#Ragging_To_Loving__2
#পর্বঃ- ২৮
#রিধিরা_নূর
ইয়াশ রিকশায় করে তার গন্তব্যে চলেছে। মাঝপথে আটকে গেল যানযটে। বারবার ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে। অসংখ্য ভিড়ের মাঝে চোখ পড়ল রাস্তার সংলগ্ন পার্কে। একটি ছোট বাচ্চা গাছের ডালে কিছু একটা দেখাচ্ছে। একটি মেয়ে ওড়না কোমরে পেচিয়ে লাফাতে লাগলো। ইয়াশ আরেকটু উঁচুতে দেখে গাছের ডালে বেলুন পেচানো। কি যেন ভেবে ইয়াশ দ্রুত ক্যামেরা বের করল। তাদের সেই দৃশ্য ক্যামেরায় ধারণ করছে। মেয়েটি লাফাতে লাফাতে অবশেষে সফল হলো। বাচ্চাটির হাতে বেলুন দিতেই বাচ্চাটি খুশিতে লাফিয়ে উঠল। বাচ্চাটি মেয়েটিকে কাছে ডেকে তার গালে চুমু দিল। মেয়েটিও হেসে তার গালে চুমু দিল। মূহুর্তে ইয়াশ থমকে গেল। মেয়েটি আর কেউ না মেহের। ইয়াশ ছবি গুলো ডিলিট করতে নিলে ফোনের রিংটোনে ধ্যান ভঙ্গ হলো। পরিচালকের ফোন।
ইয়াশ — হ্যালো? ইয়েস স্যার। আ’ম কামিং।
.
.
রিহান ফোনে কথা বলে মিউজিক হলে এসে দেখে পুরো কক্ষ ফাঁকা। কেউ নেই। বের হতেই ধাক্কা লাগে পুষ্পর সাথে। দুজনেই কপাল ঘেষতে লাগলো। দুজনকেই বেশ চিন্তিত লাগছে। মনে হচ্ছে কিছু একটা বলতে চায় কিন্তু দ্বিধার কারণে শব্দ হয়ে বেরুচ্ছে না।
পুষ্প-রিহান — আরেকবার মাথায় বারি খাবে? নাহলে শিং উঠবে। (একসাথে বলল)
বলেই দুজনে ফিক করে হেসে দিল। আস্তে করে মাথা ঠেকালো। ধাক্কাটা কপালে নয় যেন হৃদয়ে লাগলো। অদ্ভুত নয়নে একে অপরের দিকে তাকাল। পরক্ষণে চোখ ফিরিয়ে নিল। পুষ্প উঁকি দিয়ে আশেপাশে দেখল।
রিহান — কাউকে খুঁজছ?
পুষ্প — হ্যাঁ! নূরকে। ক্লাসে যাচ্ছিলাম হঠাৎ ভৌ-দৌড় দিল। কোথায় গেল কে জানে।
আফরানের দৌড়ে যাওয়ার কথা মনে পড়তেই রিহান হো হো করে হেসে উঠল। পুষ্পর কপালে ভাজ পড়ল। রিহান পুষ্পকে সব বলল। পুষ্প হাসবে নাকি চিন্তিত হবে বুঝতে পারছে না। তার ভাইকে খুব ভালো করে চিনে। রাগ একবার মাথায় চড়ে বসলে আর কোন চিন্তা মাথায় ঢুকে না। অপরদিকে নূর। নিশ্চয় এমন কোন খিচুড়ি পাকাবে যাতে করে আফরানের রাগ আরও বাড়বে। এই যেন বিপদের সংকেত। রিহান হাসলেও চিন্তা তারও হচ্ছে। একজন আগুন হলে অপরজন ঘি। দুইটা সাথে হলে বিস্ফোরণ হবে।
পুষ্প — হাসা বন্ধ করে চল তাদের খুঁজতে। না জানি আবার কোন আপদ আসে।
.
.
