Ragging To Loving 2পর্ব-২৭

0
2791

#Ragging_To_Loving__2
#পর্বঃ- ২৭
#রিধিরা_নূর

শুভদৃষ্টির শুভ মিলনে বিভোর হয়ে আছে নূর এবং আফরান। ঘোরে আটকে আছে আফরান। নূর সুযোগ খুঁজছে কীভাবে পালানো যায়। উঠে যে-ই না দৌড় দিবে নিজের ব্যাগের উপর পা পড়তেই পিছলে পড়ে যায়। আফরান রাগের মাঝেও নিজের হাসি আটকে রাখতে পারল না। দম ফাটানো হাসি দিয়ে নূরের পাশে বসল। সমবেদনা ভঙ্গি দিয়ে তাচ্ছিল্য হাসি দিল। নূর এখন বুঝতে পারছে না কি করবে। আফরানের উপর রাগ করবে? নাকি নিজের ভবিষ্যৎ অন্ধকার দেখে ভয় পাবে? দুইটাই বাদ দিয়ে হাসছে। আফরান ভ্রু কুচকে তাকাল। নূরের মতলব বোঝার চেষ্টা করছে। নূর হাসতে হাসতে উঠে দাঁড়াল।

নূর — আমিও না অবুঝ বালিকা। কখন কি করে ফেলি বুঝতেই পারি না। হেহেহেহে।

নিজেকে অবুঝ দাবি করে আফরানের হাত থেকে বাঁচার ধান্দা। আফরানও কম কীসে। এইবার এতো সহজে নূর ছাড় পাচ্ছে না। একেই বলে, “যেমন বুনো ওল তেমন বাঘা তেঁতুল”। এই তেঁতুলের শরবত এখন নূরকে চেখে দেখবে। আফরান সমবেদনা ভঙ্গিতে বলল,

আফরান — আহারে অবুঝ বালিকা। এখন মনে হয় এই অবুঝ বালিকাকে বুঝ দান করতে হবে।

নূর — মা..মানে?

আফরান — মিস অবুঝ বালিকা। আপনি যেহেতু জানেন যে আপনি অবুঝ তাহলে না জেনে না শুনে কীসব উল্টা পাল্টা ধারণা মগজের ধারণ করে আছেন কেন? মাথায় কি গিলু নেই?

নূর — মাথায় গিলু থাকে? (বিস্মিত হয়ে)

আফরান — জি থাকে। যা তোমার মাথায় নেই।

নূর — ওহ্! আচ্ছা গিলু কি? (অবুঝের মতো প্রশ্ন করল)

আফরান — গিলু? উমম গিলু হলো মানুষের বিদ্যা-বুদ্ধি বিবেচনা করার চিন্তা বোধ। ইংরেজিতে যাকে বলে কমনসেন্স। বাংলায় বলে সাধারণ জ্ঞান। যা দ্বারা মানুষ চিন্তা ভাবনা করে।

আফরান বিজ্ঞদের ন্যায় নূরকে বোঝাতে লাগলো। নূর ব্যাগ থেকে পড়ে যাওয়া জিনিসগুলো আস্তে আস্তে সংগ্রহ করতে লাগলো। সুযোগ পেলে ব্যাগ গুছিয়ে দৌড় দিবে। আফরান বোঝাতে বোঝাতে হঠাৎ বিষয়টি খেয়াল করল। নূরকে হেচকা টান দিয়ে দেয়ালের সাথে চেপে ধরল।

আফরান — কি ভেবেছ তুমি। বারবার একই কাহিনী রটবে আর আমি বোকার মতো বারবার তোমার কথায় ফেসে যাব। (রেগে) পান্নাকে কি বলেছ তুমি?

নূর — যা দেখেছি তা-ই বলেছি। (আফরানের উচ্চস্বরে নূর কেঁপে উঠল)

আফরান — নূর। (উচ্চস্বরে) তোমার কি মাথা খারাপ? কিছু একটা দেখেছ তার সত্য মিথ্যা যাচাই না করেই নিজের মন মতো বিচার করছ। তোমার মনে আমি…. আমি এমন? আর ইউ সিরিয়াস! এখন আমার কি মন চাইছে বলে বুঝাতে পারব না। (রেগে দেয়ালে ঘুসি মারল। অকারণেই তার রাগ বাড়ছে। আফরানকে এভাবে রেগে যেতে দেখে থরথর কাঁপছে।) পান্নাকে ছাড়া আর কাকে এসব বলেছ?

