#Ragging_To_Loving__2
#পর্বঃ- ২৬
#রিধিরা_নূর
কারো হাসি যেন থামছেই না। আহিল ক্রুদ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আরিফের বিষয়টা খেয়াল হতেই ন্যাক্কারজনক ভঙ্গিমা করে দু পা পিছিয়ে গেল।
আরিফ — ছিঃ! ছিঃ! আফরাইন্না এসব কি করছিলি?
ইয়াশ — ভাই আফরান। তুই লজ্জাবতী আমরিন হিসেবে পারফেক্ট মানুষকে বেছে নিয়েছিস।
হাসতে হাসতে তাদের কাহিল অবস্থা। আহিল, আরিফ দুজনে রাগী দৃষ্টিতে সবার দিকে তাকাল। হাসতে হাসতে আফরানের চোখে জল চলে এলো। বুড়ো আঙুল দিয়ে চোখের কোণে জমে থাকা জল মুছে নিল। তেড়ে গেল আফরানের দিকে। সবাই ভাবলো এই বুঝি আহিল আফরানকে মারবে। কিন্তু না। সবাইকে ভুল প্রমাণ করে আফরানকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল। বেশ অবাক হলো।
আহিল — জানিস। বহুদিন পর তোর দুষ্টুমি ভরা কারসাজি দেখলাম। ভার্সিটিতে আসলেই পান্না সারাক্ষণ তোর সাথে চিপকে থাকতো। ভার্সিটি শেষে ফোনে চিপকে থাকতো। বলতে গেলে আমাদের সাথে তোর খুব কম মেশা হতো। স্কুল লাইফের এবং কলেজ লাইফের সেই দুষ্টুমি ভরা দিনগুলো ভীষণ মিস করছিলাম।
ওয়াসিম — এহহ। দেখ তো কে বলছে কথাটা। কয়দিন পর দেখা যাবে আপনারও একই অবস্থা। সারাক্ষণ আমরিনের পিছে পিছে ঘুরবে আর আমাদের ভুলে যাবে।
আহিল — কখনো না। নতুন করে কাউকে জীবনে জায়গা দেওয়ার মানে পুরাতন মানুষদের সরিয়ে দেওয়া নয়। তোরা ছিলি, তোরা আছিস, জানি তোরাই থাকবি। বন্ধু বোঝে আমাকে, বন্ধু আছে আর আমরিনকে লাগে। (বলে দাঁত কেলিয়ে হাসি দিল।)
বাকিরাও ফিক করে হেসে দিল।
.
.
নূর, আলিফা রোবটের মতো নিষ্পলক চোখে হাটছে। আলিফা কাঁদো কাঁদো চেহারা বানিয়ে আছে। চোখের সামনে দৃশ্যটা ভাসছে।হাটতে হাটতে নূর আবারও ধাক্কা খেল পান্নার সঙ্গে।
পান্না — হোয়াট দ্যা হেল। আবার তুমি? চোখ কি তোমার সত্যিই গেছে? স্টুপিড গার্ল।
নূর — (আহারে বেচারি। ওই উগান্ডার প্রেসিডেন্ট। বিলাতি বক। এই বেচারি আপুর উপর তাবিজ করে তার রূপের জালে ফাঁসিয়েছে। এমনিতেই দেখতে সাদা চামড়া। জাস্ট লাইক এ দেশি মুলা। যাতে তার আসল পরিচয় কেউ না জানে বেচারি আপুটাকে ফাঁসালো। বড্ড মায়া হচ্ছে আপুটার জন্য।)
নূর আচমকা পান্নাকে জড়িয়ে ধরল। পান্না ঠেলে নূরকে সরিয়ে দিল।
পান্না — স্টে এওয়ে ফ্রম মি। স্টুপিড। (বলে চলে গেল।)
পুষ্প, সিমা, আমরিন ক্লাসের বাইরে অপেক্ষা করছে। পুষ্প নূরকে ফোন দিতে নিবে ততক্ষণে নূর, আলিফা চলে এলো। আলিফা ছ্যাঁকা মার্কা চেহারা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সিমা ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলল,
সিমা — এই আলুর দম বানাইলো কে? গাল এমন ফুলিয়ে আছে কেন?