আরিফ উদ্দেশ্যহীন হাটছে। একেকজন একেক দিকে ছুটে চলেছ। তাই নিঃস্ব প্রাণীটা একাই হাটছে। সামনে তাকিয়ে দেখে কিছুটা দূরত্বে আলিফা হাটছে। মনে হচ্ছে কাউকে খুঁজছে। নূরকে খুঁজতে গিয়ে আলিফা লক্ষ্য করল আরিফ সামনে দিয়ে আসছে। আলিফা ভাবলো আরিফের কাছে ছুটে যাবে। কিন্তু সে জানে এবারও আরিফ তাকে পাত্তা দিবে না। তাই আরিফের কাছে না গিয়ে অপর পাশে চলে গেল নূরকে খুঁজতে। আলিফার এমন কাজে আরিফ বেশ অবাক হলো।
আরিফ — নূর কি আলিফাকেও সেই বিষয়ে বলেছে? বলেছে নিশ্চয়। যদি পান্নাকে বলতে পারে তাহলে নিশ্চয় তার বান্ধবীদের বলেছে। আলিফা কি আমাকে ভুল বুঝছে? তাই তো দেখছি৷ নাহলে আমাকে দেখেও এভাবে এড়িয়ে গেল কেন? (চিন্তিত হয়ে বলল)
আরিফ আলিফার পেছনে গেল। দৌড়ে গিয়ে আলিফার মুখোমুখি হয়ে দাঁড়াল। আলিফা ভ্রু কুচকে তাকাল। আলিফার সামনে এসেই যেন আরিফের মুখের শব্দ হারিয়ে গেল। ঠোঁট নড়ছে কিন্তু শব্দ বেরুচ্ছে না। আলিফা পাশ কেটে যেতে নিলে আরিফ আবারও সামনে এসে দাঁড়াল।
আরিফ — তুমি যেমন ভাবছ তেমন নয়। ওসব শুধু আফরানের দুষ্টুমি ছিল। আমি বা আফরান কেউ এমন নয়। নূর কি থেকে কি দেখে ভুল ধারণা করে নিল। (কাঁপা স্বরে)
আলিফার ভীষণ হাসি পাচ্ছে আরিফের চেহারা দেখে। আরিফের কপালে ঘাম জমে গিয়েছে।
আলিফা মনে মনে ভাবছে, “একটু আগে যে আমি আরিফকে উপেক্ষা করে চলে এলাম তাই বোধহয় আরিফের এমন ধারণা হলো। তার মানে আমি যদি আরিফকে ইগনোর করি তাহলে তার সহ্য হয় না।” ভাবতেই মনটা খুশি হয়ে গেল। কিন্তু এই খুশি আরিফকে দেখানো যাবে না। এই ঘাড় ত্যাড়ার ঘাড় মটকে দেওয়ার পথ পেয়ে গিয়েছি।
আলিফা — আমি যা-ই ভাবি তাতে আপনার কি? আমি যা-ই করি এতে তো আপনার কিছু যায় আসে না। এমনকি আমার দিকে ফিরেও তাকান না। আমি কিছু বললে বা কিছু করলে আপনি মূর্তির ন্যায় দাঁড়িয়ে থাকেন। তাহলে আজ কেন নিজ থেকে এসে এসব বলছেন? আপনি…
বাক্য শেষ করার পূর্বেই মুখটা আপনা আপনি হা হয়ে গেল। স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সামনে। আলিফার ভঙ্গিমা দেখে আরিফ পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখতেই তার মুখটাও হা হয়ে গেল।
নূর কান ধরে আফরানের পিছে পিছে হাটছে। আফরানের দিকে ক্রুদ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বিড়বিড় করে হাটছে। আফরান পিছনে তাকাতেই এক গাল হেসে দিল। আফরান ভাবান্তর না করে হাটছে৷
আলিফার মাথা ঘুরান্তি দিয়ে উঠল। ঢলে পড়তেই আরিফ ধরে ফেলে। নিভু নিভু চোখে তাকিয়ে বলে,
আলিফা — আমার মনে হয় আমার চোখ গেছে। আমি কি সব উল্টা পাল্টা দেখছি।
আরিফ — উল্টা পাল্টা না। ঠিকই দেখছ। (দাঁড় করালো)
আফরান তাদের সামনে এসে দাঁড়াল। নূরকে ইশারা করতেই কান ছেড়ে দিল। আলিফার বিস্ময়ের ঘোর কিছুতেই কাটছে না। কিছুক্ষণের মধ্যে বাকিরা এসে জড়ো হলো।
আফরান — গলাটা কেমন যেন শুকিয়ে গিয়েছে। (আড়চোখে নূরের দিকে তাকাল)
নূর নিজের ব্যাগ থেকে পানির বোতল বের করে পানি হাতে ঢেলে নিল। বোতল আলিফার হাতে দিতেই আলিফা গটগট করে সব পানি খেয়ে নিল। নূর আফরানের মাথা নিচু করে ধরে হাতে থাকা পানি দিয়ে আফরানের গলা ভিজিয়ে দিল। সবাই থ’ মেরে দাঁড়িয়ে আছে। এত্তো বড় হা করল চার-পাঁচটা রসগোল্লা অনায়াসে ঢুকে যাবে। নূর শান্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আফরান নিজেই অবাক। বিস্মিত নয়নে নিষ্পলক তাকিয়ে আছে নূরের দিকে। নূর ভ্রু কুচকে তাকাল।
নূর — কি? আপনি তো বললেন গলাটা শুকিয়ে গিয়েছে। তাই ভিজিয়ে দিলাম।
সবাই একে অপরের দিকে তাকিয়ে দম ফাটানো অট্টহাসি হাসতে লাগলো। নূর কপাল কুচকে তাকাল। আফরান নূরের ওড়না দিয়ে পানি মুছে নিল। নূর রেগে কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেল। আগামী দুই দিন সবকিছু মুখ বুজে সহ্য করতে হবে। স্যার বলেছিল এসাইনমেন্টটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। নইলে এর স্যুপ বানিয়ে সে আফরানকে খাওয়াতো।
পুষ্প — কি হচ্ছে এসব? নূর তুই ঠিক আছিস তো? (ইশারায় আফরানকে জিজ্ঞেস করল)
আফরান — তেমন কিছু না। অবুঝ বালিকাকে বুঝ দান করছি।
বাঁকা হাসি দিয়ে নূরের দিকে তাকাল। হাসিটা দেখে নূরের সারা গাঁ জ্বলে যাচ্ছে। তা দেখে আফরানের হাসি আরও প্রখর হলো। নূর হনহনিয়ে চলে যেতেই আফরান পিছন থেকে ডাকল।
আফরান — ও হ্যালো মিস খিটখিট।
সিমা — খিটখিট কি?