নূর — কাউকে বলিনি।

আফরান — (ভ্রু কুচকে তাকাল) কাউকে বলনি? (দাঁতে দাঁত চেপে)

নূর — সত্যি কাউকে বলিনি। আলিফা আমার সাথেই ছিল। তাই যা দেখার সেও দেখেছে। তাই আমি কাউকেই বলিনি। শুধু সিমা, আমরিন আর পুষ্পকে বলেছি। মেহের আজ আসেনি তাই মেহেরকে বলিনি। পরে ফোন করে বলে….. (এক নাগাড়ে বলে আফরানের দিকে তাকিয়ে দেখে চোয়াল শক্ত করে আছে, কপালের রগ ফুলে আছে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে যেকোনো মূহুর্তে বোম্ব ব্লাস্ট হয়ে যাবে।)

এই মূহুর্তে আফরানের রাগ দমিয়ে রাখা ভীষণ কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। না জানি পুষ্প তার সম্বন্ধে কি ভাবছে। তার চোখে কি তার ভাইয়ের জন্য সম্মানটা বজায় থাকবে? এই ভেবেই যেন আফরানের রাগ আরও প্রখর হয়ে আছে।

আফরান — তোমাকে….

নূর — পুষ্প আপনার ব্যাপারে তেমন কিছু ভাবেনি। আমি ভুল বুঝলেও আপনার প্রতি তার তেমন ভাবনা আসেনি। (আফরান অবাক হয়ে তাকাল।) পুষ্পই বলেছে আপনি ওর ভাই।

এই মূহুর্তে আফরানের প্রতিক্রিয়া কেমন হওয়া উচিৎ সে নিজেই বুঝতে পারছে না। কিন্তু এতো সহজে সে নূরকে ছাড়ছে না। অনেক জ্বালিয়েছে। কিন্তু কি করা যায়? ভাবতে ভাবতে হঠাৎ নজর পড়ল মেঝেতে পড়ে থাকা একটি ফাইলের উপর। যা নূরের ব্যাগ থেকেই পড়েছে। আফরান ফাইল হাতে নিতেই নূর হাত বাড়ায়।

নূর — আমার এসাইনমেন্ট।

আফরান বাঁকা হাসি দিল। পেয়ে গিয়েছে নূরকে শায়েস্তা করার চাবি। বাঁকা হাসি দিয়ে ফাইল দেখতে লাগলো।

আফরান — ওহ হো ভেরি গুড। এসাইনমেন্ট কমপ্লিট। সো স্যাড। এসাইনমেন্ট আর কোন কাজে আসবে না। (নূর ভ্রু কুচকে তাকাল) কারণ এই এসাইনমেন্ট তুমি আর পাবে না।

নূর — না প্লিজ। রাত জেগে অনেক কষ্ট করে সকালে সম্পূর্ণ করেছি। দুই দিন পর নিহাল স্যারকে জমা দিতে হবে।

আফরান — তাহলে তো ভালোই। দুই দিন সময় আছে। আবার নতুন করে করে নাও। কারণ এই ফাইল তো তুমি আর পাবে না।

নূর — নায়ায়ায়া। (চিল্লিয়ে)

নূর লাফিয়ে ফাইল নিতে গেলে আফরান ফাইল উঁচু করে তুলে।নূর লাফাচ্ছে কিন্তু নাগাল পাচ্ছে না। উচ্চতার সুযোগ নিয়ে আফরান বেশ মজাই পাচ্ছে। নূর লাফাচ্ছে আর আফরান হাসছে।

আফরান — আহারে। সেই পিচ্চি ভুটকিই রয়ে গেলে।

নূর — এক্সকিউজ মি! ভুটকি বললেন কাকে? আই এম জিরো ফিগার। ওকে?

