#Ragging_To_Loving__2
#পর্বঃ- ২৪ (২য় অংশ)
#রিধিরা_নূর
সবার চোখের আড়ালে পার্লি পা টিপে টিপে বাসের কাছে যায়। বিপরীত পাশে গিয়ে দেখে কয়েকজন দাঁড়িয়ে আছে। বিপরীতমুখী হয়ে একজন তরুণ দাঁড়িয়ে আছে। পার্লি এগিয়ে গিয়ে দেখে আরফি। এক রাশ আনন্দের হাসি দিয়ে কাছে গেল।
পার্লি — হাই! (আরফিকে)
আরফি — জি? বলুন। (না চেনে)
পার্লি — আমাকে চিনতে পেরেছ? আমি পার্লি।
আরফি — দুঃখিত আমি ঠিক মনে করতে পারছি না। কে আপনি?
কথাটা যেন বুক চিরে বিঁধে গেল। হাস্যজ্বল চেহারাটা মূহুর্তেই মলিন হয়ে গেল। কাঁপানো স্বরে “ওহ্!” বলে পিছন দিকে হাটা ধরল। দু পা এগিয়ে আসতেই আরফি পিছন থেকে ডাক দিল।
আরফি — এই দাঁড়াও। (পার্লি ফিরে তাকাল) বাসে আমাদের পরিচয় হয়েছিল। তাই না? (পার্লি হেসে মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো) আসলে অনেক ঝামেলার মাঝে কাজ করতে হয় তাই সবকিছু মনে থাকে না।
পার্লি — ইটস ওকে। তা এখানে কীভাবে?
আরফি — ওই যে সামনে দেখছ। ওটা একটা প্রাইভেট কোম্পানি। সে কোম্পানির স্টাফদের নিয়ে আগামী মাসে ট্যুর আয়োজন করা হয়েছে। বান্দরবান। এখানে এসেছি তাদের কিছু তথ্য জানিয়ে দিতে।
পার্লি — ওহ্!
একজন এসে আরফিকে ডেকে নিয়ে গেল। পার্লিও চলে এলো। আসার পূর্বে বাসে ঝুলানো ব্যানারের ছবি তুলে নিল। “””
পার্লি — এখন আমিও যেতে চায় সেই ট্যুরে। (করুণ স্বরে)
নূর — কিন্তু সেটা তো একটি অফিশিয়াল ট্যুর। বাইরের লোককে অনুমতি দিবে?
পার্লি — আমি এতকিছু জানি না। আমি যাব মানে যাব। এন্ড দ্যাটস ফাইনাল। আমার ফোন কোথায়?
বিছানা থেকে ফোন নিয়ে গ্যালারিতে ছবি দেখছে। বাসের ব্যানারের ছবি। আয়োজকদের নামের পাশে তাদের ফোন নাম্বার আছে। আরফির নামের পাশে তার নাম্বার আছে। পার্লি ফোন দিল। দুই বার বিজি ছিল। কিন্তু পার্লি থামবার পাত্রী নয়। অনবরত ফোন দিয়েই চলেছে। এবার রিং হলো। এতো রাতে আননোন নাম্বার দেখে আরফি ফোন রিসিভ করল না। পর পর তিন বার ফোন দেওয়ার পর রিসিভ করল। কিছু বলার পূর্বেই শুরু হলো পার্লির ঝাড়ি।
পার্লি — কি সমস্যা? কখন থেকে ফোন করছি। রিংটোনের আওয়াজ শুনতে পাচ্ছ না? একটা মানুষ প্রয়োজনেই তো ফোন দেয় নাকি।
আরফি — এক্সকিউজ মি? কে আপনি? হঠাৎ ফোন দিয়ে এসব বলছেন?
পার্লি — (জিবে কামড় খেল) সরি। আসলে প্রয়োজনের সময় যখন কেউ ফোন ধরে না আমার ভীষণ রাগ হয়। আমি পার্লি। বিকেলে দেখা হয়েছিল। মনে আছে নাকি আবার ভুলে গিয়েছ?