আলিফা — (ন্যাকা কান্ন করছে) সখী গো, আমার মন ভালা না, আরিফের পিরিত কইরা সুখ পাইলাম না। সখী গো, আমার মন ভালা না।
সিমা — ছ্যাচড়া মাইয়া। তুই আবার আরিফের সাথে পিরিত করলি কখন?
আলিফা — এখন আমার মন চাইছে বাপ্পারাজের মতো গড়াগড়ি খেয়ে গান গাই। প্রেমের সমাধি ভেঙে, মনের শিকল ছিড়ে পাখি যায় উড়ে যায়। লালালালালালা।
পুষ্প — ঢং না করে কি হয়েছে বলবি? নূর। কি হয়েছে বল।
নূর — ছ্যা ছ্যা ছ্যা অশ্লীল। বহুত অশ্লীল। (তওবা করে) ওই উগান্ডার প্রেসিডেন্ট। খাচ্চোর বিলাতি বক। আফরান আর আরিফের মধ্যে…. ছ্যা ছ্যা ছ্যা অশ্লীল কাজ কারবার। ওদের মধ্যে ইটিসপিটিস চলছে। (তওবা করছে)
পুষ্প, সিমা, আমরিন একসাথে চিল্লিয়ে বলল, “কি?”। তারা হতভাগ হয়ে তাকিয়ে আছে নূরের দিকে।
আলিফা — সখী গো, আমার মন ভালা না। আরিফের লগে…. (আর বলতে পারল না। পুষ্পর এক ধমকে চুপ হয়ে গেল।)
পুষ্প — চুপ। তোদের কি মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে? কীসব আজেবাজে বকছিস।
নূর — আজেবাজে না। নিজের এই দুই চোখে… চার চোখে স্পষ্ট দেখেছি। একেবারে সামনা সামনি। শুধু আমি না আলিফাও দেখেছে। তাই ছ্যাঁকা খেয়ে বাঁকা হয়ে গিয়েছে।
পুষ্প — মজা করছিস? (আলিফা, নূর ডানে বামে মাথা নাড়লো।) তাহলে কি এমন দেখেছিস সামনা সামনি।
আলিফা — প্রেমের সমাধি ভেঙে, মনের শিকল ছিড়ে….
পুষ্প — আলিফা! চুপ। একদম চুপ। নূর তুই বল। (রেগে)
পুষ্প স্বভাবে শান্তশিষ্ট হলেও রাগলে রণচণ্ডী রূপ ধারণ করে। এই বিষয়ে সবার ধারণা আছে। কিন্তু এখন তার রেগে যাওয়ার কারণ কি? কেন রাগছে তা বুঝতে পারছে না কেউ। রেগে যাওয়ারই কথা। সেই যাই হোক আফরান তার ভাই। নিজের ভাইয়ের সম্পর্কে এসব শুনে সবারই রাগ হবে।
নূর তার স্বচক্ষে দেখা সব বলল। সিমা, আমরিন থ মেরে দাঁড়িয়ে আছে। পুষ্পর মাথার উপর যেন আকাশ ভেঙে পড়ল।
পুষ্প — তুই পাগল হয়ে গিয়েছিস? কি বলছিস তা মাথায় আছে?
আমরিন — তুই হঠাৎ এভাবে রেগে যাচ্ছিস কেন?
পুষ্প — তো কি রাগবো না! নূর আমার ভাইয়ের সম্পর্কে এসব বলছে আর আমি রাগবো না। এটা আশা করছিস তোরা?
“ভাই?” পরক্ষণে পুষ্পর খেয়াল হলো বিষয়টা। কিন্তু অনেক হয়েছে আর না। শুধু শুধু মিথ্যা বলতে আর ভালো লাগছে না। তাই সে সবাইকে জানিয়ে দিল আফরান তার বড় ভাই। সবাই আরেক দফা টাস্কি খেল। আলিফা ছ্যাঁকা মুড থেকে টাস্কি মুডে চলে এলো। নূরের মাথা ঘুরছে। একদিনে এত্তগুলা শকড সে হজম করতে পারছে না। নূর পড়ে যেতে নিলে আমরিন ধরে ফেলে। সোজা করে দাঁড় করালো।
পুষ্প — আমার মনে হয় তোদের কোথাও ভুল হচ্ছে। ভাই এমন না। আর তাছাড়া ভাইয়ার গার্লফ্রেন্ড আছে। জানিসই তো। তাহলে এসব…। এটা তোদের মনের ভুল।
আলিফা — সত্যি? তুই নিশ্চিত?