আফরান — সেটাই তো। জিরো। জিরো মানে গোল। গোল মানে মোটা। মোটা মানে ভুটকি। আর ভুটকি মানেই তুমি। আর কিছু বোঝাতে হবে? মিস অবুঝ বালিকা।

নূর — (রাগে ফুঁসছে) আমি ভুটকি হলে আপনি শুটকি।

আফরান — তুমি মুটকি।

নূর — আপনি পু…

মুখ চেপে ধরল। ছ্যা ছ্যা ছ্যা। এখন মুখ ফসকে কি বলে ফেলত। কেমন এক বিদঘুটে পরিস্থিতি তৈরি হলো। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে আফরান কথা ঘুরালো।

আফরান — ফাইলটা পেতে পার। কিন্তু এক শর্তে। (নূর তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকাল) এসাইনমেন্ট দুই দিন পর জমা দিতে হবে। তাইতো? এই দুই দিন আমি যা বলব তোমার তাই করতে হবে। যায় বলি।

নূর — নো নেভার কাবি নেহি। আপনি এটা ধুয়ে ধুয়ে পানি খান। লাগবে না আমার। আমি আবার করব এসাইনমেন্ট।

আফরান — ওকে দ্যান। (ফাইল ছিড়তে নিলে নূর থামিয়ে দেয়।)

নূর — এই না…না প্লিজ। আমি অনেক কষ্ট করে করেছি। দুই দিনে নতুন করে এসাইনমেন্ট তৈরি করা সম্ভব না। ঠিক আছে। আপনার শর্তে আমি রাজি। (বিড়বিড় করে)

আফরান — কি বললে? শুনতে পায় নি।

নূর — (কানে পাশে এসে) আমি রাজি।(উচ্চস্বরে)

আফরান — উফফ। ষাড়ের মতো চিল্লাতে হবে না। এবার এসব গুছিয়ে নাও। এন্ড ফলো মি।

নূর ভেঙচিয়ে আফরানের পিছে পিছে গেল।
.
.
ইয়াশ — গাইজ আমার এখন যেতে হবে। এড এজেন্সি থেকে ফোন এসেছে। ফটোগ্রাফির জন্য আমাকে ডেকেছে। আমি যায়।

আরিফ — ঠিক আছে।

ওয়াসিম — আমি গিয়ে দেখে আসি আফরান কোথায়?

আহিল — আমিও আমার আমরিনকে দেখে আসি।

আরিফ — আমি কি এখানে বসে বসে ডিম পাড়বো?

আহিল — না। তোর আলু সিদ্ধ হয়েছে কিনা দেখে আয়। (হেসে)

আরিফ বুঝেও না বোঝার ভান করে আছে। আহিল তাকে পাত্তা না দিয়ে চলে গেল। ওয়াসিম, আরিফও গেল।
.
.
নূর যেভাবে দৌড় দিল তা দেখে মেয়েরা শিহরিত হয়ে তাকে খুঁজতে লাগলো। নূরকে নিয়ে বেশ চিন্তিত। হঠাৎ এভাবে দৌড়ে পালানোর কারণও জানে না। যদি কোন বিপদ হয়? একেকজন একেক দিকে গেল খুঁজতে।

সিমা আশেপাশে খুঁজতে গিয়ে দেখে ওয়াসিম একটি মেয়ের সঙ্গে হেসে হেসে কথা বলছে। বিষয়টি কেমন যেন খটকা লাগলো। সিমা চুপি চুপি কান পেতে তাদের কথা শুনছে৷

ওয়াসিম — কেমন আছ পিংকি? বহুদিন পর দেখা হলো।

সিমার মুখটা আপনা আপনি হা হয়ে গেল।

সিমা — পিংকি? এই অসভ্যের সাহস কি করে হয় এই মেয়েকে পিংকি বলার। অসভ্যের মুখে কি পিংকি ছাড়া আর কোন শব্দ বের হয় না?

ওয়াসিম — পিংকি তুমি হঠাৎ এখানে কীভাবে?

সিমা — আবার পিংকি? দাঁড়াও তোমাকে যদি রংধনুর সাত রঙের নাম না শিখিয়েছি তাহলে আমার নামও পিংকি ধুরর সিমা না।

দেয়ালের আড়াল থেকে বেরিয়ে ওয়াসিমের চুল মুটি ধরল। আচমকা ঘটনার তৎপরতায় ওয়াসিম পাশে তাকিয়ে দেখে সিমা ক্রুদ্ধ হয়ে আছে। আড়চোখ উপরে তাকিয়ে দেখে মাথায় সিমার হাত৷ ওয়াসিম ভয়ে ঢোক গিলল।

সিমা — অসভ্য কোথাকার। তোমার সাহস কি করে হয় অন্য মেয়ের সঙ্গে হেসে হেসে কথা বলার। তাকে আবার আমার নাম দিয়েছ। পিংকি। এত্তো বড় সাহস তোমার। তুমি অন্য কাউকে পিংকি ডাক। কেন ডেকেছ? বল কেন ডেকেছ? (চুল ধরে ঝাঁকাতে লাগলো।)