আরফি — (মৃদু হাসলো) মনে আছে। কিন্তু আমার নাম্বার পেয়েছ কোথায়?
পার্লি — পেয়েছি কোথাও না কোথাও। কথা না পেঁচিয়ে আসল কথায় আসি। খুবই গুরুত্বপূর্ণ কথা ছিল৷ আসলে আমি বানর বনের ট্যুরে তোমাদের সাথে যেতে চায়।
আরফি — (উচ্চস্বরে হাসলো) বানর বন না বান্দরবান। এই এক মিনিট। কি বললে? আমাদের সাথে যাবে। এটা সম্ভব নয়। এটি একটি অফিশিয়াল ট্যুর। কোম্পানির স্টাফ ছাড়া বাইরের লোক এলাউড না।
পার্লি — আয়োজক হিসেবে তোমরা তো যাচ্ছ। আমিও তোমাদের হয়ে যাব।
আরফি — শোন। এটা আমাদের নিয়মের বাইরে। শুধু বিশেষ প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত লোকদের এই দায়িত্ব দেওয়া হয়। বান্দরবান পার্বত্য এলাকা। সেখান অনেক বিষয় সম্পর্কে জানতে হয়। প্রশিক্ষণ নিতে হয়। যাতে করে ট্যুরিস্টদের সাহায্য করতে পারে৷ তাছাড়া আমি তোমার সম্পর্কে জানিই বা কতটুকু। এবং তুমিই বা আমাকে জানো কতটুকু। দুই দিনের পরিচয় মাত্র। এভাবে অচেনা, অজানা মানুষের সাথে যাওয়া সুরক্ষিত নয়। আই এম সরি। কিন্তু আমি তোমাকে নিতে পারব না।
পার্লি — এটা ঠিক আমি তোমাকে চিনি না, জানি না। তুমিও।আমার সম্পর্কে জানো না। তাই কোন ধরনের রিস্ক নিতে চাইছ না। কিন্তু আমি একজন আত্মনির্ভরশীল মেয়ে। নিজের দায়িত্ব নিজে নিতে জানি। সিঙ্গাপুরে একা একা অনেক ট্রাভেল করেছি। এখানকার জায়গা সম্পর্কে জানা নেই। তাই একা যেতে পারছি না। তোমাকে দেখে কেন জানি বিশস্ত মনে হলো। তাই বললাম।
আরফি — ওটা সিঙ্গাপুর। উন্নত একটি দেশ। সেখানকার পরিবেশ এবং বাংলাদেশের পরিবেশ অনেক তফাৎ। এবং তোমার পরিবার? তোমার যদি কিছু হয়ে যায় তার জবাবদিহিতা কে দিবে তোমার পরিবারকে।
পার্লি — আমার পরিবারকে আমি ম্যানেজ করে নিব। তুমি শুধু বল আমাকে নিয়ে যাবে কি না?
আরফি — সরি। আই কান্ট।
পার্লি — আচ্ছা যদি আমার পরিবার নিজেই তোমাকে বলে। আমাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য। তাহলে নিয়ে যাবে?
আরফি — নো। এভাবে হোক বা ওভাবে। এটা আমাদের রুলসের বাইরে।
পার্লি — তোমার রুলসের…. ঠিক আছে। তুমি নিবে না তো। আমি একাই যাব। এবং সবাইকে জানিয়ে যাব আরফি রেজওয়ান আমাকে নিয়ে গিয়েছে। যদি আমার কিছু হয় তাহলে তার দায়ভার তোমার উপর হবে। ওকে? (ধমক দিয়ে)
আরফি — তুমি পাগল নাকি? কি যা তা বলছ? একা ঘর থেকে বের হওয়াও বিপদজনক। আর তুমি বান্দরবান যাবে বলছ! মাথা ঠিক আছে তোমার?