পুষ্প — হ্যাঁ!
আলিফা — ইয়াহু। তার মানে আমি ছ্যাঁকা খাইনি। লে লুঙ্গি ডান্স, লুঙ্গি ডান্স।
আলিফা পরক্ষণে থেমে গেল। চোখ বড় বড় করে নূরের দিকে তাকাল। নূর ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে আছে। সকলের নজরের অগোচরে আলিফাকে চিমটি দিল। আলিফা ব্যাথায় কুঁকড়ে উঠল। কিন্তু কিছু বলল না। সিমা, আমরিন হাসছে। পুষ্প দীর্ঘ নিশ্বাস ছেড়ে তাদের আশ্বাস দিল।
পুষ্প — তোদের খুঁজতে খুঁজতে প্রথম ক্লাস মিস হয়ে গেল। এবার চল।
তারা ক্লাসের দিকে অগ্রসর হলো। নূর সামনে হাটছিল সুদূরে নজর পড়ল আফরান তাদের দিকেই আসছে। নূর উল্টো ফিরে ভৌ-দৌড় দিল। আফরানও দৌড়ে এলো। কিন্তু পাঁচ সেকেন্ডে মধ্যে নূর উধাও। মেয়েরা উল্টো ফিরে নূরের যাওয়ার পানে তাকিয়ে আছে। আচমকা এভাবে দৌড়ানোর মানে কি। তারা আফরানকে খেয়াল করল না। সামনে ফেরার পূর্বেই আফরান অন্যদিকে দৌড় দিল যাতে নূরকে ধরা যায়। নূর ডানে বামে না তাকিয়ে চোখ বন্ধ করে দৌড়াতে আছে। দৌড়াতে গিয়ে ধাক্কা খেল শেষ প্রান্তের দেয়ালে।
নূর — ও মা গো। মাথা ফেটে গেল গো।
ডান-বামে দুই দিকে মোড়। ডানে তাকিয়ে দেখে আফরান দৌড়ে আসছে। নূর মনে মনে বলল, “পালা নূর পালা। আজ তোর রক্ষা নেই।” উঠে বাম দিকে দৌড় দিল। আফরান দৌড়ে এসে হাঁপাতে লাগলো।
আফরান — নূঊঊররর। দাঁড়াও বলছি। থাম। নইলে কিন্তু আমার চেয়ে খারাপ আর কেউ হবে না। (চিল্লিয়ে বলল)
নূর থেমে পিছনে তাকাল।
নূর — আপনার চেয়ে খারাপ আর কেউ হতেও পারে না।
আফরান — তোমাকে আমি….
আবারও পিছনে দৌড় দিল। নূর চিৎকার করে সেও দৌড় দিল। এই মূহুর্তে নূর হলো “জেরি” এবং আফরান হলো “টম”। তাদের দৌড়ানি দেখে কে? আফরান দৌড়ে এসে দেখে সবদিকে ফাঁকা। কোথাও নূরের অস্তিত্বের চিহ্ন নেই। এই কি মেয়ে নাকি এলিয়েন? হুট করে অদৃশ্য হয়ে গেল কীভাবে? ভাবছে আফরান।
.
.