মেয়েটি হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে। সিমা ক্রুদ্ধ দৃষ্টিতে মেয়েটির দিকে তাকাল। মেয়েটকে উদ্দেশ্য করে বলল,

সিমা — এই মেয়ে তুমি পিংকি না। আমি পিংকি। বুঝছ? (ওয়াসিমের দিকে ঘুরে তাকাল) এই মেয়ে তো পিংক কালারের জামা পরেনি। তাহলে ওকে পিংকি ডাকছ কেন? বল। বল। আরে বলছ না কেন? বল।

ওয়াসিম — কারণ ওর নাম পিংকি। আমাদের পাশের বাড়িতে থাকে। মায়ের খালাতো বোনের ফুফাতো বোন। মানে সম্পর্কে আমার খালা হয়। (কান্নারত স্বরে)

সিমা জিবে কামড় দিয়ে আস্তে করে ওয়াসিমের চুল ছেড়ে দিল। নিষ্পাপ মুখো ভঙ্গি করে মেয়েটির দিকে তাকাল।

সিমা — সরি খালা আমি জানতাম না। (রেগে ওয়াসিমের দিকে তাকাল) সম্পর্কে যেহেতু খালা হয় তাহলে নাম ধরে ডাকছ কোন সাহসে। খালাম্মা ডাক। অসভ্য কোথাকার। সরি খালাম্মা। আমি আসি। (বলে দৌড়ে চলে গেল)

মেয়েটি এখনো টাস্কি খেল দাঁড়িয়ে আছে। ঝড়ের বেগে এসে তুফানের বেগে চলে গেল সিমা। কি থেকে কি হলো কিছুই বুঝতে পারল না।
.
.
আমরিন নূরকে খুঁজতে খুঁজতে হঠাৎ ধাক্কা খেল।

আমরিন — আম সরি।আমি খেয়াল করিনি। সরি।

আহিল — আই লাভ ইউ টু। (নম্র স্বরে)

আমরিনের খেয়াল হতেই দেখে আহিল তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। হঠাৎ আহিলের এমনটা বলায় বেশ লজ্জা পেল।

আহিল — উফফ এভাবে লজ্জা পেও না গো। একেবারে বউ বউ লাগে। ইচ্ছে করে হাত ধরে কাজী অফিসে গিয়ে বিয়ে করে ফেলি।

এবার আমরিন পারছে না লজ্জায় মাটিতে মিশে যাচ্ছে। আচ্ছা আহিল কি বুঝে না যে সে লজ্জা পাচ্ছে। নাকি বুঝেই এমনটা করে। ভাবতেই আমরিনের লজ্জা আরও বেড়ে গেল।
.
.
নূর আফরানের পিছু পিছু হাটছে। আফরান ফাইলটি ঝুলিয়ে বেখেয়ালি হয়ে হাটছে। নূর আচমকা আফরানের হাত থেকে ফাইলটা ছিনিয়ে নিয়ে দৌড় দিল। কিছু দূর গিয়ে পিছন ফিরে তাকাল। বিজয়ী হাসি দিয়ে যেন আফরানকে তুচ্ছ করছে। আফরান বেশ শান্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। নূর ফাইল দিয়ে পাখার মতো বাতাস করতে লাগলো। সমবেদনার ভঙ্গিতে বলল,

নূর — আহারে বেচারা। আসছে আমার সাথে লাগতে। নূরকে ফাঁসানো এতো সহজ নয়। বুঝছেন? আসতে জমিদার পুত্র। আমি যা বলব তা-ই করতে হবে। ঢং।

কোমর দুলিয়ে যেতে নিলে আফরানের হাসির শব্দে থেমে গেল। পিছন ফিরে দেখে আফরান উচ্চস্বরে হাসছে। নূর ভ্রু কুচকে তাকাল। আফরান এগিয়ে এসে নূরের গাল টেনে দিল।

আফরান — ও লে লে অবুঝ বালিকা। একটু ফাইলটা খুলে তো দেখ কাগজপত্র সব আছে কিনা।

নূর তড়িঘড়ি ফাইল খুলে দেখে ফাইল ফাঁকা। আফরান বাঁকা হাসি দিল।

.
.
.

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here