পার্লি — তাহলে নিয়ে যাও না প্লিজ। প্লিজ প্লিজ প্লিজ। তুমি যা-ই বলবে তাই করব। যত কাজ, যত পরিশ্রম করার সব করব। বাট আই রিয়েলি ওয়ান্ট টু গো। প্লিজ। (করুণ স্বরে)
ধমক থেকে হঠাৎ নম্র স্বর শুনে আরফির মনটা নরম হয়ে গেল। বিভ্রান্তিতে পড়ল। কি করবে? নিয়ে যাবে? কি না? যদি নিয়ে যায় তাহলে এক বিপদ। না নিয়ে গেলে আরও বড় বিপদ। নিয়ে গেলে অন্তত নিজ দায়িত্বে দেখা শোনা করতে পারবে। একা গেলে বিপদ হতে পারে। এবং তার দায়ভার আরফির উপরই পড়বে। তার চেয়ে বরং নিয়েই যায়। পার্লি নখ কামড়াতে লাগলো।
আরফি — ঠিক আছে নিয়ে যাব।
পার্লি — ইয়াপ্পিইইই। (লাফাতে লাগলো)
আরফি — থাম। থাম। আগে পুরো কথা শুন। (পার্লি থেমে ধ্যান দিল) নিয়ে যাব কিন্তু এক শর্তে। তোমাকে আমাদের সাথে আয়োজক হয়ে যেতে হবে। আয়োজনের সব কাজে সাহায্য করতে হবে। আমাদের টিমে আরও কয়েকজন মেয়ে আছে তাই তোমার চিন্তা করতে হবে। আমাকে কোন বিষয়ে বলতে না পারলে তাদের বল। আর হ্যাঁ কাল সকাল দশটায় আমার সাথে দেখা কর। যেখানে আজ দেখা হয়েছিল।
পার্লি — ওকে ডান। থ্যাংক ইউ। থ্যাংক ইউ। থ্যাংক ইউ সো মাচ। লাভ ইউ বাই। (ফোন কেটে দিল)
পরক্ষণে চোখ বড় বড় করে ফোনের দিকে তাকাল। হঠাৎ খেয়াল হলো সে মাত্রই আরফিকে কি বলল। উত্তেজনার ঠেলায় মুখ ফসকে বেরিয়ে গেল। অপরদিকে আরফিও নিস্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কি বলল মেয়েটা! শুকনো ঢোক গিলল। মেসেজের টুং আওয়াজে ধ্যান ভাঙল। “সরি। আমি আসলে সেভাবে বলিনি। এক্সাইটমেন্টে মুখ ফসকে বেরিয়ে গেল।” দুজনেই বেশ লজ্জা পেল। আরফিও কি বলবে বুঝতে পারছে না। “ইটস ওকে।” মেসেজ পাঠিয়ে দিল। দুজনেই স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়ল।
এতো এক্সাইটমেন্ট পার্লি নিজের মধ্যে সামলে রাখতে পারছে না। নূরকে জানানোর জন্য যেই না তার কাছে গেল দেখে নূর চিৎপটাং হয়ে শুয়ে আছে। হাত পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে ঘুমে বিভোর। পার্লি হেসে উঠল। সোজা করে শুয়ে দিল। চাদর মুড়িয়ে দিল গায়ে। নিজেও তার পাশে শুয়ে গেল। লাইট অফ করতেই ঠাস করে মুখের উপর নূরের হাত পড়ল। হাত সরিয়ে অপর দিকে ঘুরিয়ে দিল। রাত যত গভীর হয় নূরের অত্যাচারের প্রকোপ পার্লির উপর আরও প্রখর হয়। কখনও পা তুলে দেয়, কখনও হাত তুলে দেয়।
সকালে সোনালি রোদের আলো পার্লির উপর পড়তেই ঘুম ভাঙল। আড়মোড়া ভেঙে ধীরে ধীরে শোয়া থেকে উঠছে। উঠে বসার পূর্বেই ধপাস করে খাট থেকে পড়ে গেল। মেঝেতে চিৎপটাং হয়ে পড়ে আছে।
পার্লি — আহ্! আমার কোমর শেষ। (চোখ খুলে তাকিয়ে দেখে তার পায়ের পাশে নূরের মাথা পড়ে আছে। পা দুটো বিছানায়) কি হবে এই মেয়েটার। সমবেদনা রইলো তোমার বরের জন্য।