আফরান — যে ব্যক্তি সবসময় খিটখিট করে। মানে ঝগড়া করে।
নূর রেগে ফিরে তাকাল। কিছু বলার পূর্বেই আফরান শার্ট সরিয়ে টি-শার্টের মধ্যে গুজে থাকা কাগজ দেখাল। নূর রাগী বাঘিনী থেকে থেকে ভেজা বিড়াল হয়ে গেল। অসহায় দৃষ্টিতে তাকাল।
আফরান — মিস অবুঝ বালিকা। একটু আগে বলেছিলাম আমার গলা শুকিয়ে গিয়েছে। তার মানে পানি দিয়ে আমার গলা ভিজিয়ে দেওয়া নয়। এর মানে হলো আমার জন্য কোল্ড ড্রিংক নিয়ে আস।
নূর — সেটা সোজাসাপ্টা বললেই তো হয়। ঢং। (হনহনিয়ে চলে গেল ক্যান্টিনের দিকে।)
সবাই বড়সড় টাস্কি খেল। নূর! নূর শুনছে আফরানের কথা? তাও এতো সহজে? সেই প্রথম দিন থেকে দেখছে টম এন্ড জেরির লড়াই। হঠাৎ আজ কি হলো? কথার প্যাঁচাল জড়ানো নূর আফরানকে কিছু না বলে চুপচাপ সব শুনছে। বিষয়টি কারো হজম হচ্ছে না।
রিহান — ও ভাই আমি মনে হয় খোলা ঘুমাচ্ছি। কীসব স্বপ্ন দেখছি। কেউ একটু চিমটি দে৷ (ওয়াসিম রিহানের হাত ধরে কামড় বসিয়ে দিল।) আহহ! হারামি।
এমন গম্ভীর পরিস্থিতিতেও সবাই হেসে দিল।
পুষ্প — ভাই কি হয়েছে বলবে? নূর তোমার সব কথা চুপচাপ শুনছে। কি হয়েছে তোমাদের মধ্যে? ঘন্টা খানেক পূর্বে দেখলাম নূর দৌড় দিল। আর এখন এতো পরিবর্তন।
আফরান — তেমন কিছু না। তোর ত্যাড়া বান্ধবীকে সোজা করছি।
আরিফ — তোরা এভাবে তুই তুকারি করে এমন ফ্রী ভাবে কথা বলছিস।
আলিফা — কারণ ওরা আপন ভাইবোন।
আরেক দফা টাস্কি খেল ছেলেরা। একবার পুষ্পর দিকে তাকাল, একবার আফরানের দিকে। সকলের ধারালো দৃষ্টি আফরানের উপর। নূর কোল্ড ড্রিংক এনে আফরানের দিকে এগিয়ে দিল। আফরান গটগট করে পান করে নিল।
রিহান — তুই আমাদের বললি না কেন? যে পুষ্প তোর বোন।
আফরান — যেই কারণে তুই বলিসনি। যে নূর তোর বোন।
এবার টাস্কি খেল মেয়েরা। একবার রিহানের দিকে তাকাল, একবার নূরের দিকে তাকাল।
পুষ্প — অসভ্য মাইয়া। তুই না আমাকে বারণ করেছিলি। যেই ভার্সিটিতে আমার ভাই পড়ে ওই ভার্সিটিতে এডমিশন না নিতে।
নূর — হেহে হেহে। না মানে জানু, বেবি, আমার ফুলটুসি (পুষ্পর গাল টেনে) আমি হলাম অবুঝ বালিকা। নিষ্পাপ একটা মেয়ে। আমিও জানতাম না রিহান এই ভার্সিটিতে পড়ে। এডমিশন নেওয়ার পর জানতে পারলাম।
পুষ্প — তাহলে আমাদের বললি না কেন? (রেগে)
নূর — কারণ আমি জানতাম তোদের প্রতিক্রিয়া কেমন হবে।
পুষ্প তেড়ে আসতেই নূর চিল্লিয়ে বলল, “ওই দেখ টিনের চালে কাক” বলেই দৌড় দিল। বাকিরা একসাথে বলে উঠল, “আমি তো অবাক”। নূরকে আর পাই কে। পরক্ষণে সবাই ফিক করে হেসে দিল।
.
.
.
চলবে