনির। তুমি যাও অন্য রুমে নিজের আশ্রয় কেন্দ্র তৈরি কর।

রিহান — আতংক আসার পূর্বেই তার পূর্বাভাস শুরু হয়ে গেল। আফুনির চামচি কোথাকার।

তন্বী — এই ভাইয়া কি বললে তুমি? (রেগে) দাঁড়াও আফুনি আসুক আমি বলে দিব তুমি তাকে আতংক বলেছ। আর আমাকে তার চামচি। তারপর দেখ তোমার কি হাল হয়। (ধমক দিয়ে)

রিহান — এহেহেহে। (জোর পূর্বক হেসে) আরে কি যে বলিস না। তোরা দুইজন তো আমার জান, আমার প্রাণ, আমার কলিজা, হাড্ডি, নাড়ি, বুড়ি, আমার হাগু… (মুখ চেপে ধরল) না মানে আমার হার্ট। আমার বোনু তোরা। হেহেহে।

তন্বী ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বাইরে যাওয়ার ইশারা করল। রিহান রেগে হনহনিয়ে চলে গেল। তন্বী হাসছে।
_____________________________

আফরান হাত পা মেলে উপুড় হয়ে শুয়ে আছে। হঠাৎ বেপু বাঁশির আওয়াজে ধড়ফড়িয়ে লাফিয়ে উঠল।

আফরান — আহহহ। (চোখ কচলিয়ে তাকিয়ে দেখে লাল জামা পরনে এক মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। দুই তিন বার পলক ফেলে ভালো করে তাকিয়ে দেখে পুষ্প। তার এক হাতে বাঁশি অন্য হাতে কোমরে। ক্লোজ আপ মার্কা হাসি দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।) শান্তির দিন শেষ, অশান্তির বাংলাদেশ। এবার আর ঘরে টিকে থাকা যাবে না। (দুই হাত মেলে আবারও লুটিয়ে পড়লো বিছানায়।)

পুষ্প — এই ভাইয়া উঠ। (আফরানের পা ধরে টানছে) উঠ বলছি। আরে তোমার একমাত্র বোন বাড়ি ফিরে এলো আর তোমার কোন ভাবান্তর নেই। বাহ ভাই বাহ। এই তুমি আমার ভাই। ছিঃ ভাইয়া ছিঃ। আমি জানতাম তুমি আমার আপন ভাই না। আগে সন্দেহ ছিল এখন একেবারে নিশ্চিত। আব্বু আম্মু তোমাকে ডাস্টবিন থেকে কুড়িয়ে এনেছে।

আফরান এক লাফে উঠে বসলো। আশ্চর্যচকিত হয়ে তাকিয়ে আছে পুষ্পর দিকে।

আফরান — এটা আবার কোন ধরনের লজিক। উফফ ডিস্টার্ব করিস না তো। ভীষণ ক্লান্ত আজ। যা তুইও জার্নি করে এসেছিস রুমে গিয়ে রেস্ট নে।

পুষ্প বিরক্ত হয়ে চলে গেল। রুমে গিয়ে দিল এক চিৎকার। তার আওয়াজ শুনে আফরান মুচকি হেসে শুয়ে পড়ল৷ পুষ্প আসবে বলে আফরান তার রুমে গিফট রেখেছিল। তা দেখেই পুষ্প চিল্লিয়ে উঠলো।

সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলো। তন্বী অধীর আগ্রহে ড্রয়িংরুমে বসে আছে। তার নজর দুয়ারে। কলিংবেল বাজতেই ছুটে গেল। রিহান সবে মাত্র নুডলস চামচে নিয়ে মুখে তুলেছিল। কলিংবেল বাজতে হাত থেকে চামচ ফসকে পড়ে গেল।

রিহান — এসে গেছে আতংক।

তন্বী — আফুনি….. (দরজা খুলতেই এক লাফে জড়িয়ে ধরল। কুশল বিনিময় করে ভেতরে প্রবেশ করল।)

ভেতরে এসেই রিহানের মাথায় টোকা দিয়ে তার বাটি থেকে নুডলস নিয়ে মুখে দিল।

রিহান — নূউউরররর। (রেগে)

নূর — হ্যালো ব্রাদার। হাউ আর ইউ? আই এম ফাইন থ্যাংক ইউ। ওকে বাই। (রিহানকে কিছু বলতে না দিয়ে নিজেই বকবক করে চলে গেল) আম্মুউউউ। কেমন আছো?

শাহারা হায়দার — ভালো আছি। তুই কেমন আছিস? কত শুকিয়ে গিয়েছিস।

নূর — আরে….