উঠে ওয়াশরুমে গেল। ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে নূর এখনো সেই অবস্থায় পড়ে আছে। টেনে তুললো। ঘুম ঘুম চোখে তাকিয়ে আবারও ঘুমোতে নিলে পার্লির এক ঝাড়িতে সোজা হয়ে বসে। সবাই একসাথে নাশতা করল। আজ ছুটির দিন তাই আর ভার্সিটি গেল না। পার্লিকে নিয়ে নূর তার বাগিচায় গেল। নূর গাছে পানি দিচ্ছে এবং পার্লি গতরাতের কাহিনী বলছে। পার্লির কথা শুনে নূর হাসছে এবং আফসোস করছে। তারও খুব ইচ্ছে ট্রাভেল করার। কিন্তু সে পার্লির মতো আত্মনির্ভরশীল নয়। এবং পরিবারের নানান বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
সাড়ে নয়টা বাজতেই পার্লি নূরকে নিয়ে রওনা দিল। বরাবর দশটায় হাজির হলো আরফি। বেশ কিছুক্ষণ আলাপ হলো। একে অপরের সম্পর্কে জেনে নিল। পার্লি পরিবারের সাথে যোগাযোগ করার জন্য নূরের নাম্বার নিয়ে নিল।
আরফি — শোন পার্লি। তোমার কিছু দায়িত্ব রয়েছে। কিছু প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। হাতে মাত্র পনেরো দিন সময়। টিম মেম্বাররের সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে তোমার সময় লাগবে। তার জন্য কাল থেকে কম পক্ষে দুই ঘন্টার জন্য আমাদের সাথে থাকবে। সব ঝামেলার মাঝে তোমার উপর একা ধ্যান দেওয়া সম্ভব নয়। তাই তোমাকেই নিজের কাজ ম্যানেজ করতে হবে।
পার্লি — ওকে। তাহলে আমি এখানে অপেক্ষা করব। তুমি এসে আমাকে পিকআপ করে নিও।
পরের দিন
নূর, পার্লি একসাথে বের হলো নূর বেরিয়ে গেল ভার্সিটির উদ্দেশ্যে। পার্লি আরফির জন্য অপেক্ষা করছে।
আফরান ও ছেলেরা ভার্সিটিতে প্রবেশ করল। হঠাৎ তাদের সামনে এসে দাঁড়াল পান্না। আফরান মুচকি হাসলো। কিন্তু পান্নার চেহারা মলিন হয়ে আছে।
পান্না — আই এম সরি আফরান। আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি। প্লিজ ডোন্ট ব্রেকআপ৷ আই লাভ ইউ।
(ব্রেকআপ শুনে রিহান, আহিল সহ সবাই হা হয়ে আছে। অবাক হয়ে তাকাল আফরানের দিকে।)
আফরান — বাট আই ডোন্ট। আমি তোমাকে ভালবাসি না। দুই বছর ধরে আমি তোমার সাথে এবং নিজের সাথে অন্যায় করেছি৷ জোর পূর্বক সম্পর্কে কষ্ট ছাড়া আর কিছুই পাওয়া যায় না। সম্পর্কের ভিত্তি হলো বিশ্বাস, ভালবাসা। যা আমাদের মধ্যে নেই। তুমি তো বল আমি বাকি বয়ফ্রেন্ডদের মতো কেন নয়। কেন তোমার কেয়ার করি না। তোমার কোন বিষয় নিয়ে মনে রাখি না। বিকজ আই ডোন্ট লাভ ইউ। ইটস বেটার উই ব্রেকআপ।
পান্না — আফরান….
আফরান — প্লিজ পান্না। আমার পক্ষে সম্ভব না। আই এম সরি।
আফরান চলে গেল। তার পিছে পিছে রেলগাড়ীর মতো বাকিরাও সুরসুর করে হেটে গেল।
পান্না — আই জাস্ট হেইট দিজ।
.
.
.
চলবে