আহিল, ইয়াশ, ওয়াসিম, রিহান হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। এক প্রকার মেঝেতে লুটিয়ে পড়েছে। আরিফ ক্রুদ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তাদের দিকে। পান্না হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। হাসার কি হলো কিছুই বুঝতে পারছে না সে।
“””পান্না চলে আসার সময় নূরের বেশ মায়া হলো তার জন্য। তার এক বেস্ট আলিফা ছ্যাঁকা খেয়েছে। এখন বেচারি পান্নাকেও ধোকা দেওয়া হচ্ছে। কেমন এক অপরাধবোধ করছে। তাই সে পান্নাকে সব বলে দিল। পান্না যেন বিশ্বাস করতে পারছে না।
পান্না — আই ডোন্ট বিলিভ দিজ।
নূর — কিছু করার নেই এটাই বাস্তব।
পান্না — জাস্ট শাট আপ। (হনহনিয়ে চলে গেল।)
নূর — আজকাল দেখি ভালোর কোন দাম নেই। হু কেয়ারস।
এরপর পান্না এসে দেখে আফরান এবং বাকিরা একসাথে আড্ডা দিচ্ছে। পান্না ভেবে নিল নূর মিথ্যা বলেছে। কিন্তু মনে মনে তাকে ধন্যবাদ জানালো। অন্তত আফরানের সাথে কথা বলার জন্য একটা সুযোগ পেল। তারপর সে এসে আফরানকে সোজাসাপ্টা সব বলে দিল। নূরের নাম জানে না। তাই তার গড়ন, বৈশিষ্ট্য বলল। মূহুর্তেই আফরান বুঝে গেল এটা নূরই। দৌড়ে বেরিয়ে গেল নূরের খোঁজে। আরিফ অবাক হয়ে গেল। নূর তাকে এবং আফরানকে একসাথে দেখে অন্যকিছু ভেবে নিল। বিষয়টি কেমন লজ্জাজনক ঠেকল তার কাছে। এদিকে রিহান, আহিল তাদের হাসতে হাসতে অবস্থা খারাপ হয়ে গেল।”””
পান্না — তোমরা কি পাগল হয়ে গিয়েছ? এখানে হাসার কি হলো?
রিহান — তুমি বুঝবে না। আমাদের বন্ধুদের ব্যাপার।
পান্না — হোয়াটএভার। (ভাব নিয়ে চলে গেল।)
.
.
নূর স্পোর্টস হলে লুকিয়ে আছে। হঠাৎ ফোন রিং হলো। তাকিয়ে দেখে আমরিন ফোন দিয়েছে। তড়িঘড়ি ফোন কেটে দেয়। এবং ফোন সাইলেন্ট করে দেয়। অনেক্ষণ যাবত চুপচাপ বসে আছে নূর। নিস্তব্ধ হয়ে আছে চারপাশ। একবার ভাবলো বের হবে আবার ভাবলো না যদি আফরান বাইরে থাকে। তাই চুপচাপ বসে আছে। কাঁধে কেউ একজন স্পর্শ করে।
নূর — শশশ। চুপচাপ বসে থাক। নইলে ওই উগান্ডার প্রেসিডেন্ট বিলাতি বক আফরান জেনে যাবে আমি এখানে। (সামনে তাকিয়ে বলল। আবারও স্পর্শ অনুভব করল।) আব্বে একবার বললে বুঝছ না? (পিছন ফিরে দেখে আফরান। ভ্রু নাচিয়ে তাকাল। নূর জোর পূর্বক হাসি দিল।) ওই দেখ টিনের চালে বসে আছে কাউয়াটা কালা, নূর বাঁচতে চাইলে এক্ষুনি পালা।
আফরান ধ্যান ভঙ্গ হতেই সেই সুযোগে নূর পালিয়ে যেতে নেয়। আচমকা আফরান নূরের ব্যাগ ধরে হেচকা টান দেয়৷ তাল সামলাতে না পেরে নূর পড়ে যেতে নিলেই আফরান ব্যাগ ছেড়ে নূরকে ধরে। চোখের চশমা খুলে পড়ে যায়। নূর ভয়ে চোখে বন্ধ করে ফেলে। নিজেকে শূন্যে আবিষ্কার করে চোখ খুলে। মূহুর্তে আফরানের চোখ আটকে যায় সেই চোখ জোড়ায়। চশমার ফ্রেমের পিছনে মায়াবী চোখ জোড়া আড়াল হয়ে ছিল তা আগে খেয়াল করেনি। চোখের ডান পাশে কালো তিলটা চিকচিক করছে। এতে যেন নূরের চোখ জোড়া আরও আকর্ষণীয় লাগছে।
.
.
.
চলবে