রিহান — কোথায় শুকিয়েছে। বরং আরও ভুটকি হয়ে গিয়েছে।

নূর — এই আমাকে এই নামে ডাকবি না। (রেগে)

রিহান — ডাকলে কি করবি?

নূর — তোর ইজ্জতের চায়না গ্রাস কইরা দিমু।

শাহারা হায়দার — শুরু হয়ে গেল। (দীর্ঘ নিশ্বাস ছেড়ে চলে গেল)

ঘন্টা খানেক পর নূরির বাবা জুনায়েদ হায়দার অফিস থেকে ফিরে এলেন। বাবাকে দেখে আত্মহারা হয়ে নূর দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরল। বহুদিন পর মেয়েকে পেয়ে জুনায়েদ সাহেবের চঞ্চল মন শান্ত হলো। মেয়ে শহর ছেড়ে এতো দূর অন্য শহরে থাকলে কোন বাবা-ই বা শান্তিতে থাকবে। তিনি চট্টগ্রামে থাকলেও তার মনটা ছিল ঢাকায় মেয়ের কাছে। প্রতিনিয়ত ভয়ে থাকতো এই ভেবে মেয়েটা কেমন আছে, কি করছে,কীভাবে এত দূর একটি শহরে একা রয়েছে। মেয়ের বাবা বলে কথা প্রতিনিয়ত মেয়ের সুরক্ষার চিন্তায় মগ্ন থাকে। আজ যখন জানতে পারলেন নূর স্থায়ী ভাবে চট্টগ্রাম ফিরে আসবে তার অস্থির মন শান্ত হলো।

নূর — কেমন যেন মিষ্টি ঘ্রাণ পাচ্ছি। (চোখ বুজে ঘ্রাণ নিচ্ছে) আহহহ সন্দেশ! (চোখ খুলে পিছন ফিরে দেখে তন্বীর হাতে একটি ব্যাগ।) এটা কোত্থেকে এলো? বাবা এনেছে? আমি দেখলাম না কেন?

রিহান — রাক্ষসী একটা। মিষ্টি দেখলেই হলো। তোর কাছ থেকে মিষ্টি লুকানো অসম্ভব।
.
.
রাতের খাবার শেষে নূর ও তন্বী গেল রুমে। জি দুই বোন মিলে রিহানের রুম দখলে নিয়ে নিল। কারণ এই রুমের পাশেই রয়েছে তাদের বাগিচা। জানালা খুললে হরেকরকম ফুলের সুবাস ছড়িয়ে পড়ে।

দুই মাস কেটে গেল _____________
ভিডিও কলে সব বান্ধবীর আলাপ চলছে

আলিফা — বাহ্! বাহ্! খুব ভালো। আমাকে কেউ ভালবাসে না। কেউ আমাকে মিসও করে না। আজ আমি চট্টগ্রামে নেই বলে।

নূর — ঢং একটু কম কর। তুই আর মেহের কবে আসবি চট্টগ্রামে? আর মেহেরের বাবার কেমন আছেন? আংকেল অসুস্থ হওয়ায় আমাদের সাথে আসতে পারিস নি। এখন কি অবস্থা?

আলিফা — চাচু এখন আগের চেয়ে সুস্থ আছেন। মেহের ভীষণ চিন্তিত। একে তো তার পড়াশোনা নিয়ে টানাপোড়া এর উপর চাচুর অসুস্থতা। পাবলিক ভার্সিটিতে চান্স না পেলে হয়তো তার পড়াশোনায় ফুল স্টপ লেগে যাবে।

আমরিন — মেহের কোথায়?

আলিফা — চাচুর সাথে ক্লিনিকে গিয়েছে।

সিমা — আমরাও চেষ্টা করছি সবাই যাতে একই ভার্সিটিতে এডমিশন নিতে পারি।

পুষ্প — এই আমার ভাইয়া যে ভার্সিটিতে পড়ে সেখানে তার অনেক নাম। ভাইয়াকে বলে আমরা সবাই একসাথে সেই ভার্সিটিতে এডমিশন নিতে পারি।

নূর — মোটেও না। এমন হলে কোন স্বাধীনতায় পাবি না। একটু এদিক ওদিক হেরফের হলেই নানান রকম শাসন করবে। তাই আর যায় হোক ভাই-বোন, খালা-খালু, চাচা-চাচি পড়ে এমন ভার্সিটিতে এডমিশন নিব না। ওকে?

পুষ্প — হুম ওকে।

.
.
.

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here